#লাভনীতি
বিথি হাসান -১৫
৩৯.
নম্রতার লেভার পেইন ওঠেছে।বাড়ির সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। মাথা কাজ করছে না কারোর।কি হয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে বুঝতেই পারছে না।কত ভয়ংকর পরিস্থিতি স্বীকার যে হয়েছে তারা।সেটা পরিস্কার বুঝতে পারছে।
একটু পর পর চিৎকার করে করে ওঠছে নম্রতা। এই চিৎকার একটা যদি আসাদ শুনতো তবে হয়তো এতক্ষণে বাড়ি মাথা করে ফেলত।কিন্তু দুর্ভাগ্য নাকি সৌভাগ্য জানি না।আসাদ বর্তমানে বাড়ি নেই।তার অবর্তমানে তার স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে।আসাদের মা মিসেস লায়লা বেগম তো কেদেই দিচ্ছে। আর জলদি কিছু করতে বলছে তার স্বামী ও মেয়ের জামাই কে।নম্রতার ডেলিভারিতে আরো ১মাস দেরি।তাহলে এই ব্যথার কি মানে???
আসাদের বড় বোন আবনী জামাইসহ বাহিরে থাকে।একমাস হলো বেড়াতে এসেছে।আর ভাইয়ের বউ দেখতে ও এসেছে।বিয়ের সময় জামেলা থাকায় সে আসতে পারেনি।আবনীর একটা মেয়ে।নম্রতা পেটে হাত দিয়ে কাদতে দেখে আসাদের ভাগ্নী দিয়া তার মায়ের সাথে ভয়ে মিশে যাচ্ছে আর একটু পর পর তার মাকে জিজ্ঞেস করছে,,,,
—-“মামনির কি হয়েছে মম???হোয়াটস প্রবলেম?হুয়াই সি ক্রাইং???
—-“নাথিং বেবি।মামনিকে হসপিটালিস্ট করতে হবে।সি হেভ লটস ওফ পেইন।ইউ ডোন্ট স্ক্রেড।সি ইউল ভি ফাইন।প্রে ফোর হার।
আবনীর জামাই দিয়াস রুমে এসে বলছে,
—–“আসাদ কে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।যা করার আমাদের করতে হবে।
দিয়াসের কথা শুনে এক ফোটা জল গরিয়ে পরে নম্রতার চোখ থেকে।আজকের দিনটা ও তাহলে তাকে পাবে না।এই ছিলো ভালোবাসা।ছুড়ে ফেলে দেওয়া কি তবে শুরু?অবহেলার জীবন হবে তার।এই ভয়ই তো পেয়েছিলো সে। সেই ১১মাস আগে।যার ধরুন আজকে এই বাচ্চা। কি সুন্দর করেই না বলেছিলো,
——“আমাদের বেবিই হবে তোমার গ্যারান্টি। যাকে ছেড়ে না আমি থাকতে পারব না তুমি যেতে পারবে।
নম্রতার প্রেগন্যান্সির খবর জেনে যত খুশি আসাদ হয়েছে তার থেকে বেশি নম্রতা হয়েছে।একজন মাই সবচেয়ে বেশি খুশি হয় তার বৈধ সন্তানের আসার সংবাদ পেলে।মায়ের চেয়ে না কেউ কখনো বড় হয়েছে আর না হবে।
সারা বাড়ি হৈচৈ করে নম্রতাকে গাড়িতে ওঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হসপিটাল। অবস্থা ভালো বলে মনে হয় না মিসেস লায়লা বেগমের কাছে।আজকেই তার ছেলেটা কে হারানোর ছিলো।বউয়ের জন্য পাগল ছেলে এখন কোথায় আছে কে জানে?এই মেয়ের যদি কিছু হয় তাহলে কি জবাব দিবে ছেলের কাছে?
