#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ৪
আজকে শিশির_বিন্দুর বৌভাত,, রিশিপশন পার্টি আশরাফ আহমেদ বড় করে দিতে চাইলেও শিশির নিষেধ করে,,তাছাড়া বিন্দুও বলে এসবের কোন মানে হয়না! তাই, বিন্দুর পরিবার, বিন্দুর চাচা-খালা-ফুপুরা, কাজিনরা! শিশিরের পরিবার,শিশিরের বন্ধুরা,মামা-চাচা-খালারা কয়েকজন আর আশে পাশের কিছু লোক! তাও অনেক মানুষই হয়েছে ৮০/৯০ জন মানুষের আয়জন করা হয়েছে!..
সকাল ১০ টার দিকে,,,
তৃষা আর ইশা বিন্দুকে সাজাচ্ছে,,গোল্ডের কালারের জামদানী শাড়ি সাথে মেরুন কালারের ব্লাউজ,, আর তার সাথে কিছু সোনার গহনা,,চুলগুলো গোলাপ ফুল দিয়ে খোপা করা,,ঠোঁটে মেরুন কালারের লিপস্টিক,, চোখে গাঢ় কাজল! ব্রাইডাল মেকয়াপও না আবার তার চেয়ে কিছু কমও না! কিন্তু বিন্দুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে!..
ইশাঃ কমপ্লিট,, ইশ ভাবী কি যে দারুন লাগছে তোমায়,,পুরোই মাথা নষ্ট! অর্ক ভাইয়া আজকে তোমাকে দেখলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে,,চোখের পলকই পরবে না! আমি ছেলে হলে ভাইয়া কে দিতামই না, আমিই বিয়ে করে নিতাম তোমায়!..
তৃষাঃ তুমি খুব পেঁকেছো,,আম্মুকে বলতে হবে তোমার কথা,,( ইশার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকায়)
ইশাঃ উফফ আপু,,তুমি না সব-সময় বড়দের মতো শাসন করো! আমার চেয়ে তো মাএ দুই বছরের বড় তুমি আর তোমার ভাব দেখে মনে হয় ছয়-সাত বছরের বড়!..
তৃষাঃ চুপ ফাজিল,, বের হো এখান থেকে! তোর কাজ শেষ,,ভাবী রেডি এবার তুই রেডি হো,,যা ভাগ!..
ইশাঃ আমি গেলে মনে হয় তোমার খুব সুবিধা হয়? ভাবীকে উলটা-পালটা বুঝিয়ে এখন রাফি ভাইয়ার সাথে কথা বলবে! সারাদিন তো তাই করো,,আর আজকে মেবি কারোর সামনে কথা বলতেও পারো না!..
তৃষাঃ তবেরে দাড়া ফাজিল মেয়ে,,আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন! আমি হই বড় আপু আর আমার সাথে কিভাবে কথা বলে!..
ইশা দৌড়ায় পিছন পিছন তৃষাও দৌড়ায়,,,
বিন্দুঃ তোমরা থামো এবার অনেক হয়েছে,, তৃষা-ইশা পড়ে যাবে তো! এই সাবধান,,
ইশা এসে বিন্দুর পিছনে দাঁড়ায়,,তৃষা ওইখানে আসতেই ইশা আবার দৌঁড়ে দড়জার দিকে যায় আর কারোর সাথে জোরে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যায়!..
