মন শহরে তোর আগমন পর্ব – ১৩

0
1044

#মন_শহরে_তোর_আগমন
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৩

অনেক খোঁজাখুঁজি পর অবশেষে একটা মুভি ওনার মনে ধরলো, যদিও আমার ইংলিশ মুভি তেমন একটা পছন্দ না তবে আজ ওনার জন্যে দেখবো। রিমোটটা রেখেই হুট করে জাফরান আমায় টেনে এনে একদম নিজের গা ঘেঁষিয়ে বসিয়ে, সাইড হাগ করে বসলো আমায়। ওনার বলিষ্ঠ হাতজোড়ার মাঝে পড়ে যেনো পিষ্ট হয়ে যাওয়ার জো হয়েছে আমার

“আমরা তো নরমালি বসে টিভি দেখতে পারি তাইনা? আমাকে এভাবে ধরে বসার কি দরকার?”

“এভাবে থাকলে কি প্রব্লেম? দেখো ফার্স্ট টাইম আমরা একসাথে বসে মুভি দেখছি। আর আমি এখন নরমাল হাসবেন্ড এর মতোই বিহেভ করছি”

অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে, আমার কথা আমার ওপরই ভারী পড়ে গেছে মনে হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম সময় লাগবে কিন্তু উনি এখনি এতো বেশি নরমাল হবার চেষ্টা করছেন দেখে অবাক হচ্ছি আমি। একটু বাদে খেয়াল করলাম উনি আরো শক্ত করে ধরেছেন আমায়! এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না

“কি করছেন জাফরান। এতো জোরে চেপে ধরেছেন কেনো! দম বন্ধ হয়ে যাবে তো আমার”

জাফরান ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে, এরপর হাতের বাধন কিছুটা হালকা করে দিলেন, আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। লোকটার মাথায় যে হুট করে কি ভুত চেপেছে আল্লাহই জানে। প্রায় এক ঘন্টা হলো মুভি দেখছি। থ্রিলার মুভি আমার মাথায় ঢোকে না, তবুও চুপচাপ দেখছি। আরচোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো। কেয়ার ভিডিও কল এসেছে, কিন্তু জাফরানের আমায় ছাড়ার নাম নেই!

“এই দেখুন আমার বান্ধবীর ফোন এসেছে। এবার তো রেহাই দিন আমায় একটু”

উনি আমাকে ধরে রেখেই পূর্বের ন্যায় টিভির দিকে তাকিয়ে বললেন

“তোমার হাত তো ছাড়াই আছে, এভাবেই রিসিভ করো কল। আমাদের রিলেশনশিপ যে নরমাল হচ্ছে সেটা তো একটু একটু করে সবাইকেই জানাতে হবে। শুরুটা তোমার ফ্রেন্ডকে দিয়েই হোক”

তাজ্জব বনে গেলাম আমি, বলে কি লোকটা?

“কি আজগুবি কথা বলছেন এসব! আমি এভাবে কল রিসিভ করবো!”

উনি কোনো উত্তর দিলেন না, আমি ওনার হাত সরিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু ওনার শক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারলাম না। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম আমি, এদিকে দুই বার কেয়ার কল কেটে গেছে। রিসিভ করতে পারিনি। উনি বাকা হেসে বললেন

“বেকার কষ্ট করে লাভ নেই, আমি না ছাড়লে তুমি উঠতে পারবে না এখান থেকে। চাইলে এভাবেই কল রিসিভ করো, নাহলে কেটে দাও”

“কি শুরু করলেন আপনি জাফরান?”

“বিহেভ করছি! নরমাল হাসবেন্ডের মতো! তেমনটা তুমি চেয়েছিলে”

“নরমাল হাসবেন্ডের মতো বিহেভ করছেন? সিরিয়াসলি? আপনি যা করছেন এটাকে অ্যাবনরমাল বিহেভ বলে?”

