রক্তের বন্ধন Part_20

0
723

#রক্তের বন্ধন
Part_20

হলো আপনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান কোন খুনীর মেয়েকে দেখতে চাই না।
– হঠাৎ নার্স এসে বলল’ মিঃ রাজ, আপনার অপারেশন হবে। এখনি আসেন।
– কথা যেন কথাটা শুনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না ।
– আমি রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে গালে – মুখে চুমু দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে যখনি বের হতে যাবো।
– পিছন থেকে হাতটা টেনে ধরল রাইসা বাবা তুসি কোথায় যাচ্ছো? তুমি যেয়ো না, আমার না ভয় করে। ও বাবাই তুমি যেয়ো না। বাবাই আমায় একটু বুকে নিবে?
– মা তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসতে যাচ্ছি।
– আমার আইসক্রিম লাগবে না। তুমি যেয়ো না বাবাই।
– হাতটা একপ্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে নিলাম। রাইসা কাঁদছে। কিন্তু আমার পিছনে তাকালে যে চলবে না। কথা পিছন থেকে দৌড়ে সামনে এসে দাঁড়াল। রাজ কিসের অপারেশন? তুমি কি অসুস্থ?
– সামনে থেকে সরেন প্লিজ।
– না রাজ বল তোমার কি হয়েছে? আমি যে তোমার ভালবাসি। তোমার কিছু হলে আমি বাঁচব না। তুমি আমার জীবন। প্লিজ বল তোমার কি হয়েছে। কসম করে বলছি, তুমি ছাড়া আমি সত্যিই মরে যাবো।(কাঁদতে কাঁদতে বলল)
.
-কথার চোখে অশ্রু যে আমি দেখতে পারি না। জানি এখানে আর এক মূহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকলে অদৃশ্য কোন মায়ার পড়ে যাব। তাই বুকের ভেতর কথাকে পাওয়ার অভিপ্রায় চাঁপা দিয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়া চাঁদের মত জীবনটাকেই বেছে নিলাম। কথাকে বললাম এখন বলার সময় নেই। সাথির কাছে জেনে নিয়ো।
– সাথিকে কাছে ডেকে বললাম, আমার কলিজার টুকরাটাকে একটু দেখ! আমার যদি কিছু হয়ে যায়! তাহলে তুমি আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ো না।
-সাথি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে, মাথাটা নিচু করে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
-কথা করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– ডাক্তারের রুমে যেতেই ডাক্তার আসাদ বলল।
-মিঃ রাজ এখানে একটা সাইন করে দেন।
– কিসের সাইন এটা?
– মিঃ রাজ কাগজে লেখা আছে, আপনি স্বেচ্ছায় কিডনী ডুনেট করছেন।
– আমি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে কাগজে সাইন করে দিলাম।
– সাথি আপু রাজের কি হয়েছে? ডাক্তার অপারেশন করবে কেন রাজের?
– কেন আপনি জানেন না?আপনার জন্যই তো রাজ আজকে নিজেকে উৎসর্গ করতে যাচ্ছে।
– মানে?প্লিজ খুলে বলেন।
– শুনেন তাহলে, রাইসার যখন কিডনী প্রতিস্হাপন করতে ৭ লাখ টাকা লাগে তখন রাজ আপনার কাছে যায়। নিজের কলিজার টুকরাকে, আপনার কাছে রেখে আসতে চাই ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে। কিন্তু আপনি পতিতার মেয়ে বলে তাড়িয়ে দেন। রাজ তার মেয়েকে বাঁচাতে নিজের কিডনী ডুনেট করার সত্ত্বে রাইসা বাঁচায়। সত্যি আপনি আমার রাজকে যতটা কষ্ট দিয়েছেন। তার চেয়ে বেশি কষ্ট আপনার পেতে হবে।
– কথা সাথির মুখে এমন কথা শুনে, দৌড়ে ডাক্তারের কাছে চলে যায়।
– আপনি? আপনি এখানে?
– স্যার এখন যে অপারেশনটা হচ্ছে। অপারেশনটা না করলে হয় না?
– what? এসব কি বলছেন?
