ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু❤ পর্ব_৫

0
1409

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু❤
পর্ব_৫
#সুলতানা_সিমা

[কপি করা নিষেধ। শেয়ার করা যাবে]

কিছুক্ষণ বইয়ের সামনে শুধু শুধু বসে থাকলো অরিন। পড়ায় মনোযোগ দিতেই পারছে না সে। মনোযোগ দিবে কেমনে? একদিকে তাঁর ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। অন্যদিকে ওই চাদর পরা লোকটা কে ছিলো, কেন আসছিলো, এগুলা ভাবতে ভাবতে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। তাও আবার মনসুর সাহেব একটু আগে কী সব বলে গেলেন। অরিন বই বন্ধ করে এসে শুয়ে পড়লো৷ কাল দোকান থেকে আসার সময় মুন্নির সাথে দেখা হয়েছিলো। মুন্নি বলেছে কাল নাকি কলেজ যেতে হবে। অরিনের জুতা নাই। জহুরা বেগমের যেটা আছে এইটা ছেঁড়া। উনি সেলাই দিয়ে পরেন। এটা তো নিতে পারবে না। তাহলে কি অরিন কলেজও যেতে পারবে না? ভাবতেই চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো অরিনের। চোখ মুছে জহুরা বেগমের মুখের দিকে তাকালো। উনি যতটা কঠিন ঠিক ততটাই নরম। অরিন কখনো উনাকে সৎ মা বলে কারো কাছে পরিচয় দেয়নি। মাঝে মাঝে অরিন নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী ভাবে। এরকম সৎ মা কয়জনের থাকে? সেদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল পাড়ার সাহেদা বেগম উনার সৎ সন্তানকে মারছেন। পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা কথা শুনেনা বলে এতো মার। তখন অরিনের মনে হলো তার মতো সুখী হয়তো এই জগতে কেউ নেই। এই সুখ সে পেয়েছে যা অন্য কোনো এতিম পায়নি। হয়তো এই সুখটা সে পেতোনা যদি জহুরা বেগম এতিম হতেন না। উনার মা উনাকে সাত বছরের রেখে মারা গেছিলেন। উনার বাবা উনার মা জীবিত থাকতেই আরো দুইটা বিয়ে করেছিলেন। দুই সতিনের সাথে সংসার করেছিলেন জহুরার মা। যখন উনার মা মারা যান তখন উনি সৎমায়েদের কাছে অনেক অত্যাচারিত হন। নিজের জীবন এতো কষ্টের ছিলো বলেই হয়তো অরিনকে এতো ভালোবাসেন। তারপর আবার উনার নিজের কোনো সন্তান নেই। তাছাড়া উনি অরিনের বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। হয়তো অরিনের মাঝে উনার ভালোবাসার মানুষটির ছায়া দেখতে পান তাই এতো ভালোবাসেন। কিন্তু অরিন একটা কথা বুঝেনা, এতো ভালোবাসার পরেও কেন অরিন কারো সাথে একটু মিশলেই তিনি রেগে যান। ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে নিলো অরিন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে অরিনের মনের অস্থিরতা বেড়ে গেলো। কলেজ যাওয়ার জন্য তাঁর মনটা ছটফট করছে। জহুরা বেগম রান্না ঘরে গিয়ে দেখলেন চিনি নাই। তাহলে চা দিবেন কেমনে? অল্প ভাত আছে। একটা পেয়াজ কেটে অর্ধেক পেয়াজ ও তেল দিয়ে ভাত ভেজে নিলেন। ভাত ভাজা হলে অরিনকে এনে দেন। অরিনের সত্যিই খুব ক্ষিধে ছিলো। প্লেট এনে দিতেই কথা না বাড়িয়ে খেতে বসলো। খাওয়া শেষ হলে রান্না ঘরে আসে অরিন। অর্ধেক ভাত রেখেছে জহুরার জন্য। উনি অরিনকে বললেন পুরোটা খেতে, সে বলল খেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। এটা না বললে বাকিটা উনি খাবেন না অরিন জানে। অরিন চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,”মা আজ কলেজ যেতে চাইছিলাম।
_আইচ্ছা যা কহন যাইবি?
_একটুপরে।[একটু থেমে] মা আমার জুতা,,,।” জহুরা বেগমের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। ঠান্ডার মধ্যে জুতা ছাড়া অরিন হাঁটছে। আজ কলেজও যাবে। হাতে তো একটাও টাকা নাই। অরিনকে বললেন,”তুই বয়। ভাতে আগুন দিস। আমি করিম ভাইয়ের বউয়ের কাছে গিয়া দেহি টেহা দেয় কিনা।
_হুম।” জহুরা বেগম বেরিয়ে গেলেন করিম সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। একটা শাল আর কতটুকু শীত আটকাবে? করিম মিয়ার বাড়িতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরলেন তিনি। উনারা নাকি কাল সন্ধ্যায় কোথাও গেছেন,রাতে ফিরেন নি। কে নাকি মারা গেছে তাঁদের। করিম মিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের এক বাড়িতে গেলেন। দু একশো টাকা যদি ধার পান পরে শোধ করে দিবেন। দু’এক বাড়ি হেঁটে কারো কাছে টাকা পেলেন না। শেষমেষ চেয়ারম্যান বাড়ি গেলেন। চেয়ারম্যান সাহেবের বউয়ের থেকে দু’শো টাকা আনলেন। তারপর বাড়ি না গিয়ে সোজা বাজারে গেলেন। গ্রামের মাথায় পড়েছে বাজার। এই বাজারটা তত বড় নয় আবার ছোটও নয়। বাজারের ভিতর স্কুল কলেজ মাদরাসাও আছে। এখানের কলেজেই অরিন পড়ে। জহুরা বেগমের খুব ইচ্ছে অরিনকে শহরে দিয়ে পড়াবেন। এইচএসসি দেওয়ার পরে অরিনকে শহরে পাঠিয়ে দিবেন। একটা গাভী আছে উনাদের। এটা বিক্রি করে যত টাকা পান সে টাকা দিয়ে অরিনকে শহরে পাঠিয়ে দিবেন। পরে যা টাকা লাগে তিনি এখান থেকে কাজ করে করে পাঠিয়ে দিবেন। হাঁটতে হাঁটতে বাজারে চলে আসলেন জহুরা। একটা দোকান মাত্র খুলেছে। জহুরা বেগম মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলেন। একশো টাকার একটা জুতা হাতে নিয়ে উনার চোখ গেলো কালো রংয়ের একটা জুতার দিকে। অরিনের উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং হলুদ বর্ণ। অরিনের হলুদ মাখা পায়ে কালো রংটা অনেক সুন্দর মানাবে। জহুরা হাতের জুতাটা রেখে ওইটা হাতে নিলেন। দোকানদার দাম বলল দু’শ টাকা। জহুরা বেগম বলে কয়ে দেড়শো টাকায় আনলেন। মনে মনে উনার অনেক খুশি লাগছে। উনি ভাবছেন অরিন জুতার দাম শুনে প্রথমে বকবে। বকে বকে জুতা পড়বে। তারপর ঘরে গিয়ে জুতার দিকে তাকিয়ে খুশিতে হাসবে। ভাবতেই উনার মনে উত্তেজনা কাজ করছে। ইচ্ছে করছে মূহুর্তটা এখনই টেনে নিয়ে আসতে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছেন খালেদ মিয়া। জহুরা বেগমের হাসি মুখে আঁধার নেমে আসলো। খালেদ মিয়ার টাকাটা দেওয়ার কথা ছিলো এক সপ্তাহ আগে। এখনো দেওয়া হয়নি। খালেদ জহুরার সামনে এসেই বললেন,”

