মন পিঞ্জর পর্ব ১৪

0
910

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৪

আয়ান বাড়ি ফিরেছে অনেক আগে মাহির এখনও কোনো আতাপাতা নেই,আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলো এবার আয়ান।

আয়েশা মাহি কোথায়?

জানি না ভাইয়া,সকালে বেরুনোর পর এখন অব্দি ফিরে নি।

হোয়াট,এখনও আসে নি মানে?ফোনও তো ধরছে না।দেখি একটু খোঁজ নিয়ে।

কথাটা বলে দরজা খুলে বাইরে যেতে নিলে আয়ান লক্ষ্য করলো একটা কালো কার থেকে নেমে আসছে মাহি,একটা ছেলে ওকে ধরে নামিয়ে দিচ্ছে, দুজনই মাতাল অবস্থায়, অন্য একটা ছেলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায়ই ড্রাইবিং সিটে বসা,মাহিকে নামিয়ে দিয়ে ছেলেগুলো চলে গেলো,মাহি মাতাল অবস্থায় হেলে দুলে বলছে।

বাই গাইজ,অনেক ফুর্তি করেছি আজ,তোদের ডান্স টা কিন্তু সেই ছিলো,হা হা।

হেলদুল খেয়ে মাহি পড়ে যেতে নিলে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে নিলো আয়ান,মাহি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো আয়ান রক্তবর্ণ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।এবার মাহি হেলদুল খেতে খেতেই বললো।

আরে বেবি,তুমি কখন এলে?জানো আজকে ক্লাবে কতো মজা করেছি,আরে তুমি তো আর এখন ক্লাবেই যাও না,দিন দিন কেমন বোরিং হয়ে যাচ্ছো,দেখি সরো আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে আমি বরং রুমে যাই।

মাহি চলে যেতে নিলে আয়ান শক্ত করে মাহির হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেঁপে রাগি স্বরে বলতে লাগলো এবার।

তুমি ক্লাবে গিয়েছিলে মাহি?ড্রিংক করে এসেছো?ছেলেগুলো কে ছিলো?

আরে এমন ভাব করছো যেনো আর তুমি কখনো ক্লাবেই যাও নি,তোমার মনে আছে আমাদের দেখাই ক্লাবে হয়েছিলো,হা হা।আর হ্যাঁ ওই যে ছেলেগুলো ওগুলা আমার নিউ ফ্রেন্ডস,খুব নটি বয় ওরা।

হোয়াট তোমার লজ্জা করে না মাহি?মাঝরাতে ড্রিংক করে অচেনা ছেলেদের সাথে গাড়ি করে কিভাবে ঘুরতে পারো তুমি?এসব কোন ধরনের ম্যানার তোমার?কতোটুকু চেনো তুমি ওই ছেলেগুলোদের।

আরে এতো চেনাজানার কি আছে?মনে আছে প্রথম দিন তোমাকেও চিনতাম না কিন্তু সেদিন তো তোমার সাথে কতো ঘুড়েছি তাও ড্রিংক করে হা হা।

হোয়াট,তোমার কাছে আমি আর অন্য সব ছেলে সমান?

আরে বেবি আমি সেটা কখন বললাম,আমি বলতে চাইছি এসব আজকালকার জেনারেশনের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার,তুমি শুধু নিজের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করে সবাইকে লেকচার দিলে তো হবে না,হা হা হা হা।
দেখি সরো তো এবার আমার দাদু সেজো না।

কথাটা বলে মাহি আয়ানকে সরিয়ে হেলেদুলে নিজের রুমের দিকে পদার্পণ করলো,আয়ান ভ্যাবাচেকার মতো তাকিয়ে আছে ওর পানে,আয়েশার দৃষ্টিও অগোচর করলো না মুহুর্তটা,আয়েশা যেনো মনে শান্তি পেলো,নিজের ভাইয়ের জন্য কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে না ওর মনে কারন এটা হয়তো আয়ানের পাপের কিঞ্চিৎ প্রাকৃতিক সাজা আল্লাহর তরফ থেকে,হয়তো আস্তে আস্তে এর পরিনাম আরও বড় হবে সেক্ষেত্রেও কোনো সন্দেহ নেই আয়েশার,তাই তাচ্ছিল্য হাসি ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

