রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ১৪

0
662

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#বোনাস_পার্ট(২),,,১৪
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

অন্ধকার ঘর!বাইরের রাঙা গোধূলি থেকে হালকা আলোতে কাব্য ভাইয়ার র’ক্তলাল চোখদুটো দেখতে পেলাম৷ উনি আমার একদম কাছে!একদম অনেক কাছে৷ তার নিশ্বাসের সাথে আমার নিশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে৷ নিশ্বাস গুলো যেন ফিসফিস করে কিছু একটা বলে চলেছে৷ যা তাদের গোপনীয় আলাপ৷ সেই আলাপ থেকে বের হয়ে আমার চোখে মুখ ছুয়ে দিচ্ছে তারা৷ আমার নিশ্বাসও হয়তো কাব্য ভাইয়ের চোখ-মুখে কোনো গোপন আলাপে লি’প্ত৷ অস্বস্তি! এযেন এক ভয় মেশানো ভালোলাগার অস্বস্তি৷ উনি এখনো আমার হাত দে’য়ালের সাথে চেঁপে ধরে রেখেছেন৷ হাতে ব্যাথার অনুভব হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছি না৷ কথা গুলো গ’লায় আটকে গিয়ে আমার কানে কানে বলছে,
‘ এইভাবে সব থাক আজ!ভয়ের সাথে কেমন ভালো লাগছে তো তোর৷ ‘

কিন্তু মন ম’স্তি’ষ্কের কাছে হেরে যাচ্ছে৷ আমি ব্যা’থা’তুর আর ভয় মেশানো কন্ঠে বললাম,
–‘ আমার হাত ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ান৷ এইভাবে কেও দেখলে কি ভাববে কাব্য ভাই? জিনিয়া বা ফুঁপি আসলে….

উনি আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চেঁ’পে ধরলেন৷ রাগ মিশ্রিত কন্ঠে হিসহিস করে বললেন,
–‘ আমার বউয়ের সাথে পারসোনাল টাইম স্পে’ন্ড করছি আমি! এতে কার কি ভাবার আছে? ‘

আমি উনার বাঁধন থেকে ছোটার জন্য চেষ্টা করলাম৷ তাতে উনি আরো কাছে এসে দাঁড়ালেন৷ তার আর আমার মাঝে একচুল জায়গাও বাকি নেই৷ যতটা কাছে থাকলে হৃ’দ’পি’ন্ডের প্রতিটা বি’ট শোনা যায় অতোটা কাছে৷ তার শরীর কাঁপছে সাথে তার জাম রাঙা ঠোঁট৷ আচ্ছা!ছেলেদের ঠোঁট বুঝি এতোটা সুন্দর হয়? হ্যাঁ,হয়৷ মেয়েদের চেয়ে বেশি হয় ,তার উদাহরণ কাব্য ভাইয়া৷ পাঁকা জাম গাছ থেকে পড়ে ফেঁটে গেলে যেই রঙ হয় একদম সেই রঙ তার ঠোঁট জোড়াতে৷
–‘ আপনি স্মো”কিং করেন? ‘

আমার অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে সরু চোখে তাকালে উনি৷ আমি নিজের অদ্ভুত কথার রেশে নিজেই ল’জ্জিত৷ ছিঃ!সে কি ভাবছে৷ তার উত্তর না পেয়ে আমি স্বস্তি পেলাম৷ আবারও তার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ভাবে বললাম,
–‘ প্লিজ ছাড়ুন আমায়৷ আপনার সাথে আমাকে এইভাবে কেও দেখলে উল্টাপাল্টা ভাববে সবাই৷ ‘

–‘ তোর বর হই আমি৷ কে কি ভাবলো তোর না ভাবলেও চলবে৷’

উনার বে’খেয়ালি উত্তর শুনে রাগ হলো আমার৷ চেঁচিয়ে বললাম,

–‘ কিসের বর৷ কোনো বর টর না আপনি আমার৷ আমার বিয়ে ভাঙার জন্য না’টক করেছিলেন এইটাই সত্যি৷ আর কোনো কিছু আমি বিশ্বাস করি না৷ ‘

