মিঠা রোদ পর্ব ২৩

0
2858

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“পুরুষ কী শুধু প্রেমিকাকে ফুল দিতে পারে অন্য কাওকে না?আমি জন্ম থেকে এতিম ছিলাম।কিন্তু একজন চমৎকার মানুষ আমাকে নিজের পরিচয়ে বড় করে তুলেছেন।সেই চমৎকার মানুষটির আবার আরেকজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ছেলে আছে।যে নিজ বোনের অনুরূপ আমাকে সম্মান করে, ভালোবাসে।আমার প্রিয় ফুল গোলাপ।যখুনি দেখা হবে ফুল কিনে দিতে ভুলবেনা।এমনকি সেই ভাইয়ের ছোট ছেলেটিও দেখা হলে ফুল দিবে।এখন বলো তোমরা তারা কী পুরুষ নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে?”

ক্লাসের অন্যসকল ছেলে-মেয়েগুলো না বোধক শব্দ করলো।শুধু মাত্র সামনে বসে থাকা অতি সুন্দরী যুবতীটি নিজ ওষ্ঠাধর একত্রে চেপে বসে রইলো।এতোক্ষণ যে কথাগুলো বলল সে তাদের একজন অধ্যাপিকা সিয়া শাহ।এই ম্যাডামটি যখন ক্লাসে ঢুকলো তখুনি তোশার প্রাণ পাখি ঝিমিয়ে গিয়েছিল।পরবর্তী শাহ পদবি শুনে চক্ষু চড়কগাছ।তবে ভেবেই নিয়েছিল সিয়া ম্যাম কিছু শুনেনি বা তাকে চিনবেনা।কিন্তু আগাগোড়া সবটাই তো ভুল হলো।সিয়া এগিয়ে এসে ঠিক তোশার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“পরিচিত ব্যক্তিকে অচেনা কাওকে ফুল দিতে দেখলে তুমি কী ভাববে প্রথমে মিস?”

“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

“জি তোশা।তুমি কী ভাববে?”

তোশা উষ্ণ শ্বাস ফেললো।যা হবার হোক।তবুও সে সত্যিটাই বলবে।দাঁড়িয়ে সে মাথা নিচু করে বলল,

“দুনিয়াতে অন্যসব পুরুষ কাকে ফুল দিলো আমার মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু একজন নির্দয়,পাষাণ ব্যক্তিকে কাওকে ফুল দিতে দেখলে আমার অবশ্যই পুড়বে।”

চমকে উঠলো সিয়া।কপালে খুব চিকন ভাঁজ পড়লো।চোখের চশমাটি একটু ঠিক করে বলল,

“তোমার বয়স কতো?”

“জি ম্যাম বিশ বছর।”

“বেশ।ক্লাস শেষে আমার সঙ্গে দেখা করবে।”

তোশা মাথা নাড়িয়ে বসে পড়লো।সিয়া নামক যে তাদের ম্যাডাম আছে আজ সে জানলো।কারণ সিয়া এক সপ্তাহের ছুটিতে ছিল।নাহ,এভাবে সত্য বলায় তোশার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ হচ্ছে না।বরং মনে মনে সে খুশি।আবার কবীর শাহ এর জীবনে ঝড় তোলার একটি মাত্র সরু পথ তো খুঁজে পেলো।ক্লাসটা পরিচয় দেওয়া নেওয়ার মধ্যেই শেষ হলো।সিয়ার পিছন পিছন ছোট্ট নরম পায়ে বের হয়ে এলো তোশা।একটু নির্জনে যুবতীর উদ্দেশ্যে সে শুধালো,

“আমার ভাইকে এতো ঘৃণা করার কারণ কী তোশা?তুমি কী মায়ান চৌধুরীর মেয়ে?”

“ঘৃণা করিনা ভালোবাসি।হ্যাঁ আমি মায়ান চৌধুরীর মেয়ে।”

সিয়ার অক্ষিগোলক স্বীয় ছন্দে বড় হয়ে গেলো।বাচ্চা মেয়েটির পা থেকে মাথা অবধি একবার দেখে নিলো।

“কেমন ভালোবাসা?ভাইয়ের বয়স চল্লিশ জানো?তোমার দ্বিগুণ।”

“ম্যাম বয়স তো সংখ্যামাত্র।”

“একদম না।আজকের দিনে বয়স,যোগ্যতা,লুক সবকিছু মেটার করে।নেহাৎই আমার ভাই সুন্দর,যোগ্যতাসম্পন্ন।বয়স ওর চল্লিশ মনে হয়না।”

তোশা থমথমে মুখে বলল,

“কিন্তু যাই বলেন কবীর শাহ তো কালো।”

“তুমি আমার ভাইকে কালো বললে?”

