#মায়া
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৫: (রহস্যের উন্মোচন ০৩)
শুভ্রা অনেকক্ষণ হলো বিছানায় শুয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চলন্ত ফ্যানটির দিকে। মাহবুব জিহানের কাছ থেকে অতীতের সব রহস্য জেনে এসেছে আজ। জানতে পেরেছে সে শুভ্রা নয়, নদী। শুভ্রা নামটির সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে নদীর পরিচয়। নিজের হারানো পরিচয় ফিরে পেয়ে তার তো আজ সবচেয়ে বেশি খুশী হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শুভ্রা পারছে না আর ভালো থাকতে। চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কারণ সে তো সব হারিয়ে ফেলেছে৷ বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই তার। কতোটা অসহায় লাগছে শুভ্রার, তা সে কাউকে বোঝাতে পারবে না। সবচেয়ে কষ্ট এই ভেবে লাগছে যে তার আপনজনগুলো এখনো তার খেয়াল রাখে। দূরে থেকেও তাকে আগলে রাখে।
কিছু সম্পর্ক ছিন্ন হয়েও হয় না। সম্পর্কের মায়া এই আত্মার বন্ধনটা ভাঙতে দেয় না। তাই হয়তো তার পরিবারের কেউ এখনো মুক্তি পায় নি।
অতীতে—-
সুভাষিণী প্রতিদিন ছাদে এক বেলা হাঁটতে যান। হারমোনিয়ামটাও সাথে নিয়ে যান। খুব ভালো গান করেন তিনি। গান করলে তার কন্ঠে এতো মায়া লেগে থাকে, তা কেউ তার গান না শুনলে বুঝতে পারবে না। প্রতিরাতে তিনি মেয়েদের তিনটি সুরেলা কন্ঠে ছড়া শুনিয়ে ঘুম পাড়ান। বড় মেয়ের বয়স বিশ পেরিয়েছে, তাও মায়ের কন্ঠে মায়া লাগানো ঘুম পাড়ানি গান না শুনলে তার চোখেও ঘুম আসে না।
রীতিকার কন্ঠের স্বরও ভারী মিষ্টি। কিন্তু গান গাইতে শুধু মিষ্টি কন্ঠ হলে হয় না, সুরটাও দিতে হয়। সেই সুর একমাত্র নন্দিতা বাঁধতে জানে।
বাড়ির বিভিন্ন ফাংশনে সে নিজ কন্ঠে গান পরিবেশন করে সকলের হৃদয় হরণ করে নেয়৷
এমনই এক বিকেলে ছাদে মায়ের পাশে হারমোনিয়ামে সুর তুলছিলো আর মায়াময় কন্ঠটা মুক্ত বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো। তখনই আলিফ এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। আলিফকে দেখে নন্দিতা বরাবরই বিরক্ত হয়। মাঝে মাঝে ভয়ও পায়। কারণ সে হুটহাট করে চলে আসে সামনে।
আলিফ কোনো মানুষ নয়, সে একজন জ্বিন। সে তাদের বাড়ির পাশে একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। তাদের দাদাজান ছাড়া কেউ আলিফের এই সত্যটা জানতো না। দাদাজান আলিফকে খুব ভালোবাসেন। কারণ আলিফ খুবই সৎ হৃদয়ের।
দাদাজানের সেই মুহূর্তে ভন্ড উপাসক সাক্কারের অশুভ পরিকল্পনা নষ্ট করার জন্য সাহায্যের খুব প্রয়োজন ছিলো। তাই তিনি মাদ্রাসার হুজুর আর মসজিদের ইমামের সাহায্য নেন। আর তারাই কিছু ভালো জ্বিনকে আশ্রয় দেন সেই গ্রামে। তারা মসজিদ আর মাদ্রাসায় দিন রাত পার করতো আর খারাপ জ্বিনদের হাত থেকে গ্রামের মানুষদের সাহায্য করতো। আর আলিফ তাদের প্রধান ছিলো।
আলিফকে দেখে নন্দিতার বিরক্ত হওয়ার একটাই কারণ ছিলো। সেটি হলো আলিফ তাকে বারণ করেছে ছাদে খোলা চুলে সুরেলা কন্ঠে যাতে সে গান না গায়। আলিফের কথা শুনে সুভাষিণী নন্দিতাকে নিচে নেমে তার ঘরে গিয়ে গান গাইতে বলতেন। কিন্তু নন্দিতা শুনবেই না। আলিফের কথায় সে কেন চলবে?