“তোমার যা ভাবার ভাবতে পারো! আই ডোন্ট কেয়ার। তোমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার ইচ্ছে হলে এভাবেই বলো নাহলে বলার দরকার নেই”

কি করবো বুঝতে পারছি না। এইভাবে যদি কল রিসিভ করি তাহলে কেয়ার সামনে মান সম্মানের টায়ার পাঞ্চার হয়ে যাবে। তাই ভাবলাম রিসিভ করবো না। ফোনটা এখনও বেজে চলেছে কিন্তু তুললাম না, পাশে রেখে দিলাম। উপায় না পেয়ে জাফরানের কাধে মাথা রাখলাম, উনিও তো আমায় ওইভাবেই ধরে রেখেছেন। সুযোগ পেয়েছি, ছাড়বো কেনো? টিভির দিকে মনোযোগ নেই আমার, আমি তো অন্য এক ভাবনায় মশগুল। ঈশ! প্রথমবার জাফরানের এতোটা কাছে আসার সুযোগ পেয়েছি, তাও ওনার মর্জিতে। এইটুকুই তো চেয়েছিলাম। চোখ বন্ধ করে ফিল করছিলাম ওনাকে! এই সুযোগে জাফরান আমার ফোনটা আস্তে করে নিয়ে কেয়াকে ফোন করে দিয়েছেন, আমি খেয়ালই করিনি!

“হাই কেয়া”

জাফরানের কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম আমি, চোখ খুলে দেখি কেয়া ভিডিও কলে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সরতে চাইলাম কিন্তু উনি আমাকে ওভাবেই ধরে রাখলেন। কেয়া তো হা করে তাকিয়ে দেখছে আমাদের। এদিকে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার বজ্জাত লোকটার জন্যে!

“ওয়াও, হাউ রোমান্টিক!”

আমি মুখ ফুলিয়ে জাফরানের দিকে তাকালাম, কিন্তু উনি তো একদম চিল মুডে আছেন। আজ বুঝতে পারছি লোকটা কতো মারাত্মক!

“কেয়া কল কাট কর। আমি পরে কথা বলবো তোর সাথে”

“কেনো পরে কথা বলবে? এখনি বলবে। কখন থেকে তোমাকে কল করে যাচ্ছে ও”

“আপনি একটাও কথা বলবেন না”

জাফরান বাঁকা একটা হাসি দিলো। আমার ওনার কার্যক্রম দেখে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। এমন কেউ করে নাকি? একদিনেই এতো নরমাল কে হতে বলেছিলো লোকটাকে? কেয়া ওপাশ থেকে হেসে বললো

“সুভী তুই তো ভাইয়ার সম্পর্কে একদম ভুল কথা বলেছিলি। ভাইয়া তো দেখছি বেশ রোমান্টিক! ঈশ! তোকে দেখে আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে”

“বিয়ের কথা বলিস না কেয়া, এমনি আছিস শান্তিতে। বিয়ে করলে সব শান্তি ঘুচে যাবে একদম”

“মোটেই না। আমার তো উল্টো মনে হচ্ছে। বিয়ের পরের লাইফটাই সবচেয়ে সুন্দর”

আমি কেয়াকে কিছু বলবো তার আগেই জাফরান কেয়ার কথার তালে তাল মিলিয়ে বলে

“সিঙ্গেল আর ডাবল লাইফের মধ্যে বিস্তর তফাৎ আছে। আমার একটা ফ্রেন্ড আছে, বিয়ে করতে চাইলে বলতে পারো। ওর সাথে সেটেল করে দেবো তোমায়”

হতভম্ব হয়ে জাফরানকে দেখছি। একটা লোকের মুখে সবসময় সিরিয়াস টাইপের কথা শোনার পর হুট করে এ ধরনের কথা শুনলে শক তো লাগবেই তাইনা? আমারও সেই অবস্থা! কেয়া উত্তেজিত হয়ে বলে

“সত্যিই ভাইয়া? বাহ! তাহলে তো আর কথাই রইলো না। আপনার ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই আপনার মতোই হবে”

