#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি
#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি
#পর্ব-১১
গোলাপি শাড়ি সাথে সোনালী রঙের হিজাব,চোখে কাজল,আর গোলাপি রঙের লিপ্সটিক ব্যস সাজ বলতে এইটুকুই কিন্তু সাফরানের কাছে স্নিগ্ধাকে এই
পৃথীবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে মনে হচ্ছে।
সাফরান মোহনীয় ভাবে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে। অজান্তেই সাফরানের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো “মাশাল্লাহ”
স্নিগ্ধা সাফরানের কাছে এসে বললো ” ভাইয়া চলো”
সাফরান যেন স্নিগ্ধার কথা শুনতেই পায় নাই।স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক ও পরছে না।আজ যদি কোনো বাধা না থাকতো তাহলে তার মনের কথা খুলে বলতো ছন্দের সাথে সাথে
” আমি ভাবতে গেলে অবাক হই,দু হাত বাড়িয়ে তোমায় ছুই,মুগ্ধ মনে চেয়ে রই, আনমনে?
স্নিগ্ধা সাফরানের চাহনীতে বেশ লজ্জা পেলো।এভাবেই কেটে গেলো আরো কিছু সময় স্নিগ্ধা ও সাফরানের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গ্রে কালারের স্যুট টাই পরে একদম সাহেব সেজে দাঁড়িয়ে আছে।আজ সব মেয়েতো ক্রাস খাবেই। স্নিগ্ধা ও সাফরানের শুভ দৃষ্টির মাঝেই সাফরানের মা ও ভাই বাড়িতে প্রবেশ করে।দুজনকে এই অবস্থায় দেখে বেশ অবাক হয় সাহিল ও রাফিয়া আহমেদ। সাহিল মোবাইলে ছবি ও তুলে নেয় দুজনের।স্নিগ্ধা তাদের দুজনকে দেখে চমকে উঠে।
—মামী,সাহিল তোমরা কখন এলে।
স্নিগ্ধার কথায় সাফরান বাস্তবে ফিরে আসে।সাথে একরাশ লজ্জা এসে ঘীড়ে ধরলো সাফরানকে।
—স্নিগ্ধার বান্ধবীর বিয়েতে যাচ্ছি আমরা ফিরতে রাত হবে মা।
রাফিয়া আহমেদ স্নিগ্ধার কাছে এসে স্নিগ্ধার চিবুক ধরে বললো ” মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে স্নিগ্ধা তোকে,কারো যেন নজর না লাগে,এই মিষ্টি মেয়েটাকে”
—নজর তো এক জনের লেগেই গেছে মা।
সাহিলের কথায় সাফরান লজ্জা পেয়ে বাইরে চলে আসলো।তা দেখে রাফিয়া আহমেদ ও হেসে উঠলো,তারপর বললো “সাবধানে যাস দুজনে”
—জ্বী মামি
সাফরানের বাইকের পিছনে সাফরানের কাধে হাত রেখে বসছে স্নিগ্ধা। আজ শাড়ি পড়ায় ঠিক মতো সুবিধা করতে পারছে না।কেমন আনকমফরট্যাবল মনে হচ্ছে।সাফরান নিঃশব্দে বাইক চালাচ্ছে।স্নিগ্ধা চুপচাপ বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।নিরবতা কে স্নিগ্ধা অনেক ভয় পায়।জবান থাকতেও কেনো চুপচাপ থাকতে হবে।কোনো কথা না থাকলে দরকার হলে আজাইরা কথা বলবে তাও কথা বলতে হবে।কথায় কথা আসে,একটা কথায় হাজারটা কথা নিয়ে আসে।কিন্তু সাফরান হচ্ছে বোরিং টাইপের একটা মানুষ যে হিসাব করে কথা বলে।মনে হয় কথা বলার জন্যে তাকে টাকা দিতে হচ্ছে।স্নিগ্ধা গলা খ্যাকারি দিয়ে বললো
—ভাইয়া তুমি কখন বিয়ে করবে?
—এ কেমন প্রশ্ন?
—একদমই সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।আমাদের বুঝি তোমার বিয়ে খেতে ইচ্ছা করে না।
—ইচ্ছা করলেই কী।আমার তো বিয়ে করতে ইচ্ছা করে না।তোদের ইচ্ছা আমার কাছে কিছুই না।
সাফরানের এমন কথায় স্নিগ্ধার মেজাজ বিগড়ে গেলো। অনেক কষ্টে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো ” বলো না ভাইয়া বিয়ে কখন করবে?”
