শ্যামাঙ্গণা-৬

0
464

শ্যামাঙ্গণা-৬
———–

কাজ শেষে হাউজ থেকে ফিরে দোতলায় আসতেই সবার চোখে মুখে থমথমে, গম্ভীর ভাব দেখে মোতালেব সাহেব বুঝলেন তার অনুপস্থিতিতে মারাত্মক কিছু একটা ঘটে গেছে। সকলে তখন খাবার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছে বলে কাউকে আর কিছু জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করলেন না তিনি। ঝুমুর রাতের খাবার খাচ্ছিল কিন্তু মোতালেব সাহেবকে দেখে খাবার রেখে উঠে গেলো।

ঝুমুর বেশ অনুনয়, বিনয় করে মোতালেব সাহেবকে আজকের রাতের খাবারটা দোতলাই খেতে রাজি করলো। সচরাচর মোতালেব সাহেব দোতলায় খাননা কারণ একেতেই শশুড় বাড়িতে থাকছেন তার উপরে তার মা রোজ খাবার নিয়ে অপেক্ষা করেন তার জন্য। তবে আজ মালিনী বেগম শরীর খারাপ বলেই বাধ্য হয়ে মোতালেব সাহেবকে জানিয়ে শুয়ে পড়েছেন।

আজ আর মালিনী বেগম ছেলের খাবার নিয়ে বসে নেই বলেই মোতালেব সাহেব আজ তার রাতের খাবারটা শশুর বাড়ি তথা ছেলে মেয়ের সঙ্গে খাবেন। মোতালেব সাহেবকে দেখে আমির বেশ উচ্ছ্বসিত হলো। এইবার সে ক্লাস সিক্সে পড়ছে। সদ্য কৈশোরে পা রাখা আমিরের দুই চোখে যেন উচ্ছল স্বপ্নের বাস। আমির এখন নতুন ক্লাসে,জীবনের নতুন অধ্যায়ে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করছে আর সেসব গল্পই তার বাবাকে শোনাচ্ছে।

মোতালেব সাহেব খাচ্ছেন আর ছেলের কথা শুনছেন। সারাদিন শেষে মোতালেব সাহেব শুধু খাবারের সময়টাতেই একটু শান্তি পান বলে ঝুমুর বার দুয়েক ভাইকে সাবধান করলো কারণ মনোয়ারা বেগম তখন অসন্তোষ চোখে আমিরের দিকে তাকিয়ে।

সামি, তাফিম ওরা খেতে ব্যস্ত। খাওয়ার সময় তারা কেউই কথা বলেনা। এর পিছনে দুটো কারণ। এক মনোয়ারা বেগম দুই ঝুমুর। মনোয়ারা বেগমকে ওরা ভয় পায় কারণ উনি গম্ভীর ধরনের মানুষ। কিন্তু ঝুমুরকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। সে ঝর্ণার মতোই উচ্ছল আর স্রোতস্বিনী নদীর মতোই প্রাণবন্ত। তবুও বড় বোনের প্রতি এক অজানা সম্মানে তারা কখনো ঝুমুরের কথার অবাধ্য হয়না। হয়তো ঝুমুর তাদের ফুপাতো বোন তবুও তারা ওকে নিজের বড় বোন রুপেই মেনে চলে কারণ তাদের নিজের কোনো বোন নেই।

