রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৮+৯

0
392

#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_৮
#নবনী_নীলা

আদিল মৃদু হেসে বলল,” আমি তো ভিতরেই ছিলাম।” কিন্তু সেই মৃদু হাসির মাঝে হালকা দুষ্টুমির ছাপ দেখে শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা।

” ভিতরে ছিলেন মানে? আপনি এতক্ষণ তাহলে….”, বলতে বলতে লজ্জায় থেমে গেলো সে। শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে মুষ্টিবন্ধ করে ফেললো। এবং সারা শরীরে এক শীতল শিহরণ অনুভব করলো।

আদিল এগিয়ে এসে ফিচেল গলায় বলল,” হুম্, আমি এতক্ষন তোমাকেই দেখছিলাম।”

স্নিগ্ধা রাগে দাতে দাত চেপে বলল,” অসভ্য।”

আদিল বুকের কাছে হাত ভাজ করে বললো,” আচ্ছা আমি অসভ্য? আর তুমি যে আমার সামনে শাড়ি বদলে নিলে তার বেলায়?”

স্নিগ্ধা নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। আদিলের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো তারপর কাপা কাপা বললো,” আমি কি দেখেছি নাকি যে আপনি ভিতরে ছিলেন।”

আদিল ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” হুম, আমিও তো বেলকনিতেই ছিলাম। এমন কিছু ঘটবে জানলে রুমেই থেকে যেতাম।”

স্নিগ্ধা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আদিলের দিকে তাকালো। বেলকনিতে ছিলো মানে? তাহলে কি কিছু দেখেনি। স্নিগ্ধা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” তার মানে আপনি মাত্র রুমে এসেছেন?”

আদিল এগিয়ে এসে ঝুকে স্নিগ্ধার চোখের দিকে তাকালো তারপর চাপা হাসি দিয়ে বললো,” তোমার কি মনে হয় এর আগে এলে, আমি নিজেকে সামলে নিতে পারতাম? এতটাও ডিসেন্ট হাসব্যান্ড তুমি পাও নি।”

স্নিগ্ধা চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর মনে মনে বললো,” হ্যা, সেটা তো ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি। অসভ্য লোক একটা।” আদিল মৃদু হেসে সোজা হয়ে দাড়ালো তারপর বললো,” জলদি রেডি হয়ে নাও।” তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আদিল চলে যেতেই স্নিগ্ধা বুকে হাত রেখে সস্থির নিশ্বাস ফেললো।

_________

স্নিগ্ধাকে বাড়িতে দেখে স্পৃহা খুশিতে আত্মহারা। মামা বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে পুরো ঘটনাটা জানতে পেরেছে। আদিল অভ্র আর স্নিগ্ধাকে বাড়িতে ড্রপ করে গেছে। যদিও আয়েশা খাতুন তাকে রাতে ফিরতে বলেছেন।

অভ্র ফরিদার সাথে খেলতে ব্যাস্ত। স্পৃহা সূযোগ পেয়ে স্নিগ্ধাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো তারপর নিজের সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা তুই কি করে এমন সুন্দর একটা জামাই পেলি বলতো? সবাই তো বলছে তোদের নাকি আগে প্রেম ছিল। আসলেই কি প্রেম করেছিস? আমাকে তো বললি না।”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,” হ্যা আমার তো মাথা খারাপ যে আমি ওনার সাথে প্রেম করতে যাবো।”

স্পৃহা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” নাহ্, তুই মিথ্যে বলছিস। আপু বল না।”

স্নিগ্ধা মলিন চোখে তাকিয়ে রইলো। কি যন্ত্রণায় পড়া গেলো। স্নিগ্ধাকে স্পৃহা আরো বললো,” যাই বলিস। এমন সুন্দর মতোন জিজু পেয়ে আমি কিন্তু অনেক খুশি। কালকে সেতু আর মিলা আসবে। জিজুকে দেখতে।”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বললো,” দেখতে আসবে মানে? উনি কি শোপিস যে দেখতে আসবে?”

স্পৃহা মিট মিট করে হেসে বলল,” কেনো তোর কি হিংসে হচ্ছে?”