“একদম না, ওনার মতো কাওকে বিয়ে করার ভুল করবি না। এরকম লোকের সাথে সংসার করতে অনেক ধৈর্য্যর দরকার হয়। সে তুই পারবি না”

জাফরান ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে, কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলে উঠলো

“এমনভাবে বলছো যেনো আমার সাথে সংসার না, যুদ্ধ করছো তুমি! কি দোষ করেছি আমি বলোতো? যা চাইছো সেটাই করার চেষ্টা করছি”

আমি উত্তর দিতে পারলাম না। হ্যা, আমিই তো একটু বদল দেখতে চেয়েছিলাম ওনার মধ্যে তাই বলে হুট করে উনি এতোটা বদলে যাবেন এটা আশা করিনি! কেয়া হেসে বললো

“ভাইয়া, আপনি ওর কথায় কান দেবেন না। সংসারের চিন্তায় একদম বদলে গেছে ও! কিন্তু আপনি যেমন আছেন তেমনি থাকুন!”

মুচকি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো জাফরান। ওনার প্রতি আমার একইসময় দুই রকম অনুভুতি কাজ করছে। একটু রাগ হচ্ছে আবার ভালোও লাগছে। এমন কেনো হচ্ছে? নামে আমার সাথে কথা হচ্ছে, কিন্তু আসল কথা তো কেয়া আর জাফরান বলছে, আমি তৃতীয় ব্যক্তির মতো শুনছি! উনি এখনো আমায় ধরে রেখেছেন, ভালোই লাগছে আমার!

“তোমার ফ্রেন্ড বাড়িতে একা থেকে থেকে বোর হয়ে যায়, মাঝে মাঝে এসে একটু কোম্পানি দিও ওকে। আমি তো আর সারাদিন বাড়ি থাকতে পারিনা”

“অবশ্যই আসবো ভাইয়া। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনার বউকে মাঝে মাঝে কোম্পানি দেওয়ার দায়িত্ব আমার”

আমার এবার একটু রাগ হচ্ছে। যদিও কেয়া আমার বন্ধু কিন্তু এতোক্ষণ ধরে জাফরানকে ওর সাথে কথা বলতে দেখাটা ভালো লাগছে না! আমি টান দিয়ে এবার ফোন নিয়েই নিলাম জাফরানের থেকে!

“হয়েছে তোদের দুজনের কথা? এবার আমার সাথে কথা বল! কেনো কল করছিলি এতো? কোনো দরকার আছে?”

“আরে হ্যা আছে। স্কুলে পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে! ভাবছিলাম আমরা যাবো! পুরনো সবার সাথে দেখা হয়ে যাবে! তুই যাবি তো?”

রাজি হয়ে গেলাম আমি। স্কুলের টিচার, সহপাঠী সবার সাথে এতো বছর পর দেখা করার সুযোগ ছাড়ার ইচ্ছে নেই। জাফরান ও রাজি হয়েছে, আমায় যেতে দেবে। কেয়ার সাথে কথা বলে ফাইনাল করলাম যে আমি যাবো। কেয়ার সাথে কথা শেষ, এবার জাফরানের সাথে বোঝাপড়া করতে বসেছি! কিন্তু উনি এখন আমায় ছেড়ে ইচ্ছে করে টিভির দিকে মন দিয়েছেন! আমিও রিমোট দিয়ে বন্ধ করে দিলাম টিভি, তারপর বলতে শুরু করলাম

“কি করলেন এটা আপনি বলুনতো? কাল থেকেই কেয়া আমায় টিজ করতে শুরু করবে”

জাফরান ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় গা এলিয়ে বসলেন, ঘাড় নুইয়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন

“টিজ করার কি আছে? সামান্য হাগ করেছি! তাও সাইড হাগ, তুমি তো এমন বিহেভ করছো যেনো কেয়াকে লাইভে রেখে কিস করে ফেলেছি তোমায়”