যতোক্ষণ নন্দিতা গান গাইতো আলিফ ততক্ষণ নন্দিতার আশেপাশে থাকতো। তার একমাত্র কারণ ছিলো নন্দিতার সুর মায়া লাগানো। আর যেকোনো খারাপ শক্তিকে এই কন্ঠ খুব সহজেই আকৃষ্ট করে ফেলবে। আর আলিফ জানে এই গ্রামে খারাপ শক্তি বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে আছে। এক বার যদি নন্দিতার শরীরে সেই স্পর্শ লেগে যায়, তখন তারা খুব সহজেই নন্দিতাকেও লিপি ফুপুর মতো নিজেদের বশে নিয়ে আসবে।
নন্দিতা খুবই চঞ্চল স্বভাবের ছিলো। বাড়ির সবাই তাকে আলাদা ভাবেই ভালোবাসতো। কারণ গীতিকা হওয়ার আগ পর্যন্ত নন্দিতাই কনিষ্ঠ কন্যা ছিলো। তাই অর্ধেক বয়সই তার আদরে আদরে কেটে যায়। সবে মাত্র তিন বছর হলো গীতিকা হয়েছে। এতো সহজে কি সে নন্দিতার জায়গা নিতে পারবে?
দাদাজান বুঝতো নন্দিতার উন্মুক্ত চলাফেরা, তার জীবনের জন্য কতোটা ভয়াবহ। বাকী দুইটা মেয়ে দাদাজানকে ভয় পেয়ে নিজেদের সংযত রাখতো। কিন্তু নন্দিতার মনে সে ভয় নেই। আর দাদাজান-দাদীমাও আদরের নাতনিকে কিছুই বলতে পারতেন না।
নন্দিতা আহামরি সুন্দরী নয়। কিন্তু তার ডাগর ডাগর চোখগুলো একেবারে হৃদয় হরণ করে নেয়। চাপা শ্যামলা বর্ণের মেয়েরা যে কি পরিমাণ রূপবতী হয় তা নন্দিতাকে না দেখলে বোঝা যায় না। কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে এই সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না। নান্দনিক সৌন্দর্যগুলো একমাত্র দুই চোখে আবদ্ধ করেই এর তৃষ্ণা মেটানো যায়। তবুও নন্দিতা আহামরি সুন্দরী নয়। প্রতিটি সুন্দরী রমনীগণের ভীড়ে সে অতি সাধারণ, কিন্তু সে সাধারণের ভীড়েও অসাধারণ। তার এই অসাধারণ সৌন্দর্য আলিফকে বরাবরই আকর্ষণ করতো। তবে সে যথেষ্ট সংযত। কারণ আলিফ আর নন্দিতাকে একসাথে ভাবা অসম্ভব কল্পনা। আর কোনো অসম্ভব কিছু শুধুই ক্ষণিকের মায়া সৃষ্টি করে। চিরস্থায়ী ভাবে নন্দিতাকে মায়ায় বাঁধা আলিফের দৃষ্টিতে পাপ। আলিফ বন্ধুর মতোই নন্দিতাকে সাহায্য করে। নন্দিতা হঠাৎ হঠাৎ বাইরে বেরিয়ে যায়, রাত কি সন্ধ্যা কিছুই মানতে চাই না সে। আর তখনই আলিফ তার আশেপাশে থাকে। নন্দিতা মাঝে মাঝে বুঝে, মাঝে মাঝে বুঝে না। কিন্তু খুব পরিচিত এই স্পর্শ। শীতল অনুভূতি একেবারে ভেতরটাই নাড়িয়ে দেয় তার। আলিফের উপস্থিতি শুধুই অনুভব করতে পারে, কারণ যখন সে অনুভব করে তখন আলিফকে দেখে না। আর যখন সে দেখে তখন অনুভব করতে পারে না। তাই আলিফ আর অনুভবের অস্তিত্বটি যে এক, তা নন্দিতার আর জানা হয় না।
এর পেছনের কারণটিও খুব গভীর৷ অনুভবে যে ভালোলাগা সৃষ্টি হয়, তা কাছাকাছি এসেও হয় না। সামনাসামনি কোনো অস্তিত্বের সৌন্দর্য বা আকর্ষণীয় কোনো গুণের প্রতি ভালোলাগা জন্মে। কিন্তু অনুভবে শুধু অস্তিত্বের প্রতি মায়া জন্মে। যা শুধুই মনের আকর্ষণ। এখানে কোনো লোভ-লালসা থাকে না। আর তাই এই মায়া শুদ্ধ। আর এই ভালোলাগাটাও পুরোপুরি বিশুদ্ধ।
নন্দিতা কাউকে কাছে না পেলেও মনে মনে অদৃশ্য অস্তিত্বের ছবি এঁকে ফেলেছে। তার ভাবতেও ভালো লাগে, কোনো শীতল হাওয়া তার আশেপাশে থাকে আর তাকে বিপদ থেকে বাঁচায়।
এক বিকেলে নন্দিতা প্রতিদিনের মতো হারমোনিয়াম নিয়ে ছাদে এলো। আর সুরেলা কন্ঠে গান গাওয়া শুরু করলো। কিন্তু আজ আলিফ এলো না তাকে আটকাতে।
