ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_১৭

0
1132

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_১৭
#সুলতানা_সিমা

অরিন ঘুম থেকে উঠে বাইরে আসতেই দেখলো তানিয়া উঠুনে দাঁড়িয়ে আছে। অরিন বের হতেই চারিদিকে তাকিয়ে অরিনের দিকে দৌড়ে আসলো। তারপর করুন গলায় বলল,”আপু তোমার ফোনটা দিবা?
অরিন স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,”
_চার্জ নাই।
_আমি চার্জের লাগিয়ে দিবো আপু দাওনা প্লিজ।
_কিন্তু ব্যালেন্স ই তো নাই। কল যাবেনা।” তানিয়ার মুখটা কালো হয়ে গেলো। অরিন এসবে পাত্তা দিলোনা। কাল দিহান নিষেধ করেছে সবকিছু দিয়ে দিলেও ফোন যেন কারো হাতে দেয়না। সে ফোন দিয়ে অরিনকে না পেলে নাকি তাঁর কান্না চলে আসে। অরিন মনে মনে হাসলো। ছেলেরা কাঁদলে তাঁর হাসি পায়। ছেলেদের কান্নায় মানায় না। ছেলেদের মানায় ঠোঁট কামড়ে হাসলে। আজ দিহান আসবে। দুপুরে নাকি রওনা দিবে রাতেই পৌঁছে যাবে তমালপুর। অরিনের খুব খুশি লাগছে। আজ দিহানকে দেখবে দিহানের ঠোঁট কামড়ে হাসিটা দেখবে। তাঁর এমন ফিক হচ্ছে যেন তাঁর স্বামী বিদেশ থেকে দেশে আসবে। অরিন মিটিমিটি হেসে রান্না ঘরে গেলো। জহুরা বেগমকে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। অরিন বলল,”তুমি যাও আমি রাঁধবো।
_তুই যা আমি পারুম।
_উঠো তো।” অরিন জহুরাকে টেনে তুললো। উনি চলে গেলেন রাত থেকে মাথা ব্যথা করছে সত্যি বলতে রান্না করাটা এখন উনার ভালো লাগছে না। মাঝারি আকারের একটা হাড়ির মধ্যে চাল রাখা। অরিন দেখলো চাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুপুরের হয়ে যাবে কিন্তু রাতে হবেনা। আজকে গিয়ে চাল আনতে হবে। অরিন আলু কাটতে লাগলো। আলুভাজি করবে। জহুরা বেগম গাভীকে মাঠে বাঁধতে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে তানিয়া একবার রান্না ঘরের দিকে উঁকি দিলো। অরিন আন্দাজ করলো তানিয়া ফোনের জন্য আবার রিকুয়েষ্ট করতে আসবে। অরিন মনে মনে প্রস্তুতি নিলো তানিয়া আসলে কিছু কথা শুনিয়ে দিবে। মনে মনে কথাগুলা গুছিয়েও নিলো কিন্তু তানিয়া আসলো না। অরিন ভাবলো আসার সাহস পাচ্ছেনা। আলুভাজি করে ভাত বসালো। সব রান্না শেষ হলে সে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে ঘরে আসলো। ফজরের নামাজ পড়ে দিহানের সাথে ভিডিও কলে একটু কথা হয়েছে। অরিন তেমন কথা বলতে পারেনি জহুরা বেগম জেগে ছিলেন তাই। তাঁর লজ্জা লাগছিলো উনার সামনে কথা বলতে। দিহান শুধু বকবক করেছে আর কম্বলের নিচে শুয়ে শুয়ে অরিন দিহানের মায়াবি মুখটা দেখেছে আর কথা শুনেছে। তারপর ৭টা বাজলে অরিন উঠতে বললে দিহান বলে ঠিক আছে তুমি যাও আমি একটু ঘুমাই এসেই ফোন দিবে। অরিন ঘরে এসে আগে চুলগুলা হাত খোপা করে নিলো। বালিশের নিচে হাত দিয়ে ফোন খুঁজলো,কিন্তু ফোন নাই। অরিনের কপাল কুঁচকে গেলো। বালিশ তুলে দেখলো নাই। অরিন দুটো বালিশ তুলে দেখে কোথাও নাই। টেবিলের ড্রয়ার দেখলো সেখানেও নাই। অরিনের কান্না পেলো। তাঁর মায়ের ফোনটা টেবিলের উপর আছে অথচ তাঁর ফোন নাই। অরিন একবার খুঁজে নেওয়া জায়গা আবার খুঁজল কিন্তু আবারও সে নিরাশ। অরিনের নিজের উপর রাগ হলো ফোনের নাম্বারটাও মুখস্থ নাই যে ফোন দিয়ে খুঁজবে। নাম্বারের কথা মনে হলে দিহানের নাম্বারের কথা মনে হয় তাঁর। দিহানের নাম্বারও তো মুখস্থ নাই। আর দিহানও তাঁর মায়ের নাম্বার জানেনা। অরিনের কান্না চলে আসলো। চোখটা মুছে ঘর থেকে বেরিয়ে তানিয়ার কাছে গেলো। তানিয়া রান্না ঘরে উঁকি দিয়েছিলো। এমন তো নয় তানিয়া নিয়েছে? তানিয়াদের ঘরে না ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকল। তানিয়াকে দেখা যাচ্ছেনা। শুধু সেলিনা বেগম ঘরে আছেন। অরিন উনাকে ভয় পায় তাই কিছু না বলে আবার চলে আসলো। ঘরে এসে অরিন কাঁদতে লাগে। দিহানের কথা খুব মনে পড়ছে। হয়তো দিহান ফোন দিচ্ছে। আচ্ছা দিহান যদি ফোন দিয়ে অরিনকে না পেয়ে রাগ করে আজ আসেনা, তখন? প্রশ্নটা মগজ নাড়াতেই বুকটা ধুক করে উঠলো অরিনের। সব কষ্টগুলো তাকে ঝেঁকে ধরেছে। কষ্টগুলো দমাতে না পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।