উনি নীরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ হাতের বাঁধন ধীরে ধীরে আলগা হতেই আমি হাতের দিকে তাকাই৷ ভেবেছিলাম উনি ছেড়ে দিবেন৷ কিন্তু না!আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন৷ তার এহেন কাজে বা”ক’রু’দ্ধ হয়ে যাই৷ করছেন কি উনি? আমায় চুপ থাকতে দেখে উনি ওইভাবেই আমাকে ধরে সামনে আগাতে থাকেন৷ আমি মাথা ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকাই৷ তার দৃষ্টি সামনে থাকা কাবার্ডের দিকে৷ সুন্দর মন মাতানো সুগন্ধ আসছে তার থেকে৷ সব কিছুতে তার সৌন্দর্য৷ ছেলেদের বুঝি এতো সুন্দর হতে হয়?
এক পাঁ এক পাঁ করে আগাতে আগাতে আমকে নিয়ে কাবার্ডের সামনে এসে দাঁড়ান৷ সামনে থাকা আয়নায় তাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলি৷ কখনো এমনটা হয় নি৷ তবে আজ তাকে সুন্দর লাগছে !সবচেয়ে বেশি সুন্দর৷ উনি আমাকে ধরে রেখেই কাবার্ড খুলে একটা ফাইল বের করলেন৷ এইটা তো সেই ফাইল!যেটা বিয়ের দিন নিয়ে গিয়েছিলেন উনি। ফাইল আমার হাতে দিলেন৷ আমি না ধরাতে পরে যেতে নিলেই উনি আমার হাতের নিচে হাত রাখেন৷ আমি চমকে আয়নার দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করেন ফাইল খুলতে,,আমি কি করবো ভেবে পাই না৷ ফাইল খুলেই বা কি হবে?উনি নিজেই ফাইল খুললেন৷ আস্তে করে বললেন,
–‘ তোর সমস্ত উত্তর আছে এতে৷ ‘

তার হাতের উপর দিয়েই আমি ফাইল খুলে একটা কাগজ পাই৷ কাগজ খুলতেই বড় বড় অক্ষরে উপরে লিখা নিকাহ্ নামা৷ আমি চোখ বড় বড় করে তাকাই উনার দিকে৷ উনি হাসেন! আমি কাগজ খুলে পড়তে থাকি৷ বরের জায়গায় তার নাম দেওয়া আর কনের জায়গায় আমার৷ ওইদিন অস্থিরতার জন্য কোনো কিছু পড়ে দেখি নি৷ তবে আজ ,কাগজটা মি’থ্যা নয়৷ কো”র্টের রেজি”স্ট্রি পেপার৷ তারমানে সেদিন ভার্সিটি যাওয়ার আগের ঘটনা সত্যি৷ সেইদিন উনি আমাদের রেজি’স্ট্রি করেছেন৷ আমি কাগজ নিয়ে কি করবো ভেবে পাই না৷ উনাকে গম্ভীর ভাবে বললাম, ‘ আমাকে ছাড়ুন৷ ‘

এইবার উনি ছেড়ে দিলেন আমায়৷ আমার হাত থেকে কাগজ কেড়ে নিয়ে বললেন,
–‘ বিশ্বাস হয়েছে এইবার? আ”ইন মোতাবেক তুই আমার বউ৷ ‘

আমার দৃষ্টি ওই কাগজে নিব”দ্ধ৷ আমি তার বেডের উপর বসে পড়লাম৷ মাথা হাতের উপর ঠেকিয়ে তার হাতের ওই কাগজের দিকে তাকিয়ে বললাম,