বিষয়টা বোঝার জন্য ছাদের এক পাশ থেকে আরেকবার পাশ পায়চারি করছিলো সে৷ হঠাৎ ছাদের কোণায় এসে দেখলো একটা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণ ছেলেটি বাড়িটির ছাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। নন্দিতাকে দেখে একটু নড়েচড়ে উঠলো। ছেলেটিকে নন্দিতার মোটেও পছন্দ হয় নি। তাই সে বিরক্ত ভাব নিয়ে সরে পড়লো। ঠিক সেই সময় আলিফ তার পেছনে এসে দাঁড়ালো৷ আলিফকে দেখে ছেলেটি পালিয়ে গেলো এক দৌঁড়ে।
আলিফের চোখমুখে রাগের ভাব ফুটে উঠেছে। সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর নন্দিতার হারমোনিয়ামটা নিয়ে নিচে নেমে পড়লো। নন্দিতার হারমোনিয়াম তার কাছের মানুষ ছাড়া আর কারো স্পর্শ করার অধিকার নেই। তাই সে অনেকটা ক্ষেপে গিয়েছিলো আলিফের উপর।
নন্দিতা দাদাজানের কাছে বিচার দিয়েছিলো আলিফ তার হারমোনিয়াম স্পর্শ করেছে তাই। আর বলেছে আলিফ দ্বিতীয়বার যদি এই বাড়িতে আসে, সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
ছোট এই বিষয়ে ক্ষণিকের রাগ-অভিমান থাকতেই পারে। কিন্তু একেবারে বাড়িতে আসা বন্ধ এমন একটা শর্তের কারণটা কেউ বুঝতে পারে নি।
তবে এই শর্তের কারণটা আলিফ বুঝতে পেরেছে। নন্দিতা আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। সে এখন খারাপ শক্তির স্পর্শ পেয়ে গেছে। তারাই নন্দিতার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।
আলিফ দেরী না করে দাদাজানকে সব জানালো। দাদাজান খারাপ কিছু ঘটার আগেই নন্দিতাকে শহরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সব ঠিকঠাক হয়ে যায়, কিন্তু সেই ছেলেটি নন্দিতাকে গ্রাম ছাড়তে দেয় না, যেই ছেলেটি নন্দিতার গান শুনেছিলো ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে। ছেলেটা ছিলো ভন্ড উপাসক সাক্কারের ছেলে সবুজ। সে নন্দিতার উপর খারাপ শক্তির প্রয়োগ করতে চায়। কিন্তু আলিফের কারণে ব্যর্থ হয়। ছেলেটিকে কোনো ভাবেই থামানো সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই দাদাজান ছেলেটিকে বন্দি করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এমন এক জায়গায় বন্দি করতে হবে, যেখান থেকে সে সহজে ছাড়া না পায়। শেষমেশ দাদাজান ছাদের নিচে সিঁড়ি ঘরটিতে সেই ছেলেটিকে বন্দি করে রাখে। দাদাজান ভেবেছিলো নন্দিতাকে শহরে পাঠিয়ে তার শরীর থেকে পুরোপুরি এই খারাপ স্পর্শ মুছে দিতে পারলেই, এই ছেলেকে মুক্ত করবেন। কিন্তু ছেলেটি নন্দিতাকে উন্মাদের মতো ভালোবেসে ফেলেছিলো। সে যখন বুঝতে পারলো নন্দিতা আর তার হবে না, নন্দিতা অনেক দূরে চলে যাচ্ছে তাকে ফেলে, তখনই সে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে সেই ঘরটিতেই।
এদিকে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে সাক্কারও পাগল প্রায়। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায়, সে শয়তানকে খুশি করার জন্য রাতের পর রাত নরবলি দিতে থাকে। আর তাই গ্রামে মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে ধীরে ধীরে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন নরবলি বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের মানুষজনও সাক্কারকে সন্দেহ করতে থাকে। আর এখন দাদাজানের কথায় তারা বিশ্বাস করা শুরু করে। সাক্কার কোনো পীর নয়, সে একজন ভন্ড লোক। সে মানুষ খুন করে শান্তি পায়।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আইনের দৃষ্টিতে সে একজন সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিতি পায়, আর গ্রামের মানুষের দৃষ্টিতে অশুভশক্তির চর্চাকারী মানুষ হিসেবে।
