#রঙ_বেরঙের_জীবন
পর্ব(১৮ তথা শেষ)
#নুশরাত_জাহান_মিষ্টি
লোকটি রুহিকে(মেয়েটি) থাপ্পড় মারার পর পিছন থেকে একটি ছুরি বের করলো। ছুরিটা নিয়ে রুপের দিকে এগোতেই রুহি বলে উঠলো,” না তুই এটা করতে পারিস না। তোর চাওয়া তো পূরণ হয়ে গেছে, তাহলে ওকে কেন মারতে চাইছিস”?
লোকটি হাঁসি মুখে নিয়ে বললো,” ওকে মারার ইচ্ছে আমার ছিলো না। কিন্তু কি করবো বল মৃত মানুষের জন্য মায়াটা নাকি তাড়াতাড়ি মুছে যায়! তাই ওর মৃত্যু দিয়ে রাতের জীবন থেকে পুরোপুরিভাবে ওর নাম মুছে দেবো”।
রুহির চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ ফুটিয়ে উঠলো। লোকটির হিংস্র চাহনি দেখে ভয় পাচ্ছে রুহি। লোকটি খুব ভয়ানক হয়ে গেছে, হিংস্রতা লোকটিকে নিজের করে নিয়েছে। লোকটিকে বুঝিয়ে কোন লাভ হবে না বুঝতে পেরেও রুহি বললো,” কেন পাগলামি করছিস? ছেড়ে দে না রুপকে। জানিস রুপ রাতকে ভালোবেসেও এখন রাতের কাছে ফিরতে চাচ্ছে না। কারন রাতের বিয়ে হয়ে গেছে তাই। রুপ চায় রাত ওর স্বামীর সাথে ভালো থাকুক”।
একটু থেমে পুনরায় বললো,” রুপ খুব ভালো মানুষ। ওরে মারিস না”।
” ওরে মারতে আমারো কষ্ট হবে, যতই হোক আমি প্রফেশনাল খুনি নই। তবে আমার কিছু করার নাই। ওরে মরতেই হবে, আজ এবং এখনি”।
কথাটি বলে লোকটি ছুরি নিয়ে রুপের দিকে এগিয়ে গেলো। যেই রুপের গায়ে ছুরিটা দিয়ে আঘাত করতে যাবে তখনি পিছন থেকে কেউ “শান্ত” বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। লোকটি পিছন ঘুরে তাকালো।
পিছনে রাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। চোখে অশ্রু মুখে অবিশ্বাসের ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাত্রী। রাত্রীর চোখের সামনে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত৷ শান্তর পাশেই রুপ দাঁড়িয়ে আছে। রুপের সামনে দাঁড়িয়ে আজ রাত্রী রুপকে নয় বরং শান্তকে দেখে যাচ্ছে। শান্তর মুখশ্রীতে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে।
রাত্রীর পিছনে পলাশ এবং সাথীও চলে এলো সেখানে। পলাশ শান্তর মুখশ্রীতে তাকিয়ে সেদিনের কথা স্মরণ করলো যেদিন পলাশ শান্তকে রহিমা বেগম সম্পর্কে বলতে গেছিলো।
সেদিন পলাশ রহিমা বেগমকে সন্দেহ হচ্ছে সেটা বলতে যাবে এমন সময় শান্তর একটি ফোন এসেছিলো। ফোনে কথা বলতে বলতে একটি কাগজে শান্ত ফোনের ওপাশ থেকে বলা একটি ঠিকানা লিখছিলো। যে লেখাটির দিকে তাকিয়ে পলাশ অবাক হয়ে গেছিলো। কারন রহিমা বেগমের ঘরে পাওয়া সেই কাগজের লেখাটা কোথাও না কোথাও গিয়ে শান্তর লেখার সাথে কিছুটা মিল পাচ্ছিলো৷
পলাশের মনে শান্তর প্রতি সন্দেহের জন্ম তখনি নিয়েছিলো। তাই তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জেনে নিয়েছিলো রাত্রীর সাথে অন্যকাউকে দেখলে তার কেমন লাগবে! সন্দেহটা পুরোপুরি সত্যি হয় তখন যখন রহিমা বেগম রাতের আধারে শান্তর সাথে দেখা করেন। সেদিন শান্ত রহিমা বেগমকে জেরা করছিলেন, সে রুপ ফিরে আসবে সেটা কেন বলেছিলো পলাশকে! কথার এক পর্যায়ে শান্তই বলে উঠেছিলো, “আমি ভালো কাজ করছি না তা আমি জানি তবে আপনিও কিন্তু কোন ভালো কাজ করেননি। খুন করাটা নিশ্চয়ই ভালো কাজ নয়”!
