#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৭
একটি সরু পিছঢালা রাস্তার এক কোনে বসে আছে আঁখি,বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে ওর চোখের জল,চারিদিকেই প্রবল হাওয়া বইছে, বৃষ্টির বেগ সময়ের সাথে আরও বেড়ে চলেছে কিন্তু এসব কোনো কিছু নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আঁখির,একধ্যানে চেয়ে আছে রাস্তার পানে,ভিতরটা যে ওর শুন্যতায় ভরে গেছে, কোনো কিছু অনুভব করার মতো কোনো শক্তিও যেনো বর্তমানে ওর ভিতর কাজ করছে না,ওর চাহনির ধ্যান বেধ করে হঠাৎই ওর ঠিক সামনে কেউ নিজের বলিষ্ঠ একখানা হাত এগিয়ে দিয়েছে দেখতে পেলো আঁখি,উক্ত হাতের মালিক কে তা জানার সুবিধার্থে চোখ তুললো আঁখি,সে হাতখানার মালিক যে আর কেউ নয় সয়ং আদৃত,আঁখি এবার আবার স্বাভাবিক ভাবে নিজের আঁখিযোগল নামিয়ে নিলো,তারপর মৃদ্যু স্বরেই বললো।
চলে যান আপনি আমি কোথাও যাবো না?
জেদ করবেন না মিস আঁখি,এতো ঝড়ের মধ্যে বাইরে থাকা ঠিক নয়,আপনার শরীর খারাপ করবে,চলেন আমার সাথে।
শরীর খারাপ!আর কি খারাপ হওয়ার রয়ে গেছে আমার জীবনে?কি রয়ে গেছে বলতে পারবেন?শুধু এই প্রাণটাই আছে যার কোনো গ্যারান্টি নেই,এ ছাড়া যে আমার আর কিছু রয়ে যায় নি,আমি যে পুরো শুন্য, পুরোই শুন্য কিছু নেই আমার কিছু নেই।
চিৎকার করে কথাগুলো বলে শব্দ করে কাঁদতে লাগলো আঁখি,আদৃতের মনে অনেক খারাপ লাগা কাজ করছে ওকে নিয়ে,এবার আদৃত ওর পাশে এসে বসে ওর ঘাড়ে সাহারার হাত রেখে বললো।
ভেঙে পড়বেন না মিস আঁখি, আপনাকে এখনও অনেক সংগ্রাম করতে হবে,এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।
আদৃতের এমন স্পর্শ আর এমন সহানুভূতিময় কথায় আঁখির ব্যাথার্থ মন খনিকের জন্য একটু সাহারা অনুভব করতে পারে,হঠাৎ সাহারার একটু ছোঁয়া পেয়ে তা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিতে চায় আঁখি হয়তো শুণ্য মনের একটুখানি শান্তির খোঁজে, তাই আর কোনো দিক বিবেচনা না করে নিজের অজান্তেই আদৃতকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলতে লাগলো।
আমি আর পারছি না,পারছি না সংগ্রাম করতে, আর পারবোও না,আমি যে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ড.আদৃত,আমি আর পারবো না, পারবো না এই সমাজের মোকাবিলা করতে, পারবো না আর সংগ্রাম করতে, আর পারবো না,সংগ্রাম করার আর কোনো ক্ষমতা যে আমার মধ্যে রয়ে যায় নি।
আঁখির হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় আদৃতের মধ্যে খনিকের জন্য অস্বাভাবিক বোধ চলে বসে,কিন্তু খনিকে আদৃত নিজের অস্বাভাবিক বোধ কাটিয়ে আঁখিকে সাহারা দেয়,ওকে নিজে থেকে ছাড়ায় তারপর ওর চোখের জল মুছে দিয়ে নরম কন্ঠে বলতে লাগে।
এই জল যে আপনার চোখে মানায় না মিস আঁখি,আপনি যে এই সমাজের হাজারো অসহায় মেয়ের প্রেরণা,আপনি ভেঙে পড়লে তো হবে না,আপনি যদি আজ সমাজের কাছে হেরে যান তবে কালকে কোনো মেয়েই এই সমাজের নিচু মানসিকতার বিরুদ্ধে খাঁড়া হওয়ার সাহসটুকু যোটাতে পারবে না।
আঁখি এবার খনিক অসহায়ত্ব ভঙ্গিতে আদৃতকে প্রশ্ন করলো।
আপনার মনে হয় আমি আবার উঠে দাঁড়াতে সক্ষম?এই হিংস্র সমাজের বিরুদ্ধে একা লড়াই করতে সক্ষম? আপনার মনে হয় আমি পারবো?আমার তো এখন আর তা মনে হয় না।
