রং তুলির ক্যানভাস ২য় খন্ড পর্ব ৭

0
81

#রং_তুলির_ক্যানভাস
#দ্বিতীয়_খন্ড
#পর্ব_৭
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

সূর্য অস্ত গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। আকাশে চাঁদের দেখা মিলেছে। চারপাশটা হিমশীতল হয়ে আছে। এর মাঝে খোলা এক মাঠের একপাশে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আফসান এবং রাফান। দু’জনের চোখেই রাগের আভাস মিলেছে।

“কেন করলি এমন?”

রাফানের এমন প্রশ্নে আফসান পাল্টা প্রশ্ন করে,

“কী করেছি?”

“তুই জানতিস না যে আমিই জোহার প্রাক্তন?”

“হ্যা, জানি। তবে বিয়ের পর জেনেছি।”

“মিথ্যা বলছিস তুই।”

“মিথ্যা বলে আমার লাভ?”

“আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় জিনিসগুলো ছিনিয়ে নেওয়ায় তো তোর কাজ।”

“ভুল করছিস রাফান। আমি যা পেয়েছি তা নিজের যোগ্যতায় পেয়েছি। কারোর থেকে ছিনিয়ে নেইনি।”

“ওহ্ তাই? তাহলে জেসিয়াকে কে বলেছিল আমি অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে আছি?”

“আমিই বলেছি। মিথ্যা তো বলিনি। তুই তো জেসিয়ার আগেও অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে ছিলি। এমনকি ওকে ঠকিয়ে জোহার কাছে এসেছিস। তুই তো কখনো এক নারীতে আসক্ত থাকতেই পারিসনি।”

“ভাই সত্যি করে বল তো, কীসের শোধ নিচ্ছিস তুই আমার উপর? জেসিয়ার কথা বাদ দিলাম। কিন্তু জোহা? আমি জোহাকে অনেক ভালোবাসি। ওকে কেন কেঁড়ে নিলি?”

“আমি ওকে কেঁড়ে নেইনি। জোহা তোকে ভালোবেসেছিল রাফান। কিন্তু তুই ওকে আগলে রাখতে পারিসনি।”

“সেই দায়িত্ব তুই নিলি?”

“ধরে নে তাই।”

আচমকা রাফান আফসানের শার্টের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে,

“আমি জোহাকে ভালোবাসি।”

আফসান আলতো হাতে রাফানের হাত নিজের শার্টের কলার থেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর শান্ত স্বরে বলে,

“দেখ তুই যেটাকে ভালবাসা বলছিস সেটা ভালোবাসা নয়। সারাক্ষণ একজনকে অবিশ্বাস করা, কারণে-অকারণে সন্দেহ করা, প্রতি মুহূর্তে ঝামেলা করা, এসব ভালোবাসা নয়। এসব কেবল পাগলামি। জোহাকে ভালো থাকতে দে। ওর জীবন থেকে সরে যা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জোহা আমার স্ত্রী।”

“যদি বলি আমি ওকে ছাড়ব না?”

“ছাড়ার প্রশ্ন তো অনেক পরের বিষয় রাফান। আপনি তো আমাকে কখনো ধরেই রাখতে পারেননি।”

জোহার কণ্ঠ শুনে সামনে তাকায় রাফান। হ্যা, সামনে জোহা দাঁড়িয়ে আছে। রাফান এগিয়ে যায় সেদিকে। জোহাকে দেখে প্রশ্ন করে,

“তুমি এখানে কী করছ?”

“কেন? আমাকে দেখে অবাক হলেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি জানি আফসানকে আপনি এখানে কেন ডেকেছেন। আপনি ওকে আমাদের বিষয়ে সবকিছু বলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে তো আগে থেকেই সব জানে। আর একটা কথা কি জানেন? আপনি চাইলেও আপনার জীবনে আমি আর কখনোই ফিরব না। বিয়ের সিদ্ধান্ত আমি একদিনে নেইনি। সম্পর্কে থাকাকালীন অনেকবার সুযোগ দিয়েছি আপনাকে। কিন্তু আপনি! জেসিয়ার কথা তো সেদিন জানলাম। তবে লিজার সাথে আপনার ব্যক্তিগত কিছু ছবি আগেই দেখেছিলাম। এমন চরিত্রহীন ব্যক্তির সাথে আদৌও সংসার করা যায়?”

রাফানকে চুপ থাকতে দেখে জোহা পুনরায় বলে,

“আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না রাফান। আপনি আমার ভালোবাসার যোগ্য নন। আপনি যদি আমাকে ভালোবাসেন তবুও আমি আপনাকে আর চাই না। আমি এখন অন্য একজনের স্ত্রী। আমি আফসানের সাথে ভালোভাবে সংসার করতে চাই। দয়া করে আমাদের মাঝে কোনো ঝামেলা তৈরি করার চেষ্টা করবেন না।”

“জোহা!”

রাফানের চোখে কিঞ্চিৎ পানির কণা দেখে জোহা অবাক হয় না। বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলে,

“আপনার জন্য একটা চমক আছে।”

“কীসের চমক?”