সাক্কারের নরবলি বন্ধ হওয়ার কারণ ছিলো, সে বুঝতে পেরে যায় তার ছেলে আর বেঁচে নেই। তাই এই বলি দেওয়াতে আর কোনো লাভ হবে না।
সে এবার ছেলের মৃত্যুর কারণ খোঁজ করতে থাকে। আর পেয়েও যায় সেই কারণ। তার ছেলে তার একমাত্র শত্রুর নাতনি নন্দিতার মায়ায় পড়েছিলো। নন্দিতার নাম, তার গানের সুর, কন্ঠ সবকিছুর ব্যাখ্যা সবুজ তার একটি ডায়েরীতে লিখে রেখেছিলো। শুধু নন্দিতার কোনো ছবি তার কাছে ছিলো না।
সবুজের মৃত্যুর পর এক হুজুর দাদাজানকে জানায়, সবুজের আত্মার মুক্তি হয় নি। সে নন্দিতাকে নিয়েই যাবে। আর নন্দিতাকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় এই খারাপ আত্মাটাকে চিরকালের জন্য এই সিঁড়ি ঘরটিতে বন্ধ করে রাখা। সে যদি কোনো ভাবে মুক্তি পায়, তাহলে নন্দিতাকে মেরে ফেলবে। তাই দাদাজান সেই ঘরটি আর খুলেন নি। আলিফ ও তার সহকারীদের সহয়তায় সেই ঘরটি বন্ধ করে দেন। এরপর দাদাজান বিভিন্ন সূরার অংশ কাঠের সিঁড়ির হাতলে খোদাই করে লেখান। আর সেই সিঁড়ির দেয়ালটিতেও কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের অংশ লিখে রাখেন। এরপর বন্ধ করে দেন সিঁড়ি ঘরটি।
যার ফলে এখন কোনো খারাপ শক্তি এই সিঁড়ি ঘরে ঢুকতে পারবে না, আর বেরও হতে পারবে না। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ এই সিঁড়ি ঘরে ঢুকতে পারবে, আর তার স্পর্শে সেই বন্ধ দরজাটা খুলে যাবে, আর তখনই আত্মাটা মুক্তি পাবে।
সবুজের মৃত্যু, আর তার আত্মার উপস্থিতি সেই বাড়িতেই আছে যেই বাড়িতে নন্দিতারা থাকে। এই সত্য ঘটনা নন্দিতা ছাড়া তার বাড়ির সব সদস্যরাই জানতো।
সবুজের মিথ্যে মায়া না জন্মালে হয়তো আজ সে বেঁচে থাকতো। নন্দিতাও সুখে থাকতো তার পরিবারের সাথে। এমনটা না হলেও তো পারতো!
শুভ্রার চোখ দুটি ঘোলাটে হয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো সে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। এতো সহজে কারো মুখের কথায় এসব বিশ্বাস করা যায়? কিন্তু সে নিরুপায়। অনেক মনে করার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু মাথাটা আরো এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে, তবুও মনে পড়ছে না।
হঠাৎ আলিফের কথা মনে পড়লো তার৷ মাহবুব জিহান আলিফের কথায় বলেছিলো তাকে। কোথায় সে এখন? শীতল স্পর্শ? সেই বাড়িতে ঢুকতে যেই শীতল স্পর্শ পেয়েছে সেটি কি আলিফের? শিশির যখন অদ্ভুত ব্যবহার করছিলো তখন কেউ একজন বলেছিলো আয়াতুল কুরসী পড়তে। সে কি আলিফ? ভারী শরীরটা যখন এলিয়ে পড়তো তখন কেউ খুব শক্ত করে তাকে ধরে রাখতো। সে কি আলিফ? খোলা বারান্দায় যখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে মুক্ত হাওয়ায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতো তখন কারো উপস্থিতি পেয়েছিলো সে! সেটিকে আলিফের উপস্থিতি? এলেমেলো ঘরটি গুছিয়ে রাখা, সিন্দুকটি আগের স্থানে ফিরে যাওয়া, সবকিছুই আলিফ করেছে? সে-ই কি বাড়িটির পাহারাদার?