যে মেয়ে নেচে গেয়ে নিজের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করাতে পারে যাকে কিনা সে নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসে,একা নিজের দমে প্রাইবেট মেডিক্যাল ভার্সিটিতে নিজের এডমিশন করাতে পারে,একা নিজের ভরনপোষণ ও পড়ালেখার খরচ বহন করতে পারে,মাঝরাস্তায় নিচু মানসিকতা সম্পন্ন সমাজের লোকদের নিজেদের সত্যতা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে, একা তিনটে ছেলের মাথা ফাঁটিয়ে ওদের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদে ফেঁটে পরতে পারে সেই মেয়ের লড়ায়ের কথা শুনে পিছুপা হওয়ার কথাটা কেমন আমান্যকর মনে হয় মিস আঁখি,শুধু এতোটুকুই ছিলো আপনার আত্মসম্মান, এতোটুকুই ছিলো আপনার বুকের পাটা,আমি তো আপনার মধ্যে এই দেশের শত শত অসহায় মেয়ের ভবিষ্যত দেখেছিলাম আর আপনি, আপনি না কি শেষ মেষ সমাজের ওই পীড়িত,অবহেলিতল আট দশ টা অসহায় অবলা মেয়েদের লিস্টে নাম লিখাতে চাইছেন,এতোটুকুই কি ছিলো আপনার নারীত্বের সম্মান,এতোটাই দূর্বল আপনি?
সমাজের হাজারজন হাজারটা কথা বলবে তাই বলে ওদের কথায় ভয় পেয়ে লুকিয়ে যাওয়ার মেয়ে তো আপনি নন,সবাইকে তার জবাব দিন,মুখে দিতে না পারলেও নিজের কর্মে দিন,যাতে আজকে যারা আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করছে তারা একদিন আপনাকে নিয়ে গর্ভ করতে পারে।
দেখেন মিস আঁখি সমাজের লোকগুলো শুধু একে অন্যকে নিচু দেখাতে ভালোবাসে,আর অন্যের উন্নতিতে হিংসে করতে জানে তাই এমন লোকদের কথা শুনে নিজের সংগ্রাম বন্ধ করে দিলে তো হবে না,আপনার তো ওদের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করে জিততে হবে,আপনি এতটুকুতে দমে গেলে কি করে হবে বলেন,ন্যায়ের পথে তো বাঁধা আসবেই তাই বলে কি ন্যায় বিচারের আশাটা ছেড়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
মিস আঁখি আমি আপনাকে জোর করে কিছু করাতে চাই না,এই লড়াই আপনার আমি তো শুধুই আপনার সংগ্রামের একটা অংশ হতে চাইছিলাম মাত্র আমি জানি আপনার আমার কোনো দরকার নেই তাও আপনার লড়ায়ে অংশীদার হওয়ার বড় ইচ্ছে ছিলো আমার,আর তাই আপনার দিকে নিজের খালি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম আপনি চাইলে আমার হাতটা ধরে সংগ্রামের পথে নতুন কদম রাখতে পারেন।
কথাটা বলে আদৃত উঠে গিয়ে আবারও আঁখির দিকে হাত বাড়ালো,আঁখি কিছু সময় ওর আর ওর আঁখির পানে বাড়িয়ে দেওয়া হাতখানা দিকে তাকালো, কিছুক্ষন অনেক গাম্ভীর্যের সাথে কিছু ভাবলো তারপর ওর হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।
আদৃত এবার ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির এক ঝলক হাসি ফুঁটিয়ে বললো।
আমি আপনার কাছ থেকে এমন কিছুই আশা করছিলাম মি আঁখি।
এবার গম্ভীর কন্ঠে আঁখি বললো।
বাঘিনী ঘায়েল অবস্থাতে নিজেকে বাঁচানোর সুবিধার্থে খনিকের জন্য একটু দমতেও পারে তবে ওর দমনটা বেশি সময়ের থাকে না ড.আদৃত,দশজনের সামনে বুক ফুলিয়ে হাঁটা যে তার স্বাভাব,আর সে স্বভাব সবাই চাইলে কেঁড়ে নিতে সক্ষম হয় না।আমি আপনার সাথে যাবো আর ওই সমাজের লোকের সামনে বুক ফুলিয়ে হাঁটবো যারা আমাকে দমাতে চায়,কারন আমি ন্যায়ের পথে আছি সংগ্রামের পথে আছি আর দমনটা আমাকে শোভা দেয় না।
ব্যাস,এটাই তো চাইছিলাম আমি,তবে যাওয়া যাক।
হুম চলেন।
__________________
মা এটা তুমি কি করছো?
