যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি ১৫

0
815

#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি

#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি

#পর্ব_১৫

অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই না সাফরান?মা বাবা কে ও তোর ছোট মনে হচ্ছে।এক মাত্র ম্যাচিউরড শুধু তুই।এতো কিছু হয়ে গেলো আমাকে কিংবা তোর বাবা কাউকে জানালি না।মনের মাঝে কষ্ট চেপে রেখে হাসি মুখে ঘুরে বেরাচ্ছিস। তুই জানিস তোর এই সিদ্ধান্তের জন্য তিন তিনটা জীবন নষ্ট হতে যাচ্ছিলো। রাফিয়া আহমেদ এগিয়ে এসে স্নিগ্ধার চিবুকে হাত রেখে বললো ” আমিও তো এই মেয়েকেই চাই আমার ছেলের বউ হিসাবে,এখন আমি সবটা জেনে গেছি ব্যাস সাফরানের সাথেই স্নিগ্ধার বিয়ে হবে”

রাফিয়া আহমেদের কথায় বক্কর আহমেদ বেশ রেগে গেলো “বলি,বিয়ে কী ছেলেখেলা নাকি,আমার মেয়ের জীবন বরবাদ করে এখন অন্য কারো সাথে ছেলের বিয়ের কথা বলছো”

—আর তোমার মেয়েকে বিয়ে করলে আমার ছেলের জীবন বরবাদ হয়ে যাবে,যেটা আমি মা হয়ে কখনো হতে দিবো না।তোমার মেয়েকে আমি পুত্রবধূ হিসাবে কখোনই মেনে নিবো না।

রাফিয়া আহমেদের কথা বক্কর চৌধুরী কিছু বলতে যাবে,তখনি ফাহিমে মাথা ঘুড়ে পড়ে গেলো।তা দেখে সকলে ফাহিমার কাছে গেলো। সাফরান দৌড়ে এসে ফাহিমাকে পাজাকোলা করে রুমে নিয়ে আসলো তারপর চোখে মুখে পানির ছিটা দিতেই ফাহিমার জ্ঞান ফিরলো।জ্ঞান ফিরার পর পাশে সাফরানকে দেখে ফাহিমা জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো “আমাদের বিয়ে হবে না?”

সাফরানকে চুপ করে থাকতে দেখে ফাহিমা তার বাবা বক্কর আহমেদ কে বললো “বাবা সাফরান চুপ করে আছে কেনো?আমাদের বিয়ে কি হবে না?”

—হবে মা হবে,যদি এই বিয়ে নাহয় তো সবক’টা কে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।

সাফরান ফাহিমার হাত ধরে বলে ” সেদিন তুমি যখন আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিলি,তখন আমার কাছে আর কোনো অপশন ছিলো না রাজি না হওয়ার।তোমাকে বাচানোর জন্য সেদিন তোমার কথায় রাজি হয়ে গেছিলাম।কিন্তু সত্য’তো এটাই ফাহিমা আমি তোমাকে না স্নিগ্ধা কে ভালোবাসি।তোমাকে বিয়ে করলেও আমি তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না কখনো।আমার কাছে থেকে তোমার জেদ,’টা তো পূর্ণ হবে কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে কখনো পাবে না।তুমি অনেক সুন্দর ও লক্ষী একটা মেয়ে তুমি অনেক ভালো কাউকে পেয়ে যাবে লাইফে।কিন্তু আমার মনে ও জীবনে স্নিগ্ধাকে ছাড়া আমি আর কাউকে আনতে পারবো না।

সাফরানের কথায় ফাহিমা ডুকরে কেদে উঠে। বক্কর আহমেদ মেয়েকে নিয়ে যায় সাথে সাথে।যাওয়ার সময় শাসিয়ে যায়।সবাইকে এর প্রতিদান দিতে হবে।তারা চলে যেতেই আজাদ আহমেদ ও রাফিয়া আহমেদ স্নিগ্ধার মায়ের সাথে স্নিগ্ধা ও সাফরানের বিয়ের কথা সেরে নেই।এবং সেই দিনেই সাফরান ও স্নিগ্ধার এনগেজমেন্ট হয়ে যায়। দুজনের বিয়ের তারিখ ও ঠিক করে ফেলে রাফিয়া আহমেদ। সাফরান ও স্নিগ্ধার কাছে সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে।যতোটা অনিশ্চয়তা নিয়ে দুজনে এই সম্পর্কের কথা চেপে রেখেছিলো ততোটাই পূর্নতার সাথে এক হয়েছে দুজনে।