ইশাঃ ইশরে,,কোমড় টা আমার মনে হয় ভেংগেই গেলো আজকে,, এই শুকনা জায়গায় আমি পড়ে গেলাম কিভাবে? আমি এখনো বিয়ে-শাদি করিনি,, হানিমুনে সুইজারল্যান্ডে আমার আর এ জন্মে যাওয়া হলো না! এ্যা এ্যা আমার ভবিষ্যৎ জামাইয়ের ল্যাংড়া বউ আমি হবো না,, আমার বাচ্চাদের মা খুড়ে খুড়ে হাটবে এটা কি মেনে নেওয়া যায়? না কখনোই মেনে নেওয়া যায় না! কার এতো বড় সাহস আমার বারা ভাতে ছাই দিলো,, ( উপরে তাকাতেই দেখে তিয়াশকে দেখে শকড হয় আর ভয়ে ঢোক গিলে,,)
তিয়াশঃ ( রাগী রাগী চোখে তাকায়) চোখ হাতে নিয়ে হাটলে চাঁন্দের দেশে গেলেও পইড়া যাইবা তুমি,,ডাফার! আর এই এতো ফালতু ফালতু কথা কই থেকে শিখিস তুই? ছিঃ কিসব ল্যাংগুয়েজ,, ল্যাংড়া,খোড়া! একটা চড় লাগাবো! আর কই যাবি তুই? সুইজারল্যান্ডে হানিমুনে? তোর হানিমুনে যাওয়ার এতো শখ?
ইশাঃ আরে আমি তো,,
তিয়াশঃ চপ,,,,( অনেক চিল্লিয়ে)
তৃষাঃ ঠিক হয়েছে,,একদম উচিৎ শিক্ষা হয়েছে তোর! তোর এই ফড়িং এর মতো লাফালাফি না তিয়াশই ঠিক করতে পারে!( মুখ বেকিয়ে)
ইশাঃ আপু তুমি আমার বোন নাকি শত্রু ( ন্যাকা কান্না করে)
তিয়াশঃ এত্তো ন্যাকামো কই পাছ তুই ইশু?
বিন্দুঃ তিয়াশ হয়েছে ভাইয়া আর বকো না ওকে,,কিছু কি বলবে?
তিয়াশঃ হ্যা ভাবী,,,সর ( ইশাকে সর বলে ভেতরে যায়)
আর ইশা এদিকে আহম্মকের মতো তিয়াশের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,
তিয়াশঃ আম্মু বলছিলো যে তোমাদের বাড়িতে ফোন দিতে তারা কখন আসবে আর আম্মুও একটু কথা বলবে,, আমার কাছে তো আন্টি বা আংকেলের কারোর নাম্বার নেই তাই তোমার কাছে আসলাম! আব্বুর ফোনে নাকি সেভ করা ছিলো বাট আব্বুও বাসায় নেই!..
বিন্দুঃ ওহ আচ্ছা আম্মুর নাম্বার নাও তাহলে,,,
নাম্বার নিয়ে তৃষার দিকে তাকিয়ে,,
তিয়াশঃ তোর বোন কে কি খাওয়াস এমন পাটখড়ি কেনো? ফু দিলেই উড়ে যাবে,,বাতাসের আগে আগে চলে! আমার বডি দেখ,, হুহহহ তোরা দুই বোন সাতবার জন্ম নিলেও এমন বডি পাবিনা! ( ভাব দেখিয়ে)
এই বলে তৃষা-বিন্দুর থেকে সরে দড়জার কাছে যায়,, ইশা যে পড়ে আছে ওইখানে গিয়ে নিচে বসে আসতে করে ইশার কানে কানে বলে,,,
তিয়াশঃ সারাদিন এখনেই বসে থাক নো প্রবলেম,, কিন্তু সব ম্যাহমানরা চলে গেলে পূর্ব-পশ্চিম না তাকিয়ে ডিরেক্ট ছাদে চলে আসবি আর যদি না আসিস সত্যি সত্যিই কিডনাপ করে নিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিবো,, আমার রাগ সম্পর্কে নিশ্চই অবগত আছিস! আর হ্যা শোন, সারাদিন আমার আশেপাশেও যেনো ঘিরতে না দেখি, দেখলেই তোর খবর আছে! ঠিক বিকেলে ছাদে চলে আসবি মনে যেনো থাকে!..
তিয়াশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে হালকা গলা খেকড় দেয়,,
তিয়াশঃ বুঝলি,,বেশি বেশি হরলিক্স খাবি বাচ্চা মানুষ তো! নাহলে এইভাবে ধামধুম পড়ে যাবি, আর তোর ভবিষ্যৎ স্বামীর ল্যাংড়া বউ হবি,, ( চোখ মেরে)
ইশাঃ ফাজিল,,,
তিয়াসঃ চুপ বেয়াদপ, বড় ভাইদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখিস নি? কোন ম্যানার শেখায় নি তোর বাপ?