আয়ান হতভম্ব হয়ে ভাবতে লাগলো এবার।আঁখি এতো বড় বাবার মেয়ে হয়েও কখনো ক্লাবে যায় নি ড্রিংকও করে নি,অনেক মিশুক থাকলেও ছেলেদের সাথে সখ্যতা ওর কমই ছিলো,কোনো ছেলের সাথে বেশি মেলামেশা পছন্দ ছিলো না আঁখির,প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছেলের সাথে কথাও বলতো না।তবে আয়ানও যে কখনো ক্লাবে যেতো না,কিন্তু স্ট্যাটাসটা ভারার সাথে সাথে ওর রুচিও বেড়ে গেছিলো,বাকি আট-দশ জন বিত্তবানদের তালে তাল মেলাতে ওকেও যে ওসব আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেতে হয়,আয়ানের খুব ভালো করে মনে আছে একটা ক্লাবেই মাহির সাথে আয়ানের দেখা আর সেদিন থেকেই মাহি ওর সাথে অনেক ক্লোজ হয়ে উঠেছিলো,ও ছাড়াও মাহির অনেক ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ আছে কিন্তু কখনো কখনো আয়ানের সেসব ফ্রেন্ডশিপ লিমিটের অতিরিক্তই মনে হয়।আয়ান রুমে যায় গিয়ে দেখে ওর সুন্দরী রমনী আয়েশ করে বেডে হাত পা ছাড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন,আয়ানের যেনো মাহির ওসব অসভ্যতা আর ভালো লাগছিলো না তাই মনের শান্তির খোঁজে বাইরে কোথাও বেড়িয়ে গেলো।
__________________

পিলুপিলু পায়ে আসছিলো আঁখি কাজ থেকে,খনিক দূরে চৌধুরী ম্যানশন আশেপাশে কোনো রিক্সা নেই তাই পায়ে হাঁটছে, এদিকে একটু একটু মাথা ধরেছে এটা সময়ের সাথে আরও প্রখড় হবে আঁখির জানা আছে তাই বাড়ি গিয়ে কিছু খেয়ে তারপর ওষুধ খেতে হবে বলে বেশ তাড়াহুড়োয়ই হাঁটছে আঁখি,হঠাৎই লক্ষ্য করলো রাস্তার পাশে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে থাকা ছোট্ট বেঞ্চের এক কোনে মাথা নুইয়ে বসে আছে কেউ একজন,আঁখি যে লোকটার মুখ দেখতে না পেলেও ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছে লোকটা আসলে কে,সে লোকটা যে ওর চিরচেনা, তবে আঁখি আর সেদিকে ভ্রক্ষেপ দেখালো না বরং নিজের গন্তব্যে মন দিলো হঠাৎই পিছন থেকে কিছু কথা ভেসে এলো আঁখির কানে।

দেখেও না দেখার ভান করছো?আমি কি এখন এতোটাই পর?

আঁখি কিছু না বলেই এগুতে লাগলো,যেনো কথাগুলো ওর কানেই গেলো না।আয়ান আবারও বললো।

পালাচ্ছো আমার থেকে?

কথাটা শুনে এবার আঁখি থমকে দাঁড়ালো, তারপর পিছন মুঁড়ে বললো।

আঁখি পালানোর মেয়ে না মি.আয়ান,সত্যের মোকাবিলা করার মতো শক্তি আঁখির আছে।বরং আপনি সত্যতা থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন।আপনি নিজেও জানেন আপনি এখন আর আমার আপন কেউ রয়ে যান নি।আপনি এখন আমার জন্য শুধুই একজন পরপুরুষ মাত্র,যার নিজস্ব স্ত্রী আছে হয়তো কয়েকদিন পর সন্তানও আসবে,এমতাবস্থায় আপনাকে কোনো মেয়ে আপন করে নিতে চাইলে তার সাথে আপনার সম্পর্ক অবৈধ সম্পর্কের নাম পাবে মি.আয়ান,আর আমি যেরকমই হই না কেনো কারো সাথে অবৈধ সম্পর্কে যাওয়ার মেয়ে নই।

এমন কিছু তো আমিও চাই না,তবে কি একটু সময় আমার সাথে বসে সুন্দর দুটি কথা বলার সময়ও নেই তোমার?

