শ্যামাঙ্গণা-১৫

0
385

শ্যামাঙ্গণা-১৫
————-

সি শেলের প্রকান্ড হলে দাড়িয়ে কনে তুশির বড় ভাই মিনহাজের সঙ্গে কথা বলছে ফাহমান। মিনহাজ ও তুশি ফাহমানের মায়ের চাচাতো বোনের ছেলে মেয়ে। অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও একমাত্র মিনহাজদের পরিবারই ফাহমানদের বিপদে আপদে এগিয়ে আসেন। উনারা ছাড়া মিস মারিয়ামের ভাই বোন কেউই তার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। মিস মারিয়ামের ভাই বোনেরা বরাবরই সুযোগ সন্ধানী কাজেই খুব প্রয়োজন না পড়লে তারা মিস মারিয়ামের খোঁজ নেন না।

মিনহাজ বয়সে ফাহমানের দুই বছরের ছোট। এবার সবে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করার অপেক্ষায়। তবে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও ফাহমানের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ আছে। সখ্যতা সেরকম নেই কিন্তু দেখা হলে কথাবার্তা, আড্ডা এসব হয়েই থাকে তাদের মধ্যে।

ফাহমানের মা মিস মারিয়াম এবং হৈমন্তী তুশির মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন। অনেকদিন পর বোনের দেখা পেয়ে মিস মারিয়ামের খুশি যেন ধরেই না। তাছাড়া এই বিয়ের উসিলায় উনি নিজের ভাই বোনদের দেখাও পেয়েছেন যেটা উনার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ। কোনো স্পেশাল অকেশন ছাড়া উনার খোঁজ কেউই নেন না। এতে উনি কষ্ট পেলেও ভাই বোনের মায়া ছাড়াতে পারেন না।

ফাহমান কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করলো ওর থেকে কয়েক কদম দূরে পিয়াজি রংয়ের শাড়ি পরিহিতা এক রমণী অন্যদিকে ফিরে দাড়িয়ে আছে। মুহূর্ত কয়েক ফাহমান রমণীকে চিনতে পারল না। মনে হচ্ছে কোথাও একটা দেখেছে কিন্তু কে সেই ব্যক্তি সেটা মনে পড়ছে না। তবুও মনে হচ্ছে সেই রমণীর কারোর সঙ্গে মিল আছে।

হঠাৎ মনে পড়লো সেই শাড়ি পরিহিতা রমণী তো ঝুমুর। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ? ঝুমুর এই বিয়েতে কেন আসবে ? মিনহাজদের সঙ্গে কি ঝুমুরের কোনো সম্পর্ক আছে ? থাকলে তো ফাহমান জানত। আর যদি সেরকম কোনো সম্পর্ক না থাকে বন্ধুত্বও থাকে তাহলেও ফাহমান বিয়েতে আসার ব্যাপারটা জানতো। ঝুমুর নিশ্চই তাকে না জানিয়ে আসবে না।

প্রথমে ফাহমান ভাবলো ঝুমুর তাকে চমকে দিতে এমনটা করেছে। পরে ভাবলো ঝুমুর কি করে জানবে সে এই বিয়েতে এসেছে ? কাজেই ঝুমুরের তাকে চমকে দেওয়ার ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো ফাহমান। আবারও ভাবলো ঝুমুর তো জানেনা সে এখানে এসেছে কাজেই ঝুমুরকে সে চমকে দিতে পারে। ঝুমুরের সঙ্গে তো কাউকে দেখাই যাচ্ছে না কাজেই এখন কথা বলা যায়।

‘ অঙ্গণা ‘

তানিয়া শাহজাহান ফোনে ঝুমুরের সঙ্গে জরুরি বার্তালাপ করছিলেন। ঝুমুররা নাকি এখনো আবদুল্লাহপুরে আটকে আছে। রাস্তায় প্রবল জ্যাম। আসতে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় লাগবে যদি জ্যাম এখনই ছেড়ে দেয়। কথাবার্তা শেষে তানিয়া শাহজাহান ফোন রাখতেই শুনতে পেলেন কেউ ‘ অঙ্গণা ‘ বলে ডাকছে। প্রথমে উনি বুঝতে পারেননি অঙ্গণা কে। কিন্তু কিছুক্ষন পরই মনে পড়লো অঙ্গণা তো ঝুমুরের ভালো নাম। তানিয়া শাহজাহান সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরলেন।