—————-

ক্লাস শেষে স্নিগ্ধা সাফরানের জন্য অপেক্ষা করছিলো ঠিক তখনি একটা মাইক্রো কার তার ঠিক সামনে এসেই থামলো।স্নিগ্ধা কিছু বুঝে উঠার আগেই মাইক্রো থেকে দুজন লোক নেমে স্নিগ্ধার মুখ চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেলো।মাইক্রোতে উঠিয়ে স্নিগ্ধার মুখে টেপ লাগিয়ে দিলো যেন স্নিগ্ধা চিৎকার করতে না পারে। স্নিগ্ধা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু এই ভয়ংকর দানবের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলো না।গাড়িটা ছেড়ে দিতেই স্নিগ্ধা ভয়ে আতকে উঠলো। এরা কারা,স্নিগ্ধা কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।

পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেও স্নিগ্ধাকে খুজে পেলো না সাফরান।মাত্র তো ৫মিনিট লেট করেছে এর মধ্যেই স্নিগ্ধা চলে গেলো।সাফরান ফোন বের করে স্নিগ্ধার নাম্বারে কল দিলো। কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।আরো কয়েকবার কল দেওয়ার পর স্নিগ্ধার নাম্বার বন্ধ দেখা গেলো।সাফরান বেশ ঘাবড়ে গেলো।এমন তো করে না স্নিগ্ধা।সাফরান বাইক নিয়ে চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ মাটিতে কিছু একটা চকচক করলো।সাফরান দ্রুত জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখলো “এটা তো স্নিগ্ধার এনগেজমেন্ট রিং,এই রিংটা এখানে এভাবে কেনো?সাফরানের বুকটা ধক করে উঠলো স্নিগ্ধার কোনো বিপদ হলো না তো।

সাফরান আশে পাশে তাকিয়ে একটা ছোট ছেলে কে বাদাম বিক্রি করতে দেখলো।সাফরান তার কাছে যেয়ে স্নিগ্ধার ছবি দেখিয়ে বললো ” এই মেয়েটা কে কী দেখেছো?”

ছেলেটা ছবিটা ভালো করে দেখে বললো “হ একটু আগে এইখানে খাড়াইয়া ছিলো তয় একটা বড় মাইক্রো থাইক্কা দুইডা বেডা নাইম্মা আফাডারে জোর কইরা গাড়ির মধ্যে নিয়া গেছে।”,

ছেলেটার কথা শুনে সাফরান দুশ্চিন্তায় ভেঙে পরলো একরাশ ভয়ে এসে গ্রাস করলো তাকে।সাফরান আর সময় নষ্ট করলো না।বাইক স্টার্ট দিয়ে যে পথে স্নিগ্ধাকে ধরে নিয়ে গেছে সে পথেই যেতে লাগলো। ফুল স্পীডে বাইক চালাচ্ছে সাফরান পথে যতো গুলো কালো মাইক্রো কার দেখেছে সব গুলা থামিয়ে সাফরান চ্যাক করেছে।কিন্ত না স্নিগ্ধাকে পাওয়া যায় নাই।সাফরান আবারো বাইক নিয়ে এগিয়ে যায়।অনেক দূর আসার পর হাইওয়ের এক পাশে একটা কালো মাইক্রো দেখে সাফরান মাইক্রোটার সামনে যায়।মাইক্রোর ভিতর কেউ নেই।সাফরান আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না।হাইওয়ের পাশে একটা ঘন জংগল হঠাৎ সাফরানের মনে হলো স্নিগ্ধা এখানেই আছে।সাফরান দৌড়ে জংগলের ভিতরে চলে আসলো।কিছুদুর যাওয়ার পর কয়েকজন পুরুষের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো সাফরান।জংগলের আরো ভিতরে চলে আসলো। তখনি কয়েকজন মাতাল ছেলেকে গোল করে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।সাফরান দৌড়ে ছেলে গুলাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই স্নিগ্ধা কে মাটিতে শোয়া অবস্থায় দেখলো।স্নিগ্ধার মুখে টেপ, হাত বাধা অবস্থায়। স্নিগ্ধা কে এভাবে দেখে সাফরানের মাথায় খুন চেপে গেলো।সাফরান হাত মুঠোকরে মাতাল ছেলে গুলার দিকে এগিয়ে গেলো। মাতাল ছেলে গুলাও সাফরানকে আক্রমণ করলো।কিন্তু এক এক করে সবাইকে নিস্তেজ করে মাতাল ছেলেগুলার লিডার টার গলা চেপে ধরলো সাফরান।

