রাখি আগলে তোমায় আনুরাগে,পর্ব:১

0
1995

#ধারাবাহিক
#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে ( প্রথম পর্ব )
#কলমে— অর্পিতা চক্রবর্তী

( যাঁরা মা হতে চলেছেন, তাঁরা প্লিজ পড়বেন না । সব গল্প সকলের জন্য নয় । )

ডক্টর বসু আলট্রাসোনোগ্রাফি স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন । তাঁর দুই ভুরু কুঁচকে রয়েছে, অর্থাৎ তিনি কিছু চিন্তা করছেন । আর তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাই । রাই বুঝতে পেরেছে যে কোথাও কোনো গণ্ডগোল আছে । কিন্তু ডক্টরকে কিভাবে জিজ্ঞাসা করবে সেটা মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছে সে । যাইহোক বেশিক্ষণ ভাবনা চিন্তা করতে হলো না কারণ ডক্টর বসু তাকে প্রশ্ন করলেন ,

ডক্টর বসু : আপনার এখন নয় মাসের প্রেগন্যান্সি । এর আগে কোথায় আলট্রা সোনোগ্রাফি করিয়েছেন ?

রাই : তিন মাসের সময় আপনার কাছে এসেছিলাম ।

ডক্টর বসু : তারপর ? মানে পাঁচমাসে কোথায় করিয়েছেন ?

রাই : ডক্টর, আমার স্বামী কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরে থাকেন । সেখানে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যাবস্থা কিছু নেই । এতদিন আমি ওঁর কাছেই ছিলাম । তাই পাঁচমাসে কোলকাতায় যেতেও পারিনি, পরীক্ষাও করানো হয়নি । কিন্তু কি হয়েছে ?

ডক্টর বসু : এতোটা কেয়ারলেস আপনারা কিভাবে হতে পারেন ? ডক্টররা যেসব নির্দেশ দেন সেগুলো আপনাদের ভালোর জন্যই তো দেওয়া হয় ।

রাই : আমি বুঝতে পারছি কিছু সমস্যা হয়েছে । কি ব্যাপার একটু বলবেন প্লিজ !

ডক্টর বসু : রিপোর্ট হাতে নিয়ে ডক্টরের কাছে যান । সাবধানে থাকুন ।

রাই আর কথা বাড়ায়না কারণ বোঝাই যাচ্ছে যে উনি কিছু বলবেন না । সে ধীরে সুস্থে উঠলো । বাইরে বেড়িয়ে দেখলো বাবা অপেক্ষা করছেন । বাবা জানতে চাইলে রাই বললো সব ঠিক আছে । বয়স্ক মানুষটিকে চিন্তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে কি দরকার ! বাড়ি যাওয়ার পথে সে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে । যদি কোনো বড়ো সমস্যা হয়েও থাকে তার সমাধানও নিশ্চয়ই থাকবে । সে বাস্তববাদী মেয়ে । ভেঙে পড়া তার ধাতে নেই । তাছাড়া বাড়ির লোকজনকে বোঝানোর ব্যাপারটাও তাকেই দেখতে হবে ।

বাড়ির গেট খুলে ঢুকতেই ছোট্ট বাবি দৌড়ে আসে । তার এখন আড়াই বছর বয়স । এতক্ষণ সে দিদার কাছে ছিলো । দিদা বলেছেন যে, মা একটা কাজে গিয়েছে, তাড়াতাড়ি চলে আসবে । বাবি জানে মা তার জন্য কিছু আনবে । তবে সে এটাও জানে যে মা এখন স্নান করবে, তারপর তাকে গিফ্ট দেবে । ছোট্ট হলে কি হবে তার বুদ্ধি আছে । রাই স্নান সেরে বেড়িয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে । তারপর ব্যাগ থেকে বের করে একটা চকলেট আর মিল্কশেক । বাবি আনন্দে হেসে ওঠে । এরপর চকলেটটাকে ছোট ছোট টুকরো করে এবং একটা টুকরো মাকে খাওয়ায় । মাও তাকে চকলেট খাওয়ান । দাদু দিদাকে দুটি টুকরো দিতে গেলে তাঁরা নিতে চাননা । কিন্তু বাবি তাঁদের চকলেট খাওয়াবেই । এতো টুকরো করার কারণ হচ্ছে , মা তাকে ছোট্ট থেকে শেয়ারিং শিখিয়েছেন । তাই কোনো জিনিস অন্যের সাথে শেয়ার না করলে তার আনন্দ হয় না ।

রাই ভিতরে ভিতরে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে । তার মন যেন তাকে অশুভ সংকেত পাঠাচ্ছে । রাইয়ের মা এসে জানতে চাইলে রাই বলে যে তার খুব মাথাব্যথা করছে । সে একটু শুতে চায় । মা চলে যাওয়ার পর রাই তার স্বামী সুমনকে ফোন করলো । সুমন ফোন ধরলে রাই বললো কাল পরশুর মধ্যে সে যেন বাড়ি চলে আসে । সুমন বৌয়ের গলার স্বর শুনে বুঝতে পারে সে কেমন আছে । তাই সে বললো , ” কিছু তো হয়েছে যেটা তুমি আমাকে বলছো না । তোমার শরীর ঠিক আছে তো ? তাছাড়া ছুটি তো পরের মাসে দরকার । আমি application জমা দিয়েছি । কি হয়েছে রাই ? ”

রাইয়ের মনের ভিতর কষ্টের পাহাড়টা যেন ভাঙতে থাকে । কিভাবে সে বলবে কিছু ঠিক নেই ? সে জানেনা ডক্টর ব্যানার্জি অর্থাৎ তার চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে কি বলবেন । আরও কতো কিছু সে জানেনা । তার মৌনতার উত্তরে সুমন বলে, ” চিন্তা কোরোনা । আমি আসছি । ”

( ক্রমশ )

ভালো থাকবেন সবাই ।

———————————————————————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here