মন পিঞ্জর পর্ব ১৩

0
914

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৩

আয়ান বসে আছে এক বিস্তর মাঠের ছোট্টো একটা বেঞ্চের এক কোনে,মনে কাজ করছে ওর বিশাল শুন্যতা,যার কোনো মানে জানা নেই আয়ানের,বিশাল আকাশের বুকে নিজের ঠায় পেয়ে ওই চাঁদটা যে মনের খুশিতে আজ জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে ধরনিতে,ওই আকাশের বুকে চাদটাকে যে বড্ড মানায়,আকাশটা যে আজ তারার মেলায়ও ভরপুর,তাকিয়ে থাকতে সত্যিই অনেক ভালোলাগা কাজ করছে আয়ানের মনে,এভাবে আকাশ দেখা কখনোই ভালো লাগতো না আয়ানের তবে আঁখির যে এসব বড্ড পছন্দ ছিলো,ওর সাথে থাকতে গিয়ে ওরই কিছু অভ্যেস আয়ত্তে চলে এসেছে আয়ানের,আজকে কেনো যেনো বড্ড মনে পড়ছে ওর আঁখির কথা,মনে মনে অনেক কথা উঠছে ওর।আজকে তো মাহি ঠিকই বলেছে,আয়ান কখনোই আঁখির কোনো অনুভুতির দাম দিতে চাইতো না,আঁখি রোজ রাতে ততোক্ষণ খেতো না যতোক্ষণ আয়ান না ফিরেছে না ঘুমিয়ে বসে থাকতো,এদিকে আয়ান ইচ্ছে করেই বলতো আসছি বলে আর আসতো না বরং বড় বড় রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসে মাহির সাথে রঙিন রাত কাটিয়ে সুন্দর নিদ্রা যাপন করতো, এদিকে রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটাতো আঁখি,আয়ান ইচ্ছে করেই ওকে নিজে আসার আশা দিয়ে রাখতো কারন ওর সেই অনুভুতিগুলোতে আঘাত করে আয়ানের ভালোই লাগতো,আঁখির আয়ানের জন্য নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আয়ানের কাছে মজার জিনিস মনে হতো কারন আয়ান আঁখিকে যাই বলতো আঁখি তা মেনে নিতো,আয়ানের এই ইশারায় সব কিছুই করে ফেলতে চাইতো কোনো দিক বিবেচনা করতো না, আয়ানের যেকোনো কথায়ই বিশ্বাস করতো আর তাতে যে আয়ানের ভালোই লাগতো।আঁখি যেনো ওর হাতের পুতুল হয়ে গেছিলো যাকে মন মতো নাচাতে বড্ড ভালো লাগতো ওর,তবে আয়ান তো ওকে মন মতো অনেক নাচিয়েছে ওর মনও তো ভরে উঠেছিলো আঁখির উপর তাই ওকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তবে আজ কেনো আঁখি ওর মাথায় চেপে বসেছে ওর জানা নেই,ওর তো আঁখিকে পছন্দ ছিলো না, ওর তো মাহির মতো মেয়েই ভালো লাগতো তবে আজ কেনো মাহির মধ্যে ও আঁখিকে পেতে চায়,এসব চিন্তা আকঁড়ে ধরেছে আয়ানকে।চারিদিকেই নিরবতা কাজ করছে কিন্তু আয়ানের মনটা যে আজ বড়ো উতলা,বার বার যেনো আঁখি নাম নিচ্ছে,আজ এই চাঁদনি রাতে আঁখির পাশে থাকাটা কি খুব বেশি দূরুহ ছিলো?প্রশ্নটা বড়ই জ্বালাতন করছে আয়ানকে।
