শত_ঘৃণার_পরেও_ভালোবাসি (এক ভালোবাসার গল্প) Part.16

0
3221

#শত_ঘৃণার_পরেও_ভালোবাসি (এক ভালোবাসার গল্প)
Part.16
#Maishara_Jahan

রুহি,,,,,,, আমি একটু একা থাকতে চায়।

বলে রুহি চলে যায়। কিছু ক্ষন পরে খবর আসে রুহির এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে সে হসপিটালে ভর্তি।

একথা শুনার সাথে সাথে সবাই অস্থির হয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দেয়। রিমান গাড়ি চালাচ্ছে সবাই গাড়িতে বসে আছে, আর প্রচুর টেনশনে আছে। রিমান অনেক জোরে গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে যায়।

গাড়ি থেকে নেমে সবাই দৌড়ে ভিতরে যায়,সৌরভ তাদের সবাইকে রুহির বেডে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই তাড়াহুড়ো করে ঢুকে, ঢুকে দেখে রুহি শুয়ে আছে, তেমন কোনো ব্যাথা পায়নি, শুধু মাথায় একটু কেটে গেছে, আর পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছে।

সবাইকে দেখে রুহি ঠিক হয়ে বসে,মুখে কোনো হাসি নেয়।

আহান,,,,,,,, কিভাবে গাড়ি চালাস, চোখ কি বাসায় রেখে আসছিলি। আমাদের জান বেরিয়ে গেছিলো।

দিয়া,,,,,,তোর বেশি লাগেনি তো।

রুহি,,,,,,, না,আমি ঠিক আছি।

বাবা,,,,,,,,, এই মেয়েকে গাড়ি কিনে দেওয়ায় ভুল হয়েছে।

মা,,,,,,,, কতো বার বলেছি একটা ড্রাইভার রাখতে, কিন্তু কে কার কথা শুনে।

রুহি,,,,,,,,হয়েছে,,, আমি ঠিক আছি তো নাকি।

আহান,,,,,,,,, আমি তোকে বাসায় যাওয়ার জন্য ফর্মালিটি দেখে আসছি।

বাবা,,,,,,,,কোনো দরকার নেয়, আমার মেয়েরটা আমি দেখে নিবো।

আহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, তার বাবা মা ডক্টরের সাথে কথা বলতে যায়। রিমান দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আহান দিয়াকে ইশারা দিয়ে বাহিরে চলে আসে। রুহি রিমানকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

রিমান,,,,,,,,,, অন্ধের মতো গাড়ি চালাচ্ছিলি নাকি। জানিস গাড়ি চালাতে চালাতে কতো রকমের খেয়াল আসছিলো,কতো কিছু ভাবনায় আসছিলো।(ধমক দিয়ে)

রুহি,,,,,,,,কি ভেবেছিলেন মরে গেছি।

,,,,,,,রুহিহহ (ধমক দিয়ে)

,,,,,,,,কিন্তু এখন আফসোস করছেন এমন কিছু হলো না তাই। আমি মারা গেলে আপনাকে কেও জ্বালাতো না, তাই না। আপনার জন্য খুব ভালো হতো।

,,,,,,,,,,,, তুই মারা গেলে আমার জন্য ভালো হলো,, ডক্টর সৌরভ মনে হয় ওর মাথায় একটু বেশি লেগেছে, তাই উল্টা পাল্টা কথা বলছে৷ আপনি ওর মাথা চেক করেছেন তো ভালো করে।

,,,,,,,রুহি আমার মাথা একদম ঠিক আছে। মনে হয় আপনার মাথা ঠিক নেয়, নিজের হবু বউকে ছেড়ে এখানে চলে এসেছেন।

,,,,,,,,, রুহি একটু বেশি বলছিস।

,,,,,,,আমি সব সময় বেশিই বলি,,, নতুন জনকে পেয়ে পুরোনো সবাইকে ভুলে গেছেন নাকি।

,,,,,,,,রুহি

,,,,,,,সৌরভ, আমি একটু একা থাকতে চাই, আমার ভালো লাগছে না। পিল্জ সবাইকে একটু যেতে বলুন।