–‘ তাহলে কিসের শর্ত? ‘
উনি আমার পাশে বসে আমার কাধে হাত রেখে বললেন,
–‘ তোর থেকে দূরে থাকা৷’
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
–‘ দূরে কোথায় আছেন? আর দূরে থাকলেই বা কি? আমার জীবন তো শেষ করে দিয়েছেন৷ ‘
–‘তোর জীবন যাতে শেষ না হয় এই জন্যই তো দূরে থাকার শর্ত দিয়েছে আমায়৷ ‘
–‘ মানে? ‘
–‘ তুই এখনো বড্ড ছোট নীতু! তোর বাবা আর আমার বাবা চায়, তুই যেন নিজের পায়ে দাঁড়াস৷ আর আমি নিজের ক্যারিয়ার গুছাই৷ ‘
আমি তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ তাহলে আপনি মন থেকে কিছু করেন নি? আর চলে যাবেন কেন? ‘
উনি আমার মুখ উঁচু করে ধরে বলেন,
–‘ জার্মান যাবো আমার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোর্স শেষ করার জন্য রে বাবা৷ আর তোর কাছে অধিকার চেয়েছি আমি? যা হচ্ছে হতে দে৷ ‘

আমি তেতে উঠে বললাম,
–‘কেন হতে দিবো? আমার জীবন আমার মর্জি৷ আর এই বিয়ে টিয়ে আমি মানি না৷ “আমিরের” কাছে থেকে বাঁচানোর জন্য এতো কিছু তাই না? ‘

উনি ছোট করে ” হুম ” বলতেই আমি উঠে দাঁড়িয়ে উনার থেকে কাগজ নিতে যাই৷ উনি কাগজ উঁচু করে ধরে বললেন,

–‘ নীতু বাড়াবাড়ি করবি না একদম৷ এই কাগজের উপর তোর আর আমার সম্পর্ক ডিপেন্ড করছে না কিন্তু৷ তুই আমার বিয়ে করা বউ এইটা সবাই জানে৷’

আমার কান্না পাচ্ছে খুব৷ চোখে পানির অস্তিত্ব টের পেলাম৷
–‘ এতো কিছু আমি মেনে নিতে পারছি না কাব্য ভাইয়া৷ সত্যিই মেনে নিতে পারঁছি না৷ আপনাকে দেওয়া শর্ত আমি বুঝি না৷ ‘

উনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন৷ উঠে দাঁড়িয়ে ফাইল কাবার্ডে রাখলেন৷ ড্রেসিং টেবিল থেকে নিজের ঘড়ি হাতে পড়তে পড়তে বললেন,

–‘ মামু আর বাবার শর্ত ভিত্তিহীন নয়৷ আচ্ছা তুই বল আমাকে এইভাবে মেনে নিতে পারছিস তুই?’
আমার হেঁ”চকি উঠে গেছে৷ উনি পানির গ্লাস এনে বললেন,
–‘ প্রথমত,
আমিরের সাথে বিয়ে না হওয়ার জন্য মামু তোকে আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে বলেন৷ বাট আমি তাকে বলি, আমির কে যেন গিয়ে বলে তোর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে৷ কিন্তু মামু বললেন, পরবর্তীতে তোকে বিয়ে দিতে গেলে এই কথাটার ইফেক্ট তোর উপর পড়বে৷ আশা করি বুঝতে পেরেছিস? ‘

আমি পানিটুকু খেয়ে নিলাম৷ তার প্রশ্নের উত্তরে বললাম,
‘কিন্তু আপনি ….
–‘হ্যাঁ মি’থ্যা বলেছিলাম বাট সেটা সত্যি করেই তোর বিয়ের আসরে প্রমাণ দিয়েছি । ‘
–‘প্রমাণ দেওয়ার দরকার কি ছিলো….
উনি বিরক্ত হলেন আমার কথা শুনে । বিরক্তি ভঙ্গিতে বললেন,
–‘ বারবার এক কথা কেন বলছিস তুই? বারবার বলছি এককথা তাও বুঝেও না বোঝার মতো করছিস । তোর বাবা আর আমার বাবার প্র”ব্লে’ম হলো তারা আমাকে শর্ত দিয়েছে আর তোর প্র’ব্লে’ম হলো সব বুঝেও অবুঝের মতো করা।’