সামনে দাড়িয়ে থাকা রমণীকে দেখে চমকে গেলো ফাহমান। রমণীর বেশভূষা, চাল চলন এবং মুখের অদল অনেকটাই মিলে যায় ঝুমুরের সাথে। কিন্তু এই মহিলা যে ঝুমুর নয় সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত ফাহমান। ঝুমুরের গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা কিন্তু এই নারীর গায়ের রং ধবধবে ফর্সা তাছাড়া উনার তো ঠোঁটের নিচে তিলও আছে যেটা ঝুমুরের থুতনির কাছে আছে।

সপ্তদশী ঝুমুর যেন এই পয়ত্রিশোর্ধ্ব তানিয়া শাহজাহানেরই প্রতিচ্ছবি। তানিয়া শাহজাহান এবং ঝুমুরকে একসঙ্গে দাড় করালে যে কেউ বলে দিবে তারা মা মেয়ে কারণ তাদের অমিলের থেকে মিলটাই বেশি। তানিয়া শাহজাহান তার কিশোরী বয়স পেরিয়ে এসেও যেন এখনও ঝুমুরের মতোই উচ্ছল কিশোরী। তার উচ্চতা,শরীরের গঠন অনেকটাই ঝুমুরের সঙ্গে মিলে যায়। এক মুহূর্তের জন্য তাকে পিছন থেকে দেখে ফাহমান ঝুমুর ভাবলেও এখন সামনে থেকে ঝুমুরের মা মনে হচ্ছে তার।

‘ আপনি কি ঝুমুরের মা ? বাট হাও কাম ? ওর মা মানে তাসনুবা আন্টি তো দশ বছর আগেই… ‘

বাকি কথা আর শেষ করতে পারলো না ফাহমান। তানিয়া শাহজাহান ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন। ওর দিকে এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন ‘ তুমি ? তুমি কে ? দেখে তো মনে হচ্ছে বয়সে আমার ছোট। তুমি ঝুমুরকে কি করে চিনলে ? ‘

অজ্ঞাত রমণীর এই কথায় ফাহমান একটু অসস্তিতে পড়ে গেলো। কি উত্তর দিবে সে ? তবে বললো ‘ আমি ফারুকের বন্ধু, ঝুমুরের হোম টিউটর এন্ড লাস্টলি ওদের ভাড়াটিয়া ফাহমান সওদাগর। ‘
ফাহমানের কথা শুনেও তানিয়া শাহজাহানের সন্দেহের বাণ মিটলো না। উনি কপালে দুইখানা ভাজ এনে কিছু একটা ভাবলেন তারপর বললেন ‘ আমি ওর মাসী। মানে ওর মা তাসনুবার ছোট বোন তানিয়া শাহজাহান। ‘

এবার বুঝল ফাহমান কেন ঝুমুর আর এই অজ্ঞাত নারীর মধ্যে এত মিল। ও সস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো ‘ একচুয়ালী আই ওয়াজ কনফিউজড। আমি ভেবেছিলাম আপনি ঝুমুর তাই ডেকেছিলাম। সরি ফর দা… ‘

ফাহমানের পুরো কথা শুনতে পারলেন না তানিয়া শাহজাহান। বিপবিপ আওয়াজে উনার ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে দেখলেন মনোয়ারা বেগমের ফোন থেকে ম্যাসেজ এসেছে ‘ ইমো(খালামণি) আমরা এসে গেছি। সেন্টারের নর্থ সাইডে ‘