“যা সত্যি তাই।”

“তাহলে ভালোবাসার কথা কেন বলছো?আবার ঘৃণাও করো।স্টুপিড মেয়ে কোধাকার। ক্লাসে যাও।”

“সব কথা তো শুনেন ম্যাডাম।আপনার ভাইকে এতোদিন পর দেখলাম তাও ফুল দিতে।এজন্য রাগ সামলাতে পারিনি।”

সিয়া ধমকে বলল,

“ক্লাসে যাও।এখুনি যাবে।এখন মনে পড়লো দুই বছর আগে আমার ভাই বলেছিল এরকম একজনের কথা।”

“সত্যি?কী বলেছিল?”

” ক্লাসে যাও তোশা।”

তোশা গোমড়া মুখে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।সিয়া সেদিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো।ওপাশ থেকে রিসিভ হতে বলল,

“তোশা এখনও তোকে ভালোবাসে ভাই।আমি পরীক্ষা করে দেখেছি।”

“ভালোবাসার ভূত তাহলে এখনও মাথা থেকে নামেনি।”

“মনে হয়না নামবে।যাই হোক মেয়েটা হয়তো সত্যিই তোকে ভালোবাসে।তা নয় চার বছরে যা কমলো না।তুই নিজেও তো..।”

কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না সিয়া।তার পূর্বেই ফোনটি কেঁটে দিয়েছে কবীর।

(***)

সূর্যের সঙ্গে যেন প্রতিযোগীতা করে ঘুম থেকে উঠে কবীর।এইতো ক্ষীণ আলো প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তৈরী হয়ে বাহিরে দৌড়ানোর জন্য বের হয়ে যায়।এসব নিয়মিত শরীর চর্চার জন্য কীনা চল্লিশ বছর বয়সেও দেখতে যথেষ্ট কম বয়সী লাগে।লম্বা বড় বড় পা ফেলে সে দৌড়ে চলেছে বিশাল বড় মাঠটির এ মাথা থেকে ওই মাথা।হুট করে তার সঙ্গী দৌড়ে এলো কোথাও থেকে।থেমে গেলো কবীর।মিষ্টি হেসে বিড়ালটিকে কোলে তুলে নিলো।বিড়ালটি ম্যাও ম্যাও শব্দে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে ব্যক্তিটিকে।এই প্রাণীটিকে দেখলেই তোশার কথা মনে পড়ে কবীরের।উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো ভেতর থেকে।কিছুটা সময় আদর করে প্রাণিটিকে নামিয়ে দিলো কবীর।একজনের যে পালিত বিড়াল তা গলার মালা দেখে বোঝা যায়।পুনরায় দৌড়ানো শুরু করলো সে।এবারও তার সঙ্গী হলো কিন্তু মানুষ।কবীর ভ্রুঁ কু্চকে পাশ ফিরে তোশাকে দেখে চমকে গেলো।নিশ্চয় মেয়েটি বিভ্রম তার।ওতোটা তোয়াক্কা না করে কবীর নিজ ছন্দে দৌড়াচ্ছে।

ব্যক্তিটির এরকম নির্বিকার ভঙ্গি দেখে মেজাজটি খারাপ হয়ে গেলো তোশা।চিল্লিয়ে বলল,

“আস্তে কবীর শাহ।এতো বেশী দৌড়াচ্ছেন কেন?”

থেমে গেলো কবীর।অবিশ্বাসের সুরে বলল,

“তোশা তুমি?”

“কেন অন্য কাওকে আশা করেছিলেন?”

“আবার শুরু হলো।কোন বুদ্ধিতে যে সিয়াকে নিয়ে ফুল কিনতে গিয়েছিলাম।”

কবীরের বিরক্তিতে তোশার বুকটা ভেঙে গেলো একদম।কান্নাগুলো প্রায় চলেই এসেছিল এমন সময় থেমে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“দেখুন।”

“হুম বলো।”

“আরে আমাকে দেখতে বলেছি।”

“তুমি কী দেখার জিনিস?”

