রঙ বেরঙের জীবন পর্ব ১৬

0
330

#রঙ_বেরঙের_জীবন
পর্ব (১৬)
#নুশরাত_জাহান_মিষ্টি

কেটে গেলো দু’দিন। রহিমা বেগম এখন কিছুটা সুস্থ। রফিক সাহেব দু’দিন বেশ সেবাযত্ন করেছে তার। পলাশ দূর থেকে সবকিছু শুধু নিরবে দেখে গেলো। রহিমা বেগমের মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাচ্ছে না পলাশ। দু’দিন খুব কষ্ট করে নিজের মধ্যে সাহসের সঞ্চয় করলে।

রহিমা বেগম কিছুটা সুস্থ হওয়ায় রফিক সাহেব কাজে চলে গেলেন। রফিক সাহেব চলে যেতেই পলাশ রহিমা বেগমের ঘরে আসলো। পলাশ ভিতরে আসতেই রহিমা বেগম বললেন,” তুই দু’দিন ধইরা বাড়ি তাও আমার কাছে আইলি না ক্যান”?
” তুমি অসুস্থ ছিলে৷ তোমার সামনে আসার পর নিজেকে সামলাতে পারতাম না৷ হয়তো ভুলেই যেতাম তুমি অসুস্থ”।

পলাশের কথায় বেশ অবাক হলেন রহিমা বেগম। পলাশের কথার মানেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না।
” কি হইছে? তুই এমনে কথা কও ক্যান”?
পলাশ মুখে কিছু না বলে কাগজটি রহিমা বেগমের হাতে দিলো। রহিমা বেগম কাগজের দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন। এটা পলাশের কাছে কিভাবে গেলো! রহিমা বেগম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,” এইডা তুই কই পাইলি”?
পলাশ নিজেকে সংযত করে ঠান্ডা মাথায় বললো,” রুপ কোথায় আম্মা? রুপের সাথে কি হয়েছে”?
রহিমা বেগম নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললেন। মনেমনে নিজেকে প্রস্তুত করলেন। চোখ খুলে বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করলেন,” আমি জানি না। রুপ তো পালাইয়া গেছে”।
পলাশ মলিন হেসে বললো,” হাতে তোমার ধরা পড়ে যাওয়ার প্রমান তারপরো বলছো রুপ পালিয়ে গেছে। কাগজটিতে কি লেখা তা বোধহয় তোমার স্মরনে নেই! সমস্যা নেই আমি পড়ে শোনাচ্ছি”।

এই বলে পলাশ রহিমা বেগমের হাত থেকে কাগজটি নিয়ে পড়তে লাগলো,

” রুপ রাতে সময়মতো চলে আসবে। আপনাকে যা করতে বলেছি সেটাই করবেন। রুপরে দিয়া চিঠিটা এমনভাবে লেখাবেন যাতে রুপের সবকিছু মজা মনে হয়। রুপের আড়ালে এখানে অন্যকিছু হতে পারে সেটা জানো ও কিছুতেই বুঝতে না পারে”।

পলাশ এবার রহিমা বেগমের মুখোমুখি দাঁড়ালো তারপর বললো,” কাগজটিতে যা লেখা আছে তাতে পরিষ্কার রুপ মজা হিসাবে একটি চিঠি লিখেছিলো। তাও তোমার কথায়”।
একটু থেমে পুনরায় বললো,” যদি আমি আমার মাথাটা একটু খাঁটিয়ে ভাবি তবে রুপের শেষ চিঠি ছিলো, বিয়ে করতে না আসা সেই চিঠিটা। এবার বলো মজা করে লেখা চিঠির কথা সত্যি করে রুপ কেন বিয়ে করতে আসেনি”।
রহিমা বেগম বেশ জোরালো গলায় বললেন,” কাগজডায় লেখা নাই ঐ চিঠিটাই হেইডা”।
” আম্মা আমারে রাগিয়ো না। বিয়ের আগের দিন রাতে রুপের মজা করে পাঠানোর মতো কোন চিঠিই আসেনি৷ যেটা এসেছিলো সেটা বিয়ের দিন।
ঐ কাগজে এটা উল্লেখ আছে রুপ মজা হিসাবে নিলে যা ঘটবে তা মজা নয়”।

