শুভ্রনীড়,পর্ব:৯+১০

0
595

#শুভ্রনীড়
#পর্ব০৯
#Shamu_Choudhury

ডুকরে কাদঁতে কাদঁতে আমান বেহুশ হয়ে গিয়েছিল, সে কেন এই রকম করেছিল তাও শ্রাবণ জানেনা। একটু আগেই আমানের জ্ঞান ফিরে, জ্ঞান ফিরার পর আমান যেইগুলা বলে শ্রাবণ তা শুনে নিজেকে বাকশক্তিহীন ভাবে। এইগুলা কি আদৌও সম্ভব???

সেদিন সিসিটিভি ফুটেজ এ আমান খুনির পায়ে একটা ট্যাটু দেখেছিল সেইম ট্যাটু আমানের পায়েও ছিল। আমান ছাড়া সেইম ট্যাটু ইউভীর পায়ে রয়েছে। আলভী রাহমান কে ইউভী মেরেছে এইটা সে বিশ্বাসই করতে পারেনি। ইউভী এত নৃশংস ভাবে নিজের বাবাকেই খুন করবে সে কখনো ভাবেনি, আমানের কল্পনার বাহিরে। সে ইউভীকে কত বিশ্বাস করতো সে ভাবতো ইউভী যতই খারাপ হোক সে কখনো কাউকে আঘাত করতে পারবেনা৷
এই জন্য তো একবার ইউভীর নামে মার্ডার কেইস হলে,ইউভীকে আমান মিথ্যা প্রমানের স্বাক্ষ্য দিয়ে জেল থেকে বের করে এনেছিল। তাতে ইউভীর উক্তি ছিল এই রকম সে কিছুই করেনি,
ড্রাইভ করার সময় কিছু লোক হেল্প চাইলে ইউভী তাদের হেল্প করে, পরর্বতীতে তারাই তাদের লোক কে মেরে ইউভীকে ফাঁসিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইউভীর বিরুদ্ধে পোক্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ থাকলেও আমান তা বিশ্বাস করেনি। সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছিল ইউভী। সে নিরীহ মানুষদের প্রতি অবিচার করেছিল এইটা ভেবে নিজেকে তার খুন করতে ইচ্ছে করছে। সেদিন যদি সে সব কিছু ভেবে দেখতো, আজ এত বড় পাপ করা থেকে বেঁচে যেত। সে ইউভীকে খুজতে চায় তাকে প্রশ্ন করতে চায় সে কেন নিজের বাবাকে খুন করেছিল? কি কারণে?
সে কেন খুনী বানিয়েছে নিজেকে??

এই সবের মাঝে দুইদিন চলে যায়, আমান নিজেকে দোষী ভাবলেও সে চায় সবাই তাকে আগের মত দেখুক তাই তার প্রচেষ্টা

_আরে ভাই বলনা?? এই রকম কেন করতেছিস? সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছি, কিছু তো টিপস দিবি নাকি??

(লাগাতার বার বার শ্রাবণ কে আমান এক কথা বলে যাচ্ছে। যে আমান কে রোমান্সের কিছু টিপস শিখিয়ে দিতে। শ্রাবণ এক কথায় বলে দেয় সে পারবেনা৷ তবুও আমান তার পিছু ছাড়েনা। অবশেষে তারা নেট ঘাটতে লাগল,কেননা শ্রাবণ এখনও ওসব প্রেম ট্রেম করেনি রোমান্স কিভাবে করে সে কিভাবে বলবে?? তার উপর তার আবার টিপস চাই)

শুভ্রা তার বেল্কুনিতে অবস্থানরত স্যাকুলেন্ট গুলোতে পানি দিচ্ছিলো। আমান এসেই তাকে জড়িয়ে ধরে। শুভ্রার বুঝতে বাকি থাকেনা রোজকার অভ্যাস এইটা তার। শ্রভ্রা চুপ করে মুচকি হেসে পানি দিতে থাকল। আমান তার নড়চড় না দেখে বলে উঠে,,

__তোমাকে কি নামে ডাকলে খুশি হবে? ময়না পাখি,টিয়া পাখি,চড়ুইপাখি, বাবুই পাখি,জান পাখি না অন্য কোন পাখির নাম??

(এই রকম প্রশ্ন শুনে শুভ্রা কি রিয়্যাক্ট করবে ভেবে পাইনা এইটা আবার কি বাচ্চামো?? আমান আবার বলে উঠে,,)