_কি খবর জহুরা ভাবি ভালা আছো?
_হ ভাইজান ভালাই।
_বাজারে গেছিলা নাকি?
_হ ভাইজান মাইয়া কলেজে যাইবো জুতা নাই জুতা কিনতে গেছিলাম।
_কেনাকাটা করতেছো হাতে মনে হয় টেহা আছে। আমার টেহাটা দিয়া দিলে ভাল অইতো। কিছু অভাবে আছিলাম ভাবি।” জহুরা বেগম ভেতরে ভেতরে হাসলেন। উনার দুই ছেলে বিদেশ। তবুও নাকি উনি অভাবে আছেন।”
_দিয়া দিমু ভাইজান আর কিছুদিন সময় দেন।
_সময় তো দিতাছি ভাবি। পাতশো টেহার লাগি তোমার পিছনে ঘুরতে অয়। আইচ্ছা যাও গা। এই সপ্তাহে দিয়া দিও। এর লাইগাই মানুষরে টেহা দেইনা। জবান ঠিক তাহেনা কারো।”
” খালেদ সাহেব চলে গেলেন৷ শেষের কথাটা বিরক্তিস্বরে বলেছেন খালেদ সাহেব। জহুরার বেগমের বুক ছিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। সময় মতো টাকা না দিলে তো মানুষ জবান তুলে কথা বলবেই। বাড়িতে এসে দেখলেন অরিন আলু ভর্তা বানাচ্ছে। অরিনকে জুতোটা দিয়ে বললেন,”এইটা পইড়া দেক লাগেনি।” অরিন জুতো হাতে নিয়ে বলল” ইশ কি সুন্দর। কত রাখছে?”
_দেড়শ নিছে।
_কিইইই দেড়শো? টাকা পেলা কই?
_একজন কাপড় সেলাই করছিল। আইজকা দু’শ দিল।” সত্যিটা চেপে গেলেন জহুরা। ধার আনছেন শুনলে অরিন জুতাই পড়বেনা। অরিন ঝাড়ি দিয়ে বলল,
_এতো টাকা দিয়ে জুতা আনার কি ছিলো? শুধু শুধু টাকা নষ্ট। একশো টাকার জুতো এনে, এই পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ডাল কিনলেও তো পারতা।” বকে বকে অরিন জুতা পড়লো। জহুরা বেগম যতটা সুন্দর লাগবে ভাবছিলেন তার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে অরিনকে। অরিনের পায়ে জুতাটা খাপে খাপ লেগেছে। অরিন অনেক খুশি। ঘরে গিয়ে হাত পা ধুয়ে কলেজের জন্য রেডি হতে লাগলো। কলেজ থেকে এসে গোসল করবে। মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো অরিন। জহুরা বেগম বাকি পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বললেন রিকশা দিয়ে যেন যায়। অরিন না বলল। সে নাকি হেঁটে যেতে পারবে। অরিন যাওয়ার পরে জহুরা বেগম ডাক্তার বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলেন। কাজ করে যদি কিছু টাকা পান তাহলে তো উনাদেরই ভালো।

