শৈবলিনী পর্ব ১৩

0
863

#শৈবলিনী—১৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★ওই দেখ আসছে নূর।চ্যালেঞ্জ মনে আছে তো তোর শিখা? চ্যালেঞ্জ-এ হারলে আমারে ট্রিট দিবি। আর জিতলে তোর কাছ থেকে আমি ট্রিট নিবো।
–হ্যাঁ ঠিক আছে, এই এক মিনিট! দুই দিকেই তাহলে আমি ট্রিট দিচ্ছি।
–হ দেখছস তোর মনডা আসলেই উদার। চ্যালেঞ্জ-এ হাইরাও ট্রিট দিতে চাছ। তোর মতো বন্ধুরে তো দেয়ালে টাঙ্গাইয়া রাখা উচিত। সকাল সন্ধ্যা ফুলচন্দন দিয়া পূজা করা উচিত। আর আজকাল কার মাইয়াগো দেখ, একটুও দয়া-ধর্ম নাই। প্রেম হইতে না হইতেই ফহিন্নির মতো এইডা সেইডা দাও, কইলজা ফোপড়া বাইর কইরা “বিয়ার গ্রীলস” এর মতো কাচা চাবাইয়া খাইতে আসে। ঢং কইরা কয়, বেবি আজ না আমরা গ্রীল চিকেন খাবো, ইউ নো আই লা….ভ গ্রীল চিকেন। আরে ফহিইন্নির ঘরের ফহিন্নি,বাপের জন্মে কোনোদিন মুরগীর পাখাও চোখ দেখস নাই আবার গ্রীল চিকেন। আগের প্রেমিকেরা তো দুই টাকার বাদাম আর পাঁচ টাকার একখান ফুল দিয়ে গাছের পেছনে গিয়ে চুম্মা লইয়া লইতো। আর এহন দেখ মাইয়াগো হাত ধরতে গেলেও শপিং মলে যাইয়া সর্বশান্ত হইতে হয়। বুঝছস,আজকের বাজারে আমগো মতো বেচারাগো একখান গার্লফ্রেন্ড পালা অনেক ব্যয়বহুল হইয়া গেছে।

অতিশয় আপসোসের সহিত কথাগুলো বলল গিয়াস। তার এই দুঃখের বানী শুনে শিখা ধমকে উঠে বলল,
–হইছে অফ যা এহন, নাইলে আমার হাসি বের হয়ে যাইবো

শিখা আর গিয়াসের কথার মাঝে নূর সেখানে এসে উপস্থিত হলো। যথারিতি এসেই আগে পানি খেয়ে নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে স্থির করলো। গিয়াস নোটখাতা বের করে বাতাস শুরু করলো নূরকে আর শিখা রুমাল বের করে নূরের কপাল মুছতে আরম্ভ করলো। এদের কান্ড দেখে নূর ভ্রু কুঁচকে বলল,
–কাহিনী কী মামা! দেখ আমার ঘী একদমই পছন্দ না তাই ঘী মারা বন্ধ কর আর ঘটনা কী বল। কী চাই তোদের?

গিয়াস বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
–কিযে কসনা! আমগো কী তোর সুবিধাবাদী লোক মনে হয়? আরে আমরাতো জনম জনমের বন্ধু। তিন দেহ এক জান, তিন কলিজা এক পরান, তিন মাথা এক জ্ঞান, তিন টিউমার এক অপারেশন। আমারতো প্রিয় গানও ওইটা, ♬ আমরা তিন বন্ধু, দুই আর একে তিন। আর তুই এমনে কইতে পারলি? দিলে চোট পাইলাম।

–তোর দিলের মোরব্বা বানাইয়া তোরেই খাওয়াই দিমু। সত্যি করে ক কী চলছে?