মনোয়ারা বেগমের ফোন থেকে ঝুমুরের ম্যাসেজ পাওয়া মাত্র উনি আর বিলম্ব করলেন না। ফাহমানকে এক্সকিউজ জানিয়ে ঝুমুরদের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু উনার মনে চলছে অন্য চিন্তা। ওই ফাহমান নামের ছেলেটি কি আসলেই শুধু ঝুমুরের হোম টিউটর নাকি অন্য কিছু ? কারণ ফাহমানের অঙ্গণা ডাকটায় যে অন্যরকম অনুভূতি মিশানো ছিল সেটা উনি ধরতে পেরেছেন। তাছাড়া ঝুমুরকে তো ওই নামে শুধু তানিয়া শাহজাহানের বড় বোন তাসনুবাই ডাকতেন আর ঝুমুর সেই নামে তার অমনি ছাড়া কারোর ডাকা পছন্দ করে না তাহলে ফাহমানকে কি করে এলাউ করলো ?

তানিয়া শাহজাহান ওনার ভাগ্নিকে বিশ্বাস করেন যে ঝুমুর তাকে না জানিয়ে অন্তত কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। কিন্তু এমনও হতে পারে যে হয়তো ঝুমুর এমন কোনো পরিস্থিতিতে ছিল যার কারণে সে তাকে জানাতে পারেনি ? এক্ষেত্রে উনার কি করা উচিত ? তানিয়া শাহজাহান বুঝতে পারছেন না। ভাবনা চিন্তার মাঝেই তানিয়া শাহজাহান নর্থ সাইডে পৌঁছে গেলেন।

তানিয়া শাহজাহানকে দেখে ঝুমুর চমকে গেছে। আসলেই তার ইমোকে তার মতোই লাগছে। তানিয়া শাহজাহানের দক্ষতার সম্মান দিতে হয়। উনি যেমন বলেছিলেন ঝুমুরের মতো করে সাজবেন ঠিক তেমনই সেজেছেন। সাজগোজ থেকে শুরু করে সংসার সামলানো সবকিছুতে এই দুই সন্তানের জননী তানিয়া শাহজাহানের দক্ষতা আকাশ চুম্বি।

‘ ও মাই ডিয়ার ঝুমুর, আই রিয়েলি মিসড ইউ। ‘ বলে তানিয়া শাহজাহান ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরলেন।

অনেকদিন পর ঝুমুর তার ইমোকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। তার গভীর চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। ঝুমুরকে কাদতে দেখে তানিয়া শাহজাহান তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন ‘ কেঁদো না ডিয়ার। আই অ্যাম হেয়ার উইথ ইউ। ‘

‘ তোমাকে কতদিন পর দেখলাম ইমো। আমি তোমাকে মিস করেছি অনেক। অনামিকা, অনিল ওদেরও মিস করছি। ‘
চোখের অশ্রু মুছে নাক টেনে টেনে বললো ঝুমুর।

‘ দেন ইউ মাস্ট বি হ্যাপি টু নো দ্যাট অনামিকা, অনিল ওরা এসেছে। দে আর উইথ দ্যার ফাদার। ‘

ঝুমুরের সঙ্গে বাক্য বিনিময় করে তানিয়া শাহজাহান মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। উনার আর খেয়ালে রইলো না ঝুমুর আর ফাহমানের ব্যাপারটা। কথাবার্তা শেষে ঝুমুর অনামিকা আর অনিলকে দেখলো। তারা ঝুমুরকে দেখে ছুটে এসেছে।

ঝুমুর ভাই বোনদের সঙ্গে দীর্ঘ বিচ্ছেদের ফলে এতদিনের জমে থাকা আবেগী বাক্য বিনিময় করে সব ভাই বোনদের এক জায়গায় জড়ো করলো। ঝুমুর, নিঝুম, আমির, সামি, তাফিম, অনামিকা, অনিল সকলকে ফারুক এক ফ্রেমে বন্দী করলো।

কিছু সময় ভাই বোনদের সঙ্গে কাটিয়ে সকলে আবার নিজেদের মতো ছড়িয়ে পড়লো। ঝুমুর সেন্টারের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার মনোয়ারা বেগমের ফোন। তার নিজস্ব কোনো ফোন নেই। এই বয়সে ফোন রাখাও তার পছন্দ নয়। এছাড়া ফোন থাকলেই বা কি হতো ? তার সময় তো পড়াশোনা, প্রাইভেট, বাগানে সময় কাটানো আর ঘরের কাজ করেই কেটে যায়। এতকিছুর মাঝে ফোন দেখার সময় কোথায় তার ?