—যখন আমার বউটা একটু বড় হবে,বুঝতে শিখবে,নিজের স্বপ্ন পূর্ণ করে জীবনে সার্থক হতে পারবে,আমার ভালোবাসা’টা বুঝতে পারবে ঠিক তখনি আমি বিয়ে করবো।
—তারমানে তুমি কাউকে ভালোবাসো?
চুপ করে থাকে সাফরান।তা দেখে স্নিগ্ধা আবারো জিজ্ঞেস করে “বলো না,ভালোবাসো কি’না কাউকে?”
—ভালোবাসি কিনা জানি না। কিন্তু অনেক করে চাই তাকে।
—কে সেই হতভাগিনী?
—হতোভাগিনী হতে যাবে কেনো (রাগ দেখিয়ে)
—কারণ তোমার মতো লালচোখ ওয়ালা রোবট যার কপালে পরবে তার কপালে,স্পেশাল মূহুর্ত,রোমান্টিক মূহুর্ত থাকবে না। এমন আনরোমান্টিক জামাই কেউ নিশ্চয় চাইবে না,,,।স্নিগ্ধা অট্টহাসিতে ফেটে পরে।
স্নিগ্ধার কথায় সাফরান বাইকের স্পীড কমিয়ে বাইক থামিয়ে ফেলে।তারপর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে,আমি আনরোমান্টিক?আমি রোবট। এই কথার জবাব তুই শীঘ্রই পাবি।
সাফরানের চোখ অস্বাভাবিক লাল দেখে স্নিগ্ধা বেশ ভয় পেয়ে যায়। সাফরান আবারও বাইকে গিয়ে বসে।বাইকের স্পীড বাড়িয়ে মূহুর্তেই কনভেনশন সেন্টারে পৌছে যায়।স্নিগ্ধার বান্ধবীরা ক্লাবের গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।দুজন কে একসাথে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়ে যায়।স্নিগ্ধা বাইক থেকে নেমে তাড়াহুড়ো করে বান্ধবীদের কাছে ছুটে আসতে যেয়ে হঠাৎ পরে যেতে ধরে,আর তখনি সাফরান স্নিগ্ধার কোমড় জড়িয়ে ধরে ফেলে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধার বান্ধাবীরা তাদের এভাবে দেখে ছবি তুলে নেয়।দুজনকে দেখে তাদের অনেক ঈর্ষা হয়।কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে। সকলে খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠে। তাদের চিৎকারে স্নিগ্ধা ও সাফরান দুজনে বাস্তবে ফিরে আসে।স্নিগ্ধা বান্ধবীদের কাছে ছুটে আসে।
—ওয়েলকাম জানু,তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম,সাথে ওটা কে রে,তোর সাফরান রোবট ভাইয়াটা না,,,
স্নিগ্ধার বান্ধবী রিদ্ধির কথায় সবাই হোহো করে হেসে উঠে।
—ডারলিং আজকের দিনে অন্তত আমাকে পচানো বাদ দে ,আজ তোর বিয়ে এখনো আমাকে পচাবি,তোর কথা বল,দুলে রাজা কাহাপার?
—এইতো কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
স্নিগ্ধা ও তার বান্ধবিদের কথায় অনেকটা বিরক্ত হয় সাফরান।কি সব নামে ডাকে একে অপরকে। রিদ্ধি সাফরানের দিকে তাকিয়ে বলে “হাই সাফরান ভাইয়া”
—হ্যালো,
—আপনাকে অনেক জোস লাগছে।
–থেংক্স
রিদ্ধি সাফরানের কথায় বেশ রেগে যায় অন্য কেউ হলে থ্যাংক্স এর সাথে বলতো “তোমাকেও বেশ সুন্দর লাগছে,আসলেই স্নিগ্ধা যা বলে তাই ঠিক মানুষ কম রোবট বেশি মনে হচ্ছে সাফরানকে”
রিদ্ধি,হাফসা,ফারজানা সবাই গল্পে মেতে উঠলো।কিন্তু তাদের বান্ধবী তন্নি পলকহীনভাবে সাফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। সাফরানকে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,সাফরানের কাছে আসলো তন্নি।
“হ্যালো মিস্টার আহমেদ”
—হাই!
— স্নিগ্ধার কাজিন রাইট?
—ইয়াহ
—ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরা কী পরিচিত হতে পারি?
—সিউর। আই’ম সাফরান আহমেদ
— আই’ম তন্নি চৌধুরী। স্নিগ্ধার ক্লাসমেট। ইউ লুক ভেরী হেন্ডসাম।
— থ্যাংক্স মিস চৌধুরী।
—ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরা কী বন্ধু হতে পারি?