– হ্যাঁ ঠিকই বলছি। আমি এ অপারেশন হতে দিতে পারি না।
– আপনি কি হন রাজের? আর রাজ আরেকটা প্রাণ বাঁচাতে কিডনী ডুনেট করছে।
-রাজ পারে না কিডনী দিতে। কারণ রাজ আমার স্বামী।
– আপনি হয়ত জানেন না রাজ নিজ ইচ্ছায় কিডনী ডুনেট করছে। এক কাজ করেন, আপনার স্বামীর জন্য দোয়া করেন। এটাই ভালো হবে।
– এদিকে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল। বেডে শুইয়ে দিয়ে একটা ইনজেকশন দিতেই, চোখের সামনে বারবার রাইসার মুখটা ভেসে ওঠছে। এর পর আর কিছু মনে নেই।
– কথা বাসায় গিয়ে দেখে আকাশ বাসায় বসে আছে।
-আকাশ তুমি?
– হ্যাঁ আমি। তোমার কোন খোঁজ নেই তাই এসে পড়লাম।
– আকাশ তুমি না বললে, রাজ আমায় ভালবাসবে। কিন্তু তোমাকে বর সাজিয়ে আরো রাজ আমাকে ভুল বুঝেছে! তুমি বল কি করব আমি? আমি যে রাজকে ছাড়া বাঁচব না তা তো তুমি জানো?
– কথা প্লিজ ভেঙে পড় না। সব ঠিক হয়ে যাবে। রাজ তোমারি আছে তোমারি থাকবে। এখন আমি আসি।
– আকাশ চলে গেলে। কথা ঘরের দরজাটা টেনে দেয়। রাতে শাওয়ার নিয়ে। উওমরূপে অযু করে বহুদিন পর কুরআন টা হাতে নিল!
– কুরআনের কিছু অংশ পড়ে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। নামায শেষ করে, মোনাজাতে দু’টা হাত তুলে বলতে লাগল’ হে আমার আল্লাহ্ তোমার পবিএ কালামুল্লাহ্ শরীফ থেকে কিছু আয়াতে কারিমা পাঠ করেছি। তুমি তো অন্তযামী। তুমি তো তোমার বান্দার মনের খবর জানো । আল্লাহ তুমি তো জানো, আমি আমার স্বামীকে কতটা ভালবাসি। তুমি তো জানো প্রতিরাতে কাকে বুকে নিয়ে কান্না করি। ও আল্লাহ তুমি কি আমার চোখের পানি দেখতে পাচ্ছো না। মায়ের আদর পায়নি কখনো।
মা বলে ডাকতে পারিনি তবুও তোমার কাছে কোন অভিযোগ করিনি। তুমি তো তোমার বান্দার চোখের পানা সহ্য করতে পার না। হে আল্লাহ আমার স্বামীকে তুমি আমার বুকে ফিরিয়ে দেও। জানি না কি পরীক্ষায় ফেলেছ আমায়। ও আল্লাহ আমার বাবার পাপের শাস্তি কি আমায় দিচ্ছ? আমি কি অপরাধ করেছি। আমি তোমার কাছে আমার বাবার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি তো দয়ার সাগর। হে আল্লাহ ফকির এক দরজায় ভিক্ষা না পেলে অন্য দরজায় যায়। আমারর যে কোন জায়গায় যাওয়ার জায়গা নেই। ও আল্লাহ আমি কি করব বল? কি করলে রাজ আমায় বুঝবে। আমি যে আর পারছি না। হে আল্লাহ দুনিয়ার মায়েদের চেয়ে তুমি তোমার বান্দাদেরকে হাজার গুণ ভালবাসো নাকি? আল্লাহ আমার চোখের পানির উসিলায় রাজকে আমার করে দাও। রাজ যে আমার জীবন। আল্লাহ্ আমার স্বামী অসুস্থ। আল্লাহ আমার নিজের জীবনের বিনিময়ে আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও। কথা মোনাজাতে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে জায়নামাযে ঘুমিয়ে যায়।ঘুম থেকে সজাগ মেয়ে দেখে জায়নামাযে শুয়ে আছে। জায়নামাজ থেকে ওঠে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বারোটা বাজে। বিছানায় শুয়ে গা ছেড়ে দিতেই ঘুম এসে যায়।
– এদিকে বিছানা কাঁপছে! চেয়েই দেখে ফোনটা কাঁপছে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কে যেন বলল’ হ্যালো আপনি কি মিস কথা।
– জ্বি বলেন আমি কথা!