আরে তেমন কিছু না, মাহি মায়ের জন্য একটু শশা কেটে নিয়ে যাচ্ছি ও খাবে বলেছে আর চোখেও হয়তো লাগাবে,তুই চিন্তা করিস না এসব নিয়ে তুই যা গিয়ে পড় কাল না তোর কিসের এক্সাম আছে।
হোয়াট?তুমি কাজ করবে আর আমি পড়বো,ওই মাহি তোমাকে এসব করতে বলেছে?
ঘরে কাজের লোক নেই তবে এসব কাজ তো আমাদেরই করতে হবে না রে মা,তুই যা আমি ওকে এসব দিয়ে আসছি।
ঘরে কাজের লোক ওই মাহির জন্যই টিকে না মা,ও সবাইকে বিভিন্ন কারনে তাড়িয়ে দেয়, ওর জন্য এখন এ বাড়িতে কেউ কাজ করতে আসতে চায় না,আর সারাদিন আমরা দুজন মিলে কাজ করি আর ও বসে বসে খায়,সেটা না হয় যেতেও দিলাম এখন ওর এক্সট্রা কাজও আমরা করবো না কি,ওর সাহস কি করে হয় তোমাকে ওর্ডার করে কাজ করানোর,ওকে তো আমি এখনি দেখছি।
আয়েশা দয়া করে আর অশান্তি সৃষ্টি করিস না মা,আমি তো শশা কেটেই নিয়েছি এতে তো কোনো কষ্ট হয় নি আমার।
মা তুমি ওর কাজের লোক না যে ওর কথায় ওর কাজ করে দেবে,তুমি নিজের ঘরে যাও আর শশাগুলো আমাকে দাও।
দেখ মা ঝগড়া করিস না।
আমি কোনো ঝগড়া করবো না মা,তুমি নিশ্চিন্তে ঘরে যাও আমি না হয় তোমার বউমাকে এসব দিয়ে আসি।
কথাটা বলে আয়েশা ওর মাকে নিজের কক্ষে পাঠিয়ে শশাগুলো নিয়ে নিজেই গেলো,এদিকে মাহি ফেইস প্যাক মুখে লাগিয়ে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আঁছে। আয়েশা শশা নিয়ে যেতেই মাহি এবার মহারানীর ন্যায় ওকে বলে উঠলো।
এই যে জলদি করে আয় আর আমার চোখে শশাগুলো লাগিয়ে দে আমি পারবোনা বাবা আমার হাতে এই মাত্র নেইলপালিশ লাগিয়েছি,সো কাম সুন।
তারপর খনিক এটিটিউড নিয়ে আরামসে আবার ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো।
আয়েশা এবার ঠোঁট বাকানো হাসি দিয়ে মাহির দিকে গেলো গিয়েই চেয়ারটা উপুর করে মাহিকে ফ্লোরে ফেলে দিলো।এহেন কান্ডে মাহি রেগে বম হয়ে বললো।
হাউ ডেয়ার ইউ টু বিহেইব লাইক দিস টু মি?