___________________________________

লুপা আজ অনেক খুশি। সকালে নাস্তার টেবিলে মিহান বলেছে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। সাথে দিশা দিয়া ইশিও যাবে। লুপা ঘুরতে যাবে শুনে এতোটা খুশি নয় খুশি হচ্ছে সে শপিং করবে এটা শুনে। শান্তি নীড়ে লুপার মতো শপিং কেউ করেনা। এতো কেনাকাটার পড়েও সে বলবে আমার এটা নাই ওটা নাই এক কথায় তাঁর কিছুই নাই। হলুদ রংয়ের হাত কাটা লং ড্রেস পড়েছে লুপা। দিশা আর ইশি পড়েছে লাল রংয়ের স্কার্ট। দিয়া সাদা জিন্স প্যান্ট ও কালো টিশার্ট পড়েছে। দিয়া রেডি হয়ে এসে গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে উঠে দেখে রুহান গাড়িতে বসে বসে ফোনে গেইম করছে। দিয়া রুহানের পাশের সিটে বসলো। তারপর ফোন বের করে গান শুনতে লাগলো। রুহান একবার আড়চোখে তাকিয়ে আবার তাঁর খেলায় মনোযোগ দিলো কিন্তু গানের উচ্চ শব্দে তাঁর মনোযোগ বার বার গানের দিকে চলে যাচ্ছে। রুহান দিয়াকে বলল,”ওই ভলিউম কমা।” দিয়া শুনলো না সে গান শুনেই যাচ্ছে। রুহান আবার বলল,”কি হলো শুনিস না নাকি? ভলিউম কমা আমার সমস্যা হচ্ছে।
_তোর সমস্যা হলে তুই অন্য কোথাও যা আমি কমাতে পারবো না।” রুহান কথা না বাড়িয়ে তাঁর পকেট থেকে ব্লুটুথ বের করে দিলো। তারপর বলল,”নে ধর, এটা দিয়ে শুন।
_আমি এভাবেই শুনবো৷ তোর সমস্যা হলে তুই উঠে যা।” রুহান এবার রেগে গেলো। সে দিয়ার হাত থেকে ছু মেরে ফোনটা এনে গান বন্ধ করে তাঁর পকেটে ঢুকিয়ে দিলো। দিয়া বলল”আমার ফোন দে। বড় চাচ্চু বাসায় আছে আমি কিন্তু বিচার দিবো গিয়ে।
_যা দে গিয়ে বিচার। সর এখান থেকে তুই।” দিয়া রুহানের পকেটে হাত ঢুকাতে চায় রুহান বাধা দেয়। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দিয়া বলে,”আমার ফোন দে কুত্তা।” রুহান দিয়াকে থাপ্পড় মেরে বলে কুত্তা ডাকলি কেনো?” থাপ্পড় খেয়ে দিয়া তাঁর সিটের পাশে রাখা খালি পানির বোতল নিয়ে রুহানকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগে। রুহানও দুই-তিনটা কিল গুষি দিয়ে দেয়। লুপা মিহান দিয়া ইশি এসে দেখে রুহান আর দিয়ার মাঝে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। মিহান রুহানকে ধরে দিশা দিয়াকে। দুজন দুজনকে