রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ১৫+১৬

0
707

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৫,,,১৬
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

লাল পাড়ের হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে বসে আছি আমি৷ কাঁচা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে আমার শরীর থেকে৷ গোটা কয়েক মানুষ আমাকে আর কাব্য ভাইয়াকে ঘিরে মাতামাতি করছে৷ কাব্য ভাইয়া নিরলস ভাবে বসে আছে৷ আমিও সেইভাবেই বসে আছি৷ হটাৎ কাব্য ভাইয়া আমার হাতে হালকা ছুয়ে দিতেই আমি তার দিকে তাকাই৷ উনি ইশারা করে বললেন,’ সব শেষ হলে তার সাথে যেন যাই আমি৷ ‘
আমিও ইশারায় ” হ্যাঁ “বলতেই পাশে থেকে কাব্য ভাইয়ার ফুঁপাতো ভাই সাদিদ ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়া সহ বাকিরা হই হই করে উঠে৷ কাব্য ভাইয়া চোখ গরম করে তাকাতেই মোস্তাকিম ভাইয়া বললেন,
–‘ চোখ গরম করে লাভ নেই দোস্তো! তোমার উপর চোখ গরম করার মানুষ পাশেই আছে, তাই না নীতু৷ ওহ,সর‍্যি! ভাবিইইইইই….’
মোস্তাকিম ভাইয়ের কথায় আবারও হাসির রোল পড়ে গেলো । আমি নিজের শাড়ি মুঠ করে ধরে বসে আছি। কাব্য ভাইয়া রা’গীভাবে বললেন,
–‘ তোদের ডাকা হয়েছে কি জন্য ?’
পাশে থেকে রাহুল ভাইয়া কাব্য ভাইয়ের মুখে হলুদ লাগিয়ে বললেন,
–‘তোকে হলুদ লাগানোর জন্য ।’
–‘ শুধু ওকে না পিচ্চিকেও লাগানোর জন্য।’ হলুদের বাটি থেকে হলুদ উঠিয়ে আমার মুখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন তমা আপু । এতোটুকু সময়ের মধ্যে সব আসলো কি ভাবে আর এতো আয়োজন হলো কিভাবে সেটা ভেবেই আমি পা”গলপ্রায়। ফুঁপি তখন আমায় ডেকে শাড়ি আর ফুলের গহনা গুলো দিয়ে বলেছিলো,
–‘ নীতু ,আম্মু! আজ তোর আর কাব্যের হলুদ হবে আর কাল ধর্মীয় ভাবে বিয়ে ।’
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফুঁপি তা’ড়া দিয়ে বলল,
–‘তোর হাজার প্রশ্নের উত্তর আমি শ”র্ট করে দিচ্ছি,
আমি প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছি ফুঁপির দিকে । ইরা রুমের দরজা বন্ধ করতেই ফুঁপি পেটিকোট আর ব্লাউজ আমার হাতে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পাঠিয়ে বলল,
–‘ এইগুলো পড়ে জলদি আয় আমি তোর প্রশ্নের উত্তর শাড়ি পড়াতে পড়াতে দিবো কারণ হাতে একদম সময় নেই।’
আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সব শুনলাম । আমি ফিরে আসতেই ফুঁপি শাড়ি পড়াতে নিলে ফুঁপির হাত ধরে বললাম,
–‘ আমি যতদূর ভাবতে পারছি,আজ আমার আর কাব্য ভাইয়ার হলুদ !কিন্তু কেন? সে তো বিয়ে করে,,
ফুঁপি আমার কথার মাঝে ইরাকে ইশারা দিয়ে দেখাতেই আমি চুপ হয়ে যাই। কারণ ওরা এখনো বিয়ের ব্যাপারটা জানে না । ফুঁপি ইরাকে সব হয়েছে কিনা দেখার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিতেই আমি আবারো বলি,
–‘ কাব্য ভাইয়ার আর আমার বিয়ের রেজি”স্ট্রি হয়ে গেছে এইটা এখানের সবাই জানে ফুঁপি,তাহলে আবার এইসব কেন? ‘
ফুঁপি আমার শাড়ি পেঁচিয়ে কুঁচি ঠিক করে বললেন,
–‘তোরা বাসায় থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার পর আমির বাসায় এসেছিলো পু”লিশ নিয়ে ।’
ফুঁপির কথা শুনে জোরে ‘মানে’ বলতেই ফুঁপি বললেন,
–‘মানে,আমির পু”লিশকে বলেছে তোকে কাব্য জোর করে উঠিয়ে এনেছে!”আমির” কতটা খা”রাপ ভাবা যায়? ও বাড়িতে পু”লিশ নিয়ে এসেছে কাব্যকে মি’থ্যা কে”সে ফাঁ’সাতে।’
আমি ভয়ে ফুঁপির হাত আঁকড়ে ধরলাম । ফুঁপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
–‘পু”লিশের সামনে আমি আর তোর ফুঁপা তোদের রেজিস্ট্রি পেপার দেখাতে আমির আবার বলে এইটা নাকি ভু”য়া । আমি উপায় না পেয়ে কাব্যকে ফোন দিই।’
প্রিন্সিপালের রুমে থাকতে কাব্য ভাইয়ার ফোন এসেছিলো আর সে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারমানে ওইটা ফুঁপির ফোন ছিলো । আমি কুঁচি ধরে বললাম, ‘তারপর আমিরকে কিভাবে মানালে!’
ফুঁপি লাস্ট কুঁচি ঠিক করে বলল,
–‘ কাব্যকে তো চিনিস, ও ডিরেক্ট বলেছে তুই ওর বউ আর বিশ্বাস না হলে কাল যেন বাসায় আসে ,তোদের ধর্মীয় ভাবে কাল বিয়ে হবে । পু”লিশ আমিরকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আর বলে যায়,কাল আসবে তারা। কিন্তু আমির না”ছোড়”বান্দা সে শা”সিয়ে যায়,তোকে যেখানে পাবে সেখান থেকেই উঠিয়ে নিবে। কারণ সে তোদের বিয়ে মানে না আর তার দৃঢ় বিশ্বাস তোদের বিয়েটা না”টক ।’
ফুঁপির কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম । এই কথাটা আমিও বিশ্বাস করতাম না আর আমির তো চা”লাক মানুষ ।আমি আবার বললাম,
–‘ তাহলে এইসব কি আমির কে বিশ্বাস করানোর জন্য ?’
ফুঁপি হেসে বলল,
–‘একদম না,কাব্যের সাথে আমার নীতুকে একদম পাকাপোক্ত ভাবে বেঁধে রাখার জন্য। যাতে কেও প্রশ্ন না করতে পারে,তুই কে?’
কাব্য ভাইয়ার সাথে বেঁধে রাখার জন্য? সেটা তো এমনিতেও আছি । আমি আবার বললাম,
–‘ ফুঁপা আর বাবা মেনে নিবে হ্ঠাৎ করে এইসব হওয়ায়।’
ফুঁপি কিছু একটা খুজছে! আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ কাব্য বুধবারে চলে যাবে! ও ছাড়া তোকে প্রোটেক্ট করার কেও নেই। বড় ভাই তার ব্যবসায়ীক ঝা”মেলার কথা আমায় খুলে বলেছে। আর কি জন্য তোকে এতো তাড়াতাড়ি ওই আমিরের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো সেটাও বলেছে । সব শুনে আমি স্তব্ধ হয়েছিলাম । আমির তোর বাবার কোম্পানির নামে কে”ইস করেছে আর সেটা থেকে মুক্ত পাওয়ার উপায়ে তোকে চেয়েছে। কতোটা নিঁচু মনের ভাবা যায়? তাই তারা দুজনে মিলেই আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোদের বিয়ে দেওয়ার । কাব্য এমনিতেও চলে যাবে তাই সবাই সব মেনে নিয়েছে,,,,আর আমি মনে করি,কাব্য তোর ভাগ্যে ছিলো তাইতো এতো কিছু । তা না হলে বল তো,আমার ছেলে কেন এতোবড় একটা স্টে”প নিবে।’
ফুঁপির কথা শুনে সব মেনে নিয়েছি। তার আর আমার বিয়েটা যেখানে হয়ে গিয়েছে সেখানে আমার কি বলার থাকতে পারে? তখন না হয় জানতাম না কিন্তু এখন জেনেই তার সাথে আবদ্ধ হই । সে তো চাইলেও আমার স্বামী না চাইলেও আমার স্বামী। তার সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ আমি।যে সম্পর্কে কোনো নাম নেই,,