‘ আমরা এখন খেতে বসেছি আমির। তুমি কি চুপ করবে ? ‘

মনোয়ারা বেগমের উত্তপ্ত দাবানল ঝড়ানো কণ্ঠে আমির চুপ করে গেলো। সে চিনে তার আপিকে। সে অত্যন্ত রেগে গেলেই কেবল তাকে তুমি করে বলে। কাজেই এখন চুপ থাকাই শ্রেয়। ঝুমুর তার বাবার দিকে তরকারি এগিয়ে দিল। মোতালেব সাহেব নিজেদের বাসায় সাধারণত কোরিয়ান হালাল খাবারই খান। যেই কোরিয়ান খাবারগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খাওয়া হয় সেগুলোই খান। কিন্তু দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থাকার দরুন উনার, মালিনী বেগমের এবং ঝুমুরের বাংলাদেশী খাওয়ার খাদ্যভাসও গড়ে উঠেছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে ঝুমুর যখন টেবিল গোছাতে ব্যস্ত তখন মোতালেব সাহেব মেয়েকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। মনোয়ারা বেগম কোরআন শরীফ পড়ছিলেন টেবিলে বসে। ঝুমুর তার বাবাকে এক মিনিট দাড়াতে বলে এগিয়ে গেলো। ধীমী কণ্ঠে বলল ‘ বাবা আমার একজন টিউটর দরকার। কয়েক মাস পরই তো মডেল টেস্ট শুরু হবে। তাই ইংলিশের জন্য টিউটর দরকার। ‘

মোতালেব সাহেব মেয়ের কথায় মুহূর্ত কয়েক নিঃশব্দে চিন্তা করলেন। তারপর বললেন ‘ তুই চিন্তা করিস না,ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুই শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা কর। আর যা যা লাগবে তা শুধু একবার বলবি। ‘

‘ কিছু টাকা লাগবে ‘

মেয়ের কথায় মোতালেব সাহেব মেয়ের হাতে পাঁচশো টাকা গুঁজে দিলেন। এমন প্রায়শই হয়। মোতালেব সাহেব মাসে দুবার নিয়ম করে মেয়েকে টাকা দেন এবং দিয়ে তিনি নিশ্চিন্তেই থাকেন কারণ উনি জানেন উনার মেয়ে ঝুমুর একমাত্র বই কেনা ছাড়া অন্য কিছুর পিছনে টাকা খরচ করেনা। এমন কি সেটার প্রয়োজনও পড়ে না কারণ উনি তো কোনোকিছুরই অভাব রাখেননি ছেলে মেয়েদের জন্য।

—-

আজ ঝুমুরের বাগানে যাওয়া হয়নি। পরীক্ষা আসন্ন বলে কাল একটু পড়া এগিয়ে রাখতে রাত অব্দি পড়েছে। যার কারণে সকালে উঠতে দেরি হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দ্রুত পায়ে রেডি হয়ে যখন ঝুমুর বের হলো তখন তার নজর গেলো সিড়ির দিকে। সিঁড়ির ঠিক সামনে দেওয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাহমান। তার ঠোটে মুখে আলতো হাসি। ঝুমুর বুঝলো না তার এই হাসির কারণ। হাসার কথা নয় মানুষটার কারণ ও আজ বাগানে যাইনি বলে তার দেখাও হয়নি।

ঝুমুর মোজা পড়ে ধীর পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠলো। এতক্ষণে তার পাশে থাকা ফাহমানের সঙ্গে কথা বললো সে। সচরাচর সে কিংবা ফাহমান কেউই বাড়ির আশেপাশে থাকাকালীন একে অপরের সঙ্গে কথা বলে না কারণ কেউ দেখে ফেললে সাড়ে সর্বনাশ হবে। ঝুমুর বললো ‘ আপনি কি রেগে আছেন আমার উপরে ডাক্তার সাহেব ? ‘

ঝুমুরের কথায় অবাক ফাহমান বললো ‘ রাগ ? কেন করবো ? ‘
‘ ঐযে আজ বাগানে যেতে পারলাম না তাই। আসলে… ‘

ঝুমুর চাচ্ছিল তার স্বপক্ষে যুক্তি দিতে কিন্তু ফাহমানই তাকে মাঝপথে থামিয়ে বললো ‘ প্রয়োজন নেই অঙ্গণা… আমি যেমন কাল বিশেষ প্রয়োজনে বাগানে যেতে পারিনি তেমনই তুমিও যে প্রয়োজনেই যেতে পারোনি সেটা আমি বুঝেছি। সম্পর্ক সবাইকে স্বাধীন হতে শেখায়,বন্দী করতে নয়। কাজেই সব কাজের কৈফিয়ত আমাকে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ‘

