রক্তের বন্ধন Part_30

0
5509

#রক্তের বন্ধন
Part_30

তোর কি মনে হয়, তুই ভালোবাসলেই তোকে বিয়ে করতে হবে? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।
– জানিনা তবে তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারব না। তাই তোকে বিয়ে করে সুখে রাখতে চাই। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
– এমন সময়, কথার বাসায় ড্রাইভার এসে বলল’ ম্যাডাম সামনে শুক্রবার রাজ ভাইয়ার বিয়ে আপনাকে যেতে বলেছে!
– কথাটা শুনে কথার বুকটা কেঁপে ওঠে!
– সামনে বসে থাকা আকাশকে বলে আমি তোমায় বিয়ে করব সামনে শুক্রবারেই। আকাশ কথার মুখে এমন কথা শুনে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলল।
– কি হলো কাঁদছিস কেন?
– কই না তো এতো আমার আনন্দের অশ্রু।
– যা এবার বাসায় যা। আমি ফ্রেশ হব।
– আকাশ চলে গেলে, কথা রাজের কথা ভাবতে লাগল। তার রাজ এমন হতে পারে না। আর আজ যদি সত্যি সাথিকে বিয়ে করে তাহলে আমি যে বাঁচব না। তাই আকাশকে বিয়ে করার সেই দিনই সুসাইড করব। যদি রাজ বিয়ে ভাঙতে না আসে। রাজ যদি সত্যি আমায় ভালবাসে তাহলে সে আমার বিয়ের কথা শুনে অবশ্যই আসবে। কথার খুব কষ্ট হচ্ছে মন চাচ্ছে রাজকে সব বলে দিতে। সে পারছে না আর এসব সহ্য করতে। সন্ধ্যাও প্রায় ঘনিয়ে এসেছে! ফ্রেশ হয়ে পুরনো সব স্মৃতিগুলো দেখতে লাগল কথা।
– এদিকে আমি রাইসাকে নিয়ে শুয়ে আছি। রাইসা মা মা বলে কিছুক্ষণ কান্না করে আমার বুকেই ঘুমিয়ে গেল। রাইসা ঘুমিয়ে যেতেই রাইসাকে সরিয়ে, আলমারি থেকে কাঁচের ফ্রেমে বাঁধায় করা কথার ছবিটা বের করে চাঁদের আলোয় কথাকে দেখতে লাগলাম। কথার ছবিটাকে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম’ তুই না বলেছিলি আমায় ছেড়ে যাবি না। তবে কেন আবারো ভুল বুঝে চলে গেলি। জানিস না আমার খুব কষ্ট হয় তোকে ছাড়া। কেন বুঝিস না আমি যে তোকেই ভালবাসি। কি হলো কথা বলছিস না কেন। তুই ও আমার সাথে কথা বলবি না। এই বলে কথার ছবিটাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
– হঠাৎ রাইসা বলে উঠল বাবাই তুমি এভাবে কাঁদছ কেন? কই না তো মা কাঁদছি না তো। না না তুমি কাঁদছ। ও বাবাই তুমি কেঁদো না। বাবাই মমের কথা মনে পড়ছে? আসো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তুমি ঘুমাও। তুমি কিন্তু একদম কাঁদবে না। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। তুমি ঘুমাও বাবা।
– রাইসার কথাগুলো ঠিক হৃদয়ে লাগছে। রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম ‘ আমি আর কাঁদব না। আমার মা আছে না, আমার মা যে কাঁদলে কষ্ট হবে।
– আমি তোমার মা হই?
– হুম তুমি আমার মা হও।আমার মা যেমন আমাকে কাঁদতে দিত না। তেমনি তুমিও আমায় কাঁদতে দাও না।
-আচ্ছা বাবা আমাকে বুকে নাও।
– রাইসাকে বুকে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।
– সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতেই দেখি একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
-গাড়িটা দেখে বুঝতে বাকি রইল না এটা কথার গাড়ি। গাড়ির দৃষ্টিতে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি। এমন সময় কথা আমার প্রিয় কালো পাড়ের নীল শাড়িটা পড়ে বের হল গাড়ি থেকে। কথাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনের মাঝে বসন্তের ঢেউ খেলে যাচ্ছে।
– কথা আমার দিকে আসছে আর আমার হার্টবির্ট ক্রমেই বাড়ছে। কথা আমার কাছে এসে তার পিছন থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল’ সামনে শুক্রবার আমার বিয়ে আসলে খুশি হব!