______________________
সোনালি রাঙা চাঁদের আলো এসে পড়ছে ছাদে৷ পূর্ণ থালার মতো চাঁদ উঠেছে আজ সেই রাতারগুলের রাতের মতো৷ কাব্য ভাইয়া আমার পাশেই বসে আছেন আর রাহুল ভাইয়াদের সাথে কালকের প্ল্যানিং করে নিচ্ছেন৷ তার গাঁলে,হাতে হলুদ ছোঁ”য়ানো৷ চাঁদের আলো আর লাইটের হালকা আলোয় সেই হলুদে মো”ড়া কাব্য ভাইকে দেখে কিছু একটা হচ্ছে আমার মনের কিনারায়৷ যে মানুষটাকে আমি এড়িয়ে চলতাম আর সেই কিনা সারাজীবনের পথচলা আমার৷ কোনোকিছুতে খুশী হতে পারছি না৷ তবে তার একটা কথা মনে পড়ছে, ‘যা হচ্ছে হতে দেনা নীতু! জানিস তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়৷ ‘
আমি চোরা চোখে তাকে দেখে চলেছি৷ আজ উনার মুখটা সবচেয়ে সুন্দর ভাবে অনুভব করলাম আমি৷ নিতান্তই সে একজন সুপুরুষ! খোঁচা খোঁচা দাড়ি৷ বা পাশের উঁচু দাত৷ হাসলেই সেই দাঁত উঁকি দেয়৷ দেখতে অমা”য়িক লাগে৷ ইশ!এতো সুন্দর বুঝি কারো হাসি হয়? তার সবকিছু সুন্দর৷ তবে কি তার প্রতি আমার ভেতরে কিছু একটা আছে? কিন্তু কেন?সে আমার স্বামী এইটা বলে৷ তাকে তো আমি মানতে পারছি না আবার দূরে সরাতেও পারছি না৷ ঘুরেফিরে একটা কথাই মনে হচ্ছে, ‘ যা হচ্ছে সেটা ভালোই হচ্ছে৷ কারণ এই মানুষটা ভুল করতেই পারেন না৷’
‘রুপালি থালার ন্যায় চাঁদের আলোয়,
দেখেছিলাম তাকে!
‘অদ্ভুত এক মায়াময় তার মুখের হাঁসি,
অজানা এক ভালোলাগার,
এই খেলায়! ‘

