লাভ ফাইট পর্ব ৩

0
389

#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

” ভাইয়া আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করেন নি কেন?”

পায়েলকে পড়িয়ে বের হচ্ছিলো ফালাক।পেছন থেকে আচমকা দোয়েলের ডাক শুনে থতমত খেয়ে যায় ফালাক।দোয়েল ফালাকের সামনে আসে।

” দেখেন আপু আপনি যদি এমন করেন আমি কিন্তু আন্টিকে সব বলে দেবো।”

” দিন।আমার কোনো প্রবলেম নাই।”

দোয়েলের কথা শুনে ফালাক বেকুবের মতো দোয়েলের দিকে তাকিয়ে থাকে।দোয়েল দুষ্টু হাসি দিয়ে চোখ মারে।ফালাক লাফিয়ে বলে উঠে,,,

” নাউজুবিল্লাহ।এগুলা কি শুরু করছেন আপু?”

” কি শুরু করলাম?”

” দেখেন আপু!আপনি যদি এমন শুরু করেন আমি কিন্তু পায়েলকে পড়ানোই বাদ দেবো।”

” আপনি রিকুয়েষ্টটা একসেপ্ট করুন না!আমি আর এরকম করবো না।”

” মেসে গিয়ে করবো নি।”

” নাহ,এখনি এখানে কর‍তে হবে।”

” ফোনে নেট নাই।”

” সমস্যা নাই।আমি ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দিচ্ছি।”

ফালাক কোনো কথা বলে না।কিছুক্ষণ পর পর শুকনো ঢোক গিলে।

” কি হলো ভাইয়া ফোনটা দিন!”

ফালাক এইবারও চুপ থাকে।দোয়েল ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ফালাক আমতা আমতা করে বলে,,,

” আসলে হয়েছে কি আপু!আমি না মেয়েদের এড দিই না।”

” আমি মেয়ে না।আমি পরী।এড দিতে পারেন।আর কথায়।কথায় আপু বলবেন না।আমি আপনার থেকে ছোট।দোয়েল বলে ডাকবেন আমায়।এখন ফোনটা দিন।”

ফালাক অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেয়।দোয়েল পাসওয়ার্ড সেভ করে দিয়ে আইডিতে ঢুকে নিজের আইডিকে ফালাকের লিস্টে এড করে নেয়।ফোনটা ফালাকের হাতে দিয়ে বলে,,,

” ব্লক দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না।”

_______

“আপ্পি উঠ।এই আপ্পি।”

পায়েলের ডাকে ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলি।মোচড় দিয়ে লম্বা একটা হাই তুলে পায়েলকে বলি,,

” কি হয়েছে?”

” তুই ফালাক ভাইয়াকে বের করে দিয়েছিস তাই আব্বু রাগারাগি করছে।”

পায়েলের কথা শুনে মুহুর্তেই আমি আকাশ থেকে পড়ি।ভোর রাতের দিকে ফালাকের সাথে সেই আমার রাগারাগি ঝগড়া হয়। রাগের মাথায় বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলি।তারপর ও আর দেরি করে না।বেরিয়ে যায়।ও বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘরে এসে সেই রাগে কান্নাকাটি করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়ালই নেই।
বালিশের পাশ থেকে ফোন বের করে দেখি মোবাইলের স্ক্রিনে সাড়ে তিনটা বাজে।দুপুর সাড়ে তিনটা। এতক্ষণ ঘুমালাম?তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাই।ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে যেতেই আম্মুর বকা শুনতে হয়,,,

” উঠেছে জমিদারের বাচ্চা।কয়টা বাজে খেয়াল আছে?রাত ভোর কিচ্ছা কাহিনি করে এতক্ষণে উঠলেন তিনি।”

আম্মুর কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে আমি আমি বাটিতে দুধ আর কনফ্লেক্স নিয়ে খেতে লাগি।শুরু হয় আম্মুর আরেক দফা ভাষণ,,,

” তুই দুধ কনফ্লেক্স খাবি আগে বলতি।আমি কি ভাত রান্না করতাম তোর জন্য।শুধু শুধু ভাত গুলো নষ্ট হলো।”

আম্মুর এই ভাতের কথা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি।মাঝে মাঝে তো আমার এইও মনে হয় আমি ম*রলে তখনও আমার আম্মু বলবে মা*রা যাবি আগে বলতি,শুধু শুধু ভাতগুলো নষ্ট হলো।

এরই মধ্যে আব্বু ঘর থেকে বের হয়।চোখে মুখে রাগ ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।আমার দিকে কিছুক্ষণ আড়চোখে তাকিয়ে আব্বু সোফায় গিয়ে বসে।আমি আস্তে ধীরে খেতে লাগি।কারণ আমি জানি আব্বু আমায় খাওয়ার সময় কোনো বকাঝকা করবে না।উলটা রাগ করে যদি খাওয়া দাওয়া বাদ দিই! ধীরে ধীরে খেতে খেতে দুই বাটি দুধ কনফ্লেক্স শেষ করি আমি।আরেক বাটি খেতে যাবো কিন্তু পেটে কুলাচ্ছে না।চুপচাপ মাথা নিচু করে ঘরে আসতে যাবো ঠিক তখনই আব্বু পেছন থেকে ডাক দেয়,,,

” দোয়েল!”