ডাক্তার বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকে দেখলেন কেউ বাইরে নেই সবাই ভেতরে। এই বাড়িটা উনার কাছে রাজ প্রাসাদের মতো লাগে। অরিনের স্বামীর বাড়িটাও এমন ছিলো। শুধু ভাগ্য তাঁকে আবার ওই টিনের ঘরে নিয়ে আসলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে আসলেন তিনি। সদর দরজা খুলা আছে। শায়লা বেগম ও উনার মা ভাইঝি গুলা সবাই বসে বসে কথা বলছে। জহুরা বেগম জুতা খুলতে যেয়েও খুললেন না। শায়লা উনার মা ভাইঝি সবার পায়ে জুতা আছে। তাহলে এই ঠান্ডার মাঝে জুতা খুলে কী করবেন? জহুরা বেগম ঘরে ভেতরে ঢুকতেই শায়লা বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,”আরে আরে কী করছো? জুতা বাইরে রেখে আসো।” শায়লার কণ্ঠে রাগ ও বিরক্তি ফুটে উঠলো। জহুরা বেগম ঘুরে গিয়ে জুতা বাইরে রেখে আসলেন। শায়লা বেগমের মুখে বিরক্তি ফুটে আছে। জহুরা বেগম বললেন,”ভাবি ভাইজান কইলেন আইতে।
_আচ্ছা যাও কিচেনে গিয়ে থালাবাসন ধুয়ে আসো পরে বাকিটা করবা।” জহুরা বেগম কথা না বাড়িয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়ালেন। সম্পর্কে শায়লা উনার দেবরের বউ হন। তবুও জহুরা আপনি করে বললেন আর শায়লা উনাকে তুমি করে। হয়তো এতেই গরিব পরিচয়। শায়লা বেগমের ধমকে লজ্জা লেগেছে উনার। কিন্তু কি করার? গরিব মানুষ লজ্জা পেলে তো চলবে না। গরিবরা তো বড় লোকের ধমক শুনেই বড় হয়।

