#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমি আসলে ভীষণ ভালো অভিনয় করতে জানি।কীভাবে জানেন?মা চায় সবসময় যেন তার ছোট্ট মেয়ে হয়ে থাকি।এটা ওটা আবদার করি।আর মা সেগুলো দিতে হিমশিম খাবে।এমন না কিছু বুঝিনা।সবই বুঝি।আসলে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে তো।দুনিয়াটা খুব ঝলমলে না হলেও বানিয়ে নিতে হয়।”
কবীর ভূত দেখার মতো চমকে তোশার দিকে তাঁকিয়ে রইলো।মেয়েটির কথাবার্তা হুট করে ভীষণ বড়দের মতোন হয়ে গেলো না?ক্ষণপূর্বেই সে একটি কথা ভাবছিলো।তোশা দুই চোখে যা দেখছে সেটাই নিয়ে নিচ্ছে।এমনকি তার মা নিজেও খুব একটা টাকা পয়সার চিন্তা করছেনা।বরং সাজেশন দিচ্ছে এটাও ভালো লাগবে ওটাও ভালো লাগবে।বিষয়টি কবীরের কাছে মটেও ভালো লাগেনি।সে কিছু একটা বলবে ভেবেছিল।পরক্ষণে ভাবলো অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে।কিন্তু কবীরের মন চাচ্ছে খুব করে তোশাকে শাসন করতে।এই অধিকার মনটা কেন চেয়েছিল?
“হঠাৎ একথা কেন?”
“আমি ড্রেস কিনছি আর আপনি অদ্ভূত চোখে তাঁকিয়ে আছেন।বিষয়টা বুঝি আমি।”
“বাহ!তোশামণি এতো বড় কবে হলো?”
“আমাকে চিনেন কবে থেকে?”
কবীর চিন্তা করার ভঙিতে বলল,
“হুমম।মাস খানেক আগে থেকে।তবে বুঝেছি ভালো একটা মেয়ে।”
“হুঁ?আরো কতোবার বুঝতে হবে আমাকে।তবেই সঠিক চিনতে পারবেন।”
“কতোবার?”
“গুণতে হবে বুঝলেন।”
তোশা কবীরের থেকে দূরে সরে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।একটা লাল রঙের থ্রি পিচ নিজের উপর রেখে তোশা বলল,
“মা দেখো তো কেমন লাগছে?”
“ভীষণ ভালো।এটাও নিয়ে নাও।বুধবারে যখন বান্ধুবীদের সাথে ঘুরতে যাবে তখন পরে যেও।”
“ওকে।আমি ট্রাই করে দেখে আসছি।”
তোশা চলে গেলে তাহিয়ার পাশে এসে দাঁড়ালো কবীর।মুচকি হেসে বলল,
“তোশামণি এতোটাও বাচ্চা নয় দেখছি।”
“এটা কীসের জন্য মনে হলো?”
“মনে হলো এমনিতে।যাই হোক কাল আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।তুমি কাইন্ডলি মিটিংটা সামলে নিবে?”
বিরক্ত হলো তাহিয়া।উদাস কণ্ঠে বলল,
“আমাকে খুব বিশ্বাস করছো।এতো এতো টাকার বিষয়টা কেন যে শুধু আমাকে সামাল দিতে বলছো।”
“নাহ তোমাকে বিশ্বাস করিনা।”
“একটা কথা বলো তো কবীর।আমার উপর এই চোখ বন্ধ বিশ্বাসটা মায়ান করতে বলেছে তাইনা?প্রাক্তন স্ত্রীর প্রতি এতো মায়া কিন্তু খুব একটা ভালো নয়।”
“বাদ দাও তাহিয়া।তোশা এখনও ফিরে এলো না যে।”
“তাইতো।আমি দেখছি দাঁড়াও।”
“নো।আমি দেখে আসছি।”
কবীর ট্রায়াল রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।বড্ড এলেমেলো পা তার।কিন্তু একজন নারীর দর্শনে থেমে গেলো যে একমনে ড্রেস দেখছে ঘুরেঘুরে।শুস্ক হয়ে উঠলো কবীরের কণ্ঠ।কী অদ্ভূত দুটো মানুষ এতো কাছাকাছি কিন্তু দূরত্ব?সেটা তো আকাশসম।কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেললো।য ন্ত্র ণা থেকে চোখটা সরিয়ে নিলো।তোশা এক জায়গায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লাল রঙের ড্রেসটায় দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।ফোলা ফোলা গাল দুটো বড্ড আকর্ষণীয়।কবীরের মনটা হঠাৎ ষোল বছরের কিশোরের হতে চাচ্ছে।তোশা কান্নামাখা মুখে কবীরকে কাছে ডাকলো।
“কী হয়েছে বেবিগার্ল?”
তোশা নিচু সুরে বলল,
“একটা ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।আম্মুকে ডাকেন।”
“কী হয়েছে সেটা বলো তো।”
“আম্মুকে ডাকেন।পার্সোনাল বিষয়।”
কবীর একটা জিনিস ভেবে পেলো না পনের বছর বয়সী মেয়ের কী এমন পার্সোনাল বিষয় থাকতে পারে।কিন্তু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে তাহিয়াকে ফোন করলো।তোশা এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
“কী হয়েছে কবীর?কল কেন করলে?”