চেচিয়ে চেচিয়ে কেদেই যাচ্ছে নম্রতা। আসাদ তাকে বাপের বাড়ি যেতে দেয়নি।তার কাছে আটকে রেখেছে।রাজনৈতিক কাজের জন্য সে দূরে যেয়ে থাকতে পারে না।তার ওপর শত্রুদের তো কথাই নেই।নিরাপত্তা ছাড়া চলা মানে আগুনের রাস্তায় হাটা সমান।
যার জন্য নম্রতা ও বিশেষ অনুরোধ করেনি।তারও আসাদ কে ছাড়া ভালো লাগবে না।তারপর ও সে এটা স্বীকার করবে না।আসাদ প্রেগন্যান্সির সময় তাকে প্রচুর পরিমানে টেককেয়ার করেছে।কতশত বার মুড সুয়িং এর কারনে নম্রতা আসাদকে মেরেছে।আসাদ কিছু বলেনি।আরো এমন আচরনে ভয়ে নম্রতা কে জরিয়ে ধরত।
————————————
৪০.
—-“অর্ক প্লিজ। আমি না হয় একটু সেজেছি তার জন্য এমন করতে হবে তোমাকে?কাকে দেখিয়েছি সেজে?ছাদেই তো গিয়েছিলাম নাকি?ভাল্লাগে না তোমার সাথে। অসহ্য একটা।
আফসানা রুম থেকে বের হতেই অর্ক মুখ টিপে হেসে দেয়।সে ইচ্ছে করে রাগ করেছে।যাতে আফসানা তার সাথে এমন ভাবে কথা বলে।আফসানার এমন কথা গুলো অর্কের কাছে সেই লাগে।তাই মাঝে মাঝে অর্ক এমন মিছে রাগ করে আফসানার সাথে। সে হেসে হেসে বেড থেকে নামার আগেই আফসানা হন্ত দন্ত হয়ে রুমে ডুকে।হাপিয়ে হাপিয়ে বলে,,,,
—-“অর্ক!!!অর্ক নম্রুর অবস্থা নাকি ক্রীটিকাল।দ্রুত চলো।আমার তো কান্না পাচ্ছে প্রচুর।
আফসানার কথা শুনতেই অর্ক যে পোশাকে ছিলো তাতেই রওনা দিলো।তার মনটা প্রায় কেপে কেপে ওঠছে।আদরের ছোট বোনের এমন বেহাল দশার কথা শুনে কোন ভাই ঠিক থাকে।অর্ক আফসানা আর তার বাবা মাও তাদের সাথে রওনা দেয়।
গাড়িতে মিসেস শরীফের সে কি কান্না মেয়েটার বিয়েটা ও হলো বেড়া থেড়া।বাচ্চা হবে তাও জামাই টা দিলো না।এইটুকু একটা মেয়ে কিভাবে প্রেগন্যান্সির সময় শশুরবাড়ি থেকেছে।ভারী পেট নিয়ে না জানি কেমন যন্ত্রণায় দিন গিয়েছে তার মেয়েটার।কত আকুতি করেছে জামাই এর কাছে।কিন্তু সে দেয়নি।আল্লাহ আল্লাহ করে পৌঁছে যায় তারা।সবাই গাড়ি থেকে নেমেই ছুটে যায় হসপিটালের ভেতরে।
————————————–
৪১.
নম্রতার ছেলে হয়েছে।সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলছে।তফাজ্জল করিম তো খুশিতে মিষ্টির দোকানে ছুটেছে।সাথে গেছে দিয়াস।মিসেস লায়লা বেগম কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছে। না জানি তার ছেলেটা কোথায়?কি হালে আছে।বর্তমানে সবাই কমবেশি জিজ্ঞেস করছে “আসাদ কোথায়???”
কিন্তু কোন জবাব দিতে পারে না সে।শুধু বলেছে,
“হয়তো কোন কাজে ফেসে গেছে”।তার এই জবাবে কেউ সন্তুষ্টি পোষন করতে পারছে না।নম্রতার মা মিসেস শরীফ খুব চিল্লাপাল্লা করছে। মেয়েটার এই অবস্থা। আর জামাই কিনা সাথে নেই?কেন?বউয়ের থেকে কাজ বড় হয়ে গেলো। তাইতো তার মেয়েটা নেতাদের পছন্দ করতো না।মেয়েটার ভাগ্যে আর কি কি আছে?