ছাড়িয়ে গাড়ি থেকে বের করে নেয়। মিহান রুহানকে বলে,”থাপ্পড় দিয়ে সবগুলা দাঁত ফেলে দিবো। ও তোর ছোট না লজ্জা করেনা ওর সাথে মারামারি করতে?” দিয়া ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি বলেছি আমাকে তোর ব্লুটুথটা দিবি আমি গান শুনবো। তখন আমাকে টাস টাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলে আমি সাহস পেলাম কই তাকে এটা বলার।” রুহান চেঁচিয়ে বলল,”আল্লাহর গজব পড়বে তোর উপর। আমি এটা তোকে বলেছি?
_কেন তুই আমাকে থাপ্পড় মারিস নাই?
_তুই আগে আমাকে বোতল দিয়ে মেরেছিস তাই আমি তোকে মেরেছি।
_তুই আগে আমাকে মেরেছিস। তুই বকেছিসও।
_ও আগে আমাকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিছে।
_আল্লাহর গজব পড়বে রে মিথ্যেবাদী। আমি তোরে কুত্তা বলছি।” রুহান আর দিয়ার মাঝে তুমুল ঝগড়া চলছে। দিশা ইশি লুপা মিহান বুঝতে পারছে না কে সত্যি বলছে মিথ্যা বলছে। দুজনের কথার কোনো মিল নেই। দিয়া মিহানকে বলল,”ভাইয়া ও যদি যায় আমি যাবো না।” রুহান বলল,”যাসনা তুই। আমার ভালো। তুই গেলে তো আমি যাবোই না।”মিহান ধমক দিয়ে বলল,”ওই চুপ। দুটো চুপ কর। তোরা দুটোর মধ্যে একটাও যেতে পারবি না।” মিহান গিয়ে গাড়িতে উঠলো। লুপা ড্রাইভিং সিটে বসলো। দিয়া লুপার পাশের সিটে ইশি আর মিহান পিছনের সিটে। মিহান বসেই চোখে চশমা পড়লো। ইশির রাগ হলো। সব জায়গায় বই পড়তে হবে নাকি? দিয়া ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ভিতরে গেলো। তাঁর কান্নার উচ্চ শব্দ মনে হয় পাশের বাসার লোকজনও শুনবে। রুহানও গোমড়া মুখ বানিয়ে ভিতরে গেলো। ইশি মিহানকে বলল,”এই এটা কিন্তু আমার খারাপ লাগছে। দুটো কত আশা নিয়ে এসেছে আর তুই এভাবে দুটোকে তাড়িয়ে দিলি?” মিহান বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলল,”আরে রাখ তো। সেদিন দিহান নিয়ে গেছিলো ওদের। ওরা শপে গিয়েও এভাবে ঝগড়া শুরু করে দিছে। আজও এমনটা করবে। তার থেকে ভালো বাসায় ঝগড়া করুক।” লুপা বলল,”ভাইয়া আমারও খারাপ লাগছে প্লিজ ওদের নিয়ে নেই? মাত্র এসএসসি দিবে। ওদের মাঝে বাচ্চামো তো থাকবেই। এটার জন্য ওদেরকে এভাবে বকাঝকা কী ঠিক? ওদের সাথে নেই প্লিজ?” মিহান বইয়েই চোখ রেখে বলল,”ওকে।”