“সামনে এসো জেসিয়া!”

জেসিয়ার নাম শুনে চকিত দৃষ্টিতে রাফান জোহার দিকে তাকায়। জোহার পাশে সোনালী চুলের এক বিদেশিনীকে দেখে চোখ আটকে যায় তার। এই তো সেই মেয়ে যাকে ঠকিয়ে সে জোহার কাছে এসেছিল। অথচ আজ তার পাশে জোহা নেই।

জেসিয়া ধীর পায়ে রাফানের দিকে এগিয়ে আসে। রাফানের মুখে হাত রেখে বলে,

“কেন চলে এলে আমায় রেখে? একবারও কি আমার কথা মনে পড়েনি তোমার? আমি যে তোমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি রাফান।”

রাফান কিছু বলছে না দেখে জোহা বলে ওঠে,

“আজ চুপ করে আছেন কেন? মেয়েটা আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। উত্তর দিন তার প্রশ্নের।”

“নেই, কোনো উত্তর নেই আমার কাছে!”

“এরিয়ে যেতে চাচ্ছ আমায়? এতগুলো বছর আমি তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম। তোমার খোঁজ করেছিলাম। তখন জানতে পারি, তুমি অন্য কাউকে নিয়ে ভালোই আছ। একবার দাঁড়াতে চাইলাম তোমার মুখোমুখি। কিন্তু কোথাও গিয়ে মনে হলো, তোমাকে তোমার মতো করেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। আফসান আর জোহার কথাতেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। এতদিন যা জানতে চাইনি সেটা আজ জানতে চাইছি। তুমি কি সত্যিই আমাকে কখনো ভালোবাসোনি?”

রাফান মা*থা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছেও অজানা।

“সে উত্তর দিতে পারবে না। কারণ এই ছেলে তো কাউকে ভালোবাসতেই জানে না। ওর কাছে সবকিছুই মজা। কোনোকিছুকে সে সিরিয়াস ভাবে নিতে পারে না।”

জোহার কথায় রাফান লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,

“আমি জানি না কখনো জেসিয়াকে ভালোবেসেছি কি না, কিন্তু এটুকু জানি আমি জোহাকে ভালোবেসেছি।”

“ওহ্ তাই? তাহলে আমার একটা কথা রাখুন। আপনি যদি আমাকে শুধুমাত্র এক মুহূর্তের জন্য হলেও ভালোবেসে থাকেন তাহলে জেসিয়াকে কাছে টেনে নিন৷ ওর সাথে সুখী হন। মেয়েটা আপনাকে আজও ভীষণ ভালোবাসে। এই ভালোবাসাকে হারাতে দিবেন না রাফান। অনেক তো হলো ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা। এবার নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিন।”

“না, আমি রাফানের সাথে এখানে সংসার করতে আসিনি। আমি শুধু ওকে এটুকু বলতে এসেছি যে অন্যকে কাঁদালে নিজেকেও একদিন কাঁদতে হয়। যে অসহ্য যন্ত্রণা তুমি আমাকে দিয়েছ আজ পরিস্থিতি তোমাকেও সেই একই যন্ত্রণার সামনে দাঁড় করিয়েছে। আমি আমার জীবন নিয়ে ভালো আছি। তোমার মতো একজনকে আমি ফিরে পেতে চাই না। তোমার জন্য এটাই ভালো হবে, সারাজীবন কষ্ট পেয়ে যাও। অনেক তো অন্যকে কাঁদালে। এবার তোমার পালা!”

রাফান কিছুই বলতে পারছে না। আসলে বলার মতো কোনো ভাষা সে খুঁজে পাচ্ছে না। সত্যিই তো সে সবাইকে কষ্ট দিয়েছে। তাই হয়তো প্রকৃতি আজ তাকে সেইসব ফিরিয়ে দিচ্ছে।

“জানি তুমি ভালো থাকতে পারবে না। তবুও বলছি, ভালো থেকো। আমি তোমার চোখের এই পানি সামনে থেকে দেখার জন্যই বাংলাদেশে এসেছিলাম। এখানে থাকার আর কোনো প্রয়োজন নেই আমার। আসি!”

চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছে চলে যায় জেসিয়া। পাশে নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে আফসান এবং জোহা। জোহা রাফানের দিকে একবার তাকিয়ে কোনোকিছু না বলে আফসানের হাত ধরে চলে যায়। থেকে যায় শুধু রাফান। নিজেকে সামলাতে পারছে না সে। দুই হাঁটু গেড়ে মাটির উপর বসে অঝোরে কাঁদে সে। দুই দিনের আনন্দের জন্য তার পুরো জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেল। বারবার সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলল। হয়তো বাকিটা জীবন এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেই তাকে বাঁচতে হবে।

চলবে??

বিঃদ্রঃ জেসিয়ার সাথে সবার ইংলিশেই কথা হয়েছে। কিন্তু গল্পে বাংলিশ লিখতে চাইনি। তাই সবার কথাগুলো বাংলাতেই লিখেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here