—বল তোকে এখানে কে পাঠিয়েছে,,,

—বলছি বলছি,আগে ছেড়ে দাও,,,

সাফরান ছেলেটার গলা ছেড়ে দিলো। “এবার বল কে পাঠিয়েছে তোকে নাহয় জানে মেরে ফেলবো”

“আমাদের বক্কর আহমেদ পাঠিয়েছে এই মেয়েটাকে উঠিয়ে নিয়ে মেরে ফেলতে বলছে”

কথাটা শুনে সাফরান রাগে ফেটে পড়ে। হাত মুঠো করে মাতাল ছেলেটাকে আরো একটা ঘুষি দেয়। সবাই উঠে দাঁড়ায় তারপর পালাতে শুরু করে।সাফরান স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয়।

—তুমি ঠিক আছো স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধা সাফরানের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাদতে থাকে।সাফরান যদি আজ ঠিক সময়ে না আসতো তাহলে কী হয়ে যেতো তা ভেবেই বারবার শিউরে উঠছে স্নিগ্ধা।

“তুমি থাকতে আমি ঠিক না থাকি কিভাবে?”

সাফরান স্নিগ্ধাকে এনগেজমেন্ট রিং টা পড়িয়ে দিলো তারপর স্নিগ্ধাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো।

সাফরান ও স্নিগ্ধাকে এই অবস্থায় দেখে বাড়ির সবাই অনেক উদগ্রীব হয়ে গেলো। রাফিয়া আহমেদ দুজনের শরীরে রক্ত দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো। “তোদের এই অবস্থা কী করে?ঠিক আছিস তোরা,র রক্ত কীভাবে?

সাফরান রাফিয়া আহমেদকে শান্ত করার চেষ্টা করলো ” Don’t worry ma we are al right”

রাফিয়া আহমেদ ছেলের কথা শুনলো না। স্নিগ্ধাকে ধরে বললো “তোদের এই অবস্থা কী করে?”

স্নিগ্ধা সব খুলে বললো সবটা শুনে রাফিয়া আহমেদ বললো “বুঝেছি এসব কার কাজ,তোদের দুজনকে আলাদা করার জন্যে উঠে পরে লেগেছে বক্কর কিন্ত এতোটা নিচে নামবে তা কখনো চিন্তাও করি নাই,এখন ওর চোখের সামনেই আমি তোদের বিয়ে দিবো,তোদের বিয়েতে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না কালই তোদের বিয়ে”

—কিন্ত মা স্নিগ্ধার এক্সাম?

—এক্সাম তো কী হয়েছে কাল তো এক্সাম নেই কালই তোদের বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল।আমি আর দেরি করতে চাই না।

রাফিয়া আহমেদের কথার আগে সাফরান আর কোনো কথা বললো না।সাফরান স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধা খুশিতে আটখানা।এই মেয়ে বিয়ের জন্য কম।পড়ালেখা করতে হবে না এজন্যেই খুশি হয়েছে।সাফরান আতিয়া রহমান আর স্নিগ্ধাকে তাদের বাড়িতে পৌছে দিতে গেলো।আতিয়া রহমান অনেক খুশি। স্নিগ্ধা এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছে যে শুধু স্নিগ্ধা কে সব বিপদ থেকে রক্ষাই করে না স্নিগ্ধার ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি ও খেয়াল রাখে।স্নিগ্ধার জীবন নিয়ে আর কোনো দুশিন্তার কারণ নেই।।