কথাগুলো বলার সময় ওনার চোখেমুখে বিন্দুমাত্র লজ্জা শরমের বালাই নজরে পড়লো না, কিন্তু লজ্জায় আমার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না! ওনার লাগাম ছাড়া কথা শুনে হা হয়ে গেলাম আমি, সোফা থেকে উঠে একটা কুশন নিয়ে ছুড়ে মারলাম ওনার দিকে। মিনমিন

“মুখে লাগাম টানুন জাফরান সাহেব! একটা মেয়ের সামনে বসে আপনি এমন লাগামহীন কথাবার্তা বলতে পারেন না”

“সেই মেয়েটা তুমিই তো, বললে প্রব্লেম কি! আই গেস একজন হাসবেন্ড তার ওয়াইফের সাথে হাগ – কিস এইসব নিয়ে খোলাখুলি ডিসকাশন করতেই পারে”

উনি কথায় কথায় একি প্রসঙ্গ টেনে আনছেন, বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে আমিই বলেছিলাম ওনাকে নরমাল হাসবেন্ড এর মতো বিহেভ করতে! আফসোস হচ্ছে আমার, কোন দুঃখে যে বলেছিলাম কথাটা!

“আল্লাহ! কোথায় ফেঁসে গেলাম আমি! ঘাট হয়েছে আমার জাফরান, আমি কিছু স্বাভাবিক চাইনা! আমি না আপনাকে এভাবে দেখতে পারছি না। আপনি আবার আগের মতো হয়ে যান”

“এখন পসিবল না, আমি ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে এতো চেন্জ করতে পারবো না!”

কথাটা বলেই আবার টিভি ছেড়ে বসলেন উনি। গলা শুকিয়ে আসছে আমার, মাত্র কয়েক ঘন্টা, তাতেই লোকটা এতকিছু ফেললো! আল্লাহ জানে এরপর আর কি কি দেখতে হবে!
____________________________

সবে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছি আমি! কিন্তু বিছানার দিকে তাকিয়ে মাথা গরম হয়ে গেলো আমার! বিছানার ওপর একগাদা শার্ট আর ভেজা তোয়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে! জাফরান রুমে নেই ঠিকই কিন্তু এগুলো তো ওনারই কাজ! তাছাড়া আর কে করবে এমন? ভেজা চুলগুলো ভালো করে টাওয়েল দিয়ে প্যাঁচিয়ে গোছাতে শুরু করলাম সব! একটু বাদে দেখলাম জাফরান এলো! আমি রেগে ভেজা তোয়ালে নিয়ে ওনার সামনে ধরে বললাম

“এটা কি?”

“টাওয়েল”

“এটার জায়গা তো বিছানার ওপর না! তাহলে এটা ওখানে কি করছিলো? আর আপনার শার্ট গুলো ছড়িয়ে রেখেছিলেন কেনো?”

“ডিসাইড করতে পারছিলাম না কোনটা পড়বো, তাই সব বের করেছিলাম”

অবাক হলাম আমি, কারণ ড্রেস চুজ করতে ওনার দু মিনিটও সময় লাগেনা আর আজ উনি বলছেন ডিসাইড করতে পারছিলেন না?

“কি পড়বেন ডিসাইড করতে পারছিলেন না। এটা আপনি বলছেন? ড্রেস নিয়ে সমস্যা তো আপনার কখনো হয়নি”

“হ্যা হয়নি, তাই বলে কি এখন হতে পারে না?”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। উনি আমায় পাশ কাটিয়ে সোজা আয়নার সামনে চলে গেলেন! চুল ঠিক করে চোখে চশমা পড়ে নিলেন। আমি আবারও বলে উঠলাম

“জাফরান! আপনি এই ভেজা টাওয়েল বিছানার ওপর ফেলে রেখেছেন? আর এই শার্টগুলো বাইরে ফেলে রেখে গেছিলেন! আপনি তো এমন অগোছালো ছিলেন না কখনো!”