বিরবির করে এই কথাটুকু বলতেই আমার গালে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া পেতেই চমকে উঠি আমি৷ কাব্য ভাইয়া হলুদ লাগিয়েছে আমার গালে৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সে আমি আর ফুল ছাড়া কোথাও কেও নেই৷ উনি দুইহাতে হলুদ উঠিয়ে আমার গালে আবার লাগিয়ে বললেন,
–‘ আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে? প্রেমে পড়িস না আমার বউয়ের ক”ষ্ট হবে৷ ‘
আমি দ্রুকুচকে তাকাতেই উনি হেসে উঠেন৷ আবার সেই দাঁতের ঝিলিক৷ আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি৷ উনি নিজের গালের সাথে আমার গাল ঘ’ষা দেন৷ আমি মূহুর্তেই চমকে ‘ আউ”চ ‘ বলে আমার গালে হাত দিই৷ তার দাড়ির খোঁ”চা আমার গালে লেগেছে৷ উনি আবার হেসে বললেন,
–‘ তুই তো হলুদ লাগাবি না তাই আমিই লাগিয়ে নিলাম৷ ‘
উনার কথা শুনে পুরো হলুদের বাটি উঠিয়ে তার মুখে ঢেলে দিতেই উনি আমার হাত ধরে ফেলেন৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ হাত ছাড়ুন!আপনাকে হলুদ লাগাই নি বলছিলেন না? এখন লাগাতে দিচ্ছেন না কেন!’
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
–‘ আমি তো হাতের ছোঁয়ার হলুদ লাগাবো না৷ ‘
আমি পিছন দিকে ঝুকে বললাম,
–‘ তাহলে? ‘
উনি আবার আমার গালের সাথে তার গাল লাগিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলেন৷ আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি৷ আজ সব কিছুতে কাব্য ভাইয়ার না নিজের স্বামীর গন্ধ পাচ্ছি!
চলবে……
(কাব্য আর নীতুর বিয়ে! কেমন ফিল হচ্ছে সবার?আমি সাইলেন্ট পাঠকদের দেখতে চাই?
ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৬
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