আমি ভয়ে ভয়ে আবার বললাম,
–‘আমার থেকে দূরে কেন যেতে বলে তারা? ‘
উনি মুচকি হাসলেন। আমার সামনে হাটু মুড়ে বসে বললেন,
–‘তাহলে তুই চাস আমি তোর সাথে থাকি ?’
আমি পিছনের দিকে পিছিয়ে বললাম,
–‘একদম না ।’
–‘ তাহলে?’
–‘ আপনি হ্ঠাৎ এতো ভালো হলেন কি করে! মানে বাবা আর ফুঁপার কথা মেনে নিচ্ছেন যে?’
উনি আমার দিকে ঝুকে বললেন,
–‘মেনে কই নিচ্ছি । আমি তো তোর সাথেই আছি । নেহাৎ,জার্মান যাওয়া আমার সপ্ন তাই যাচ্ছি….তা না হলে,,,
আমি আরো পিছিয়ে বললাম,
–‘তাহলে কি? আর ফুঁপা কিসের কথা বললেন তখন,আপনি তার কথা ভুলে গিয়েছেন।’
–‘তোর সাথে রু’ড বি’হে’ভ যেন না করি এইটাও একটা শর্তের মধ্যে পড়ে । তুই ভালো মতো পড়াশোনা যেন করতে পারিস!তোর নিজের যেন একটা ভবিষ্যৎ থাকে ।’

আমি ভাবলাম গভীর ভাবে । সত্যিই ,এখন সংসার নামক বে’ড়া’জা’লে আবদ্ধ হলে আমার সব সপ্ন শেষ হয়ে যাবে । উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি উনার দিকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম,
–‘ আপনি আমায় ভালোবাসেন ?’
উনার হাসিমুখ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো । উনি উঠে দাঁড়ালেন । গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আমার যাওয়ার ডেট পাঁচদিন পর ।তুই নিজেকে সময় দে।’

আমি পিছন থেকে তাকে ডাকলাম সে পিছন না ফিরেই বললেন,
–‘ তোর পারসোনাল লাইফ আছে সেইটা নিয়ে ভাব । আর অপেক্ষার ফল সব সময় ভালো হয় ।’

আমি তার ঘরের মেঝেতে বসে রইলাম৷ বিয়েটা সত্যি হয়েছে৷ তার মানে সে আমার স্বামী৷ কয়েকবার টেনে টেনে উচ্চারণ করলাম স্বামী নামক বর্ণটাকে৷ আচ্ছা এই শব্দটা আজ এতো ভালো লাগছে কেন? তাহলে কি আমিও এই শব্দটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি!
চলবে……
(আশাকরি আজ বুঝতে পেরেছেন৷ আর কাব্য কেন নীতুকে ভালোবাসে বলে না!এমন প্রশ্ন করবেন না৷ অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় জানেন তো?ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৪
রুবাইদা_হৃদি (sheikh ridy rahman)

ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই বারান্দা দিয়ে কাব্য ভাইয়া আমার রুমে এসেছে সেটা আমি টের পাই নি৷ উনি আমার কঁপালে পড়ে থাকা চুল গুলো একবার ঠিক করছেন তো আরেকবার বিগড়ে দিচ্ছেন৷ মাঝে মাঝে আমার দিকে ঝুকে আমার উঠে বসে পড়ছেন৷ আমার ঘুম তখন হালকা হয়ে এসেছে৷ উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,
–‘ আমার অনাগত বাচ্চারা কেমন আছে! ‘
আমি ঘুমের ঘোরেই জবাব দিলাম,
— ‘ বাচ্চা আসবে কোথা থেকে কাব্য ভাইয়া, আপনার লেনদেনের প্রক্রিয়া এখনো তো বুঝতেই পারি নি৷ ‘
তিনি হাসছেন৷ সেই হাসির শব্দ গুঞ্জন তুলেছে আমার ঘরের প্রতিটা কোণায় সাথে আমার কানের মাঝে৷ সপ্নেও বুঝি মানুষটাকে অনুভব হয় আমার৷ আমি আবারও বিরবির করে বললাম,
–‘ আপনি হাসবেন না! আপনার হাসিতে কিছু একটা আছে যা আমাকে মুগ্ধ করে তুলে৷ ‘
–‘ কি করে তুলে৷ ‘
–‘উহু,ঘুমের মাঝে এসেও আমাকে জ্বা’লাচ্ছেন কেন বলুন তো৷ বললাম না মুগ্ধ করে তুলে৷ ‘
–‘ তাই বুঝি৷ ‘
–‘ আপনার সাথে পরে কথা হবে৷ এখন যান তো আমার সপ্ন থেকে৷ ‘
তার হাসির শব্দ আবার আছড়ে পড়ছে৷ আমি বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে নিই৷ ঘুমের রেশ কাটাতে ইচ্ছা হচ্ছে না যার জন্য সপ্ন থেকে কাব্য নামক মানুষ টাকে তাড়াতে পারছি না৷
–‘ আমি চলে গেছে খুব কি মিস করবি আমায় নীতু? ‘
চলে গেলে শব্দটা শুনে আমার ঘুম ছুটে গেছে৷ সত্যিই উনি চলে যাবেন?আমি চোখ খুলতেই উনাকে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখেই হুড়মুড় করে উঠে বসি৷ আমি উঠে বসতেই উনি চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়৷ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়বো না অস্বস্তিতে বুঝে উঠার আগেই উনি বললেন,
–‘ তোর পাশেই ওড়না রাখা! রাতে ঘোমটা দিয়ে শুতে পারিস না ফাজিল মেয়ে৷ খোল চুলে ঘুমালে শ”য়তান প্র”স্রা”ব করে জানিস? ‘
আমি পাশে থাকা ওড়না শরীরে জড়িয়ে তার দিকে তাকালাম৷ তার ডান কানের পিঠের তিল টার দিকে নজর আটকে গেলো৷ সূর্যের আলো পড়ায় সেই তিলটা লাল বোঝা যাচ্ছে৷ আদেও কি লাল?আমি আজ প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ছি৷ উহু! মানুষটার না সেই তিলটার৷ সে এখনো অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে৷ আমি নজর সরিয়ে বললাম,
–‘ আপনি আমার রুমে কি করেন? ‘
উনি আমার দিকে তাকালেন৷ আমি চুল গুলো খোপা করতে নিলেই উনি বলেন,
–‘ ঘুম কুমারী তোমায় ওই খোলা চুলেই বড্ড মানায়৷ ‘
চকিত হয়ে তার দিকে তাকাতেই উনি আমার অর্ধেক বাঁধা চুল নিজের হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়ান৷ আমি জোরে, ‘ অস’হ্য ‘ বলতেই উনি একগাল হেসে বললেন,
— ‘ অস’হ্য বল আর যাই বল,, আমি ছাড়া তোর উপায় যে নাই৷ ‘
আমি মেঝেতে পা দিয়ে জোরে আ”ঘাত করে নামতেই উনি আবার হেয়ালি করে বললেন,
–‘ আমার বাপের হা”র্ট এমনি দূ”র্বল! তোর হা”তির মতো ওজন নিয়ে মেঝেতে ধু”প ধাপ করলে নি”র্ঘা’ত আমাদের শত বর্ষ পুরোনো বাসা ভেঙে পড়বে৷ ‘
মূহুর্তেই রাগ বেড়ে আকাশ ছুয়েছে আমার৷ আমি উনার কাছে গিয়ে আঙুল উচিয়ে বললাম,
— ‘ কথায় কথায় এমন আরেকদিন বললে আপনাকে চা বাগানের সাঁ”প ধরিয়ে দিবো বলে দিলাম৷ সাঝ সকাল বেলা আমাকে জ্বালানো ছাড়া আর কোনো কাজ পান নি আপনি৷ ‘
উনি আমার আঙুলে চুমু দিতেই আমি চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকাতেই উনি সব গুলো দাঁত বের করে হেসে বললেন,
–‘ ওলে বাবা,পিচ্চির এতো রাগ কোথা থেকে আসলো৷ আমি তো ভয় পেয়ে যাচ্ছি! ‘
–‘ উফ! অস’হ্য…’
আমি আবারও জোরে পা ফেলে চলে যেতে নিলেই উনি বললেন,
–‘ তোর ভার্সিটি তে ভর্তি করানোর মতো মহৎ মূল্যবান কাজ আমার মতো অ”ধমের ঘাড়ে পড়েছে৷ তাই মহারাণী কে ডেকে তোলার জন্যই এসেছিলাম৷ পাঁচমিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আমার সাথে বের হবি তা না হলে তোকে চা বাগানের সা”পের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো৷ ‘
তার খা”প’ছাড়া কথা শুনে হাসি পেলো আমার৷ আমি মুচকি হাসতেই উনি সুর টেনে বললেন,
–‘ এতো হাসি না,
পুরো রা”ক্ষ”সীর হাসি!’
আমি ঘুরে কিছু বলার আগেই উনি পকেটে হাত গুজে লাফিয়ে বারান্দা দিয়ে তার বারান্দায় চলে যান৷ অদ্ভুত! তার সব কিছুই এখন অদ্ভুত….