তারপর পলাশ সবকিছুই জেনে গেছিলো। তাই তো রাতকে দিয়ে শান্তকে শোনালো মৃত মানুষকে ভোলা যা কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানুষকে না। এটা পলাশের বলে দেওয়া কথা ছিলো! সেই সাথে পলাশ রাতে শান্ত কোথাও বের হলে তাকে অনুসরণ করতেও বলে দিয়েছিলো রাত্রীকে।
পলাশ এবং সাথীও শান্তর বাড়ির কাছাকাছিই ছিলো।
রাত্রী নিজেকে সামলে বললো,” শান্ত তুমি”?
শান্ত মাথা নিচু করে নিলো। রাত্রী পুনরায় বললো,” যে কাজের জন্য মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না, সেই কাজটা কেন করলে শান্ত”?
শান্ত এবার মুখ খুললো। খুব জোর দিয়ে বললো,” ভালোবাসা আর যুদ্ধে কোন ভুলই ভুল নয়”।
রাত্রী অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। মুখে হাঁসি ধরে রেখে বললো,” কারো ভালোবাসা কেড়ে নেওয়াটা ঠিক বলে মনে হচ্ছে”।
শান্ত ঠান্ডা মাথায় জবাব দিলো,” কেড়ে নিতে তো চায়নি। ভালোবাসা অর্জন করতে চেয়েছি”।
” তারমানে রুপকে আটকে রেখে। আমার পুরো পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ো আমাকে বিয়ে করাটা ভালোবাসা অর্জন ছিলো”।
এবার শান্ত হাঁসলো। হাঁসি নিয়েই বললো,” তোমার পরিবার সরল”?
পুনরায় হাঁসলো। তারপর বললো,” ভালো করে মনে করো রাত, বিয়ের জন্য রাজি তুমি আমাকে করিয়েছিলে”।
শান্ত আরো কিছু বলতে নিছিলো কিন্তু রাত্রী সুযোগ না দিয়ে বললো,” হ্যাঁ আমি বলেছিলাম। কারন আমার আম্মা তোমারে ভালো ছেলে ভেবে তাদের সম্মান বাঁচানোর জন্য তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলো আমাকে। তার কি দোষ সে তো তোমাকে ভালো ছেলে মনে করেছিলো”!
শান্ত এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাঁসতে হাঁসতে বললো,” রুপকে জিজ্ঞেস করো বিয়ের আগের দিন রাতে নদীর পাড়ে ওকে কে দেখা করতে ডেকেছিলো? কে ওর হাত দিয়ে তোমার জন্য ঐ চিঠিটা লিখেয়েছিলো”?
একটু থেমে শান্ত পুনরায় বললো,” থাক ওরে জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আমিই বলছি। তিনি হলেন তোমার আম্মা, রহিমা বেগম”।
রাত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। মনে হলো জেনো তার পুরো পৃথিবী এলেমেলো হয়ে গেছে। তার আম্মা তারে এতটা অপছন্দ করে যে তার ভালোবাসা কেড়ে নিলো। পলাশ নিজের মাথানত করে ফেললো। সে জানে না রাত্রীর মনে এখন কি চলছে! একে তো শান্ত, তার উপর তার মা।
রাত্রী এবার রুপের মুখের পানে তাকালো। রুপ সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো।
শান্ত পুনরায় বললো,” তোমার আম্মা তোমারে সম্মান হারানোর ভয়ে আমার সাথে বিয়ের জন্য বলেনি। আমার সাথে বিয়ের জন্য বলেছিলো কারন আমি এটাই চেয়েছিলাম তাই”।
রাত্রী নিজেকে সামলে বললো,” বিয়ের সময় এত নাটক কেন করলে? আমার এক কথাই তো বিয়েতে রাজি হতে পারতে? বলতে পারতে রুপ খারাপ ছেলে তার ভালোবাসা মিথ্যে তাই পালিয়ে গেছে? কিন্তু কই সেগুলো একবারো বলোনি”?