রাত ১২ঃ৩৪! চারদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার৷ ছাঁদে এখনো বসে আছি আমি আর কাব্য ভাইয়া৷ হলুদ দিয়ে আমায় হলুদ পরী বানিয়ে দিয়েছেন৷ এইটা উনার কথা,আমাকে নাকি হলুদে রাঙানো পরী লাগছে৷ ঘুম চোখের পাতায় পাতায় হানা দিচ্ছে৷ সোফায় হাতের কুনুই রেখে গালে হাত দিয়ে ঝি’মা’চ্ছি৷ আমার হাতের উপর তার হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে সোজা হয়ে বসি আমি৷ বিরক্তির সুরে বললাম,
–‘ আমি ঘুমাবো, আপনার ঘুম না আসতে পারে কিন্তু আমি তো মানুষ! আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে৷ সারারাত থাকুন আপনি৷ আর কাওকে লাগলে ম’শা তো আছেই ওদেরকেই না হয় হলুদ লাগাবেন৷ ‘
আমার কথায় উনার কোনো ভাবান্তর হলো না৷ আমার বা হাত তার কোলের উপর রেখে অপর সাইডে ঘুরে মোবাইলে কিছু একটা দেখছেন মনোযোগ সহকারে৷ আমি হাত টেনে আবার ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতেই উনি চিল্লিয়ে বলে উঠেন,
–‘ ধূ’র,এতো প্যাঁ”চানো ডিজাইন কেন দেওয়া লাগবে৷ মাথা ঘুরে গেলো আমার৷ ইঞ্জি”নিয়ারিং পড়ার সময় এতো মনোযোগ দিলে আজ নাম্বার ওয়ান টপ স্টুডেন্টের খাতায় নাম থাকতো৷ ‘
আমি তার কথায় ঘুম ঘুম চোখেই কঁপাল কুঁচকে বললাম,
–‘ আপনি নাম্বার ওয়ান লিস্টেই আছেন কাব্য ভাইয়া,’
উনি আবারও আমার কথার তো”য়াক্কা না করে কাঁ”কে একটা ফোন দিলেন৷ ওইপাশে ফোন রিসিভ হতেই গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আমার রুমের,কাবার্ডের সাইডের টেবিলের ড্রয়ারে একটা প্যাকেট আছে৷ সেইটা ইমিডিয়েটলি নিয়ে ছাদের দরজার সামনে টো”কা দে৷ ‘
ফোনের অপরপ্রান্তের মানুষ যা বলল তা শুনতে না পেলেও কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যাই আমি৷ ফোন পাশে রেখে আমার হাত দেখে বললেন,
–‘ নীতু…..’
–‘ হুম,বলেন৷ আমি চোখ বন্ধ করেই উওর দিলাম৷ তার ঠোঁটের ছোঁয়া হাতে পেতেই হাত সরিয়ে ফেলতে নিলেই সে আরো টেনে নিয়ে বলল,
— ‘ আমায় তোর চোখে কেমন লাগে রে!…
আমি ভাবে”লা”শীন ভাবে উত্তর দিলাম,
–‘ কেমন আবার লাগবে! ভাইয়ের মতোই লাগে৷ ‘
–‘ হোয়াট…ভাই মানে? আমি তোর বর নীতু৷ কালকের পর থেকে পার্মানেন্ট হয়ে যাবো৷ ‘
আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
–‘ আপনি আমায় মেনে নিবেন আপনার বউ হিসেবে? ‘
–‘ না! ‘

উনার কথা শুনে ধা”ক্কা খেলাম একটা৷ কষ্ট হলো৷ তাহলে জো”র করে আমি তার সাথে আবদ্ধ৷
কোথা থেকে একরাশ পানির ফোঁটা ভীড় করলো চোখের কোণে৷ পানিটুকু মুছে নিলাম৷ কেন তার ” না ” মেনে নিতে পারছি না৷ হয়তো তার নিয়তি আমার সাথে অজানা কারণেই বেঁধে গেছে, এই নিয়তি নিয়েই চলতে হবে ভেবেই মানতে পারছি না৷ আচ্ছা!তার জন্য কি আগে আমার মনে অনুভূতি ছিলো? না এখন আছে?

