মিঠা রোদ পর্ব ৩৯

0
3050

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার মেয়ের সাথে তোমার অন্যরকম সম্পর্ক কবীর।কেমন অদ্ভূত লাগে যখন একে অপরের সঙ্গে কথা বলো।সাধারণ যে ভাব কিংবা অনুভূতি বজায় থাকার কথা দুজনের মধ্যে সেখানে ব্যতিক্রম কিছু আছে।”

“তুমি বুদ্ধিমতী তাহিয়া।এর বাহিরে কিছু বলার নেই।”

কবীরের হেঁয়ালিপূর্ণ বাক্যগুলোতে ব্যতিক্রম সন্ধান করেও মিললো না।তাহিয়া মুখ বিবরে দ্বিধা বজায় রেখে পুনরায় বলল,

“তোশামণি কী নিজের কথা তোমার সাথে কখনো শেয়ার করে?আমাকে একটা জিনিস জেনে বলতে পারবে?”

“তোমার কী হলো বলো তো তাহিয়া।আজ এসব কথাবার্তা বলছো।”

তাহিয়া অপ্রস্তুত ভঙিতে হাসলো।গায়ে জড়ানো ওড়নাটি একটু এদিক ওদিক করে নিলো।চেহারার চেকনাই এখনও সমানতালে চারিধারে আভা ছড়ায়।

“মায়ান বড্ড সুবিধাবাদী মানুষ।এতোদিন মেয়েকে বড় করলাম আমি।এখন এতো বছর পরে হুট করে পিতৃধর্ম পালন করতে চাচ্ছে।ওর বড় ভাইয়ের ছেলের সাথে তোশার বিয়ের কথা শোনালো।দেখো তো প্রাক্তনরা এমন কথাবার্তা কেন বলে যে ঘৃ’ণা করাও তাদের ক্ষেত্রে কম মনে হয়।”

কবীরের মুখের রঙ কয়েক দফা বিবর্ণ হয়ে গেলো।সে জানতো মায়ানের এমন পরিকল্পনার কথা।তবে সময়ের ব্যবধানে ভুলে গিয়েছিল।

হালকা বিদ্রুপের সুরে বলল,

“তোশামণিকে দেখছি অনেকে বিয়ে করতে চায়।অবশ্য সুন্দরী,গুণে লাবণ্য মেয়েদের এমন এক জ্বা’লা থাকবেই।ভেবো না।মায়ান ঠিক করুক।কিন্তু শেষে তোশামণি যাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা পোষণ করবে সেই মানুষটা বিজয়ী হবে।”

“আমি এই কথাটা জানার জন্য এসেছি তোমার কাছে।তোশা কী কাওকে পছন্দ করে?”

“তোমার মন,মস্তিস্কের ধারণা কী?”

“ধারণা সবসময় সত্য হবে এমনটা নয়।কিন্তু মন বলছে কেউ একজন আছে আমার মেয়ের জীবনে।মস্তিস্ক আবার বলে যে মেয়েটা এখনও এতো বোকা বোকা কথা বলে সে প্রেম বা ভালোবাসা নামক জিনিসে জড়াবে?”

“কেন?জড়ানো তে অস্বাভাবিক কিছু দেখছিনা।”

“আছে।প্রেম করে চালাক মানুষেরা।আমার মেয়েটা এতো ওমন নয়।”

কবীর অধরযুগল কাঁ’ম’ড়ে হেসে ফেললো।মেয়ে যে প্রেমের বেলায় অষ্টরম্ভা নয় বরং ভাবনার বাহিরে চতুর।এই কথাটি তাহিয়া নামক জননীর জানা নেই।পরক্ষণে তাকে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে কবীর বলল,

“হুঁ?বোকারা প্রেম করেনা?নিজের জীবন দেখেও এই ধারণা জন্ম নিলো মনে?তুমি কিন্তু সর্বোচ্চ লেভেলের বোকা ছিলে।আর মায়ান ছিল ভীতু।এগুলো ভুলে যেওনা।”

“তোমার এসব কথায় মনে হচ্ছে তুমি চিনো তোশামণি কাকে পছন্দ করে কিংবা পুরো ব্যাপারটা কী আসলে।”

কবীর দ্বিধা তৈরী করে বলল,

“জানি কিংবা জানিনা।ভেতরের কথা গুলোর জন্য সময়কে সময় দাও।সবটা জানতে পারবে।”

“মেয়ে তো বিপথগামী হয়নি?”

