মন পিঞ্জর পর্ব ১৬

0
980

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৬

মাহির ফোনে কারো ফোন আসলো,ফোনটা কানে নিয়ে ওপর পাশের কথাগুলো শুনে মাহির চোখগুলো রাগে খনিকেই রক্তবর্ণ ধারন করলো।তারপর ফোন রেখে রাগে গজগজ করতে করতে বললো।

তোকে ছাড়বোনা আঁখি,সবসময় তুই আমার থেকে জয়ি হয়ে যেতে পারিস না,তোকে আমি কোনোমতেই জিততে দিতে পারি না,এইবার তো ভেবেছিলাম আমি তোকে হারিয়েই দিয়েছি তবে এবার দেখছি তা মোটেও না। তুই তো দেখি হেরে গিয়েও জিতার লড়াই করে চলেছিস তবে তা যে আমি আর হতে দিবো না,এইবার হারটা যে তোরই হবে আঁখি।

প্রায় মধ্যোরাতে আঁখি শুয়ে ছিলো সোফাতে কিন্তু আদৃত মনে করলো ও ঘুমিয়ে গেছে তাই চোরের মতো চারিদিকে চোখ বুলিয়ে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,এদিকে আঁখির চোখ ফাঁকি দিতে পারলো না আদৃতের কর্মসূচি, আঁখিও আর কোনোদিক বিবেচনা না করে আদৃতের পিছু করলো,আদৃত আশপাশে লক্ষ্য রাখতে রাখতে বাগানের দিকে অগ্রসর হলো,এদিকে আঁখি চুপি চুপি আদৃতের পিছু গেলো,আদৃত বাগানের এক কোনে গিয়ে হাতে থাকা একটা ব্যাগের ভিতর থেকে কিছু কাগজ বের করলো,তারপর পকেট থেকে লাইটার বের করে ওগুলাতে আগুন লাগিয়ে দিলো,এবার ওগুলা নিচে ফেলে দিয়ে কাউকে ফোন করলো।

আর কোনো কপি রয়ে যায় নি তো?………ওকে ফাইন,কথাটা যেনো কেউ জানতে না পারে।

আদৃত কথাগুলো বলে ফোনটা কেটে দিলো,তারপর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললো।

আজ তুমি চিরতরে স্বাধীন হয়ে গেলে প্রাণপাখি,আজ থেকে তুমি মুক্ত।তারপর আদৃত খুব যত্নে নিজের অশ্রুশিক্ত আঁখিযোগল মুছে সেখান থেকে প্রস্থান করলো,যা আঁখির চোখ এড়ালো না,আদৃত চলে যেতেই আঁখি ছুঁটে এলো সেখানে,কাগজগুলো জ্বলে ছাই হয়ে গেছে তবে একটা টুকরোতে এখনও আগুন জ্বলে আছে যা টুকরোর অস্তিত্ব খনিকে মুছিয়ে দিতে চলেছে কিন্তু তা আর হতে দিলো না আঁখি,ঝটফট টুকরোটার আগুন নিভালো,তারপর ওটা হাতে নিলো।

সব অংশ ওটার জ্বলে গেছে আর যেটুকু বাকি আছে তা থেকে আঁখি বেশি কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও এতটুকু বুঝতে সক্ষম হলো ওটা একটা রিপোর্ট,যাতে আরোহীর নাম লেখা আছে, খুব সম্ভবত এটা ডিএনএ রিপোর্ট,যেটাতে ডিএনএ মেচ হয়নি এতোটুকু বুঝতে পারলো আঁখি,এদিকে এতোটুকু বুঝেও কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আঁখি, সবকিছু যেনো ওর মাথায় তালগুল পাকিয়ে গেলো।