গতকাল রাতে যখন আয়ান শুনতে পেলো আঁখির বাড়িওয়ালা আঁখির সাথে বেয়াদবি করেছে তখন আর নিজেকে আটকাতে পারে নি আয়ান,ছুঁটে গেছিলো সেই হাসপাতালে যেখানে ওই লোকটাকে নেওয়া হয়েছিলো তারপর ওখানে গিয়ে লোকটাকে অনেক মারলো আয়ান,সেখানের কেউই ওকে আটকাতে সক্ষম হলো না,তারপর পুলিশ ডেকে লোকটাকে ধরিয়ে দিলো,আসলে আয়ান আঁখির পিছন লোক লাগিয়েছিলো ওর খবর আয়ানকে দেওয়ার জন্য,তখনি লোকটা জানালা দিয়ে ওসব কান্ড দেখে আয়ানকে ফোন করে,আয়ান তারপর ওই লোকটাকেও অনেক মারে,কারন লোকটা তখন আয়ানকে ফোন করার আগে আঁখিকে বাঁচাতে পারতো তাই।তারপর পাগলের মতো খুঁজতে থাকে আঁখিকে তবে পায় না,অবশেষে আজ বিকেলে আঁকির দ্বিধার করতে সক্ষম হয় আয়ান,তবে আজও আঁখি ওকে এভাবে ফিরিয়ে দিবে আশা করে নি আয়ান,আঁখি কখনো আয়ানের মুখের উপর কোনো কথা বলে নি,তাই আঁখির আয়ানের সাথে এমন কঠোর ব্যবহার মেনে নিতে ব্যার্থ হচ্ছে আয়ান,এমন তিক্ত কথা যে আগে কখনো আঁখির মুখ থেকে শুনে নি আয়ান,আঁখির ওকে এড়িয়ে চলা আয়ানের বুকে যেনো ছুঁড়ি চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আদৃত দাঁড়িয়ে আছে বেলকোনির একপাশে,আকাশের ওই চাঁদটাকে দেখতে যে বড্ড মায়াবী লাগছে ওর,আদৃতের একাকিত্বের সাথি যেনো ওই রাতের বিস্তৃত আকাশ আর তার বুকে ঠাই নিয়ে খুশিতে ঝলঝল করা ওই চাঁদটা,আরোহী চলে যাবার পর যে প্রায় রাতেই ঘুম ধরা দেয় না আদৃতের চোখে,চোখ বন্ধ করলেই কতগুলো তিক্ত স্মৃতি এসে বড্ড বিরক্ত করে ওকে,কি দোষ ছিলো ওর শুধু বার বার ওর বোকা মন আল্লাহর কাছে এই একই প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছুক হয়,হয়তো এটাই ওর ভাগ্যের লিখন ছিলো,যা চাইলেও পাল্টে ফেলতে পারবে না আদৃত, এসব ভাবনায় অনেকক্ষণ কাটিয়ে উঠলে হঠাৎ চোখ গেলো আদৃতের সোফায় শুয়ে থাকা সেই মায়াবী রমণীর দিকে,আদৃত ওকে বেডেই শুতে বললো,কিন্তু এ যে জেদি বাঘিনী,নিজের কথার এক অক্ষর খেলাপ যেতে প্রস্তুত না।এদিকে বেলকনি দিয়ে আগত বাতাসের শিহরণে বার বার কেঁপে উঠছে তাও ঘুমে ঠায় ব্যাস্ত ওই বাঘিনীটা, হয়তো আদৃতের মতোই অনেক রাতের ঘুমহীন চোখে আজকে একটু শান্তির ঘুম নেমেছে,ওর দিকে তাকিয়ে এমনটাই মনে হলো আদৃতের,ভালো করে বেলকোনির সামনের পর্দাটা টাঙিয়ে নিলো তারপর বারান্দার গ্লাসটা লাগিয়ে একটা চাদর নিয়ে এলো আঁখির পানে,ওটা ভালো করে আঁখির গায়ে দিয়ে দিলো,লক্ষ্য করলো আঁখি ঘুমের মধ্যে কিছু বরবর করছে।

