শ্যামাঙ্গণা-১৭
————-
কান ধরে মুরগি হয়ে বসে আছে ঝুমুর। তার সামনে হাতে স্কেল নিয়ে শক্ত পোক্ত চেহারা নিয়ে ফাহমান বসে আছে। তার শীতল দৃষ্টি ঝুমুর পানে। ঝুমুর সেই দৃষ্টি দেখে আবারও শুকনো ঢোক গিললো। তার অপরাধ হলো সে কাল পড়া স্কিপ করার আগে ফাহমানকে জানায় নী। কাল রবিবার ছিল। ঝুমুর যদি পড়তেই না পারে তার অন্তত জানানো উচিত ছিল। ফাহমান ঝুমুরের উপর যতই দূর্বল হোক না কেন পড়াশোনার ব্যাপারে সে বড্ড সিরিয়াস। এহেন ধারার ইররেসপনসিবল ব্যবহার তার পছন্দ নয়।
ঝুমুরকে বিশ মিনিট এভাবে কান ধরে বসে থাকার শাস্তি দিয়েছে ফাহমান। আপাদমস্তক শাস্তিটা দেখতে সহজ হলেও ঝুমুরের জন্য ব্যাপারটা খুবই কষ্টের। এতক্ষণ কান ধরে বসে থাকা তার জন্য বেশ কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। তাই সে বেশিক্ষন পারলও না বসে থাকতে। বাধ্য হয়ে পা ধরে বসে পড়লো মেঝেতে।
ঝুমুরকে বসে পড়তে দেখে ফাহমান ভ্রু কুচকে তাকালো ওর দিকে। মুখে বললো ‘ হোয়াই ইউ আর সিটিং অন দা ফ্লোর ? ইউর পানিশমেন্ট ইজ নট ওভার ইয়েট ‘
ঝুমুর কাতর কন্ঠে বলল ‘ আর পারছি না। পা ব্যথা করছে আমার। ‘
মিস মারিয়াম ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন বোতলে পানি নিতে। ঘর থেকে বেরিয়ে ঝুমুরকে মাটিতে আর ফাহমানকে স্কেল হাতে বসে থাকতে দেখে হতবাক তিনি বললেন ‘ একি!! ঝুমুর মাটিতে কেন আর ফাহমান তোর হাতে স্কেল কেন ? ‘
‘ কাল পড়তে পারবে না সেটা জানায়নি আমাকে ও। তাই পানিশমেন্ট দিয়েছি। ‘ মায়ের প্রশ্নের জবাবে একরোখা ফাহমান উত্তর দিলো।
ছেলের কথা শুনে মিস মারিয়াম ভ্রু কুচকে বললেন ‘ বললেই বা কি হতো ? তুই নিজেও তো বাড়িতে ছিলি না। তাছাড়া তুই তো দেখেছিস ও ফাংশন অ্যাটেন্ড করেছে। তাহলে এখন এসব বলছিস কেন ? ‘
মায়ের কথায় অধৈর্য্য ফাহমান বললো ‘ প্রশ্ন ও আসেনি কেন সেটার না। কথা হলো ও জানাইনি কেন পড়তে আসবে না। এখন এই বয়সেই যদি এত কেয়ারলেস হয় তাহলে বড় হয়ে তো কাউকে আর চোখেই দেখবে না। আর মা তুমি আমাদের মাঝে এসো না। ঝুমুর আমার স্টুডেন্ট কাজেই ওকে শাসন করার রাইট আমার আছে। ‘
ছেলের কথায় ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললেন মিস মারিয়াম। উনি আর কিছু বললেন না। নিজের কাজ শেষ করে আবার রুমে চলে গেলেন। হৈমন্তী নিজের পড়া করছে তাই তার মনযোগ এদিকে নেই। নাহলে সেও বেরিয়ে আসতো। মিস মারিয়াম বেরিয়ে যেতেই ঝুমুর অসহায় চোখে ফাহমানের দিকে তাকালো তবে ফাহমান সেটা পাত্তা দিলো না। চোখের ইশারায় ঝুমুরকে আবারও কান ধরে বসতে পড়লো।
ঝুমুর তার অভিমানী মন নিয়েই তার শাস্তির সময়টা পার করলো। শাস্তি শেষে সে তার নির্ধারিত চেয়ারে গিয়ে বসলো। তার অভিমানে ফুলে যাওয়া মুখ দেখে হাসলো এবার ফাহমান। মুখে বললো ‘ ডাক্তার সাহেবা মনে হচ্ছে রেগে গেছেন ? তা এই রাগ কি কারণে ? ‘
ফাহমানের কথায় রেগে গেলো ঝুমুর। তবে শান্ত গলায় বললো ‘ আপনি বুঝি জানেন না আমি কেন রেগে আছি ? এমনই সময় তো কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন আর আজ সোজা কান ধরে বসিয়ে দিলেন। এখন আবার জিজ্ঞেসও করছেন কেন রাগ করেছি ? আপনি জানেন না আমি কেন রাগ করেছি ? ‘