– কথার বিয়ের কথা শুনে পৃথিবীটা কেমন যেন ঘুরতে লাগল। কথাটা নিজের কলিজাতে এসে আঘাত করল। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম। মনে মনে ভাবছি ছোট বাচ্চারাই ভালো চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারে।
– কি হলো, কার্ডটা খুলে দেখ। দেখতো আমার সাথে কেমন মানিয়েছে?
– কথার দেওয়া কার্ডটা খুলতেই দেখি রাজ আর কথার ছবি। বুঝতে বাকি রইল না কথা আকাশকে বিয়ে করছে।

– মন চাচ্ছে কথাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলি আমায় ছেড়ে যেয়ো না। আমি তোমায় ছাড়া বাঁচব না।
– আপনি অবশ্যই আসবেন কিন্তু। আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
– আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি?
– আমি কিছু বললাম না।
– কথা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– আচ্ছা যাও, আকাশ হয়ত ওয়েট করছে।
– কথা আমার দিকে ছলছল করে তাকিয়ে আছে।
– আচ্ছা আসি। কথা চলে যাচ্ছে।
– পলকহীনভাবে কথার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
যখন কথা গাড়িতে উঠবে। ঠিক তখনি রাইসা কোথায় থেকে এসে কথার আচলখানি টেনে ধরে বলল’ মম তুমি কোথায় চলে যাচ্ছ। আমাকে আর বাবাইকে তোমার সাথে নিবে না?
– রাইসার কথা শুনে কথা পিছন ফিরে তাকালো। কথা পিছনর তাকিয়ে দেখে রাইসা তার শাড়ির আচল টেনে ধরে আছে। আর তুতা পাখির মতো একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে।
– কথা হাটুগেড়ে বসে পড়ে বলতে লাগল’ চল মামনি আমার সাথে, তোমাকে অনেক খেলনা দিবো। তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। তোমাকে রেখে কোথাও যাবো না।
– সত্যি মামনি তুমি আমাকে খেলনা দিবে? আচ্ছা মামনি, তুমি কি আমাকে আমার বাবার চেয়েও ভালো খেলনা এনে দিতে পারবে? জানি পারবে না। জানো আমি যখন বাবাকে ঘোড়া সাজতে বলি আমার বাবাই তখন আমার জন্য ঘোড়া সাজে। আমি নাকি বাবার রাজকন্যা। আমি যখন বাবার পিঠে ওঠি তখন বাবাই ঘোড়ার মত টগবগ টগবগ করে। আচ্ছা মামনি আমি যখন কাঁদি তখন তোমার দেওয়া খেলনাও কি আমার সাথে কাঁদবে? জানো আমার বাবা আমার কষ্টে কাঁদে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। আমি কেমনে করে যায় বাবাকে রেখে। আমি চলে গেলে আমার বাবাইয়ের মাথায় কে হাত বুলিয়ে দিবে। আমার বাবাই কান্না করলে আর কে তার কান্না থামাবে। তুমি চলে যাও। আমার বাবাইকে যেদিন তোমার সাথে নিবে সেদিন তোমার সাথে নিব।
– কথা কিছু না বলে রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। রাইসার মাঝে আজ কথা রাজের স্পর্শ অনুভব করছে। রাজের গায়ের গন্ধ যেন রাইসার শরীরে লেগে আছে।
– কথার চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।
– মম তুমিও বাবাই এর মতো কাঁদো কেঁদো না মামনি।
– বাবাই এদিকে আসো তো। আমি কথা আর রাইসার দিকে তাকিয়ে আছি।
– কি হলো বাবাই আসো না।
– কথার সামনে দাঁড়াতে মন চাচ্ছে না। কি মুখে দাঁড়াবে কথা তো আমাকে ভুলে অন্যকে নিয়ে বিভোর। খুব কষ্ট হচ্ছে চাই না এ কষ্ট প্রকাশ করতে তাই কথা আর রাইসার সামনে যাওয়ার আগে চোখ দুটি মুছে নিলাম।
– রাইসার কাছে যাওয়ার সাথে সাথেই বলল’ বাবাই মম কি তোমার সাথে রাগ করেছে? মম তোমাকে না নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে!
– আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
– আচ্ছা বাবাই তোমার হাতে ওঠা কি?
– রাইসার কথাটা শুনেই চমকে ওঠলাম।
– কি হলো বাবাই বলো কিসের কার্ড?
– রাইসার কথা শুনে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলাম না।
– কি হলো বাবাই এটা কিসের কার্ড বলো?
– মামনি এটা বিয়ের কার্ড।
– সত্যি! বাবাই বিয়ে! মামনি তুমি কিন্তু আমাকে আর বাবাইকে নিয়ে যাবে কেমন। নিবে তো?আচ্ছা মামনি কার বিয়ের কার্ডটা?
– কথা এবার কোন কথা বলছে না।
– কথার চোখদিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।
