#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:৭
#Tabassum Ferdous Samiya
জায়ান ভাইয়ার রুমের ভিতরে গিয়ে আমি পুরো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না এ কি অবস্থা জায়ান ভাইয়ার।আমি রুমে গিয়ে দেখি জায়ান ভাইয়া উন্মুক্ত শরীরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আয়নার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।তার কোমরে শুধু একটা টাওয়াল পেঁচানো আর ঘাড়ে আরেকটা টাওয়াল রাখা যেটা দিয়ে তিনি নিজের মাথা মুছে। দেখাই বোঝা যাচ্ছে এই মত শাওয়ার নিয়ে বের হলো। আমি আগে কখনো ভাইয়াকে এভাবে দেখিনি। জায়ান ভাইয়া সদ্য শাওয়ার নেওয়ার কারণে একদম স্নিগ্ধ আর সতেজ দেখাচ্ছে।তাকে এই ভাবে দেখে দরজার কাছে যেন আমার পা টা আঠার মত আটকে গেছে। ঠিক তখনই ভাইয়া পিছন ফিরে আমাকে দেখে তার ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকিয়ে রইল আর আমি আগের মতই পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়া আমাকে এমন ভেবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গম্ভীর গলায় বলল,
“তুই এই সময় আমার রুমে কি করছিস?তোকে না বলেছি যে, আমার রুমে আসার আগে নক করে আসবি?”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার হাতে থাকা খাওয়ার প্লেট থর থর করে কাঁপতে লাগলো। আমি ভয়,ভয় গলায় ভাইয়াকে বললাম,
“আমি তোমার রুমে আসার আগে অনেক বার নক করেছি।কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পায়নি,তাই এভাবে ভেতরে চলে এসেছি। আর আমি কি জানতাম নাকি তুমি এই অবস্থায় রুমের মধ্যে চলাফেরা করবে! আগে জানলে আমি তো কখনোই আসতাম না।শুধু খালামণি তোমার খাবারটা দিয়ে যেতে বলল সেজন্য এসেছি। না হয় আমার এত শখ নেই তোমার রুমে আসার ইস কি রুমটা আমার হুঁ।”
লাস্টের কথাটা আমি একটু মুখ ভেংচে বললাম। তখনই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে রাগী গলায় বলল,
“এই রুমটা আমার।আর আমার রুমে আমি যেমন ইচ্ছা তেমন ভেবে থাকবো। তার জন্য অবশ্য তোর থেকে পারমিশন নিতে হবে না আমায়?আর একটা কথা তুই আমার রুমে না বলে এসেছিস, তো দোষটা তোর।আর রুমটা যখন আমার তখন, আমি যেমন খুশি তেমন ভাবে থাকবো। তুই কেন বারবার আমার রুমে না বলে ঢুকে পরিস?”
কথা গুলো বলতে বলতে জায়ান ভাইয়া আমার আরো কাছে চলে আসলো।তাকে এই ভাবে এগিয়ে আসতে দেখে আমি এক পা, এক পা করে পিছন দিকে যেতে লাগলাম এবং এক সময় আমি গিয়ে দরজার সাথে ধাক্কা খেলাম। আমার আর পেছনে যাওয়ার জায়গা নেই।এখন আমি কি করবো? এই দিকে জায়ান ভাইয়া আগের মতই আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আর এগিয়ে এসে একদম আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি ভয়ে কিছু বলতে পারছি না।আবার অন্য দিকে আমার বুকের মধ্যে কেমন জানি ধুকপুক করছে।এই ধুকপুকুনি টা শুধু জায়ান ভাইয়া আমার কাছে আসলেই হয় কেনো বুঝিনা।মনে মনে এই সব আকাশ,পাতাল ভাবছি।তখনই ভাইয়া আবার গম্ভীর গলায় আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে বলো,
“কি হলো বল, আমি আমার রুমে কখন কি করবো আর কি ভাবে থাকবো।তা কি এখন থেকে তোর পারমিশন নিয়ে করতে হবে নাকি?”
জায়ান ভাইয়ার কথার প্রতি উত্তরে আমি তাকে ভীতু গলায় বললাম,
“আমি কি এই কথা কখনো বলেছি যে,তুমি কখন কি করবে তা আমার পারমিশন নিয়ে করতে হবে?”
জায়ান ভাইয়া আমার এমন কথা শুনে পুনরায় গম্ভীর গলায় বলল,
“একটু আগে তোর বলা কথাটা আমার কাছে এমনই মনে হলো। আর যখন দেখলি আমি কোন কথা বলছি না রুমের ভেতর থেকে তাহলে, তো তোর চলে যাওয়া উচিত ছিল। চলে না গিয়ে তুই কেন রুমে আসলি?”
ভাইয়ার এমন ধমক দিয়ে বলা কথাটা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম আর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
“রুমটা তোমারর তুমি যখনন যা ইচ্ছে তাই করতে পারো। আমার থেকেক পারমিশন নিতে যাবে কেনন! আমি তো শুধু তোমার খাবারটা দিতেত এসেছিলাম। ”
জায়ান ভাইয়া আমার এমন কাঁপা গলার কথা শুনি পুনরায় ধমক দিয়ে বলল,
“কথা বলে ভালো ভাবে বলবি এমন তোতলাচ্ছিস কেন?আর খাবারটা তো আমি তোকে দিয়ে যেতে বলিনি তাহলে তুই কেন নিয়ে এলি? আম্মু কোথায়?”