__________________________________

সকালের নাস্তা করে বাইরে বেরিয়েছিলো দিহান শাওন নীল। হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা বাজার পর্যন্ত চলে এসেছে। শামু বার বার ফোন দিচ্ছে। রাস্তাঘাটে ফোনালাপ করার অভ্যাস নেই নীলের। তাই নীলের তাড়ায় বাড়ির দিকে পা বাড়ালো তাঁরা। একটু পথ এসেই দিহানের হার্টবিট বেড়ে গেলো। অরিন হেঁটে আসছে। সূর্যের আলো গায়ে লাগছে। এতে অরিনের উন্মুক্ত হাত পা চিকচিক করছে রোদে। হাত কপালে দিয়ে সূর্যের থেকে নিজের চোখ মুখ আড়াল করতে চাইছে অরিন। শাওন অরিনকে দেখে এগিয়ে গেলো। অরিন তাদের দেখে থেমে যায়। দিহানকে দেখে তাঁর আচমকা লজ্জা চলে আসে। চোখ একবার দিহানের দিকে চলে যায়। এক সেকেন্ডের ভেতরেই চোখ নামিয়ে নেয়। শাওন অরিনকে বলে,”কলেজ যাচ্ছো নাকি অরিন?
_জ্বি ভাইয়া।
_অহ ভালো। তোমাদের বাড়ি যেতে চাইছিলাম এদিকে আসার আগে। পরে গেলাম না যদি তুমি কিছু মনে করো। এমনিই যেতে চাইছিলাম আরকি।” বলেই বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হাসলো শাওন। তারপর বলল”আচ্ছা দাদী এখন ভালো আছে?
_জ্বি ভাইয়া।
_ওদের সাথে পরিচিত হও। [নীলকে দেখিয়ে] ও নীল আমার খালাতো ভাই।[ দিহানকে দেখিয়ে] ও দিহান আমার মামাতো ভাই।” নীল অরিনকে বলল,” হাই অরিন। ভালো আছেন?
_জ্বি ভাইয়া।” দিহান অরিনকে কি বলবে ভেবে পেলোনা। সেও জিজ্ঞেস করলো,”হাই অরিন। ভালো আছেন?”
_জ্বি ভা,,,,। ” ভা বলেই থেমে গেলো অরিন। কাকতালিয় ভাবে হলেও এই মানুষটার সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছে। এখন এই মানুষকে ভাইয়া ডাকবে কেমনে? দিহানও বুঝতে পারলো অরিন থেমে গেলো কেন৷ হঠাৎ করেই কেমন জানি দম বন্ধ অনুভূতি হচ্ছে দিহানের। ঘাড় ম্যাসেজ করতে করতে এদিক ওদিক তাকালো৷ শাওন অরিনকে বলল,”কি হলো অরিন?”
_আব,, না,,,[দিহানের চোখে অরিনের চোখে পড়ে যায়। চট করে যে যার চোখ সরিয়ে নেয়],,,,,, ইয়ে মানে,,,,আমার দেরি হচ্ছে আমি যাচ্ছি।” কথাটা বলেই অরিন চলে গেলো। এক কথায় সে পালালো। শাওন অরিনের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকলো৷ দিহানের কেন জানি শাওনের এভাবে তাকিয়ে থাকাটা ভালো লাগছে না। শাওনকে তাড়া দিয়ে বলল,”শাওন চল। রোদে আমার সমস্যা হচ্ছে।” শাওন চমকে উঠে। যেন সে ঘোরের মধ্যে ছিলো। অরিনের দিকে তাকিয়ে অন্যকারো ঘোর লাগা দিহানের ভালো লাগলো না। মনের অজান্তেই এমন খারাপ লাগার কারণটাও বুঝলো না সে।