ঝুমুরের কথায় ফাহমান বললো ‘ দেখুন অঙ্গণা, আমি আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু তারমানে এই না আপনাকে ভালোবেসে আপনার ভুলগুলো আমি ধরিয়ে দিবো না। আমি ভালোকে ভালো আর খারাপকে খারাপ বলতে জানি। আমার যদি মনে হয় তোমার কোনো কাজ ঠিক হয়নি তাহলে অবশ্যই আমি তার জন্য প্রতিবাদ করবো। হতে পারে সেটা বুঝিয়ে কিংবা শাস্তি দিয়ে।
তুমি কাল আমার কাছে পড়বে না ব্যাপারটা না জানিয়ে যেই দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছো তার শাস্তি না দিলে এই ভুলটা ভবিষ্যতে তুমি আবারও করবে যেটা আমি চাইনা। তোমার কোনো কাজে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে তার জন্যই তোমাকে শক্ত হয়ে সামলে রাখছি। আমি প্রয়োজনে তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবো, মিষ্টি কথা বলবো আবার আমিই প্রয়োজনে শক্ত ব্যবহার করবো। এটাই আমার নিয়ম। ‘
ফাহমানের নরম কথায় ঝুমুরের মনে জমে থাকা পাহাড়সম অভিমান সঙ্গে সঙ্গে গলে গেলো। তবে সে কপট রাগ দেখিয়ে বললো ‘ আগে আপনি ঠিক করুন আমাকে আপনি বলবেন নাকি তুমি। একেক সময় একেকটা বলেন। ‘
‘ সেটা তো বলতে পারছি না মিস অঙ্গণা। আমার মুডের ওপর ডিপেন্ড করে সেটা। যখন যেটা ডাকতে মন চাইবে তখন সেটাই ডাকবো। এবার কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো। এক ঘন্টা কিন্তু দ্রুত পেরিয়ে যাবে। ‘
ফাহমানের কথায় ঝুমুর আর কথা বাড়ালো না। সে বাকি সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মন দিল। তবে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে কয়েকবার ফাহমানকে দেখলো। কিন্তু তার এই লুকোচুরি ভাব প্রত্যেকবারই ধরে ফেলছে ফাহমান। তাকিয়ে তাকিয়ে বারবার তাকে দেখায় ঝুমুরের উপর রুষ্ঠ হয়ে গরম চোখে বললো ‘ পড়ায় মন দিন ঝুমুর নাহলে কমপ্লেইন সোজা আংকেলের কাছে যাবে। ‘
ফাহমানের কথায় চট জলদি বইয়ের দিকে নজর দিল। ফাহমানের মুখে ‘ ঝুমুর ‘ ডাকটা শুনে তার বোঝা হয়ে গেছে ফাহমান তার এহেন পড়া ফাঁকি দেওয়াতে রেগে যাচ্ছে। কিন্তু সাহেবকে রাগালে তো চলবে না। তাই সে পড়ায় মন দিয়ে বারবার ফাহমানকে দেখার অদম্য ইচ্ছে তার ছোট হৃদয়েই পুষে রেখে দিল।
—-
দিনগুলো কেটে যাচ্ছে পাতা ঝরার মতো। ঝুমুরের এখন মডেল টেস্ট চলে। সে এখন পুরো দস্তুর পড়াশুনায় মনযোগী। পড়াশোনা ছেড়ে অন্য কোথাও মন দেওয়ার তার সুযোগ নেই। এই কারণেই ফাহমানের সঙ্গে দেখা এবং কথা দুটোই তার কম হচ্ছে। সেই এক্সামের প্রথম দিন দেখা হয়েছিল তারপর আর তাদের মধ্যে তেমন দেখা হয়নি। মাঝেসাঝে হয়তো বারান্দা দিয়ে এক পলক চোখাচোখি হয়েছে।
আজকাল নিজের পড়াগুলো ঝুমুর নিজেই করে নিচ্ছে। ইম্পর্ট্যান্টগুলো খায়রুল স্যার,মিস মার্জিয়া ফোনে ম্যাসেজ করে দিচ্ছেন আর ঝুমুর তা তুলে নিচ্ছে। এরকমটা আগেও হয়েছে। সারা বছর ফোন প্রয়োজন না পড়লেও এক্সামের সময় ঝুমুরের ফোন প্রয়োজন পড়ে। এই কারণেই ওই সময়টা তার চালানোর জন্য তার কাছে ফোন রাখা থাকে।