—অফকোর্স নট মিস চৌধুরী।
সাফরানের কথায় তন্নি অনেক অপমানবোধ করলো।তারপরও মুখে আলতো একটা হাসি টেনে এনে বললো “হোয়াই?মিস্টার আহমেদ?
— কারণ এবার রাজি হয়ে গেলে হয়তো পরে বলবেন ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমরা কি বিয়ে করতে পারি”
—হাহাহাহা,,,নাইচ জোক।ইউ আর সো ফানি। বিয়ের অপশন তো পরে আসে,বন্ধুত্ব ঠিকঠাক হলে তো প্রেম ভালোবাসার ব্যাপার স্যাপার আসে,,
—যেন না আসে,এজন্যেই তো না বলে দিলাম।
স্নিগ্ধা আড়চোখে বেশ অণেক্ষন থেকে তন্নি আর সাফরানকে লক্ষ্যে করে যাচ্ছিলো।এই তন্নিকে স্নিগ্ধার সহ্য হচ্চে না।হেন্ডসাম কোনো ছেলে’কে দেখলে অমনি নিজ থেকে কথা বলতে চলে যাবে।ক্লাসের সব থেকে ছ্যচড়া মেয়েটাই হচ্ছে তন্নি।একেবারে গায়ে পরা স্বভাবের।
স্নিগ্ধা সাফরান আর তন্নির কাছে গিয়ে দাড়িয়ে থাকবে ভাবলো আর তখনি ছেলে পক্ষ চলে আসলো,।সেদিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা ভাবলো আগে গেটে গিয়ে পথ আটকিয়ে টাকা নিতে হবে তারপর তন্নি কে দেখে নিবে।
ছেলে পক্ষকে সবাই মিলে ঘিরে ধরলো।
—রুকিয়ে জিজু সাহেব,পেহলে পেছা ইছকি বাদ দিদি মিলেগা।
স্নিগ্ধার কথায় রিদ্ধির ছোট দেবর বাপ্পি বলে উঠলো “ইতনি খুব সুরাত শালী যাব কুচ মানতায় তাব দীল খুলকে দেনেকা মান কারতাহে”
—তারিফ কারনেছে দীল খুশ নেহি হোগা পেহলে পেছা দো,,,,
রিদ্ধির হাজবেন্ড নাফিজের আর তর সইছে না।রিদ্ধি কে দেখার জন্যে উতলা হয়ে আছে।তাই নাফিজ বললো “কতো টাকা চাও বলো”
—পুরা পঞ্চাশ হাজার।
স্নিগ্ধার কথায় সকলে অবাক হওয়ার রিয়াকশন দিলো।
নাফিজ পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করতে যাবে ঠিক তখনি বাপ্পি বললো “কতো টাকা চাও সুন্দরী?”
স্নিগ্ধা মুখ বাকিয়ে উত্তর দিলো “পঞ্চাশ হাজার”
বাপ্পি পকেট থেকে একটা নোট বের করে স্নিগ্ধার হাতে দিয়ে বললো “এখানে কতো?”
—৫০
তারপর বাপ্পি আর একটা নোট স্নিগ্ধার হাতে দিয়ে বললো ” এখানে কতো ”
—১০০০
এবার বাপ্পি বলে উঠলো। তোমরা টাকা পেয়ে গেছোতো পঞ্চাশ আর হাজার এবার যেতে দাও আমাদের।
স্নিগ্ধা বাপ্পির কথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো ” উল্লু সামঝা কেয়া”
—উল্লু নেহি,উল্লু বানায়া,,,,
বাপ্পির কথায় সকলে হেসে উঠলো,,,,
স্নিগ্ধা চোখমুখ খিচিয়ে বললো “হিসাবে এতো কাচা,গণিতে আন্ডা মারতে মারতে এই অবস্থা হয়েছে আপনার বুঝেছি।
স্নিগ্ধা ও বাপ্পির ঝগড়ায় সকলে বেশ মজা পায়।
শুধু ঈর্ষান্বিত চোখে সাফরান দূর থেকে স্নিগ্ধার কর্মকাণ্ড সব দেখছিলো।ছেলেদের নজর স্নিগ্ধার দিকে ছিলো যেটা সাফরানের একদমই সহ্য হচ্ছে না বিশেষ করে বরের ভাই বাপ্পির।