এটা দেখছি একটা ডিএনএ রিপোর্ট, নাম আরোহীর তাই ওরই হবে,কিন্তু ডিএনএ মেচ কার সাথে করানো হয়েছে?যা মেচ হয়নি,আর কেনোই বা করানো হয়েছে?এদিকে আদৃত স্যার ওগুলাকে জ্বালিয়ে দিয়ে কান্না করলেন কেনো?আর ওই কথাটা কেনো বললেন?কাকে মুক্ত করার কথা বললেন উনি?ইশ আর ভাবতে পারছি না,খুব বড় কিছু লুকোচ্ছেন আদৃত স্যার, হোক না হোক জিনিসটা আরোহীর মৃত্যুর সাথে জড়িত,আমার কি এসবের খোঁজ নেওয়া উচিত?নেবোই বা কি করে, আরে এই কাগজটাতে তো হাসপাতালের নামটা দেখা যাচ্ছে,এই হাসপাতালে গেলে হয়তো কোনো খোঁজ মিলতে পারে।

আঁখি কাগজটা লুকিয়ে নিয়ে ঘরে চলে আসলো,আদৃত এসে ওকে সোফায় দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়, নিজের রহস্য উদঘাটনের ভয় ওর ভিতর খেলা করতে শুরু করে তখনি রুমে প্রবেশ করে আঁখি,আদৃত সন্দেহ জনক কন্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে।

আপনি কোথায় ছিলেন মিস আঁখি?

এই তো পানি খেতে গেছিলাম।আমতা কন্ঠে বললো আঁখি।

কিন্তু পানি তো রুমে ছিলো।

আঁখি দেখতে পেলো সোফার পাশেই জগে পানি রাখা আছে।তাই এবার কথা কাটিয়ে আবারও আমতা কন্ঠে বললো।

আ আসলে ওটা আমি খেয়াল করি নি।
কথাটা বলে আঁখি আর আদৃতের দিকে না তাকিয়েই সোফাতে শুতে চলে গেলো,আদৃতের মনে একটা খটকা লাগা কাজ করলো আঁখির এমন আচরনে।

দুচোখে ঘুম আসছে না আয়েশার,বার বার ওই ছেলেটার কথা মনে পড়ছে,ঠোঁটের হাসি যে আজ সরতেই নারাজ হচ্ছে ওর।সবকিছুতেই কেমন যেনো আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে আজ।

কি হয়ে গেলো আমার?কেনো ওই ছেলেটার কথা বার বার মনে পড়ছে?কেনো ভুলতে পারছি না আমি ওকে?বুকের ভিতর কেমন জানি একটা সুন্দর অনুভুতি কাজ করছে, খুব ভালো লাগছে অনুভতিটা অনুভব করতে,এমন অনুভতি যে আগে কভু হয় নি,কখনো কোনো ছেলেকে নিয়ে ভাবি নি এতো,তবে আজকে উনি আমার খেয়াল থেকে কেনো যেতে চাইছেন না?তবে কি আমি উনার প্রেমে পড়ে গেলাম?………আরে না না এভাবে প্রথম দেখাতে কেউ কারো প্রেমে পড়তে পারে না কি!আমি উনাকে না জানি, না চিনি।আমিও না,চুপচাপ ঘুমোনোর চেষ্টা করি, শান্তির ঘুম হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কথাটা বলে ঠোঁটের কোনে লজ্জাভরা মিষ্টি হাসি টাঙিয়ে শুয়ে পড়লো আয়েশা।

____________________

আঁখি আদৃতের গাড়ি থেকে নামতেই আজকে খেয়াল করলো কিছু ছেলেমেয়ে ওর দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,ওদের এমন চাহনির মানে বুঝলো না আঁখি, বুঝতেও চাইলো না,সোজা ভিতরে ঢুকতে নিলো,ওর সাথে সায়েদাও আছে,যেতে যেতে দুজনেরই কানে কিছু কথা ভেসে আসলো,কয়েকটা ছেলেমেয়ে বলাবলি করছে।