” কারন আমি তোমার ভালোবাসা চেয়েছিলাম রাত। আমি জানতাম রুপের ভালোবাসা মিথ্যে কিংবা ও খারাপ ছেলে বললে তুমি কখনোই মানতে না। আর হ্যাঁ প্রথমে রাজি হইনি কারন আমি চেয়েছিলাম বিয়ের পর তুমি আমায় নিয়ে ভাবো। আমার জন্য তোমার সম্মান বেঁচেছে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি রুপের ভালোবাসাকেও সম্মান করি। এই সবকিছু ভেবেই তুমি আমাকে আপন করে নেও। তাই আমি কখনো তোমাকে জোর করিনি কারন ভালোবাসা চেয়েছিলাম”।
রাত্রী এক পা এক পা করে শান্তর দিকে এগিয়ে এলো। শান্তর খুব কাছাকাছি এসে শান্তর মুখে হাত রাখলো তারপর বললো,” এত নিষ্পাপ একটা মুখের আড়ালে এতটা জটিলতা ছিলো শান্ত৷ আর আমার আম্মা আমারে এতটাই অপছন্দ করে যে তোমার কথায় সব কাজ করেছে”।
” অপছন্দ করে করেছে কিনা জানি না। আমি তাকে বাধ্য করেছিলাম কাজগুলো করতে কারন আমি তার একটা অতীত জেনে গেছিলাম”।
রাত্রী এবার আর চমকালো না। কারন সে বুঝে গেছে তার জন্য আরো চমক আছে। খুব শান্ত কন্ঠে বললো,” অতীত? কেমন অতীত”?
” আমি তোমার আম্মা আর মামীর কথা শুনেছিলাম। তোমার আম্মা তোমার মাকে(রাইসা) মেরে ফেলেছিলো। তুমি যেদিন জন্ম নিয়েছিলে সেদিন রহিমা বেগম রাইসার সাথে দেখা করতে গেছিলো। ভবিষ্যতে যাতে রফিক সাহেবের উপর রাইসা কোন জোর খাটাতে না পারে তাই তাকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেয়(রাইসার মামাদের ঘর দোতলা ছিলো)। ডাক্তার অনেক চেষ্টার ফলে তোমাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়”।
এবার রাত্রীর থেকে বেশি রুপ এবং বাকিরা চমকায়। শুধু চমকায় না পলাশ। কারন সে আগেই জেনে গেছিলো।
রাত্রীর এখন ভেঙে পড়ার সময় নয় তাই সে ভেঙে পড়ছে না। নিজেকে সামলানো কষ্টকর হলেও আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে সামলানোর।
” এতকিছু করে তুমি কে পেলে শান্ত”?
” তোমাকে”।
” আমাকে কি সত্যি তুমি পেয়েছো”?
” হয়তো রুপের জন্য তোমার কষ্ট হবে। রুপের পরিনতির জন্য আমি দ্বায়ী এটা জেনে তোমার আমার জন্য ঘৃনা জন্মাবে। আমি চাইনি কখনো এ সত্যিটা তোমার সামনে আসুক। যখন এসে গেছে তখন কিছুই বলার নেই। শুধু বলবো ধীরে ধীরে তুমি আমার ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাবে”।
রাত্রী হাঁসলো। তারপর শান্তর মুখশ্রী ধরে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। কানেকানে বললো,” ভালোবাসা? ভালোবাসা কারে কয় দেখবা শান্ত”?