মাহবুব জিহান তাকে বলেছিলো নন্দিতা তার অদৃশ্য অনুভূতির কথাটি রীতকে জানিয়েছে। জানিয়েছে বলেই তো জিহান শুভ্রাকে বলতে পেরেছে সব কথা। মনে করিয়ে দেওয়ার একটা সুযোগ হয়েছে। তবে কি আলিফও জানে কোনো এক অদৃশ্য অস্তিত্বকে মনের মাঝেই গেঁথে ফেলেছিলো নন্দিতা?
জানলেও কি যায় আর আসে। মিথ্যে মায়ায় নিজেকে কে জড়াতে চাইবে?
চলবে–
#মায়া
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৬: (নন্দিতা স্পেশাল)
আজ সে ফিরে এসেছে আবার।
সে ধবধবে সাদা একটি জামা পড়েছে। তার উড়নাটা মৃদু হাওয়ায় দুলছে। চুলে আজ খোঁপা নেই। ঘন চুলগুলো একেবারে পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে। তার হাত ভর্তি সাদা চুড়ি। কপালের একদম মাঝখানে কালো একটা টিপ, পায়ে নূপুর পড়েছে। নাকে একটা ছোট্ট নথও লাগিয়েছে।
আজ অতিথি আসে নি সেই বাড়িতে। বাড়ির মেয়ে ফিরে এসেছে।
শুভ্রা একদম নন্দিতার মতো নিজেকে সাজিয়েছে আজ।
মাহবুব জিহানের কাছে নন্দিতার ছবি দেখেছিলো সে। ছবিটি দেখে শুভ্রা মনে মনে হেসেছিলো। ছবিটির বয়স হবে হয়তো কুড়ির নিচে। ছোট বয়সে তার সাজগোজের প্রতি এতো আকর্ষণ ছিলো তা ভেবে খুব হাসি পেয়েছিলো তার। স্মৃতিশক্তি থাকলে হয়তো এসব স্মৃতিচারণ করতে বেশ ভালোই লাগতো। কিন্তু এখন চোখ বন্ধ করে জোর করে আঁকতে হয় সেই ছবি। তারপর কল্পনায় বসাতে হয়।
শুভ্রার জীবনটা কল্পনার উপরেই চলছে। কোনো কিছুই সত্য হিসেবে মানতে পারছে না। নিজের জীবনটা ভুল-শুদ্ধের মাঝামাঝিতে এনে একেবারে গুলিয়ে ফেলেছে।
শুভ্রা মেইন গেইটের সামনে এসে দাঁড়ালো। হঠাৎ নিজেকে কেমন হালকা লাগছে তার। গেইটটি আপনা-আপনি খুলে গেলো। তার মনে হচ্ছে গেইটের ভেতরে দাঁড়িয়ে কেউ তাকে স্বাগত জানাচ্ছে।
শুভ্রা কল্পনায় নিজেকে নন্দিতার জায়গায় বসিয়েছে। যদিও নন্দিতাই তার আসল পরিচয়, তবুও মস্তিষ্ক তাকে বলছে শুভ্রাই তার আসল পরিচয়। কিন্তু মন তো মস্তিষ্কের বিধিনিষেধ শুনতে চায় না। তাই মন ভালোবাসে কল্পনা করতে। কল্পনায় সে নন্দিতা হয়ে তার আপনজনদের সাথে আবার কথা বলবে, তাদের কাছাকাছি যাবে।
নূপুর ধ্বনি তুলে বাড়ির সম্মুখে হাঁটতে লাগলো নন্দিতা। ঠিক পুরোনো দিনের মতো। চোখ বন্ধ করে সে অনুভব করছে ঝরা পাতাগুলো ফিরে যাচ্ছে বিবর্ণ গাছগুলোতে। আকাশের বুক থেকে এক গুচ্ছ রঙ প্রকৃতির মাঝে এসে পড়ছে, আর ধীরে ধীরে সবুজ লতাপাতা, বাগানের ফুল সব জেগে উঠছে৷ গাছের মলিনতা কেটে গেছে নন্দিতার ছোঁয়ায়।
বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। আজো হয়তো কোনো এক অদৃশ্য স্পর্শে খুলে যাবে এই দরজা। আর ভেতর থেকে হাজারো কন্ঠ তাকে বলবে, নন্দিতা এসেছিস?… নদীপ্পি আমায় গল্প শুনাবে আজ?…. নদী তুই ছাড়া এই ঘরে প্রাণ নেই…
নন্দিতা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দরজাটা আজ খুলছে না কেন? তারা কি গ্রহণ করবে না তাদের নদীকে?
হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই শুভ্রার চোখের কোণা ভিজে গেলো।
আপনমনে বলে উঠলো,
শুভ্রা: কি করছি আমি? আমার কল্পনাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে চাইছি? কেন মনকে বোঝাতে পারছি না বাড়িটি এখন শূণ্য, বিবর্ণ। কেউ নেই আর নন্দিতার। সে এখন একা।
অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই দরজাটা খুলে গেলো আচমকা। আর শুভ্রার ঠোঁটের কোণে ফুঁটে উঠলো মিষ্টি হাসি।
শুভ্রা: কে বলেছে কেউ নেই? আছে এখনো। থাকবে চিরজীবন।
বাড়িটিতে পা রাখার সাথে সাথেই অদ্ভুত শীতল হাওয়া তার পাশ কেটে চলে গেলো।
আর সে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
শুভ্রা: আলিফ!
কিন্তু কোনো সাড়া পেলো না। শুভ্রা এবার দোতলায় উঠলো। সেই সিন্দুকের ঘরটিতে। সে এখন জানে এই ঘরটি কার। এটি তার দাদাজান আর দাদীমার ঘর।
সিন্দুকটি আবার টেনে বের করলো শুভ্রা। ভেতরে থাকা লাল বেনারসিটা তার আগেও পছন্দ হয়েছিলো। আজো এই শাড়ির প্রতি তার খুব আকর্ষণ কাজ করছে। শাড়িটি শরীরে পেঁচিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো সে।
হঠাৎ আয়নায় দেখলো এক বৃদ্ধ মহিলা ঠিক তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকে দেখলো না আর।
বৃদ্ধ মহিলা যাকে সে এই মাত্র দেখেছে, তিনি একদম দাদী মার মতো দেখতে।
আজ শুভ্রার মনে কোনো ভয় নেই। বরং সে আনন্দে চোখ দুটি বন্ধ করলো। কারণ সে এই মুহূর্তে দাদীমাকে অনুভব করতে চায়। দাদীমার সাথে কল্পনায় কথা বলতে চায়।
নদী: এই শাড়িটা কার দাদী মা?
দাদীমা: তোর জন্য তুলে রেখেছি। কেমন হয়েছে?
নদী: মারাত্মক সুন্দর।
দাদীমা: জানিস নদী, তোর লাল বেনারসি পড়ে বউ সাজার খুব ইচ্ছে ছিলো। আমায় বলতি, তোর বিয়ের দিন আমার হাতে শাড়ি পড়বি। তোর মায়ের হাতে সাজবি৷ রীত আর তিথী তোকে মেহেদী পড়াবে হাতে। কিন্তু নদী তোর বিয়েটাও আর দেখা হলো না আমাদের। তবে এই বেনারসীটা পড়ে আসবি আমার নাত-জামাইয়ের সামনে। পড়বি তো?
নদী: তুমি দিয়েছো আর আমি পড়বো না?
শুভ্রা চোখ খুলে নিজেকে আয়নার সামনে আবিস্কার করলো। বন্ধ চোখে দাদীমা তার পাশেই ছিলো। এখন বহুদূরে চলে গেছে, যেখানে হয়তো তার যাওয়া সম্ভব না।
এরপর সিন্দুকে থাকা সেই এলবামে হাত রাখলো সে। দাদাজান আর দাদীমার বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো। হঠাৎ মনে হলো দাদাজান তার পাশেই বসে আছে।
শুভ্রা আবার চোখ বন্ধ করে কল্পনায় দাদাজানের নদী হয়ে ফিরলো।
দাদাজান: নন্দিতা, তোর মনে আছে? যেদিন তুই শহরে যাচ্ছিলি আমাদের ফেলে, সেদিন বলেছিলি তোকে একটা চিঠি লিখতে। কিন্তু তোর ভালোর জন্যই তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি তেমন। কিন্তু জানিস, চিঠি লিখেছিলাম আমরা সবাই, আমাদের নন্দিতাকে। দাদাজানের আলমারিতে আছে। দেখে নিস। জীবনের শেষ বছরটাই আমার নন্দিতাকে কাছে পাই নি আমি।
নদীর চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
দাদাজান: আমি তোকে গান গাইতে বারণ করতাম তাই তুই খুব অভিমান করতি আমার সাথে। কিন্তু আমি তো চাই নি আমার নন্দিতা আমার উপর অভিমান করে থাকুক। তোর জন্মদিনে তোকে নতুন একটা হারমোনিয়াম দেবো ভেবেছিলাম, কিন্তু আর দেওয়া হলো না। তোর স্মৃতির সাথে সেটিও ছাই হয়ে গেছে।
শুভ্রা চোখ খুলে এলবামে দাদাজান আর দাদীমার ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর এলবামটি বিছানার উপর রেখে আলমারির কাছে গেলো। তার চোখে আবার সেই লকারটি পড়লো।
শুভ্রা ভাবছে কি হতে পারে এর পাসকোর্ড?