সবাই চলে যেতেই স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রাগী একটা লুক দিলো সাফরান।কিন্তু স্নিগ্ধা সাফরানের চাহনিকে পাত্তা না দিয়ে ক্লাবের ভিতর চলে গেলো।সাফরান ও পিছন পিছন আসলো। সারাটা সময় বাপ্পি স্নিগ্ধার সাথে দুষ্টামিতে মেতে ছিলো যা সাফরানের নজরে পরে।সাফরান স্নিগ্ধা কে বলে বাড়ি ফিরে যাবে।কিন্তু স্নিগ্ধা কোনোভাবেই রাজি হয় না।সবাই মিলে অনেক অনেক ছবি, নাচ হাসাহাসিতে মেতে উঠে।অন্যদিকে তন্নি ঘুড়ে ফিরে সাফরানের সাথেই কথা বলার জন্যে আসে।ছবিও তুলে কয়েকটা।সাফরান তুলতে না চাইলেও এক রকম জোর করে সেলফি তুলে নেয়। ছবিতে স্পষ্ট সাফরানের ক্রোধ ফুটে উঠেছে। এরকম গায়ে পরা মেয়ে আর দু’টো দেখে নাই সাফরান।হঠাৎ সাফরান চারোদিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা কে দেখতে পায় না।সাফরান হন্তদন্ত হয়ে স্নিগ্ধা কে খোজা শুরু করে।কিন্ত কোথাও নেই স্নিগ্ধা সাফরান ক্লাবের বাইরে গেটের এক পাশে স্নিগ্ধাকে বাপ্পির সাথে দেখতে পায়।দুজনে এক সাথে বাইরে স্টল থেকে আইস্ক্রিম খাচ্ছে।স্নিগ্ধার দিকে বাপ্পি কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যা সাফরান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। স্নিগ্ধা সাফরানকে রাগী চোখে তাদের দিকে তাকাতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।তখনি ফারজানা স্নিগ্ধা কে খোজতে খোজতে বাইরে আসে।তাদের দেখে বলে “আরেহ ছবি তোলার জন্য তোদের ডাকছে,চল ভিতরে”
স্নিগ্ধা ও বাপ্পি ফারজানার সাথে ক্লাবের ভিতর চলে যায়।ফারজানা সাফরানকে ও আসতে বলে কিন্তু সাফরান মূর্তির মতো বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।সাফরানের ইচ্ছা হচ্চিলো এখনি বাপ্পির চোখ গুলো তুলে নিতে। কিন্তু বরের ভাই একটা ঝামেলা হলে রিদ্ধির বিয়েতে সমস্যা হবে,এইভেবে সাফরান রাগ দমন করার চেষ্টা করে।কিন্তু রাগ যেন কমছেই না।
স্নিগ্ধার কেমন ভয় ভয় করে।স্নিগ্ধা কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে সাফরানকে দেখে চমকে উঠে।সাফরানের হাত থেকে রক্ত ঝরছে।আর দেওয়ালে সাফরানের হাতের রক্ত লেগে আছে। আশে পাশে কেউ নেই সবাই এখন ক্লাবের ভিতর।
—ভাইয়া এসব কী?তুমি ব্যাথা পেলে কীভাবে?
সাফরান স্নিগ্ধার দিকে তাকায়।সাফরানের চোখ রক্তিম লাল।তা দেখে শিউরে ওঠে স্নিগ্ধা।স্নিগ্ধা কিছু বুঝে উঠার আগেই সাফরান স্নিগ্ধাকে এক ঝটকায় টেনে স্নিগ্ধার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আকস্মিক সাফরানের এমন কাজে হকচকিয়ে যায় স্নিগ্ধা। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পর মুহূর্তে কি যেন হয়ে যায় স্নিগ্ধার। চোখ বন্ধ করে রাখে স্নিগ্ধা। সাফরানের প্রতিটা স্পর্শে শিউরে উঠছে স্নিগ্ধা। প্রায় পাচ মিনিট পর স্নিগ্ধা আবারো চেষ্টা করে নিজেকে মুক্ত করার আর তখনি সাফরান স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে স্নিগ্ধার হাত শক্ত করে ধরে বলে “আমি আনরোমান্টিক?আমি রোবট? আমার ফিলিংস নাই?আমি মানুষ না এসব মনে হয় তোর তাই না”?