দেখেন আমি ব্যাস্ত একজন মানুষ,আপনার মতো বিত্তবান না,অনেক কিছুরই দায় ভার আমার মাথায় আছে তাই আপনার সাথে টাইম পাস করার সময় আমার নেই আর আপনার ভালোই জানা আছে আমার ছেলেদের সাথে কথা বলার বদ অভ্যেস বরাবরই কম আর বিবাহিত ছেলেদের আশপাশও যে ঘুরার কথা আমি ভাবতেও পারি না,সরেন আমার তাড়া আছে।

আঁখি চলে যেতে নিলে আয়ান কিছু বলবে তখনি আদৃত গাড়ি নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।

আরে আপনি?

হ্যাঁ হাসপাতাল থেকে ফিরছিলাম যাক তোমাকেও পেয়ে গেছি, চলো।

থাক আপনি চলে যান আমি নিজেই যেতে পারবো।

হয়তো আপনি ভুলে গেছেন মিস আঁখি আমাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিলো।

ভুলি নি তবে এটাও কথা হয়েছিলো যে আমার যখন ইচ্ছে আমি শুধু তখনই আপনার সাথে যাবে।

আপনার ইচ্ছে তো ভালো কথা, তবে সে ইচ্ছে দিনে ৫০ বার রুপ পাল্টালে তো হয় না মিস আঁখি,দেখেন শুধু শুধু জেদ করবেন না,বাড়িটা সামনে তাই চলেন একসাথেই যাই।

আঁখি আর কিছু বললো না,এমনিতেই এখানে থাকলে আয়ানের বেহায়া কথাগুলোর সম্মুখীন হতে হবে তাই গাড়িতে উঠতে গেলো আঁখি,গাড়ির দরজাটায় টান দিবে তখনি আয়ান আঁখির হাত ধরে নিলো,তারপর বলতে লাগলো।

তুমি ওর সাথে কেনো যাবে আঁখি?তুমি কোথায় যাবে আমায় বলো আমি পৌঁছে দেবো,আমি থাকতে তোমার অন্য কারো সহায়তা নিতে হবে না।

আঁখি কিছু বলবে তখনি আদৃত নেমে আসে গাড়ি থেকে,শান্ত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নেমে শান্ত রুপেই আঁখির হাত থেকে আয়ানের হাত ছাড়িয়ে নিলো তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললো।

আপনার এমন কেনো মনে হয় মি.আয়ান আমি উনাকে সাহায্য করতে চাইছি?আঁখি এমন মেয়ে যার কখনো কারো সাহায্যের দরকার পড়বে না মি.আয়ান।বরং আপনার কোনো সাহায্য লাগলে ওকে বলবেন,আপনাকে নিরাশ করবে না ও এতোটা বিশ্বাস ওর উপর রাখাই যায়।তাই মিছে সহযোগীতায় ওর দিকে এগিয়ে আসবেন না।

আমার আর আঁখির মধ্যে আপনার বলার কোনো অধিকার আছে বলে আমার মনে হয় না মি.আদৃত।

আমি আপনার মতো কখনো কোনো মিথ্যে অধিকার নিজের আয়ত্তে আনতে চাইও না মি.আয়ান।শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদটাই করি মাত্র,কারন অন্যায় সহ্য করার মতো লোক ড.আদৃত চৌধুরী না।

হয়েছে মি.আদৃত,এমন লোকের সাথে কথা বলেও কোনো লাভ নেই।যে সাধারন ঠিক ভুলের মধ্যেও পার্থক্যটা বুঝতে ব্যার্থ হয় সে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যটা কি করে বুঝবে,আপনি বরং চলেন।

আদৃতের গাড়িতে উঠে গেলো আঁখি,তারপর আদৃত গাড়ি ছেড়ে দিলো,আয়ানের মাথায় আগুন ধরলো এবার আঁখির সাথে আদৃতকে দেখে, উপর থেকে আঁখিও যে আদৃতের কথায় সায় মেলালো,কিছুতেই এসব মেনে নিতে পারলো না আয়ান,আর কোনোদিক বিবেচনা না করেই আয়ান আদৃতের গাড়ির পিছু করলো।

গাড়িটা চৌধুরী ম্যানশনের ভিতর ঢুকে গেলো,পথে কোথাও তো আদৃত আঁখিকে নামালো না,তারমানে আঁখি চৌধুরী ম্যানশনে থাকে বিষয়টা বুঝতে সক্ষম হলো আয়ান,উক্ত বিষয়টা যেনো আয়ানের মনের ঝড়ের বেগ আরও প্রবল করলো।