বড্ড ঠান্ডা সুরে প্রশ্নটি শুধালো তাহিয়া।কবীরের বর্তমানে জীবনে যা সবথেকে ভ’য়া’বহ।আজকে তাদের মধ্যে আলোচনাকে সবাইকে সবটা জানানোর প্রথম ধাপ বলে বিবেচিত করে নিলো।প্রশ্নটির ভিন্নমাত্রায় জবাব দিলো সে।

“মেয়ের জীবনসঙ্গী হিসেবে তোমার কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে?”

“সারাজীবন সাথে থাকবে ব্যতীত আর কোনো চাওয়া নেই।বাকীটা যে সাথে থাকবে সে যদি খুশি থাকে সেখানে মা হয়ে সেই আনন্দ কেঁ’ড়ে নেওয়ার মতোন নির্বোধ আমি নই।”

“তাহলে সুপথ/বিপথের ভাবনাটি না হয় আপাতত সরিয়ে রাখো।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করো শুধু।”

উষ্ণ শ্বাসে কবীরের বুকটা ভরে গেলো।এই অসম সম্পর্কের ব্যাপারে আলোচনা যেখানে কঠিন সেখানে সকলকে বিয়ের জন্য মানানো অনেক বড় ব্যাপার হবে।কিন্তু দুনিয়াতে হয়তো অসাধ্য বলে কিছু নেই।কোননা কোনো পরিণতি পাবে তোশা-কবীরের সম্পর্ক।

(***)

“তুই কী সালমান খান হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিস নিজের সঙ্গে?দেখ চল্লিশটা বছর হয়ে গেলো।এইবার তো বিয়ে করে নে।”

মাথা নিচু করে কবীর খেতে ব্যস্ত।যেন মায়ের কথাগুলো কর্ণকুহর হয়নি।হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিতে নিতে বলল,

“বুঝলে মা আমাকে পরীতে ধরেছে।খুব সুন্দর পরী।আপাতত সে ছাড়বেনা।যদি ভবিষ্যতে ছেড়ে কোনো জিনের পিছনে দৌড় দেয় তখন তাহিয়া ঘটককে কাজে লাগাবো।”

সেতু খলবল করে বলল,

“তাহিয়াকে মটেও ঘটক বলবিনা।সোনা মেয়েটা কতো চেষ্টা করছে তোর সংসার তৈরী করার।”

“ওইযে বললে সালমান খান হবি কীনা।আপাতত সেই চিন্তায় আছি।ফিফটি সেভেনে পা রাখতো দাও।তখন বিয়ের জন্য ভাববো।তাছাড়া আমি যথেষ্ট ইয়াং একজন পুরুষ।মটেও বুড়ো নই যে বিয়ের জন্য পাগল হলে।”

“দেখলে তাহিয়া।”

তাহিয়া উপর নিচে মাথা দুলিয়ে বলল,

“দেখছি আন্টি।কবীর তোমার বিয়ে করতে কী সমস্যা?সত্যি করে বলো।”

“ছেলে আছে আমার।”

“তা কোনো ব্যাপার না।তুমি চাইলে ইয়াং মেয়েকেও বিয়ে করতে পারো।কারণ বিনা সংকোচে তোমার কোয়ালিফিকেশন দেখে রাজী হয়ে যাবে মেয়েরা।”

“ওইযে বললাম পরীতে ধরেছে।”

“কোনো পছন্দ আছে?”

“জানিনা।”

সেতু বিরক্ত হয়ে বলল,

“এতো পরী পরী করিস না।ভালো লাগেনা আমার ভয় করে।পরীরা দেখতে কুৎসিত হয়।বাহিরের সৌন্দর্য সবতো মরিচীকা।”

সেতু আদি যুগের মানুষ।এক কালে অনেক প্রসস্থ মস্তিস্কের হলেও ইদানীং গ্রামের মহিলাদের মতোন স্বল্পপ্রাণের হয়ে যাচ্ছে।পুরো বিষয়টিতে কেউ যদি একটুও মন না বসাতে পারে সে হচ্ছে তোশা।কারণ কুৎসিত কথাটি শুনে বৃষ্টি আড়ালে হেসেছে।এই একটু-আধটু বিদ্রুপের হাসিগুলো।তোশাকে ইদানীং সর্বোচ্চ পোড়ায়।রাগটা এবার কবীর শাহ এর উপরে গিয়ে পড়লো।একটু শক্ত সুরে বলল,