আমার ভাবনার সুতো ছিড়লো দরজায় কারো আ”ঘাত করার শব্দে৷ কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে যেতেই রাহুল ভাইয়া আর সিনান ভাইয়া দরজা দিয়ে উঁকি মেরে আমাকে দেখে ম”স্ত এক হাসি দেয়৷ কাব্য ভাইয়া রাহুল ভাইয়ার পিঠে ধুম করে একটা থা”প্পড় মারতেই আমার হাসি পায়৷ সিনান ভাইয়া থা”প্পড়ের শব্দে সরে দাড়ান৷ রাহুল ভাইয়া পিঠে হাত দিয়ে কাব্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললেন,

–‘ আজ তোমার সময় তাই বউয়ের সামনে ঠা”স”ঠু”স মারছো বন্ধু! এককালে আমরাই তোমার সব ছিলাম আর এখন বউ হয়েছে তোমার আপন৷ হা”রামি, বউয়ের হাতে উঠতে বসতে মা”র খাবি তুই৷ ‘

রাহুল ভাইয়ার কথা শুনে আমি উচ্চস্বরে হেঁসে উঠতেই কাব্য ভাইয়া আমার দিকে দাঁতে দাঁত চে”পে তাকান৷ আমি মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছি৷ আর সিনান ভাই তার পিঠ বাঁচাতে দেয়ালের সাথে ঠে”স দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,

–‘ হলুদ রাতেই সব শেষ করলে বিয়ের রাতে কি করবা,, ‘

উনি আর কিছু বলার আগেই কাব্য ভাইয়া মোবাইল বের করে বললেন,

–‘ তোর ছয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার আমার কাছে আছে! তুই যে আজ অন্য মেয়ের সাথে ফ্লা”টিং করেছিস তা আমি সুন্দর করে উপস্থাপন করবো?’

সিনান ভাইয়ার হাসি মুখ মূহুর্তেই চু”পসে যায়৷ সে রাহুল ভাইয়ার হাত টেনে যেতে যেতে বললেন,

–‘ অন্যের পারসোনাল টাইমে আ”ঘা”ত দেওয়া বড্ড অন্যা”য় তুই জানিস না? এখানে আহ”ম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছিস…শা”লা লু”চ্চা! ‘

তাদের দিকে তাকিয়ে কাব্য মুচকি হেসে পড়ে থাকা প্যাকেটটা নিয়ে আমার কাছে এসে বসেন৷ আমি দ্রু কুচকে, ‘ এইটা কি ‘ জিজ্ঞেস করতেই উনি হাসি দিয়ে বলে,

–‘ নতুন বউয়ের হাতে মেহেন্দি না থাকলে তাকে নতুন বউ বউ লাগে না৷ ‘
আমি প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ এইটা কবে কার নিয়ম! আপনি বুঝি মেহেন্দি আনিয়েছেন? ‘
–‘ না ,লাল রাঙা ভালোবাসা আনিয়েছি৷ ‘

আমি ক”ম্পিত চোখে তার দিকে তাকাই৷ ” ভালোবাসা! ” কথাটা বড্ড মোহনীয় শুনেচ্ছে তার মুখে৷ উনি আমার হাত আবার তার কোলের উপর নিয়ে প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বললেন,
— ‘ কিভাবে খুলতে হয়! আমি জানি না৷ একটু খুলে দে তো৷ ‘

আমি কথা না বাড়িয়ে টিউবটা সেট করে উনার হাতে দিতেই উনি দ্রু কুচকে ফেলেন৷ বিরবির করে বললেন,
–‘ কাব্য তোর জীবনে আর কি কি করতে হবে এইটা তার ফাস্ট নমুনা৷ ‘
–‘ আমার হাত ন”ষ্ট হলে… ‘
–‘ হুশশ! আমি যা করি সেটা পার্ফেক্ট হয়৷ পার্ফেক্ট মিনস পার্ফেক্ট৷ ‘

আমায় আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি টিউব থেকে মেহেদী বের করার হাজার চেষ্টা করতে লাগলেন৷ তার চেষ্টা দেখে বড্ড মায়া হলো আমার৷ আমি উনার হাত থেকে মেহেদীর টিউব নিয়ে বের করে দিয়ে বলি, ‘ এইভাবে করতে হয়৷ ‘

উনি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে আমার থেকে মেহেদীর টিউব ছি”নিয়ে নিয়ে ডিজাইন করার মনোযোগ দিলেন৷ হালকা হাওয়ায় তার অবাদ্ধ সিল্কি চুল গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে৷ উনি মাঝে মাঝে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন! তার চুলগুলোকে আমি আলতো করে হাতের মুঠোয় নিই৷ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে! সেই উঁচু দাঁতের ন’জর কাড়া হাসি৷ উনি গালে হাত দিতেই হাতে লেগে থাকা অল্প মেহেদী তার গালে লাগতেই আমি আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে সেইটুকু মুছে দিতেই উনি চমকে আমার দিকে তাকায়৷ অনেকক্ষণ তাকায়!তার চোখের ভাষা স্পষ্ট! সেই চোখের ভাষা পড়তে পারছি আমি৷ ভাষা গুলো নীরব, কিন্তু তারা বলছে, ‘ এই আঁ”চলের ছোঁয়া যেন সর্বক্ষণ আমার পাশে!আমার ক্লান্তিতে ছায়া হয়ে থাকে৷ ‘

