#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ৩
ঘড়ির কাটাতে তখন রাত ১২ টা বেজে মিনিটের কাটা ৩৬শে এসে থেকেছে! বিন্দু বসে আছে ফুল দিয়ে বিছানো এক বিছানায়,,যাকে বলে ফুলসজ্জার খাট! দ্বিতীয় বারের মতো এমন বিছানায় বসে আছে সে,, কি অদ্ভুত তাইনা? অদ্ভুতের কিছুই নেই আজকালকার যুগে অহরহ এসব টেন্ডই চলে আসছে! যাই হোক,,,বিন্দুকে বেলী, গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো এক রুমে বসিয়েছে ওর দেবর ( তিয়াশ), চাচাতো দুই ননদ ( তৃষা,ইশা) আর খালাতো ভাসুরের বউ ( নাদিয়া)! পুরো ঘরে ফুলের সাথে স্টার লাইট দিয়ে সাজিয়েছে,,চারপাশের ফুলের সুবাষে মৌ মৌ করছে,,পুরো ঘর অন্ধকার হলেও স্টার লাইটের সৌন্দর্য ভরে উঠেছে ঘর! প্রকৃতির ছোয়া না থাকলেও অনেকটাই আছে! পাঁচ তলা বিল্ডিং এর উপর এমনিতেই বাতাস শো শো করে,, কোন বৈদ্যুতিক পাখার প্রয়োজন হয় না জানালা খুলে দিলে! বিন্দুর রুমেও ঠিক তাই বেলকোনি আর জানালা থেকে বাতাস শো শো করে বইছে,, আজকের চাঁদটাও যেনো পূর্ণতা লাভ করেছে,, চাঁদের আলোর সৌন্দর্য বিন্দুর রুমকে আলোকিত করে রেখেছে,,লাইটের প্রয়োজন নেই তবুও স্টার লাইট গুলো ঝুলছে দেওয়ালে,, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে ডাকছে ঝিঁ ঝিঁ পোকা,, আজ যেনো তাদের মাঝে এক নিরব প্রতিযোগিতা চলছে,কে আগে জিতবে! যে কারোর কাছেই এমন মূহুর্ত অস্বাভাবিক ভালো লাগবে,, বিশেষ করে যারা প্রকৃতি প্রেমিক!..
কিন্তু বিন্দুর অসহ্য লাগছে,,,একবার ভেবেছিলো ঘুমিয়ে যাবে আবার ভাবলো না কেও তো ঘুমোয়নি, আমার খোঁজ নিতে এসে যদি দেখে আমি ঘুমিয়েছি তাহলে আমাকে কি ভাববে! ইন্দু আর রুদ্রা এসেও অনেকবার অর্কের আপডেট দিয়ে গেছে! কিন্তু বিন্দুর তাতে কোন মাথা ব্যাথা নেই অর্ক মরুক কি বাঁচুক তাতে ওর কি! ও রুদ্রাকে নিয়ে ঘুমাতে চেয়েছিলো কিন্তু রুদ্রা তার নতুন বাবাইয়ের জন্য অপেক্ষা করবে! বাচ্চা মানুষ তো সেই দুই বছর হলো বাবা কে ডাকতে পারে না, তখন কিছু না বুঝলেও এখন টুকটাক সবই বোঝে,,,
বিন্দুর ভাবনার মাঝেই দড়জা খোলার শব্দ পায় সে! বুঝতে পারে কে এসেছে কিন্তু তাকায় না,,এই অসভ্য মানুষের দিকে তাকানোর কোন মানেই হয় না! অর্ক দড়জা লাগিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়! বেশ কিছুক্ষন পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে,,,
অর্কঃ ( বিরক্ত নিয়ে) বেয়াক্কেলের মতো এখনও এভাবে বসে আছেন কেনো? ঘুমালে কি এখন মহা-ভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো? আপনার জন্য কতগুলো বকা শুনলাম আআব্বু-আম্মুর আইডিয়া আছে? আপনে নাকি আমার জন্য না ঘুমিয়ে বসে আছেন, এসব ন্যাকামোর কোন মানে হয়?.