রহিমা বেগম পলাশের মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইলেন। এই ছেলেটা তার কষ্টের সাক্ষী। রহিমা বেগমকে পলাশের থেকে বেশি কেউ ভালোবাসে না। ভালোবাসার সেই ছেলে আজ প্রশ্ন তুলেছে। রহিমা বেগমকে চুপ থাকতে দেখে পলাশ পুনরায় বললো,” আম্মা আমি রুপরে কিছুটা চিনেছি, জেনেছি। আমারো মনে হয় না রুপ শুধুমাত্র চাকরি খোঁজার জন্য বিয়ের দিনের মতো একটি দিনে চলে যাবে।
আব্বার উপরের রাগ থেকে তুমি রাতকে কষ্ট দেওয়ার জন্য রুপের সাথে কিছু কি করেছো”?

” একখান কাগজের লেখার উপরে বিশ্বাস কইরা তুই তোর আম্মারে প্রশ্ন করছিস। যেহানে কাগজটায় পরিষ্কার কইরা কিছু লেখাও নাই। আদো কাগজটা আমার কিনা তাও তো লেখা নাই”।
পলাশ চমকে উঠলো। সত্যি তো কাগজটাও কারো নাম লেখা নেই। কিন্তু কাগজটি তো রহিমা বেগমের ঘরে ছিলো। এ ঘরে কাগজটি আর কে রাখতে পারে, রফিক সাহেব! কিন্তু না। তিনি আর যাই হোক নিজের সন্তানদের ক্ষতি চাইবেন না। এতগুলো বছরে পলাশের মনে তার জন্য ঘৃনা থাকলে, ঘৃনার চোখের আড়ালে পলাশের আরো একজোড়া চোখ ছিলো। সেটা দেখেছে রফিক সাহেব কিভাবে তার তিনটা সন্তানের কাছে আসতে চেয়েছে! সন্তানদের জন্য তার মধ্যে ভালোবাসা ছিলো।
সবচেয়ে বড় কথা রাত্রীর ক্ষতি তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। একমাত্র রহিমা বেগমের মনেই কিছুটা ক্ষোভ থাকতে পারে রাত্রীর জন্য। সেজন্য পলাশের সন্দেহ রহিমা বেগমের উপরে পড়েছে।

পলাশ কিছু একটা ভেবে বললো,” শান্তকে বিয়ে করার জন্য রাত্রীকে অনুরোধ তুমিই করেছিলে তাই না আম্মা”?

রহিমা বেগম চমকালেন। রহিমা বেগমের চমকানো মুখশ্রী পলাশের থেকে আড়াল হলো না। রহিমা বেগম বেশ ভয়ে ভয়ে বললেন,” সেইটা তো আমাগো সম্মানের কথা ভাইবা”।
” সম্মানের কথা ভেবে”?
” হ”।
” সম্মান তো রাতের জন্য পূর্বেই গেছিলো। পিংকির আত্মহত্যার চেষ্টা ওর নামে চালিয়ে সম্মান তো পূর্বেই শেষ করেছিলে। তাহলে নতুন করে সম্মান যাওয়ার কি ছিলো আম্মা! তুমি তো রাতরে রুপের জন্য অপেক্ষা করতে বলতে পারতা”?