দিয়া ড্রয়িংরুমে বসে কান্না করছে। তাঁর কান্না শুনে কেউ আসছেনা বলে আরো জোরে জোরে কান্না করছে। কাঁদছে আর মনে মনে বাসার সবাইকে বকছে। সে কি সবার রুমে গিয়ে কেঁদে শুনিয়ে আসবে নাকি, যে দেখো আমি কাঁদছি? সে যে কাঁদছে এটা কেউ শুনছে না কেন? কেউ তাঁর কান্না শুনে আসছেনা দেখে আরো কান্না পাচ্ছে। রুহান দিয়ার সোজা সোফায় বসে দিয়ার সাথে ভ্যাঙ্গ করতে লাগলো। দিয়া রাগে উঠে এসে রুহানকে মারতে লাগলো। দিহান টিশার্ট পরে পরে নিচে নামছিলো। দেখলো দিয়া রুহানের পিঠে একের পর এক কিল গুষি দিয়ে যাচ্ছে। আর রুহানও দিয়াকে বকে যাচ্ছে। দিহান দৌড় গিয়ে দিয়াকে ধরে ছাড়ালো। ছাড়া পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে রুহান দিয়ার চুলে ধরে টান দেয়। দিহান ধমক দিয়ে বলে,”ওই থাম। মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।” রুহান দিয়াকে ছেড়ে দেয়। দিয়া চুল ঠিক করতে করতে কান্না করছে। রুহান দিয়াকে চোখ দিয়ে খুন করছে। দিহান বলল,”কি হইছে তোদের?” দিয়া কেঁদে কেঁদে বলল, “ও আমার ফোন দেয়না।”
_ওই ওর ফোন দে।” রুহান পকেট থেকে বের করে ফোন দিলো। লুপা রুমে আসলো। এসে বলল,”আয় তোরা ভাইয়া ডাকছে।” দিহান বলল,”কেন?
_আর বলোনা ভাইয়া। গিয়ে দেখি দুটো ঝগড়া করছে। তাই ভাইয়া নিবেনা বলছিলো। এখন রাজি করিয়েছি।
দিহান রুহান আর দিয়াকে বলল,”
_যদি বাইরে গিয়েও ঝগড়া করবি বাসায় আসার পরে তোদের পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।” দিয়া আর রুহান চলে গেলো। দিয়ার চুলগুলা সব এলোমেলো হয়ে আছে। রুহান বিড়বিড় করে বলল,”পাগলের মতো লাগছে।” দিয়ার কানে কথাটা খুলা বাতাস হয়ে ঢুকে গেলো। সে চেঁচিয়ে বলল,”লাগুক পাগলের মতো। তাতে তোর কী?” লুপা অগ্নি চোখে তাকালো। দুজন চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠলো। ইশি আর দিয়া গেলো পিছনে। রুহান মিহানের পাশে বসলো। পুরোটা রাস্তা গেলো কেউ কোনো কথা বলল না। মিহানও শান্তি মতো বই পড়তে পারলো।

প্রথমে সবাই একটা লেকের পাড়ে গেলো। তারপর একটা পার্কে তারপর শপিংমলে গেলো। একবারও মিহান গাড়ি থেকে নামলো না। সে বইয়ে মুখ গেড়ে আছে। লুপা মিহানকে বলল,”ভাইয়া আসো না প্লিজ।” মিহান চোখের চশমাটা খুলে বলল,”ভাইয়াকে তো টাকার জন্য লাগবে তাইনা?
_না ভাইয়া। সেটা না। তুমি আমাকে চুজ করে দিবা আমি একটা শাড়ি কিনবো।
_ওকে চল।” মিহান লুপা শপিংমলে ঢুকলো। ইশি দিশা দিয়া রুহান আগেই ঢুকে গেছে।