আরে দেখ এই মেয়েটাকে,কি নাম যেনো, হ্যাঁ আঁখি,দেখতে কতো সরল মনে হয় যেনো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না,কিন্তু এতো এক্সপার্ট কে জানতো,একসাথেই দুজনকে মাতিয়ে রেখেছে,আদৃত স্যার যিনি মেয়েদের দিকে চোখ তুলেও তাকান না উনার গাড়িতে সচরাচর ঘোরাঘুরি করে তাছাড়া নতুন স্যার তো আছেনই।কোনো মেয়ে ছেলেদের নিয়ে কতোটা দক্ষ হলো এমনটা করতে জানে জানিনা বাবা,হা হা হা।

কথাটা শুনে সায়েদার রাগ খেলা করে মস্তিষ্কে খনিকে,ও ওদের দিকে রুখে যেতে চাইলে আঁখি ওর হাত ধরে ওকে আটকায়,তারপর ওকে দমিয়ে নিজে ওই ছেলেমেয়েদের দিকে অগ্রসর হয়,এবার ওদের সামনে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলতে লাগে।

খুব সহজ না কাউকে জাজ করা,কতো সুন্দর করে বলে নিলে আমি দুজনকে মাতিয়ে রেখেছি,দেখো আমি তোমাদের মতো নিম্ন মানসিকতার লোকের সাথে তর্কে জড়াতে চাই না,শুধু এটা বলতে চাই যে তোমরা এতো সহজে বলে নিলে আমি দুজন ছেলেকে মাতিয়ে রেখেছি,দুজন ছেলে আমাকে নিয়ে আলাদা করে ভাবছে সেখানে দোষটা আমারই চোখে পড়লো তোমাদের, কিন্তু একবারও তোমরা এটা ভেবে দেখো নি যে ওই দুই ছেলে আমার পিছন পড়ে আছে,দোষটা ওদেরও হতে পারে।কিন্তু না সেটা তোমরা ভাববে কেনো,আরে সমাজে যে যাই করুক দোষটা চার দিক ঘুরে একটা মেয়ের উপরই আসবে,সেটা আর আলাদা করে বুঝতে বাকি নেই আমার,সমাজের এই নিকৃষ্ট মানসিকতা আমি একজন হয়তো পাল্টাতে পারবো না,তবে এমন মানসিকতার লোকগুলোকে অদেখা নিশ্চয়ই করতে পারবো,কে কি বলে আমার তাতে কোনো আসে যায় না,কারন আমার জানা আছে আমি কিরকম,কারো কাছ থেকে নিজেকে নিয়ে জানার কোনো প্রয়োজন আমি মনে করি না।আমার আল্লাহ আমার সাথে আছেন আমি আর কারো সঙ্গ চাই না।

কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেলো আঁখি।

আজকে আয়ান অনেকবার আঁখির সাথে কথা বলতে নিলেও আঁখি ওকে একদম পাত্তা দেয় নি,যথারীতি ইগনোর করে গেছে।এদিকে আজকে এখন অব্দি আদৃতের কোনো এমারজেন্সি না থাকায় আঁখি আর সায়েদাকে নিয়েই বাড়ি ফিরতে চাইলো ও, আঁখি আজ ওর সাথে আসতে চাইলো না, আদৃত আর সায়েদা ওকে অনেক জোর করেও আনতে পারে নি।

তাও আদৃত ওকে একা ছাড়তে চাইলো না,ওর পিছন পিছন গাড়ি নিয়ে আসছিলো,আঁখি অনেক রাস্তা ওটোতে এলেও এবার রিকশার জন্য নেমে গেলো,সেখান থেকে রিকশায় কাজে যাওয়ার সুবিধার্তে,এদিকে আয়ানও ওদের পিছু নিয়েছে,আয়ানও যে আঁখিকে এখন একা যাওয়া আসা করতে দিতে চায় না তাই। বিশেষ করে আদৃতের সাথে তাই।