__প্রাণপাখিইইইইইই
(বলেই সে এক নয়নে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে থাকে,শুভ্রা কি রিয়াকশন দিবে তা দেখার জন্য শুভ্রা আমানের দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। আমান বলে প্রাণপাখি তে তাহলে তুমি খুশি?? আচ্ছা সেইটাই বলব)

_কি বাচ্চা দের মত করতেছেন?? এইগুলা ডাকের থেকে তো বেশি খুশি হই আপনার ওইটা দেখে(এই বলে শুভ্রা গাল টিপে হাসতে থাকে)

_আমান বেকুবের মত বলে কোনটা দেখে? বল আমি সেইটাই দেখাবো

_শুভ্রা আমানের গাল টেনে বলে,
আপনার টোল মার্কা হাসি দেখে।

আমান ফিক করে হেসে বলে,,
__কিইইই?? হাসি তাও আবার টোল মার্কা??এই বলে সে হাসতে থাকে। শুভ্রা রাগী লুকে তার দিকে তাকিয়ে চলে যেতে লাগলে আমান এক হেচকায় বুকে জড়িয়ে তাকে বলে,,

_প্রাণপাখি,,,,
জানো আমার হৃদ্ররাজ্যের
রাজরাণী শুধুই তুমি__
তোমাকে আমার হৃদরাজ্যের
হৃদমহলের অলিতে গলিতে
তোমায় বিরাজমান রাখতে চাই।
কানায় কানায় তোমার ভালবাসা দিয়ে
সবকিছু পরিপূর্ণ করতে চাই,
তোমার সৃতিচারণ কে
পুষ্প আকারে
আমার হৃদমহলের উদ্যানে
সজ্জিত করে রাখতে চাই।

আমি আর কাউকে না শুধু আমার ছায়াবিনী কেই চাই চাই চাই____

(এই বলে আমান শুভ্রার কপালে চুমু খেয়ে বলে হবেনা আমার ছায়াবিনী? থাকবেনা আমার ছায়া হয়ে? শুভ্রা অশ্রুসিক্ত লোচনে আমানের দিকে তাকিয়ে বলে,,

__আমি আপনার ছায়াবিনী হতে চাই
যে অন্ধকারে আপনার পাশে থাকবে,,

আমি আপনার ছায়া হয়ে থাকতে চাই
যে আলোতেও আপনার পাশে থাকবে।

আমি আপনার ছায়াবিনী ছায়া হতে চাই,
যে চাইলেও কখনো আপনাকে ছেড়ে যেতে পারবেনা আর কখনো যাবেওনা।।।

এই বলে আমানের বুকে শুভ্রা মাথা রেখে আবার ও বলে,

_জানেন আপনার ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কথাবার্তা, চালচলন ইত্যাদি সবকিছু আমাকে টানে, শুধু টানে না বার বার ভালবাসতে বাধ্য করে। আমি জানিনা আপনার মাঝে কি আছে তবুও আমি আপনার মাঝে সুখ খুজে পাই। এই যে আপনার বুকটাতে যে সুখ তা পৃথিবীর অন্য যে কোন সুখ কে হার মানাতে প্রস্তুত।

__দিনশেষে তুমি আর শ্রাবণ ছাড়া আমার কেউ নেই প্রাণপাখি।
ভালোবাসি বড় বেশি
(এই বলে আমান তাকে আরোও শক্ত করে বুকে ধরে রাখে যাতে তার ছায়াবিনী কে সবসময় সে পাশে পায়))