তারপর শান্তকে ছেড়ে দিয়ে রুপকে এসে জড়িয়ে ধরলো। রুপকে খুব শক্ত করে রাত্রী জড়িয়ে ধরেছে। শান্ত চোখ মূহুর্তেই হিংস্র হয়ে উঠলো। শান্ত কিছু বলার পূর্বেই রুপ রাত্রীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,” রাত এইডা ঠিক না। তোমারে জড়িয়ে ধরার অধিকার নাই”।
একটু থেমে পুনরায় বললো,” অধিকারটা শান্তর। সেইটা ও যেভাবে নিক না ক্যান, অধিকারটা ওরি”।
রাত্রীর মুখশ্রীতে দু’হাত রেখে খুব আবেগি সুরে রুপ বললো,” পরজন্ম বইলা কিছু থাকলে সেই জন্মে তোমার উপরে শুধু আমার অধিকার থাকবো রাত। সে জন্মে শান্তকে আসার সুযোগ দিবো না”।
রাত্রী এবার শান্তর দিকে তাকালো তারপর বললো,” এটা ভালোবাসা শান্ত। আমি রুপকে ভালোবাসি, রুপ আমাকে ভালোবাসে তবুও সে আমারে জড়িয়ে ধরলো না। কারন সে জানে আমি আর তার নেই। তাই বলে কি তার ভালোবাসা কমে যাবে? না শান্ত না! তার ভালোবাসা সারাজীবন থেকে যাবে তাই তো সে পরজন্মে আমাকে চাইছে। এটাই ভালোবাসা শান্ত”।
শান্ত বেশ কঠিন গলায় বললো,” আমার ভালোবাসাটা ভালোবাসা নয় বলছো”?
” কোনমতেই সেটা ভালোবাসা নয়। ভালোবাসাকে ভালোবাসার থেকে কেড়ে নেওয়াটা ভালোবাসা হতে পারে না”।
হঠাৎ শান্ত রাত্রীকে নিজের কাছে টেনে নিলো। রাত্রীর কানটা বুকের বা পাশে চেপে ধরলো। তারপর বললো,” দেখো আমার হৃদয় কি বলছো! আমার হৃদয় তোমাকে ভালোবাসে। কান পেতে শোন সে শুধু বলছে, সে রাতকে চায়। তার শুধু রাত চাই। আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয় রাত। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি”।
একটু থেমে পুনরায় বললো,” ভালোবাসার এই খেলায় আমি নামতেই চাইনি তো। আমাকে নামার জন্য রুপ বাধ্য করেছে”।
রুপ অবাক হয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি”?
” হ্যাঁ তুই। তুই বাধ্য করেছিস। কেন তোর মনেই নেই তুই কি বলেছিলি! বলেছিলি ভালোবাসাকে ভুলতে না পারলে তাকে নিজের করে নিতে। আমি তো আমার ভালোবাসা ভুলতে পারবো না তাই তাকে নিজের করে নিয়েছি”।
শান্ত রাত্রীকে ছেড়ে দিলো তারপর পুনরায় বললো,” তোর কাছে ভালোবাসার মানুষকে না পেয়েও তারে সারাজীবন ভালোবেসে যাওয়াটা খাঁটি ভালোবাসা হতে পারে কিন্তু আমার কাছে নয়। আমার কাছে ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়াটাই খাঁটি ভালোবাসা”।
রাত্রী অবাক হয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইলো। শান্তকে দেখে তার কখনো মনে হয়নি শান্ত এরকম পাগলামি করতে পারে। শান্ত তার জন্য এতটা পাগল ছিলো, যে ঠিক ভুল কিছুই বিচার করেনি।
শান্ত এরপর যা বললো তার জন্য রাত্রী প্রস্তুত ছিলো না।
” রুপ মরে গেলে তুমি ওরে ভুলে যাবে তাই তো রাত”?
” শান্ত এসব কি বলছো তুমি”?