রহিমা বেগম কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,” যে মাইয়াডা আমার কষ্টের কারন আইজ তুই তার লাইগা আমারে দোষারোপ করছোস। তুই তোর আম্মারে অপরাধীর মতো জেরা করছোস”?
” না আম্মা। আমি আসলে……”।
রহিমা বেগম কান্নার মতো করে বললেন,” থাউক তোরে কিছু কওন লাগবে না। আমি কি মাইয়াডার ক্ষতি চাইয়া শান্তর লগে বিয়া দিছি! আমি জানি না শান্ত ওরে কত ভালোবাসে! শান্ত ওরে ভালো রাখবো বইলাই তো আমি তার লগে বিয়াডা দিলাম। নয়তো কোন আবালমার্কা পোলা ধইরা বিয়া দিয়া দিতাম”।

একটু থেমে পুনরায় বললো,” হ এহন সব দোষ আমার। আমিই তো দোষী। কালো নামের কলংক নিয়া জন্ম নিয়া ভুল করছি। এহন সব দোষ তো আমারি হইবো”।

পলাশ রহিমা বেগমকে আর না চটিয়ে চলে গেলো। রহিমা বেগম যাই বলুক কাগজের লেখাগুলো রহিমা বেগমের উদ্দেশ্য লেখা এই কথাটি পলাশের মাথায় কেমন জানে আটকে আছে! তার বারবার মনে হচ্ছে রুপের লেখা শেষ চিঠি, রুপ মজা হিসাবেই লিখেছিলো।
_____________

পলাশ বারবার মনকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কাগজটিতে তেমন কিছু লেখা ছিলো। কাগজটি লেখাগুলো ততটা যুক্তিযত নয়৷ শুধুশুধু নিজের আম্মাকে সন্দেহ করছে।
কিন্তু বারবার কথাটা বোঝাতে সে ব্যর্থ হচ্ছে! তার মনের কোনে কোথাও গিয়ে কেউ বলে উঠছে,” আম্মা কিছুটা হলেও জানে রুপের ব্যাপারে”।
এই মূহুর্তে কি করবে সেটা বুঝতে না পেরে শান্তর পরামর্শ নিতে তার কাছে চলে এলো! শান্ত বাড়িতে নেই। তাই পলাশ রাত্রী এবং শান্তর মায়ের সাথে কিছুক্ষন গল্প করলে। পলাশের গল্প করায় মন বসছে না। বারবার শান্তর আসছে কিনা দেখার জন্য দরজার দিকে লক্ষ্য করে চলেছে। রাত্রী পলাশকে এত উদ্বিগ্ন দেখে একবার ভেবেছিলো জিজ্ঞেস করবে ‘কি হয়েছে’। পলাশ কি ভাববে, ভাববে না ভেবে রাত্রী জিজ্ঞেস করলো না!

বেশ অনেকটা সময় পর শান্ত বাড়িতে ফিরলো৷ পলাশ শান্তকে নিয়ে আলাদা একটা রুমে চলে গেলো। শান্ত পলাশের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে? তোকে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন”?
” তোর সাথে আমার জরুরি কিছু কথা বলার আছে”।
” হ্যাঁ বল”।
” আমি রুপের ব্যপারে তোর সাথে……..”।
পলাশ কথাটি শেষ করার পূর্বেই শান্তর কাছে একটি ফোন এলো। গ্রামে হাতে হাতে মুঠোফোন না পৌঁছালেও শহরে প্রায় মানুষের কাছেই ফোন ছিলো। আর শান্ত চাকরি করার সুবাদে তার ফোন ব্যবহার করাটা প্রয়োজন ছিলো। যেমন পলাশের।
শান্ত পলাশকে অপেক্ষা করতে বলে ফোনে কথা বলতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষন পর শান্ত ফোন রেখে পলাশের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,” হ্যাঁ তুই কিছু একটা বলছিলি”?
” আসলে আমি রুপের ফিরে আসা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম”।
শান্ত মনেমনে কিছুটা ব্যাথিত হলো। তবে তা প্রকাশ না করে বললো,” রুপ ফিরে এসেছে”?
” না। রুপ ফিরে আসেনি তবে….”।
” তবে”?
” আমার আম্মা আমারে বললো সে রুপকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে”।
শান্ত বেশ অবাক হলো। বিষ্ময় নিয়েই বললো,” আন্টি রুপকে ফিরিয়ে আনবে মানে? তিনি রুপ কোথায় আছে তা জানেন”?