স্নিগ্ধা এইবার কড়া চোখে তাকালো। স্পৃহা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,” আচ্ছা সরি। রাগ করিস না। কিন্তু ঐ বাচ্চাটা? বাচ্চা হয়ে গেলো কবে তোর? সবাই তো অবাক এমন খবরে।”

স্নিগ্ধা চুপ করে আছে। স্পৃহা বক বক করছে। মাঝে মাঝে সে ভাবে এরা কি করে আপন বোন হলো। দুজনেই দুজনের সম্পূর্ন বিপরীত। স্পৃহা বক বক করে আজ তার কানের বারোটা বাজবে সেটা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে সে।

আদিল শাশুড়ির কথা মতন রাতে এই বাড়িতে ফিরলো। স্নিগ্ধার বাবা এতক্ষণ তার সাথে কথা বললেন। স্নিগ্ধার বাবার সাথে কথা বলে আদিল যা বুঝলো সেটা হলো লোকটা শান্ত সভাবের। তার মানে স্নিগ্ধার এমন চুপচাপ সভাব সে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।

আদিল কথা শেষে স্নিগ্ধার রুমে যাবে এই সময়ে স্পৃহা নীচে নামছিলো। আদিলকে দেখে থমকে গিয়ে বললো,” আপনি আবরার ফাইয়াজ মানে আমার জিজু?”

আদিল মাথা নেড়ে বললো,” হুম?”

স্পৃহা হেসে উঠে বললো,” আমি আপনার একমাত্র শালিকা।”

আদিল মনে করে বললো,” তোমার নাম স্পৃহা, রাইট? হুম শুনেছি। তা কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

স্পৃহা গাল ফুলিয়ে বললো,” নিচে যাচ্ছি। কি করবো বলুন? আপনার বউটা এতো পাজি। আমাকে রুম থেকেই বের করে দিলো। বলছে আমার কথা শুনে তার নাকি মাথা ব্যাথা করছে।”

স্পৃহার অভিযোগ শুনে আদিল হেসে ফেললো তারপর বললো,” আচ্ছা আমি তাহলে গিয়ে দেখে আসি।”

স্পৃহা নিচে নেমে যেতে যেতে বলল,” হ্যা, দেখে আসুন আর কষ্ট করে একটা মাথা ব্যথার ট্যাবলেট খাইয়ে দিবেন।” বলতে বলতে স্পৃহা নিচে নামলো।

জিম ড্রয়িং রুমে বসে নিজের কাজে ব্যাস্ত ছিল কিন্তু এই মুহুর্তে তার ভীষণ বিরক্তি লাগছে। এই বাড়ির কাজের মেয়ে ফরিদা চা নিয়ে এসে তখন থেকে আজে বাজে বক বক করছে। জিম সেসব কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। হটাৎ ফরিদা বললো,” আফনে অনেক সুন্দর। আমি টিভিতে সিআইডি দেখি ঐখানে লোকেরা এমন কোর্ট টাই পইরা থাকে।”

জিম এমন মন্তব্যে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। ফরিদার পিছন থেকে স্পৃহা বলে উঠলো,” তাই নাকি। ফরিদা আপা? কথাটা তো মাকে জানাতে হচ্ছে।”

ফরিদা ভুত দেখার মত করে পিছনে তাকালো। তারপর স্পৃহার কড়া দৃষ্টি চোখে পড়তেই সঙ্গে রান্না ঘরে ছুটে গেলো। জিম তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে এক পলক তাকালো তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো।

স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কে এই লোকটা পুরো সালমান খানের বডিগার্ড ছবির বডিগার্ড সেজে বসে আছে। পার্থক্য শুধু ফিগারটা নরমাল। স্পৃহা একটা ভ্রু তুলে বললো,” এই যে কে আপনি?”

জিম স্পৃহার দিকে না তাকিয়েই বললো,” আমি আবরার ফাইয়াজের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট।”

স্পৃহা চকিত হয়ে তাকালো। তারপর জিমের একদম সামনে বসে পড়লো তারপর বলল,” তার মানে আপনি সব জানেন?”বলেই জিমের সামনের ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে গেলো। জিম হতবাক হয়ে তাকালো। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,” এটা কি হলো?”