এবারে শিখা বলল,
–আরে কিছুই চলছেনা। তুইও না শুধু শুধু হাইপার হয়ে যাস।

–দেখ শেষবার জিজ্ঞেস করছি। পরে কিন্তু বললেও আর শুনবোনা।

শিখা মেকি হেসে বলল,
–আচ্ছা ঠিক আছে তুই যখন এতো ইনসিস্ট করছিস করছিস তাহলে বলছি।

–হুম এখন এলিতো লাইনে। বল কী বলবি।

–তার আগে প্রমিজ কর আমি যা বলবো তুই শুনবি আর আমার কথা রাখবি।

–কোনো প্রমিজ টমিজ করতে পারবোনা। তোদের কোনো ভরসা নেই। নিশ্চয় কোনো স,য় তা,নি বুদ্ধি চলছে তোদের মাথায়। আগে বল।

–তুই এভাবে বলতে পারলি? আমি না তোর কলিজার বান্ধবী। প্লিজ না ইয়ার, আমার জন্য প্রমিজ করনা প্লিজ। এতটুকু ভরসা নেই তোর আমার ওপর!

–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে যা প্রমিজ করলাম। বল এখন।

–আসলে তুই নিশ্চয় শুনেছিস কাল আমাদের ভার্সিটির বিশবছর পূর্ণ হবে। আর সেই উপলক্ষে ভার্সিটিতে বর্ষপূর্তি উদযাপন আর কালচারাল প্রোগ্রাম করা হচ্ছে কাল।

নূর শিখার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
–হ্যাঁ শুনেছি,তো?

শিখা মনে সাহস জুগিয়ে চোখ বুজে দ্রুত বেগে বলে উঠলো,
— তো তুই কাল প্রোগ্রামে আসবি।

–হোয়াট! পাগল হয়ে গেছিস তুই? তুই ভালো করেই জানিস এসব আজাইরা অনুষ্ঠানে আসার জন্য অযথা সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই আমার। এসব নাচগান,হুরোহুরি বিরক্ত লাগে আমার।

–দেখ তুই কিন্তু প্রমিজ করেছিলি আমার কথা রাখবি। আরে একটা দিনেরই তো ব্যাপার। আয়না প্লিজ এমন করছিস কেন! আমার সোনা মোনা, ময়না পাখি প্লিজ রাজি হয়ে যা প্লিজ।

–উফফ তোর জ্বালায় আর শান্তি নাই। আচ্ছা ঠিক যা আসবোনে। কিন্তু অল্পসময়ের জন্য।

শিখা নূরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–ইয়েএএ…থ্যাংক ইউ সো মাচ ইয়ার।

গিয়াস বলে উঠলো।
–আমার সাথেও একটু হাগাহাগি করনা।

শিখা নাক শিটকে বলল,
–ছিহহ…যা দূরে গিয়ে ম,র হা,রা,ম,জা,দা।

শিখার মনে চলছে আরেক চিন্তা। কোনোরকমে নূরকে আসার জন্য তো রাজি করালো।কিন্তু ওই কাজের জন্য ওকে কীভাবে রাজি করাবে? সেটাতো বলতেই ভয় লাগছে। শেষে না ও বিয়ের আগেই পরপারে চলে যায়। কিন্তু কাজটা করতেই হবে, আদিত্য ভাইয়াকে প্রমিজ করেছি তার কাজটা করে দিবো। এখন যে করেই হোক রাজিতো করাতেই হবে। শিখা তার প্ল্যান এক্সিকিউট করতে পরদিন সকাল সকালই নূরদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো। নূরের পরিবারের সবাই তাকে দেখে খুশি হয়ে ভেতরে বসতে বললো। শিখা এসে প্রথমে।সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। নূর এসে শিখাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
–কীরে এত সকাল সকাল তুই এখানে? ও আচ্ছা আমাকে নিতে এসেছিড তাইনা? দেখ আমি যখন প্রমিজ করেছি তখন যাবোই ভরসা রাখ।

শিখা মেকি হেসে বলল,
–হ্যাঁ নিতেতো তোকে এসেছিই, তবে সাথে আরেকটা কাজও করতে এসেছি।

–কী?

শিখা তার হাতে থাকা কাগজের শপিং ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে নূরের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,
–তোকে এটা দেওয়ার জন্য। আজ তুই এটা পড়েই যাবি অনুষ্ঠানে।

–কী এটা?

