#রং_তুলির_ক্যানভাস
#দ্বিতীয়_খন্ড
#পর্ব_২
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
“এই রাত আমাদের দু’জনের জন্যই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমি হয়তো আপনাকে মন থেকে এখনো ভালোবেসে উঠতে পারিনি। কিন্তু মন থেকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি। আজ থেকে আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমার কাছে আসার জন্য আপনাকে ইতস্তত বোধ করতে হবে না আফসান।”
সদ্য ঘরে পা রেখে এমন কিছু শুনতে হবে তা হয়তো আফসান ভাবেনি। সে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
“তুমি ঠিক আছ?”
বিছানা থেকে নেমে আসে জোহা। আফসানের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দেয়,
“হুম ঠিক আছি। দেখুন, আমি আর পাঁচ জন মেয়ের মতো ন্যাকামি করে বলব না যে আমার সময় প্রয়োজন। আমি নিজেকে যথেষ্ট প্রস্তুত করেই বিয়েতে রাজি হয়েছি। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি আমরা। প্রত্যেকটা স্বাভাবিক দম্পতির মধ্যে যে সম্পর্ক হওয়া দরকার তা মেনে নিতে আমার দ্বিধা নেই।”
“তুমি এসব কেন বলছ? আমি তো এসব নিয়ে তোমাকে জোর করিনি।”
“জোর করবেনই বা কেন? আমাকে জোর করার কোনো প্রয়োজন নেই।”
আফসান জোহার হাত ধরে তাকে বিছানায় বসিয়ে শান্ত হতে বলে। দুই হাতের মুঠোয় জোহার এক হাত নিয়ে বলে,
“আমি জানি তুমি কেন এসব বলছ। তোমার মতো প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের থেকে এটাই আশা করা যায়। আমি তোমার এমন চরিত্রে মুগ্ধ। কিন্তু আমি এখনই তোমাকে নিজের করে নিতে চাই না। কারণ, এখনো তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারোনি। শুধুমাত্র হক আদায়ের জন্য আমার কাছে আসতে চেয়ো না। আমি চাই, তুমি ভালোবেসে আমার কাছে এসো।”
জোহা মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনে চুপচাপ বসে থাকে।
“যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে। আমি তোমার জন্য খাবার আনছি। খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো।”
নিজের শরীরে থাকা গহনাগাঁটি খুলে একপাশে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি পাল্টে একটা জামা পড়ে নেয় জোহা। তন্মধ্যে আফসান খাবার নিয়ে আসে। নিজ হাতে খাইয়ে দেয় প্রিয়তমা স্ত্রী’কে।
“আপনি খেয়েছেন? গভীর রাতে না আপনার ক্ষুধা লাগে?”
“তুমি কীভাবে জানলে?”
“প্রায় সময় আপনাকে খাবার খেতে দেখেছি এই সময়।”
“এত রাত অবধি জেগে থাকতে?”
“ঘুমাতে ইচ্ছা করত না।”
“আজও ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না?”
“আজ অবশ্য ঘুম পাচ্ছে।”
“তাহলে ঘুমাও।”
“আগে আপনি খেয়ে নিন।”
“আচ্ছা।”
খাওয়ার পর্ব শেষে জোহা আবদার করে,
“আজ যদি না ঘুমিয়ে আমরা একে-অপরকে জানতে চাই তাহলে কি খুব সমস্যা হবে?”
“একটু আগেই না বললে তোমার ঘুম পাচ্ছে?”
“তা পাচ্ছে একটু একটু। কিন্তু একটা রাত জাগলে কিছু হবে না।”
“কথা বলার জন্য অজস্র সময় আছে। আজ বিশ্রাম নাও।”
জোহা কথা বাড়ায় না। লক্ষ্মী মেয়ের মতো শুয়ে পড়ে বিছানার একপাশে। সে ঘুমিয়ে গেলে আফসান গভীরভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করে। ঘুমালে তাকে কতোটা শান্ত লাগে। কিন্তু জাগ্রহ সে কতোই না চঞ্চল। একই দেহে কতগুলো রূপ তার!
আনমনা এসব ভেবে আফসান জোহার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
রাত বাজে দুইটা। এমন সময় শান মৃত্তিকাকে বাড়ির পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
“কেন করলে এমন? সবকিছু জেনেও কেন চুপ করে ছিলে? আমাকে মিথ্যা বলেছ কেন? কেন সবার আড়ালে জোহার সাথে যোগাযোগ করেও তা স্বীকার করোনি আমার সামনে?”
“যা করেছি সব আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর ভালোর জন্য করেছি।”
“ভালো? কোনটা ভালো? একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে বিয়ে করা ভালো?”
“আপনাকে কে বলল জোহা এখনো রাফান ভাইয়াকে ভালোবাসে?”