হঠাৎ কি ভেবে সে তার জন্ম তারিখ দিলো পাসকোর্ডের জায়গায়। আর সাথে সাথেই লকারটি খুলে গেলো।
শুভ্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো লকারটির দিকে। কতোটা গুরুত্বপূর্ণ হলে তার জন্ম তারিখটা কারো পাসকোর্ড হতে পারে!
শুভ্রার বুকটা কাঁপছে। খুব খারাপ লাগছে তার। কাঁদতে কাঁদতেই লকারটি খুললো।
ভেতরে অনেক ভারী গহনা, কিছু কাগজপত্র, সাথে একটা চাবির গোছা। শুভ্রা কাগজপত্রগুলো বের করলো। এই বাড়ির দলিলটাও আছে সেসবের মাঝে। বাড়িটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দাদাজানের নামেই ছিলো। এখন বাড়ির একমাত্র মালিক নন্দিতা শাহরিয়ার নদী।
ফাইলটি রাখার সময় আরেকটা খাম পেয়েছে সে। খামটি খুলে দেখলো সেখানে কয়েকটা চিঠি।
শুভ্রা উৎসাহ নিয়ে পড়তে লাগলো চিঠিগুলো।
একে একে সব চিঠি পড়লো সে। চিঠিতে আপনজনদের ভালোবাসা দেখে আরো কষ্ট হচ্ছে তার। কারণ কেউ নেই আর। সবাই তাকে ফেলে চলে গেছে বহুদূর।
হঠাৎ তার কানে ভেসে আসলো সেই গানের সুর। মেয়েলী কন্ঠে কেউ একজন গান গাইছে। শুভ্রা শব্দ অনুসরণ করে যেতে নিলো তখনই আরেকটি ঘরের দরজা ধড়াস করে খুলে গেলো।
শুভ্রা ঘরটিতে এসে দেখলো, খুব গুছানো একটি ঘর। যদিও এই ঘরটিতে সে আগেও এসেছে দুই-তিনবার, কিন্তু আজ এই ঘরটি থেকে মোহনীয় সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
দেয়ালে একটি কাঠের ফ্রেমে লাগানো ছবি দেখে বুঝলো এটি তার বাবা-মার ঘর। নন্দিতার বাবা-মা।
শুভ্রা চিঠিতে পড়েছিলো, মা নন্দিতাকে চুল কাটতে বারণ করেছিলো। কিন্তু নন্দিতা হয়তো লম্বা চুল পছন্দ করতো না। তাই মায়ের একটা ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেলো। মা চেয়েছিলো নন্দিতার লম্বা চুলে হাত বুলাতে, চুল বেঁধে দিতে। কিন্তু নন্দিতা পছন্দ করতো না, কেউ তার চুলে হাত দিক।
আপনজন কাছে থাকলে মানুষ কতোই না অবহেলা করে। আজ নন্দিতা বুঝতে পারছে এই স্পর্শটা কতো প্রয়োজন তার।
নন্দিতা চোখ বন্ধ করলো। এরপর মা তার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।
নদী: মা, অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। একটু ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও হলো না।
মা: আমার নদী আমায় কোনো কষ্ট দেয় নি।
নদী: আমি কি তোমার কোলে মাথা রাখবো?