” কি বলছি মানে তুমিই তো বলেছিলে মৃত মানুষকে ভোলা সহজ? তো তোমার রুপকে ভুলে যাওয়াটা আমি সহজ করে দিচ্ছি”?
ওখানেই কেউ ভাবতে পারেনি শান্ত কথাটি বলার সাথে সাথে কাজটি করে ফেলবে। শান্ত এত দ্রুত নিজের হাতের ছুরিটা দিয়ে রুপের পেটে আঘাত করলো যে সেটার রেশ কেউ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এইমাত্র কি হলো! সবাই যখন বুঝতে পারলো ওখানে কি হয়েছে পলাশ দৌড়ে এসে শান্তকে ধরলো আর রাত্রী ‘রুপ’ বলে চিৎকার করে তার কাছে গেলো। ততক্ষণে রুপ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। শান্ত তার লোকদের পলাশকে আটকানোর নির্দেশ দিলো। তার লোকেরা পলাশকে ধরে ফেললো। শান্ত দ্বিতীয়বার আঘাত করার জন্য এগোতেই সাথী এবং রুহি ধরতে গেলো কিন্তু পারলো না, শান্তর অন্যলোকেরা তাদের ধরে ফেললো।
শান্ত পূর্বের থেকে দ্রুতগতিতে রুপের পেটে পুনরায় আঘাত করলো। রুপ ‘আহ’ বলে একটা চিৎকার করলো। রাত্রী রুপের মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরলো। কান্না করতে করতে বলছে,” রুপ। রুপ”।
রুপ খুব কষ্টে বললো,” পরজন্মে আমার অপেক্ষা কইরো রাত”।
” না রুপ তোমার কিছু হবে না”।
কথাটি বলতেই দেখলো শান্ত পুনরায় আঘাত করতে চাচ্ছে। রাত্রী গিয়ে শান্তর পা জড়িয়ে ধরলো,” শান্ত রুপরে ছেড়ে দেও। ওরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো শান্ত। ওরে মেরে না শান্ত”।
শান্ত রাতকে তুলে উঠালো তারপর বললো,” ও মরুক রাত। তুমি চিন্তা করো না রাত, আমি তোমাকে এত ভালোবাসবো যে তুমি রুপের কথা ভুলে যাবে”।
” শান্ত পাগলামি করো না। শান্ত দয়া করে ওরে বাঁচাও”।
শান্ত এবার রাত্রীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। রাত্রী টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো। শান্ত রাত্রীর দিকে ঝুকে বললো,” আমার ভালোবাসা তোর কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে। আর ওর ভালোবাসা খাঁটি তাই না। আমি পাগল। আমি পাগলামি করছি। আর রুপ তোরে ভালোবাসে না। ও মরুক তারপর তুই আমার এই পাগলামি ভালোবাসার কাছেই ছুটে আসবি। আমার ভালোবাসায় জীবনকে রঙীন করে তুলবি”।
এই বলে শান্ত পুনরায় রুপকে আঘাত করলো। রাত্রী বুঝে গেছে শান্তকে আটাকনো সম্ভব নয়। তাই রুম থেকে ছুটে চলে গেলো।
শান্ত রুপকে আরো কিছু আঘাত করে বললো,” রুপ শেষবারের মতো জেনে নে ভালোবাসা আর যুদ্ধে কোন ভুলই ভুল নয়”।
শান্ত এরপর নিজের লোকদের উদ্দেশ্য বললো,” রুপের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে বাকিদের ছেড়ে দিও”।