ঝুমুর যখন ফোন দেখতে ব্যস্ত তখনই পিছন থেকে কেউ ওর চোখ চেপে ধরলো। ঝুমুর না ধরেও টের পেলো শীতল সেই স্পর্শ হৈমন্তীর। ঝুমুর তার চোখ থেকে হৈমন্তীর হাত সরিয়ে অবাক হয়ে পিছন ফিরে বললো ‘ আপু তুমি এখানে ? ‘

হৈমন্তী ঝুমুরকে অবাক হতে দেখে হেসে বললো ‘ আমিও তোকে দেখে চমকে গেছিলাম কিন্তু ভালই হলো। এই বোরিং অনুষ্ঠানে কাউকে পেলাম কথা বলার জন্য। তুশি আপুর মা আমার মায়ের চাচাতো বোন। তুশি আপুর বিয়েতেই এসেছি আমরা। চল তোকে ওখানে নিয়ে যাই। মা আর ভাইয়া ওখানেই আছে। ‘

শেষের কথাটা হৈমন্তী তার হাতের ইশারায় ফাহমানের দিকে ইশারা করে বললো। হৈমন্তীর ইশারা অনুসরণ করে ঝুমুর সেই দিকে ফিরলো। সে দেখলো ফাহমান মিস মারিয়ামের সঙ্গে দাড়িয়ে কথা বলছে। ফাহমানকে এই প্রথম ডক্টরস এপ্রন এবং নরমাল লুক ছাড়া ফরমাল কোর্ট প্যান্টে দেখে ঝুমুর যেন মুগ্ধ হলো। তার ইচ্ছে করলো শুধু তাকিয়েই থাকুক।

কিন্তু ঝুমুর তার মনোবাসনা পূরন করার সুযোগ পেলনা কারণ হৈমন্তি ততক্ষণে তাকে টেনে নিয়ে গেছে মিস মারিয়ামের কাছে। হৈমন্তী মিস মারিয়াম ও তার ভাই ফাহমানকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘ দেখো কাকে এনেছি। মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড ‘

হৈমন্তীর কথায় ফাহমান এবার ঝুমুরের দিকে নজর দিল। যদিও সে ঝুমুরকে দেখে অবাক হয়নি তবে চমকে যাওয়ার মতো ফেক এক্সপ্রেশন দিয়ে বললো ‘ আমি তো অবাক। তোমাকে এখানে আশা করিনি মিস অঙ্গণা ‘

ফাহমানকে অন্য রুপে দেখে বিমোহিত ঝুমুর এতক্ষণ তার দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছিল। পাছে ফাহমান যদি তার অনুভূতি টের পেয়ে যায় তার কাজল চোখে চেয়ে। কিন্তু ফাহমানের কথায় সে মুখ তুলে চাইল। ফাহমান অধীর আগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমুর কম্পিত কণ্ঠে বলল ‘ কনে আপির জায়ের বোনের মেয়ে। সেই সূত্রেই এসেছি। ‘

‘ ওহ আই সি। তাহলে তো আমরাও দূর সম্পর্কের আত্মীয় হই তোমার। দেন আই মাস্ট শেক হ্যান্ডস উইথ ইউ। হায় মিস অঙ্গণা, আই অ্যাম ইউর কাজিন ব্রাদার ফাহমান সওদাগর। ‘ ফাহমান মুচকি হেসে ঝুমুরের দিকে তার ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো কথাটা।

ফাহমানের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে ঝুমুর তার সখি হৈমন্তীর দিকে তাকালো। ফাহমানের এহেন কাজে হৈমন্তী এবং মিস মারিয়াম দুজনেই হাসতে হাসতে কাহিল। ঝুমুর তার কম্পিত হাতটা এগিয়ে দিয়ে নিজেকে সামলে হেসে বললো ‘ হায় আই অ্যাম ইউর কাজিন সিস্টার অঙ্গণা ঝুমুর, ফাহমান ভাই। ‘