স্পৃহা ফিক করে হেসে বললো,” আপনি আমাকে আপু আর জিজুর লাভ স্টোরিটা বলুন। তারপর এইটা ফেরত পাবেন।”

জিম হতভম্ব এ কেমন বিপদে পড়তে হলো তাকে? জিম ভ্রু কুঁচকে বললো,” লাভ স্টোরি মানে?”

স্পৃহা মুচকি হেসে বললো,” লাভ স্টোরি মানে বুঝেন না?”

জিম হাত বাড়িয়ে স্পৃহার কাছ থেকে নিয়ে বললো,” না বোঝার কি আছে?”

স্পৃহা মিট মিট করে হেসে বললো,” তাহলে বলুন।”

জিম ল্যাপটপ অন করতে করতে বললো,” বলার মতন কিছুই নেই। প্রথম দেখায় প্রেম দ্বিতীয় দেখায় বিয়ে, তারপর গল্প শেষ।”

স্পৃহা হা করে তাকালো। এটা গল্প ছিলো নাকি এক কথায় প্রকাশ? স্পৃহা মনে মনে জিমকে বকা দিয়ে উঠে গেলো। এমন রোবট মানব সে এই জনমে দেখেনি।

স্নিগ্ধা রুমে বসে জিমের বলা কথাটা ভাবছে। সবটা মিলিয়ে বিষয়টা যা দাড়ালো সেটা হলো। আদিল সে রাতে একজনকে মেরেছে। হয়তো এর কোনো পুরনো হিস্টোরি আছে।

কিন্তু তাকে বাড়ি বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। তারমানে কেউ কি তার ক্ষতি করবে? কিন্তু কেনো কেউ তার ক্ষতি করতে যাবে। আর এই কয়েকদিনে কে এমন তার ক্ষতি করতে চাইবে। পুরো বিষয়টা বানোয়াট নয় তো? রহস্য কিছু তো আছেই। সেটা এতো সহজ না সে যতটা ভাবছে।

স্নিগ্ধার রূমের দরজায় টোকা পড়তেই সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। দশ মিনিট না যেতেই আবার চলে এসেছে স্পৃহা। নাহ্, এইবার সে দরজা খুলবে না। স্নিগ্ধা চুপ চাপ গিয়ে বিছানায় বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর আবার টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা ভিতরে থেকে বললো,” আবার কি জন্যে এসেছিস?”

কোনো উত্তর না দিয়ে আবার দরজায় টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে উঠে পড়লো। অকারণে ডেকেছে তো সত্যি মার লাগাবে স্পৃহাকে। কিন্তু দরজা খুলে স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকালো। আদিল তার সামনে দাড়িয়ে। আদিল স্নিগ্ধার ঘরে ঢুকে বললো,” আমি ভেবেছিলাম রাগটা শুধু আমাকেই দেখাও কিন্তু ভুল ভেবেছিলাম। তুমি তো দেখি সবাইকেই রাগের উপর রাখো।”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আদিলকে এখন তার রহস্য মানব মনে হচ্ছে। যার চারিপাশে রহস্যে ঘেরা। কিন্তু কোনোটাই স্পষ্ট নয়।

[ #চলবে ]

#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_৯
#নবনী_নীলা

আদিল তখন থেকে খেয়াল করছে তার কথায় স্নিগ্ধা কোনো কিছু বলছে না। মুখের সামনে একটা বই নিয়ে বসে আছে। আদিল হাত বাড়িয়ে ছো মেরে স্নিগ্ধার হাত থেকে বইটা নিয়ে বইয়ের নাম দেখতে লাগলো। স্নিগ্ধা ব্যাস্ত হয়ে এগিয়ে এসে বললো,” বই নিয়েছেন কেনো? আমার বই ফেরত দিন।”

আদিল বইয়ের নামটা পড়ে বললো,” বাহ্ নিজের বরকে রেখে দেখি মিসির আলী নিয়ে খুব ব্যাস্ত তুমি!আমাকে ইগনোর করছো কেনো?”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বললো,” আপনাকে ইগনোর করা কি সহজ কথা? আপনি হলেন মৌমাছি, মৌমাছিকে যেমন সহ্য করা যায় না তেমনি সরিয়ে দেওয়াও যায় না। আপনি হলেন সেই মৌমাছি।”

আদিল মৃদু হেসে বললো,” মৌমাছি ফুলের আশেপাশে ঘুর ঘুর করবে এইটাই তো স্বাভাবিক।”

স্নিগ্ধা দাতে দাত চেপে বললো,” আমার বইটা ফেরত দিন।” সব প্রশ্নের উত্তর থাকে এই ছেলের কাছে।

আদিল বইটা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,” তুমি কোনোদিন প্রেমের উপন্যাস পড়ো নি, তাই না?”