বাড়িতে এসেই নীল ছাদের দিকে পা বাড়ালো। শামু ফোন দিতে দিতে পাগল করে দিচ্ছে। ছাদের গিয়ে শামুকে ফোন দিলো। শামু ফোন ধরেই চেঁচিয়ে বলল, “ওই ফোন ধরো না কেন?
_ধরেছি তো জানু এতো রাগ ক,,,,,এইটুকু বলেই থেমে গেলো নীল৷ লুপা কোনো ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। ছেলের গায়ে শার্ট নেই গলায় একটা টাওয়াল জড়ানো। দেখে মনে হচ্ছে মাত্র শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এসেছে। নীলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। শামু ফোনের ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। নীল শামুকে বলল,” তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি।” নীলের কথা শুনে পিছন ঘুরে তাকাল লুপা। নীলকে দেখে তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিলো। নীলের কাছে মনে হলো লুপা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। নীল তাচ্ছিল্য হাসলো। তারপর বলল,”

_তুই একটা প্লে গার্ল সেটা জানতাম। কিন্তু তুই যে পস্টিটিউট এটা আমার জানা ছিলোনা। নতুন আরেকটা জুটিয়েছিস তাইনা? এটাকেও কিছুদিন পরে ছেড়ে দিয়ে আরেকটা ধরবি? তারপর ফের রুমডেট?” নীলের কথাগুলা গিয়ে লুপার কলিজায় বিধে। এই মানুষটা তাঁকে এতো অবহেলা কেন করে? কেন তাঁকে সয্য করতে পারেনা নীল? কেন বার বার তাঁকে নিয়ে এমন মন্তব্য করে? সে কি সত্যিই খুব খারাপ? কয়টা ছেলের সাথে তাঁকে রুমডেটে দেখেছে নীল? কেন এটা বলে বার বার? ছাদে রাখা একটা ফুলের টবে লাত্তি দেয় নীল। টব পড়ার শব্দে লুপা কেঁপে ওঠল। লুপার দিকে ঘৃণা চোখে তাকিয়ে নীল চলে গেলো। লুপার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা নোনা জল।

__________________________________

ঘড়ির কাঁটায় তিনটা বাজে। নীল নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। নিষেধ করে ঘুমিয়েছে কেউ যেন তাঁকে না জাগায়। শাওন দিহানকে বলল,”ওই ও ঘুমাক। আমার খিদা লাগছে চল খেয়ে নিই। বিকালে মাঠে খেলতে যাবো।
_হুম চল।” শাওন আর দিহান রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে দেখলো জহুরা বেগম ফ্লোর মুছতেছেন। দৃশ্যটা দেখে শাওনের ভ্রুযুগল কুঁচকে গেলো। কাল তাঁর বাবা বলেছেন কাজের জন্য কাকে নাকি চেয়ে এসেছেন। উনি তাহলে জহুরা বেগমকে কাজের জন্য এনেছেন? বড় বড় পায়ে নিচে আসলো শাওন। তাঁর মা সোফায় বসে তাঁর নানুমনির সাথে কথা বলছেন। ইশি দিশা লুপা উনাদের পাশে বসা। শাওন রাগে গিজগিজ করতে করতে তাঁর মাকে বলল,”