তখনি কিছু লোক হঠাৎ এসেই আঁখির উপর কালি ছুঁড়ে মারলো,কিছু লোক নষ্ট টমেটো আর ডিম ছুঁড়তে লাগলো,আঁখি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে করতে বললো ওদের।

কি করছেন আপনারা এসব?কেনো করছেন?
তখন একটা মহিলা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।

কেনো করছি?মাগো কতো অবুঝ একটা মেয়ে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না,স্বামী ছেড়ে যেতে না যেতেই অন্য লোকের ঘরে উঠেছিস,বিয়ে ছাড়া ওর সাথে রাত কাটাচ্ছিস,যখন তখন ওর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিস,তোর মতো মেয়েরা আমাদের সমাজে থাকলে আমাদের মেয়েরাও তোর মতো নোংরামি করবে,তকে তো আজ এমন শিক্ষা দিবো যে তোর মতো নোংরামি করার আগে হাজারটা মেয়ের মন কেঁপে উঠবে।

কথাটা বলে মহিলাটি একটা ইটের বড়সড় টুকরা আঁখির দিকে ছুঁড়ে মারলে ইটটা আঁখির উপর পরে না,বরং সাথে সাথে কোথা থেকে আঁখির ঢাল হয়ে সামনে এসে খাঁড়া হয় আদৃত,যাতে ইটের টুকরাটা ওর বাজুতে এসে লাগে,এতে আদৃত অনেক ব্যাথা পেলে চোখ বন্ধ করে নিজের মুঠো শক্ত করে নেয় ব্যাথা সহ্য করার সুবিধার্তে,আয়ানও ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেছে, সেখানে উপস্থিত সবাই আদৃতের দিকে অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে,কিন্তু আদৃতের ঘটানো উক্ত ঘটনায় অবাকত্বের পরিমানটা আঁখির ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যাচ্ছে ,আদৃত এবার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো।

লজ্জা করে না আপনাদের রাস্তার মধ্যে একা একটা মেয়েকে এভাবে অপদস্ত করতে।

তখন একটা মহিলা বলে উঠলো।

ওর ছেলেদের সাথে নোংরামি করতে লজ্জা করে না তবে আমাদের কেনো করবে?

ছেলেদের সাথে নোংরামি, তা কি নোংরামি করেছে ও শুনি।

স্বামী ছেড়ে দিতে না দিতেই বিয়ে ছাড়া অন্য ছেলের সাথে থাকছে,এমনকি সবার সামনে ঘুরাফিরাও করছে ওর সাথে।

ওহ,তবে কি আপনি জানেন এই মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী কে আর বর্তমানে কার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে?

ওদের পরিচয় আমরা জেনে কি করবো?নোংরামি যে করছে আমরা তাকে সাজা দিবো।
আদৃত এবার তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বললো।

