যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি ৪

0
787

#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি

#লেখিকা-সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি

পর্ব-৪

স্নিগ্ধা কখনো স্বপ্নেও ভাবে নাই।তার জীবনে এতো তাড়াতাড়ি কেউ আসবে,আর ঠিক এভাবে।যেটা স্নিগ্ধার স্বপ্ন ছিলো। স্নিগ্ধা বিষ্ময়ে চারোদিকে তাকিয়ে দেখছে।স্নিগ্ধা ক্যাফেতে ঢোকার সাথে সাথেই ফ্লাওয়ার রেইন হলো।স্নিগ্ধা মুগ্ধতায় বিভোর হয়ে চারোদিকে দেখছে।খুব সুন্দর করে ডেকুরেট করছে,রাহাত।স্নিগ্ধা’কে অবাক করে দিয়ে রাহাত এসে স্নিগ্ধার সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তারপর স্নিগ্ধার চোখে চোখ রেখে রাহাত তার মনের সব কথা খুলে বললো স্নিগ্ধা কে,,,,,,,,

❤️?❤️আজো আছি,খুব কাছাকাছি,কেনো মিছেমিছি বলো ভালোবাসি,,,?কাছে টানো প্রিয়,দু হাতে নাও জড়িয়ে,,সকল দুঃখ,কষ্ট দিবো আমি সড়িয়ে,,,,❤️?❤️

তুমি আমি,দুজনায় হবো একাকার,,মুছে যাবে জীবনের সব কালো আধার,,
চলো প্রিয় হারিয়ে যাই,কোনো এক অজানায়,,,
যেখানে শুধু তুমি আমি রবো দুজন দুজনায়❤️?❤️

❤️?❤️ভালোবাসি অনেক তোমায়,নিজের চেয়েও বেশি
সারাজীবন আগলে রাখবো,,থাকবো পাশাপাশি
শুনে নাও ভালো করে,ওগো আমার প্রয়সী,,
এ জীবনে সবচেয়ে তুমিই আমার কাছে দামী❤️?

বলো,বলো প্রেয়সী,বলো ভালোবাসি????

রাহাত একটি গোলাপ হাতে ধরে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধার জবাবের অপেক্ষায়। স্নিগ্ধা অবাক চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে। স্নিগ্ধা যেন এখনো বিশ্বাস ই করতে পারছে না।ক্যাম্পাসের ক্রাস বয় স্নিগ্ধা কে প্রপোজ করছে।চারোদিকে তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা ও রাহাতের বন্ধুরা।

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে রাহাতের হাতের ফুলটা গ্রহণ করলো তারপর বললো “ভালোবাসি,ভালোবাসতে চাই?”
রাহাত হাসিমুখে উঠে দাড়ালো।স্নিগ্ধার জবাবে সব বন্ধুরা হাত তালি দিয়ে উঠলো। রাহাত স্নিগ্ধার হাত ধরে বললো “My dream came true today আমি তো ভয়েই ছিলাম ক্যাম্পাসের ক্রাস গার্ল,সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি আমার ভালোবাসায় সাড়া দিবে কী”

রাহাতের কথায় স্নিগ্ধা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। সেদিকে তাকিয়ে রাহাত স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসলো তারপর বললো “এই ঠোটে হাসির কারণ আমি হয়ে থাকতে চাই”
। স্নিগ্ধা রাহাতের কাধে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে। কিন্ত বেশিক্ষণ স্নিগ্ধা তাকিয়ে থাকতে পারলো না।লজ্জায় স্নিগ্ধার চোখ নিচু হয়ে গেলো।অজানা এক ভালোলাগা মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো বারবার।

স্নিগ্ধার বান্ধবী ফারজানা ও দাঁড়িয়ে দেখছে সব।কিন্তু ফারজানা অন্যদের মতো খুশি হতে পারছে না।সাইফের আসল চেহারা দেখে ফারজানা এখন কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারে না।ফারজানার কাছে মনে হচ্ছে রাহাত স্নিগ্ধার জন্য ঠিক না।কিন্তু মুখ ফুটে ফারজানা কিছুই বললো না।স্নিগ্ধাকে অনেক হ্যাপি মনে হচ্ছে।

স্নিগ্ধা রাহাতের গাড়িতে বাড়ির কিছুটা আগে নেমে যায়।তারপর রাহাত কে বিদায় জানিয়ে স্নিগ্ধা বাড়িতে আসে।আজকের দিনটা স্নিগ্ধার জন্য অনেক স্পেশাল। স্নিগ্ধা আজকের সময়ের কথা ভাবছে আর ব্লাশ করতে করতে তার রুমে ঢুকছে হ্যান্ড ব্যাগ’টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে স্নিগ্ধা রাহাতকে টেক্সট করতে যাবে ঠিক তখনি স্নিগ্ধা ব্যল্কনি তে একটা ছেলেকে পিছন থেকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। স্নিগ্ধার চিৎকারে এবার সাফরান স্নিগ্ধার দিকে ফিরে।সাফরান’কে নিজের রুমে দেখে স্নিগ্ধা আঁতকে উঠে।

সাফরান চোখের সানগ্লাস’টা খুলে স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে আসছে।স্নিগ্ধা ধরফর করে বিছানা থেকে উঠে। সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

—-ভা,ই,,য়া তু,তুমি,,,?