আয়ান যেয়ো না তুমি,ছেড়ে দিও না আমায়,আমি তোমার জন্য সব করবো শুধু ছেঁড়ে যেও না আমায়,পাশে থাকো আমার,আমার তোমাকে বড্ড প্রয়োজন আয়ান যেয়ো না।

আঁখির এসব কথায় অনেক খারাপ লাগা কাজ করলো আদৃতের ভিতর,কেনো কিছু লোক সত্য ভালোবাসার কদর করতে জানে না?কেনো সত্য অনুভুতিগুলোর সাথে ওরা খেলা করতে ভালোবাসে?তবে কি কাউকে সত্য ভালোবাসাটা আজ কালকার পৃথিবীতে শুধুই একটা ভুল?সারাজীবনের কষ্টের কারন?কেনো ওই স্বার্থপর লোকগুলো সুখে থাকে আর যারা নিঃস্বার্থ ভালোবাসে তাদেরই কপালে কেনো কষ্টটা লিখা থাকে,হয়তো তাদের অনুভব শক্তি বেশি থাকার কারনে ওদের ভাগের কষ্টটাও বেশি হয়,এসব অনুভূতি থেকে আদৃতের মনে খনিক মায়া কাজ করে আঁখির জন্য,হাত বাড়ায় ওর মাথায় একটু হাত বুলানোর উদ্দেশ্যে কিন্তু তখনি নিজের আদর্শের টানটা অনুভব হয় ওর,একটা মেয়েকে তার অনুমতি ছাঁড়া ঘুমের ঘরে কি করে স্পর্শ করতে পারে ও,এটা যে ওর আদর্শের বিরুদ্ধে, তাই হাতটা ঘুটিয়ে নেয়,তারপর আবারও আঁখির গায়ের চাদর ভালো করে টেনে দিয়ে নিজের বেডে চলে যায়,সত্যিই আঁখিকে আদৃত যতো দেখে ততোই অবাক হয়,মেয়েটা যে প্রতিবার ওর চিন্তা থেকেও বেশি কিছু করে যায়,আজ যদি আঁখির মতো প্রতিটা মেয়ে নিজেদের লড়াই লড়তে সক্ষম হতো তবে এই সমাজটা যে পতনের মুখ থেকেও ফিরে আসতে সক্ষম হতো,কিন্তু তা যে শুধু কল্পনা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না আদৃতের,কারন আঁখির মতো আর কটা মেয়ে আছে যারা নিজেদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম নিজেরা চালিয়ে যাচ্ছে।

________________

সারারাতে বাড়ি ফিরেছে আয়ান, এদিকে ও কোথায় ছিলো না ছিলো তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই মাহির,আয়ান রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো মাহি আধো আধো ড্রেস পড়ে মডার্ন বেশে একদম রেডি,আয়ান এবার গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো।

কোথায় যাচ্ছো?

বন্ধুদের সাথে দেখা করতে,কিছু শপিংও করবো,আর হ্যাঁ তোমাকে তো আমি বলতেই ভুলে গেছিলাম,আমার একাউন্টের টাকাগুলো না শেষ তাই আমি তোমার কার্ড নিয়ে যাচ্ছি কেমন।

গতকাল চারদিন আগেই না তোমার একাউন্টে আমি ১০০,০০০ টাকা ভরিয়েছিলাম ওগুলা কি করেছো?

বা রে ওগুলা কোনো টাকা হলো না কি,শেষ হয়ে গেছে,আমার কি আর টাকাপয়সা লাগে না,ওকে এবার আবার তুমি তোমার সো কোল্ড ডায়লগ নিয়ে আমার মাথায় চেপে বসো না,তোমার মেন্টালিটি দিন দিন কেমন জানি বুড়ো দাদুদের মতো হয়ে যাচ্ছে,হা,হা,দেখি সরো আমার বেরুতে দেড়ি হচ্ছে,বাই বেবি,লাভ ইউ।

চলে গেলো মাহি,এদিকে আয়ান বাকরুদ্ধ কি বলবে বলার কোনো ভাষা নেই ওর।
এদিকে ওর মন মেজাজ একদমও ভালো নেই,তাই কোনোরকম ফ্রেস হয়ে আয়ান নিচে নামলো নাস্তা করতে।টেবিলে বসতেই আয়েশা ওকে নাস্তা দিলো।

কি আয়েশা তুই আজও নাস্তা দিচ্ছিস যে নতুন কাজের লোক কোথায়?

ওকেও কাল বিকেলে কাজ থেকে বের করে দিয়েছে মাহি।

হোয়াট?কেনো?

ও রান্নায় ছিলো তখন মাহি ওকে ডাক দিয়েছিলো এক গ্লাস পানির জন্য,ও একটু দেড়ি করে যাওয়ার মাহি ওকে অনেক বকাঝকা করে,তখন মেয়েটি শুধু এটা বলেছিলো যে ও রান্নাটা পুড়ে যাবার ভয়ে আসতে একটু দেড়ি হয়েছে।
এটা বলায় ও মেয়েটার দিকে গ্লাস ছুঁড়ে মারে যাতে মেয়েটার কপালের এক কোনে লেগে অনেকটা কেটে যায়,মাহির ওকে মারার কারন মেয়েটা নাকি ইচ্ছে করে দেড়ি করে গিয়েছিলো তারপর নাকি ওর মুখের উপর তর্কও করছে,তাই।
তারপর মেয়েটিকে ও চুল ধরে অনেক মারে,আমরাও ওকে আটকাতে ব্যার্থ হই এরপর ও মেয়েটাকে তাড়িয়ে দেয়।
যাকগে তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না ভাইয়া,তুমি নাস্তা করো,সবাই তো আর আঁখি হয় না,আর সেটা ভালোই হয়,আঁখির মতো হলে যে সবার অবহেলার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকতে হয়,যাকে শেষ সময়ে শুধু কষ্টই উপহারে মিলে।

আয়ান এবার ভ্রুযোগল কুঁচকে বলে উঠলো।
তুই কি মিন করতে চাইছিস আয়েশা?