আমি আর ভয়ে কিছু বলছি না চুপ করে জায়ান ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম।তখন জায়ান ভাইয়া আবার ধমক দিয়ে বলল,
“কি হলো কথা কানে যায় না তোর মাঝে মাঝে কি ঠোস হয়ে যাস তুই?”
উনার এই কথাও কোনো উত্তর দিলাম না। আমি উনার কথার উত্তর দিচ্ছি না দেখে, ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকালো এবং বুঝতে পারল ভাইয়ার ধমক দেওয়ার কারণে ভয়ে আমি কোন কথা বলতে পারছি না। তাই তিনি নিজেকে শান্ত করার জন্য পরপর কয়েকটা বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে ঠান্ডা গলায় আমাকে বলল,
“আম্মু কোথায়? খাবারটা তো আমি আম্মুকে আনতে বলেছিলাম।”
জায়ান ভাইয়ার এমন শান্ত গলা শুনে আমি বললাম,
“আসলে খালামণির রান্না ঘরে কিছু কাজ আছে তার জন্য আমাকে খাবার নিয়ে আসতে বল।তার জন্য আমি এসেছি।”
কথাটা বলা শেষ হতেই ভাইয়া আমার হাত থেকে খাবারের প্লেটটা নিজে হাতে নিল।আর একবার আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“তুই সকালে খেয়েছিস? আর অপি আসার পরে কি তোকে কিছু বলেছে?”
ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি তার দিকে তাকালাম আর আনমনে মন খারাপ করে বললাম,
“না অপি আপু আবার আমাকে কি বলবে কিছু বলেনি।”
ভাইয়া আমার কথা শুনে পুনরায় আমাকে শান্ত গলায় বলল,
“অপি যদি তোকে কিছু বলে তাহলে আপুকে বলিস তাই হবে। ”
জায়ান ভাইয়ার এই কথা গুলোর মাঝে কেমন যেন কোন রাগ আর গম্ভীরতা ছিল না। এই কথাগুলো আমার কানে অন্যরকম শোনালো। মনে হলো কথা গুলোর মাঝে আমার জন্য অনেক চিন্তা ভাবনা লুকিয়ে আছে। কথা গুলোর মাঝে এক অন্যরকম অনুভূতি ছিল।এইভাবে তো আগে কখনোই জায়ান ভাইয়া আমার সাথে কথা বলেনি। এইসব ভাবছি তখনই জায়ান ভাইয়া তার হাতের খাবারের প্লেটটা নিয়ে পাশের সেন্টের টেবিলে রেখে, পুনরায় আবার আমার কাছে এসে দাঁড়ানো। আর আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,
“শুধু কি খাবার প্লেটটা দিতে এসেছিস নাকি আর অন্য কোন কথা আছে?”
ভাইয়া কথা শুনে আমি তার দিকে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়া কিভাবে বুঝলো যে আমি তাকে আরও কিছু বলতে চাই? বলতে তো চাই কালকের ব্যাপারে। আমি ভাইয়াকে কিছু কথা বলতে যাবো তখনই, আমার খেয়াল হলো জায়ান ভাইয়া আমার অনেকটা কাছে ।আমি আর কি বলবো আমার কাছে তো কোন কিছু বলার ভাষা নেই। বলতে তো অনেক কিছুই চেয়েছিলাম কিন্তু এখন মুখ দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছে না। একই তো জায়ান ভাইয়া আমার এত কাছে তার ওপর আবার তার এই হট লুক। আমি তো পুরাই বরফ হয়ে গেছি। হঠাৎ কেমন যেন নিজের মাঝে লজ্জা,লজ্জা ভাব কাজ করতে শুরু করলো। এতক্ষণ তো আমি সেভাবে খেয়ালি করিনি ভাইয়া আমার কত কাছে। এখন যখন বিষয়টা আমার চোখে পড়লো তখন তো আমি পুরাই ফ্রিজ।কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি একবার জায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমাকে এখন যেতে হবে। তোমার খাবারটা তো তোমায় দিয়ে দিয়েছি তাহলে, এখন আমি যাই।”
কথাটা আমি একটু কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম। ভাইয়া দেখি আমার কথা শুনে আমার আরো কাছে চলে আসলো।আমাদের মাঝে আর হয়তো চার থেকে পাঁচ দূরত্ব আছে। জায়ান ভাইয়া আমার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল,
“কেনো এখন এমন পালাতে চাচ্ছিস,কালকে না তুই বলি আমি তোর সাথে ভালো ব্যবহার করি না!তো এখন যখন ভালো ব্যবহার করছি তখন এমন যায় যায় করিস কেন?”
