#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ৫
“আজিকে তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে”
___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বর্ষার অবসানে রূপময় বাংলার ঋতু পরিক্রমায় স্নিগ্ধতা- কোমল তা নিয়ে আবির্ভূত হয় শরৎকাল! বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ ১৩ই ভাদ্র! ভাদ্র মাসের তেরো দিনেও বর্ষার ছোঁয়া যেনো লেগে আছে ধরণীর বুকে,,তারই বারবার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে টিপটিপ বৃষ্টি! বর্ষা যেনো ধরণীকে ছাড়তেই চাইছে না,, ছেড়ে দিলেই হয়তো হারিয়ে যাবে এক অতুল গহ্বরে যার দেখা পাওয়া যাবে আবার বছর ঘুরে!..
শরৎ মানেই নীল আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা,,শরৎ মানেই আকাশের গায়ে যেনো মেঘ-তুলোর ওড়াউড়ি! কখনো সাদা, কখনো আবার কালচে রূপ ধারণ করে শরৎের আকাশে ভাসা-ভাসা মেঘের দল,, ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায় শরৎের আকাশ! নীল আকাশে সুতো-নাটাইহীন সাদা ঘুড়ির মতো দিন-রাত ঘুরে বেড়ায় মেঘের দল! গৌধুলিলগ্নে সোনারঙে রঙিন হয়ে ওঠে আকাশ! বিন্দু জানালার ধার ঘেষে বসে একমনে তাকিয়ে আছে আকাশের নিশ্চুপ মেঘের ওড়ে বেড়ানোর খেলাগুলোর দিকে! শরৎের এই নীল আকাশে খুনসুটিতে মেতেছে দুই চিল! বিন্দু মনে মনে দুই চিলের মাঝে এক চিল নারী আরেক চিল পুরুষ ভেবে নিলো! ওর কাছে মনে হলো নারী চিল পাখিটি ভীষণ রেগে আছে তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ পাখিটির ওপর,,তাইতো কিছুটা দূরত্ব বজার রেখছে তার চিলটির থেকে! কিন্তু পুরুষ চিল পাখিটি এই দূরত্ব মানতে নারায,, সে বারবার তার প্রেয়সীর কাছে যাচ্ছে! প্রেয়সী তাকে যতই অবহেলা করুক তাকে সে এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বে না! বিন্দুর মুখের কোনে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো–
হায়রে পাখি,,তাদের মাঝেও ভালোবাসা আছে! আছে একে ওপরকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা,, কিন্তু বিন্দু? বিন্দুরও কি তাই? নাহ,,বিন্দুর ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিএ! বিন্দু যাকেই আকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেই যেনো মাঝপথে তার হাত ছেড়ে চলে যায় আর দিয়ে যায় একরাশ দুঃখ-কষ্ট! তার ছেড়ে যাওয়ার মানুষগুলো যদি জানতো তারা চলে যাবার পর বিন্দুর মনের অবস্থা ঠিক কি হবে তাহলে কি পারতো এতো পাষাণ হতে? না পারতো শিশির আর না পারতো রুদ্র! কিন্তু বিন্দু এটাই ভেবে কূল-কিনারা পায় না যে,, কেনো আবার তার অনাকাঙ্ক্ষিত সেই পুরুষটি ফিরে এসেছে,, যে তাকে ছেড়ে এক অন্য নারীতে আশক্ত হয়েছিলো তার সাথে বিধাতা কেনো আবার এক করলো! বিধাতা কি চায়? পরীক্ষা নিতে চায়? আর কতো,,আর কতো পরীক্ষা নিবে? কেনো সে বারবার হারানোর বেদনা পাবে? তার কি একটু সুখও প্রাপ্য নয়? হয়তো প্রাপ্য নয়তো নয়!..