তৃষাঃ এই তিয়াশ একদম আব্বুকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা বকবি না,,বলে দিলাম!,,
তিয়াশঃ এহহ আসছে কোথাকার কি আমার আব্বুকে নিয়ে কথা বলবি না! (ভেংগিয়ে)
ইশাঃ তুমি এতো মেয়েদের মতো ঝগড়া করো কেনো?
তিয়াশঃ একটা কথা বলবি তো দশটা চড় খাবি,,এখন ডিসেশন তোর! (নখ তুলে)
ইশা এবার চুপ হয়ে যায়,,তিয়াশ কে কোন বিশ্বাস নেই! যা বলে তাই করে,,ইশা ফ্যালফ্যাল করে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে থাকে!..
বিন্দুঃ হা হা,,এখনো ওভাবে বসে আছো কেনো ইশা উঠে এসো আর তিয়াশ এতো ঝগড়া করতে হয় না ভাইয়া তুমি দেখোতো রুদ্রা-মেঘ কোথায়? রুদ্রাকে বলো আমি ডাকছি আর মেঘকেও একটু দিয়ে যাও!..
তিয়াশ চলে যায়,,আর ইশা উঠে আসে,,
ইশাঃ ভাবী এটা তোমার দেবর নাকি পুরো ধানী লংকা, শয়তান একটা!( মুখ বেকিয়ে)
তৃষাঃ এই ইশু তিয়াশ তোকে কানে কানে তখন কি বলছিলো?
ইশাঃ (থতমত খেয়ে) কই, কিছু না তো, ওহ হ্যা বললো যে আমাকে হরলিক্স খেতে,,
তৃষাঃ থাস করে একটা চড় লাগাবো,,,এইটা তো আমাদের সামনেই বললো! কানে কানে কি বললো সেটা বল?
তখনি রুদ্রা আসে,,
রুদ্রাঃ মাম্মা তুমি ডাকছিলে কেনো? এমা,, আমার মাম্মাকে কি সুন্দর সুন্দর লাগছে! ( গালে চুমু দিয়ে)
বিন্দুঃ বেবী তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? খেয়েছো,,ভাই কোথায়?
রুদ্রাঃ ভাইকে তো দাদীমা কোলে নিয়ে আছে,,আর আমি খেয়েছি! নানুপি, নানুভাই, ইন্দুমতীরা সবাই কখন আসবে মাম্মা?
বিন্দুঃ চলে আসবে!.
বিকেলের দিকে,,
সব আত্নীয়-স্বজনরা চলে গিয়েছে,, বিন্দুরাও একটু পর ওদের বাড়ি যাবে! তবে তৃষা-ইশাও নাকি বিন্দুর সাথে যাবে জেদ ধরেছে! তিয়াশ রাগী দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো ছাদে যেতে,,বেচারিও ভয়ে ছাদে চলে যায়!..
আর এদিকে বিন্দু রুদ্রা আর মেঘকে রেডি করাচ্ছে,, তৃষাও গিয়ে রেডি হয়ে নেয়! ইন্দু বাদে ওদের বাড়ির সবাই চলে গিয়েছে! বিন্দুর মা ও আগেই গিয়েছে নতুন জামাই যাবে বলে কথা! আর ড্রয়িংরুমে বসে আছে কিছু খোশ গল্পের পাড়া-প্রতিবেশীরা,,
১ম মহিলাঃ ভাবী, মেয়েকে কি দিলো বাবার বাড়ি থেকে?( লায়লাকে)
নাদিয়াঃ কি আর দিবে ওই পাঁচ আনা দিয়ে অার্ককে,,,( থামিয়ে দেয় তার শ্বাশুড়ি)
শায়লাঃ বউমা,,যাও সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসো!..