“আমি অগোছালো না হলে তোমার তো সুবিধা হবেনা, তুমি যা চাইছো সেটাও পূরণ হবেনা”

“মানে?”

আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন উনি!

“একটা কথা ভেবে বলোতো আমাদের মধ্যে কখনো ছোটো কোনো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া হয়েছে বা তর্ক?”

না সূচক মাথা নাড়লাম আমি, এরকম তো কখনো হয়নি তাই একটুও ভাবার প্রয়োজন পড়লো না আমার

“হঠাৎ এই কথা কেনো বলছেন?”

“দরকার আছে বলার তাই। আমরা একে অপরের ওপর সেভাবে কখনো রাগ করার সুযোগ পাইনি, তুমি আমি দুজনেই প্রায় একরকম! একজনকে একটু অগোছালো তো হতে হবে। দুজনেই পারফেক্ট হলে চলেনা, একটু মিসম্যাচ না হলে পারফেক্ট কাপলও হওয়া যায় না! একটু আগেই তুমি একদম টিপিক্যাল ওয়াইফ এর মতো বিহেভ করছিলে! আই লাইক দ্যাট। এতদিন তুমি চেয়েছো এখন আমি চাই তুমিও টিপিক্যাল ওয়াইফদের মতো বিহেভ করো।”

জাফরানের কথাগুলো শুনে নিজের ওপর কেমন এক তিক্ততা কাজ করতে শুরু করলো আমার। আমি কি খুব প্রেসারাইজড করে ফেলেছি ওনাকে? যার জন্যে উনি জোর করে নিজেকে বদলাতে চাইছেন আমার জন্যে?

“জাফরান, আপনি প্রেসারাইজড হয়ে নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করছেন তাইনা? আমি কিন্তু চাইনি আপনি জোর করে কিছু করুন, শুধু একটু..”

পুরো কথা শেষ করার আগেই উনি আমার গালে হাত রাখে অতি শান্ত কণ্ঠে বললেন

“আমি নিজেই নিজেকে চেঞ্জ করছি, এতে তোমার কোনো দোষ নেই! আমি রিয়ালাইজ করেছি যে যেভাবে আমরা লাইফ লিড করছি সেটা ভুল ছিলো। তোমার সাথে অন্যায় করছিলাম, আর নিজের সাথেও। সংসার বিষয়টা কেমন বোঝার চেষ্টা করিনি কখনো, পরে ভেবে দেখলাম আমার ফ্যামিলি বলতে এখন একমাত্র তুমিই আছো, তাই তোমাকে নিয়ে এবার সুন্দর করে সংসার করতে চাই! অনেককিছু মিস করে গেছি জানি, এবার সব রিফিল করতে চাই! আমিও চাই তোমার সাথে থাকতে”

চুপচাপ ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনে যাচ্ছি। জাফরানও আমার সাথে থাকতে চায় শুনে অদ্ভুত শান্তি পেলাম আমি। এতদিন একটা ভয় ছিলো উনি যদি আমায় ছেড়ে দেন তাহলে কি হবে? মুখে যাই বলি কিন্তু সত্যি এটাই যে আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না!

“বাবাকে প্রমিজ করেছিলাম কিন্তু এতদিন সেটা ঠিকঠাক পূরণ করতে পারিনি কারণ আমাদের মধ্যে দূরত্ব ছিলো। তার কারণটাও অবশ্য আমি,তবে এখন নিজের ভুল শুধরে নিতে চাই। তুমি একজন পারফেক্ট ওয়াইফ হিসেবে নিজেকে প্রুভ করেছো এবার আমার পালা। সুযোগ দেবে তো?”

