মিঠা রোদ পর্ব ২৮

0
3158

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“ড্রাকুলা তোশা।”

বক্ষঃস্থলের নিবারণ ত্বকের উপর ছোট ছোট দাঁতের চিহ্ন দেখে ঈষৎ হাসলো কবীর।মেয়েটির জন্য ড্রাকুলা উপাধি যেন একদম মিলে যায়।এখনও ক্ষ ত টা জীবন্ত রয়েছে।সকালের পর তাতে ঔষধ লাগানোর সময় হয়ে উঠেনি।ড্রয়ার বের করে তাতে মলম লাগাচ্ছে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।হাত বাড়িয়ে রিসিভ করে সেটি কানে রাখলো কবীর,

“হ্যাঁ বল পারভেজ।”

“ভাই তোশার কথাগুলো সত্য।দিশা নিজে স্বীকার করলো আমার কাছে।”

মুহুর্তেই তামাটে মুখটি আরক্ত হয়ে উঠলো।কবীর এমনিতে শান্ত ধীর মেজাজের মানুষ।তবে কোনোকিছু নিয়ে বিরক্ত হলে রাগের শেষ থাকেনা।

“দিশার কী মাথা খারাপ?ও বুঝতে পারছে ঠিক কী করেছে?সব বাদ বাচ্চা মেয়েটিকে আমার ইন্টিমেন্ট সময়ের বিহেভিয়ার গুলো বর্ণনা করেছে।দিশা না শিক্ষিত একজন মানুষ?তবে কেন এসব করলো?এতো যদি মায়া বা স্মৃতিচারণ করার ছিল তাহলে ডিভোর্স কেন দিলো?বিচ্ছেদের কথা তো আমার থেকে নয় বরং ওর থেকে আগে উঠে এসেছিল।”

পারভেজ উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“মানুষ বড় বিচিত্র মস্তিস্কের হয়।কোন সময় কোন বিহেভিয়ার করে ফেলে বলা যায়না।আমাকে যতোটা বলল সেটা হচ্ছে আহনাফের সাথে তোশার বেশ ভালো সম্পর্ক।ঠিক সেটা মেনে নিতে পারেনি ও।এজন্য কীনা…।”

“এজন্য কী?কোনোভাবে জঘন্য কাজটা তুই জাস্টিফাই করতে পারিস না।হতে পারে দিশা তোর সবথেকে প্রিয় বন্ধু।কিংবা আমার প্রাক্তন স্ত্রী।তবে ওর কিছু কিছু কাজ মনুষ্যত্বের বাহিরে চলে যায়।ভেবেছিস কতোটা ট্রমাতে গিয়েছে তোশা।”

“দিশা নিজের ক্যারিয়ার ভুলে শুধুমাত্র আহনাফের জন্য স্কুলটায় আছে।যদি দেখে ছেলেটা তার থেকে তোশাকে বেশী ভালোবাসে, দেখা হলে কথা বলেনা তবে কোন মা মানতে পারবে বল?ক্ষমা করে দে।”

কবীরের মুখমণ্ডলের মাংস পেশী দৃঢ় হতে দেখা গেলো।পারভেজ ও দিশা বন্ধু কম ভাই বোনের মতোন বেশী।এই কারণে একজনকে কিছু বললে অপর জন জেনে যায়।কবীর নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,

“আমার ছেলে বা তোশার কারো জীবনে যেন দিশাকে আবার না দেখি।মনে রাখতে বলবি।”

“ওকে বলবো।কিন্তু একটা কথা বল।তোশার সঙ্গে আবার যোগাযোগ শুরু হয়েছে তোর?দেখ আমি অন্য কারো নয় শুধু তোর কথা ভাবছি।মেয়েটা ছোট্ট।এখন মনে হবে তুই সব।কিন্তু একসময় তোর উপর বিতৃষ্ণাতে সরে যাবে।জীবনের যতোটা দিন আছে এরপর তো তুই কষ্ট পাবি।”

“না যোগাযোগ নেই।আজ দেখা হয়েছিল।তাই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলল।”

“যোগাযোগ না রাখা ভালো।আমি দিশাকে বলে দিবো।ও কখনো এমনটা করবেনা।তুই শুধু তোশার সঙ্গে কোনোরকম আলাপ করিস না।”

“খেয়াল রাখবো।”

পারভেজ ফোনটা রেখে দেওয়ার পর ভাবুক হয়ে উঠলো কবীরের মন।সে মুখের উপর মিথ্যেটা বলেছে কারণ তোশার কথাটি অতীতে পারভেজকে জানানোর কয়েক মুহুর্ত পরে দিশা জেনে গিয়েছিল।ফলস্বরুপ বিষয়টা আরো কাঁদায় মাখামাখি হয়েছে।কবীর এটা বিশ্বাস করে কিছু সত্য কারো ভালোর জন্য গোপন রাখা ভালো।

“বাবা,মা আবার কী করেছে?”

