#লাভনীতি
বিথি হাসান-১১
৩১.
রাতের আধারে চাদের স্নিগ্ধ আলো পূর্নতা পায়।তাই চাদ রাতকে ভালোবেসে রাতের বুকে লুকায়।রাতের মাঝে চাদের দোষ গুলো ঢাকা পরে যায়।তাই তো চাদ রাতকে ভালোবেসে রাতের বুকে লুকায়।রাতের আকাশ মেঘে ঢাকলেও চাদের আলো কমায় নাহ।সে হিংসে করে না মেঘকে।বরং মেঘ থাকে বলেই সে রাতকে আরো কাছে পায়।তাই চাদ রাতকে ভালোবেসে রাতের বুকে লুকায়। (বিথি হাসান)
—-“বাহ!!খুব ভালো আবৃতি করতে পারো তো তুমি!! তা আর কি কি পারো তুমি?না মানে তোমাকে দেখে ছোট মনে করে ভুলই করেছিলাম।হাহাহহা!!
আসাদের কথায় নম্রতা পিছনে তাকালে ও মুখ বাকা করে আবার সামনে তাকায়।সে এতক্ষণ বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজে নিজেই আবৃত্তি করছিলো।আবৃত্তি করার শখ না থাকলেও “রাতের চাদ” দেখে করেই ফেলল।
আসাদ গিয়ে পিছনে দাড়ায় নম্রতার।আজকে নম্রতা কে অন্য রকম লাগছে আসাদের কাছে।আজকে আসাদের কাছে আসায় ও নম্রতা কেন রিয়েক্ট করছে না দেখে আসাদ একটা সুন্দর হাসি দেয়।আসাদ পিছন থেকে নম্রতাকে আকরে ধরে।নম্রতা আগের মতই বেলকনির কার্নিশে হাত রেখে দাড়িয়ে থাকে।এবার আসাদ তার মুখ নামিয়ে আনে নম্রতার কাধে।একটা সফট কিস করে কাধে।এতই সফট নম্রতা টের পেয়ে নাকি সন্দেহ।তার পরের কিসটা করে গালে।তবে সেটা একটু ডিপলি।এই প্রথম নম্রতার এতো কাছে সে।
কিস করায় নম্রতা গলা বাকা করে ফেলে।মানে তার সুরসুরি লাগছে।কিন্তু ছাড়তে বলে না।তাতে আসাদ আরো আকরে ধরে তাকে।এবার প্রথম কথা নম্রতাই বলে,
—-“আদর করার কারন?
—–“তুমি মনে করো না আজকে সকালের জন্য আমি এখানে এসেছি।বা তোমাকে এর জন্য শাস্তি দিতে এসেছি।তোমার সকালের কাজের জন্য আমার ক্যারিয়ারের উপর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।এমন করার আগে আমাকে একবার বলতে পারতে!!!তবে তার জন্য তোমার জবাবদিহিতা চাই নাহ।(আসাদ)
———————–
আসাদের কথার পৃষ্ঠে আর কথা বাড়ায় না নম্রতা। সে যা করেছে তা নিয়ে কোন পরিকল্পনা করেনি সেটা আসাদ কে বলা যাবে না।তার এমন বেপরয়া ভাব আসাদের সামনে প্রকাশ করলে।হয়তো এর জন্য আসল কারন জানতে চাইবে আসাদ তখন না বলে থাকা যাবে না।বললে বুঝে যাবে সেও তার প্রতি দূর্বল এবং তা প্রথম থেকে।তাই সে অন্য রকম কথা শুরু করে,,,,,,,,
—–“আপনার কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিলো??
নম্রতার কথা গুড়ানোর ব্যাপারটা আসাদ আচ করতে পারে।তবে সে কিছু বলে না।নিক্ষিপ্ত ভাবে জবাব দেয়।
—-“মনে নেই।(আসাদ)
—–“কেন?খুব বেশি নাকি?
—-“হয়তো!!!(আসাদ)তোমার কয়টা বয়ফ্রেন্ড ছিলো??