লুপা শাড়ী কিনবে বলে এসে অনেকগুলো জিনিস কিনিলো। মিহান বোনের কান্ড দেখে হাসলো। সব শেষে লুপা সিলবার কালার একটা শাড়ী কিনলো৷ শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে চুড়ি কিনবে সে। লুপ আর দিয়া থার্ড ফ্লোরে গেলো। লুপা চুড়ি দেখতে লাগে। দিয়া বলল, “আরে ওই দেখো নীল ভাইয়া।” দিয়ার কথায় লুপা সামনে থাকায়। নীল একটা মেয়েকে পায়েল পরিয়ে দিচ্ছে। লুপার বুকটা ধুক করে উঠে। তাঁর হাতের চুড়িগুলা পড়ে যায়। একটা চুড়ি গড়িয়ে গিয়ে নীলের সামনে পড়ে। নীল আর ওই মেয়েটি চুড়ির দিকে তাকিয়ে লুপার দিকে তাকায়। লুপাকে দেখে নীল উঠে যেতে চায় কিন্তু পরক্ষণে কি মনে করে আর উঠেনা সে পায়েল লাগিয়ে দিতে লাগে। যদিও শামুর জোরাজোরিতে সে পায়েল লাগিয়ে দিচ্ছে তবুও এখন লুপাকে দেখানোর জন্য সে ইচ্ছে করে দিচ্ছে। লুপার চোখ ছলছল হয়ে যায়। চুড়িগুলা খুঁড়িয়ে নিতে লাগে৷ দিয়া এগিয়ে গিয়ে নীলকে বলে,”ভাইয়া কেমন আছো?” নীল বসা থেকে উঠে বলল”
_হ্যাঁ ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস?
_আমরা তো অনেক ভালো। উনি কে ভাইয়া?” নীল আঁড়চোখে একবার লুপার দিকে তাকালো। লুপা তাকিয়ে আছে। নীল বলল,”তোর ভাবি।” নীলের কথা শুনে লুপার চোখের পানি আর বাদ মানলো না। তাঁর কলিজায় অদৃশ্য ছুরি চালাচ্ছে কেউ। সেই ছুরির আঘাতে সে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। চোখেত পানি আড়াল করতে অন্যদিকে ঘুরে যায় লুপা। নয়তো নীলের চোখে তাঁর দূর্বলতা দেখে নিবে। লুপা চায়না তাঁর দূর্বলতা নীল দেখুক।

দিয়া শামুর সাথে কথা বলতে লাগলো। শামু দিয়ার সাথে কথা বলছে ঠিক কিন্তু তাঁর চোখ বার বার লুপার দিকে যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে কোথায় যেন দেখেছে সে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। দিয়া শামুকে বলল,”আসো সবার সাথে কথা বলে আসবে।
_সবাই বলতে?
_আরে আমরা কতোজন এসেছি জানো?” শামু নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,”যাবে?” নীল লুপার দিকে তাকিয়ে ছিলো। শামুর কথায় চোখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর বলে “চলো।” শামু আর নীলকে নিয়ে দিয়া দিশা ইশির দিকে যায়। দিশা ইশির কেনাকাটা মাত্র শেষ হলো। রুহান টিশার্ট দেখছিলো মিহান চুজ করে দিচ্ছে। তখনই দিয়া ভাইয়া বলে ডাক দেয়। মিহান নীলকে দেখে এগিয়ে আসলো। দিশা ইশিও আসে। সবার সাথে সৌজন্যমূলক আলাপ হয়। ইশি শামুকে দেখিয়ে বলে,”ওকে তো চিনলাম না।” দিয়া কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই নীল বলল,”আমার ফ্রেন্ড।” দিয়া অবাক হয়ে তাকালো। শামুর মুখটা বিষন্ন হয়ে গেলো। সে কিছু বলল না শুধু ভেতরেই চেপে রাখলো একটা দীর্ঘশ্বাস। নীল মিহানকে বলল,”তুই দেশে এসেছিস দশদিনেরও বেশি চলে। অথচ একদিনও আমাদের বাসায় গেলিনা?
_এইতো আজ থেকে শুরু করলাম। তোদের বাসার কাল যাবো। আর তমালপুরও অনেক বছর হলো যাইনা তাদের ওখানেও যাবো। আচ্ছা চল রেস্টুরেন্টে চল।
_না রে তোরা যা আমি যাবো না।
_যাবি না কেন চল তো।
_না শামু বাসায় যাবে ওর তাড়া আছে। জোর করিস না প্লিজ।” শামু বলল,”
_আচ্ছা ঠিক আছে।”

নীল সবার থেকে বিদায় নিয়ে শামুকে নিয়ে আবার থার্ড ফ্লোরে চলে আসলো। শামুর অনেক কেনাকাটা বাকি। নীলের পছন্দে কেনাকাটা করবে বলে নীলকে এনেছে।