____অন্য দিকে
সামিহা ফিরে আসতে চেয়েও আসেনি। তাদের প্রধান ইউভী আর সামিহাকে এক লোক কে খুন করতে পাঠিয়েছে। তাদের প্রধান চায় এক হাজার লোকের শির(মাথা)। তধন্ন্যে নয়শত নব্বই টি তিনি পেয়েছেন। বাকি শুধু দশ টি এই দশ টির জন্য লোক বাছাই করা শেষ তার মাঝে একটিকে তারা আজ খুন করতে যাচ্ছে আর শেষ শিরটি হবে শুভ্রার। কেননা,,তাদের প্রধান যখন ইউভীর বাবাকে খুন করতে বলে সে রাজি হয়না। যখন সে রাজি হয়না তখন ইউভীকে বলা হয় তার বাবার উনার সব সম্পত্তি ইউভীর আরেক ভাইকে দিতে চায়৷ ইউভী জানতোনা তার কোন ভাই ছিল। প্রধান ইউভীকে অনেক মিথ্যা ভুল ভাল বুঝায়। উনি বলেন ইউভী যখন বাসায় ফিরতোনা তার বাবা অন্য মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করতেন তারা বাবা ছিল ফুর্তিবাজ। এজন্য তার মায়ের অসুখ হলেও তার বাবা মেয়েতে মত্ত ছিল যার কারণে ইউভীর মা অকালেই মারা যায়। এরূপ অনেক কিছু বুঝানোর কারণে ইউভী তার বাবা কে খুন করতে রাজি হয়। সে তার বাবার কে প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে যার কারণে তার বাবাকে মারার আগে ইউভী এই সব কিছু বল্লেও তার বাবা প্রতি উত্তরে তাকে সঠিক টা জানাতে পারেন নি। প্রধান বলেছিল তার বাবাকে খুন করে তার শির এনে দিতে। কিন্তু যতই হোক আলভী রাহমান ইউভীর বাবা ছিলেন তাই ইউভী তার বাবার শিরঃচ্ছেদ না করেই ফিরে আসে। ফলস্রুতে এখন তাকে শুভ্রার শির এনে দিতে হবে।

কিন্তু ইউভী জানেনা এই সব কিছু তার প্রধানের চাল। তার প্রধানের শেষ স্বিকার শুধু শুভ্রা না ইউভী সামিহা দুজনেই। সে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এত খুন করে আসতেছে শুধু তাদের যাদের রাশি প্রধানের কোন রাশিমালার সাথে মিলে যায়। কিন্তু সে জানেনা এসব কুসংস্কার ব্যতীত কিছুই না।

____
সামিহা আর ইউভী প্রতি বারের মত সহজেই এবারো একটা খুন করে প্রধানের কাছে ফিরল। তারা এমন সূক্ষ ভাবে কাজ করে ফিরেছে যে তাদের দেখলে যে কেউ বলবে এরা খুন করা তে দক্ষ বৈকি অন্য কিছুনা।

প্রধানের ইউভী আমানের মত আগে অনেক অনেক দাস ছিল। তারা খুন করে প্রধানের ইচ্ছামত শির সংখ্যা পূর্ণ করলেই প্রধান তাদের নির্মম ভাবে মেরে ফেলতো। এখনও তার ব্যতিক্রম হয় না এবার পালা আসবে সামিহা আর শুভ্রদের। এই ভেবে প্রধান অট্টহাসিতে মেতে উঠে।

এসব কিছু যেন সামিহা আর ইউভীর আড়ালে আবডালে লুকিয়ে তাই তারা কিছুই জানতে পারেনি।

চলবে??

#শুভ্রনীড়
#পর্ব১০
#Shamu_Choudhury

শুভ্রার ফজরের ওয়াক্তে ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে আমান তাকে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। তাকে দেখে সে মুচকি হাসে মনে মনে ভাবে আজ সকাল টা শুরু হক নতুন কিছু দিয়ে,
যেই ভাবা সেই ডাক।

এই যে শুনছেন?? একটু উঠবেন?

শুভ্রার আকস্মিক ডাকে আমান ধরফরিয়ে উঠে, তার মনে এখনও ইউভীর কথা বাজে সে যে তার ছায়াবিনীর ক্ষতি করতে চায়। কেন করতে চায় আমান তা জানেনা, তাই একটু বেশি তার ছায়াবিনী কে নজরে রাখতে চায়। সে যেমন চায় তার ছায়াবিনী তার পাশে ছায়াবিনী ছায়া হয়ে থাকুক সে রকম ভাবে সেও তার পাশে থাকতে চায়। সে এসব ভেবে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শুভ্রার চোখে করুণ ভাবে চোখ রাখে।
আমান শুভ্রার দু গালে দু হাত রেখে তাকে ভীত গলায় প্রশ্ন করে,

তুমি ঠিক আছো ছায়াবিনী? তোমার কিছু হয়নি তো? এর আগে তো তুমি আমাকে এইভাবে কখনো ডাকোনি? কি….