—কোথায় গিয়েছিলি স্নিগ্ধা?

—আ,,আমি তো কলেজে গিয়েছিলাম

—অহ রিয়েলি?আমি তো তোর কলেজ থেকেই আসলাম,

সাফরানের কথা শুনে স্নিগ্ধা সাথে সাথে চোখ নিচু করে ফেললো।কারণ এখন চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বললেই ধরা পরে যাবে,,,

—কই ছিলি সকাল থেকে
স্নিগ্ধা চোখে নিচে রেখেই বললো,
—-আ,,আমি ফারজানার সাথে ছিলাম

স্নিগ্ধার কথায় সাফরান রাগত্ব ভাবে স্নিগ্ধার হাত চেপে ধরলো,তারপর বললো” মিথ্যা বলিস কেনো এতো,যা কিছুই কর না কেনো আমি জানতে পারবো,আর শুন নিজে থেকে আমাকে সত্যিটা বললে হয়তো,আমি তোকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারতাম,যা ইচ্ছা কর।”

সাফরান স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।স্নিগ্ধার মা আতিয়া আহমেদ ডাকলো পিছন থেকে সাফরান’কে,,,

—সাফরান তোর পছন্দের গাজরের হালুয়া হয়ে গেছে খেয়ে যা,,,,

সাফরান কথাটা শুনেও হনহন করে চলে গেলো।আতিয়া রহমান স্নিগ্ধার কাছে এসে বললো “কি রে তুই আমার সাফরান’কে আবার কি বলে রাগিয়েছিস?”

—সাফরান ভাইয়াকে রাগানোর জন্যে কিছু বলা লাগে,উনি তো কারণে অকারণে রেগে যায়।জন্মগত রাগী।

—চুপ কর স্নিগ্ধা। কোথায় ছিলি আজ সারাদিন।

—বান্ধবীর সাথে ছিলাম,আজ একটু ঘুড়েছি সবাই মিলে।

—সামনে এক্সাম এখন এতো ঘুড়াফিরা কিসের?

—অহো মা।আমিও তো মানুষ সাফরান ভাইয়ার মতো রোবট না।সব সময় শুধু পড়া আর পড়া এসব আর ভালো লাগছে না।

স্নিগ্ধার কথায় আতিয়া আহমেদ অন্যরকম একটা পরিবর্তন দেখতে পেলো স্নিগ্ধার মধ্যে ।কিন্তু স্নিগ্ধা কে কিছু বললো না।নিজের কাজে চলে গেলো।

সাফরান চোখের কোণে পানি দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয়ে গেলো। স্নিগ্ধার বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই সাফরানের মনে এক অন্যরকম ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে।সাফরানের মনে হচ্ছে সাফরান স্নিগ্ধা কে হারিয়ে ফেলবে।স্নিগ্ধাকে দেখে আজ অন্যরকম লেগেছে।সাফরান মনে মনে ঠিক করলো স্নিগ্ধাকে আর শাসন করবে না,স্নিগ্ধার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে থাকতে দিবে।কিন্তু পরক্ষণেই সাফরানের স্নিগ্ধার বাবার শেষ কথা গুলো মনে পরলো।সাফরানের বাবা সাফরানকে স্নিগ্ধার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন,এতো সহজে সাফরান এই দায়িত্ব থেকে পিছু হাটতে পারে না।সাফরান নিজের মনকে বুঝিয়ে সাহিলের রুমে গেলো।সাহিল সাফরানের ছোট ভাই।সাহিলের রুমে যাওয়ার আগে সাফরান বাহির থেকে উকি দিয়ে দেখলো সাহিল বিছানায় বসে ট্যাবে গেমস খেলছে।সাফরান সাহিল বলে একটা ডাক দিলো আর সাথে সাথে সাহিল ট্যাবটা বালিশের নিচে রেখে পড়ার টেবিলে এসে পড়তে লাগলো।,,,,

—-কী পড়ছো?

সাহিল আমতা আমতা করে হাতে রাখা বইটা দেখে বললো ‘ ফিজিক্স পড়ছিলাম ভাইয়া’

সাফরান আলতো হেসে সাহিলের পিঠে হালকা একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো ” কথা বানানোয় একদম স্নিগ্ধার মতো হয়েছিস”

—না ভাইয়া স্নিগ্ধা আপু আরো বেশি কথা বানায়।

সাফরান সাহিলের পাশে বসিয়ে সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো ” কখন বুঝবি তোরা?আমি না থাকলে?”

—কেনো ভাইয়া তুমি কোথায় যাবে?