সৌরভ,,,,,,,, এএ রিমা,,,,,

রিমান,,,,,,,,,, শুনেছি আমি,

রিমান যেতে নিয়ে আবার পিছনে ফিরে বলে,,,,,,,সৌরভ তুমি যাবে না।

সৌরভ,,,,,,,,,, আমি ডক্টর আমি থাকলে সমস্যা নেয়।

রিমান,,,,,,,, কিন্তু রুহি একা থাকতে চাই।

সৌরভ,,,,,,,,,, আমি থাকা না থাকা একি ব্যাপার।

রিমান,,,,,,,,,,, কেনো তুমিকি অদৃশ্য নাকি, যে তোমাকে দেখা যায় না। তাছাড়া তুমি এখানে থাকলে রুহির শ্বাস নিতে কষ্ট হবে।

সৌরভ,,,,,,,,, হেহহ কেনো।

রিমান,,,,,,,, এই রুমে অক্সিজেন কম আছে, আর মধ্যে তুমি অর্ধেকের বেশি নিয়ে নিচ্ছো, তাহলে রুহি নিশ্বাস নিবে কিভাবে।

রুহি,,,,,,,,, আমার কথা আপনার না ভাবলেও চলবে। আপনি এখন আসতে পারেন।

সৌরভ একটু মুশকি হেঁসে রিমানকে ইশারা দিয়ে যেতে বলে, রিমানের মনে চাচ্ছিলো সৌরভকে ধরে আছাড় মারতে। রিমান সৌরভের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যেতে নেয় আর দরজায় ধাক্কা খায়। রাগে দরজাকে উল্টা একটা থাপ্পড় মেরে বের হয়ে যায়।

সৌরভ,,,,,,,,, রিমানের মাথায় মনে হয় একটু সমস্যা আছে।

এটা বলে সৌরভ রুহির দিকে তাকায়, রুহি সৌরভের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

সৌরভ,,,,,,, না মানে, এমনি মজা করছিলাম।
,,,,,,,,

রিমান বাহিরে গিয়ে দিয়াকে তাড়াহুড়ো করে বলে,,,,,,,দিয়া দিয়া তুমি তাড়াতাড়ি ভিতরে যাও।

দিয়া,,,,,, কেনো রুহির কি কিছু হয়েছে।

রিমান,,,,,,,, আরে সৌরভ ভিতরে আছে।

আহান,,,,,,,,হেহহ তো।

রিমান,,,,,, না মানে, সৌরভ চিকিৎসা করছে,, রুহির ভালো লাগছে না, তুই তোমাকে ডাকছে।

দিয়া,,,,,,, ওকে আমি যাচ্ছে।

দিয়া যায়, আহান একটি লোককে থেংস বলছে।

রিমান,,,,,,, কে ওনি।

আহান,,,,,,এনিই তো আমাদের ফোন করে খবর দিয়েছে।

রিমান গিয়ে ঐ লোকের কাঁধে জোরে হাত রেখে বলে,,,,, এক্সিডেন্ট হয়েছে এটা বলেছেন ভালো কথা,, এটা বলেই ফোন রেখে দিতে হবে, বেশি ব্যাথা পায়নি এটা বললে কি হতো। এখানে অনেকে হার্ট অ্যাটাক করতো আরেকটু হলে।

,,,,,,, মোবাইল এ টাকা শেষ হয়ে গেছিলো।

রিমান,,,,,,,,, আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।

,,,,,,,,,,, আমি বিবাহিত।

,,,,,,,ওহ তাহলে সত্যি কথা বলছেন,, আচ্ছা ধন্যবাদ।

বাবা,,,,,,,, রিমান আমি রুহিকে নিয়ে যাচ্ছি,, বলে দিয়ো।

রিমান,,,,,,,, আহান,,,,

আহান,,,,,,,,, রিমান বলে দে, রুহি কিছু দিন আমার সাথে থাকবে।

রিমান আবার বলতে নেয়,

বাবা,,,,,,,, রিমান বলে দে, ও আমার মেয়ে।

রিমান,,,,,,, আহা,,,,,,,

আহান,,,,,,,, রিমান বলে দে,, রুহি আমারো বোন হয়, তাই আমার সাথেই থাকবে।

রিমান,,,,,,,,, আরে আমাকে কেও কিছু বলতে তো দেও,,কখন থেকে আমি হা করছি কিন্তু কেও বলতেই দিচ্ছে না। নিজেরাই কথা বলবা তাহলে আমার নাম বার বার কেনো নিচ্ছো।