বিন্দুকে এমন আকাশ-পাতাল ভাবতে দেখে শিশির ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বিন্দুর দিকে,,,
শিশিরঃ বিন্দুবালা,,
বিন্দু একবার পিছনে তাকালো ঠিকই কিন্তু তার ভাব-মূর্তির কোন পরিবর্তন ঘটলো না,, শিশিরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আবার আগের কাজেই মন দিলো!..
কিন্তু শিশিরের কাছে এই ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হলোনা,, কিন্ত কেনো? বিন্দু তাকে নিরবে অপমান করলো সেই জন্যে? নাকি অন্য কোন কারণে? হয়তো অন্য কোন কারণেই হবে,, শিশির ভাবছে তার বিন্দুতো এমন ছিলো না,, এতো শান্ত এত চুপচাপ এগুলো তো বিন্দুর চ্যাপ্টারেও ছিলোনা! যেখানে বিন্দুকে ধমক দিয়েও দমিয়ে রাখা যেতো না,,ওলওয়েজ বকবক করতো আর সেই বিন্দু কিনা আজ কথার পৃষ্ঠেও কথা বলার প্রয়োজন মনে করে না, এতো পরিবর্তন? বিন্দু বরাবরই ছিলো উড়নচণ্ডী মেয়ে,, বিন্দুর মতো ডানপিটে মেয়ে বসে থাকবে এক ধ্যানে,,সেও কি সম্ভব? এটা যেনো শিশিরের মানতে কষ্ট হলো! শিশিরের হাজার অপমানও গায়ে না মেখে ফেবিকলের মতো চিপকে থাকতো শিশিরের সাথে তাহলে আজ কি এমন হলো? এতোটা নিরব কেনো,,শুধুই কি ওর জীবনের দূর্ঘটনাগুলো? হয়তো তাই,,বিন্দু ছিলো খুবই চঞ্চল, ডানপিটে, একরোখা আর জেদি মেয়ে! কিন্তু আজকের বিন্দুকে দেখে শিশির মন জানান দিচ্ছে এই বিন্দু আর সেই আগের বিন্দু নেই! কিন্তু কেনো? তার মনে কি খুব বেশীই কষ্ট? সাত বছরে এতো পরিবর্তন? যার জন্যে আমার বিন্দুবালা একরোখা, জেদি,চঞ্চল রমনী থেকে হয়ে উঠেছে এক শান্ত-শিষ্ট, নিশ্চুপ রমনী!..
শিশিরঃ সবাই ব্রেকফাস্টের জন্য অপেক্ষা করছে তোমার,,খাবে চলো! আর মেঘের হয়তো ক্ষুদা লেগেছে ওকে একটু খাইয়ে দিবে?.
বিন্দু এবার ঘুরে বসে,,গায়ের ওড়নাটা সুন্দর করে মাথায় দিয়ে কিছু না বসে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগে,,তখনি আবার শিশির ডেকে ওঠে,,
শিশিরঃ বিন্দুবালা,,
বিন্দুঃ ( ঘুরে তাকিয়ে) ডোন্ট কল মি দ্যাট,, গত পরশুদিন থেকে এই নামটা বারবার শুনে আসছি,,বিশ্বাস করেন আমার বিরক্ত লাগছে! এই নামে আমাকে আর ডাকবেন না! এই নামটা আমার কাছে ছিলো অনেক স্পেশাল,, এক ভালোবাসার নাম ছিলো যা আমার শিশির আমাকে ভালোবেসে ডাকতো কিন্তু সেই সাত বছর আগেই মানুষটার সাথে সাথে নামটাও হারিয়ে গেছে! আজকে এই শিশিরের সাথে আমার শিশিরের মাঝে রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাৎ! আপনার মুখে এই নামটা বড্ড বেমানান লাগছে,,ফার্দার আর এই নামে ডাকবেন না! আপনার মতো কোন প্রতারকের কাছে আমি আমার ভালোবাসার নামটা শুনতে চাই না!..