—————

স্নিগ্ধাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে এসে সাফরান ফ্রেশ হয়ে দোকানের হিসাব নিয়ে বসে।অনেক দিন পর মনের মাঝে এক অন্যরকম শান্তি অনূভত হচ্ছে। প্রফুল্ল মন নিয়ে সাফরান সব হিসান নিকাশ কষে শুয়ে পরে।ঘুমানোর আগে সাফরান অভ্যস মতো ফোনে স্নিগ্ধার ছবি দেখে নিলো।এই রাতটা অতিবাহিত করতে পারলেই কাল থেকে আর ছবি দেখে মন কে শান্ত করতে হবে না।এখনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না কাল তাদের বিয়ে। সাফরান পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু না বিয়ের এক্সাইটমেন্ট এর জ্বালায় ঘুম বাবাজি উধাও হয়ে গেছে।আচ্ছা এখন স্নিগ্ধা কী করছে।ওর ও কী নির্ঘুমে সময় কাটছে নাকি পরে পরে ঘুমাচ্ছে।যেই ভাবা সেই কাজ।বাইক নিয়ে সোজা হিরামতির ব্রীজ পেরিয়ে স্নিগ্ধার ব্যাল্কনির সামনে এসে দাড়ালো।স্নিগ্ধার রুমের লাইট জ্বলানো দেখে সাফরান ভাবলো স্নিগ্ধা বুঝি পড়ালেখা করছে রাত জেগে। সাফরান স্নিগ্ধার রুমে যাওয়ার জন্যে দেওয়াল বেয়ে উঠতে লাগলো। ধীরে ধীরে স্নিগ্ধার ব্যল্কনি তে পৌছে গেলো সাফরান তারপর স্নিগ্ধার রুমের দিকে উঁকি দিতেই সাফরানের চোখ দুটো মুগ্ধতায় ভরে উঠলো।লাল শাড়ি পরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যস্ত স্নিগ্ধা। খেয়ালই করে নাই সাফরান কখন তার পিছনে এসে দাড়িয়েছে। ফর্সা শরীরে লাল রঙ যেন ঝিলিক দিয়ে উঠছে। স্নিগ্ধা আয়নায় সাফরানকে দেখে হেসে উঠলো। ” বাহ বউ সেজে আয়নার সামনে দাড়াতেই আমার দুলা রাজা হাজির,কল্পনাও কতো অদ্ভুত রাজা রানি দুই রাজ্যে থাকলেও মিল করিয়ে দেয়,এই দুষ্ট ছেলে এভাবে কী দেখছো”

—তোমাকে দেখছি।

সাফরানের কথায় স্নিগ্ধা চমকে উঠলো। কল্পনাতে সাফরান স্নিগ্ধার কথার রিপ্লেও করছে।আবার মিটিমিটি হাসছে ও।স্নিগ্ধা পিছনে ফিরে সাফরানকে দেখে সাফরানের কাছে গিয়ে হাতে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠে সাফরান “কী’রে কী করছিস,ছাড়”

সাফরানের চিৎকারে স্নিগ্ধা নিজেও চমকে উঠে। তারপর মুখ চেপে ধরে বলে,”আরে করছো কী?মা শুনতে পাবে তো”

সাফরান ধমকের সুরে বলে “আগে বল কামড় দিলি কেনো?”

—আমি স্বপ্ন দেখছি কিনা সিউর হওয়ার জন্য কামড় দিয়েছি।

—এই প্রথম আমি এমন কিছু দেখলাম,ভুল দেখলে মানুষ নিজেকে চিমটি কাটে আর তুই কিনা কামড় দিচ্ছিস তাও আমাকে

—কারণ আমি অনেক আনকমন তো তাই আমার ব্যাপার স্যাপার গুলোও অনেক আনকমন হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

—তাও যদি একটু আস্তে দিতি,রাক্ষুসি দাত সব তো বসে গেছে হাতে,,,

স্নিগ্ধা সাফরানের হাত ধরে বললো “বেশি ব্যাথা পেয়েছো?”

সাফরান স্নিগ্ধাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো ” হ্যা পেয়েছি তো কিন্তু হাতে না এই বুকের মধ্যে”

লজ্জা পেয়ে স্নিগ্ধা মুখ নিচু করে নিলো।তা দেখে সাফরান স্নিগ্ধার চিবুক ধরে বললো “মাশাল্লাহ, লাল শাড়ি তে তোকে আমার বউ বউ লাগছে এতো সুন্দর কী করে হয় কেউ?আর কতো পাগল করবি আমাকে তুই?