বাবা,,,,,,,আমি কারো সাথে কথা বলছি না।

আহান,,,,,,,আমিও না।

বাবা,,,,,,,,আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাচ্ছি, দেখি কার এতো সাহস যে আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে।

আহান,,,,,,,,দেখাচ্ছি সাহস।

আহান সোজা গিয়ে রুহিকে কোলে উঠিয়ে নেয়। রুহি সহ সবাই অভাক।

রুহি,,,,,,,, ভাইয়া কি করছো।

আহান,,,,,,,,চুপচাপ থাকবি না হলে ফেলে দিবো।

রিমান,,,,,,,, ফালাইশ না ভাই ব্যাথা পাইবো।

আহান রিমানের দিকে তাকিয়ে একটা রাগী লুক দিয়ে রুহিকে নিয়ে যেতে থাকে।

বাবা,,,,,,,, নামা আমার মেয়েকে।

আহান তার বাবার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে, রুহিকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে, দিয়াকে বসতে বলে। দিয়া বসলে সোজা গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

বাবা,,,,,,,,,এই ছেলের রাগটা এখনো কমে নি।

রিমান,,,,,,,,, সব কথা বাদ,,ও মনে হয় ভুলে গেছে আমরা একটা গাড়ি দিয়ে এসেছিলাম,যেটা ও নিয়ে চলে গেছে, আমরা যাবো কিভাবে একটু ভাবলোনা।

বাবা,,,,,,,,এই ছেলে কোনো দিন ভালো হবে না।

রিমান,,,,,,, চলেন আংকেল আপনাকে আটোতে উঠিয়ে দিয়, আমি রিকশা করে চলে যাবো।

বাবা,,,,,,,,তাহলে আমাদের ও রিকশা করে দাও।

রিমান,,,,,,,,, দুজনে আলাদা আলাদা ভাবে জাবেন এটা কেমন লাগবে।

বাবা,,,,,,,, মানে, দুজন আলাদা আলাদা কেনো যাবো।

রিমান দুজনের দিকে তাকায় আর বলে,,,,,, আমি বলতে চাচ্ছি না, কিন্তু একটু নিজেদের দিকে তাকাও আর বিবেকের সাথে বলো এক রিকশায় ফিট হবে কিনা।

আহানের বাবা নিজের দিকে তাকিয়ে রিমানের কান ধরে টান দেয়।

রিমান,,,,,,, আউউ আউউ,, মজা করছিলাম আমি সরি সরি।

রিমান ওদের ছেড়ে নিজে বাসায় চলে যায়।

দিয়া,,,,,,,,, একটু বেশি হয়ে গেলো না।

আহান দিয়ার দিকে রাগী ভাবে তাকায়।

দিয়া,,,,,,,, না না,, বরং একটু কম হয়ে গেলো। (একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে)

রুহি চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়িতে আসতেই আহান রুহিকে তার রুমে নিয়ে শুয়িয়ে দেয়।

দিয়া,,,,,,, বল কিছু খাবি, আমি নিয়ে আসছি।

রুহি,,,,,,,, পিল্জ আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে, কেও আমাকে ডিস্টার্ব করো না, যাও এখান থেকে।

আহান আর দিয়া বের হয়ে যায়।

দিয়া,,,,,,,, আপনি একটু রিমানকে বুঝিয়ে বলতে পারেন না।

আহান,,,,,,,, এখানে আমার কিছুই করার নেয়, না এখানে রুহির কোনো দোষ আছে না রিমানের কোনো ভূল। তুই এক কাজ কর, ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়।

দিয়া,,,,,,, হুমমম।

গভীর রাত কিন্তু রুহি আর রিমানের চোখে ঘুম নেয়। রুহি নিবিড়ে চোখের পানি ফেলছে, চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।
,,,,,,,,,,,,

রিমান,,,,,,,,,, (জানি আমি রুহি হয়তো এখনো কান্না করছে, ওর কান্না করা মুখ আমাকে ঘুমাতে দিবে না)