ফাহমানের কথায় ঝুমুরের চোখে মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না তবে সে আড়ালে মুখ নত করে মিটমিটিয়ে হাসলো। তারপর মুখ তুলে গলা খাঁকারি দিয়ে ফাহমানের মনযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো। হলোও তাই। ফাহমান জিন্সের পকেটে হাত গুজে হাটতে হাটতে তার দিকে তাকালো। মুখে বললো ‘ কিছু বলবে ? ‘

‘ হু… কাল পাত্রপক্ষ এসেছিল। পাত্রের মা আর পাত্র আমাকে পছন্দ করলেও পাত্রের বাবা আমার হাজার খুঁত বের করার চেষ্টা করেছে। পরে আপি রেগে গিয়ে তাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। আসল কথা হলো লোকটা যাওয়ার আগে অভিশাপ দিয়ে গেছে আমাকে যে আমার কখনও বিয়ে হবে না। ‘

ঝুমুরের নির্বিকার কণ্ঠ শুনে ফাহমান একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। পাত্র ওকে পছন্দ করেছেন। তাহলে কি ঝুমুরও… আর ভাবতে পারলো না ফাহমান। ঠিক করলো সরাসরিই জিজ্ঞেস করে নিবে কারণ মনে মনে উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে নিজেকে কষ্ট দেওয়া বড়ই অযৌক্তিক ফাহমানের কাছে। ফাহমান বললো ‘ তোমারও কি পাত্রকে পছন্দ ? ‘

ঝুমুর ফাহমানের কথায় অবাক হয়ে বললো ‘ অদ্ভুত!! আমি ওই ছেলেকে পছন্দ করবো কেন ? টাকা পয়সা,ফেম থাকলে কি হবে তার বাবা তো অহংকারী মানুষ। যেই ছেলে নিজের বাবার ভুল কথাকে ভুল ধরে প্রতিবাদ করতে না পারে তাকে পছন্দ করা,বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে সস্তির নিশ্বাস ফেললো ফাহমান। যাক তাহলে এখনই ঝুমুরের বিয়ে হচ্ছে না। ফাহমানের বুক থেকে যেন পাষাণ ভার নেমে গেলো। ও এবার হাসি মুখে ঝুমুরের দিকে তাকালো। ঝুমুর কিছু একটা ভাবছে। ঝুমুরকে চিন্তিত দেখে ফাহমান জিজ্ঞেস করলো ‘ কি ব্যাপার ? মনে হচ্ছে টেন্সড ‘

‘ কয়েক মাস পরেই টেস্ট পরীক্ষা শুরু। আমি পড়াশুনায় ভালো হলেও পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেখে ভয় পেয়ে যাই। এখন এই ভয় কিভাবে দূর করবো সেটাই বুঝতে পারছি না। ‘ ঝুমুর বললো।

‘ ওয়েল তুমি একটা কাজ করতে পারো। তোমার যারা হোম টিউটর আছে তাদের কাছে বেশি বেশি স্মল টেস্ট দিয়ে প্রাকটিস করো। দেখবে আস্তে আস্তে ভয় কমে গেছে। আর তুমি তো সামনেই যেহেতু ইন্টার দিচ্ছ তাই তোমার গ্রুপ সাবজেক্টসহ অন্য যেসব আদার্স সাবজেক্ট আছে ট্রাই করো ওগুলোতেও ভালো রেজাল্ট করার। এতে তোমার স্কিলস বাড়বে। তাছাড়া কোনো প্রবলেম হলে আমাকে বলতে পারো, বুঝিয়ে দিব। ‘