” তা তো জানি না। আম্মা বললো রাত এবং তোর বিবাহ বিচ্ছেদ করানো রচিত। যেহেতু রাত রুপরে এবং রুপ রাতরে ভালোবাসে”।
শান্তর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। বিবাহ বিচ্ছেদ! রাত আর তার বিবাহ বিচ্ছেদ হবে! শান্ত কিছু বলতে চাচ্ছিলো হঠাৎ করে দরজা ঠেলে রাত্রী চা নিয়ে ভিতরে ডুকে।
রাত্রীর দিকে তাকিয়ে পলাশ বোঝার চেষ্টা করলো রাত্রী তাদের কথাটি শুনেছে কিনা! শুনে থাকলে তার কতটা প্রভাব তার মধ্যে পড়েছে!
রাত্রী বেশ স্বাভাবিকভাবে বললো,” তোমাদের চা৷ আম্মা পাঠালেন”।
শান্ত ইশারায় চা’টা রাখতে বললো। রাত্রী চা রেখে চলে গেলো। রাত্রী চলে যেতেই শান্ত বললো,” আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি”।
পলাশ বেশ চমকালো। বিষ্ময় নিয়ে বললো,” ব্যবস্থা করছি মানে? তুই সত্যি বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চাচ্ছিস নাকি”?
শান্ত মনেমনে কষ্ট পেলেও হাঁসি মুখে বলার চেষ্টা করলো,” রুপ ফিরে আসলে তার ভালোবাসা তার হাতে তুলে দেওয়াটা আমার দায়িত্ব। একসময় তো এটা হতোই তাই পূর্বেই ব্যবস্থা করে নিচ্ছি”।
” তোর কষ্ট হবে না রাতকে ছেড়ে দিতে”?
” যে কখনো আমার ছিলোই না তারে ছাড়ার কথা আসছে কোথা থেকে”?

” তুই রাতের স্বামী শান্ত”।
” স্বামী কিন্তু ভালোবাসা না”?
” রাতের পাশে তোর অন্যকোন পুরুষকে সহ্য হবে”?

শান্ত চোখ বন্ধ করে বললো,” এসব কথা থাক”।
” ধর তোর সামনে কেউ রাতের হাত ধরলো, তারপর সে রাতের ঠোঁট অব্দি এগালো, রাতরে চু……”।

পলাশ বলতে পারলো না তার পূর্বেই শান্ত দেয়ালে খুশি মেরে বললো,” মেরে ফেলবো তাকে৷ রাতরে যে আমার বাজে নজরে দেখবে তাকে শেষ করে দেবো। রাত শুধু আমার। আমার কাছ থেকে যে তাকে কেড়ে নিতে চাইবে তারে আমি মেরে ফেলবো”।
” সেই মানুষটা যদি রুপ হয়”?
শান্ত এবার থেমে গেলো। চোখের কোনে অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। চোখের অশ্রু মুছে শান্ত বললো,” জানি না”।
শান্ত সেখান থেকে চলে গেলো। পলাশ শান্তর চলে যাওয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,” স্বামী- স্ত্রীর মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদটা আমারো ঠিক পছন্দ নয়। কিন্তু শুধু শান্তর চাওয়াও তো কিছুই হবে না, সাথে রাত্রীকেও চাইতে হবে”।