আঁখি ওই আদৃতের সাথে চৌধুরী ম্যানশনে কি করছে?না বিষয়টা জানতে হবে আমায়,ওই আদৃতকে সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার।খোঁজ তো আমায় নিতেই হবে আমাকে,এই আদৃতের একটা বিহিত আমিই করবো।
_________________

আদৃতের দীর্ঘ বারান্দার এক প্রান্তে বসে আছে আঁখি,আদৃত একটা এমারজেন্সি থাকায় আবারও হাসপাতালে গেছে, রাত তখন ২ টা বাজে,আজ ঘুম নেই আঁখির চোখে,কি করে থাকবে পুরোনো কিছু তীক্ত অনুভুতি যে আজ আবারও জেগে উঠেছে,সবার সামনে তা লুকিয়ে গেলেও একাকিত্বে নিজের কাছে তা যে লুকাতে চায় না আঁখি,হাতে দুইটা রিপোর্ট নিয়ে ওগুলাতে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,টপটপ করে চোখের পানি ঝড়ে পড়ছে সেগুলোতে,একটি রিপোর্টে একদম স্পষ্ট লিখা প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আর ওপর রিপোর্ট গর্ভপাত নিশ্চিত করনের প্রমান ,আঁখির একদম মনে আছে আজ থেকে ঠিক ১৪ মাস আগে আঁখি কনসিভ করেছিলো,কয়েকদিন যাবত শরীর কিছুটা খারাপ থাকলে নিজের চেকআপ করিয়েছিলো আঁখি যাতে ডাক্তার কিছু টেস্ট করালে আঁখি প্রেগন্যান্ট তা জানতে পারে।সেদিন আঁখি কতোটা খুশি হয়েছিলো তা শুধু ওই জানে,বাচ্চাদের যে আঁখি ছোটবেলা থেকেই অনেক পছন্দ করতো,বেশির ভাগ ওর টুইন বেবি পছন্দ ছিলো,সেদিন নিজের গর্ভে আয়ানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরে যে আঁখির ভালোলাগা চরম সীমায় পৌঁছে গেছিলো,মনে মনে কতো কিছু ভেবে নিয়েছিলো আঁখি,আয়ান শুনলে হয়তো অনেক খুশি হবে,ওকে আগের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসবে, ওর হয়তো টুইন বেবি হবে,ও আর আয়ান মিলে ওদের সুন্দর সুন্দর নাম রাখবে,আরও কতো কিছু মনে মনে ভাবতে ভাবতে ভাবনার সমাপ্তির আগেই আয়ানের কাছে পৌঁছালো আঁখি,সবার আগে যে খুশির এই খবরটা ও আয়ানকেই জানাতে চাইছিলো,ভেবেছিলো আয়ান হয়তো স্যারপ্রাইজড হবে কিন্তু আয়ান বিষয়টা শুনার পর নিজের রিয়াকশন দিয়ে আঁখিকে অবাক করে দেয়।আয়ানের এক কথাই ছিলো এখনও ওর লাইফ সেটেল হয় নি, এখন ও বাচ্চা নিয়ে ভাবতেও পারে না,এখন না কি লাইফে এনজয় করার সময় এখন কি করে বাচ্চা নিতে পারে সে,তাছাড়া ও এখন বাচ্চার দায়িত্ব নেওয়ার কথাও ভাবতে পারে না,এখনও ওর লাইফে না কি অনেক কিছুই এচিভ করার আছে আর না জানি কি কি।এখন এসব বাচ্চার কথা ওর জন্য নাকি ভাবাও ভুল মনে হচ্ছে।
আঁখি সেদিন অনেক মিনতি করে আয়ানকে, অনেক বুঝায় ওকে,ভুলবশত বাচ্চা চলে আসলেও এ বাচ্চাটা যে আল্লাহ প্রদত্ত,আর আঁখি ওকে নিজের গর্ভে ধারন করতে চায়,আঁখি আয়ানকে এই নিশ্চয়তাও দেয় যে বাচ্চার কোনো দায়িত্ব ও আয়ানের উপর পড়তে দিবে না ও নিজেই দেখবে সবকিছু কিন্তু আয়ান কোনো কিছুতেই রাজি হলো না ও আঁখিকে একটাই পথ দিলো আঁখিকে বাচ্চা আর আয়ানের মধ্যে থেকে কোনো একজনকে বেঁছে নিতে হবে,কয়েকদিন বুঝানোর পর আঁখি নিজেই ব্যার্থতা স্বীকার করলো, সেদিনও সবকিছুর উপর আয়ানকেই বেঁছে নিলো আঁখি,বাচ্চাটা মেরেই ফেললো শুধু আয়ানকেই পাওয়ার লোভে,সেদিনের পর আঁখি কেমন যেনো ভেঙে পড়েছিলো শারীরিকভাবে আর মানসিকভাবেও,সারাদিন কেমন পাথরের মতো বসে থাকতো,বার বার নিজের পেটে হাত রেখে নিজের বাচ্চাটাকে অনুভব করতে চাইতো কিন্তু সে অনুভুতিটাতে শুধু খালি লাগাই বিরাজ করতো,আঁখির এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আয়েশা আর মিরা রাহমান ওকে অনেক সাহায্য করেছিলেন,ওর সেবা যত্ন করেছিলেন ওরা অনেক।তবে আয়ানের আঁখির দিকে কোনো খেয়ালই ছিলো না,ও সারাদিন নিজের কাজেই ব্যাস্ত থাকতো,তাছাড়া তখন ওর ফাইনাল এক্সাম চলছিলো তাই সারাদিন পড়া নিয়েই পড়ে থাকতো আঁখি বেঁচে আছে কি মরে গেছে তাতে ওর কিছুই যেনো যায় আসতো না,আঁখির মন যে তখন সারাদিন আয়ানকেই খুঁজতো, ওর বুকে মাথা রেখে কিছুসময় বসতে পারলে হয়তো আঁখির মন পিঞ্জরে খনিক শান্তনা বিরাজমান হতো,কিন্তু আঁখির এই মনোভাব কখনো আঁখি সামনে আসতে দেয় নি আয়ানের,কারন কখনো আঁখি চায় নি ওর জন্য আয়ানের কেরিয়ার ওর সপ্ন সব ধুলোয় মিশে যাক,যে আয়ান আঁখির জন্য সবকিছু ছিলো সে আয়ানের সবকিছু ওর কেরিয়ারই ছিলো,আঁখির যে শুধু একটা চাওয়াই ছিলো আয়ানের কাছ থেকে তা শুধুই ওর একফালি ভালোবাসা।তবে আঁখি যে আয়ানের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতো কিছু করলো আজ সেই আয়ানই ছুঁড়ে ফেললো ওকে,ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে মুঠো ভরে ভরে শুধু শুন্যতা দান করলো আঁখিকে,যার জন্য পৃথিবীর সবকিছুর মায়া ত্যাগ করলো সেই আঁখির মায়া বুঝলো না।
আঁখি এবার ফুলকি দিয়ে কেঁদে উঠলো রিপোর্টগুলো নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে।

