রক্তের বন্ধন Part_18

0
724

রক্তের বন্ধন
Part_18

-তুমি কি সত্যিই সাথিকে ভালবাসো?
– হ্যাঁ ভালবাসি। আপনি যদি, সাতমাসের বাচ্চা রেখে বিয়ে করতে পারেন?তাহলে আমি কেন ভালবাসতে পারবো না?
– রাজ চুপ আর বলো না। তোমার কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে নিজ হাতে খুন করো, তবুও ছেড়ে যেয়ো না।
-ছিঃ স্বামী রেখে এসব বলতে লজ্জা করে না?
– কে আমার স্বামী? আমার স্বামী তুমি। প্লিজ আমায় একটু বুকে নাও। আমার ধমঃবন্ধ হয়ে আসছে! এই কথা বলে কথা যখনি আমাকে জড়িয়ে ধরতে আসল।
– ঠাস-ঠাস করে দু’গালে চারটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম! সুন্দর গালে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে!
– চোখের কাজলগুলো লেপ্টে গেছে! টপটপ করে পানি পড়ছে। তুমি আমায় আরো মারো। মারতে মারতে মেরে ফেল। তবুও আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না। আর হ্যাঁ আকাশ আমার স্বামী না। তোমাকে মিথ্যা বলেছি। কি করবো, তুমি আমার সামনে অন্য মেয়ের সাথে ওভাবে কথা বলবে আমি সহ্য করতে পারি না।
– প্লিজ মিথ্যা বলবেন না। আমি আর কোন ড্রামা দেখতে চায় না।
– রাজ বিশ্বাস করো, আমি কাউকে বিয়ে করিনি।
– তাহলে বিয়ের আসরে বউ সেজে বসেছিল কে? অফিসে কার স্বামীকে নিয়ে এসেছিলেন? কেন আপনাকে সুইর্ট হার্ট ডাকবে? নাকি আকাশ সাহেব আপনার যৌবনের চাহিদা মেটাতে পারে না?
– রাজ প্লিজ চুপ করো! আমি তোমাকে সত্যি অনেক বেশি ভালবাসি। সে ভালবাসার কসম দিয়ে বলছি! আমি বিয়ে করিনি। তাহলে শুন,
– তোমাকে যখন ডির্ভোস দেয়। তখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি। তাই ভেবেছিলাম তোমার ভালবাসার যে ফসলটা আমার গর্ভে তিল তিল করে বড় হচ্ছে তাকে নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবার মুখে যখন শুনলাম, আমার মৃত বাচ্চা হয়েছে। তখন বাচাঁর ইচ্ছাটাই মরে যায়। কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে মরতে পারিনি।
– একদিন বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায়। ডাক্তার বলছে বাবা আর হয়তো বাঁচবে না। তাই বাবার কথা মতো তারই বন্ধুর ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। জানো সেদিন সারারাত তোমার ছবি নিয়ে কেঁদেছিলাম। তোমার ছবিটা এখনো আমার বুকে অাগলে রাখি। এই দেখ তোমার ছবি এই মেডেলে। সেদিন সারারাত তোমার ছবিটার সাথে কথা বলছি। বলছি কেন আমার সাথে তুমি এমন করলে। তুমি কি একটি বারো আমার কথা ভাবলে না। তোমার ছবিটা সেদিন কোন কথা বলেনি আমার চোখের জল দেখে।
– যেদিন বিয়ে, সেদিন কাজের লোককে অনেকগুলো টাকা দিয়ে, একপাতা সিপ্লিং পিল নিয়ে এসেছি! বিয়ের আসরে হাত ভর্তি সিপ্লিং পিল নিয়ে বসে আছি! হঠাৎ, জুঁই এসে বলল তুমি আসছো। আমি তোমার সামনে যেতে চাই নি। কিন্তু মরার আগে শেষবার তোমার মুখটা দেখার জন্য , যখন বিয়ের আসর থেকে তোমার সামনে যায় তখন তোমার ছলছল চোখ দুটি একবার বলছিল আমায় তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
-কিন্তু তখনি, তোমার সে সব কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায়, সারারাত গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে পতিতালয়ে রাত কাটানোর কথা। নিজেকে খুব অসহায় মনে হতো, কারণ অন্তসত্ত্বা থাকায় তোমাকে খুসি করতে পারতাম না। তুমি বলনি একবারো যে তুমি কেন পতিতালয়ে গিয়েছিলে। সাথে বাবার শপথ তার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে না করলে’ তার মরা মুখ দেখা!