ঝুমুরের মুখে ভাই ডাকটা শুনে ফাহমান ভ্রু কুচকে ফেললো। দ্রুত ঝুমুরের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। ও বুঝতে পারছে ঝুমুর ওর খোঁচা মারা কথার জবাবই দিয়েছে ভিন্ন ভাবে। ইচ্ছে তো করছে মেয়েটার গাল দুটো টেনে দিয়ে খোচার শোধ উসুল করতে কিন্তু সেটাও করা যাবে না। ফাহমান ঠিক করলো এর শোধ সে অন্যভাবে, অন্য কোনওদিন নিবে।

ঝুমুরের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে ফারুক ঝুমুরসহ ফাহমানদের দেখা পেলো। হুট করে বন্ধুকে দেখে সে তো চমকে গেছে। তবে ঝুমুর জানালো ফাহমানরা ইন্ডিরেকটলি ওদের আত্মীয় হন। সব শুনে ফারুকের খুশি দেখে কে। বন্ধুর সঙ্গে আত্মীয়তা পাততে পেরে সে অনেক খুশি। এই আত্মীয়তার কথা সে মনোয়ারা বেগমসহ সকলকে জানালো। এসব নিয়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসিও হলো।

—-

সবার থেকে খানিকটা দূরে ফোন হাতে দাড়িয়ে আছে ঝুমুর। তার একটা ফেসবুক আইডি আছে যেটা সে মনোয়ারা বেগমের ফোনে মাঝে মাঝে ব্যাবহার করে। সবসময় ফেসবুকে কানেক্ট থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়না কারন সেও পড়ালেখায় ব্যস্ত মানুষ। ঝুমুর যখন নীরবে নিভৃতে ফোন দেখতে ব্যস্ত তখনই ফাহমান তার পাশে এসে দাঁড়াল।

ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের এতটা কাছে, পাশাপাশি পেয়ে ঝুমুর নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। সে তার হাত দুটো জড়োসড়ো করে দাড়িয়ে আছে। ঝুমুরের এই আচরণে ফাহমান আড়চোখে ওর হাতে থাকা ফোনে নজর দিলো। স্ক্রিনে ঝুমুরের ‘অঙ্গণা ঝুমুর’ লেখা ফেসবুক আইডিটা জ্বলজ্বল করছে। প্রোফাইলেও ঝুমুরের এক হাত দিয়ে চেহারার অর্ধেকাংশ ঢেকে রাখার প্রতিচ্ছবি।

‘ রোজই তো তোমার পাশ দিয়ে পথ চলি। তাহলে আজ হঠাৎ পাশে এসে দাঁড়ানোতে এমন করছো কেন ? ‘

ফাহমানের কথায় ঝুমুর অসস্তিতে পড়ে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করে বললো ‘ কোথায় ? কি করছি আমি ? আমি ঠিক আছি। ‘

‘ সত্যি বলছো ? তাহলে কাপছ কেন ? ‘

‘ সত্যিই বলছি তাছাড়া আমি কাপছি না। আপনি চোখে ভুল দেখছেন। আমি কোনো কাপছি না। উল্টো আমাকে শাড়িতে দেখে আপনি অদ্ভুত আচরণ করছেন। ‘

ঝুমুরের কথায় হাসলো ফাহমান। হাসলে তার গালেও টোল পড়ে। ঝুমুর সেই হাসি দেখে আবারও মর্ম বিদ্ধ হলো। ফাহমান ঝুমুরের চোখে চোখ রেখে দাড়ালো। মুখে বললো ‘ কথা ঠিক। আপনাকে শাড়িতে দেখে আমি আসলেই অদ্ভুত আচরণ করছি। আমার শ্যামাঙ্গণা বিধ্বংসী রুপে সামনে এসে দাঁড়ালে আমি আসলেই অদ্ভুত হয়ে যাই। বারবার ইচ্ছে করে ঘুরে ফিরে শ্যামাঙ্গণাকেই দেখতে। তাইতো এমন অদ্ভুত আচরণ করি। ‘

চলবে….
মিফতা তিমু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here