– আমি রাইসাকে বললাম চল মামনি স্কুলে যাবে।
– যাবোই তো। তার আগে বল কার বিয়ে। আমি বিয়েতে যাবো, ‘ নৃত্য দিব! বলো না কার বিয়ে?
– তোমার মমের বিয়ে।
– সত্যি মামনি বিয়ে। আমি জানতাম মামনি আর রাগ করে থাকতে পারবে না। হিহি কি মজা আমি বাবাই আর মমের বিয়ে খাবো। দেখি কার্ডটা। রাইসা কার্ডটা খুলেই দেখে কথার ছবির সাথে অন্য একটা ছবি।
– বাবাই মমের ছবির সাথে শয়তান বেডার ছবি কেন?
– চুপ মামনি শয়তান বলে না। তোমার মমের সাথে তোমার ওই আঙ্কেলটার বিয়ে।
– রাজ প্লিজ চুপ কর।
– রাইসা আমার মুখে কথার বিয়ে আকাশের সাথে হবে কথাটা শুনে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল।
– কাঁদতে কাঁদতে বলল’ বাবাই তুমি উনাকে বলতো চলে যেতে। আমি উনাকে দেখতে চাই না। বাবাই আমি কারো বিয়ের দাওয়াত খাবো না। তুমিও যেয়ো না। কোথায় কার্ড দাও তো।
– রাইসা আমার হাতটা থেকে কার্ডটা নিয়ে কথার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল’ আপনার দাওয়াত আপনি খান যান। আমাদের খেতে হবে না। মম তুমি এ অসভ্যটার ছবি নিয়ে আর কাঁদবে না। আমার মম আপনি না আমার মম সাথি! আপনি চলে যান বলে আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যাচ্ছে।
– রাইসার কথাগুলো শুনে কথার খুব কষ্ট হচ্ছে। কথা হাটুগেড়ে মাটিতে বসে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল’ মারে তোর অসভ্য মা টা যে এখনো তার বাবাকেই ভালবাসে। তোর বাবা যে তোর মায়ের প্রতিটি শ্বাসঃপ্রশ্বাসে। তুর বাবা যদি আজ বিয়ের কার্ড দেখে, আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে আমাকে বুকে টেনে নিত তাহলে সব ভুলে যেতাম। জানিস মা তুই বড় হলে বুঝবি তোর মা নিজের চোখে দেখা জিনিস কিভাবে অবিশ্বাস করে। এক মেয়ের জীবন বাচাঁতে তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে নিজেকে কুরবাণি দিয়েছে।
-কথা বাসায় আসার পর বারবার রাইসার কথাগুলোই কানে বাজতে লাগল। কীভাবে ভুলে থাকবে রাজকে। রাইসা আর রাজ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।
– যে জীবনে রাজকে পাবো না। সে জীবন রাখব না। রাজ যদি আমায় সত্যি ভালবাসে তাহলে বিয়ে ভাঙতে অবশ্যই আসবে। সে সাথীকে বিয়ে করবে না। এই জন্যই রাজ আর সাথির বিয়ের দিন আমার আর আকাশের বিয়ে ফিক্সড করেছি। এদিকে দেখতে দেখতে শুক্রবার এসে গেল। আজকের এই রাতটা পেরলেই শুক্রবার।
কথার ঘুম আসছে না। বারবার রাজের ছবিটাই ভেসে উঠছে চোখের সামনে। রাত্রে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে খেয়াল নেই। স্বপ্নে দেখে রাজ কার্র একসিডেন্ট করে মারা গিয়েছে। কথা স্বপ্নের মাঝেই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে।
– ঘুম ভেঙে দেখে সে দুঃস্বপ্ন দেখেছে।কিন্তু তার এমন লাগছে কেন?
– হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে উঠল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ভোর পাঁচটা বাজে। এতসকালে আবার কে আসল?কথা মনে মনে রাজ নিশ্চয় এসেছে। এভেবে যখনি দরজাটা খুলে। দরজা খুলেই দেখে সাথি।
– তুমি আসছ কেন? আর কি চাও। আপনার নাকি আজ বিয়ে?
– হুম কেন কোন সমস্যা? আজ তো তোমারো বিয়ে।
– মানে আমার বিয়ে কার সাথে?
– কেন রাজের সাথে।
– নাহ্ আপু রাজ ভাইয়া আমাকে তার বাসা থেকে আপনি আসার পরপরই বের করে দেয়। আপু আপনি এ বিয়ে করবেন না। রাজ ভাইয়া আপনাকে সত্যি ভালবাসে।
– এ কথা বলে সাথি কথার দু’ পা ঝাপটে ধরে বলে ‘ আপু আমাকে মাফ করে দেন। আপনাদের পবিএ ভালবাসা ভাঙার জন্য। আমাকে রাজ ভাইয়া কিছু করেনি। আমি আপনাদের সাথে, রাজ ভাইয়ার সাথে মিথ্যা ভালবাসার অভিনয় করেছি। এ ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। আমার স্বামীকে বাচাঁনোর এই একটি মাএই পথ খুলা ছিল। আমার স্বামী আইসিইউতে যখন ঠিকমতো

– চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনতেছিল।

চলবে””””’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here