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি৷ ইশ! এই কাজটা করার কি দরকার ছিলো তোর নীতু? না করলে কি এমন হতো! না,,এই কাজটুকু না করলে এতোটা ভালোলাগার ছোঁয়া তোর মনের মাঝে আসতো বুঝি?

— ‘ ফিনিশ! ইট’স পার্ফেক্ট৷ যদিও সুন্দর হয় নি তাও আমি দিয়েছি বলে কথা৷ ‘
পুরো দেড় ঘন্টা লাগিয়ে উনি শেষ করেছেন মেহেদী দেওয়া৷ আমি জেগে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম৷ উনার চিল্লানি শুনে উঠে পড়ি৷ আমি ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি উনি একরাশ আনন্দ নিয়ে হাত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলছেন৷ আমায় হালকা ধা”ক্কা দিয়ে বললেন,

–‘ দেখ, ওই আলতু ফা”লতু প্যা”চানো ভিডিওর চেয়ে আমারটা বেস্ট হয়েছে৷ ‘
আমি ঢুলতে ঢুলতে উনার বুকের মাঝে শুয়ে বললাম,
–‘ কাব্য ভাই সব সময় পার্ফেক্টটা করে আপনি জানেন না? তার সব কিছু পার্ফেক্ট…. ‘

সুন্দর মূহুর্ত আমার ঘুমের জন্য নষ্ট হলেও সে আমায় নিয়ে আরো অনেকক্ষণ বসে ছিলো সেই ছাদের মাঝে৷ একা! তার মতো৷
______________________
ভোরের শীতল হাওয়া চারদিকে প্রাণবন্ত ভাবে বইছে৷ তাদের ছুটোছুটি যেন নিরলস! পাখিরা নীড় ছেড়ে ব্যস্ত ভাবে উড়ছে৷ কোথায় যেন একটা কোকিল ডাকছে৷ এই সময়টা বুঝি কোকিল ডাকে?ক্ষীণ স্বরের সেই আওয়াজে আমার ঘুম ছুটে গেছে৷ আলতো চোখে তাকিয়ে নিজেকে রুমের মাঝে আবিষ্কার করি৷ নিজেকে রুমের মধ্যে দেখে অবাক হয়ে উঠতেই দেখি ইরা আমার হাত ধরে মুচকি হাসছে৷ আমি উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি হাসছে কেন৷ ও আমাকে চোখ মেরে বলল,

–‘ হাও রোমান্টিক বনু! দ্যা গম্ভীর কাব্য ভাইয়া এতো রোমান্টিক জানলে আমি কখনো উনায় তোকে দিতাম না৷ ‘

আমি ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি৷ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাতজোড়া মেহেদী পড়ানো সুন্দর ডিজাইন করা৷ তার মাঝে লাভ শেপের মধ্যে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,

‘ রাতের আঁধারে আমার নীলাম্বরী তুমি,’
‘ অদ্ভুদ মোহমোয় মায়াবী তুমি! ‘
‘ জানি না, অকারণের সুখের মূহুর্ত তুমি,
‘ তোমাতে সিক্ত আমি,
‘ অকারণের ছোট অনুভূতির দোলা তুমি! ‘
‘ তুমি যে আমারি৷ ‘

তার নিচে ছোট করে লিখা, তোর কাব্য ভাই নামক বর৷ ‘
লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে উঠলো মূহুর্তেই৷ পাশের রুম থেকে গিটারের আওয়াজের সাথে ভেসে আসছে,

‘ লজ্জায় রাঙানো রূপবতী তুমি….
‘ ভালোবাসার মোহনা তুমি!’
‘ আমি যে বড্ড ভালোবাসি…..’
চলবে……
( অনেক বড় পার্ট দিয়েছি আজ! আপনাদের অনুভূতি গুলো আমি জানতে চাই…ভালো লাগছে কিনা তাও জানতে চাচ্ছি…আর ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here