মা: হ্যাঁ।
নন্দিতা মাথাটি এলিয়ে দিলো। একটি শীতল হাত তার মাথায় বিলি কাটছে। এটি কি নিছক কল্পনা! যদি কল্পনা হয়, তবে এই কল্পনার বাস্তব রূপ চায় সে।
মায়ের সাথে অনেক কথা বললো নন্দিতা। সেই রাতের ঘুম পাড়ানি গানটি আবার শুনালো মা। নন্দিতা তার হাতটি সেই শীতল হাতের উপর রাখলো। বুকটা একদম জমে গেছে তার। সে মাকে হারাতে চাই না। মাকে কোথাও যেতে দেবে না সে। তাই হাতটি শক্ত করে ধরে এক ঝটকায় মাথাটি কোল থেকে তুললো। কিন্তু কেউ নেই। হাতটি খালি হয়ে গেছে।
শুভ্রা বিছানা ছেড়ে উঠে খুব জোরে জোরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আর বলতে থাকে, আমাকে ফেলে যেও না। আমার সবাইকে চাই।
কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়লো সে।
তার মস্তিষ্ক আর মন উভয়ের মধ্যে চলছে মারাত্মক দ্বন্ধ। মস্তিষ্ক তার অতীত ভুলিয়ে দিলেও এই মন অতীতের মায়া ছাড়তে পারে নি। তাই তো এই বাড়ির প্রতিটি কোণ শুভ্রার ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে।
আজ নন্দিতা তার আপনজনদের কাছাকাছি আসতে পেরেছে। ভালোই লাগছে তার। এই বাড়ির প্রতি তার মায়া আরো বাড়ছে।
সেই ঘরটি থেকে আবার গানের শব্দ আসছে। শুভ্রা এবার ঘরটির সামনে গেলো। সাথে সাথেই ঘরের দরজা খুলে গেলো। আর সে যেই পা বাড়াবে ঠিক সেই সময় একটি শীতল হাওয়া শুভ্রার শরীর ঘেঁষে চলে গেলো আর তার কানে কানে কিছু একটা বলে গেলো। কিন্তু শুভ্রা বুঝতে পারে নি। তাই সে আবার ঘরটিতে ঢুকলো। সাথে সাথেই একটা বিশ্রী গন্ধ নাকে লাগলো।
শুভ্রা ভাবছে, ঘরটি থেকে সে গানের শব্দ শুনেছে। কিন্তু কিভাবে? হঠাৎ পাশের দেয়ালে কেউ জোরে জোরে আঘাত করছে। ভয়ে শুভ্রা কয়েক পা পিছিয়ে গেলো।
হঠাৎ তার চোখ পড়লো একটি ভাঙা আয়নার দিকে। আয়নায় একটা বিভৎস মুখ দেখে শুভ্রার পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। সাথে সাথেই সে তার হাতে কিছু একটার টান অনুভব করলো।
হাতটি তাকে টেনে ঘরটির বাইরে নিয়ে এসেছে। আর সাথে সাথেই ঘরটি বন্ধ করে দিয়েছে।
শুভ্রা তার সামনে অপরিচিত মানুষটিকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
কাঁপা কন্ঠে বলল,
শুভ্রা: ক…কে আপনি?
সে শীতল কন্ঠে বলল, আমি! চিনতে পারো নি?
আগন্তুক তার আরো কাছে ঘেঁষলে সে তার চোখ দুটি বন্ধ করে নেয়।
শুভ্রা: আলিফ!
আলিফ: নন্দিতা। তুমি চলে যাও। সীমান্ত তোমায় খুঁজছে।
শুভ্রা চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
শুভ্রা: তুমি চলে যেও না। আমাকে মুক্তি দাও এই যন্ত্রণা থেকে।
আলিফ: মুক্তি হবে। সবার মুক্তি হবে। আমি আমার দায়িত্ব শেষ না করে কোথাও যাবো না।
শুভ্রা চোখ খুলে আলিফকে দেখলো। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে।
শুভ্রা: আমার কিছুই মনে নেই। কাউকে মনে নেই। আমাকে মনে করিয়ে দেবে সব?
আলিফ: নন্দিতা, যে স্মৃতি আমাদের কষ্ট দেয়, তা মস্তিষ্কে না থাকলেই ভালো। তুমি মনে করার চেষ্টা করো না। শুধু এইটুকু মনে রেখো। তুমি একা কখনো ছিলে না। তোমার পাশে সবাই আছে, থাকবে।
শুভ্রা: তুমি এতোগুলা বছর এই বাড়িটিকে খারাপ শক্তি থেকে রক্ষা করেছো। কিন্তু সেইরাতে কোথায় ছিলে, কি হয়েছিলো সেই রাতে? কেন মেরেছিলো তারা আমার পরিবারের লোকদের? কেন আমায় একা করে দিয়েছে?
আলিফ: আমি সেই রাতে কিছুই করতে পারি নি। সেইরাতের বিভৎসতা আমি আজো ভুলতে পারি নি। আমি শুধু তোমায় বাঁচাতে পেরেছিলাম। কারণ তোমাকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব ছিলো। আর আমি সেই দায়িত্বে আটকে ছিলাম।
চলবে—