সাফরানের কথায় স্নিগ্ধা কেপে উঠে। সাফরান আবারো স্নিগ্ধাকে কাছে টান দিয়ে নেয়।তারপর আবারো স্নিগ্ধার ঠোঁট ছুয়ে দেয়।এবার আর স্নিগ্ধা নিজেকে মুক্ত করার কোনো চেষ্টাই করে না।
এভাবে কেটে যায় আরো কিছু মুহূর্ত। হঠাৎ একটা গাড়ির হর্ন বাজতেই সাফরান স্নিগ্ধা কে ছেড়ে দেয়।
স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে বাইকে গিয়ে বসে। স্নিগ্ধা সাফরানের দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে এটা কী করলো সাফরান।
সাফরান পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্নিগ্ধার নাম্বারে মেসেজ দিলো। মেসেজ’টা পড়ে সাফরানের বাইকের পিছনে উঠে বসলো স্নিগ্ধা
সাফরান অনক রেগে আছে।সাফরান যখন রেগে থাকে আর কিছু করতে না পারে বা বলতে না পারে তখনি এভাবে মোবাইলে মেসেজ দেয়। কিন্তু স্নিগ্ধার কাছে অন্য কিছু মনে হয়।নাকি একটু আগের ঘটনার জন্যে সাফরান অনুতপ্ত। লজ্জায় স্নিগ্ধার সাথে কথা বলছে না।
পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলে না কেউ।দুজনেই একটু আগের ব্যাপারটা নিয়েই চিন্তিত।কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির সামনে চলে আসলো। বেশ রাত হয়েছে স্নিগ্ধা বাড়ির গেটে ঢুকতে যাবে ঠিক তখন সাফরান স্নিগ্ধাকে টেনে নেয়। বিষ্ময়ে চোখ ছানাবড়া করে রাখে স্নিগ্ধা। নিজেকে ছাড়িয়ে স্নিগ্ধা আমতা আমতা করে বলে “আমি বাড়িতে যাই,ঘুমাবো”
সাফরান কোনো কথা না বলে স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।চোখে মুখে স্পষ্ট ক্রোধ ফুটে উঠেছে। যা দেখে স্নিগ্ধা বেশ ভয় পাচ্ছে।স্নিগ্ধা ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে থাকে।সাফরান যতো এগিয়ে আসছে তার কাছে,ততো পিছিয়ে যায় কিন্তু দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে স্নিগ্ধার।তাই চোখ বন্ধ করে ফেলে স্নিগ্ধা ভেবেছে সাফরান বুঝি আবারো তার ঠোঁটের উপর আক্রমণ করবে কিন্তু অনেক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও যখন সাফরান কিস করলো না তখন একটা চোখ খুলে দেখে সাফরান এখনো তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা এবার দুই চোখ মেলে তাকায়।তারপর চলে যেতে ধরে আর তখনি সাফরান একটা হাত দেওয়ালের সাথে রেখে স্নিগ্ধার পথ আটকায়। স্নিগ্ধা রাগী চোখে তাকায় এবার সাফরানের দিকে। এবার সাফরান স্নিগ্ধার হাত দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে।
—ছেলেদের সাথে এতো কথা কিসের তোর?
—বা’রে আমি একটা মেয়ে তার উপর সিংগেল ছেলেদের সাথে কথা বলবো এটাই তো স্বাভাবিক।
স্নিগ্ধার কথা শুনে সাফরান আরও শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে,,,
—আ,ব্যাথা পাচ্ছি ভাইয়া।
—বাপ্পি ছেলেটার সাথে এতো হেসে কথা বলার দরকার কি ছিলো। ছেলেটা তোর দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে বারবার তুই কি দেখতে পাস নাই।
স্নিগ্ধা সাফরানের কথার কোনো উত্তর দেয় না।সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে সেই তখন থেকে স্নিগ্ধার উপর রেগে আছে সাফরান এটা বুঝতে পারে নাই।
–আসলে তোর দোষ না,দোষ আমারই আমি তোকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি।
—আমি কারো সাথে কথা বললে,কেউ আমার দিকে তাকালে তোমার কী?
—কারণ আমি তোকে,,,,,,
স্নিগ্ধা আগ্রহ নিয়ে জানতে চায় “তুমি আমাকে কী?”
সাফরান স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়।স্নিগ্ধাও পিছন পিছন যায়।
এদিকে অন্ধকারের আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সব কথা শুনছিলো ফাহিমা। বেশ কয়েকবার সাফরানকে এসে খুজে গেছে ফাহিমা আজ।স্নিগ্ধাকে নিয়ে বেরিয়েছে এটা শুনে স্নিগ্ধার মেজাজ বিগড়ে আছে।আর এখন দুজনকে এতো কাছাকাছি দেখে ভিতরে ভিতরে জ্বলে যাচ্ছে ফাহিমা।কিছু একটা বিহিত করতে হবে তা না হলে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে সাফরানকে।ফাহিমা চোখ মুছে বাড়িতে চলে যায়।
(চলবে)
গল্পটা সবার কাছে কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্টস করবেন।সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে গল্প লেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।গল্প কপি করা সম্পূর্ণ ভানে নিষিদ্ধ। ধন্যবাদ সবাইকে ?