ফাহমানের কথায় ঝুমুর আলতো করে মাথা নেড়ে বললো ‘ আপনি তো ভালই স্কিলড ডাক্তার সাহেব। আপনার অনেক গুণ আছে। একজন ডক্টর,তার উপরে ভালো মোটিভেশনাল স্পিকার এবং টিচারও বটে। আমার ভাবতেই অবাক লাগছে আমি একটা মাল্টি ট্যালেন্টেড মানুষের সঙ্গে রোজ কলেজ যাই। আমি মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি ফেমাস হয়ে যাবো। ‘

ফাহমান হাসলো ঝুমুরের কথায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল ‘ আমারও ভাবতে অবাক লাগছে আমি রোজ দুমুখো মানুষের সঙ্গে কথা বলি। তুমি সবার সামনে এক রকম আর আমার সাথে একরকম। মনে হয় সবার সামনে যত নীরব থাকো আমার সামনে ততই উচ্ছল, প্রাণবন্ত হয়ে উঠ। এভাবেই থেকো অঙ্গণা। তোমার এই শ্যামাঙ্গণা উচ্ছল রূপটাই আমার পছন্দ। ‘

ঝুমুর ফাহমানের কথায় তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তাদের পথ চলছে হাজারও নানান অজানা কথা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। বাতাসে মিশে আছে প্রেমের গুনগুন। ভোরের এই স্নিগ্ধ সকালে দুই নর নারী এগিয়ে চলেছে নিজেদের গন্তব্যের দিকে। হয়তো সময়ের পরিবর্তনে একসময় তাদের পথ আলাদা হয়ে যাবে কিন্তু জীবনের পথ কি আদৌ তাদের আলাদা করবে ?

—-

মিস মার্জিয়ার কাছে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে বসেছে ঝুমুর। বইয়ে কিছু লাইন মার্ক করে দিয়ে বইটা ঝুমুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে কিছু বলছিলেন মার্জিয়া। কিন্তু ঝুমুরের সাড়া শব্দ না পেয়ে মুখ তুলে দেখলেন ঝুমুর গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। তার ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি। ঝুমুরকে এভাবে আনমনে হাসতে খুব কমই দেখেছেন মার্জিয়া। তাই গলা খাকারি দিয়ে ঝুমুরের মনযোগ আকর্ষণ করতে চাইলেন।

তবে মিস মার্জিয়ার সমস্ত চেষ্টা চেষ্টা ব্যর্থ হলো যখন ঝুমুর তার ইশারা ইঙ্গিত না দেখে নিজের কল্পনার রাজ্যে ডুবে রইলো। ঝুমুরকে এতটা অন্যমনস্ক দেখে মিস মার্জিয়া এবার ওর কাঁধে হাত রাখলেন। এবার ঝুমুর চমকে উঠে বললো ‘ কিছু বলবে আপু ? ‘

ঝুমুর মিস মার্জিয়াকে আপু বলে ডাকে কারণ মিস মার্জিয়া ঝুমুরের থেকে বয়সে ততটা বড় নয়। তাছাড়া ঝুমুরের সঙ্গে উনার সম্পর্কটাও বন্ধুত্বপূর্ণ। এমন কোনো কথা নেই যা ঝুমুর উনাকে বলে না। ঝুমুরকে উনি প্রায় বছর ছয়েক ধরে পড়ান যখন ঝুমুর ক্লাস সিক্সে পড়তো। উনার বাড়িও ঝুমুরদের বাড়ির পাশেই তাই উনার পরিবারের সঙ্গে ঝুমুরের পরিবারের সকলের সম্পর্কই যথেষ্ট ভালো। ঝুমুরের যেকোনো ব্যাপারে উনাকে সবাই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন।

‘ কি ব্যাপার ঝুম ? কি এত ভাবছো যে আমার হাজার ডাকও কানে যায় না ? আবার হাসছোও ? এই সিক্রেট কি বলতো ? তুমি কি কিছু লুকাচ্ছ ? ‘