আরে থামেন থামেন। একসাথে এত গুলা প্রশ্ন। বাব্বাহ!! আমার এত কেয়ার কেন করেন? আমার কিছু হয়নি৷ আজ চেয়েছিলাম যাতে ফজরের ওয়াক্তে ঘুম ভেঙে যায় আর আমরা একসাথে নামাজ পড়তে পারি।

আমান কিছু বলতে লাগলেই শুভ্রা তার দুই হাতের উপর হাত রেখে বলে

কথা তো শেষ হতে দিবেন নাকি? শুনুন আমি চেয়েছিলাম বিয়ের প্রথম রাতেই এই নফল নাজাজ টা পড়তে কিন্তু আমার ঘুমের জন্য হয়ে উঠেনি। আল্লাহর কাছে সুকরিয়া
আদায় করতে হবে, তিনি যে আমাকে উত্তম জীবন সঙ্গি দান করেছেন তার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ দুজনে এক সাথে আদায় করবো। পড়বেন না??

আমান শুভ্রার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আবার তার হাত ধরে চুমু খায়

অব্যশই, কেন নয়? তবে অজু টা তুমি করে দিবা? এতে একটা তৃপ্তি পেতাম এই বলে আমান খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। তার হাসির উপর শুভ্রার বরাবরই দূরবলতা কাজ করে। সে আর আমান কে মানা করতে পারেনা৷
সে আর আমান অজু করে বাহিরে আসলে শুভ্রার ওরনার আচল দিয়ে আমান মুখ মুছে আর শুভ্রার মুখটাও মুছে দেয়। তারপর আমান একটা জায়নামাজ দৈর্ঘ্যের দিক না বিছিয়ে প্রস্থের দিক বিছায়। তারপর দুজনেই একি জায়নামাজে নামাজ আদায় করে। নামাজ আদায় পর আমান শুভ্রা কে বলে সে কোরআন পড়তে পারে কিনা!
শুভ্রা বলে অনেক আগে পড়তে পারতো এখন একটু আধটুকু ভুল যায়। আমান তাকে বলে সে শিখিয়ে দিবে কাল থেকে তার পড়া শুরু। এই বলে আমান শুভ্রাকে নিয়ে নিচে বাগানে নিয়ে যায়,,
শুভ্রার কথাতে সে পাশের জায়গাটায় কাঠগোলাপ লাগিয়েছিল আজ কয়েকটা ফুটেছে। আমান শুভাকে দোলনাতে বসায়। আর সে কাঠগোলাপ আনতে যায়। শুভ্রা নিজ মনে দোল খেতে থাকে।

অন্যদিকে দুই কপোত-কপোতী উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বসে আছে। আজ রাত টা তারা ঘুমায় নি। তাদের জীবন টা কেমন জানি ফেকাশে হয়ে গেছে না আছে তারে কোন রঙের ছোঁয়া৷ সবকিছুই যেন বর্ণহীন।
এত নিরবতার মাঝে ইউভী পাংশুটে ভাব নিয়ে বলে উঠে

_জানো সামিহা। আমি একজন নরপশু। যে নিজেই নিজের বাবাকে খুন করতে দ্বিধা করিনি। কত নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছি। আমি আবার আগের ইউভী হতে চাই সামিহা যে সবাই কে ভালোবাসতো। তাকেও সবাই ভালোবাসতো। আমি সেই ইউভী হতে চাই যে বন্ধু ছাড়া সবকিছুতে অন্ধ ছিল। হিংস্র পশু হয়ে বাঁচতে খুব কষ্ট হয়।

সব কিছু সহজ না ইউভী। তোমাকে বলা হয়েছিল পরে চাইলেও তুমি পিছু ফিরে তাকাতে পারবেনা৷ তুমি শোনোনি একবার এই রকম গন্তব্যস্থীর করলে সে পিছু ফিরে তাকাতে পারেনা। তুমিও পারবেনা৷

সামিহা এই সব বলে ভাবতে লাগে, আমিও চাই ভালো হতে তবে কখনো তা সম্ভব না ইউভী। তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আমার হাত থেকেই তোমার নিস্তার নেই। সবকিছুতে রয়েছে মরণ খেলা। আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তোমাকে বলি দিতে হবে৷ যার জন্য তোমাকে আমার আটকাতে হবে। এই সব ভেবে সামিহা আবার বলে উঠে,

তুমি নিজের বাবার খুনী। এত মানুষ কে হত্যা করেছো। তুমি নিজে যদি ভালো হতেও চাও তাহলে তোমাকে জেলে যেতেই হবে সেখানে হয়ত তোমার ফাঁসি না হলে যাবতজ্জীবন কারাদণ্ড হবেই। তার থেকে তুমি তোমার উদ্দেশ্য অটল থাকলে অমর হতে পারবে। এইটা কি লাভ না বল??