“দেখেন তো।”

তোশা ঘুরেফিরে কবীরকে দেখালো।হলুদ ড্রেসটায় তাকে ছোট্ট হাঁসের ছানার মতোন লাগছে।

“দেখা শেষ এবার বলো।”

“আমার এনআইডি কার্ডটা তো বাসায় রেখে এসেছি।পারলে সেটাই দেখাতাম।এখন আমি বড় হয়েছি।সেসব বাদ আমি আপনার পিছনে আসিনি।না হলে ছয়দিন আগে পানি মে রে ছি লা ম এরপর দেখেছেন আমাকে?বরং ওইযে যে বিড়ালটাকে দেখলেন ওদের বাসায় এসেছি।টিকুর মা আমার বান্ধুবী।”

“ভেরী গুড।তা আমার সামনে কেন এলে?”

“বারান্দা থেকে গত তিনদিন ধরে দেখি লোভ সামলাতে পারিনি আজ এজন্য।বাই দ্যা ওয়ে আপনি আরো সুন্দর হয়েছেন কবীর শাহ।তুলে বিয়ে করে ফেলতে মন চাচ্ছে।বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছি।আপনি খুব সুন্দর ব্রেইন ওয়াশ করেছিলেন আমার অতীতে।ছোট ছিলাম দেখে।এবার ছাড়বো না।তাই বলতে এলাম।”

“ন্যাকা মেয়ে একটা।”

তোশার মাথায় শক্ত করে একটা চাটি দিয়ে পুনরায় দৌড়াতে লাগলো কবীর।কিন্তু আশ্চর্য রাউন্ড শেষ করে এসে দেখে মেয়েটি নেই।শুধু টিকু নামক বিড়ালটি আছে।কবীরকে দেখে প্রাণিটি উচ্ছাসিত হয়ে তার দিকে এগুবে ওমনিই একটা মেয়ে ডাকতে ডাকতে এদিকে এলো।

“এইযে ভাইয়া পিকুকে একটু দেন তো।”

কবীর খেয়াল করলো মেয়েটি তোশার বয়সী।কিন্তু নাম ভিন্ন বলায় সে শুধালো,

“ওর নাম তো টিকু।”

“না তো।পিকু।”

“কেন তোশা যে বলল।”

“তোশা কে?”

“তোমার বান্ধুবী।”

মেয়েটি মুচকি হেসে বলল,

“আমার এমন নামের কোনো বান্ধুবী নেই।আচ্ছা আপনি যাকে দেখেছেন সে কী খুব সুন্দরী?”

গম্ভীর মুখে কবীর জবাব দিলো,

“হুম পরীর মতোন দেখতে।”

“নিশ্চয় তবে সেই জিনকে দেখেছেন যা আমার বড় ভাইয়ের পিছনে দশ বছর ছিল।এইযে মাঠে যারা দৌড়ায় তাদের এসে ধরে।আপনি যা সুন্দর তাই আপনার প্রিয় মানুষটার রুপ ধরে এসেছে।”

“আমাকে বোকা মনে হয় তোমার মেয়ে?”

“বিশ্বাস করলেন না তো?সত্যি বলছি।”

কবীরের কেমন যেন খটকা লাগলো।তাই সে তৎক্ষনাৎ তাহিয়াকে ফোন করে তোশার খোঁজ করলো।মেয়েটা বাড়ীতে ঘুমাচ্ছে শুনে চমকে গেলো।কিন্তু তা প্রকাশ করলো না।নিজ বাড়ী থেকে খুব বেশী দূরে এই মাঠটি নয়।কতো বছর ধরে আসে কিন্তু এমন তো শুনেনি।আগুন্তক মেয়েটি বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো।এই পুরো ঘটনায় একমাত্র টিকু যে এই মাত্র পিকু নামে ভূষিত হয়েছে সে সমান তালে ম্যাও ম্যাও করছে।যার বাংলা করলে হয়তো এটা দাঁড়াবে,

“কবীর শাহ তোমাকে দুনিয়ায় সবথেকে মিষ্টি মেয়েটি বোকা বানালো।এবার সে কোমড় বেঁধে নেমেছে প্রেম প্রেম খেলার মাঠে।হারবে না।”

চলবে।

এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে সুন্দর করে রেসপন্স করবেন।
তোশার বয়স এক বছর বাড়ানো হলো।তা নয় ভুল হয়ে যেতো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here