—-“আমার কোন বয়ফ্রেন্ড এর দরকার পরেনি কখনো।আজীবন সিঙ্গেল থাকতেও কোন সমস্যা নেই আমার।
—-“কি বলো?এমন সুন্দরী মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ছিলো না?এটা বিশ্বাস করার মত?আমি তো হাজার টা গালফ্রেন্ড পকেটে নিয়ে চলতাম।কি করবো?মেয়েরা আমায় দেখলে নিজে থেকেই কাছে চলে আসত।সেই ছোটবেলা থেকে এই রুটিনে বড় হয়েছি।কত মেয়ের সাথে ইন্টিমেট হয়েছি তাও অজানা।একেক টা রাত একেকটা মেয়ের সাথে কেটেছে।কোথায় যেন নেশা হয়ে গিয়েছিলো এসবের।এমন কি,,,,,,,,,
আসাদের হঠাৎ কথার মাঝে চুপ হয়ে যাওয়ায় নম্রতা পরের টা শুনার জন্য আগ্রহী হয়ে তার দিকে তাকায়।কয়েক সেকেন্ড পর আবার আসাদ বলে ওঠে,
—-“তোমাকে দেখার পর তোমাকে বেড পার্টনার করতে চেয়েছিলাম।তোমার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তুমি আবার মৌহ।অন্য মেয়েদের মত তোমার মাঝে হারিয়ে গেলোও বিলিন হবো না।তবে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তোমার মিস্টিযুক্ত হাসির প্রেমেই পরে গেলাম।যেখানে শত শত মেয়েরা আমার সঙ্গ পাওয়ার জন্য বেকুল থাকে।এমনকি আমার একটু তাকানো তে নিজের জান ও দিয়ে দিতো পারবে সেখানে তাদের থেকে ভিন্ন তুমি।সম্পূর্ণ ভিন্ন।আমাকে দেখতেই পারো না।আমার থেকে দূরে থাকো।এড়িয়ে চলো।এসব কিছুই আমাকে তোমার প্রতি দূর্বল করেছে।আমি দূর্বল তোমার প্রতি নম্রতা। তোমার সৌন্দর্যের প্রতি। তোমার নামের প্রতি ও।তুমি আমার জীবনটা কে নম্রতায় পূর্ন করেছো।যেখানে মার্জিত হওয়াকে আমি শুধু লোক দেখানো হিসেবে ভেবেছিলাম সেখানে তুমি আমাকে সভ্য করে দিয়েছো।আমি একমাত্র তোমার মাঝে হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছি।আমি ফিরে আসতেও চাই নাহ।তুমি আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছো নম্রতা।কেন তুমি বুঝো না আমার পাগলামি?হুয়ায়?আই কান্ট টলারেট ইউর এভয়েডনেস।রিয়েলি আই কান্ট!!!
আসাদ কান্না মাখা গলায় বলে ওঠে শেষের কথা গুলো।তার কথা গুলো বলার সময় মনে হয়েছে ভিতরটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে।এতো সহ্য হচ্ছে যন্ত্রণা তার।কিন্তু নম্রতার মাঝে যেন তার কথা গুলোর কোন ফারাক পরেনি।তার ব্যাধিত মন আরো ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠল।কিন্তু কেউ শুনলো তার শব্দ।
—“তোমাকে দেখার পর থেকেই আমার বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে।কোন মেয়ের প্রতি আমার হারাম আকর্ষণ আসে না।হয়ত সৃষ্টিকর্তা এটাই চায়।তুমি আমার জীবনে আসার পর তোমাকে ছাড়া আর কোন মেয়ের দিকে তাকালে ও ইন্টারেস্টিং লাগেনা।কেন লাগে না তাও জানি না।হয়তো কথা গুলো বলার পর তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পারো তবে সত্যি বলতে ভয় নেই।তুমি যেহেতু আমার ভবিষ্যত তাই তোমাকে অতীত জানিয়ে রাখলাম।এটাই জানাতে চাই,আমার জীবনে এখন থেকে সবচেয়ে বেশি তোমার প্রায়োরিটি।
নম্রতার মাঝে তফাত হয়েছে শুধু এতোক্ষণ সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো এখন চোখ বন্ধ।আসাদ নম্রতা কে ছেড়ে ভিতরে চলে যায়।নম্রতা একবার আসাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে দেয়।
কিছুক্ষণ পর সেও রুমে ডুকে।রুমের কোথাও আসাদ কে দেখতে পায় না।বেডে গিয়ে বসতেই আসাদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।সারা মুখে ছিটা ছিটা পানির ফোটা।হাতের টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে বেডে এসে বসে আসাদ।নম্রতা আসাদের দিকে একবার তাকিয়েই শুয়ে পরে বেডে।এবং বলে ওঠে,
—-“শুয়ে পড়ুন।অনেক রাত হয়ে গেছে।
বলেই পাশ ফিরে চুপচাপ শুয়ে পরে নম্রতা।কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর এক হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে নম্রতার দিকে তাকায় আসাদ।তার মনটা আজকে মানছেই না।সব বলার পরও কেন নম্রতা এমন করছে?কেন সে বুঝতে পারছে না তাকে?নম্রতার বাহুতে টান দিয়ে ধরে নম্রতাকে নিজের দিকে ফিরায় সে।
নম্রতা হচকচিয়ে যায় এতে।সে চোখ বড় বড় করে তাকায় আসাদের দিকে।আসাদ কেমন বিষন্ন হয়ে তাকিয়ে আছে নম্রতার দিকে।ঐ বিষন্ন চোখের ভাষা খুব সহজ।
—-“তোমাকে আমার সব অনুভূতির সামনে রাখা হয়ে গেছে।তারপর?