নাদিয়াঃ মা আমি সেই সকাল থেকে কাজ করেছি তো! আর এই বাড়ির বউ আমি না বিন্দু,,,
শায়লাঃ আমি সেটা জানি,,বিন্দু ঘুরে আসুক কাল থেকে সংসারের হাল ধরবে! এখন তুমি যাও,,,
নাদিয়া একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলো কিন্তু মুখে তেমন কিছুই বললো না কারণ তার শ্বাশুড়ি কে সে অনেক ভয় পায়,,
শায়লাঃ এখন বলেন কি যেনো জানতে চেয়েছিলেন? বউয়ের বাড়ি থেকে কি কি দিয়েছে? আচ্ছা,, বউয়ের বাড়ি থেকে তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটাই আমাদের দিয়েছে! আমাদের নাতীনের মা দিয়েছে,, এর চেয়ে আর বেশী কিছু দেওয়ার আছে বলে আমি মনে করি না!..
২য় মহিলাঃ তারপরও লায়লা ভাবী আপনার ছেলে তো মাশাল্লা সব দিকেই পারফেক্ট চাইলেই অবিবাহিত মেয়েও বিয়ে করালে পারতেন!..
৩য় মহিলাঃ আমার বোনের মেয়ে কি কম সুন্দর দেখতে ছিলো, পছন্দই হলোনা আপনাদের! দিতেও রাজি ছিলাম নিলেন না! আমার বোনের মেয়ের মতো লক্ষী মেয়েই হয়না! অবিবাহিত মেয়ে,, রূপও যেমন পড়াশোনাও ভালো তেমন,, ইডেনের ছাত্রী! আজকাল কার যুগে ঢাকা শহরের মেয়ে হয়ে যে এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম তাই অনেক!..
ইন্দু বাহিরে দাঁড়িয়ে সব শুনছে,,ও রুদ্রার জন্য পানি নিতে এসেছিলো ডায়নিং এ আর এসব শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়! ইডেনের মেয়ে আবার নাকি খুব ভালো ছাত্রী (বাকা হেসে) এতো ভালো ছাত্রী হলে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে ইডেনে কেনো গেলো! আর ওর বোনের সাথে ওদের তুলনা? বিন্দু তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেও চান্স পায়!.
১ম মহিলাঃ আবার বউয়ের তো দেখলাম পাঁচ বছরের বাচ্চাও আছে,,আপনাদের ছেলের মাএ বিয়ে হয়েছে দুই বছর,,একটা বাচ্চা ছয়মাস ওর জন্য অবিবাহিত মেয়ে যে কেও ই দিবে,, শুধু শুধু বিবাহিত মেয়ে বিয়ে করালেন!..
ইন্দু আর থাকতে পারে না,,রাগের চোটে তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস নিয়ে বিন্দুর রুমের দিকে হাটা দেয়,,,
লায়লাঃ বিন্দু অনেক ভালো মেয়ে,, আমিই বিন্দুকে অনেক জোর করেছিলাম বিয়ের জন্য!..
শায়লাঃ আমার বোনকে নরম পেয়ে কথা শোনাচ্ছেন তো? আমাকে বলুক আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিবো! বউয়ের পাঁচ বছরের মেয়ে থাকুক আর দশ বছরের মেয়ে থাকুক সেটা আমরাই বুঝে নেই? আমার ভাগ্না তো অবিবাহিত না,, তারও বিয়ে হয়েছিলো এখন সে দুই বছর সংসার করুক আর পাঁচ বছর করুক! সে যে বিবাহিত এটা তো তার গায়ে আছে তাইনা?