বিন্দুঃ,,,,,( কিছু বলে না)
অর্কঃ বোবা? কথা বলতে পারেন না? আইজাইরা পাবলিক সব! মাথায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছেন কেনো গাইয়াদের মতো? আশ্চর্য,, ( কিছুক্ষন থেমে) আর আপনে যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো তাহলে ভুল ভাবছেন! বাবা-মার জোরাজোরি তে আমি বিয়েতে হ্যা বলেছি,,ইচ্ছাকৃত ভাবে নয়! আমি আমার স্ত্রী কে অনেক ভালোবাসতাম এখনো বাসি! আপনাকে বিয়ে করেছি আমার ছেলের জন্য মা দরকার বলে,, আমার জন্য কোন বউয়ের দরকার নেই! সো আমার আশেপাশেও যেন ঘুরঘুর করতে না দেখি!.( বিছানা থেকে বালিশ নিতে যায়)
বিন্দু এতোক্ষণ অর্কের ভয়েস চেনার চেষ্টা করছিলো তাই কিছু বলেনি! কারণ ভয়েসটা খুব চেনা আর কিছুটা আন্দাজও করেছে কার ভয়েজ হতে পারে! কিন্তু লাস্টের কথাগুলো শুনে আর চুপ থাকতে পারেনি!..
বিন্দুঃ মানে কি? আমি কি আপনাকে বিয়ে করার জন্য পায়ে ধরেছিলাম,,ফালতু লোক কোথাকার! আপনে দিতে আসলেও আমি কখনো স্বামীর অধিকার নিবো না আপনার মতো অসভ্য লোকের কাছে থেকে! আমিও আমার স্বামী মিস্টার রৌদ্দুর মাহবুব রুদ্রকে অসম্ভব ভালোবাসি! আপনার মতো সস্তা লোকের কথা ভাবার টাইম, ইচ্ছে কোনোটাই নেই আমার! আপনে কখনোই রুদ্রের নখের যোগ্যও হতে পারবেন না! নেহাৎ,,আপনার মায়ের কান্না সহ্য করতে পারনি তাই রাজি হয়েছিলাম! ( উলটো দিকে ঘুরেই)
এবার অর্কের মেজাজ হয়ে যায় চারশো বিশ ভোল্টের! বিন্দুকে হাত ধরে টেনে নিচে নামায়!..
অর্কঃ এই মেয়ে আপনার সাহস ত,,,( আর কিছু বলতে পারে না,,অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে)
বিন্দুঃ ( অবাক হয়ে,,কিছুক্ষন পর) আপনার এসব লেইম কথা-বার্তা শুনেই বুঝেছিলাম যে এই রাবিশ লোকটা আপনে ছাড়া আর কেও হতে পারে না! ডাফার ( অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)
অর্কঃ বিন্দুবালা তুমি এখানে? ( নরম সুরে)
বিন্দুঃ আগে জালনে জীবনেও বিয়েতে হ্যা বলতাম না,,আপনার মতো মানুষের মুখ দর্শন করাও পাপ!..
অর্কঃ কেমন আছো তুমি?
বিন্দুঃ এই সাত বছর খুব ভালো ছিলাম,,যেদিন থেকে আপনি নামক নরপিশাচ আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছেলেন! কিন্তু আমার ভালো থাকার দিন শেষ,, ( চিল্লিয়ে )
অর্কঃ আমি চলে গিয়েছিলাম? নাকি তুমি ব্রেকয়াপ করে চলে গিয়েছিলে?
বিন্দুঃ হ্যা আমি গিয়েছিলাম,,রিজন টা কে ছিলো? রিজনটা ছিলেন আপনি! মেঘলা কে নিয়ে তো খুব আদিক্ষেতা দেখাতেন আমার আড়ালে আর আমি বললে আমার বেষ্টু হয়! শেষ পর্যন্ত আমার কথাই ঠিক ছিলো মেঘলাকেই বিয়ে করে নিয়েছিলেন!..
অর্কঃ এখনো এতো রাগ আমার ওপর? রাগ তো করার কথা আমার আর,,,
বিন্দুঃ আমার এখন নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করছে! আমি জাস্ট টলারেট করতে পারছিনা আপনাকে,,চলে যান সামনে থেকে!( নিজের চুল খামচি দিয়ে ধরে)
অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বালিশটা নিয়ে সোফায় যেতে লাগে,,,
বিন্দুঃ এই এই মিনিট দাড়ান,,আপনার নাম তো শিশির তাহলে অর্ক হলো কিভাবে?
অর্কঃ নিকনেম অর্ক আর ভালোনাম শিশির! স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি,অফিস ইনফ্যান্ট বাহিরের সবাই জানে শিশির আর বাড়িতে সবাই বলে অর্ক!..
বিন্দুঃ,,,,(কিছু না বলে বিছনায় যায়)
তখনি দড়জায় কেও নক করে,, অর্ক গিয়ে দড়জা খুলে দেখে রুদ্রা,ইন্দু আর ও মা দাঁড়িয়ে আছে!..
অর্কঃ তোমরা?