“দেখো তো।তোশার কী সমস্যা।”
“কী হয়েছে তোশা মা?”
“আম্মু শুনো।”
“হ্যাঁ বলো।”
তাহিয়াকে টেনে ফিসফিস করে পিরিয়ড কথাটি উচ্চারণ করলো তোশা।কিন্তু ততোটা গোপন হয়নি কথাগুলো।স্বল্প দূরত্বে দাঁড়ানো কবীর স্পষ্ট শুনলো।খুবই বিব্রত হলো ব্যক্তিটা।নিশ্চয় ট্রায়াল দিতে গিয়ে এই ড্রেসটা নষ্ট করেছে।কবীর আসছি বলে তৎক্ষনাৎ কাউন্টারে গিয়ে ড্রেসটার বিল মিটিয়ে দিলো।এটা সে কেন করলো জানা নেই।অবশ্য আর ড্রেস গুলোর দাম দিলে তাহিয়া ভীষণ রাগারাগি করবে।এই নিয়ে যেন কোনো প্রকার কথা না হয় তাই তৎক্ষনাৎ বিনা বিদায়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে গেলো কবীর।
(***)
তোশামণির খুব লজ্জা লাগছে।সত্যি বলতে খুব খুব খুউউউব।কিন্তু কাওকে এই অনুভূতিটা ব্যক্ত করতে পারছেনা।মন খারাপ হলে সে তার কল্লোল ভাইয়ের কাছে আসে।তার বিছানায় উপর হয়ে গড়াগড়ি খায়।আর পুরো সময়টিতে সবথেকে পড়াকু,ভালো,ভদ্র ছেলে কল্লোল অঙ্কে ডুবে থাকে। কঠিন ম্যাথটা শেষ হলে সে তবেই কথা বলে।আজও ব্যতিক্রম নয়।তোশাকে ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখে কল্লোল শুধালো,
“কী ব্যাপার তোশামণি।আজ এতো দুঃখ কেন?”
চিন্তিত ভঙিতে জবাব দেয় তোশা,
“আমি আজ অনেক লজ্জা পেয়েছি একজনের কাছে।”
“কীভাবে?”
“বলা যাবেনা।”
“ওহ।”
কল্লোল পুনরায় বইয়ে ডুবে থাকার জন্য অগ্রসর হলো।সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।তোশা তার পড়ায় বিঘ্ন ঘটিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“একটা না চাওয়া স্পর্শ পছন্দের মানুষ করলে কিছু হয়না।কিন্তু অপরিচিত মানুষ করলে এতো সমস্যা কেন হয়?”
“হুঁ?বুঝিনি কথাটি।”
“ধরো একজনকে আমি ভালোবাসি তাই ভুল করে সে অহেতুক স্পর্শ করে ফেললো সেটা তার খারাপ লাগেনা।কিন্তু সেম স্পর্শ সমান ভুল করে অন্য কারো থেকে পেলে কেন খারাপ লাগে?গা ঘিনঘিন করে।”
“তুমি খিচুড়ি পছন্দ করো না।কিন্তু বিরিয়ানি করো।কিন্তু দুটোই চালের তৈরী ভেজ, নন-ভেজ হয়।তাহলে একটা খারাপ লাগে আরেকটা কেন লাগেনা?”
বুঝদারের মতোন মাথা দুলায় তোশা।ফিসফিস করে বলে,
“তাহলে সে আমার পছন্দের মানুষ।হাহ, আমি তো জানতাম।অজানার ভান করছি কেন?আর লজ্জা পাচ্ছি কেন আসলে?”
নিজ ভাবনায় মশগুল তোশামণি আস্তে ধীরে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ভবিতব্য পূর্ণ বয়স্ক যুবক কল্লোল চশমার ফাঁকে তার প্রস্থান দেখলো।সে সম্পর্কে তোশার মামাতো ভাই।দুজনে একত্র বড় হয়েছে।এমনকি একে অপরের মিলও রয়েছে।কল্লোলের গোপন অনুভূতি হচ্ছে তোশা।কিন্তু সেই কথাটি বলার সাধ্য আপাতত তার নেই।কখনো হবে কী?
(***)
ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে দিলো কবীর।এতোক্ষণ ট্রেডমিলে দৌড়েছে সে।মাথায় পানি না দিলে ভালো লাগছিলো না।গায়ে জড়ালো গেঞ্জটি ত্বকের সঙ্গে লেপ্টে আছে।তামাটে পেশিবহুল বাহুদুটোর শিরা উপশিরা দৃশ্যমান।কবীরকে পয়ত্রিশ বছর বয়সেও ভীষণ সুন্দর দেখায়।আগে অবশ্য এমন ছিলনা।ইদানীং অর্থের শেষ নেই।তাই নিয়মিত জিম,খাদ্যভাস পালন করেই নিজের যৌবন ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে।আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কবীর।ছোট্ট টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুছে নিচ্ছে আর ভাবছে জীবনটা একাকিত্বে ভরে গিয়েছে তার।আপন মানুষ বলতে কেউ নেই।ঠিক এমন সময় তার ফোনে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল এলো।
“হ্যালো কে?”
“হ্যালো,হ্যালো শুনেন।আমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়ে তোশামণি বলছি।”
চলবে।