বিন্দু খুব শান্ত ভাবে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আর শিশির ধপ করে খাটে বসে পড়ে যায় আর ভাবতে থাকে,,,
“কেনো মালিক,,কেনো আমার সাথে এমনটা হলো! বেশতো ছিলাম মেঘলার সাথে,,কেনো সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো! জীবন কোথায় আমাকে এনে দাঁড় করালো,,আমি প্রতারক? আমি কি এতোটাই অযোগ্য বিন্দুর কাছে?যে,, আমি এই নামটা ডাকার অধিকারও হারিয়ে ফেলেছি! এতোটা ঘৃণা করে আমাকে? আমার প্রতি এতো বিতৃষ্ণ,, আর যাই হোক আমি প্রতারক না! আমি কি সত্যিই এতোটা অপমান পাওয়ার যোগ্য? হয়তো তাই! তাইতো, বিধাতা এমন করলো আমার সাথে, সারাজীবন অপমান সহ্য করার পথ খুলে দিলো! ( একটা জোরে শ্বাস নিয়ে) ছোট থেকেই আমি এই জিনিটা মেনে নিতে পারিনা,,যেকারোর অপমাণ আমার কাছে বিতৃষ্ণা লাগে! শিশিরের চোখ হঠাৎ করেই লাল হয়ে গেলো আর কিছু ভাবতে পারছে না! উঠে গেলো বিন্দুর বেলকোনিতে,, হয়তো নিকোটিনের ধোঁয়া ওড়াবে! মেঘলা চলে যাবার পর এই একটা জিনিসই শিশিরের সংগী হয়েছে,, আপন হয়েছে! তাইতো যখন-তখন শিশির তাকে বিনা দ্বিধায় কাছে টানে, নিজের মনের কষ্ট গুলো দূর করতে কিন্তু শিশির কি জানে এই নিকোটিনও তার সাথে বেইমানি করছে? তাকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে? হয়তোবা জানে,,কিইবা হবে এই অবহেলার জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার! জীবন যেভাবে তাকে চালাচ্ছে সেও নিশচুপে তার অনুসরন করে চলে যাচ্ছে!”
বিন্দুরা ওদের বাড়ি এসেছে কাল রাত নয়টার দিকে! সাথে শুধু তৃষা এসেছে,, ইশাকে হাজারবার জোর করেও কেও আনতে পারেনি! আসবেই বা কি করে ওর যমরাজ যে ওকে শাসিয়েছে! তৃষাও বোনের জন্য আসতে চায়নি কিন্তু ইশা, রুদ্রা আর শিশির-বিন্দুর জোরাজোরি তে এসেছে!..
আজকে সকাল থেকে বাড়িতে যেনো রান্নার হুর পড়েছে! “নয়া দামান” এসেছে বলে কথা শ্বশুর বাড়ি তো হুলস্থুর ঘটনা ঘটবেই! তবে এসব কিছুই যেনো বিন্দুর ভালো লাগছে না! মেহমান সবাই চলে গেলেও আছে শুধু বিন্দুর দুই মামী,চাচী, আর একটা ফুপু ( এদের কর্তারা চলে গিয়েছে) আর বিন্দুর কাজিনরা! সবাই আগামীকাল চলে যবে সাথে বিন্দুও কাল চলে যাবে ওর শ্বশুরবাড়ি! তাই বিন্দুর মা আজকে মেয়ের আর মেয়ের জামাইয়ের সব পছন্দের খাবার রান্না করবে দুপুরে!..
ডায়নিং টেবিলে,,
রেবেকাঃ বিন্দু জামাই কোথায়? সে তো তোকে ডাকতে গেলো তুই আসলি জামাই আসলো না? ( বিন্দুর চাচী)
বিন্দুঃ আমি কি জানি নাকি,, আমাকে বলার পর আমি চলে এসেছি,,তোমরা গিয়ে দেখো কোথায়!..