স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে তাকালো তারপর বললো,” আমি প্রেমের উপন্যাস পড়েছি কি পড়িনি তা দিয়ে আপনার কি?”

আদিল কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে বলল,” অবশ্যই আমার অনেক কিছু। প্রেমের উপন্যাস পড় নি বলেই তো আজ তোমার মধ্যে কোনো রোমান্টিসিজম নেই। ”

স্নিগ্ধার কথাটা ভীষন গায়ে লাগলো। স্নিগ্ধা এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে বইটা নেওয়ার আগেই আদিল এক হাতে বই রেখে উচুঁ করে ধরতেই স্নিগ্ধার রাগ হলো। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” শুনুন, আমার মধ্যে কি আছে আর কি নেই সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। বইটা ফেরত দিন বলছি।”

আদিল বইয়ের দিকে ঈশারা করে বললো,” নিয়ে নাও।” স্নিগ্ধা পড়লো মহা বিপদে। একেই এমন লম্বা তার উপর হাত উঁচু করে বই ধরে আছে।সে কি রাক্ষস যে হাত লম্বা করে বইটা নিয়ে আসবে। স্নিগ্ধা পায়ের পাতায় ভর দিয়ে বইটা আদিলের হাত থেকে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বই নেওয়ার চেষ্টায় স্নিগ্ধা আদিলের খুব কাছে চলে এসেছে। আদিল অপলকে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব কাছ থেকে দেখছে স্নিগ্ধাকে। স্নিগ্ধার অবশ্য সেই দিকে খেয়াল নেই, সে বই নিতে ব্যাস্ত। আদিলের মধ্যে কেমন একটা ঘোর কাজ করছে, সে আস্তে আস্তে স্নিগ্ধার কাছে ঝুকে আসতেই স্নিগ্ধার টনক নড়ল। বিস্ময় নিয়ে আদিলের দিকে তাকালো। স্নিগ্ধা কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিল তার ডান গালে গভীর ভাবে ঠোট ছুইয়ে দিলো।

স্নিগ্ধার থমকে গেলো। সঙ্গে যেনো তার চারিপাশ থমকে গেল। কি হয়েছে সেটা আন্দাজ করে মুখ হা হয়ে গেলো তার। চোখ বড় বড় করে আদিলের দিকে তাকাতেই আদিল মৃদু হেসে তাকালো। প্রতিবারের মতন এবারো শিউরে উঠলো সে। স্নিগ্ধার বিষ্ময় কাটার আগেই ঘরে স্পৃহা এসে হাজির। সে যদিও আপু আপু ডাকতে ব্যাস্ত হয়ে এলো। তাই আদিল কিছু বলার সুযোগ পেলো না। স্নিগ্ধা স্পৃহার ডাক শুনে ছিটকে সরে দাঁড়ালো।

স্পৃহা ঘরে এসে এমন শান্ত, চুপচাপ পরিবেশ দেখে অবাক হয়ে বললো,” বাবা, এমন নিস্তব্দ হয়ে আছে কেনো? কি করছিলে তোমরা?”

স্পৃহার এই প্রশ্নের স্নিগ্ধার চেহারা লাল হয়ে গেলো। সঙ্গে হার্ট বিট বেড়ে গেলো দ্বিগুণ ভাবে। আদিল এক পলক স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। লজ্জায় নাজেহাল অবস্থা তার। স্পৃহা নিজের বোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,” কি রে আপু? তোর মাথা ব্যাথা সেরেছে?”

স্নিগ্ধা কিছু বলতে পারছে না মনে হচ্ছে তার গলা দিয়ে আওয়াজই বের হচ্ছে না। স্নিগ্ধাকে এমন স্তম্ভিত অবস্থায় দেখে স্পৃহা আদিলের দিকে তাকিয়ে বললো,” কি হয়েছে আপুর?”