বেশি কিছু না ভাইয়া,শুধু সত্যটা বলতে চাইছিলাম,যা আপনি দেখেও না দেখার আর বুঝেও না বুঝার ভান করছেন।

কথাটা বলে স্থান ত্যাগ করলো আয়েশা,আয়ান হতবাক হয়ে বসে রইলো খাবার টেবিলে,আজকে যে আয়ানের সব আছে তবুও অশান্তি আর নিরাশা পিছু ছাড়ছে না ওর,তবে কি আয়ান নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করে ফেললো।উক্ত ভাবনা বড্ড জ্বালাতন করছে আয়ানকে এবার।

__________________

আদৃত ড্রাইব করছে আর আঁখি পিছনে বসে জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে চোখ বুলাচ্ছে,হঠাৎই ট্রাফিক জ্যাম লাগলো,ব্যাস্ত শহরের এই জ্যামগুলো যে সহজে ছুটার নাম নেয় না,আজকের হাল যেনো আরও নাজেহাল,আদৃত আঁখি নিজেদের মধ্যে নিরবতা বজায় রেখে একাকিত্বে মগ্ন তখন,হঠাৎই আঁখি লক্ষ্য করলো একটা বাচ্চা অনেক কান্না করছে,বাচ্চাটির মা ওকে সামালতে ব্যার্থ হচ্ছেন বার বার,তাই ওকে শান্ত করানোর সুবিধার্থে গাড়ি থেকে নিচে নেমে মুক্ত বাতাসে হাঁটতে লাগলেন তাও বাচ্চাটা শান্ত হচ্ছে না,এদিকে বাচ্চাটার কান্না সহ্য হচ্ছে না আঁখির,তাই গাড়ির দরজা খুলে বাইরে যেতে নিলো।

আরে আরে কি করছেন?বাইরে যাচ্ছেন কোনো?

আমার কাজ আছে।

কি কাজ?

তা এখন বলার সময় নেই পরে বলবো।

কথাটা বলে আঁখি ছুটে গেলো।

কেমন মেয়েরে বাবা কখন কি করে কিছুই বুঝে উঠতে পারি না,একে নিয়ে যে আর পারা যায় না,দেখি কি করে।

কথাটা বিড়বিড় করে বলে আদৃতও ওর সাথে যায়।এদিকে আঁখি ছুটে যায় বাচ্চাটির কাছে,কিন্তু ওকে যেনো ধরার সাহস পায় না,হয়তো বাচ্চাটির মায়ের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে,হাত বাড়িয়েও গুটিয়ে নিতে চায়,তখন বাচ্চাটির মা ওকে জিজ্ঞেস করেন?

কি আপু?
আঁখি আমতা কন্ঠে বলে উঠে,

আসলে আপনি কিছু মনে না করলে ওকে আমি একটু কোলে নেই।
মহিলাটি এবার মুখে খনিক হাসি ফুঁটিয়ে বললেন।

কেনো না,নিন।

মহিলাটি বাচ্চাটিকে আঁখির কোলে দিলেন,আঁখি তো মহাখুশি, বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে আদর দিতে লাগলো,ওকে দোলাতে লাগলো,খনিকে বাচ্চাটি শান্ত হলো,এমনকি আঁখির সাথে খেলাও করতে লাগলো,আঁখির অস্থির মনটাও যে এবার শান্তির ছোঁয়ায় চলে গেলো,সেখানে ট্রাফিকে আটকে থাকা অনেক লোকই আঁখির কর্মকান্ড হতবাক হয়ে দেখছে,কারন স্বাভাবিক লোক যেমন বাচ্চাকে আদর করে আঁখির ক্ষেত্রে যে তা মিলছে না,আঁখি বাচ্চাটাকে কেমন অস্বাভাবিক ভাব নিয়ে আদর করছে ,আঁখি বাচ্চাটিকে এভাবে আদর করছে যেনো ও আঁখির নিজেরই নাড়ি ছেঁড়া ধন,একটা নারীর মধ্যে একটা বাচ্চার জন্য এতো মমতাময়ী ভাব তখনি আসতে পারে যখন সেই মেয়েটি মা হবার অনুভুতি আগে থেকেই অনুভবে নিয়ে নেয়,তবে আঁখিও কি সেই অনুভুতিটা কখনো অনুভব করেছে,আদৃতের মনে তখন উক্ত প্রশ্ন চলাচল করলেও অন্য একটা মন তার উত্তর জেনে যায় তখনি আর সে মনের মালিক আর কেউ নয় সয়ং আয়ান,ট্রাফিকে তখন আয়ানও আটকে ছিলো হঠাৎই আঁখির ওসব কর্মকাণ্ডে চোখ যায় ওর,মনে পড়ে আয়ানের কিছু স্মৃতি, আঁখির এমন অস্বাভাবিক আচরণের মানে যে আয়ান কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হচ্ছে।আঁখির এমন অস্বাভাবিক আচরনের কারনও যে আয়ান নিজেই।