জাফরানের কথার মাঝে একফোঁটা বিরক্তি নেই আর না তো মনে হচ্ছে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এসব বলছে। একটা মানুষ মন থেকে কিছু বললে সে তো বোঝাই যায়। আমারও বুঝতে বাকি রইলো না এবার ওনার বলা প্রত্যেকটা কথা মন থেকেই বলছেন। সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম আমি। জাফরানের সাথে ছোট্ট একটা পরিপূর্ন সংসার সাজানোর যে স্বপ্ন আমি দেখতে শুরু করেছিলাম সেটা পূরণ হতে বুঝি খুব একটা সময় লাগবে না এবার!
__________________________________

আগে সার্ভেন্ট সারাদিন থাকলেও এখন দুপুরের পর কাজ করে চলে যান, কারণ বাড়ির টুকটাক কাজ তো আমিই করি। একটু আগেই সার্ভেন্ট কাজ করে গেছে। আমি তখন রান্নাঘরে ছিলাম, হঠাৎ কলিং বেজে উঠলো। আমি ভাবলাম আবার জাফরান এলো নাকি! হাত মুছে গিয়ে দরজা খুলে নাতাশাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। ও এখানে কি করছে! আমি ভেবেছি জাফরানের সাথে দেখা করতে এসেছে। নাতাশা সানগ্লাস খুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে

“কেমন আছো সুরভী?”

“জ্বি ভালো। কিন্তু জাফরান তো বাড়িতে নেই”

“আই নো, আমি ওর সাথে না তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি আজকে। ভাবলাম তোমার সাথে সেদিন সেইভাবে তো আলাপ হলো না। তাই চলে এলাম”

হুট করে নাতাশার এখানে আসাটা কেমন অস্বাভাবিক লাগলো সুরভীর কাছে। অবশ্য সেদিন জাফরানের সাথে যেভাবে চিপকে ছিলো তারপর নাতাশাকে ওর একটুও পছন্দ না, কিন্তু জাফরানের বন্ধু বলে কিছু বললো না

“কোনো প্রব্লেম আছে কি তোমার?”

“না না, আসুন”

ভেতরে এলো নাতাশা। আমার সাথে একদম স্বাভাবিক আচরণই করলো মেয়েটা যেটা মোটেও আশা করিনি আমি। হুট করে ওনার এখানে আসার কারণটাও বুঝে উঠতে পারছি না। আমি একটু কফি বানিয়ে আনলাম ওর জন্যে। নাতাশা কফি খেতে খেতে ড্রইং রুমে হেঁটে হেঁটে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বললো

“বহু বছর আগে একবার এসেছিলাম এই বাড়িতে,অবশ্য তখন সেভাবে দেখার সুযোগ হয়নি!”

আমি উত্তর দিলাম না। কেনো যেনো নাতাশার উপস্থিতি আমার খুব একটা পছন্দ হয় না। ড্রইং রুমে পুরোটা ঘুরে দেখে এসে সোফায় বসলো নাতাশা। কফি কাপটা রেখে হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো

“খুব টেস্টি কফি বানিয়েছো! আই অ্যাম ইমপ্রেসড!”

প্রতিউত্তরে ছোট্ট একটা হাসি দিলাম আমি!

“একা হাতে সবকিছু সুন্দর করেই গুছিয়ে রেখেছো দেখছি। আবার জাফরানকে ও ভালোই সামলাচ্ছ! একা একা কষ্ট হয় না এতকিছু করতে?”

“নিজের সংসার একা হাতে সামলাতে কষ্টের কি আছে? তাছাড়া নিজের জিনিস তো নিজেরই সামলে রাখতে হবে তাইনা? হাজার হোক এই বাড়ি আমার, সংসার আমার এর জাফরান ও আমার”

বেশ কনফিডেন্স নিয়ে গর্বের সাথে কথাগুলো বললো সুরভী, কিন্তু কথাগুলো শুনে খুব একটা খুশি হলো না নাতাশা। এতোক্ষণ মুখে তাও যে প্লাস্টিক মার্কা হাসি ছিলো সেটাও উবে গেল সুরভীর কথা শুনে। হাতের মুঠোয় থাকা সানগ্লাসটা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরে নিজের রাত কন্ট্রোলের চেষ্টা করে যাচ্ছে নাতাশা।

চলবে….

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here