ইন্দুঃ দেখোনা জিজু রুদ্রা কিছুতেই আমার কাছে ঘুমাবে না,, জেদ করছে আপুর কাছে ঘুমাবে ও!..
রুদ্রা দৌড়ে ওর মায়ের কাছে যায়,,,
রুদ্রাঃ মাম্মা,আমি ইন্দুমতির কাছে ঘুমোই না তুমি তো জানো সেটা, বলো! আমি তোমার কাছে ঘুমোবো তোমায় ছাড়া আমার ঘুম আসবে না! প্লিজ মাম্মা..
বিন্দুঃ তখনি তো আমার বাচ্চাটাকে ঘুমোতে বললাম আমার সাথে( কপালে চুমু দিয়ে)
লায়লাঃ বৌমা,,রুদ্রা দিদিভাই কে বরং তোমাদের সাথেই নাও! মেয়েটা অনেক কান্না করছে,,তোমরা বরং এখন শুয়ে পড়ো,,ইন্দু চলো আমরা চলে যাই!..
বিন্দুঃ মা, মেঘকেও দিয়ে যান আমার কাছে!..
লায়লাঃ ওকে দিবো? তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বউমা,,কালকে থেকে তো থাকবেই তোমার কাছে! আজকের দিনটা না হয় আমার কাছেই থাকুক!..
রুদ্রাঃ দাদীমা,, দাওনা ভাইকে! আমি, মাম্মা,বাবাই আর ভাই একসাথে থাকবো,, প্লিজ,আমার সোনা দাদীমা!..
লায়লাঃ ওরে দুষ্টু,,দাড়া দিয়ে যাচ্ছি তোর ভাইকে ! ইন্দু মা আসোতো আমার সাথে মেঘকে একটু দিয়ে যাও ওদের কাছে!..
সবাই চলে যাবার পর,,
অর্কঃ মেঘলা কে তো সহ্য করতে পারো না,,তাহলে মেঘকে? মেঘতো মেঘলারই ছেলে,, ওকে তাহলে এতো ভালোবাসো কেনো?.
বিন্দুঃ আপনাকে কি আর এমনেই হার্টলেস বলতাম? বাচ্চারা ফেরেশতার মতো,,ওদের সাথে কখনো বাজে বিহেভ করতে হয় না! আর কে বললো আমি মেঘলা কে সহ্য করতে পারিনা? সেটা আপনার ধারণা,,আমার কি আর কোন কাজ নেই সারাদিন বসে বসে আপনাদের কথা ভাববো? মেঘলা আর শিশির নামক অধ্যায় সাত বছর আগেই আমার জীবন থেকে সরিয়ে ফেলেছি! আর এই বিন্দু করিম কখনো পেছনের বাজে অতীতের দিকে ফিরে তাকায় না!..
অর্ক আর কিছু বলেনা,,তখনই ইন্দু এসে মেঘকে বিন্দুর কোলে দিয়ে চলে যায়!..
রুদ্রাঃ বাবাই তুমি ওখানে ঘুমোবে নাকি? আমাদের সাথে ঘুমোবে না?
এই প্রথম অর্ক কারোর কাছে বাবা ডাকটা শুনছে! বাবা ডাকটা যে এতো মধুর হয় তা রুদ্রা না ডাকলে জানতোই না! “বাবা” কি মিষ্ট একটা ডাক তাইনা? ওর মাঝেও এখন বাবা হওয়ার একটা ফিলিংস হচ্ছে!ঠোঁট প্রসারিত করে,,
অর্কঃ না বাবা,,,তুমি,মাম্মা আর ভাই ঘুমোও,,আমি এখানেই ঠিক আছি! ( বিন্দুর দিকে একবার তাঁকিয়ে)
রুদ্রাঃ না সেটা কি করে হবে,, আমরা চারজন একসাথে ঘুমোবো তো! ( মন খারাপ করে)
বিন্দুঃ রুদ্রা শুয়ে পড়ো,,( মেঘকে ফিডার খাওয়াচ্ছিলো)
অর্কঃ চারজন জায়গা হবেনা সোনা,, আমি এখানেই ঠিক আছি!
রুদ্রাঃ কিন্তু আমি যে,,
বিন্দুঃ রুদ্রা এখন কিন্তু মাইর খাবা,, কখন থেকে বলছি চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো! মাম্মার কথা ভালো লাগছে না? ( হালকা চিল্লিয়ে)
অর্কঃ ওকে বকছো কেনো? বাচ্চা মেয়ে তাই বলে ফেলেছে,,আর ও বললেই তো আমি যাচ্ছিনা নিশ্চিত থাকতে পারো!..