–খুললেই দেখতে পাবি।

নূর প্যাকেট টা খুলে দেখলো একটা হালকা গোলপী রঙের ইন্ডিয়ান সিল্কের শাড়ি আছে তাতে। নূর চোখ ছোট ছোট করে শিখার দিকে তাকিয়ে বলল,
–তুই সকাল সকাল মেয়াদ উত্তীর্ণ গা,ঞ্জা খেয়ে এসেছিস? নাকি তোর মাথায় গ্যাস্টিক জমেছে? তুই ভাবলি কী করে আমি এই শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে যাবো? এমন উদ্ভট ভাবনা তোর মাথায় এলোও কর করে?

শিখা মিনুতির সুরে বলল,
–এটা উদ্ভট ভাবনার কী হলো? শাড়িইতো এনেছি, বি,কি,নি তো আর আনিনি।দেখ আমার অনেক শখ তুই আর আমি এক রঙের শাড়ি পড়ে যাবো। কত্তো মজা হবে। প্লিজ না ইয়ার আমার জন্য পড়। দেখ আজ বাদে কাল আমি মরে গেলে তখন আপসোস করবি। আহারে ছেমরিটা বলেছিল একটু শাড়ি পড়তে। তাও পড়লাম না।

–দেখ এসব ড্রামভর্তি মেলোড্রামা করে কোনো লাভ হবেনা। এসব শাড়ি ফাড়ি তো জীবনেও পরবোনা।

শিখা মিছে নেকি কান্না করে বলল,
–ব্যাস এই ছিলো তোর বন্ধুত্ব? আজ একটা কথাও তুই রাখতে পারলিনা! যা আর খেলমুনা তোর সাথে। আড়ি তোর সাথে।

নূরের মা লতিকা বেগম শিখার সমর্থন করে বলল,
–এমন করছিস কেন?””” মেয়েটা এতো করে
বলছে যখন পড়না শাড়ি””। আমার কথায়তো কোনোদিন পড়লিনা আজ নাহয় শিখার মন রাখতেই পড়।

মিছরিও বলল,
–হ্যাঁ আপু পড়োনা, আমারও খুব মন চাচ্ছে তোমাকে শাড়িতে দেখতে। অমালিয়া আর নিয়ে নিভানও অনেক অনুরোধ করলো নূরকে শাড়ি পড়ার জন্য।

সবার এতো অনুরোধ আর জোরাজুরিতে নূর বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে গেল। এতগুলো মানুষের অনুরোধ কীভাবে উপেক্ষা করবে ও। তবে শাড়ি পরবে কীভাবে? শাড়ি নামক এই বস্তুর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়নি কখনো। যেখানে নূর মেয়েলী ড্রেসই পড়েনা বললেই চলে সেখানে শাড়িতো অনেক দূরের কথা। তবুও সবার মন রাখতে রাজি হয়ে গেল। শিখা শাড়িটা নূরকে পড়াতে সক্ষম হলেও সেটা সামলানোই এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মনে হচ্ছে নূরের। সাজের নামে শুধু চুলটা আঁচড়াতে পেরেছে শিখা। এরবেশি আর করতে দেয়নি নূর। শিখাও আর জোর করেনি। শাড়ি পরাতে পেরেছে এইতো হাজার শুকুর। আদিত্যর দেওয়া শাড়িটা নূরকে পড়াতে পেরেছে।এতবড় অসাধ্য সাধন করার জন্য তো শিখাকে এইবছরের নোবেল পুরষ্কার দেওয়াই যেতে পারে। শাড়ি পড়া শেষে বেড়িয়ে এলো নূর। ড্রয়িং রুমে থাকা নূরের পরিবার বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। লতিকা বেগমের চোখ ভরে এলো। আজ প্রথম যেন মেয়েটাকে পরিপূর্ণ নারী দেখাচ্ছে। তার মেয়েটা কতো সুন্দর আজ বুঝতে পারছেন তিনি। নজর না লাগে তার পরীর মতো মেয়ের। মিছরি, অমালিয়া আর নিভানও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিভানের চোখ জোরাও চিকচিক করছে। দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী নারী ওর আপু। এতে কোনো সন্দেহ নেই। পরিবারের দায়িত্ব বহন করতে করতে আপু নিজেকেই যেন হারিয়ে ফেলেছিলো। আজ শুধু সামান্য শাড়িতেই তাকে কতো সুন্দর লাগছে। আপু যদি বউ সাজে তখনতো তার সৌন্দর্যে ঝলমল করবে সারা শহর। কিন্তু আপুর জীবনে সেইদিন কী আসবে কখনো?