মিস মার্জিয়ার কথায় ঝুমুর ইতস্তত বোধ করলো তবে তা প্রকাশ করলো না। মুখে বললো ‘ সামনে টেস্ট। তুমি তো জানো আমি পরীক্ষার সময় ভয় পেয়ে যাই তাই ভাবছি কিভাবে ভয় না পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হয়। আবার বাড়ি থেকে থেকে আমিও বোর হয়ে যাচ্ছি। একটা কাজ করি। তুমি আর আমি বাইরে কোথাও ঘুরে আসি। এই রাস্তার মোড়ে নুডুলস আছে তো। ওটা খাবে ? তুমি আর আমি খাই যেখান থেকে। তোমার সময় হবে না ? ‘

ঝুমুরের কথায় মিস মার্জিয়া মুহূর্ত কয়েক ভাবলেন। তারপর বললেন ‘ বের তো হওয়া যায় কিন্তু আন্টিকে বলে ম্যানেজ করতে হবে। সেটা করবে কে ? ‘
‘ ওসব নিয়ে তুমি ভেবো না। আমি এই যাবো আর এই আসবো। আপিকে মানানো আমার ডান হাতের খেলা। ‘ বলেই ঝুমুর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

—-

ঝুমুর আর মিস মার্জিয়া বেড়িয়েছেন আজ একটু ঘোরাঘুরি করার উদ্দেশ্যে। ঘোরাঘুরি বলতে এই বাড়ির কাছে গলির মোড়েই একটা স্টল আছে যেখানে নুডুলস পাওয়া যায়। এই নুডুলস তাদের খুব প্রিয়। সেটা খেতে খেতেই সুখ দুঃখের গল্প করবে তারা।

বস্তুত সমবয়সী ঝুমুরের কোনো বন্ধু নেই। বন্ধু বলতে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ুয়া হৈমন্তী আর অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া মার্জিয়াই আছে। সমবয়সীরা কেউ তার সঙ্গে মিশে না সমাজের কিছু কুসংস্কার নামক অপসংস্কৃতির কারণে। অনেকেরই ধারণা ঝুমুরের মতো শ্যামলা,কালো মেয়ের সঙ্গে মিশলে তারাও কালো হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম সবার এসব কথায় ঝুমুর কষ্ট পেলেও এখন অসম দুই সখিকে পেয়ে সে বড়ই খুশি কারণ এখন আর কেউ বলবে না তার বান্ধবী নেই।

ঝুমুর আর মার্জিয়া স্টলের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নুডুলস খেতে ব্যস্ত। তাদের মধ্যে আলাপ চলছে মার্জিয়ার ক্লাস নিয়ে। মার্জিয়ার এক ক্লাসমেট কিছুদিন আগে তাকে প্রপোজ করেছে তবে বিয়ের আগে কোনরকম প্রেম করবে না বলেই সে নিজেকে বিবাহিত বলে জাহির করে ওই ছেলেকে রিজেক্ট করেছে। এই নিয়েই দুই সখিতে হাসাহাসির শেষ নেই।

ঝুমুর মার্জিয়ার কথায় হাসতে হাসতে যখন নুডুলস মুখে দিয়ে পাশে নজর দিল তখন দেখলো ক্লান্ত পায়ে ফাহমান ফিরছে বাড়ির পথে। সারাদিনের এত খাটাখাটনির পর তার শরীরে যেন বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। তবে সে রোজই নিয়ম করে বাস স্ট্যান্ড থেকে হেঁটে আসা যাওয়া করে বাড়িতে যাতে শরীর তার সবসময় সুস্থ থাকে। এমন না তার রিকশায় আসা যাওয়া করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতেই ফাহমানের ভালো লাগে। হেঁটে আসতে আসতে চারপাশের মানুষ দেখা তার নিত্য দিনের কাজ।

চলবে….
মিফতা তিমু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here