তন্দ্রাঃ বিন্দু এটা কেমন কথা? জামাই ছাড়া একাই খেতে বসেছিস?( বিন্দুর মা)
বিন্দুঃ ( কপট রেগে) তাহলে কি চাও আম্মু আমি না খেয়ে ওঠে যাবো? আর আমি খাচ্ছি কোথায়? দেখছো না,,রুদ্রাকে খাওয়াচ্ছি! ও আমাকে ছাড়া খায়না,,
নূরজাহানঃ মা রাগ করিস না,,ব্যাপার টা কেমন দেখায় না জামাই কে রেখেই বসেছিস তাই তোর মা বলছে! নিশান্ত যা তো বাবা তোর ভাইয়াকে ডেকে আন! জামাই মানুষ আমাদের এমন খাপছাড়া ব্যাবহার শোভা পায় না! ( বিন্দুর বড় মামী)
নিশান্তঃ আচ্ছা জিয়াম্মা যাচ্ছি!( বিন্দুর ছোট মামার ছেলে)
নিশান্ত ওঠে চলে যায়,,বিন্দু আর কিছু বলে না! কিন্তু বিপত্তি ঘটে তৃষার মনে,,সে ভাবে তার ভাইকে আবার অবহেলা করছে না তো নতুন ভাবী! হয়তো নতুন নতুন তাই,,তাই আর বেশী কিছু ভাবলো না আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে,,সে নিজেও খাচ্ছে! আর বিন্দু এদিকে রুদ্রাকে খাওয়াতে মন দেয়! মেঘ ছিলো নকশার কাছে ( বিন্দুর বড় মামার মেয়ে)
নকশাঃ বিন্দুরে তোর ছেলেতো কান্না করছে,,ফিডার খাচ্ছে না আমার কাছে দেখ,,রুদ্রাকে খাইয়ে তাড়াতাড়ি কোলে নে!..
বিন্দুঃ হ্যা আপু,, আর এক মিনিট দাঁড়াও হয়ে গেছে রুদ্রার খাওয়া! এই মেয়েটা তো নিজের হাতে জীবনেও খাবে না! ( রুদ্রার দিকে তাকিয়ে) দেখেছো তোমাকে বললাম না ভাই কাঁদবে এখন হলোতো!..
রুদ্রাঃ ও মাম্মা ভাই আমাকে কি হিংসে করছে,,বেশ হয়েছে! হিহিহি,, সেই কি শুধু একা মাম্মার আদর খাবে, কোলে থাকবে সারাদিন? আমিও নিবো! এখন দেখো মেঘবাবু কেমন লাগে হিহিহি,,( খিলখিল করে হেসে ওঠে আবাও)
ইন্দুঃ হিংসে তো দেখছি আমাদের রুদ্রাবতী করছে তার ভাইকে! হুম?
রুদ্রাঃ ইন্দুমতী তুমি চুপ করো,, আমি কোনো হিংসে করছি না? আর আমার ভাই আমি যা খুশী করবো তোমাদের তাতে কি?
বিন্দুঃ রুদ্রা,, খাবার সময় কথা বলতে হয়না কতবার বলেছি তোমায়! আর তাড়াতাড়ি খাও,,ভাইকে নিতে হবে!..
তখনি নিশান্ত আর শিশির আসে,, বিন্দুর দিক এক নযর তাকিয়ে বিন্দুর পাশের ফাঁকা চেয়ারে বসে! কিন্তু বিন্দু একবারও তাকিয়ে দেখলো না তার পাশে কে বসেছে! হয়তো জানা,,তাই তাকানোর প্রয়জন মনে করেনি!..
তন্দ্রাঃ বসো বাবা,,তোমার জন্যই সবাই অপেক্ষা করছে,,সবাই বসে পড়ো এখন! আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি,,রেবেকা তুই একটু ফ্রিজ থেকে লেবু নিয়ে আয়!..
শিশিরঃ ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি এসে ভাইকে ফেলেই খেয়ে ফেললি,, তিশু? তুই এতো পেটুক? ভেরি ব্যাড! ( তৃষার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে)
তৃষাঃ ( অসহায়ের মতো তাকিয়ে) ভাইয়া,,,
সবাই হেসে ওঠে,, তখন নিশান্ত বলে ওঠে,,
নিশান্তঃ তো বেয়াইন সাহেবা,, আমাদের ছোট বেয়াইন কি আজকেও আসবে না? নাকি অন্য কোন ব্যাপার আছে!..
