#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” তোমার বিয়েতে কোনো আপত্তি আছে?”
প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে আব্বু ফালাককে।ফালাক মাথা তুলে শীতল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়।মুচকী হেসে বলে,,,
” ওপরওয়ালা জোড়া বেঁধে রাখলে আজ হোক বা কাল হোক,দোয়েলের সাথেই বিয়ে হতো আমার।আর ওপরওয়ালাই উত্তম পরিকল্পনাকারী।উনি যা ভালো বুঝেন তাই করেন।”
ফালাকের কথা শুনে আমি ওর দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি দিই।ভাবনাচ্ছেদ ঘটে মানিক আংকেলের কথায়।লোকটা বড্ড খোঁচা মেরে কথা বলে।
” মেয়ে ন*ষ্টামি করতে গিয়ে ধরা পরেছে!কোথায় মেয়েকে শাসন করবে তা না।নাটক শুরু করেছে এরা! গণি ভাই,চলেন।এখানে থেকে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।তাদের মেয়েকে তারাই বুঝে নিক।”
যা না যা। কে তোদের বেঁধে রেখেছে।অ*সভ্য লোক।নিজের ছেলের বাদ্রামি চোখে পরে না আসছে অন্যের মেয়ের দোষ ধরতে।আব্বু বরাবরই শান্ত স্বভাবের লোক।মানিক আংকেলের কথায় কোনো কর্ণপাত করেন না আব্বু।বেশ শান্ত গলায়ই আব্বু ইমাম সাহেবকে বলেন,,,
” ছেলে মেয়ের কোনো আপত্তি নেই।আপনি যে কাজটা করতে এসেছেন সেই কাজটা করতে পারেন।”
ফজরের আজানের আগ দিয়ে আমাদের বিয়ে পড়ানো হয়।তিনবার কবুল বলে আমরা একেঅপরকে গ্রহণ করি।ইমাম সাহেব আমাদের বিয়ে পড়িয়ে মসজিদের দিকে রওনা দেন।আর বাকীরা যে যার বাসার দিকে।আব্বু ওযু করতে যায়।আর আম্মু আমার পাশে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।পায়েল কিছুক্ষণ পর পর আমার আর ফালাকের দিকে তাকিয়ে মুচকী মুচকী হাসছে।আব্বু ওযু করে মসজিদে চলে যান।আম্মু আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে সেও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে যান।পায়েল তখনও আমাদের সাথে বসে আছে।চোখ মেরে বলে,,,
” আপ্পি জিতে গেলি তো!”
” খুব বেশি পাকনামো বেড়েছে না তোমার?মারবো এক চড়।”
” দে না দে!আমিও আব্বুকে বলে দিবো তুই প্রেম করিস।”
পায়েলের কথা শুনে আমি আর ফালাক ফিক করে হেসে উঠি।পায়েল যখন আমার আর ফালাকের রিলেশনের কথা জানতে পারে তখন প্রায়ই আমায় এরকম ব্ল্যাকমেইল করে আমার থেকে টাকা আর এটা ওটা নিতো।আমার কাছে পায়েল বদের হাড্ডি হলেও ফালাকের কাছে সে ছিলো নিতান্তই শিশু।এক প্রকার গোয়েন্দা বলা যেতে পারে।ট্যাবে মেসেঞ্জার একাউন্ট খুলেছিলো ও।প্রায়ই ফালাককে আমার গতিবিধি সম্পর্কে খবরাখবর দিতো।এই কারণে সে ফালাকের চোখের মণি ছিলো।যদিও আমি আব্বুকে অতটা ভয় পাই না।কিন্তু আব্বু কষ্ট পাবে ভেবে বিষয়টা গোপন রাখতে চেয়েছিলাম সাময়িক সময়ের জন্য।
ফালাক আর আমার রিলেশন হয় চার বছর আগে।আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ক্লাস নাইনে উঠলে নাকি সবার ডানা গজায়।আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।থ্রীতে পড়া ছোট বোনের প্রাইভেট টিচারকে দেখে আমার মন উড়ু উড়ু করতে লাগে।প্রায়ই এটা ওটার বাহানা দিয়ে দেখতে যেতাম ফালাক ভাইয়াকে।ভাইয়া!তাকে আমি ফালাক ভাইয়া বলেই ডাকতাম।ইভেন এখনো ডাকি।শুধু রাগ উঠলে নাম ধরে ডাকি।প্রপোজটা অবশ্য আমিই করি আগে!বেতনের খামের ভেতর একটা কাগজে I love you লিখে দিয়েছিলাম। বেতনের খামটা খুলে তিনি টাকার সাথে কাগজটা দেখতে পান।কাগজটা খুলে পড়তেই তিনি চিৎকার দিয়ে
বলে ওঠেন,,,
” আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ।আপু এইগ্লা কি?”
আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,,,
” কি হয়েছে ভাইয়া?”
” আন্টি কই?আন্টিরে ডাকেন।”
” আম্মু তো আপুনির সাথে শপিংয়ে গেছে।যাওয়ার আগে আপনার স্যালারির খামটা আপু আমার হাতে দিয়ে বললো আম্মু এটা আপনাকে দিতে বলেছে।”
ফালাক ভাইয়া গলা ঝেড়ে কেশে বলেন,,,,
” আপু একটু পানি হবে?”
” Why not?sure vaia.”