—বাস্তবতা অনেক কঠিন রে সাহিল।আমি চাই তোরা জীবন নিয়ে সচেতন হতে পারিস।যেন আমি না থাকলেও তোরা খুব সুন্দর ভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারিস সব বিপদ থেকে।যেন নিজেদের একটা সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিতে পারিস।যেন আম্মু আব্বু তোকে নিয়ে গর্ব করতে পারে।

সাফরান সাহিল কে বুঝিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।আজ চোখ বেচারা বড়ই দুঃখী।বারবার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে সাফরানের।সাফরান কারো সামনে কান্না করতে পারে না।কান্না হাসি এসব লুকিয়ে রাখতে চায়। সাফরান নিজেকে সামলে নিয়ে তার বাবার রুমে গেলো। মোহাম্মদ আজাদ আহমেদ গল্পের বই পড়ছিলেন।

—-বাবা আসবো,,,
–কে,কে,,

—বাবা আমি সাফরান,,,

—ওহ তুই,আয়,বস আমার পাশে।

সাফরান রুমে প্রবেশ করে আজাদ আহমেদ এর পাশে বসে।

—বাবা তোমার শরীর ঠিক আছে?

—এইতো আছে,ঠিক না তবে চলবে আরো কয়েকটা দিন।

—কী বলো বাবা এসব।ডাক্তার ডাকবো?

—আরেহ না।তুই একটু বস,দুটো কথা বলি।

—আছি বাবা।বলো তুমি।

—সংসারী হবি কখন সাফরান?

—কী বলছো বাবা এসব,,,
—ভুল কিছু বলছি?

—না তবে এখন এসব নিয়ে ভাবছি না।

—ভাবছি না বললে ত হবে না ভাবতে হবে।আমার তো মনে হচ্ছে কয় সেকেন্ড পরেই আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।আমি তোর সংসার দেখে যেতে পারি না?আশা করতে পারি না?

—বাবা আমার সংসার তোমাদের নিয়ে।আমার আর অন্য কিছুতে মন বসবে না।তুমি রেস্ট করো আমি একটু দোকানের হিসাব নিয়ে বসবো।

সাফরান রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে আসলো।আজ সাফরানের বাড়িতে একদমই মন বসছে না।না চাওয়া সত্তেও বারবার স্নিগ্ধার কথা মনে আসছে।মন এতো বেহায়া কেনো।সাফরান আকাশের দিকে তাকিয়ে এর উত্তর খুজতে থাকে,আর তখনি পিছন থেকে কেউ একজন সাফরানের কাধে হাত রাখে।সাফরান পিছন ফিরে দেখে ফাহিমা দাঁড়িয়ে।

—কী রে তুই?

—বা’রে আমি কী আসতে পারি না?

—পারিস তবে, এই অসময়ে?

—তুমিও তো এসেছো অসময়ে?

—আমি আসতেই পারি।

—আমিও পারি। বাই দ্যা ওয়ে,মন খারাপ নাকি ভাইয়া?

—কই না তো।মন কেনো খারাপ হবে?

—তাহলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কী এতো ভাবছিলে?

—তুই শুনতে পেয়েছিস কী ভাবছি আমি?

— সবটা না তবে অল্প আন্দাজ করতে পেরেছি।

—কী সেটা?

—আমার ভাবির কথা চিন্তা করছো তো?

—ভাবি,,হাহাহা,,,ধূর না,আমি আজাইরা কথা চিন্তা করি না।

—এটা বুঝি আজাইরা কথা।এটাতো জীবনের সিরিয়াস একটা ব্যাপার।

—সবার কাছে,তবে আমার কাছে এসব আজাইরা।আচ্ছা চল নিচে যাই বৃষ্টি পড়বে হয়তো।

—থাকি না ভাইয়া আর একটু।

—না থাকতে হবে না।বড় হচ্ছিস না দিনদিন ছোট হচ্ছিস।চল নিচে যাই।

সাফরান ফাহিমা একসাথে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।ফাহিমা সাফরানের সামনে হাটছে,হঠাৎ ফাহিমার মনে একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসলো,সাথে সাথে ফাহিমা হোচট খেয়ে পরে যেতে থাকলো,তার আগেই সাফরান ফাহিমা কে ধরে ফেললো।ফাহিমা কাছ থেকে সাফরান কে দেখার জন্যেই পরে যাওয়ার অভিনয় করেছে কিন্তু সাফরান সাথে সাথে ফাহিমা কে ছেড়ে দেয়।ফাহিমা মনে মনে অনেক ক্ষিপ্ত হয়।আর একটু সময় কী ধরে রাখা যেতো না।একটু কী চোখে চোখ রাখা যেতো না।

—দেখে চলতে পারিস না।

—দেখে চলবো কেনো তুমি আছো না।

সাফরান ফাহিমার কথার আর কোনো জবাব দিলো না।হনহন করে সিড়ি দিয়ে নেমে নিজের রুমে চলে আসলো।দরজা বন্ধ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো সাফরান।

(চলবে)

গল্প দিতে অনেকটা সময় নিয়ে ফেলেছি তার জন্য দুঃখীত।অসুস্থতা, এক্সাম সব মিলিয়ে সময় হয়ে উঠেনি।চেষ্টা করবো গল্পটার পর্ব গুলো তাড়াতাড়ি দিতে।আশা করি সকলে পাশে থাকবেন।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here