মহিলা গুলোর মুখ শুকিয়ে গেলো,,
৩য় মহিলাঃ না মানে আমরা সেভাবে বলিনি,,আমার বোনের মেয়েও অবিবাহিত ছিলো,,,
লায়লাঃ হ্যা, আপনার বোনের মেয়ের যে ফ্যাশান? ভাবী রাগ করেন না,,আপনার বোনের মেয়েকে দিয়ে আমার বাড়ির বা আমার ছেলের সংসার হতো না! সারাদিন সাজগোছ করে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরে বেড়াতো আর আমার নাতী এতিম এতিমই থাকতো! যে কয়েকবার মিশমিকে দেখেছি আমার একবারের জন্যও মনে হয়নি ও আমার সংসারের জন্য পারফেক্ট!..
এদিকে ছাদে,,,
ইশাঃ তিয়াশ,,,ভাইয়া,,,( দাত কটমত করতে করতে)
তিয়াশের রাগ যেনো এবার আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো,,পিছনে ফিরে তাকিয়ে ইশাকে হেচকা টেনে এক হাত কোমড়ে জরিয়ে ধরেছে আরেক হাত ওর দুই গাল চেপে ধরেছে!,,
তিয়াশঃ কি বললি? ভাইয়া? আমি তোর ভাইয়া হই?
ইশাঃ আহ ছাড়ো,,আমি ব্যাথা পাচ্ছি!..
তিয়াশঃ আমি কি তোকে আদর করছি যে ব্যাথা লাগবে না? এতো সাহস তোর কি করে হয়? আমার অনুমতি ছাড়া ভাবীর বাড়িতে যাওয়ার?
ইশাঃ এই জন্যই আমি তোমার বাসায় আসতে চাইনা,, অসহ্য একটা (কাঁদো কাঁদো মুখ করে)
তিয়াশঃ তুই আসবি না তোর বাপ সহ আসবে,,বিয়ের পর এই অসহ্য মানুষটাকেই সহ্য করতে হবে তাই এসব জারিজুরি বাদ দে!..
ইশাকে এবার ছেড়ে দিয়ে খানিকটা দূরে দাঁড়ায়,,
ইশাঃ তোমাকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে,,( মুখ বেকিয়ে)
তিয়াশঃ কি বললি তুই? আরেকবার বল? ( একটু এগিয়ে গিয়ে)
ইশা এবার কেঁদে ফেলে,,,
তিয়াশঃ এতো ন্যাকামো কি সব-সময় তোর মাথায় চিড়িক দিয়ে ওঠে?
ইশা অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে তিয়াশের দিকে,,ওর হাত পুরো লাল হয়ে গেছে আর ও নাকি ন্যাকামো করছে,,,
তিয়াশ এভার সিগারেট ধরায়,,দুই/তিন টান দিয়ে ইশার দিকে ধোঁয়া ছাড়ে আর ইশা কাশতে থাকে,,
ইশাঃ তু তুমি সিগারেট খাও? ছিঃ,,আমার গন্ধই কেমন গা গুলাচ্ছে ওয়া,,
তিয়াশঃ বমি করবি কর ভালো কথা,, পুরো ছাদটাও তোর পরিষ্কার করতে হবে,,,সারাদিন তো এক গ্লাস পানিও ভরে খাসনা!..
ইশাঃ আমি জিয়াম্মা কে বলে দিবো তোমার ছেলে সিগা,,( আর বলতে পারে না)
তিয়াশ ইশার কান এমন ভাবে ধরে যে ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে!,তিয়াশ আরো দুই/তিন টান দিয়ে সিগারেট ছাদে থেকে অনে দূরে ফেলে দেয়,,
তিয়াশঃ ( ইশার কান ছেড়ে) ছেলেটা কে? এতো কিসের পিরিত? যেখানে আমি তিন বছর ধরে তোকে বোঝানোর ট্রাই করছি আমি তোকে ভালোবাসি? কিন্তু তুই নাকি বাচ্চা, কিছু বুঝিস না, রিলেশন করবি না! ওকে ফাইন মেনে নিলাম,,তাইলে আজ আমার আড়ালে এই একদিনের ছেলের সাথে এতো কিসের মাখামাখি তোর?