“সত্যিকারের ভালোবাসা কয়েক মাসে গায়েব হয়ে যেতে পারে না মৃত্তিকা।”
“ভালোবাসা? সে তো অনেক আগেই গায়েব হয়ে গিয়েছে। রাফান ভাইয়া মুখে যতই ভালোবাসি ভালোবাসি বলুক। আসলে সে জোহাকে কেবল ব্যবহার করেছে।”
“এসব কী বলছ তুমি?”
“ভুল কিছু তো বলিনি। দিনের পর দিন ভালোবাসার নামে যে অ ত্যা চার সে জোহার সাথে করেছে তারপরেও সে কীভাবে আশা করে ওকে ফিরে পাওয়ার?”
“প্রত্যেকটা সম্পকেই ঝামেলা থাকে। আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুমি জোহার ভালোই চাও না। মেয়েটা সুখে থাকুক সেটা তুমি চাও না। নিজে ভালোবাসতে পারোনি বলে অন্যের ভালোবাসা দেখলেও কষ্ট হয় তোমার তাই না?”
“শান!”
মৃত্তিকার চোখে পানি টলমল করছে। কেন বারবার তার দুর্বল জায়গায় আ ঘা ত করে ছেলেটা? পুরোনো কথা কেন ভুলতে পারে না সে? মৃত্তিকা তো চায় সব ভুলে যেতে। কিন্তু শান! সে হয়তো কিছুই ভুলতে চায় না।
“এই মেয়ে এই কান্না বন্ধ করো। একদম কাঁদবে না।”
মৃত্তিকা নিজের কান্নাগুলোকে গিলে ফেলে নিজের মাঝে। না, সে কাঁদবে না। শানের কথায় তো একদমই কাঁদবে না।
“আপনি বরাবরই আমার দুর্বল জায়গায় আ ঘা ত করেন শান। ভালো হয়েছে আমি আপনাকে ভালোবাসিনি। আপনার মতো ছেলেকে ভালোবাসা যায় না। বন্ধু হিসেবে হয়তো আপনি সেরা। কিন্তু প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ। আপনি শুধু অন্যকে কষ্ট দিতে ভালোবাসেন। তবে কি জানেন, সবাই আপনার মতো নয়। আমি জোহাকে কতোটা ভালোবাসি তা আমি জানি। আপনার এসব না জানলেও চলবে। আপনি যেমন প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ, তেমনই ব্যর্থ আপনার বন্ধু। আপনারা কেবল মেয়েদের কষ্ট দিতে ভালোবাসেন। ভালোবাসতে জানেন না।”
আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না সে। দ্রুত পা ফেলে সেই স্থান ত্যাগ করে মৃত্তিকা। পেছন থেকে শান বেশ কয়েকবার ডাকলেও সে একবারের জন্য ফিরে তাকায় না।
নিজের মা থা র চুলগুলো টেনে ধরে রাগে ফুঁসতে থাকে শান। আবারো একই ভুল করল সে।
“আহ্ শান! বারংবার একই ভুল কেন করিস তুই? আসলেই তুই একটা লুজার। কিচ্ছু হবে না তোর দ্বারা।”
নিজেকে আঘাত করেও যেন শান্ত হতে পারে না শান। একটা সময় বন্ধুর সম্পর্ক বাঁচাতে গিয়ে নিজের সম্পর্ক বিসর্জন দিয়েছিল সে। অথচ সেই বন্ধু নিজেই নিজের ভালোবাসা আগলে রাখতে পারেনি।
ভোর হতে চলল, তবুও চোখে ঘুম নেই রাফানের। একের পর এক সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে সে। এই সিগারেটও আজ তাকে ভালো রাখতে পারছে না। রাগে, দুঃখে জ্ব ল ন্ত সিগারেট দূরে ছুঁড়ে মে রে রাস্তার মাঝে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে রাফান। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সে।
“কেন আফসান কেন? কেন তুই আমার জীবন থেকে আমার ভালো থাকার সকল কারণ কেঁড়ে নিস? সবার সামনে গলা উঁচু করে বলিস আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। অথচ আমার সুখ তুই সহ্য করতে পারিস না। বাকি সবকিছু বাদ দিলাম। শেষে কিনা আমার ভালোবাসার মানুষটাকেও কেঁড়ে নিলি তুই। আমি জোহাকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমার যে কষ্ট হয় তা হয়তো তুই বুঝে গিয়েছিলি। তাই জোহাকেও আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিলি। আজ তোরা এক ঘরে একসাথে আছিস৷ হয়তো একই বিছানায় একে-অপরের খুব কাছে আছিস। এসব ভাবলেও যে আমার দম বন্ধ লাগে!”
চলবে??
বিঃদ্রঃ এতদিন গল্প চেয়ে চেয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন। আর যখন আমি গল্প নিয়ে এলাম তখন একটা লাইক দিতেও এত কষ্ট হচ্ছে আপনাদের? কাদের জন্য এত কষ্ট করে লিখি তবে?