আহমেদ শরীফ তার মিসেস কে কোন রকম চুপ করিয়ে তফাজ্জল করিমের কাছে যায়।একটু অনুরোধী স্বরে মেয়েকে ও নাতিকে তার বাসায় কয়দিন রাখার অনুরোধ করে।তফাজ্জল করিম নম্রতার মায়ের কথা সব শুনেছে।সে ও আসাদের প্রতি আজ নারাজ।ছেলে কি তাহলে মানুষ হলো না?সে তবে ভালো শিক্ষা দিতে দেরি করে ফেলল?
তফাজ্জল করিমের থেকে অনুমতি পেয়ে আহমেদ শরীফ নম্রতার কেবিনে ডুকে।নম্রতা ছেলেকে কোলে নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে।মুখটা বিষন্নতায় ভরপুর।না জানি কি দুঃখি এই মেয়েটা।আহমেদ শরীফ একজন নরম দিলের মানুষ হলেও পরিস্থিতি পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত সে কোন রকম মন্তব্য করে না।তাই সে একটু মুচকি হেসে নম্রতার কাছে গিয়ে বসে।মাথায় হাত দিতেই নম্রতা তার বাবার উপস্থিতি টের পেয়ে মলিন হেসে তাকায়।
—-” কিরে মা!!ছেলের মা হয়ে গিয়েছিস।এখন তো মুখের হাসি দ্বিগুন হওয়ার কথা।তুই এতো মলিন হাসছিস কেন রে?
—-“বাবাহ।তেমন কিছু না।তোমাদের বাসায় যাবো তাই কত খুশি আমি।
—-“তোমাদের বাড়ি বলছিস কেন রে মা?
—-“আমার বাড়ি যে আর নেই।বাদ দাও,নাও কোলে নাও।তোমাকেই মনে খুজচ্ছিলো আমার ছেলে।
নাতিকে কোলে নিয়ে মনটা খুশি হয়ে যায় আহমেদ শরীফের।নাতি ও কেমন খুশি হয়ে যাচ্ছে নানার কোলে ওঠে।
নানা নাতির ভালোবাসার সময়ই কেবিনে ডুকে অর্ক আর আফসানা।তারা নিচে শপিংমলে গিয়েছিলো বাবুর জন্য নতুন সব জিনিসপত্র আনতে।আহমেদ শরীফের কোল থেকে বাবুকে নিয়ে আদর করতে থাকে আফসানা।অর্ক হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ভাগিনা আর তার প্রিয়তমার দিকে।তার মন বলছে,
তাদেরও এখন একটা এমন পুচকো বা পুচকি দরকার।আফসানা ও কতদিন যাবত ঘেনঘেন করছিলো বেবির জন্য। আজকে আফসানার এতো খুশি দেখে তারও মনটা ভরে গেলো।
মিসেস লায়লা বেগম ও আবনী কথা বলতে বলতে কেবিনে ডুকে।সাথে ছোট্ট দিয়া।সে এতক্ষণে এসেছে তার বাবী দেখতে।তার মামু আর সে প্লেন করেছিলো।বাবী যেদিন পৃথিবীতে আসবে সেদিন তাকে সবার প্রথমে তাদের মধ্যে যে দেখবে সেই বাবীর নাম রাখবে।কেবিনে ডুকেই দিয়া দৌড়ে বাবীর কাছে চলে যায়।
——“মামনি!!মামুর আগে আমি বাবী কে দেখেছি।তার মানে আমিই বাবীর নাম রাখবো।কি সুন্দর বাবী টা।হেই বাবী আই’ম দিয়া।ইউর সিস্টার।ওয়েলকাম টু সুইট ওয়াল্ড।
দিয়ার কথায় আসাদের কথা মনে পরে যায় সকলের।আসাদ আসলে কোথায়?তার কাছে কাজ কি এতোই প্রিয় হয়ে গেলো?অর্কের ও এবার রাগ লাগছে।এই আসাদ কে নিজের বোনের দায়িত্ব দিয়েছিলো?যাকে প্রয়োজনে পাশে পায়নি তার বোন? মায়ের কথাই কি তবে ঠিক ছিলো?কিছুটা রাগ নিয়েই নম্রতা কে বাড়ি নিয়ে আসে অর্ক।
চলবে,
প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করবো তাই ছোট হলেও দয়া করে পরে নিবেন।ধন্যবাদ