ঝুমুরের নিজস্ব কোনো ফোন নেই এমনটা না। তার ফোন আছে কিন্তু ফোন চালানোর ব্যাপারটা বা ফোনের ইউজড টু হয়ে যাওয়া ঝুমুরের মোটেই পছন্দ নয়। ওর মনে হয় এতে ও প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং প্রযুক্তির দাসত্ব করছে। কোনো জড় বস্তুর প্রতি এত নির্ভরশীলতা ঝুমুরের পছন্দ নয়। তাই তার ফোন প্রায় সারাবছরই তোলা থাকে। শুধু এক্সামের দিনগুলোতে সে ফোন নামিয়ে আনে।
ক্লান্ত পায়ে সবে এক্সাম দিয়ে বেরিয়েছে ঝুমুর। আজ বাংলা সেকেন্ড পেপার ছিল। কোয়েশ্চন ইজি ছিল কিন্তু নাম্বার কতটা কি পাবে সেটা তো উপরওয়ালাই জানেন। তবে সে ব্যাপারে মাথা ব্যথা নেই ঝুমুরের। তার চিন্তা ইংলিশে। ইংলিশের কোয়েশ্চন কেমন হবে তা নিয়েই ভয় তার। ঝুমুর সব বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে কিন্তু ইংলিশ নিয়েই তার ভয় কারণ লাস্ট দুই তিন সপ্তাহ ফাহমানের কাছে পড়ে সে কতই বা উন্নতি করতে পেরেছে তা নিয়েই সন্দেহ তার।
এক্সাম নিয়ে ভয়, বিষণ্ণতা,সারাদিনের ক্লান্তি যেন নিমেষেই উবে গেল যখন ঝুমুর দেখলো কলেজের বাইরে ফাহমান হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। তাদের এতদিনের প্রণয়ে এই প্রথম ফাহমান তার কলেজের সামনে এসেছে। তবে ফাহমানও ক্লান্ত যেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সর্বদা পরিপাটি থাকা চুলগুলো উস্কখুস্ক ও ইনক করে রাখা শার্টটা বেরিয়ে এসেছে। কাধে ব্রাউন ব্যাগ যার মধ্যে তার সব প্রয়োজনীয় ডাক্তারি জিনিসপত্র।
ফাহমানকে দেখামাত্র ঝুমুরের চোখে মুখে এক অন্যরকম দীপ্তি ছড়িয়ে পড়লো। তার যেই মুখে এতক্ষণ ক্লান্তি বিরাজ করছিলো সেই মুখেই এক টুকরো হাসি ঝুলে পড়লো। হাস্যোজ্জ্বল ঝুমুর এক্সাম ফাইল হাতে দৌড়ে গেলো ফাহমানের দিকে। ফাহমানও ঝুমুরকে দেখা মাত্র এগিয়ে এলো।
‘ আপনি ? আপনি সত্যিই এসেছেন ডাক্তার সাহেব ? ‘
চমকিত ঝুমুর ফাহমানের কাছে গিয়ে কথাটা বললো। ফাহমান ঝুমুরকে ইশারা করলো বাড়ির পথে হাঁটতে। ফাহমানের ইশারা মতো ঝুমুর কদম বাড়ালো। ফাহমানও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ সত্যিই এসেছি নাহলে কি আপনি আমার ভুত দেখলেন অঙ্গণা ?আপনার কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি আসলেই এসেছি ? তাহলে চিমটি কেটে দেখতে পারেন। ‘
ফাহমানের কথায় ঝুমুর সত্যি সত্যিই চিমটি মেরে দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাহমান যেন লাফিয়ে উঠলো। ও ঝুমুরের চিমটি দেওয়া জায়গাটাতে হাত বুলিয়ে চোখ মুখ কুচকে ব্যাথাতুর গলায় বললো ‘ বললাম বলে সত্যি সত্যি দিয়ে দিলে ?দেওয়ার হলে আরেকটু আস্তে দিতে। খুব লেগেছে আমার। ‘
‘ বেশি লেগেছে নাকি ? আসলে আপনি তো কখনও আমার কলেজের সামনে আসেন না তাই বিশ্বাস হচ্ছিল না। সরি হ্যাঁ ? রাগ করবেন না প্লিজ। আমি জেনে বুঝে করিনি। ‘ ফাহমানের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল ঝুমুর।