লাইক সিরিয়াসলি আন্টি,ওর স্বামী ওকে ছেড়ে দিয়েছে,বর্তমানে ও আরেকটা ছেলের সাথে ঘুরছে তা থেকেই আপনারা অনুমান করে নিলেন ও খারাপ ওকে সাজা দিতে হবে,তবে যে ওর স্বামী ওকে ছেড়ে দিয়েছে তার কোনো দোষ নেই?যে ছেলেটা ওকে নিয়ে ঘুরছে ওরও কোনো দোষ নেই?দোষ শুধুই আঁখির কারন ও একটা মেয়ে,এম আই রাইট?ওর জায়গায় কোনো ছেলে যদি দশটা বউ ঘরে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াতো তবে তাকে এভাবে কখনো অপদস্ত করা হতো না, ছেলেমানুষ যাই করুক তাকে তো নোংরা বলে ধিক্কার দেওয়া হয় না কখনো এই সমাজে,সেটা কোনে জানতে পারি আন্টি?আসলে জানেন আন্টি পতিতালয়ের মেয়েগুলো জন্ম থেকে পতিতা হয় না,ওদের জীবনী জানতে গেলে ওদের প্রতিটা জীবনের কালো অধ্যায়ের কারন হিসেবে বেশির ভাগ আয়ানের মতো স্বামী,প্রেমিক আর আপনাদের মতো সমাজের কিছু নিচু মনের মানুষকেই পাওয়া যাবে,একটা মেয়ে যদি একা একটা ভালো পথে যেতেও চায় তবে তাকে খারাপ ট্যাগটা আপনারা না দিয়ে শান্তিতে থাকতে পারেন না।আসলে বলে না নারীরাই নারীদের দুশমন হয়,সত্যিই আপনাদের মতো কিছু নিচু মানসিকতার নারীরা অন্য নারীর উপর কলঙ্ক লাগানোর আগে ভুলে যায় যে ওরা নিজেও নারী,একটা কথা বলবেন আন্টি আপনি কি আঁখিকে চোখের সামনে কোনো ছেলের সাথে খারাপ কিছু করতে দেখেছেন?আড্ডা ইয়ারকি মারতে দেখেছেন?

মহিলাটি আমতা কন্ঠে বললো এবার,
না দেখি নি।

হুম,এখানে ন্যায় বিচার করতে আসা বাকি কেউ দেখেছেন?
সবাই বললো না।

কেউ যখন দেখেন নি তবে আপনারা নিশ্চিত হলেন কি করে আঁখি নেংরামি করছে?আমি তো সিওর আপনারা কান কথা শুনে এসেছেন।আসলে আমাদের দেশের লোকগুলো এমনই,কেউ যদি বলে চিলে কান নিয়ে গেছে সেই চিলের পিছনেই ছুঁটবে সবাই কিন্তু একবার সেটা ভাববে না যে কানটা নিজের জায়গায় আছে কি না তা দেখে নেওয়া যায়,এজন্যই হয়তো আমাদের দেশটা আজ কোনোদিক থেকো এগুতেই পারছে না।
এখানে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি ভালোয় ভালোয় সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে যান নয়তো বিনা প্রমানে একটা মেয়েকে রাস্তায় অসম্মান করার অপরাধে সবাইকে হাজতে ভরবো,চলে যান সবাই আমাকে আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিতে বাধ্য করবেন না।

লোকগুলো চলে যায় এবার মুখ বাংলা পাঁচের মতো বানিয়ে,এদিকে আঁখি যেনো পাথর হয়ো গেছে,পুরো গায়ে মুখে কালি লেগে আছে ওর,সারা শরীর নোংরা, ধাতব মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ও, বর্তমানে কোনো প্রতিক্রিয়াই করছে না,এদিকে আয়ান এবার বলে উঠলো।

আমি বলেছিলাম তোমাকে আঁখি আদৃতের সাথে না ঘুরতে,দেখলে তো কি হয়ে গেলো?লোকগুলা কি বলছে তোমাকে নিয়ে?আমার কথা শুনে আমার সাথে গেলে এমনটা হতোই না।

আদৃত এবার বেশ রেগে মেখে বললো।

আর ইউ কিডিং মি.আয়ান।আমার তো মনে হয় আপনার মাথায় কিছু সমস্যা আছে,নইলে এতো কিছুর পরও আপনি এমন কিছু কি করে বলতে পারেন?আপনি রিয়েলাইজ করতে পারছেন আজকে এই মেয়েটার এই হালের জন্য দায়ী শুধু আপনি।

মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুইজ ড.আদৃত চৌধুরী, আমি কি করেছি আর কি করছি সব আমার জানা আছে,আপনি আমাকে আলাদা করে তা দেখিয়ে দিতে হবে না,আপনি আমাকে পাগল বলার সাহস কোত্থেকে পান?