লুপার প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা শেষ। সে চলে যেতে লাগলো। তখনই তাঁর খালাতো ভাই আহসানের সাথে দেখা হয়। আহসান তাঁর থেকে চার মাসের ছোট কিন্তু যে কেউ তাদের দেখলে বলবে আহসান তাঁর চার বছরের বড়। আহসান লুপাকে বলল,”লুপাপু তুই এখানে?
_এটা তো আমার প্রশ্ন তুই এখানে কি করছিস?
_আমি তো কেনাকাটা করতে এসেছি। এখানে মানুষ কেন আসে?
_আচ্ছা আয় ভাইয়ার সাথে কথা বলে যাবি। ভাইয়াও এসেছে।
_না আপু একদিন তোদের বাসায় যাবো আজ না। দেখছিস না গিফট কিনছি জিএফের সাথে দেখা করবো।
_অহ তুই তো আবার সপ্তাহে একবার দেখা করিস।” আহসান লজ্জার সাথে হাসলো। লুপা আহসান কিছুক্ষণ কথা বলার পরে আহসান বিদায় নিলো। যাওয়ার আগে লুপাকে জড়িয়ে ধরলো। নিজের কোনো বড় বোন না থাকায় লুপাকে সে বড়বোনের মতো দেখে।”

নীল শামুকে নিয়ে মাত্র থার্ড ফ্লোরে আসলো। লুপা একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। নীল তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা লুপাকে ছেড়ে লুপার দুহাতে চুমু খেয়ে কি যেন বলল। লুপা ছেলেটার নাক টেনে হেসে হেসে কি একটা বলল। তারপর ছেলেটা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। নীলের মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়ে আছে। রাগে ইচ্ছে করছে লুপাকে তীক্ষ্ণ কয়েকটা কথা শুনাতে। নীল একটা শাড়ী হাতে নিয়ে শামুকে দিয়ে বলল,”এটা পড়ে দেখো তো কেমন লাগে।” শামুরও শাড়িটি পছন্দ হয়েছিলো সে শাড়িটা নিয়ে ট্রায়ালরুমে চলে গেলো। নীল এক সেকেন্ডও দেরি না করে লুপার হাত ধরে হেঁচকা টানে তাকে একটু আড়ালে নিয়ে আসে। এভাবে আনায় লুপা কিঞ্চিৎ ভয় পায়। নীল অগ্নিচোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে হাত ধরে রেখেছে খুব শক্ত করে। লুপা হাত মুচড়াতে লাগলো। নীল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”তোর কয়টা লাগে রে? এখন আরেকটা জুটিয়ে নিলি? কিছুদিন আগে না আরেকটা ছিলো? ওটার কি হলো? ছেড়ে দিয়েছিস? তুই এক কাজ কর। এভাবে একটার পরে আরেকটা না ধরে তুই পস্টিটিউটের খাতায় নাম লিখিয়ে নে। তখন এভাবে একটার পর আরেকটা ধরতে হবেনা। তোকে খুঁজে এমনিতেই আসবে ছেলেরা।” বলতে বলতে নীলের চোখ চিকচিক হয়ে গেলো। তাঁর চোখের ভেতর স্পষ্ট জল দেখা যাচ্ছে। রাগে নীলের শরীর কাঁপছে। নাকের পাটা ফুলে উঠছে। তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে লুপার দিকে ঘৃণা ছুঁড়ে মারছে। লুপার কান্না চলে আসলো। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো সে। হাতে ব্যথা করছে। ছাড়াতে ছটফট করে সে। নীল ভেজা গলায় বলে,”আফসোস। যদি তোর প্রতি মায়া জন্মানোর আগেই তোর ছলনাময়ী রূপটা চিনতে পারতাম।” লুপা কাঁপা গলায় বলল, ”
_হা হা হাত ছাড়ো।