– তাই নিজের মরণটাই বেচেঁ নিয়েছিলাম। তুমি যেন আমাকে আরো ঘৃণা করো তাই তোমার গায়ে হাত তুলে ছিলাম! সেদিন বুকের ভেতরটা অজানা কষ্টে ছেয়ে যায়!
– তুমি সেদিন আমার বিয়ের সাজটাই দেখেছিলে। মেহেদী রাঙা, আলতা পরা পা’টাই দেখেছিলে। কিন্তু বুকের ভেতরটা দেখতে পারনি!
– চোখের পানি মুছে বিয়ের পিড়িতে বসছিলাম। ভেবেছিলাম যখন বর আসবে তখনি পিল গুলো খেয়ে নিবো। যে মুখে তোমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। সে মুখে অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারব না। বউ সেজে পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে বিয়ের সাজে, সাদা কাফন পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
এমন সময় খবর আসল, যে গাড়ি করে বর আসছিল সে গাড়ি একসিডেন্ট করেছে! বিয়ে বাড়িতে মুহূর্তে শোকের ছায়া নেমে আসে।
– পরে শুনি অপয়া মেয়েকে তারা বিয়ে করাবে না। খবরটা শুনে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দ হয়েছিল। পরে শুনেছি ছেলেটা মারা গিয়েছে!
– তারপর মাস খানেক পর বাবাও স্টোক করে মারা যায়। তোমাকেও অনেক খুঁজছি কিন্তু পায়নি।
– দু’বছরের জন্য বিদেশ চলে যায়। দিনগুলো তোমার স্মৃতি নিয়েই কাটছিল।
-বিদেশ থেকে এসে বাবার ব্যবসার প্রতি মনোযোগী হয়। একদিন হঠাৎ ভাইবা বোর্ডে তোমাকে দেখে, বুকের ভেতরটা কেমন কেঁপে ওঠে। খুব করে মন চাচ্ছিল তোমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিতে। বুকের ভেতর জমানো কষ্টগুলো প্রকাশ করতে। কিন্তু পারিনি। তোমার প্রতি ঘৃণাটা যে তখনো ছিল। তুমি যে আমায় পেয়ে সুখী ছিলে না।
-তোমাকে সবসময় কাছে কাছে রাখতে, তোমার সাথে চুক্তি করি। মনে মনে স্থির করি, তুমি যদি একবার বলতে সব ভুলে নতুন করে শ কিন্তু জানি না আমি এতটা কষ্ট পাবো। তুমি যখন সাথির সাথে কথা বলতে, তখন আমি সহ্য করতে পারিনি।
তুমি যখন সাথির সাথে কথা বলতে, তখন আমি সহ্য করতে পারিনি। আমার বুকের ভেতরটা ফেটে যেত। তুমি কি একটিবারো বুঝনি কেন তোমায় সাথির সাথে থাকতে না করতাম। আমি তোমাকে ঘৃণা করলেও তার চেয়ে বেশি ভালবাসি। তুমি একটি বার যদি বলতে তাহলে সবছেড়ে তোমার কাছে চলে আসতাম। খুব করে চেয়েছি, তুমি একটিবার বলবে আমাকে তুমি ভালোবাসো।
.