কিন্তু আমান আমাকে বলেছিল আমি ভাল হয়ে গেলে তারা আমায় অনেক ভালোবাসবে। সে আমার কিছুই হতে দিবেনা। আগের বারের মত আমাকে বাঁচাবে। ইউভী হাসি মুখে বলে উঠে। কিন্তু সামিহা তার হাসিতে না হেসে তিক্ততার সাথে বলে উঠে,

মূর্খের মত কথা বলোনা। যাকে তুমি মারতে চেয়েছো সে তোমাকে ভালোবাসবে? তাও এত কিছুর পর তুমি ভাবলে কিভাবে??

সামিহার কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে ইউভীর মন খারাপ হয়ে যায়। সে সামনে তাকিয়ে ভাবে, আজ যদি সে লোভে পড়ে না আসতো তাহলে তার জীবন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতই হত৷ যদি সে ডায়েরীটা নে পেত আজ তাকেও সবাই ভালোবাসতো৷ এ সব ভাবতে ভাবতে ইউভীর গাল বেয়ে এক ফোটা অশ্রু কণা পরে যায়৷

ভদ্রতা কি বুঝ?? বেয়াদব কোথাকার। দেখা যাচ্ছে কেউ দরজা খুলে দিচ্ছেনা এইভাবে কেউ বার বার নক করে?? আর এই বাড়িতে তোমার কি চাই?

শ্রাবণ সারারাত কাজ করেছিল সকালে ঘুমাবে কিন্তু তখনও ব্যস্ত থাকায় দুপুরে গোসল করেই ঘুমিয়ে পরে। একটু ঘুম না হতেই কলিং বেল বেজে উঠে। সে ভেবেছিল কেউ হয়ত দরজা খুলে দিবে কিন্তু বার বার কলিং বেল বাজার কারণে নিজেই এসে দরজা খোলে। দরজা খুলেই সে সামিহাকে দেখে। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরে যায়।ইচ্ছে হয় সামিহাকে বেধড়ক মারুক কিন্তু সে পারেনা। যার জন্য সে প্রশ্ন টা করে,,

না মানে কয়েকদিন ছিলাম না। তাই শুভ্রার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো। শুভ্রা কে পেলে সব বলে দিবো।

( এর মাঝেই মিরা চলে আসে। সে শ্রাবণের হসপিটালের একজন ডাক্তার। তারা এর আগে একই মেডিকেল স্টুডেন্ট ছিল। বলতে গেলে শ্রাবণের আমান বাদে সে এক মেয়ে বান্ধবী আছে। যে কাজের জন্য অন্য জায়গায় ছিল। এতদিন পর ফিরে এসেছে সে এসে বলে,,)

কে আপনি? কাকে চান? ভিতরে আসুন।

সামিহা ভিতরে ঢুকতে চাইলে শ্রাবণ বলে উঠে মেরু তুই চুপ কর৷ এই মেয়ের হাবভাব ভালো না। একে একদম এলাউ করবিনা। এই তুমি বের হও তো।

(এই বলে শ্রাবণ তাকে বাহিরে টেনে এনে দার করায়। সে জানে এই মেয়ে মোটেও সুবিধার না। সেদিন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় আবার এতদিন পর আছে। দরকার নাই এমনিতে অনেক ঝামেলা আছে। কিন্তু সামিহা যাওয়ার বদলে চেচামেচি শুরু করে দেয়। এতে শুভ্রা আর আমান ও বের হয়ে আসে শুভ্রা সামিহা কে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। শুভ্রা কে দেখে শ্রাবণ থেমে যায় কারণ শুভ্রা অনেক কিছুই জানেনা৷ তার সামনে এমন কিছু করা উচিত না যাতে আমান যে ইউভী না এইটা বের হয়ে আসে)

কোথায় ছিলি এতদিন? আমার বিয়েতেও ছিলিনা? সব কিছু খুলে বল তো

শুভ্রার কথা শুনে সামিহা কাঁদো কাঁদো মুখের ভাব নিয়ে তার বানানো গল্প শুরু করে দেয়

দোস্ত তুই বলার পর আমি শপিং এ যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অনেকজন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তারা আমার গাড়ি লূট করে আর আমাকে বলে আমার মা খুব অসুস্থ।সে বিশ্বাস করতে না চাইলে তাকে তার মার ছবি দেখানো হয়। তারাই আমার ভিসা করে দিয়েছিল যার জন্য আমি চলে গিয়েছিলাম।

কিন্তু তোকে খবর কে দিয়েছিল?? তাদের চিনিস? অচেনা লোক তো খবর দিবেনা?