রাফেজঃ ( ভ্রুঁ নাচিয়ে) কি ব্যাপার নিশান্ত? ডালকে কুচ কালাহে! এতো মানুষ থাকতেও তোমার ছোট বেয়াইনকে কেনো লাগবে? হুম হুম,, ( নখশার বর)
নিশান্তঃ দূর জিজু,,কি যে আবোল-তাবোল বলোনা! ( ঘার ঘষতে ঘষরে ওর মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে)
অজান্তাঃ নিশান্ত ভাইয়া আপনি আন্টিকে মনে হয় খুব ভয় পান! আর এই ভীতু ভীতু হৃদয় নিয়ে আপনি ইশার নাম্বার চেয়েছিলেন? ( বিন্দুর ফুপাতো বোন)
সবাই এবার ফিক করে হেসে দিলো,,,
সিফাতঃ সিরিয়াসলি অজান্তা,,কখোন চাইলো রে?
নিশান্তঃ আমি কি এবার ওঠে যাবো? তোমরা তাই চাচ্ছো?
সিফাতঃ আরে নিশান্ত শোন না,,আমার মনে হয় কি জিজু ভুল কিছু বলেনি,, তুই একটু বেশীই কন্সার্ট তো ছোট বেয়া,,,
নিশান্তঃ শালা,, দাত বন্ধ কর! তোর কেলোর কীর্তী ফাস করবো?
সিফাতঃ ভাই চেতস ক্যা,,আমি কি ভুল কিছু কইছি তোরে? এই তোরা বল,,আর তুই আমারে শালা কস কিল্লাই,, আমার তো কোন বোন -টোন কেও নাই,,একটা ছোট্ট ভাই আছে! কিন্তু তুই চাইলে আমি তোকে শালা ডাকতেই পারি! কি বলো নিশা,,
নিশান্ত চোখ গরম করে তাকায় সিফাতের দিকে,,
নিশান্তঃ শালা তুই বহুত খারাপ,,এই নিশা তুই এই শয়তানের কাছে থেকে দূরে দূরে থাকবি,,বুঝলি!..
চন্দ্রীমাঃ নিশান্ত,,আমি এতো কথা পছন্দ করিনা জানোনা? তাহলে কেনো কথা বলছো,,চুপচাপ খাও! ( নিশা-নিশান্তর মা আর বিন্দুর ছোট মামী)
শিশিরঃ শালাবাবু,, এগুলো কি শুনি,,ঘটনা কি সত্যি? আমার কিন্তু কোন অসুবিধে নেই আমার পেত্নী বোনকে তোমার ঘাড়ে চাপাতে!..
তৃষাঃ ভাইয়া ( রাগ করে) তুমি এগুলো সহ্য করছো কিভাবে? তুমি বকবে তোমার শালাদের তা না উস্কানি দিচ্ছো?
রুদ্রাঃ তৃষা ফুপি,,উস্কানি কি?
শিশিরঃ কিছু না আম্মু,,তোমার তো খাওয়া শেষ তুমি গিয়ে ভাইয়ের সাথে খেলো!..
রুদ্রাঃ ওকে বাবাই,,,
শিশিরঃ বাচ্চাদের সামনে এগুলো কি ভাষা তোর?
তৃষাঃ তুমি না নতুন জামাই? এতো কথা কেনো বলো তুমি?
শিশির থতমত খেয়ে যায়,,এতোক্ষণ পর মনে হলো ও এবাড়ির নতুন জামাই,,ওর এতো কথা সাযেনা,,হয়তো ভুলে গিয়েছিলো!..