বিন্দু আর কিছু না বলে মেঘকে খাইয়ে ও নিজেও শুয়ে পড়ে রুদ্রার মাথা বুকে নিয়ে! বিন্দু মাঝখানে,, একপাশে মেঘ আর এক পাশে রুদ্রা!..
আর অর্ক শুয়ে আছে সোফায় বিন্দুদের দিকে তাকিয়েই ঘুমানোর চেষ্ঠা করে কিন্তু ঘুম আসেনা! উঠে বেলকোনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায়! আর ভাবতে থাকে নয় বছর আগের অতীতের কথা,,,
বিন্দুকে শিশির প্রথম দেখেছিলো নরসিংদীর একটা শপিং মলে! তখন বিন্দু ছিলো খুব ছোট,,এসএসসির ( SSC) পরিক্ষার্থী! বিন্দুর তার এক কাজিনের সাথে শপিং করতে এসেছিলো! শিশির প্রথম দেখেই ক্রাশ খায় যাকে বলে,, “লাভ এট ফার্স্ট সাইট”!
শিশির তখন কোন একটা কাজে শপিং মলে আসে তার একটা বন্ধুর সাথে আর বিন্দুকে দেখে থমকে দাঁড়ায়! তারপর অনেক কষ্টে ওর বন্ধুকে দিয়ে বিন্দুর ঠিকিনা,নাম্বার সহ সব তথ্যই খুজে বের করে! আর এভাবে আসতে আসতে এক/ দেড় বছর ঘুরে ঘুরে বিন্দুর সাথে এক প্রকার জোর করেই রিলেশন করে!
শিশির ছিলো তখন আইইউবি (IUB) এর সেকেন্ড ইয়ার! আর বিন্দু ছিলো ইন্টার ফার্ট ইয়ার! দুই বছর তারা ভালোই প্রেম করে! তারপর হঠাৎ করেই শিশির ওর বেষ্টফ্রেন্ড মেঘলার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে! একদিকে মেঘলা আর অন্যদিকে বিন্দু দুটো মিলিয়ে প্রায় হাপিয়ে উঠেছিলো! এদিকে, বিন্দুও এইচএসসির ( HSC)পর ঢাকা ইউনিভারর্সিটি তে চান্স পেয়েও জেদ করে আইইউবি তে ভর্তি হয়! ওর মেইন উদ্দেশ্য ছিলো শিশির কেনো ইগনোর করে সেটা জানা! এক সময় জানতেও পারে,,,পরে বিন্দু ইচ্ছাকৃত ভাবে সম্পর্ক ভেংগে দেয়,,যা শিশির কখনো চায়নি! বিন্দু যখন BBA ফার্স্ট ইয়ার শিশির-মেঘলা তখন থার্ড ইয়ারে ছিলো! ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার পরেও টেনেটুনে এক বছর ওদের সম্পর্ক ছিলো! সম্পর্ক ভেংগে যাবার পর অনেকদিন শিশির চেষ্টা করেছিলো বিন্দুর সাথে রিলেশন রাখার বা কন্টাক্ট রাখার কিন্তু বিন্দু তা রাখেনি এমনকি ওরা যে বাসায় ভাড়া থাকতো সেটাও ছেড়ে দিয়ে চলে যায় অন্য বাড়িতে যার কারণে বিন্দুর সাথে আর শিশির যোগাযোগও করতে পারেনা! সেবার শিশিরের ফাইলান ইয়ারও শেষ, ভার্সিটিতেও আসে না যদিও বিন্দুর খোজে আসতো কেও বলতে পারতো না বিন্দুর কথা! তারপর শিশিদের রেজাল্ট এর পর যেদিন “গেট টুগেদার” করে সেদিন জানতে পারে বিন্দুর বিয়ে হয়েছে! আর সেই জেদে মেঘলাকে বিয়ে করে কিন্তু কেও জানতো না! ওরা সেটেল হবার পর ফ্যামিলি কে জানিয়ে আবার মেঘলা-শিশিরের বিয়ে হয়!..
আর আজ এই সাত বছর পর আবার বিন্দুর সাথে শিশিরের দেখা,,তাও ওরই স্ত্রী হিসেবে! সবই ভাগ্য,,শিশিরের বিন্দুর প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও মায়া কিছুটা হলেও কাজ করছে! এতোদিন বিন্দুর কথা মনেই করতো না,,কিন্তু আজ থেকে করতে হবে!..