_____________________
ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত কোলাহলের ভীর ঠেলে আমরা হাঁপিয়ে যাচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে৷ চারদিকে গাড়ির কালো ধোঁ”য়া! থেকে থেকে হকারের হাক ডাক৷ আর শু”ষ্ক আবহাওয়ার তী”ব্র গরম৷ সব মিলিয়ে প্রচুর বিরক্ত আমি৷ গাড়ির ভেতরে এসি ছাড়লে আমার ব”মি পায় এই জন্য এসি নামক জিনিস ছাড়তে তীব্র বারণ আমার৷ আমি ঝি”ম মেরে বাইরের জ্যা”ম দেখে চলেছি৷ আর উনি ড্রাইভিং সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন৷ তার চোখে-মুখে কোনো বিরক্তির ছাঁ”প নেই৷ তিনি উপভোগ করছেন সব কিছু মনে হচ্ছে৷ প্রায় এক ঘন্টা আগে আমার ভর্তির যাবতীয় কাজ সেরে ভার্সিটি থেকে বের হয়েও বাসায় পৌছাতে পারি নি৷ আমি বিরক্তির সুরে বললাম,
–‘ চলুন হেটে বাসায় যাই! এই জ্যা”মে বসে থাকতে থাকতে বুড়ি হওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ ‘
–‘ গাড়ির দরজা খোলাই আছে চাইলে নেমে হেটে যেতেই পারিস৷ ‘ উনার নি”রু’ত্তা’প উত্তর শুনে কিছুই বললাম না আমি৷ ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই এমন করছেন উনি৷ আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালাম৷ তার ভেতর বোঝার উপার আমার নেই৷ সব কিছুতে তার গো”পনীয়তা৷ এই গো”পনীয়তা দূর করে তার মন খুলে পড়ার সাধ্য বোধহয় আমার নেই৷ গাড়ির হ”র্ণ কানে আসতেই উনি গাড়ি সামনে নিলেন৷ তারপর আবার সেই নীরবতা জ্যামের ছড়াছড়ি৷
–‘ আমি চলে যাবো বুধবারে৷ ‘
–‘ হ্যাঁ! তো? ‘
আমার ভাবেলাশীন উত্তর শুনে চুপ থেকে বললেন,
–‘ যদি বলি ,আমার যাওয়া না যাওয়া তোর উপর ডি’পে’ন্ড করছে? ‘
আমি তার দিকে তাকালাম৷ চোখ দুটো কিছু মূহুর্তের মাঝেই লাল হয়ে উঠেছে ৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,
–‘ মানে? ‘
গাড়ি স্টার্ট দিতেই একটানে বাসার সামনে এসে পড়লেন চোখের পলকে৷ আমি এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ কি বলতে চাইছেন আবার উনি?
___________________
বাড়ির ভেতর উৎসব মুখোর পরিবেশ৷ কোলাহল মুক্ত বাসা হঠাৎ করেই মানুষের আনাগোনায় ভরে উঠেছে৷ বাসায় ঢোকার পর থেকে একের পর এক শ”ক খাচ্ছি আমি৷ কাব্য ভাইয়া চুপ! কাব্য ভাইয়ার ফুঁপাতো বোন ইরা আমার দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘নীতু বেবি! আমাদের ক্রাশ বয় কাব্য তাহলে তোমার৷ আই ফিল হিং”সে হিং”সে৷ ‘
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি৷ ও আমায় ছেড়ে দিয়ে হাতের উপর গু’তা দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