এভাবে সবাই আড্ডা, হাসি-তামাশা দিতে দিতে পার করে দিলো সারাটা সকাল,দুপুর,বিকাল ও সন্ধ্যা! আর হ্যা বিকেলের দিকে তিয়াশও ইশাকে নিয়ে এ বাড়িতে আসে! আজকে রাতে নাকি সবাই পার্টি কররে তাই বিন্দু, তৃষা, শিশির সহ আবার সবাই জোর করে ইশাকে নিয়ে আসে! তিয়াশকেও ইশার সাথে আসতে বলে তাই তিয়াশ রাগ না দেখিয়ে ভাইয়ের কথায় সুন্দর করে চলে আসে!..
সন্ধার দিকে,,,
সবাই মিলে ছাদে এরেঞ্জমেন্ট করছে! আজকে সব কাজিনরা ছাদে রাত কাটাবে আর জমিয়ে আড্ডা দিবে! বিন্দুকে ইশা আর অজান্তা ডাকতে এসেছিলো নিচে,,বিন্দু মেঘকে ঘুম পাড়িয়ে তারপরে যাবে বলে দিয়েছে! অজান্তা আর বিন্দু সেইজ ইয়ার ( এইচএসসি দিবে) তাই ওরা এই একদিনেই খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে উঠেছে!..
ছাদটা অনেক বড়,, সুন্দর করে সাজানোও হয়েছে! চারপাশে লাইটের ছড়াছড়ি,,এক পাশে আড্ডার আসরের ব্যাবস্থা, এক পাশে সাউন্ড বক্সের ব্যাবস্থা আর এক পাশে রান্নার ব্যাবস্থা! সেখানে রান্না করছে নকশা,,আর তাকে সাহায্য করছে ইন্দু, তৃষা,
আর পুষ্পা( দোতলার ভাড়াটে) ! আজকে ছাদে কোন মায়ের এন্ট্রি নেই,,ওরা কাজিনরা শুধু থাকবে! বাকি সবাই নিজেদের মতো ব্যাস্ত,! ছাদের এক পাশে নিশান্ত,শান্ত,তিয়াশ,সিফাত আর অন্ত ( বাড়িওয়ালার ছেলে) চিকেন ফ্রাই,শিক কাবাব,গ্রিল এসবের আয়োজন করছে! আর বাড়ির দুই জামাই মানে– শিশির আর রাফেজ (নকশার বর) ওরা একসাথে কথা বলছে এক পাশে দাঁড়িয়ে! বাকি সব মেয়েগুলো মানে- ইশা,অজান্তা, রুশা, ( নকশার ছোট বোন) নিশা ( নিশান্তের বোন) অন্তি ( অন্তের বোন) ওরা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে! আর এদিকে ছোটাছোটি করছে রুদ্রা, রাফান ( নকশার ছেলে) আর, পিও (পুষ্পার পিচ্চি বোন)!..
তিয়াশ কাজ করছে ঠিকই কিন্তু আড়চোখে ইশাকে দেখে যাচ্ছে! ইশার তো কোন ভ্রুক্ষেপই নেই এদিকে,, সে লাফাচ্ছে আর গল্প করছে! তবে রুশা তিয়াশের দিকে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে,, সে ভেবেছে তার ক্রাশ বয় তাদের দিকে তাকিয়ে আছে মানেই সে রুশার দিকে তাকিয়ে আছে,,রুশাতো আহ্লাদে আটখানা! অজান্তা আর রুশা তো উচ্চ মাধ্যমিকের ক্যান্ডিডেট কিন্তু রুশা ওদের এক বছরের ছোট মানে ইন্টার ফার্ট ইয়ার! আর নিশা মাধ্যমিকের ক্যান্ডিডেট তবে অন্তি সবার ছোট ক্লাস নাইনে উঠেছে এবার! আর ছেলেদের মধ্যে অন্ত সবার বড় পড়ালেখা শেষ করে জব করছে,,নিশান্ত আর সিফাত মাস্টার্স করছে,,তিয়াশ তো ওনার্স ২য় বর্ষে,, আর শান্ত ইশাদের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক দিবে!..
#চলবে…
[