নূর দুই হাতে শাড়ি উঁচু করে ধরে হেঁটে আসছে। খুবই অসহ্য লাগছে তার। মানুষ এই অদ্ভুত জিনিস কেন পড়ে? ঝামেলা একটা। অমালিয়া নূরের পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–একি আপু তুমি শাড়ির সাথে স্কেটস পড়েছ কেন? শাড়ির সাথে কেউ স্কেটস পড়ে? লোকে দেখলে তো হাসবে। চলো আমার এক জোরা হিলস দেই তোমাকে।

–আরে না না তোর ওই উঁচু হিল পড়ে আমি হাঁটতে পারবোনা। আমার জন্য এটাই ঠিক আছে। শাড়ি পড়েছি এই অনেক আর কিছু পড়তে পারবোনা।

একটু পর শিখা আর নূর বেড়িয়ে গেল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

–ভ্যানিটির ভেতর অস্থির হয়ে পায়চারী করছে আদিত্য। ওর দেওয়া শাড়িটাতে নূরকে দেখার জন্য ছটফট করছে মন। শিখা কী পেরেছে নূরকে শাড়িটা পড়াতে? নাকি ফেইল হয়ে গেছে? কিছুই তো বললোনা মেয়েটা। ফোনও ধরছেনা। নূর কী আজ আসবে না আসবেনা। এসব ভাবনাতেই অধীর হয়ে উঠছে মন। জিদান আদিত্যর এই অস্থিরতা দেখে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বলে উঠলো,
–কি হয়েছে স্যার? এসিডিটি প্রবলেম হয়েছে? ইনো আনবো স্যার? তাড়াতাড়ি খেয়ে পেট ক্লিয়ার করে নিন। আজকের ফাংশনে আপনাকে চিপ গেস্ট করা হয়েছে। স্টেজের মেইন ভিআইপি ফ্রন্টে বসতে হবে আপনাকে।তখন সবার সামনে গিয়ে পেট গড়বড় করলে তো মান ইজ্জতের ভাজি হয়ে যাবে স্যার।

জিদানের এই অবাঞ্ছিত কথায় আদিত্য বিরক্তির চরমে উঠে কিছু বলতে যাবে তখনই দরজা দিয়ে প্রবেশ হলো আবিরের। এসেই জিদানের উদ্দেশ্যে কাব্যিক ভঙ্গিতে বলে উঠলো।
–আরে জিদান মিঞা এই এসিডিটি সেই এসিডিটি নারে পাগলা। এইটা হইলো পিয়ার,ইষ্ক, মোহাব্বত-এর এসিডিটি। যা তোমার ইনো দিয়া যাইবো না মিঞা।

আবির ভেতরে এসে বসলো। জিদান কৌতুহলী হয়ে বলল,
–স্যার প্রেমের আবার এসিডিটিও আছে নাকে?

–আরে আছে মানে। প্রেমের অপর নামইতো গ্যাস্টিক।

–কিন্তু স্যার,আমিতো শুনেছি প্রেমের অপর নামতো বেদনা।ওইযে গানে কয়, ♬ প্রেমের নাম বেদনা,একথা বুঝিনি আগে…..

–আরে বেদনাটা তো হলোই গ্যাস্টিকের কারণে। এই গ্যাস্টিক মানুষের পেট থেকে শুরু ধীরে ধীরে হৃদপিণ্ড তারপর মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ গ্যাস্টিকের তুলনায় এই গ্যাস্টিক অতিব মাত্রায় ভয়ংকর বুঝেছ জিদান মিঞা।সাধারণ গ্যাস্টিকে তবুও তোমার পেছনের নলকূপ দিয়ে বায়ূ নিষ্কাশন করতে পারো। কিন্তু প্রেমের গ্যাস্টিক বের করার কোনো পথ নেই। চল্লিশ পাওয়ারের ডাবল সেকলো খেলেও কাজ হয়না। দিস গ্যাস্টিকস আর ভেরি হার্মফুল।

–তাইলে স্যার এর চিকিৎসা কী?