আয়েশা এবার তেঁড়ে এসে ওর চুল গুচ্ছ করে ধরে বললো।
তোর সাহস কি করে হয় আমার মাকে দিয়ে কাজ করানোর?ঘরে অশান্তির ভয়ে ভাইয়া আর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছু বলি না বলে এটা মনে করিস না যে তোকে সবসময় ছাড় দেবো,মনে আছে এমনই বাঁদরামোর জন্য স্কুলে আমার আর আঁখির হাতে কতো মার খেয়েছিলিস,ওগুলা মনে থাকলে আর সামনে থেকে আমার সাথে লাগতে আসিস না,তখন বাচ্চামো হাতে মার খেয়ে তোর হাল বেহাল হতো আর এখন যে সেই হাতটা আরও কঠোর হয়েছে।
আউচ ছাড় আমায় শাঁকচুন্নি লাগছে আমার,আমি তোর ভাইকে সব বলবো।
যা যা বলে দিস,এই আয়েশা কাউকে ভয় পায় না,ক্ষমতার জোড়ে কখনো এই আয়েশাকে দমাতে আসিস না।ব্যার্থতাই পরিনামে পাবি।
কথাটা বলে আয়েশা মাহিকে চুল ধরারত অবস্থায় ছিটকে ফেললো খনিক দূরে তারপর চলে গেলো।
এদিকে মাহি রাগে ফুলতে ফুলতে বললো।
ছাড়বোনা তোকে আয়েশা,হয়তো শারীরিক লড়াইয়ে আমি তোর সাথে পেরে উঠবো না,কিন্তু মাথার খেলায় তোকে আমার কাছে হারতেই হবে। এবার যে এ ঘর থেকে তোর ঘুড়িও কাটার সময় হয়ে গেছে।।
কথাটা বলে ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি ঝুলালো মাহি।
___________________
আঁখিকে নিয়ে আদৃত বাড়ি চলে আসলো,দিদুতো অনেক অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করেছেন ততক্ষণে, দিদুর রুম থেকে কিছু আওয়াজ শুনে দুজনই ছুঁটতে লাগলো সেদিকে,আঁখিকে একটু ক্ষন দেখতে না পেয়ে এমন অস্বাভাবিক আচরন করতে লাগলেন উনি।
আমার আরোহীকে এনে দাও, আমার আরোহী কোথায়? ওকে এনে দাও।
আঁখি এবার ছুঁটে গিয়েই দিদুকে জড়িয়ে ধরলো।
এই তো দিদু আমি এসে গেছি,শান্ত হও তুমি আমি তোমার পাশেই আছি।
তুই কোথায় চলে যাস বল?সারাদিন বাড়ি থাকিস না,আর এখন এমন ভিজা অবস্থায় কোথা থেকে আসলি?কোথায় ছিলি তুই বল?
আরে দিদু তোমাকে বলেছিলাম না আমি আমাদের মেডিক্যাল ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছি।
সেটা তো না হয় বুঝলাম তবে তুই রাতে কোথায় থাকিস?
আঁখি উপস্থিত মুহুর্তে কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না তখনি আদৃত আমতা কন্ঠে বলে উঠলো।
আসলে ও রাতে আমার সাথেই হাসপাতালে থাকে আমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে।
এই কথাটা বলতে গিয়েও আবার আদৃতের চোখের পাতা বার বার পড়ছিলো এমনকি ঠোঁটগুলোও কাঁপছিলো যা আজকেও আঁখির চোখ এড়াতে পারলো না,পরক্ষণেই আঁখি নিজের সন্দেহ ভাবনা একসাইড করে দিদুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
আসলে বাইরে বৃষ্টি তো তাই ভিজে গেছি,তুমি শান্ত হও আমি কাপড় বদলে এখনি আসছি,এসে তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে ঘুম পাড়াবো কেমন।সায়েদা,মামুনি আপনারা উনার পাশে থাকেন আমি আসছি।
তারপর আঁখি কাপড় পাল্টে এসে দিদুকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে কিছুক্ষণ উনার পাশে বসলো তারপর রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
আদৃত নিজের বারান্দায় থাকা দোলনার এক পাশে বসে ছিলো আপন মনে,একটু সময়ের ব্যবধানে আঁখিও এসে দোলনার অপর পাশে বসলো,ঝড় অনেক আগেই থেমে গেছে তবে এই ভিজে থাকা মনোরম পরিবেশটা দুজনেরই মনকে মাতিয়ে তুলছে নিজের অপরুপ সৌন্দর্য দিয়ে,দুজন চুপচাপ নিজেদের মধ্যে নিরবতা বজায় রেখে পরিবেশ পর্যবেক্ষনে ব্যাস্ত,হঠাৎই আদৃত লক্ষ্য করলো আঁখির পানে, ওর চুলের গোড়া দিয়ে জল পড়ছে এখনও,এবার আদৃত খনিক গম্ভীর গলায় বললো।
এ কি মিস আঁখি আপনি চুল মুছেননি?আপনার চুলের গোড়া দিয়ে তো জল পড়ছে।
মুছে ছিলাম তো,তারপরও পরছে,থাক না একটু পড়লে সমস্যা কি?