কেনো আল্লাহ?কেনো এমন হলো?আমি যখন সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে আয়ানকেই বেঁছে নিয়েছিলাম তবে আয়ান কেনো আমায় বেঁছে নিলো না?কেনো আমি ওর কাছে শুধুই কয়েকদিনের ভালোলাগার একটা দ্রব্য ছিলাম মাত্র?কেনো আল্লাহ কেনো এমন হলো?আমি জানি সেদিন আমার মা-বাবাকে ছেড়ে আসতে আমার কতো কষ্ট হয়েছিলো,আমি জানি সেদিন আমার সপ্নগুলো ধুলোয় মিশিয়ে দিতে আমার কতো কষ্ট হয়েছিলো,শুধু আমিই জানি সেদিন নিজের গর্ভে বেঁড়ে উঠা প্রাণটা শেষ করে দিতে আমার কতো কষ্ট হয়েছিলো আজও যে সেই অনুভুতি থেকে নিজেকে দূর করে রাখতে পারি না,আজও মনে হয় সে আমার গর্ভের কোনো এক কোনে লুকিয়ে আছে,কখনো মা বলে ডেকে উঠবে আমায়।আর পারছি না আল্লাহ আর পারছি না এসবকিছু মেনে নিতে,রহম করো রাব্বুল আল আমিন,শক্তি দাও আমায়,আমি যে আর পেরে উঠতে সক্ষম হচ্ছি না।একদিন সবকিছুর আগেই আমি আয়ানকে বেঁছে নিতাম আর আজ সেই আমিই আয়ানকে নিজের জীবনের কোনো অংশেই রাখতে চাই না আল্লাহ, তুমি সেই তৈফিক দিয়ো আমায়।তৈফিক দিয়ো।