সকালে,,,,,,,,,

রুহি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে নিচে আসে। এসে বসে। রুহির নাক মুখ ফুলে গেছে। দিয়া আহান বুঝেও কিছু বলে নি। সেসময় রিমান আসে।

দিয়া,,,,,,হয়েছে এবার।

আহান,,,,,,,আরে রিমান আয় আয়। (খুশি হয়ে)

রুহি রাগী চোখে আহানের দিকে তাকায়, আহান রুহির চোখ দেখে মুখ থেকে হাসি সরিয়ে ফেলে।

রিমান এসে সোজা এসে বসে। রুহির দিকে তাকায়, রুহি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

রিমান,,,,,,,, এখন কেমন আছিস।

রুহি,,,,,,,যেমন দেখছেন (রাগে)

আহান,,,,,,,,রুহি ভালো করে কথা বল,, কেও এভাবে কথা বলে।

রিমান,,,,,,,,, আরে তোর বোন কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানে না,, একটু শিখা। আচার আচরন ভালো করতে বল।

আহান,,,,,,,,, আমি যাওয়াতে মেয়েটা আসলেও আচার আচরণ ভুলে গেছে।

রিমাব,,,,,,,,পুরো ভুলে গেছে,, এভাবেই চলতে থাকলে ওর বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

আহান,,,,,,, আমারো তাই মনে হচ্ছে।

রুহি এসব শুনে রাগে উঠে দাঁড়ায়, আহান ভয় পেয়ে একটু সরে দাঁড়ায়, রিমান ভয়ে সোফার উপরে পা উঠিয়ে দেয়। রুহি একটু চোখ বন্ধ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে আবার সোফাতে বসে পড়ে।

রুহি,,,,,,,, আপনি এখানে আমার দোষ ধরতে এসেছেন। কেও আমকে বিয়ে করবে না, এটা বলে কি কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছেন।

রিমান,,,,,,,,, আমি ওভাবে বলেনি।

রুহি,,,,,,,,তো কিভাবে বলেছেন,, আমাকে কেও বিয়ে করবে না তাই না। কি মনে করেন বিয়ে কি আপনি একায় করতে পারেন, আমি আপনার এক সেকেন্ড আগে হলেও বিয়ে করবে। ভাইয়া ফোনটা দাও তো (জোরে)

সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।রুহি আবার আহানের দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে জোরে বলে,,,,,,ফোনটা দে

আহান ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে দেয়। রুহি তার মাকে ফোন করে।

মা,,,,,,,, হ্যালো কে ।

রুহি,,,,,,,,,, মা আমি বলছি,, শুনো আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করো,, আমি কয়েক দিনের মধ্যে বিয়ে করবো। পারলে কালকেই করবো।তাড়াতাড়ি আমার জন্য ছেলে দেখো না হলে যাকে পাবো এক সাপ্তাহের মধ্যে তাকেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিবো বলে দিলাম।(জোরে জোরে বলে)

মা,,,,,,,,কি বলছিস।

রুহি,,,,,,,, এখনি তুমি আমার জন্য ছেলে দেখো। আমি বিয়ে করবো বেস।

বলে ফোন রেখে দেয়, আর রিমানের মুখের সামনে তুরি মেরে মেরে বলে,,,,,,,, এখন আর আগের রুহিকে খুঁজে পাবে না। তুমি যেদিন ঘরে বউ নিয়ে আসবে সেদুন আমি জামাই নিয়ে আসবো, শুধু দেখবে।

বলে যেতে নেয় কিন্তু পায়ে ব্যাথার কারনে এগোতে পারে না। সবাই তার পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। রুহির কথায় সবাই চুপ।

রুহি,,,,,দিয়া এসে আমাকে নিয়ে যা।

দিয়া এসে রুহিকে ধরে ধরে নিয়ে যায়। রিমান হা করে আহানের কাছে আসে।

রিমান,,,,,,,, অসুস্থ না হলে, মনে হয় আজ কপালে শনি ছিলো। আচ্ছা এতো তাড়াতাড়ি তোর মা ছেলে কোথা থেকে পাবে তাই না।

আহান,,,,,,মা চাইলে আজি ছেলে ঠিক করতে পারে।

চলবে,,,,,,,

ভালো লাগলে like, comment করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here