_কেন? আমার ছোঁয়া তোর আশিকদের মতো নয় বুঝি? ওদের ছোঁয়ায় কি পাস তুই, যে তোর যৌবন এতো উথলে উথলে পড়ে? ওরা তোকে অনেক মজা দেয় তাইনা?” লুপার এবার খুব রাগ হলো। ঝাড়া দিয়ে নীলের হাত ছাড়িয়ে বলল,”আমার পার্সনাল লাইফে নাক গলাতে না আসলে খুশি হবো। ” লুপা চলে গেলো। কান্নাটা আর আটকাতে পারলোনা সে। নীলের কী এতোই ঘৃণা তাঁর প্রতি? এতোই ঘৃণা? এভাবে তাকে কথা শুনাতে কি একবারও নীলের মুখে বাঁধেনা? চোখটা মুছে মুছে লুপা চলে গেলো। নীল তাঁর চোখটা মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। লুপাকে কথাগুলা বলতে পেরে শান্তি লাগছে তাঁর। তবুও কান্না পাচ্ছে খুব। শামু শাড়ী নিয়ে এসে বলল তাঁর পছন্দ হয়েছে শাড়ীটা। নীল শামুকে বলল,”তোমার আর কী কী কেনা বাকি?
_দুটো ড্রেস।” নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,”তুমি এগুলা নিজে পছন্দ করে কিনে নাও প্লিজ। আমাকে যেতে হবে। আমি শ্রাবণকে ফোন করে বলছি ও এসে তোমায় বাসায় পৌঁছে দিবে।” শামুর কষ্ট লাগলো। নিজেকে খুব অবহেলিত লাগছে। নীলকে বলতে ইচ্ছে করছে, তুমি থাকো তোমার পছন্দে কিনবো আমি। কিন্তু অভিমানী মস্তিষ্ক বলতে দিলো না। অভিমানী মনটা বার বার বাঁধা দিলো বলতে। মনের কষ্টটা প্রকাশ করলো না শামু। চাপা কষ্টটা বুকেই চেপে নিলো। জোরপূর্বক হেসে ধরা গলায় বলল, “তুই যাও। আমি একাই যেতে পারবো।
_রাগ করো না শামু প্লিজ। দেখো আমি,,,,মানে,,,আমি
_বুঝতে পারছি আমি। যাও আমি একা যেতে পারবো।” নীল লম্বা একটা দম ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। নিজেকে স্বার্থপর লাগছে তাঁর। শামুর মলিন মুখটা দেখে খুব খারাপ লাগছে। নীল বলল,”চলো ড্রেস দেখবে।
_আজ কিনবো না।” শামু শাড়ীটা প্যাক করিয়ে নিলো। নীল দাম দিতে চায় শামু দিতে দেয় না। শামুর মুখে স্পষ্ট কষ্টের চাপ। নীল শামুকে একটা ড্রেস দেখিয়ে বলল,”শামু দেখো ড্রেসটা কতো সুন্দর।” শামু কিঞ্চিৎ হেসে ছোট করে হুম বলল। তারপর সে বেরিয়ে আসলো শপিংমল থেকে। নীল অনেকবার বলেছে ড্রেস কিনে নিতে কিন্তু শামু শুনলো না। কেন জানি তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। নীল শামুকে বাসায় পৌঁছে দিলো। বাইক থেকে নেমে শামু বলল,”নীল।” নীল স্টার্ট দিচ্ছিলো। শামুর ডাকে থাকায়। শামুর চোখ দুটো ছলছল। নীলের খারাপ লাগলো।
_কিছু বলবে?” শামু মাথা নিচু করে নিলো। তাঁর শরীর কিঞ্চিৎ ঝাঁকি দিয়ে উঠে। ভেতরে ভেতরে কাঁদছে সে। নীল বলল,”সরি শামু। কেঁদো না প্লিজ।” শামু নিজেকে কিঞ্চিৎ সামলে বলল,”আমায় বিয়ে করবে নীল?” নীল শামুর দিকে তাকিয়ে কষ্টের একটা ঢোক গিললো। মুখে তাঁর কোনো রা নেই। যেন এ প্রশ্নের উত্তর জানেনা সে। শামু আবার বলল,”নীল করবে বিয়ে আমায়?” নীল একবার কিঞ্চিৎ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। তারপর বায় বলে চলে আসলো। এমন একটা দিন আসবে এটা আগে থেকেই জানতো নীল। আফসোস শামু তাকে ভালোবাসার আগেই সে শামুকে জানাতে পারেনি এই সম্পর্কের সূচনা ছিলো রাগ আর জেদ দিয়ে। নীলের বুকটা ভারি হয়ে এলো৷ তাঁর জীবনে এতো এতো আফসোসের ভিরে সে অসহায় এক প্রেমিক।

চলবে,,,,,।

গল্প প্রতিদিন চান। কিন্তু গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহ দিতে পারেন না??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here