এদিকে বাচ্চাটি শান্ত হয়ে গেলে ওর মা বলে উঠলেন।

বাহ তোমার কোলে গিয়ে আমার রাজ দেখি একদম শান্ত হয়ে গেলো?তুমি বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসো হয়তো,তা তুমি হয়তো নিজেও বাচ্চার মা তোমার ওকে আদর করা দেখেই বুঝা যাচ্ছে,তা তোমার কয়টা বেবি আছে?

আঁখির হাসিমুখটা খনিকে মলিনতায় পুর্ন হলো মহিলাটির কথায়,কন্ঠে একটা ব্যাথার্থ ভাব এনে মৃদু স্বরেই বললো এবার।

আমার কোনো বাচ্চা নেই।

ওহ সরি……..ইশ ট্রাফিক ছাড়ার টাইম হয়ে গেছে,আপনাকে ধন্যবাদ আপু, এবার রাজকে আমার কাছে দিয়ে দিন ট্রাফিক ছেড়ে দিবে।

কথাটা বলে মহিলাটি বাচ্চাটাকে নিয়ে নিলো আঁখি যেনো বাচ্চাটাকে দিতে না চাইলেও দিতে হলো,খনিকের জন্য আঁখির মনে হলো ওর কোলটা আজ আবারও কেউ খালি করে দিলো,গড়িয়ে পড়তে এলো চোখের জল,তবে তা পড়তে দিতে নারাজ আঁখি,তাই আর সেখানে দাঁড়ালো না কোনোরকম নিজেকে শক্ত করে সেখান থেকে চলে এসে গাড়িতে বসলো।

আয়ানের আজ কেনো যেনো নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো,যার কারন ওর নিজেরও জানা নেই কিন্তু মনের কোনো কোনেই শান্তির ছোঁয়া পাচ্ছে না আয়ান,এদিকে আঁখির এমন আচরন আদৃতের মনের প্রশ্নগুলোকে আরও প্রখড় করে তুললো,মনে মনে কোনো একটা কিছু যেনো আন্দাজ করে নিলো আদৃত।

ট্রাফিক ছেড়ে দিলে আদৃত আবার ড্রাইব করতে ব্যাস্ত হয়,এদিকে পরিবেশের ছুটন্ত ভাব আঁখির মনে যেনো তুলে দিয়ে যাচ্ছে হাজারো তিক্ত স্মৃতি, চোখের জলগুলো যে তার মালিকের বিরুদ্ধে গিয়ে আজকে বয়ে যেতে অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে,পারছে না আঁখি কোনোভাবেই এই তিক্ত স্মৃতি থেকে নিজেকে দূর করে নিতে,বার বার এসে ধরা দিচ্ছে মনে,এদিকে অবাধ্য জলগুলো বাঁধন মানলোই না,বেয়ে নেমে এলো নিজেদের আপন গতিতে আঁখি ঝটফট ওগুলা মুছে নিলো আদৃতের অগোচরেই, তারপর নিজের পেটে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা খালিলাগা অনুভব করতে লাগলো।এদিকে উক্ত ঘটনা চোখ ফাঁকি দিতে পারলো না আদৃতের,গাড়ির সামনে টাঙিয়ে রাখা ছোট্ট মিররে আঁখির কর্মকাণ্ড সব চোখে আবদ্ধ করলো আদৃত, মনের সন্দেহের মাত্রা টার পরিমাণ যে এখন চরম সীমায় পৌঁছে গেছে ওর,নিশ্চয়ই আরও অনেক রহস্যই আছে আঁখির জীবনে যার সাথে আঁখি কারোই পরিচয় করাতে নারায।

চলবে……….

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here