শিশির বাঁকা একটা হাসি দিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,,,
শিশিরঃ ভাগ্যে যদি তুমিই থেকে থাকো বিন্দুবালা তাহলে এতো কিছু কেনো হলো,,প্রথমেই যদি আমাদের বিয়ে হতো আজ আমাদের জীবনে এই দুর্দশা আসতো না! কেনোই বা আমি তোমাকে ছেড়ে মেঘলাকে পিছে গেলাম আর কেনোই বা তুমি অন্য জায়গায় বিয়ে করলে,,ভাগ্যের কি নির্মম খেলা!..
গুনে গুনে পুরো ৫ টা সিগারেট শেষ করেছে,, তারপরেও ওর মনের অশান্ত ভাব দূর হচ্ছে না! নিকোটিনের ধোয়ার সাথে সাথে ওর মনের কষ্টের ধোঁয়াও উড়ে দিচ্ছে! কিন্তু কোথাও একটা খারাপ লাগছে সেটা মেঘলার জন্য নাকি বিন্দুর জন্য শিশির বুঝতে পারছে না!..
ভেতরে রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৩ টা বাজে,,,তারপর ঘরির থেকে চোখ সরিয়ে বিন্দু, রুদ্রা, মেঘের দিকে একবার তাকায়! তারপর আবার আগের জায়গা মানে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে!..
আজকাল মেঘের প্রতিও শিশিরের বড্ড মায়া হয়েছে,,ও নিজে নিজে রিয়েলাইজ করতে পারে সে কত বড় অন্যায় করেছে এই নিষ্পাপ শিশুটার সাথে! মেঘলা চলে যাবার শকড টা হয়তো মেনে নিতে পারেনি! কিন্তু এতে বাচ্চাটার কি দোষ,,মেঘ তো ওরই সন্তান! মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে বাড়ি এসে পড়ে মুছিবতে কিন্তু তারপর থেকেই মেঘকে কাছে পায়,,আর একটু একটু করে মায়াও জন্ম হয় মেঘের প্রতি!..
মেঘ নামটা মেঘলাই ঠিক করে রেখে গিয়েছিলো যেদিন থেকে জানতে পেরেছে তার ছেলে হবে! “অর্কন আহমেদ মেঘ”,,,শিশির অর্থাৎ অর্ক আর মেঘলার নাম অনুসারে তাদের একমাএ পুএ সন্তানের নাম রাখতে চেয়েছিলো! কিন্তু মেঘলার ভাগ্য এতোই খারাপ ছিলো যে মা হবার অনুভূতিটা সামনে থেকে ফিল করতে পারলো না!.
সেদিন হসপিটাল থেকে এসেই শিশির ব্যাগ গুছিয়ে ঢাকায় চলে যায়! নিজের প্রিয়তম স্ত্রীর কবর সে দিতে পারবে না আর না দেখতে পারবে! মেঘলার মৃত্যুর পর সাতদিন শিশির নিজেকে ঘর-বন্ধী করে রেখেছিলো! এমনকি বাড়ির কারোর সাথেও যোগাযোগ রাখেনি ওই সাতদিন!..
হঠাৎই মেঘ কেঁদে ওঠে,,শিশির কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় শুয়ে তাকিয়ে থাকি! একটু পরে বিন্দু উঠে লাইট জ্বালিয়ে মেঘকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্ঠা করে কিন্তু এই বাচ্চার কান্না থামে না! তাই বিন্দু মেঘকে কোলে নিয়ে রুমের ভেতরেই হাটতে থাকে! একবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়,,,
শিশিরঃ আমাকে দাও,, ( উঠে বসে)
বিন্দু কিছু বলে, মেঘকেও দেয় না,, হাটতে হাটতে বেলকোনিতে চলে যায়! কিছুক্ষন পরে মেঘ কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর বিন্দু রুমের ভেতরে এসে দেখে শিশির এখনো সেইম ভাবে বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে,,,
বিন্দুঃ আপনে তো সিগারেট খেতেন না,,( না তাকিয়েই বিছানায় যাওয়ার সময়)
শিশিরঃ তুমিও তো আমায় আপনে বলতে না,,,( বিন্দুর দিকে তাকিয়ে)
বিন্দু মেঘকে শুইয়ে দিয়ে এবার পিছনের দিকে তাকায়,,
বিন্দুঃ আমি যেকোন পরপুরুষ কে আপনে করেই বলি,,আর সে যদি ঠকবাজ, জোচ্চোর হয় তাহলে তো কথাই নেই!..
শিশিরঃ আমি ঠকিয়েছি তোমায়?
বিন্দু আর কিছু না বলে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে,,শিশিরও বেশ কিছুক্ষন থম মেরে বসে থেকে সোফায় শুয়ে পড়ে!..
#চলবে…