আপনি সত্যিই অনেক স্টুপিড একটা মেয়ে,ঝড়ের সাথে মোকাবিলা করতে একচুলও ঘাবড়াবেন না তবে নিজের যত্ন নিতে পৃথিবীর সব আলসেমি আপনার মধ্যে চলে আসে হয়তো।অন্ধকার হলে নিজের ছায়াও সঙ্গ ত্যাগ করে মিস আঁখি তবে সে পৃথিবীতে আপনি কারো কাছ থেকে কোনো কিছুর আশা কি করে রাখতে পারেন?নিজের খেয়াল নিজে রাখতে শিখেন,কারন পৃথিবীতে একা এসেছেন একাই যেতে হবে,তাই একা বাঁচতে শিখে নেওয়াটাও দরকার।বসেন আপনি আমি আসছি।
কথাটা বলে আদৃত কক্ষের ভিতর প্রবেশ করলো তার কিছুসময় পর একটা টাওয়েল হাতে আঁখির কাছে এসে ওর দিকে ওটা এগিয়ে দিলো।
এই নিন চুলটা মুছে নিন ভালো করে।
আঁখি ওটা নিয়ে নিজের চুল মুছতে ব্যাস্ত হলো আর আদৃত আবারও দোলনায় বসে পরিবেশ পর্যবেক্ষণে মন দিলো,এদিকে চুল মুছতে মুছতে আঁখির মনে কিছু কথা খেলা করতে শুরু করলো।
লোকটা মোটেও খারাপ না,জীবনে অনেক পুরুষ দেখেছি এটা বলার জন্য যে বিপদে আমি তোমাকে সামলে নিবো তবে এই প্রথম কাউকে দেখলাম যে কি না বিপদকে নিজে থেকে মোকাবিলার শিক্ষা টা আমায় দিতে চায়,এই লোকটা প্রথম কেউ যে আমার খেয়াল রাখবে না বলে আমায় নিজের প্রতি নিজেকে সচেতন হতে শক্তি জোটাচ্ছে,যে আমাকে দূর্বল ভেবে আমাকে সহানুভূতি দেখাতে চাইছে না বরং আমাকে নিজের দূর্বলতা কাটিয়ে উঠার প্রেরনা দিতে চাইছে,ইশ সমাজের প্রতিটা লোক যদি এমন হতো তবে হয়তো আমাদের সমাজের রুপটা আলাদাই হতো আজ।
এদিকে আদৃতও নিজের মনে কিছু কথা আনমনে বলে যাচ্ছে।
আমি চাইলেও আপনাকে সাহায্য করতে পারি মিস আঁখি, তবে আমি তা করবো না,এই সংগ্রাম আপনার নিজের তাই আপনাকেই এর সম্মুখীন হতে হবে আমি আপনাকে সাহায্য করে আপনার মনোবল ভাঙতে আসবো না,তবে হ্যাঁ আপনাকে এই সংগ্রামে আমি আপনাকে একাও ছাড়বো না,আপনার পাশে সবসময় আপনার সাহস আর শক্তি হয়ে থাকার চেষ্টা করবো।
চলবে………
সবাইকে আমার তরফ থেকে স্বাধীনতা দিবসের অসীম শুভেচ্ছা রইলো,ভালো থাকবেন সবাই,আসসালামু আলাইকুম।