মিঠা রোদ পর্ব ১৫

0
2912

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আগের দিনে মেয়ে দেখাটা অন্যরকম ছিল।এখন তো বেশীরভাগ ছেলেদের মেয়ে পছন্দ করা থাকে।”

“তা ঠিক বলেছেন ভাই।এইযে আমার তাকে যখন দেখতে গেলাম তখন বড় করে ঘোমটা দিয়ে সামনে আনা হলো।আমার মা বারবার বলে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে।এদিকে লজ্জা করছে।তবুও খুব কষ্টে জিজ্ঞেস করেছিলাম বয়স কতো?তখন ছিল তার বারো বছর।আমার সাতাশ।এমনই পার্থক্যে তো বিয়ে হতো।”

নানার মুখে পাত্রী দেখতে যাওয়ার ঘটনা শুনে তোশার মনটা আরো ভেঙে গেলো।পূর্বে এতো বয়সের পার্থক্যে বিয়েটা সহজ থাকলে সে কেন সেই সময় জন্ম নিলো না?কবীর শাহ না হয় এভাবে তাকে দেখতে গিয়ে নিজের ঘরনি করে নিয়ে আসতো।হুহ,সব জায়গায় কেমন দুঃখের আবহাওয়া।

কলির বাবা নেয়ামতের সঙ্গে ইতিমধ্যে কবীরের বাবা সাহেদের বেশ ভাব জমে গিয়েছে।তাহিয়ার বাবাও এই দুজনকে বেশ সঙ্গ দিচ্ছে।আর যেসব নারীরা আছে তারা একপাশে বসে পুরুষদের আলোচনা শুনছে।পুরো ঘটনায় কেউ যদি নিরব থেকে থাকে তবে সে কবীর শাহ।এক মনে খেতে ব্যস্ত।তোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহিয়া বলল,

“কী ব্যাপার তোশা মা?খিদে লাগেনি?এখানে এসে খেয়ে নাও।”

“কিন্তু আম্মু।”

তাহিয়া তোশার গড়িমসি বুঝতে পারলো।কবীরের পাশের চেয়ার ব্যতীত আর কোনো চেয়ার খালি নেই।

“সমস্যা নেই তোশামণি।কবীরের পাশে এসে বসো।আমি তোমাকে খেতে সাহায্য করছি।”

তোশা একটু হেঁটে কবীরের পাশে এসে বসলো।আনমনে দুজনের হাঁটুর ঠোকাঠুকি হলো।তোশার পুরো শরীর জুড়ে যেন বিদ্যুৎের ছুটোছুটি চলছে।ব্যক্তিটার সংস্পর্শে এলে এমন সহ্যহীন অনুভূতি হয় কেন?কবীরের অভিব্যক্তি বোঝা গেলো না।সে নিজ ছন্দে খেতে ব্যস্ত।তাহিয়া নিজ প্লেট ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে গেলে কবীর বাঁধা দিয়ে বলল,

“আমি ওকে সাহায্য করছি তাহিয়া।বসো ওখানে।”

“সমস্যা নেই কবীর।ওর শুধু মাছটা খেতে সমস্যা।”

“আমি পারবো বসো ওখানে।”

কবীরের ধীর স্থির কণ্ঠে তোশার অভিমান যেন আরো বৃদ্ধি পেলো।লোকটা তাকে দয়া দেখাচ্ছে?বিষয়টা বুঝতে পেরে মাছটা প্লেটে অবধি তুললো না তোশা।উল্টো মাংস নিয়ে ধীরে ধীরে খেতে লাগলো।হুট করে নিজ প্লেট থেকে কাঁটা ছাড়ানো মাছ কবীর তোশার প্লেটে তুলে দিলো।ছোট্ট করে বলল,

“খেয়ে দেখো।ভালো লাগবে।”

“দয়া?”

“ধরে নাও তাই।”

সবকিছু ভেঙে কান্না পাওয়ার অনুভূতিটা ফিরে এলো তোশার মনে।সে এতোটাও বাচ্চা নয়।মায়ের চিন্তা, ভালোবাসা সে বুঝে।কিন্তু কবীরের এরকম খেয়াল রাখার মানে কী?শুধু সৌজন্যেবোধ?হয়তোবা তাই।

(***)

কবীর ও কলির বিয়ে ঠিক হয়েছে।গত তিনদিন ধরে যতোবার কথাটি মনে হয় তোশার ততোবার বেঁচে থাকার শক্তি সে হারিয়ে ফেলছে।সর্বদা বুকের ভেতর কেমন জ্ব লে পু ড়ে যায়।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে।খাওয়ার রুচিটাও কমছে।মেয়ের এরকম অবস্থা দেখে তাহিয়া ভীষণ চিন্তিত।এই কারণে আজ ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে।

“বেশী কিছু নয়।সাধারণ ভিটামিনের অভাব দেখা দিয়েছে শরীরে।খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া ওর উঠতি বয়স।এখন মন মস্তিস্কের রুপ কতোভাবে বদলাবে।”

“এমনি সমস্যা নেই তো ডক্টর?”