আদৃতের কলার চেপে ধরে কথাটা বলে আয়ান,আদৃতও সাথে সাথে আয়ানের কলার চেপে ধরে কিছু বলবে তখনি আঁখি চিৎকার করে উঠে বলতে লাগে।

স্টপ ইট,আই সেইড স্টপ ইট,আপনারা কি পেয়েছেন আমাকে?আমি কোনো খেলনা নয় যে আমাকে নিয়ে দুজন লড়াইয়ে লিপ্ত হচ্ছেন,প্লিজ স্টপ ইট,আমি যে আর এসব নিতে পারছি না,আর সহ্য করতে পারছি না,প্লিজ স্টপ।

কথাটা বলে আঁখি একদিকে ছুঁটতে শুরু করলো,আদৃত আর সায়েদাও ওর পিছন ছুঁটতে শুরু করলো, কিন্তু আয়ান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো ওর জায়গায়।

এদিকে খনিক দূর থেকে একটা গাড়িতে বসা অবস্থায় ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি ফোঁটালো মাহি।এসব যে মাহিই করিয়েছে,লোক লাগিয়ে আঁখির খবর নিয়েছিলো তারপর জানতে পেরেছে আয়ানের আজকাল আঁখির পিছন ঘুরাফিরা সম্পর্কে তাই এমন কিছু প্লান করলো গায়ের জ্বালাতনে,এই এলাকার কিছু লোকের কানে আঁখির নামে এসব উল্টাপাল্টা জিনিস বলেছে মাহি,কজনকে টাকাও দিয়েছিলো আঁখির সাথে এমন কিছু করানের সুবিধার্তে

__________________

তখন সায়েদা আর আদৃত আঁখির পিছন ছুঁটে গিয়ে ওকে পায় না,কোথাও যেনো উদাও হয়ে গেলো খনিকে,ওরা ওকে অনেক খোঁজলো ওকে ফোনও করলো কিন্তু ওকে পেলো না,এদিকে হঠাৎই আদৃতের একটা এমারজেন্সির ডাক এলো,তাই আদৃত তারাহুরো করে সায়েদাকে বাড়ি পৌঁছিয়ে হাসপাতালে চলে গেলো,কিন্তু আদৃতের মাথা থেকে যেনো আঁখির চিন্তা সরছিলোই না,তাই ঝটফট কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরলো,এসেই দেখলো ড্রয়িংরুমে ইশা চৌধুরী আর সায়েদা পায়চারি করছে ।আদৃত আসতেই সায়েদা ছুঁটে এসে বললো।

ভাইয়া আঁখি এখনও ফিরে নি,ওর ফোনও বন্ধ।

হ্যাঁ বাবা আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছে যদি মেয়েটার কোনো ক্ষতি হয়,এতোসময়ে তো কাজ থেকে এসে যায়।

ফিরে নি মানে?…….দেখি আমি ওর কাজের জায়গায় ফোন করে।

তারপর আদৃত আঁখির কাজের জায়গায় ফোন করে কিন্তু সেখান থেকে জানতে পারে আঁখি আজ কাজেই যায় নি,এবার আদৃতের হয়রানি টা আরও বেড়ে যায়,মনে আঁখিকে নিয়ে কি না কি দুশ্চিন্তা হতে শুরু হয়েছে ওর,সাথে সাথেই আঁখির খোঁজে বেড়িয়ে যায় ও,পুরো শহর ঘুরে ঘুরে দেখছে কোথাও আঁখির কোনো খোঁজ নেই,এদিকে প্রবল বেগে ঝড় এসেছে,লোকজন রাস্তাঘাট খালি করে নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে গেছেন হয়তে ঝড়েরই ভয়ে সেটা আদৃত রাস্তাঘাটের নিস্তব্ধ অবস্থা দেখেই বুঝতে পারছে,তবে আঁখির খোঁজ যে ও দূর দূর পর্যন্ত পাচ্ছে না।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here