” জ্বী আব্বু।”

” বসো তোমার সাথে কথা আছে।”

আমি শুকনো ঢোক গিলে বসি।আব্বু বলা শুরু করে,,,

” মসজিদ থেকে এসে ফালাককে না দেখে ভেবেছিলাম নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পরেছে।সকালে ডাকাডাকির পরও ফালাককে পাই না।তখন পায়েল বলে তুমি নাকি ওকে বের করে দিয়েছো।”

” জ্বী আব্বু।পায়েল ভুল কিছু বলেনি।”

” দেখো দোয়েল তুমি এখনো বাচ্চা নও।”

” জানি।”

” জানোই যখন এখন এত নাটক করার কি দরকার?ফালাককে ফোন দাও।আর ফোন দিয়ে ওকে বাসায় আসতে বলো।কথা আছে।কথাগুলো তোমায় খাওয়ার সময় বললাম না।কিছু বললেই তো রাগ করে খাওয়া বাদ দাও।”

আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে ছিলাম।এমন সময় পাশ থেকে আম্মু বলে,,,

” কোয়েলের আব্বু,তুমি এখনই দোয়েলকে ফোন দিতে বলো।না হলে ও জীবনে ফালাককে ফোন দেবে না।বাপের মতোই হয়েছে।রাগ পুষে রাখে।”

আম্মুর কথা শুনে আমি পায়েল মুখ টিপে হেসে দিই।আব্বু আম্মুর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেন,,

” এখনই ফালাককে ফোন দাও।”

আমি চাপা হাসি নিয়ে ফালাককে ফোন দিই।কিন্তু ও ফোন রিসিভ করে না।আমি আব্বুর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাই।আব্বু বলে,,,

” দিতে থাকো।একবার না একবার ধরবেই।”

কল দেওয়াটা বড্ড আমার ইগোতে লাগছে।আমি সচারাচর কাওকে নিজে থেকে ফোন দিই না।সে আমার যতই দরকার থাকুক।নিজে থেকে ফোন দিলে আমার সেল্ফ রেস্পেক্টে লাগে যা অন্যদের কাছে ইগো নামে পরিচিত। পঞ্চমবার কল দেওয়ার পর ও কল রিসিভ করে।কন্ঠে তীব্র অভিমান নিয়ে ও সালামের জবাব দেয়।

” ফোন দিয়েছিস কেন?”

” ইচ্ছা হলো তাই।”

আমার কথা শুনে পাশ থেকে আম্মু বলে,,,

” এই মেয়ের ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলার স্বভাব গেলো না।”

ফালাক বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে।তারপর শান্ত গলায় বলে,,,,

” ভালো।”

কথাটা বলেই সে ফোন রাখতে যাচ্ছিলো।ফোনের এ পাশ থেকে আমি বলি,,,

” আরে আরে আরেহ,ফোন রাখছিস কেন?”

” ইচ্ছা হলো তাই।”

” আমার ডায়লগ আমায়ই শোনাস?”

” এই মেয়ে আবার ঝামেলা পাকাবে। ”

কথাটা বলেই আম্মু আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়।

” হ্যালো ফালাক!আমি দোয়েলের আম্মু বলছি।ওর কথায় কিছু মনে করো না।”

” আসসালামু আলাইকুম আন্টি।আর আমি ওর কথায় কখনো কিছু মনে করিনি।পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়।”

আম্মু হেসে দেয়,তারপর হাসতে হাসতে বলে,,

” ওয়ালাইকুম আস সালাম।দোয়েলের আব্বুর সাথে কথা বলো।সে কিছু বলতে চায় তোমাকে।”

কথাটা বলে আম্মু আব্বুর হাতে ফোন দেয়।আব্বু সালামের উত্তর দিয়ে মুল আলোচনায় আসে।

” দেখো ফালাক,কাল রাতে তো একটা বিরাট বড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো!তোমায় চিনি জানি বলেই দোয়েলকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।”

” জ্বী আংকেল বুঝতে পেরেছি।”

” এছাড়াও,তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।যদি কষ্ট করে আজ আসতে!আর দুপুরে আমাদের সাথে খেতে!”

” আংকেল আমি চেষ্টা করবো আপনার অনুরোধ রাখার।এখন রাখছি।টিউশনে আছি তো!আল্লাহ হাফেজ। ”

” আল্লাহ হাফেজ। ”

বাবা ফোন কেটে আমার হাতে দেয়।আমি আর কোনো কথা না বলেই সোজা আমার ঘরে চলে যাই।হঠাৎ টেবিলের পাশে থাকা ব্যাগটা চোখে পরে আমার।ফালাক কালকে এই ব্যাগ দিতেই রাত দুপুরে এসেছিলো আর…..।লাজুক হাসি আমি।কৌতুহল জাগে ব্যাগটার প্রতি।গিয়েই খুলেই ফেলি।ব্যাগটার ভেতরে থাকা জিনিসগুলোর প্রতি আমার এক আকাশ পরিমাণ আবেগ রয়েছে।হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে ফালাকের জন্য গিফটগুলো কিনতাম।অজান্তেই হেসে ফেলি।কি পাগলামি গুলোই না করতাম।হাতে বানানো রঙিন কাগজের একটা কার্ড দেখতে পাই।আমিই বানিয়েছিলাম।কার্ডটা খুলে লেখাগুলো পড়তে লাগি।লেখা গুলো পড়ে মনে হচ্ছে লজ্জায় মাটি দু ভাগ করে তার ভেতর ঢুকে যাই।লজ্জায় দু হাত দিয়ে মুখ আড়াল করি আমি।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here