‘ তুমি শুধু শুধুই এত ভাবছো। বেশি লাগেনি আমার। অনেকদিন তো দেখা হয়না তার উপরে তুমি অনেক চাপে আছো। ভাবলাম এক পলক তোমাকে দেখে যদি তৃষ্ণা মেটানো যায় তাই হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়েছি। ‘ ঝুমুরের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো ফাহমান।
ফাহমানকে আগাতে দেখে ঝুমুরও এগিয়ে গেলো। তারা দুজনে এক সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটছে। সারাদিনের হুড়োহুড়িতে ক্লান্ত ঝুমুর যেন ফাহমানের কথা শুনে তার শক্তি ফিরে পেয়েছে। সে বলল ‘ আপনি আমাকে দেখার জন্য ছুটি নিয়েছেন ? ‘
‘ এনি ডাউট ? আই থিঙ্ক আমি তোমাকে দেখার জন্য না তোমার ক্লাসের অন্য মেয়েদের দেখার জন্য ছুটি নিয়েছি। আমি শুনেছি ছেলেরা নাকি মেয়ে দেখলেই গলে যায়। ‘ ফাহমান মৃদু কৌতুকের সুরে বলল।
তবে ফাহমানের এই মজা ঝুমুরের ভালো লাগলো না। ও রাগ দেখিয়ে মুখ ফুলিয়ে ফেললো। গরম চোখে বললো ‘ তাহলে ওই মেয়েদের কাছেই যান না। আমার সঙ্গে বাড়ি ফিরছেন কেন ? ওদের সঙ্গে বাড়ি ফিরুন। আমি কে হই আপনার ? আমার সঙ্গে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই আপনার। ‘
ফাহমান চমকে উঠলো ঝুমুরের রাগ আঁচ করতে পেরে। হাতে হাত ভাঁজ করে হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ রাগ করলে নাকি ? তুমি যদি জানতে আমি তুমি ছাড়া আর কারোর কথা ভাবতে পারিনা তাহলে আজ প্রশ্ন করতে না তুমি কে হও আমার। তুমি আমার অনেক কিছু অঙ্গণা যা তুমি নিজেও জানো না এমনকি আমিও জানিনা। আমি আমার অজান্তে তোমাকে আমার মন দিয়ে বসেছি। ফর গড সেক এমন কিছু করো না যাতে আমার তোমাকে বাধ্য হয়েই ছুঁয়ে দিতে হয়।
তোমার ঐ নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ মুখ চেয়ে আমার বড্ড ইচ্ছা করে তোমায় ছুঁয়ে দিতে কিন্তু আমি যে অপারগ। সমাজে আমাদের এই সম্পর্কের কোনো নাম নেই। আমি এটাও জানিনা আদৌ এই সম্পর্কের কোনো নাম হবে কিনা। তুমি এবং তোমার পরিবার অর্থবিত্তের দিক থেকে আমাদের অনেক বড়। কে জানে ভাগ্য কোনওদিন আমাদের সহায় হয় কিনা। কিন্তু মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে খুব করে তোমায় ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু আমার অপবিত্র ছোঁয়া দিয়ে আমি আমার পবিত্র অঙ্গণাকে অপবিত্র করতে চাই না। ‘
ফাহমানের কণ্ঠে থাকা বিষণ্ণতার ছাপ ঝুমুরকেও ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। ঝুমুরের মনটা মুহূর্তে বিষিয়ে গেলো। তার আর ফাহমানের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি হবে সে নিজেও জানেনা। হ্যাঁ হয়তো ফাহমানের প্রতি ভালোবাসা সে প্রকাশ করতে পারেনা কারন সে ছোট থেকেই একটু ইন্ট্রোভার্ট ধরনের কিন্তু সত্যি তো এটাই ফাহমান ছাড়া সে নিজেকে কল্পনাও করতে পারেনা।
ঝুমুর আর ফাহমান বাকিটা পথ আর কোনো কথা বললো না। তাদের পথ চলছে নীরবে অথচ অন্তরে জমে আছে অনেক কথা। যেই সম্পর্কের পথই নীরব সেই সম্পর্ক কি আদৌ ভবিষ্যতে প্রকাশ পাবে নাকি প্রকাশ পাওয়ার আগেই নীরবে ঝরে পড়বে ?