—তুমি এমনেই তো একটা পাগল।

—আমি পাগল?আমার পাগলামির কি দেখেছিস?

—অনেক কিছু।

—যেমন?

—এই যে এতো রাতে আমার ব্যল্কনি দিয়ে রুমের মধ্যে আসছো এটা কি পাগলামি না?

সাফরান স্নিগ্ধা কে এক ঝটকায় তার দিকে টেনে নেয়।স্নিগ্ধার চোখে চোখ রেখে স্নিগ্ধার ঠোঁটের কাছাকাছি চলে আসে।স্নিগ্ধার গরম নিশ্বাসে সাফরান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে।গোলাপি ঠোঁট সাফরানের মনে শিহরণ জাগিয়ে তুলে মূহুর্তেই।দু হাতে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধার কোমড়। ভয় ও লজ্জায় স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে ফেলে। কেপে কেপে উঠছে স্নিগ্ধার গোলাপি ঠোঁট দুটো। সাফরান স্নিগ্ধার ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধার কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বলে,,,,

—,এসব করছিলি না ঘুমিয়ে এতোরাতে?”

সাফরানের কথায় স্নিগ্ধা চোখ মেলে তাকায়। তারপর আমতা আমতা করে বলে

—আরেহ না জাস্ট দেখছিলাম শাড়িটা ঠিকঠাক আছে কিনা।

—মায়ের পছন্দ করেছে ঠিকঠাক তো থাকবেই।এখন শুয়ে পর আর হ্যা।এই শাড়ির সাথে লাল হিজাব পরবি।

—বিয়েতে হিজাব?

—কোনো সমস্যা?

—না।

—হিজাব নিয়ে যেন কোনো সমস্যা হতে না দেখি। বিয়ের পর হিজাব নেকাব পরেই চলাফেরা করবেন।এতোদিন ডাক দিলে তো তোতাপাখির মতো বলে দিতে ” ভাই ভাইয়ের মতো থাকো”আমার কোনো অধিকার নাই এসব বলতি এবার তোকে দেখাবো অধিকার কাকে বলে, হাজবেন্ডের কথা না শুনলে গুনাহ হবে মাইর ও খাবি। আর হ্যা বিয়ের পর আর সাফরান ভাইয়া ডাকা চলবে না।

স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে সাফরানের দিকে তাকায় ” সাফরান ডাকবি”

স্নিগ্ধা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

—গুড গার্ল। আর হ্যা বিয়ের পর সংসার কম,লেখাপড়ায় মনোযোগী বেশি হতে হবে।

স্নিগ্ধা কপাল কুচকে বলে “লেখাপড়া করতে হবে?”

—জ্বী সবার আগে।পরশু তো ফিজিক্স এক্সাম তোর। মাকে কতো করে বলেছি।এক্সাম’টা শেষ হোক তারপর বিয়ের ডেট দিতে।কিন্ত মা তো কোনো কথাই শুনলো না।আচ্ছা শোন আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।ঘুমিয়ে পর তুই।

সাফরান পকেট থেকে চকলেট বের করে স্নিগ্ধার হাতে দেয়।চক্লেট পেয়ে অনেক খুশি হয়ে যায় স্নিগ্ধা।
সেদিকে তাকিয়ে সাফরান বলে উঠে “পিচ্ছি বউটা আমার”

–আমি কি বুইড়া বর বলবো?

—এতো বয়সো হয় নাই আমার বুইড়া বলছিস?

—আচ্ছা এখন যাও মা নামাজ পড়তে উঠে তোমাকে দেখলে আমার ব্যান্ড বাজাবে

—আচ্ছা যাচ্ছি।কাল দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ

স্নিগ্ধা থেকে বিদায় নিয়ে সাফরান চলে যায়।সেদিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।কাল তারা দুজনে এক হতে যাচ্ছে। স্নিগ্ধার যেন আর তর সইছে না।নিজেকে বুঝিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

(চলবে)

গল্পটা সবার কাছে কেমন লাগছে কমেন্টস করে জানাবেন। সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো। গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। ধন্যবাদ সবাইকে ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here