–‘ হয়েছে আর নাটক করতে হবে না! আমরা সব বুঝি৷ একটু পর আমাদের পুরো গ্যাং আসবে৷ আজ রাতে ধা”মাকা হবে৷ ‘
আমি ওর কথার রেশ বুঝতে না পেরে শুধু হাসলাম৷ একে একে সবাই আমার সাথে কুশল বিনিময় করছে৷ কোথাও ফুঁপি আর জিনিয়াকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুঁচকে এলো আমার৷ হচ্ছেটা কি আজ? আজ বাসায় কারো বার্থডে নাকি? না তো অক্টোবরে কারো বার্থডে নেই৷ তবে ফুঁপি আর ফুঁপার বিবাহ বার্ষিকী? ধূর ছা”ই! সেটাও তো চলে গেছে৷
আমাকে সোফায় বসিয়ে নানা গাল গল্প করছেন কাব্য ভাইয়ার দূর সম্পর্কের দাদু৷ আমি তার কথার মানে বুঝতে পারছি না৷ হঠাৎ উনি আমার হাত টেনে নিয়ে বললেন,
–‘ তোমার ভাগ্যে কাব্য আছিলো! অনেক সুখী হও দাদু৷ আমি প্রাণ ভরে দোয়া করি৷ ‘
আবারও কঁপাল কুচকে এলো আমার৷ আমাদের বিয়ের কথা এতোদূর পর্যন্ত গড়ালো কিভাবে সেটাই বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছি আর চেনা মুখ খুজে বেড়াচ্ছি৷ হঠাৎ কাব্য ভাইয়ে নজরে পড়তেই বি”ষম খাই আমি৷ সে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে সিড়ি দিয়ে নামছেন রাহুল ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে৷ হলুদ রঙ তার উপর ফুঁটে উঠেছে একদম৷ ইরা আমার পাশে বসে মুখ টিঁপে হেসে ওই দাদুটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–‘ দেখেছো দাদু,তোমার হবু নাতী বউ বড্ড বে”হায়া৷ এখনি কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তোমার নাতি কে আর বিয়ের পর…’
ও আর কিছু বলার আগেই দাদু ওকে থামিয়ে দিয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার মুখে আদর করে বললেন,
–‘ সর্বোচ্চ সুখ তোমার কোলে এসে ভর করুক৷ ‘
আমি আবার অবাক চোখে তাকাতেই কোথা থেকে ফুঁপি এসে তাড়া দিয়ে বলল,
–‘ এ কি নীতু!তুই এখনো এখানে বসে আছিস৷ কতো কাজ বাকি…আমার সাথে আয়! এই ইরা ওকে আমার ঘরে নিয়ে আয়তো জলদি৷ ‘
ফুঁপি ঝ”ড়ের বেগে এসেছিলো৷ কা”লবৈ”শাখীর বেগে আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেলো৷ ইরা আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি ওকে প্রশ্ন করি,
–‘ এই সব কি হচ্ছে ইরা? তুমি কিছু জানো!’
ইরা আবারো আমার হাতে হালকা থা”প্পর মেরে বলল,
–‘ইশ!ঢং,সব কিছু গুছিয়ে এখন ন্যা”কা সাজা হচ্ছে তাই না?’
আমি আবার ন্যা”কামো কোথায় করলাম! বাসায় হচ্ছেটা কি আজ?
ফুঁপির রুমে পৌছাতেই আবার ফুঁপি ঝ”ড়ের বেগে আমায় বলল…..

চলবে……
(আমি কিছু জানি না,,কি হচ্ছে,,
আপনাদের ভালো লাগছে না?ভুল গুলো ক্ষনা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here