শান্ত নিজের রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো৷
পলাশ সবাইকে বিদায় দিয়ে সন্ধ্যাবেলায় চলে গেলো। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো। রাত্রীকে শাশুড়ী মা শান্তকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে পাঠালো। রাত্রী রুমে এসে দেখলো শান্ত ঘুমিয়ে আছে৷ রাত্রী কয়েকবার ডাক দিতেই শান্ত উঠে গেলো। শান্ত উঠতেই রাত্রী জিজ্ঞেস করলো,” ঘুমিয়ে পড়লে কখন”?
শান্ত মলিন হেঁসে বললো,” আমি আসার পর মাত্র এলে এখানে”?
” হ্যাঁ না মানে…..”।
” ঠিক আছে সমস্যা নেই”।
” আপনারে খেতে ডাকছে”?
” তোমরা খেয়ে নেও আমি খাবো না”।
রাত্রী কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শান্ত পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। রাত্রী বুঝতে পারলো শান্তর মন ভালো নেই। আর মনটা যে রাত্রীর জন্যই খারাপ তাও বুঝতে পারলে।

রাত্রী শাশুড়ী এবং সৌমিকে খেতে বলে নিজের রুমে চলে এলো। শান্তর মা বুঝে নিলো ওরা দু’জন হয়তো পরে একসাথে খাবে। তাই তিনি আর না করেননি।

রাত্রী বেশ কিছুক্ষন রুমে শান্তর অপেক্ষা করলো। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শান্ত রুমে আসলেও রাত্রীকে উপেক্ষা করে গেলো। রাত্রী বেশ কিছুবার শান্তর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু শান্ত মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে সরে যাচ্ছিলো। রাত্রী বেশ স্বাভাবিকভাবে বললো,” সমস্যা কি”?
শান্ত কিছু বললো না। রাত্রী পুনরায় বললো,” তুমি আমার উপর রেগে আছো”?
” ঘুমিয়ে পড়ো”।
” আমি খাবার খাইনি শান্ত”।
শান্ত এক পলক রাত্রীর দিকে তাকালো। তারপর বললো,” তো খেয়ে নেও গিয়ে”।
” তোমার সাথে খাবো”।
” আমি খাবো না। তুমি গিয়ে খেয়ে নেও”।
” আমার উপর রেগে আছো কেন”?

” আমি রেগে নেই। খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, আমাকেও ঘুমাতে দেও”।
শান্ত নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করলো। রাত্রী হঠাৎ বলে উঠলো,” আমি তোমার জীবনটা বেরঙে ভরিয়ে দিয়েছি তাই না শান্ত”?
শান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,” উত্তরটা সত্যি চাই”?
” হ্যাঁ চাই”।
এবার শান্ত উঠে এসে রাত্রীর পাশে বিছানায় বসলো। রাত্রীর হাতটা ধরলো তারপর বললো,” বেরঙটাকে রঙীন করে দেও না রাত”।
রাত্রী চমকে শান্তর চোখের দিকে তাকালো। শান্ত পুনরায় বললো,” আমি জানি রুপম তোমারে খুব ভালোবাসে, তুমিও রুপমরে ভালোবাসো। কিন্তু ও তো হারিয়ে গেছে তাই না? যে হারিয়ে গেছে তার কথা মনে রেখে নিজের জীবনটা বেরঙে ভরিয়ে তুলছো কেন রাত”?
রাত্রী চুপ করে রইলো। শান্তকে বলার মতো কোন ভাষা সে পাচ্ছে না। শান্ত রাত্রীর নিরবতা দেখে পুনরায় বললো,” আমার সাথে জীবনটা রঙীন করো না রাত। বিশ্বাস করো খুব ভালোবাসবো তোমায়। রুপমের থেকেও অনেক অনেক বেশি ভালোবাসবো”।
রাত্রী এবারো চুপ করে রইলো। শান্ত রাত্রীর নিরবতা সহ্য করতে না পেরে কিছুটা জোরে রাত্রীর মুখশ্রী ধরে উপরে উঠালো। রাত্রীর মুখশ্রী শান্তর মুখশ্রীর মুখোমুখি ধরে রেখে বললো,” রুপের কাছে কি ছিলো যেটা আমার কাছে নেই? ভালোভাবে দেখো আমারে রাত। দেখো আমার মুখটা কি খারাপ দেখতে”?