“তাকে পরীতে ধরবে কীভাবে?সে তো কালো।আর কালোদের সুন্দর পরীতে ধরেনা।”

ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সকলের চোখ তোশার কাছে এসে থেমে গেলো।তাহিয়া চাপাসুরে স্বাবধান করলো।সেতু মুখটা গো’ম’ড়া করে বলল,

“তোশামণি,আমার ছেলে মটেও কালো না।”

কবীর কথার মধ্যিখানে বলল,

“কালো হলেও যে পরীটা পছন্দ করে সে খুব সুন্দর।যদি ধরো আমি কু’ৎ’সি’ত তাহলে ভাবতে হবে পরীটা অন্ধ।এক্ষেত্রে ভালোবাসা বেশী।বুঝলে।”

“বুঝলাম।”

সেতু কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো।কিন্তু কবীর চোখের ইশারায় না করে দিলো।সে জানে তার মা এই কালো,ফর্সার ভেদাভেদ মানতে পারেন না।মুখটা মলিন করে সেতু খেতে লাগলো।পুরো ডাইনিং রুমে নিস্তব্ধ পরিবেশ।হুট করে সামান্য কেঁশে সেতু বলল,

“আসলে হয়েছে কী?এটাই সঠিক সময় দেখে বিষয়টা বলছি।অন্তত তাহিয়া তো বুঝবে আমাকে।দিশা কাল রাতে ফোন করেছিল আমাকে।সে নিজের স্বামী সন্তান ফিরে পেতে চাচ্ছে।আমি কিছু বলিনি।তবে যদি ফিরে আসে তো।”

কবীর মুখে থাকা খাবার গিলে ফেললো।শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“এটা কোনো আলোচনার মধ্যে পড়ে মা?সম্ভব এতো বছর পর কিছু?”

“কেন নয়?”

“কখনো না।তাছাড়া আমি জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছি।”

“কিন্তু সেই তো একা।”

“নাহ আমি একা নই।”

“তাহলে এতোক্ষণ পরীর কথাটা সত্য?কেউ আছে জীবনে।”

“না থাকার কিছু নেই।আছে একজন।তাই বলে সে দিশা নয়।”

সেতু শান্ত হলো।ভীষণ নরম কণ্ঠে বলল,

“দিশা আমাকে গত একমাসেও ফোন করেনি।বরং কথাটি বানিয়ে বলেছি তোমার জীবনে কেউ আছে কীনা জানতে।চল্লিশ বছর বয়সে কেউ প্রেম করে?পরীকে ধরে নিয়ে আসবি।তা নয় এমন কবিরাজি আরো দেখবি।”

কবীর আ’হ’ত সুরে বলল,

“তুমি মিথ্যা বলে বের করলে?”

“একদম।তাহিয়া তুমি জানো কে?”

“নাহ তো আন্টি।আশ্চর্য জানেন আমার নিজের মেয়ের কথাও মনে হয় ওর কেউ আছে।তোশাকে কয়েকবার জিজ্ঞেসও করতে গিয়েও পারিনি।আজ কবীর বলল।দেখেছেন আমাদের দুজনের ছানার গোপন মানুষ আছে।কিন্তু আসলে তারা কে?”

সেতু তাল মিলিয়ে বলল,

“নিশ্চয় সারপ্রাইজ পাবো আমরা সময় হলে।বাচ্চাদের উপর বিশ্বাস রাখি।”

টেবিলে বসে থাকা এই তাহিয়া -সেতু নামের মা গুলো ছাড়া আর সকলে জানে তাদের ছানাদের গোপন মানুষ বলতে তারা নিজেরাই।কবীর অসহায় হয়ে নিজের মাকে দেখছে।আসলেও সে সব রমণীর কাছে চ’তু’র হলে মা নামক মানুষটার নিকট ভীষণ বোকা।অন্যদিকে তোশা দুই রমণীর হাসিতে অবাক হচ্ছে।যখন সারপ্রাইজটা পাবে তখন কী করবে তারা?সময় তো ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে সকলের সবটা জানার।

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।পাঠক সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন।এইতো শুরু হয়ে গেলো সকলের সবটা জানার।আমার নিজের লিখতে গিয়েই কেমন মনে হচ্ছে?আসলে আমরা সবাই অপেক্ষায় আছি তোশামণি-কবীর শাহ এর প্রেমের সম্পর্কের খোলাসা হওয়া দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here