কথাটা বলতে বলতে কান্নায় ফেঁটে পড়লো আঁখি,এদিকে আদৃত খনিক আগে আসলেও আঁখি সেদিকে খেয়াল করতে ব্যার্থ হলো যার ফলস্বরূপ আদৃতের কানে গেলো আঁখির বলা সমস্ত কথা,সামনে চলমান দৃশ্যটিও যে আদৃতের চোখে স্পষ্ট ভেসে উঠছে,তবে আদৃত যে সন্দেহ টা করেছিলো তাই হলো,এখন আদৃত আঁখির কথায় এতেটুকু তো বুঝতেই পারলো যে আয়ানের জন্যই আঁখি নিজের বাচ্চাকেও ত্যাগ করেছে,চাঁদের আলোয় সেই অসহায় রমণীর উজ্জল চেহারা যা অতিরিক্ত কান্নার ফলে লাল বর্ন ধারন করেছে তা বড়ই আঘাত করছে আদৃতের হৃদয়খানা,আরোহীও যে ঠিক একইভাবে কান্না করতো,কান্নার ফলে সম্পূর্ণ চেহারা খনিকে লাল বর্ন ধারন করতো,আরোহীকে যে কখনো কাঁদতে দেখে নি আদৃত,হয়তো আরোহীর কখনো কান্নার প্রয়োজনই পড়ে নি,আদৃত ওকে যে মাথায় চড়িয়ে রাখতো,তবে হ্যাঁ শেষবার অনেক কান্না করেছিলো আরোহী,নিজের প্রিয়সীর কষ্ট ভরা কান্না যে আদৃত সইতে পারে নি,সে কান্না থামানোর বদৌলতে আদৃত যেকোনো পর্যায়ে যে যেতে প্রস্তুত ছিলো তবে এমন পর্যায়েও যেতে হবে তা কখনো ভাবে নি আদৃত,হয়তো সত্য ভালোবাসায় এতোটা শক্তি থাকে যে মানুষকে অসাধ্য সাধন করারও শক্তি দেয়,আজ আঁখির সেই কষ্টানুভুতি আদৃতের মনের লুকিয়ে থাকা কষ্টানুভুতিকেও যেনো নেড়ে দিলো যার ফলস্বরূপ আদৃতেরও চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো কিছু জল,যা বেশি সময় বইতে না দিয়ে মুছে ফেললো আদৃত,আঁখির দিকে এগিয়ে যেতে নিলেও আর এগুলো না,কারন আদৃত জানে ওকে দেখলে আঁখি নিজের অনুভুতি আবারও লুকাবো নিজের মিথ্যে হাসির পিছনে,তাই আর এগুলো না,কখনো কখনো যে মন খুলে কান্না করাটাও মন হালকা করার অন্যতম পন্থা হয়।

বেশ কিছুক্ষণ পর আঁকি নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে আসলো,তৎক্ষনাৎ বেডে আদৃতকে বসে থাকতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।কাঁপা কন্ঠে বললো এবার।

আপনি?আপনি কখন এলেন?

এই তো প্রায় ২ মিনিট আগে।

আমতা আমতা করে কথাটা বললো আদৃত,আদৃত প্রায় আধ ঘন্টা আগে এসেছে তবে তা আঁখিকে জানাতে চাইলো না,আঁখি যখন নিজের অনুভুতি লুকিয়েই ভালো থাকতে চায় তবে তাতে বিঘ্ন ঘটাতেও চায় না আদৃত।কিন্তু মিথ্যা বলা জানে না তাই কন্ঠে আমতা ভাব এলো ওর কথাটা বলতে গিয়ে।

এদিকে উক্ত কথা বলতে গিয়েও আদৃতের চোখের পাতা বার বার পড়ছিলো,ঠোঁটগুলো কাঁপছিলো ঠিক সেই দিনের মতো, কিন্তু সচরাচর আদৃত যখন কথা বলে তখন এমনটা হয় না,উক্ত বিষয়টাও আদৃতকে নিয়ে আঁখির রহস্যময়ী সন্দেহ টা আরও বাড়িয়ে দিলো।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here