শান্ত রাত্রীকে খুঁজতে বাহিরে চলে এলো। রাত্রী আপনমনে হেঁটে চলেছে। কোথায় যাচ্ছে কিছু জানে না! নিজের ভালোবাসাকে চোখের সামনে মরতে দেখার চেয়ে অজানা পথে হারিয়ে যাওয়া ভালো। হাঁটতে হাঁটতে রাত্রী মেইন রাস্তায় চলে এলো। শান্ত কিছুটা দূর থেকে রাত্রীকে দেখতে পেলো। শান্ত রাত্রী থেকে দৃষ্টি সরাতেই দেখলো রাস্তার ওপাশ থেকে বড় একটি ট্রাক আসছে। শান্ত ‘রাত’ বলে চিৎকার দিয়ে দৌড় দিলো। কিন্তু লাভ হলো না। শান্তর আসার পূর্বেই ট্রাকটি রাত্রীকে রক্তাক্ত করে চলে গেলো।
শান্ত ছুটে গিয়ে রাত্রীকে জড়িয়ে ধরলো,” রাত। রাত। কথা বলো রাত”।
রাত্রীর পুরো শরীর জুড়ে রক্তের বর্না বয়ে যাচ্ছে। বহু কষ্টে রাত্রী বললো,” কারো থেকে কাউকে কেড়ে নিয়ে সুখী হওয়া যায় না শান্ত। তুমি রুপের থেকে আমাকে আলাদা করে দিয়েছিলে। ভাগ্য তোমার থেকে আমাকে আলাদা করে দিলো”।
” না রাত। আমি তোমার কিছু হতে দেবো না। আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো”।
” আমার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে শান্ত। আর কিছু করার নেই”।
” রাত বিশ্বাস করো আমি তোমারে খুব ভালোবাসি। আমি যা করেছি সব তোমাকে পাবার জন্য”।
” চার অক্ষরের ভালোবাসার অনেক রুপবেদ হয় শান্ত। তাই আমি জানি তোমার এই পাগলামিও এক প্রকার ভালোবাসা। কিন্তু আমি এ ভালোবাসা চায়নি শান্ত”।
একটু থেমে বহু কষ্ট পুনরায় বললো,” আমি এ ভালোবাসা চায়নি শা…..”।
বাকিটা বলার পূর্বেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চিরতরে চোখ বুঝলো রাত্রী। শান্তর পৃথিবী থমকে গেলো।
এতক্ষনে এখানে পলাশ, সাথী এবং রুহিও চলে এসেছে। ওরা এসে রাত্রীকে ধরতেই শান্ত বলে উঠলো,” আমি পাগল। আমার ভালোবাসা মিথ্যে তাই রাত আমারে ভালোবাসে নাই। রাত আমার ভালোবাসা চায় নাই৷ রাত আমার ভালোবাসা চায় নাই”।
রুহি এসে শান্তকে ধরলো। রুহি শান্তকে কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু শান্ত অস্বাভাবিকভাবে হাঁসতে লাগলো। হাঁসতে হাঁসতে শান্ত বলছে,” আমার ভালোবাসা পাগলামি। আমার ভালোবাসা সত্যি নয়। রাত আমার ভালোবাসা চায় নাই৷ রাত আমার ভালোবাসা চায় নাই”।
রুহি শান্তকে কয়েকবার ধাক্কা দিলো তারপর বললো,” শান্ত এরকম করছিস কেন? শান্ত? শান্ত তুই আমাকে চিনতে পাচ্ছিস”?
” আমি তো কাউরে চিনি না আমি শুধু রাতরে চিনি। রাতরে ভালোবাসি। কিন্তু রাত আমার ভালোবাসা চায় না”।
রুহি শান্তর মুখশ্রীতে তাকিয়ে সেদিনের কথা মনে করলো যেদিন শান্ত প্রথম ওকে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে রুপকে ইনজেকশন দিতে বাধ্য করেছিলো। যেদিন রুহি প্রথম নিজের ভুল বুঝতে পেরে রাত্রীর কানেকানে বলেছিলো,” রুপের তোমার সাহায্যের প্রয়োজন”। রুহি এসব ভাবছে আর অজানা দুনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে শান্তর পাগলামি বেড়ে চলেছে। শান্তর পাগলামি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রুহি মনেমনে বললো,” খুব কি ক্ষতি হতো যদি শান্ত আমার ভালোবাসতো”?