—-“আমি ঐসব নিয়ে কিছু বলছি নাহ।শুয়ে পড়ুন তো!!!
নম্রতাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে আসাদ।নম্রতামুহূর্তেই চোখ মুখ রাগ ছেয়ে যায় আসাদের। সে নিজেও জানে না কি হতে পারে এখন?কিন্তু নম্রতার তাকে আবারও রিজেক্ট করার সাহস পায় কোথায়?মেয়েটার এতোই সাহস?
জট করে বেড থেকে নেমে বেডের পাশের লেম্পটা তার সহ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারে রুমে রাখা বড় আয়নার দিকে।সঙ্গে সঙ্গে ঝনঝম করে ভেঙে গুরিয়ে যায় দর্পনটা।তারপর পড়ার টেবিল থেকে পাথরের কলমদানি টা নিয়ে ছুড়ে মারে বুক সেলফের দিকে।সেটা ও ভেঙে কিছু বই নিচে পরে যায়।পড়ার টেবিলের সব কিছু হাত দিয়ে ফেলে রুম থেকে বের হয় যেতে যেতে বলে,
—-“আর আসব না কখনো।অনেক ভাব না!!নিজের ভাব নিয়ে থাকো।পায়ে ধরলে ও আসব না।মনে রেখো।
নম্রতার মুখে ভাষা নেই।সে নির্লিপ্ত। সারা ঘরে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে।সারা ঘরে একবার চোখ ভুলিয়ে ঠোট উল্টিয়ে শুয়ে পরে সে।এর মধ্যে দৌড়ে আসে নম্রতা মামী মিসেস অনামিকা বেগম। এবং আতংক কন্ঠে বলে ওঠে,
—-“কিরে!! ঘরের এই অবস্থা করলো কে?তুই নাকি তোর নেতা জামাই??হায় হায় সব ভেঙে ফেলেছে দেখছি।
—-“মামী তোমার বসার রুম ঠিক আছে তো?(নম্রতা)
মামী দৌড়ে বসার রুমের দিকে ছুটে যায়।তার কিছুক্ষন পরেই ছুটে আসে আবার।এবং ভয়ে তার ললাটে কয়েকটা বাজ পরে গেছে।না জানি কি হয়েছে???
—-“কি করেছে মামী বেটা উজবুক????
—-“তোর নেতা আমার ৪২ হাজার টাকার টিভি ভেঙে ফেলছে।
—-“১০মিনিট সময় নাও মামী।
১০মিনিট ও হয়নি এর মধ্যে আসাদ আবারও হাজির।আসাদ কে দেখে হাই তুলে বেডে ওঠে বসে নম্রতা। আসাদ মাথা নিচু করে বলে,
—–“সব কিছুর টাকা দিয়ে দিবো।
—–“এতো রাগ নিয়ে থাকেন কিভাবে?রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।জানেন তো?রাজনীতি করেন আর এটা জানবেন তা কি হয় নাকি?তা মি.নেতা বাবু পলিটিক্স জানেন তো?নাকি আমি শিখাবো?
—-“তুমি আবার ও আমাকে কথা শুনাচ্ছো?তোমার জন্যই তো!!!
—-“নিজের রাগেরই কন্ট্রোল নেই আপনার সেখানে আমি কিভাবে আপনার কন্ট্রোলে থাকি বলেন তো??? বদরাগি নেতা!!!
চলবে,