ভাবনা থেকে বের হয়ে সামনে তাঁকালো কবীর।আহনাফ রাতের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।স্বভাবসুলভ সে বাবার সাথে ঘুমাবে।ছেলেটা মায়ের মতোন গায়ের রঙটা পেলেও মুখাবয়ব সবটা বাবার মতোন পেয়েছে।কবীর শাহ এর শুভ্র রুপ হচ্ছে আহনাফ।

“কিছু করেনি আহনাফ।তুমি এখানে ঘুমাবে আজ?”

“হ্যাঁ বাবা।আমার কাছ থেকে হাইড করার কোনো কারণ নেই।এখন আমি বড় হয়ে গিয়েছি।”

কবীর হেসে ফেললো।এক তোশা যে সবসময় ছোট থাকতে চায় আরেক আহনাফ যে সবসময় বড় হতে চায়।বিপরীত মেরুর দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হলো কীভাবে?

“তোমার আইসক্রিমকে দিশা কষ্ট দিয়েছে একটু।তাই রাগ হয়েছিল।”

“আইসক্রিম নিশ্চয় কেঁদেছে?মেয়েটা খুব কাঁদে।”

“আমি আইসক্রিমের ব্যাপারে কীভাবে জানি সেটা জিজ্ঞেস করবেনা?”

আহনাফ বিছানাতে একপাশে শুয়ে পড়তে পড়তে বলল,

“তোমাকে ভালোবাসে আইসক্রিম।তবে তুমি চিনবেনা এমনটা তো হওয়ার নয়।”

কবীরের অক্ষিগোলকের আকৃতি বড় হতে দেখা গেলো।একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে বিছানার পাশে এসে বসলো।

“তুমি মাত্র বারো বছর বয়সে ভালোবাসার অর্থ জানো আহনাফ?এসব শিখেছো কার থেকে?”

“দাদা শিখিয়েছে।”

মৃদু হাসলো কবীর।তার বৃদ্ধ বাবা এক বয়সে তাকেও এসব শিক্ষা দিয়েছিল।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কবীর।বাচ্চাটাও যেন মোমের মতোন গলে গেলো।বাবার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা।তুমি কখনো আমাকে ভুল বুঝো না।”

“আহনাফ শাহ একজন ভালো ছেলে।আমি জানি তুমি এমন কোনো কাজ করবেনা যা অন্য মানুষের চোখে ভালো নয়।কিন্তু ভালোবাসা নিয়েও ভাববেনা।বয়স অল্প।জীবনে এসবের জন্য বিস্তর সময় আছে।মনে রাখবে আহনাফ সময়ের আগে ফল পরিপক্ব হয়না।হলে সেটার মিষ্টতা থাকেনা।তোমার আইসক্রিমকে দেখো মিঠা রোদে পরিপক্ব ফল।যত্ন নিতে হয় বেশী।”

আহনাফের পিঠটা মৃদু আন্দোলিত হলো।হাসির ঈষৎ আওয়াজে কবীর ভ্রু কুঁচকে রইলো।ছেলেটির কিছু স্বভাব যে তোশার সঙ্গে মিলে আজ অনুধাবন করতে পারলো সে।

“তুমি হাসছো কেন আহনাফ?”

“আইসক্রিম জানো তোমাকে কী বলে?”

“কী?”

“শুনো আমি হলাম মালাই,সে আইসক্রিম আর তুমি সবার উপরে থাকা চকলেট সিরাপ।”

“এটা তোশামণির বলা কথা?আশ্চর্য।আমি কীনা চকলেট সিরাপ?”

হুট করে আহনাফ আবদারের সুরে বলল,

“আইসক্রিম আমি রবিবারে ঘুরতে যাবো।তুমি সাথে যাবে আব্বু।”

“তোমার মেয়েটাকে কেন খুব ভালোলাগে?”