আদিল হাসি আটকে বললো,” ছোট খাটো একটা শক খেয়েছে।”

স্নিগ্ধা আড় চোখে আদিলের দিকে তাকালো। অসভ্য লোকটা কি বলে দিবে? স্পৃহা অবাক হয়ে বললো,” মানে? ইলেকট্রিক শক?”

” নাহ্, ঠিক ইলেকট্রিক শক না। মানে হিউম্যান বডি…..” বাকিটা বলার আগেই স্নিগ্ধা ফট করে বললো,” মিসির আলী।” অনেক কষ্টে গলা দিয়ে আওয়াজটা বের হয়েছে তার।

স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই স্নিগ্ধা বললো,” বই পড়ছিলাম তো। বই পড়ে আমি একটু…….।” এতোটুকু বলে স্নিগ্ধা থেমে গেলো।

আদিল ভ্রু কুঁচকে হাতে থাকা বইটার দিকে তাকালো। স্পৃহা কিছুই বুঝলো না। তবুও বুঝার ভান করে বললো,” ও আচ্ছা। যাই হোক আমি তোমাদের ডিনারের জন্যে ডাকতে এসেছিলাম।”

স্নিগ্ধা স্পৃহার হাত শক্ত করে ধরে ব্যাস্ত হয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলল,” চল যাই। ”

স্পৃহা যেতে যেতে আদিলের উদ্দেশ্যে বললো,” জিজু জলদি এসো।”

আদিল হাতে থাকা বইটার দিকে তাকালো তারপর কি ভেবে বইটা বুক সেলফের সবচেয়ে উপরের তাকের মাঝ বরাবর রাখলো। তারপর নিচে নেমে এলো।

________

অভ্র নিজের নাম বদলেছে তার নাম আজ নবিতা। হটাৎ নবিতা নাম রাখার পিছনে কারণ খুঁজছেন? সত্যি বলতে কোনো কারণ নেই। তার ইচ্ছে হয়েছে সে নাম বদলেছে।

যেমন এখন তার খুব ইচ্ছে সে জিমের ল্যাপটপে গেম খেলবে। কিন্তু ল্যাপটপ তার সবচেয়ে দরকারি ডিভাইস সেটি অভ্রর হাতে যাওয়া মানেই দুই খন্ড। জিম নানা ভাবে অভ্রকে বোঝাতে চাইছে কিন্তু অভ্র মানছে না। স্পৃহা পাশ দিয়েই যাচ্ছিল অভ্রকে জিমের পিছু পিছু ঘুরতে দেখে বললো,” কি ব্যাপার তুমি এই রবোমানবের পিছু পিছু হাটছো কেনো?”

অভ্র চোখ পিট পিট করে বললো,” আমি গেইম খেলবো।”

স্পৃহা অভ্রর হাত ধরে বললো,” চলো আমার সাথে চলো আমি তোমাকে আমি দেই। এই রোবটের সাথে কথা বলে লাভ নেই।”

অভ্র স্পৃহার হাত ধরে তার রুমে চলে গেল। জিম আড় চোখে তাকিয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখলো। এমন অদ্ভুত মেয়ে সে জীবনে দেখেনি। এ বাড়ির প্রতিটা মেয়ে এতো অদ্ভূত কেনো?

স্নিগ্ধা খাওয়া শেষে আনমনে স্পৃহার ঘরে বসে আছে। নিজেকে বড্ড অগোছালো লাগছে তার। বার বার শুধু সেই মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। সেই মুহূর্তটা যেনো তার মাথায় চিরো জীবনের জন্যে সেইভ হয়ে গেছে। কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না। স্পৃহা ঘরে ঢুকে স্নিগ্ধাকে এমন আনমনে বসে থাকতে দেখে বললো,” বাপরে মহারানি দেখি আমার ঘরে।”

অভ্র লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে পড়লো। স্পৃহা তার পাশে বসে স্নিগ্ধার কাধ ধরে ধাক্কা দিতেই স্নিগ্ধার হুশ ফিরলো।

স্পৃহা একটা ভ্রু তুলে বললো,” কি হয়েছে তোর?”