–এর কোনো চিকিৎসা নাই জিদান মিঞা। এই গ্যাস্টিক লইয়াই জীবন কাটাইতে হইবো। এমনেই কী কয় পিরিতি কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়ে না। তারে নারে নারে না…
আবির ছোট টেবিলের ওপর তবলা বাজানোর মতো করে আঙুল ঠুকিয়ে গান গাইতে লাগলো। জিদান বেচারা ভাবনায় পড়ে গেল। তবে কী তারও প্রেমে পড়লে এই অবস্থা হবে?

এদের কথাবার্তায় আদিত্যের বিরক্ত বাড়লো বৈ কমলো না। তার শান্তি কেবল নূরের দর্শনেই ফিরবে। জানিনা আজ ওর কাঙ্ক্ষিত দর্শন কপালে জুটবে কিনা। ঠিক তখনই আদিত্যর ফোনে শিখার একটা ম্যাসেজ এলো। ম্যাসেজে লেখা ছিলো।
“আমার জন্য নোবেল পুরষ্কার আর নিজের জন্য হসপিটালের ইমার্জেন্সি বিভাগে বুকিং দিয়ে বাইরে আসুন। পরে অ্যাটাক ফ্যাটাক এসে গেলে আমি দায়ী নই”

ম্যাসেজ পড়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো আদিত্যের।হৃৎস্পন্দনের গতী বেড়ে গেল হাজার গুণ। তারমানে নূর আসছে। ওর দেয়া শাড়ি পরে আসছে। শাড়িতে দেখতে পাবে সে নূরকে। ইশশ, উত্তেজনায় পাগলই না হয়ে যায় আদিত্য। হয়ে গেলেও ক্ষতি নেই আজ। আদিত্য মুখে মাস্কটা লাগিয়ে দ্রুত পায়ে ছুটে বেড়িয়ে গেল বাইরে। জিদান ঘাবড়ে গিয়ে আদিত্যের পেছনে যেতে যেতে বলল,
–কী হয়েছে স্যার? কোথায় যাচ্ছেন? পেটের গড়বড় কী বেড়ে গেল? বাথরুম তো ভেতরেই আছে স্যার।

আবির পেছন থেকে নিরবে হাসলো। জিদান মিঞা কী আর বুঝবে আদি কেন ছুটে গেল। নিশ্চয় আমার বন্ধুর গ্যাস্টিকের ওষুধ এসে গেছে। যাই দেখি আমিও একটু ভাবির দর্শন করে আসে। দেখিতো কে সেই মহান নারী যে, আমার বন্ধুর এই বেহাল দশা করলো। বলতে বলতে আবিরও উঠে পিছে পিছে গেল। আদিত্য দৌড়ে এলো ভ্যানের বাইরে। এখান থেকে ক্যাম্পাসের মেইন গেট দেখা যাচ্ছে। আদিত্য অধীর নয়নে তাকিয়ে রইলো সেদিকে, নূরকে দেখার আশায়। হৃদবক্ষে চলছে ভয়াবহ বিদ্রোহ। স্পন্দনের গতি হচ্ছে তুফান মেল।

আদিত্যর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে আগমন ঘটলো সেই কাঙ্ক্ষিত নারীর। যার দর্শনমাত্র থমকে গেল আদিত্যর অন্তর্দেশ। থেমে গেল সব কোলাহল মুহুর্তেই।””” সক্রিয় আঁখি যুগল কেবল
আবদ্ধ হলো নূরের ওপর”””। কোনো নারী এতটাও মুগ্ধময়ী কীভাবে হতে পারে? ওই হৃদহরণীকে দেখে আদিত্যর ধাবিত স্পন্দন এবার অব্যাহতি নিলো যেন। বুকের বাম হাত রেখে শরীরের ভর ছেড়ে পেছন দিকে পড়ে যেতে নিলে পেছন থেকে আবির ধরে ফেললো। আদিত্য নূরের দিকে চোখ রেখেই বলে উঠলো।
–ইয়ার আবির, আজ আমি নিশ্চিত রিয়াজ ভাইয়ের গানের মতো ♬ জ্ঞান হারাবো, মরেই যাবো বাঁচাতে পারবেনা কেউ…