ইশাঃ জাস্ট শাট আপ,,কি বলছো এসোব? মুখে একটু লাগাম লাগাও,, ওই ভাইয়াটা বিন্দু ভাবীর কাজিন আমার সাথে জাস্ট কথা বলেছে আর আমার সাথে সেধে কথা বলতে আসলে আমি কি এটিটিউড দেখাবো? আমি কি অহংকারী?
তিয়াশঃ হ্যা দেখাবি,,তুই শুধু আমার আর আমার সাথেই কথা বলবি অন্য কারোর সাথে না বুঝেছিস?( আরো একটু সামনে যেয়ে)
ইশাঃ এটা কি মামার বাড়ির আবদার পেয়েছো? আমার যা খুশী আমি করবো তাতে তোমার কি?
তিয়াশ এবার মারার জন্য হাত তুলতে নেয় কিন্তু শেষে না মেরে হাত নামিয়ে ফেলে! নিজেকে কন্ট্রোল করে,,
তিয়াশঃ ( অন্য দিকে তাকিয়ে) যতই ঘুড়ি ওরাও রাতে লাটাই তো আমার হাতে,, ( এবার বাঁকা হেসে ইশার দিকে তাকিয়ে) যতই তুমি উরাল দাও, একদিন তো তোমাকে আমার খাঁচাতেই বন্ধি হতে হবে! ফেসবুকে তুমি যতই টাংকি মারো,,
ইশাঃ মানে,,ফেসবুকে কি? আর তুমি আমার আইডি স্ক্রল করো?
তিয়াশঃ জান তুমি এখনও এই তিয়াশ আহমেদ তুর্যকে চিনতে পারোনি! আমি তোর আইডি স্ক্রল না তোর পুরো আইডিটাই আমার কাছে!..
ইশাঃ মা মানে?
তিয়াশঃ মানে এতো ছেলে তোকে নক দেয় কেনো সেটা আগে বল?
ইশাঃ আ আমি কি করে জানবো? আমি তো,,
তিয়াশঃ ( ইশার দুই কাধে শক্ত করে চেপে ধরে) আমি আজকে যথেষ্ট পরিমাণে ঠান্ডা আছি তাই বেঁচে গেলি তা না হলে এতোক্ষণে লাশ পড়ে যেতো! (চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে) আজকের পর থেকে তোর লাইফের ফ্রিডম শেষ,,আমি যা চাইবো, আমি যা করতে বলবো সেটাই হবে তোর একমাএ লক্ষ! এমনকি আমার অনুমতি ছাড়া তুই ভাতও খেতে পারবি না! মাইন্ড ইট,,,
তিয়াশ ইশাকে ছেড়ে নিচে চলে যেতে নেয়,,আবার ঘুরে এসে,,
তিয়াশঃ ভাবীদের বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই,, গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম!..
আর এক মুহুর্ত দেরী না করে তিয়াশ নিচে চলে যায় আর ইশা সেখানেই বসে কাঁদতে লাগে,,
এই মানুষটাকে সে প্রচন্ড ভয় পায়,,সে শুধু ইশার সাথেই এমন করে একা পেলে,,আর কারোর সাথেই না! ভালোবাসলে মানুষ কি এতোটা কঠোর হয়? তার প্রিয়তমাকে কষ্ট দেয়? ইশা চাইলেও তিয়াশকে এক্সসেপ্ট করতে পারে না শুধুমাত্র ওর রাগের জন্য! এই রাগটা যখন কন্ট্রোলে থাকে না তখন যেকোন কিছু করে বসে! একবার তো ইশার ওপর রাগ করে পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলো যদিও জানে ইশা সাতার জানে না! ওইদিন শিশির না থাকলে ইশাকে এতোদিনে ওপরে থাকতে হতো! এরকম আরো অসংখ্যবার ইশাকে জ্বালিয়েছে!..
#চলবে…
[ কোন ভুল-ত্রুটি হলে অবশ্যই জানাবেন,, কেমন হয়েছে বলবেন আর নাইচ,নেক্সট না লিখে গঠন মূলক কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন, তাহলে লেখার আগ্রহটাও বাড়ে,,, ধন্যবাদ ]