কথা বলে ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে আসলো। ভাইয়াকে এমন ঝুকে আসতে দেখে এখন রীতিমতো আমার হাত পা কাঁপছে ।কোন দুঃখে যে খাবারটা দিতে আসলাম। তার বদল অপি আপু আসতে চেয়েছিল তাই ভালো ছিল। আমার কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে ।তাই আমি আমার চোখ বন্ধ করে ভাইয়াকে অস্থির গলায় বললাম,
“জায়ান ভাইয়া আমার কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে প্লিজ তুমি একটু দূরে যাবে?”
জায়ান ভাইয়া আমার কথা শুনে খুব ধীর গলায় বলল,
“আর যদি দূরে না যায় তাহলে কি করবি?”
ভাইয়ার এমন গলার স্বর শুনে আমার মাঝে আরও বেশি অস্থিরতা কাজ করছে তাই আমি ভাইয়াকে বললাম,
“কিছু করবো না তুমি একটু দূরে যাও তাই হবে। বললাম তো আমার যেন কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।”
ভাইয়া আমার কথা শুনে দূরে যাওয়া তো দূরের কথা উল্টো তিনি আমাকে মাঝখানে রেখে আমার দুপাশের দরজায় হাত রাখল আর বলল,
“আচ্ছা,তোর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।আমাকে একটু বল তো আমিও একটু শুনি?”
হাই এই লোকের হঠাৎ কি হলো, লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি এমন ভাবে আমার কাছে আসছে কেনো?আমার তো এখন মনে হয় দমবন্ধ হয়ে যাবে। আমার এইসব ভাবনার মাঝে জায়ান ভাইয়া বলল,
“কিরে বল, কেমন লাগছে তোর?আচ্ছা, যা তোকে বলতে হবে না।তোর হয়ে আমি বলে দিচ্ছি কেমন। এই ধর, তোর বুকে বাপাশে ধুকপুক ধুকপুক করেছে আবার নিজের মাঝে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করেছে। আরো এমন অনেক রকম চিন্তা ভাবনা কাজ করে এম আই রাইট?”
জায়ান ভাইয়ের কথা শুনে আমি থত মত খেয়ে গেলাম। লোকটা একদম ঠিক ঠিক বলল কিভাবে?না এখানে আর থাক যাবে না।আর একটু সময় এখানে থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাবো।আমি আর ভাইয়ার কোনো কথা কানে দিলাম না।শুধু একবার জায়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।আর হঠাৎ করে তাকে আমার শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলাম। আচমকা এমন ধাক্কা দেওয়ার কারণে ভাইয়া নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে আর দুকদম পিছিয়ে গেল। আর আমার দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি সেইসব তোয়াক্কা না করে এক দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে আসলাম। নিচে আসতে দেখি আরেক বিপদ।অপি আপু দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে আমাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে বলল,
“তুমি জায়ানের রুম থেকে এভাবে দৌড়ে আসলে কেন?আর এতক্ষণ তুমি জায়ানের রুমে কি করছিলি?”
অপি আপু কথাটা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল। আর এদিকে আমি দৌড়ে আসার কারণে হাপিয়ে গেছি তার কথাটা কি উত্তর দিব। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজের শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক করে তার কথার উত্তর দিলাম,
“ওই আর কি আপু জায়ান ভাইয়ার খাবারটা দিতে গিয়েছিলাম।”
অপি আপু আমার কথা শুনে পুনরায় আমাকে প্রশ্ন করল,
“সেটা আমিও জানি খাবার দিতে গিয়েছিলি। কিন্তু এত সময় লাগলো কেন? এটুকু কাজ করতে তো সময় লাগে নাকি! তুমি এত লেট করে আসলে কেন তার অ্যানসার দাও আমায়?”
আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে তাকে বললাম,
“জায়ান ভাইয়া শাওনের ছিল সেজন্য আমার দেরি হয়েছে। এখন আমি যাই খালামণির সাথে আমার একটু দরকারি কথা আছে।”
কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে গেলাম।আর অপি আপু পেছন থেকে বলতে লাগলো, এই মেয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে দিয়ে যাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা আমি কিছু না বলে খালামণির কাছে চলে গেলাম। আমি কিচেনে গিয়ে দেখি খালামণি দুপুরের খাবার রান্না করছে, আমাকে দেখে বলল,
“কিরে সায়রা জায়ানের খাবারটা দিয়ে এসেছিস তো।”
খালামণির কথার প্রতি উত্তরে আমি তাকে বললাম,
“হ্যাঁ, খাবার দিয়ে এসেছি আর এখন মনে হয় খাওয়া শেষ হয়ে গেছে।”
খালামণি আমার কথা শুনে অল্প হাসলো আর বলল,
“ভালো করেছিস, এখন বল রান্নাঘরে কি দরকারে আসলি?”
খালামণির কথা শুনে আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,
“কোন দরকারে আসিনি এমনি দেখতে এলাম তুমি কি রান্না করছো।”
খালামণি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা গম্ভীর গলায় বলল,
” দেখা হয়েছে এখন যা গরমের মধ্যে আর রান্না ঘরে আসতে হবে না।”
চলবে
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই প্লিজ গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)