জানো যেদিন রাইসা তোমাকে বাবা বলে ডাকলো। সে ডাকটা একবারে আমায় কলিজাতে লেগেছিল। আমি সেদিন সারারাত কেঁদেছিলাম। আমি তো তোমাকে ছাড়া কাউকে গ্রহণ করতে পারিনি। তুমি কেমনে পারলে। জানো তোমার আর সাথীর নষ্টি-ফুষ্টির জন্য, আমি আকাশকে স্বামী সাজিয়ে নিয়ে আসি। যেন তুমি আমাকে ভালোবাস। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি আকাশ তোমাকে লাথি মারবে। সরি সেদিনের জন্য। প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিয়ো না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমি আমার মেয়েকর চাই। চাই তোমার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে।
– কথা কাঁদছে! অন্যদিকে করুণ দৃষ্টিতে সাথি আমার দিকে চেয়ে আছে। রাইসা সাথিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেছে।
– জানি না কি করব আমি। কিভাবে বাবা-মায়ের হত্যাকারীকে বুকে জড়িয়ে নিব।
– কথা আমায় ক্ষমা করে দাও তোমাকে মেনে নেওয়া আমার সম্ভব না।
– কেন সম্ভব না? তুমি বিশ্বাস করো আমি পবিএ। তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।
– কথাকে কীভাবে বলব! যে তোমার বাবাই আমার বাবা- মায়ের হত্যাকারী।
– তাই, কথাকে বললাম আমি তোমাকে নয় আমি ভালবাসি সাথিকে!
– না আমি বিশ্বাস করি না, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমার চোখ বলছে তুমি মিথ্যা বলছ। রাজ তোমার পায়ে পড়ি। বল তুমি মিথ্যা বলছ।
-না আমি সত্য বলছি।
– প্লিজ এভাবে বল না। তোমার পায়ে পড়ি। কথাটা বলে যখনি কথা পা ধরতে আসবে তখনি’ গালে কষে থাপ্পর লাগিয়ে দিলাম!
– কি লজ্জা করে না। এসব বলতে। কোন খুনীর মেয়েকে বউ হিসেবে আমি মানতে পারব না।
– খুনী মানে?
– হ্যাঁ খুনী! তোমার বাবার জন্য আজ আমি এতিম। তোমার বাবার জন্য আমি পতিতালয়ে বড় হয়েছি। আর কী চাও তুমি?
– রাজ, মা তোমায় সব বলেছে তাহলে? মা বলেনি যে আমি তোমায় ভালবাসি?মা কোথায়?
– মা আর বেঁচে নেই! আর আপনাকে একটা কথা বলি। আমি বিয়ে করলে সাথিকেই করব। সাথিকে কাছে টেনে নিলাম। কথা ঠাস করে পায়ে পড়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, তুমি আমাকে আজ নিজ হাতে হত্যা করবে নয়ত। আমাকে বুকে টেনে নিবে। আমি যদি বুকটা চিঁড়ে দেখাতে পারতাম তাহলে বুঝতাম কতটা ভালবাসি তোমায়! প্লিজ আর কত কষ্ট দিবে আমায়? তুমি আমাকে একবেলা খেতে দিয়ো। আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকারো চাইবো না। শুধু রাইসার মুখে মা ডাকটা শুনতে চাই।
– বাবা দেখ কাঁদছে। বাবা তুমি না আমার বাবা ক্ষমা করে দাও না। বাবা আমার মমকে ক্ষমা করে দাও!
– কথাকে পায়ে থেকে তুলে যখনি বুকে নিতে যাবো। তখনি, জুথি দৌঁড়ে রুমে আসল। ভাইয়া ‘ আমার স্বামী অবস্থা খুব খারাপ। জুথির সাথে সাথে ডাক্তার ও রুমে ঢুকল।
– মিঃ রাজ আপনি আসেন আমাদের সাথে।
– ডাক্তার রুমে নিয়ে গিয়ে যা বলল তা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আপনার অপারেশন আজই করতে হবে। তবে আপনি যে কিডনী ডুনেট করবেন এতে আপনার জীবন।

——–চলবে?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here