প্রায় মাস ছয়েক পর বাপের বাড়িতে এসেছেন তানিয়া শাহজাহান। সঙ্গে এসেছে তার মেয়ে অনামিকা ও ছেলে অনিলও। কিন্তু তানিয়া শাহজাহানের স্বামী মাসুদ সাহেব আসেননি। ব্যবসায়িক কাজে তিনি ফার্মগেটেই থেকে গেছেন। এতদিন পর তানিয়া শাহজাহানের বাপের বাড়ি আসাও মনোয়ারা বেগমের জরুরি তলবে। মনোয়ারা বেগম জরুরি ভিত্তিতে তলব করেছেন উনাকে।
তানিয়া শাহজাহান তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন দুপুরে। এখন বিকাল, ছাদে কাপড়গুলো শুকোতে দেওয়া হয়েছে। তাই তানিয়া শাহজাহান ভাবলেন কাপড়গুলো নিয়ে এলে কাজ একটা কমে যাবে। সেই ভেবেই উনি ছাদে উঠেছিলেন কিন্তু ছাদে উঠে যে এমন একটা দৃশ্য দেখবেন ভাবতে পারেননি। ঝুমুর আর ফাহমানের প্রণয়ের কথা উনি জানেন কিন্তু স্বচক্ষে যে উনি ওদের একসাথে দেখবেন সেটা ভাবেননি।
ঝুমুর আর ফাহমান তাদের মাঝে খানিকটা দূরত্ব রেখে পাশাপাশি হেঁটে বাড়ির দিকে আসছে। দুজনের মুখই মলিন। দুজনের মলিন মুখ দেখে তানিয়া শাহজাহানের ভ্রু কুচকে গেলো। ঝুমুরের কি মন খারাপ ? কিন্তু কেন ? ওই ছেলে কি ওকে ধমক দিয়েছে ? ফাহমান ঝুমুরকে ধমক দিয়েছে ভাবতেই তানিয়া শাহজাহানের মেজাজ চড়ে গেল। কিন্তু পরমুহূর্তেই ভাবলো তাহলে ফাহমানের মুখেরও একই অবস্থা কেন ? কি চলছে টা কি তাদের মাঝে ?
ঝুমুর ফাহমানের পাশে হাঁটতে হাঁটতে তাদের বাড়ির ছাদের দিকে নজর দিল। সঙ্গে সঙ্গে চোখে পরে গেলো তানিয়া শাহজাহানের দিকে। যদিও উনাকে সেখানে আশা করেনি ঝুমুর কিন্তু তানিয়া শাহজাহান তাকে আর ফাহমানকে একসঙ্গে দেখে ফেলেছে ভাবতেই ওর মুখ জুড়ে আতঙ্ক নেমে এলো। ও ভীত চোখে তাকিয়ে আছে তানিয়া শাহজাহানের দিকে অথচ তানিয়া শাহজাহানের মুখভাব স্বাভাবিক।
চলবে….
মিফতা তিমু