ধণাত্বক মাথা দুলালো আহনাফ।শোয়া থেকে উঠে এসে বাবার গলা জড়িয়ে বলল,

“জানিনা কিন্তু ওর সাথে সময় কাঁটাতে ভালোলাগে।”

কবীর ফিসফিস করে বলল,

“আমারও।”

(***)

“এই তোশামণি।এই তোশামণি উঠ।দেখ ভূ মি ক ম্প ছাদে এসেছে।”

ঘুম জড়ানো কণ্ঠে তোশা জবাব দিলো,

“ঘুমাতে দে অপ্সরা।ভূ মি ক ম্প ছাদে আসার সম্ভবনা নেই।”

“আরে স্বপ্নে বহু কিছু হয়।উঠ তো তুই।”

নিভু নিভু দৃষ্টিতে চোখ মেলে তাঁকালো তোশা। বাহির থেকে ল্যাম্প পোস্টের হলদেটে আলো আসছে।

“আমি স্বপ্ন দেখছি অপ্সরা?”

“হ্যাঁ তো।চল তোর ভূ মি ক ম্প দেখতে হবেনা?”

“হু।”

“উঠ রে তোশামণি।”

ঘুমের ঘোরেও তোশার বড্ড কৌতুহল হলো।ছাদে কীভাবে ভূ মি ক ম্প আসবে?কাঁপতে কাঁপতে অপ্সরার পিছনে হাঁটছে।আচ্ছা স্বপ্নও কী এতো বাস্তব হয়?

অপ্সরার বলা ভূ মি ক ম্পটি লম্বা চওড়ায় বিশাল।রাতের অন্ধকারেও তামাটে রঙটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।তোশা স্বপ্নের ভ য়া ব হতা বুঝতে পেরে শিউরে উঠলো।হাতা কাঁটা টি-শার্টটিতে পুরুষটির বাহু দুটোকে উঁচু ঢিবি মনে হচ্ছে।তোশার ঘোর হলো।সে এগিয়ে গিয়ে ছাদের একপাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকালো।চোখ বন্ধ করে পুনরায় তন্দ্রায় ডুবে গেলো।যেন স্বপ্নটি পুরোটা না দেখলেও চলবে তার।বিভ্রান্ত কবীর শাহ কিন্তু পিছু হটলো না।সরল পায়ে এগিয়ে এসে ঘুমন্ত যুবতীকে সোজা করে দাঁড়া করালো।মেয়েটা রোদে থাকা টলমলে লতার ন্যায় হয়ে উঠেছে।তাকে পিছন দিকে থেকে আলিঙ্গন করলো কবীর।ক্ষণে ক্ষণে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর যুবতীর উদ্দেশ্যে শুধালো,

“তোমার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী তোশামণি?”

তন্দ্রাচ্ছন্ন তোশা জবাব দিলো,

“কবীর শাহ।অন্য ভালোবাসায় আম্মু,আব্বু ও মালাই আছে।”

ভালো লাগায় মনটা ভরে গেলো কবীরের।পরক্ষণে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে তোশা শুধালো,

“আপনার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী কবীর শাহ?”

জবাবে সে বলল,

“ভালোবাসার অর্থটা জানা নেই।কিন্তু নামটা আমার কাছে এক।যা সময়ে সময়ে বিভিন্ন রঙে এসে ধরা দেয়।কখনো ছোটখাটো ছিমছাম কিশোরী রুপে তো কখনো খোলাচুলে লাবণ্যময়ী যুবতী রুপে।তবে সে একজনই তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

অধর যুগল প্রসারিত হয়ে গেলো তোশার।আস্তে করে চোখ খুললো।এতোক্ষণে তার মস্তিস্ক সচল হতে শুরু করেছে।পুরোপুরি জাগ্রত হয়ে উষ্ণ শ্বাস ফেললো সে।কী এক য ন্ত্র ণা হচ্ছে তার।অভিমানী হয়ে বলল,

“কেন এসেছেন আমার কাছে এসব কথা নিয়ে?আপনি তো স্বপ্ন নয়।হুট করে মন কেন পরিবর্তন হলো?”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে সুন্দর করে রেসপন্স করবেন।রেসপন্স করলে গল্পটা আরো মানুষের কাছে পৌছায়।বাকীটা আগামীকাল পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here