আবির সুযোগ সন্ধানী হয়ে বলে উঠলো,
–তাইলে মরার আগে তোর বিএমডব্লিউ কনভার্টার কারটা, আমারে দিয়ে যাইস। তোর জন্য পুরো দুই টাকা চার আনা দান করমু। সাথে তোর গাড়িতে যাদের নিয়ে ঘুরবো তারাও তোর রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবে। এমন আকর্ষণীয় অফার কেউ দিবোনা তোরে।ডিল ডান কর।

আদিত্যকে এভাকে দেখে জিদানও এগিয়ে এসে বলল,
–স্যার, কী হলো আপনার? অবস্থা কী বেশি খারাপ হয়ে গেল? আবির স্যার দেখেন, স্যারের শরীর কেমন কাঁপছে। কোনো কথাও বলছেনা। স্যারের গ্যাস্টিক বোধহয় এবার ম্রিগী রোগে পরিনত হয়েছে। স্যারের নিশ্চয় ম্রিগ্রীর অ্যাটাক হয়েছে। জলদি জলদি স্যারের নাকে জুতা ধরতে হবে। জুতা শুঁকলে স্যার ঠিক হয়ে যাবে।

আবির দম ফাটানো হাসি চেপে রেখে বলল,
–বাহ,পাইজামা মার্কা সাইন্টিস্ট বাহ্। কী অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বের করেছ রোগ সারানোর। এতো ট্যালেন্ট নিয়া রাতে ঘুমাও কেমনে মিঞা ? নিজেকে লুকিয়ে রেখ নাহলে নাসার লোক তোমার খবর পেলে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে।

জিদান গর্বে গদগদ হয়ে বলল,
–জি স্যার, ওই সব উপরওয়ালার কৃপা আরকি।এসব নিয়ে কখনো অহংকার করিনি।

–বাইদা ওয়ে জিদান মিঞা আমাদের ভাবি নিশ্চয় ওই সামনের মেয়েটা তাইনা?

–জি স্যার।

–তো ভাবির পাশে ওই আউট অফ ফোকাস মেয়েটা কে? পুরো তিনঘন্টা ধরে সিঙ্গেল চলছি আমি। আমার আবার বেশিক্ষণ সিঙ্গেল থাকলে এসিডিটি হয়ে যায়। তাই ভাবছি মিঙ্গেল হওয়ার জন্য এইটারে ট্রাই করি কী বলো।

জিদান তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
–স্যার স্যার প্লিজ, ওই আউট অফ ফোকাসের উপর আমি ফোকাস মারছি। তাই দয়া করে এটাকে আমার জন্য ছেড়ে দেন।

–ঠিক আছে জিদান মিঞা, যাও তুমিও কী মনে রাখবে কোন মহান ব্যাক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। আজ আমি তোমার জন্য সেক্রিফাইস করলাম। যাও বৎস,জিলো আপনি জিন্দেগী।

অন্যসময় হলে হয়তো এদের উদ্ভট কথাবার্তায় আদিত্য এতক্ষণে বিরক্ত হয়ে রাম ধমক দিয়ে বসতো। তবে আজ আদিত্য নিজের মাঝে আছে কোথায়।সেতো হারিয়ে গেছে তার প্রিয়তমার মাঝে। আশেপাশের সবকিছু তার জন্য এখন অদৃশ্য। দৃষ্টির সীমানা জুড়ে কেবল ওই এক মানবিই প্রতীয়মান হচ্ছে। যে নারীকে দেখতে দেখতে সে নিজের শেষ নিঃশ্বাসটা খুশি খুশি ত্যাগ করতে পারবে।
“বক্ষস্থলের কম্পায়মান যন্ত্রটাও তোমার রুপে আত্মহুতি দিয়েছে।
নিজ অস্তিত্বকে হারিয়েছি তোমার মাঝে, সে খোঁজ কি তোমার মন নিয়েছে?”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here