“নাহ।আমি ভিটামিন লিখে দিচ্ছি।তোশা ঠিকমতো খেও কেমন।”

হাসিমুখে মাথা দুলালো তোশা।শরীরের ডাক্তার কী জানবে মনে কী চলে?তাহিয়া তোশার হাতখানা ধরে বাহিরে বের হয়ে এলো।

“আম্মু তোমাকে এই হসপিটালের লোকগুলো চিনে কীভাবে?সবাই বেশ পরিচিত দেখছি।”

“কারণ কলির অপারেশনের সময় এসেছিলাম অনেকবার তাই।”

“কলি আন্টির অপারেশন?কী হয়েছিল তার?”

“জরায়ুতে টিউমার।সেটা কেঁ টে ফেলে দিয়েছে।”

থেমে গেলো তোশা।চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো তার।উত্তেজিত কণ্ঠে সে মায়ের উদ্দেশ্যে শুধালো,

“তাহলে সে মা হবে কীভাবে?বিয়ে কেন ঠিক করলে তোমরা?”

“বিষয়টা কবীরের পরিবার জানে।”

“তবুও তারা মেনে নিলো?কেন?”

“কারণ কবীরের আর বাচ্চা না হলেও ভালো হবে।যেহেতু একজন ছেলে আছে।”

তোশা শুকনো ঢোক গিললো।কম্পিত কণ্ঠে শুধালো,

“কার ছেলে আছে?”

“কবীরের।তুমি হয়তো ছোট শাহ কে এখনো দেখেনি।বাচ্চাটা বেশ চুপচাপ।”

“তিনি বিবাহিত?তার স্ত্রী কোথায়?”

“ডিভোর্স হয়েছে।”

তোশা এগুনোর শক্তিটুকু পাচ্ছে না।কবীর বিবাহিত ছিল সে কোনোদিনও সেটা শুনেনি।এমনকী একটা ছেলেও আছে?তোশার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।মাথায় তীব্র ব্যাথা শুরু হলো।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হওয়ার পূর্বে নিচে বসে পড়লো সে।তাহিয়া পিছন ফিরে মেয়ের এই দশা দেখে ছুটে গেলো।

“কী হলো তোশামণি?খুব খারাপ লাগছে?”

“আম্মু আমার চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে।”

অন্যকিছু বলার পূর্বে পুরোপুরি জ্ঞান হারালো তোশা।

(***)

“ও জ্ঞান হারালো কেন?কোনো গুরুতর সমস্যা?”

“কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো না খেয়েছে,না ঘুমিয়েছে।আমি এজন্য ডাক্তারের কাছে এনেছিলাম।”

কবীর ঘুমন্ত তোশার দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কিছু বিষয় এখন মটেও আবেগ,বয়সের দোষ মনে হচ্ছে না।যা তার তামাটে কপালের রেখার সৃষ্টি করলো।মেয়েটা যদি সত্যিই তাকে ভালোবাসে?ছোট বয়সে কী না পাওয়ার ধাক্কা সামলাতে পারবে?মেয়ের এমন দশাতে তাহিয়ার মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছে।বাড়ীর সকলে দেখতে এসে ফিরে গিয়েছে দশ মিনিট হলো।

“তাহিয়া তুমি ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ কফি খেয়ে নাও।ভালো লাগবে।মেয়ের টেনশন নিওনা।”

“গলা দিয়ে নামবেনা।”

“রিলাক্স তাহিয়া কিছুই হয়নি।যাও তুমি।”

সত্যিই তাহিয়ার একটু নির্জনতা প্রয়োজন ছিল।অন্তত মেয়ের জন্য ঠিকঠাক সুস্থতা কামনা করতেও।সে বাহিরে চলে গেলে তোশার পাশে এসে বসলো কবীর।আলতো হাতে কপালের চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।ধীর কণ্ঠে বলল,

“এতো ভালোবাসা নিয়ে কেন আগে এলে না বেলাডোনা(অর্থ সুন্দর নারী)?বয়স কমানোর মন্ত্র তো জানা নেই।তাছাড়া আমি জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছি।ছেলে আছে।বিবাহিত ছিলাম।তবে তোমার মতোন সতেজ ফুলকে রোদে পুড়ে যাওয়া পাথরটি কীভাবে আগলে নেয় বলো তো।”

জীবনের সবথেকে সাহসী কাজটা হয়তো আজ করলো কবীর।ঘুমন্ত তোশার হাতের পিঠে আস্তে করে চুমো খেলো।সে জানে এটা কেউ জানলে ছি: ছি: এর বন্যা বয়ে যাবে।তবে সে কামনা নিয়ে এই স্পর্শ করেনি।ব্যস তাকে যে রমণী এতো ভালোবাসে সেই রমণীকে মনের ভেতর থেকে মায়া দেখিয়ে স্পর্শ করেছে।যা কখনো কেউ জানবেনা।স্বয়ং ঘুমন্ত সতেজ ফুলটিও না।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here