_জানিনা রে। হতে পারে আমান এই বলে সামিহা শুভ্রার দিকে তাকায়। তার ও আমানের কথা মনে পরে। এতদিন তার মনেই ছিলোনা।এতদিনে আমান কে সে দেখেইনি। আজব একবার অন্তত চোখে পরার কথা ছিল। শুভ্রা এত ভাবেনা। সে সামিহাকে আমান আর তার পিক দেখায় আর বলে এইটা তার ইউভী৷

সামিহা সব জেনেও কিছু বলেনা এমন ভাব করে সে ইউভীকে প্রথম দেখছে। আর সে তো জানে আসল ইউভী কে? কিন্তু সে শুভ্রা কে কিভাবে বলবে খুজে পায়না৷ তাকে এমন কিছু মনে করে দেওয়া উচিত যা আমানের কাছে নাই। যা প্রমান করে দিবে আসল ইউভী কে?

এর মাঝে আমান শুভ্রাকে ডেকে পাঠায়। শুভ্রা চলে গেলে সামিহা ইউভী কে ফোন করে।

হ্যালো,,
হ্যাঁ হ্যালো। তোমাকে কেউ কিছু বলল? এতদিন কোথায় ছিলে?

না এখনও কেউ কিছু বলেনি আমি সব বুঝে নিব। শুভ্রা কে আমানের কথা বলার পর তুমি শুভ্রার সামনে আসলে তাকে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। তারপর আমাদের উদ্দেশ্যে হাসিল হবে।

হুম ঠিক আছে। (এই বলে ইউভী ফোন কেটে দেয়। সে চায়না শুভ্রা মারা যাক। এ জন্য যা করার সে করবে। সে আর কাউকে মারতে চায় না সে বাচঁতে চায় বাচাঁতে চায়)

___হ্যাঁ আমায় ডেকেছিলে??

হুম কোথায় থাকো সারাদিন?আমান শুভ্রাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে।

আমায় ছাড়া বুঝি আপনার চলে না?

উহহ, প্রাণ ছাড়া কেউ বাচঁতে পারে? আমার প্রাণপাখি তো তুমি। তুমি ছাড়া বাচঁতে না পারলে চলবো কিভাবে??

হুম তাই তো। আর আমায় ছাড়া আপনাকে চলাও লাগবেনা বুঝছেন। আপনার ছায়াবিনী ছায়া হয়ে থাকবো। বলেন ডাকলেন কেন? এতদিন পর সামিহা এসেছে।

সামিহার সাথে থাকা লাগবেনা৷ ওর থেকে মিরা বেশি ভালো ওর সাথে থাকবা। আচ্ছা তোমার বান্ধবী এতদিন কোথায় ছিল?

আন্টির অসুস্থতার জন্য সে বাসায় গিয়েছিল।

অহ। সে তো জানতোনা আমরা এখানে আছি। কেউ ই জানেনা তাহলে সে খোঁজ পেলো কিভাবে? তুমি বলেছো শুভ্রা??

না না। সামিহার সাথে তো আমার কথায় হয়নি। শ্রাবণ ভাইয়া হয়ত বলেছে।

আমান বলে উঠে, জানিনা কেন ছায়াবিনী। সামিহাকে আমার ভালো মনে হয়না। তুমি কিছু মনে করো না। কিন্তু তার থেকে সাবধানে থেক প্লিজ।

আচ্ছা আমি জানি অই অনেক ভালো। আমি ওর কলিজা ওর থেকে কোন ভয় নেই। চাচ্চুর কি হল? কিছু জানা গেলো?? শুভ্রা করুণ কন্ঠে বলে উঠে।

অনেক কিছু জানা গেছে প্রাণপাখি। আমার সাথে আসো। এই বলে শুভ্রাকে আমান নিয়ে যায়_____
চলবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here