– আপনার স্বামী রাতে অপারেশন থিয়েটারে মারা গিয়েছে!কথা যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। হাতটা কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা পড়ে গেল। চোখ দিয়ে অঝোয় ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। বুকের ভেতরটা ধুমঁড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কথাটা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। রাজ আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। কথা হসপিটালে গিয়ে দেখে রাইসা রাজকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
– রাইসার কান্না দেখে হসপিটালের নার্সরাও কাঁদছে।
– রাইসার প্রতিটা কথা মর্মে এসে আঘাত করছে।
– রাইসা রাজকে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে ‘ বাবাই তুমি কথা বলবে না আমার সাথে। বাবাই তুমি না বলছ, আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসবে। আমার আইসক্রিম লাগবে না বাবাই। তুমি তোমার মুখে রাজকুমারী বলে ডাকো। আমার কিচ্ছু চাই না। কথা বলবে না? কথা বল। বাবাই তুমি আমার বুকে নিবে না। আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব খুব কষ্ট হচ্ছে ও বাবা তুমি ঘুমিয়ে আছো? আমার দিকে তাকাবে না? দেখ না বাবাই তোমার কলিজার টুকরা কাঁদছে।
– মম দেখ তো বাবা আমার সাথে কথা বলছে না। বল না বাবাইকে কথা বলতে। রাইসা যখন আমার হাত ধরে ঝাকুনি দিচ্ছে। আমি পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ো চোখ দিয়ে অঝোয় ধারায় পানি ফেলছি। রাইসাকে কি বলব বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমার কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিচ্ছে!
– মম তুমি বল না বাবাইকে আমার সাথে কথা বলতে। বল না মম। তোমার কথা শুনবে বাবাই। আমার সাথে বাবাই অভিমান করেছে যে। কি হল তুমিও সবার মতো কাঁদছ?
– আমি কি বলে রাইসাকে সান্ত্বনা দিব। রাইসা আমাকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে যায় রাজের কাছে।
-রাজের মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা। মুখ থেকে কাপড় টা সড়াতেই রাজের মায়াবী মুখটা ভেসে ওঠল। যে মুখটার দিকে তাকিয়ে কতনিশি পার করেছি। রাজের মুখটা আজ কি সুন্দর লাগছে। এ মুখটা যে আর কথা বলবে না ভাবতে পারছি না। মনে হচ্ছে রাজ আমায় বলছে এই কাঁদছো কেন তুমি? কেঁদো না তোমার কান্না যে আমার সহ্য হয় না।
– এই মম বল বাবাইকে কথা বলতে। বল না, বাবাই কেন আমার দিকে তাকাচ্ছে না।
– রাইসাকে কি বলব। আমি নিশ্চুপ যে আজ। রাইসাকে কীভাবে বলব রাজ আর কোনদিন কথা বলবে না। সাথি মেয়েটাও কাঁদছে। আজকে আর বলছে না রাজ আমার। শুধু চোখের পানিই ফেলে যাচ্ছে।
– রাজের কথাগুলে বারবার মনে পড়ছে। একটা দিন আসবে যখন আমি থাকবে না। আমার স্মৃতিগুলোই সেদিন কাঁদাবে। সন্ধ্যা তারা হয়ে রোজ দেখব তোমায় রাখিব আঁখি বন্ধনে।
আমি আর সহ করছে পারছে না রাজের লাশটা ধরে হাউমাও করে কেঁদে দিলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই।
– যখন সেন্স ফিরে আসে, তখন দেখি সবাই রাজকে নিয়ে যাচ্ছে।
-মম বাবাইকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?বল না মা কেউ বলে না বাবাইকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তুমি মিথ্যা বলবে না জানি। প্লিজ মম বল।
– রাইসাকে বলার মত পৃথিবীর কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না । কিভাবে বুঝাবো তাকে।
পরর্বতী পর্বের অপেক্ষায় থাকেন।

বিঃদ্রঃ বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here