আমি রান্নাঘরে গিয়ে ট্রে বের করে সেখানে শরবত বানিয়ে আর ফ্রিজ থেকে পুডিং বের করে উনার জন্য নিয়ে যাই।ভেবেছিলাম বুঝতে পারবেন উনি।তাই মিষ্টিমুখ করানোর জন্য পুডিং বানিয়েছিলাম।শুধু তার জন্য।কিন্তু তা আর হলো কই?তাই বলে কি যার জন্য স্পেশালি পুডিংটা বানিয়েছি তাকে খাওয়াবো না?আমি ট্রেতে খাবার নিয়ে তার সামনে দিয়ে বলি,,,
” আজকে ফার্স্ট টাইম পুডিং বানিয়েছিলাম।দেখেন তো কেমন হয়েছে খেতে।”
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।আমি চাপা হাসি দিয়ে বলি,,,
” কি হলো ভাইয়া খান?খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে!”
উনি কিছুডা পুডিং খেয়ে বলেন,,,
” জ্বী আপু অসাধারণ হয়েছে।”
আমি বোকা হাসি হেসে লাফাতে লাফাতে নিজের ঘরে চলে যাই।ঘরে গিয়ে লজ্জা মুখ খানা হাত দিয়ে আড়াল করে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ি।গুণগুণ করে পরিনীতা মুভির “তোমাকে” গানটা গাইতে লাগি আর ঘরে একা একাই নাচতে লাগি।আয়হায়,ফালাক ভাইয়া আমার রান্নাকে অসাধারণ বলেছে!এমন সময় পায়েল আমার ঘরে আসে।
” আপ্পি?”
পায়েলের হঠাৎ ডাকে আমি ভড়কে যাই।তোতলাতে তোতলাতে বলি,,,
” কি..কি..কি হয়েছে?”
” তুই স্যাররে কিছু বলেছিস নাকি?আজ বেশিই তাড়াতাড়ি চলে গেলো।”
” আ..আ..আমি তোর স্যাররে কি বলবো।”
” না এমনি মনে হলো।তুই আসার পর স্যারের ব্যবহার অন্যরকম লাগলো তো!তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
আমি পায়েলের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলি।
___________
মেসে ফিরেই ফালাক হাত মুখ ধুয়ে নেয়। অর্ক একটু অবাকই হয়ে যায়!
” কি রে?আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরলি!”
” আর বলিস না।ছাত্রীর মেঝোবোন বেতনের খামে টাকা সাথে কাগজে আই লাভ ইউ লিখে দিয়েছে।আবার পুডিং,শরবত খাওয়ালো।”
” ভালো কথা তো!পুডিং শরবত খাওয়ালো ভালো কথা।”
ফালাক টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,,,
” কিভাবে ভালো কথা?”
” মেসে তো খালার হাতের সেই একই ভাত তরকারি খাওয়া লাগে।সে হিসাবে ছাত্রীর বাসায় গিয়ে যদি ভালো মন্দ খেতে পাস তো ভালো কথা হবে না?আমার কপাল দেখ!ছাত্রীর মা আমায় লবণ দিয়ে শশা মেখে সাথে চা খেতে দেয়।”
” না,আন্টি-আংকেল,ছাত্রীর বড় বোন ভালোই আছেন।যথেষ্ট স্নেহ করেন আমায়।কিন্তু মেঝোটাই একটু ইঁচড়েপাকা টাইপের আছে।সবে মাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছি।উড়ু উড়ু করছে।আর চাপে থাকতে হয় আমায়।ভাবছি টিউশটা রাখবো না।ওভাবে টেনশনে পড়ানো যায় না।”
” হুদাই টেনশন!আমি থাকলে পটে যেতাম।”
” এখানে পটাপটির কথা আসছে না!আবেগে কি না কি করে দেয় মেয়েটা!আর প্যারা না আমাকে পেতে হয়।”
” তুই শুধু শুধু বেশি ভাবিস।”
” হু ভাবি,কারণ মনিষীরা বলেছে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।”
______
রাতে খেয়ে ফালাক ফেসবুকে ঢুকতেই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টের নোটিফিকেশনে ফোনটা মৃদু কেঁপে ওঠে।আইডিটার নাম মেহজাবিন দোয়েল।ফালাক যতদুর জানে পায়েলের মেঝোবোনের নাম মেহজাবিন দোয়েল।এটা দোয়েলের আইডি না তো?ফালাক লাফ দিয়ে চিৎকার করে ওঠে,,,
” ওরে শা*লা”
পাশের রুমে গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রেমালাপে মগ্ন ছিলো অর্ক।ফালাকের চিৎকার শুনে সে দৌড়ে আসে।
” আরেহ কি হয়েছে?”
” ভাই,ওই মেয়েটা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিছে।বলছিলাম না?সুবিধার লাগে না আমায় এরে!”
“দিছে দিছে!ফলোয়ার বানায় ঝুলায় রাখ।চিৎকার চেঁচামেচির কি আছে।আমি ভাবছি না জানি কি হইছে!সারাদিন শেষে একটু কথা বলতেছিলাম তোর ভাবির সাথে!”
” আসতে বলছে কে তোকে?”
” ভাবছিলাম তোরে বোবায় ধরছে তাই…।উপকারের দাম নাই দুনিয়ায়!”
কথাটা বলে অর্ক ভেংচি কেটে চলে গেলো।ফালাক দোয়েলের আইডিতে ঢুকে পোস্ট গুলো দেখতে লাগলো।যদিও আইডি নতুন হওয়ায় বেশি পোস্ট নেই।তারপরেও রাতের নিদ্রাহীন অলস সময়ে এই পোস্টগুলোই ভালো লাগতে শুরু করলো ফালাকের।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