স্নিগ্ধা চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললো,” কই কিছু না তো।”

অভ্র স্পৃহার হাত ধরে টেনে বললো,” গেইম খেলবো। গেইম খেলবো।”

স্পৃহা অভ্রকে শান্ত করতে নিজের ল্যাপটপটা এগিয়ে দিলো। অভ্র গেইম খেলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়তেই স্পৃহা স্নিগ্ধার কাছ ঘেঁষে বসে বললো,” এই তুই আমার ঘরে বসে আছিস কেনো? নিজের রুমে যা। নাকি জিজুর সাথে রাগারাগি হয়েছে?”

স্নিগ্ধা আড় চোখে তাকালো তারপর অস্পষ্ট স্বরে বললো,” কিছু হয় নি। আমি আজকে তোর সাথে থাকবো।”

স্পৃহা হেসে উঠে বললো,” বিয়ের পর সবাই বরের কাছে যেতে ভয় পায় কেনো বুঝি না। আমার ফ্রেন্ড সামিহা ওর কিছুদিন আগে বিয়ে হলো। রিসেপশনের দিন বরের থেকে দশ হাত দূরে সরে থেকেছে। কোথায় বর ভয়ে দূরে দূরে থাকবে তা না তোরা পালাই পালাই করিস।”

স্নিগ্ধা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো তারপর বললো,” বিয়ের পর টের পাবি। মুখে সবাই বলতে পারে।”

” আমার বরকে আমি ভয়ের উপর রাখবো। দেখিস তুই।”,বলেই ফিক করে হেসে ফেললো।

এইসবের মাঝে আয়েশা খাতুন রুমে এলেন। এতো রাতে স্নিগ্ধাকে এই রুমে দেখে অবাক হয়ে বললেন,” কি হয়েছে? তুই এই রুমে কি করিস?”

স্নিগ্ধা চুপ করে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছু বললো না। স্পৃহা রসিকতা করে বললো,” আপু রাগ করেছে। বরের সাথে থাকবে না।”

আয়েশা খাতুন হেসে ফেললেন। অভ্র এর মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,” কে বর?”

স্পৃহা অভ্রর কানে হেডফোন লাগিয়ে বললো,” বড়দের কথা শুনতে হয় না।”

আয়েশা খাতুন মেয়ের হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বললো,” রাগ হয়েছে বরকে গিয়ে রাগ দেখাও। নিজেদের ব্যাপার আবার মানুষকে বলে বেড়াতে হয়?”

স্নিগ্ধা মুখ কালো করে বললো,” কিসের রাগ। কিছু হয় নি। আমি থাকি স্পৃহার কাছে আজ। একটু গল্প করতাম।”

আয়েশা খাতুন কড়া গলায় বললো,” নাহ্, এতো রাতে গল্প করতে হবে না।”

স্নিগ্ধা মুখ পানসে করে অভ্রর কাছে গেলো তারপর অভ্রর কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বললো,” চলো আমার সাথে চলো।”

অভ্র সঙ্গে সঙ্গে না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” নাহ্, আমি খেলবো।”

স্নিগ্ধা অভ্রকে কয়েকবার গুতো মারলো লাভ হলো না। সে গেইম খেলতে মগ্ন। স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। স্পৃহা আর তার মা মুচকি মুচকি হাসলো।

স্নিগ্ধা নিজের রুমের দরজার সামনে কিছুক্ষণ পায়চারি করলো। রুমে আরেকটু পরে যাবে। বুকের ভিতরটা কেমন অস্থির অস্থির করছে। আদিল কি ঘুমায় নি? স্নিগ্ধা অনেক্ষন পায়চারি করে তারপর আস্তে করে দরজা ফাঁক করে চোখ দিয়ে পুরো রুমটা দেখলো। রুমে আদিল নেই। তাহলে কি বাইরে আছে? এটাই সুযোগ রুমে গিয়ে ভিতরে থেকে দড়জা আটকে দিবে তাহলেই হবে। স্নিগ্ধা পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো তারপর প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলতেই মনে হলো কে যেনো তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।

স্নিগ্ধা ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো তার ঠিক পিছনে আদিল ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু আদিলের এই হাসি দেখে তো বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে তার।

[#চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here