পরিশেষে রুপ এবং রাতের স্থান হলো মাটির নিচে আর শান্তর স্থান হলো মানসিক হাসপাতালে। রাতের মৃত্যুতে শান্তর মস্তিষ্ক প্রচুর আঘাত পেয়েছে। যার ফলে শান্তর মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং সে পাগল হয়ে যায়।
“””” অনুভব করলাম চোখের কোনা পানি আসছে। লেখিকা নিজেও এ গল্প জীবনেও আর পড়বে না কারন আমি দূর্বল হার্টের মানুষ বন্ধুগন। একদিন রুপকে নিয়ে কিছু বলার জন্য বলেছিলাম আপনাদের কিন্তু আপনারা বলেননি। তবে আজ আমি রুপের কথা নয় আজ প্রথম দুই লাইনে গল্প সম্পর্কে জানতে চাই শেষ দুই লাইনে শান্ত সম্পর্কে। গল্পের ইন্ডিংটা এমন হয়েছে বলেই আপনারা হয়তো এক মূহুর্তের জন্য হলেও রুপ রাত এবং শান্তকে মনে রাখবেন””””
আঠারো বছর পর,
রুহি এতক্ষন যাবত তার এক ছাত্রীকে গল্পটি শোনাচ্ছিলো। ডাক্তারির পাশাপাশি বাড়িতে কলেজে পড়া বাচ্চাদের পড়াতে তার ভালোই লাগে। পড়ার ফাঁকেই আজ গল্পটি শোনালো রুহি।
চোখের কোনায় আসা অশ্রুকোনা গুলোতে মুছে রুহি বললো,” তুমি বলেছিলে না স্বপ্না ভালোবাসার কোন রুপ হয় না। ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা। তার কোন আলাদা রুপ নেই। সবার ভালোবাসাই এক। তো এবার কি বলবে তুমি”?
স্বপ্না নিজের চোখের অশ্রু মুছে বললো,” ভালোবাসা একই হয় ম্যাম। আমি এখনো তাই বলবো। শান্ত যেটাকে ভালোবাসা ভেবেছে সেটা তার ভালোবাসা ছিলো না ছিলো পাগলামি”।
স্বপ্নার কথায় দ্বিমত পোষণ করে রাহুল বললো,”উহু। মানছি শান্ত ভুল করেছিলো কিন্তু তার ভালোবাসা মিথ্যে নয়। এই গল্পে যদি তুমি শুধু রুপের ভালোবাসাকে প্রধান্য দেও তবে ভুল হবে। এ গল্পে শান্তর ভালোবাসাও ভালোবাসাই ছিলো। হ্যাঁ রুপ এবং শান্ত দু’জনের ভালোবাসার পদ্ধতি দু’ধরনের ছিলো। তারমানে এই নয় যে তাদের মধ্যে একজনের ভালোবাসা মিথ্যে”।
এবার রুহি মলিন হেঁসে বললো,” হ্যাঁ রাহুল ঠিক বলেছে”।
স্বপ্না কিছুক্ষন ভেবে বললো,” আচ্ছা মানলাম। কিন্তু শেষে রহিমা বেগম, পলাশ, সাথী তাদের কি হয়েছিলো”?
” তাদের গল্পটা তোমরা নিজেরাই সাজাও। কারন আমার গল্পটা তাদের জন্য ছিলো না।
একটু থেমে পুনরায় রুহি বললো,” আমার গল্পটা রুপ এবং শান্ত নামের দুই প্রেমিকের দুই ধরনের প্রেম নিয়ে ছিলো। এখানে শুধু তাদের দু’জনের ভালোবাসাকেই তুলে ধরা হয়েছে”।
তারপর রুহি ওদের ছুটি দিয়ে দিলো। বাসায় চলে যেতে বললো। যাওয়ার সময় রাহুল বললো,” ম্যাম আপনি আজও বিয়ে করেননি কেন? শান্তর জন্য”?
রুহি রহস্যময় হাঁসি দিয়ে বললো,” রঙ বেরঙের জীবনে আমি নাহয় জীবনটাকে বেরঙেই সাঁজালাম”।
(সমাপ্ত)