একটু থেমে পুনরায় বললো,” কি হলো বলো খারাপ দেখতে? বলো না? আমি কি রুপের মতো তোমারে ভালোবাসতে পারবো না”?
রাত্রী পুনরায় নিরব৷ রাত্রীকে নিরব দেখে শান্ত বললো,” একবার বিশ্বাস করে দেখো, আমি তোমারে খুব ভালোবেসে দেখাবো। আমার ভালোবাসা তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাবো”।
রাত্রীর চোখ থেকে এবার অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। রাত্রীর চোখে পানি দেখে শান্ত রাত্রীকে ছেড়ে দিলো। খুব শান্তভাবে বললো,” দুঃখিত। ক্ষমা করবা। আমার ভুল হয়ে গেছে। রুপ ফিরে আসুক, আমি তোমারে তা…….”।
শান্ত কথাটি শেষ করতে পারলো না তার পূর্বেই রাত্রী বললো,” আমার তালাক চাই না”।
শান্ত অবাক হয়ে রাত্রীর মুখশ্রীতে তাকালো। রাত্রী পুনরায় বললো,” আমারে কিছুটা সময় দেও শান্ত। আমি তোমার সাথেই থাকবো”।

” তারমানে রুপ ফিরে আসলে তুমি তার কাছে যাবে না”?
” যাবো”।
শান্ত এবার প্রচুর অবাক হলো। শান্তর বিষ্ময় কাটাতে রাত্রী বললো,” শুধু একবার তার মুখোমুখি দাঁড়াবো, জানতে চাইবো সে কোথায় ছিলো! কেন সে আমাকে ঠকালো”!
” সে যদি তোমাকে না ঠকায়। যদি তার না আসার কারনটা কোন বিপদ সংকেত হয় তবে”?

” তবে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবে না”।
শান্ত চুপ করে গেলো। মনেমনে ভালোলাগা জন্মালেও কোথাও না কোথাও যন্ত্রণাটা ঠিক আছে! রাত্রী তাকে ভালোবেসে তার কাছে থাকবে না শুধু সম্পর্কের দ্বায়ে থাকবে। আচ্ছা শান্তর কি এ সম্পর্কে রাত্রীকে বেঁধে রাখা উচিত হবে! শান্তর কি উচিত নয় রুপ ফিরে আসলে রাত্রীকে তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার! আচ্ছা শান্ত যদি রাত্রীকে ফিরিয়ে না দিয়ে তার ভালোবাসায় আপন করে নেয় তবে কি রাত্রী তার ভালোবাসায় বাঁধা পড়বে!
_________

দু’দিন ধরে পলাশ রহিমা বেগমকে নজরে নজরে রাখছে৷ সন্দেহ নিয়ে থাকার চেয়ে সন্দেহ দূর করতে চেষ্টা করাটা মন্দ নয়।
দু’দিনে রহিমা বেগমের মধ্যে তেমন কোন পরিবর্তন দেখা দিলো না। পলাশ হতাশ হলো, সেই সাথে নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে নিজ আম্মারে সন্দেহ করার জন্য।

তবে পলাশের ঘৃনাটা বেশিক্ষন রইলো। রহিমা বেগম মাঝরাতে হঠাৎ মাথায় চাদর মুড়ি দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। পলাশের সন্দেহটা পুনরায় জেগে উঠলো। পলাশ রহিমা বেগমের পিছু নিলো। কিছুটা পথ পিছু নিতেই সামনে রহিমা বেগমকে কারো সাথে কথা বলতে দেখলো পলাশ। তাদের সব কথা কানে না আসলেও যতটা এসেছে সেটাই পলাশের জন্য যথেষ্ট।

চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here