_আব্বু কি আর মানুষ পেলোনা আম্মু?
_কেন কী হইছে?
_চাচিকে কেন আনছে? উনি আমাদের নিজের মানুষ। এখন আমার একটা জিনিস লাগলে উনাকে কেমনে গিয়ে বলব, চাচি এটা করো ওটা করো?
_আহা। রেগে যাচ্ছিস কেন? মাত্র তো দুএক সপ্তাহের ব্যাপার। বাদ দে।” শাওন রাগ করে চলে গেলো উপরে। শায়লা বেগম ছেলের রাগে পাত্তা দিলেন না। দিহান শাওনের পিছু পিছু উপরে আসে। শাওন রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। দিহান বলল,”
_বাদ দে শাওন। নিজের মানুষরা তো আরো ভালো। নিজের ঘর ভেবে কাজ করবে।
_তুই বুঝবিনা দিহান। সবাইকে সবকিছুতে মানায় না। উনি অরিনের মা হন।” দিহানের বুকটা ধুক করে উঠল। অরিনের মা তাঁর ফুপির বাড়িতে কাজ করছেন? কেন জানি বুকটা ভারি হয়ে এলো তাঁর। কথাটা শুনে এতোই খারাপ লাগলো যে দিহান খেয়ালই করেনি শাওনের খারাপ লাগছে কারণ উনি অরিনের মা। যদি খেয়াল করতো তাহলে হয়তো কিছু একটা বুঝতো। শাওন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। দিহানকে বলল তাঁর ভালো লাগছে না সে খাবেনা দিহান যেন খেয়ে নেয়। দিহানও আর খেলো না। তাঁর মন ছটফট করছে অরিনকে দেখার জন্য। শাওনকে বলল,”শাওন চল ঘুরে আসি বাইরে থেকে। দেখবি ভালো লাগবে।” শাওন না জানালো। দিহান অনেকবার রিকুয়েষ্ট করলো কিন্তু শাওনের সিদ্ধান্তের নড়চড় হলোনা। তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। নীল ঘুমাচ্ছে এখন ভূমিকম্প হলেও সে উঠবেনা। অসয্য হয়ে দিহান একা বেরিয়ে গেলো।

বাইরে এসে দিহান সোজা রাস্তায় হাঁটতে লাগলো উদ্দেশ্য তাঁর অরিনের বাড়ি। অরিনের প্রতি তাঁর এতো টান হচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না সে। এটা কি বিবাহ নামের বন্ধনের সুতোর টান? অরিন তাঁর বিয়ে করা বউ বলেই কী অরিনকে দেখলে তাঁর হার্ট চলার গতি বেড়ে যায়? অরিন তাঁর বউ এটা ভাবতেই হেসে উঠল দিহান। মনের অজান্তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে। শাওনদের বাড়ির রাস্তার মাথায় তিনটা মোড়। দিহান সেখানে এসে থেমে গেলো৷ কোন মোড় দিয়ে কাল সকালে গেছিলো ভুলে গেছে। তাঁর মন একবার এইমোড়ে তো আরেকবার ওইমোড়ে যাই করছে। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে চলে যাওয়ার কথা ভাবলো দিহান। হঠাৎ মনে হলো অরিন তো কলেজে গেছিলো। বাজারের রাস্তায় গেলে অরিনকে পাবে। দিহান বাজারের রাস্তায় হাঁটা ধরলো। একটু এসেই দেখলো অরিন আসছে। দিহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু অরিন হেঁটে আসছে কেন? রাস্তায় তো সিএনজি বা রিকশা পাওয়া যায়। অরিন দিহানকে দেখে থেমে গেলো। দিহান অরিনকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কী বলবে কথা বের হচ্ছেনা তাঁর। অরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তুলে চাইতেই দেখলো দিহান তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন তাকাতেই চট করে দিহান চোখ সরিয়ে নেয়। অরিন দিহানের পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে দিহান পথ আটকে দাঁড়ায়। অরিনের হৃদপিন্ড যেন এবার বুকের পাজর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। লজ্জা অনুভূতি সবকিছু তাকে ঘিরে ধরেছে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে। মাথা তুলে চাইতে পারছে না। অরিন বুঝতে পারছে না যার উপর রেগে থাকার কথা তাঁর সামনে এতো পাওয়ার কি হলো। দিহান নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে গলা ঝেড়ে বলল,

“কেমন আছো?” অরিন কিছু বলল না। সে ওড়নাতে হাত পেচাচ্ছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না তাঁর গলায় সব আটকে যাচ্ছে। দিহান আবার বলল,”কি ব্যাপার কিছু বলছ না যে? তুমি করে বলছি। তুমি আমার অনেক ছোট। আপনি করে বলাটা কেমন যেন লাগে। এনিওয়ে, ভালো আছো?
_জ্বি।
_কলেজে গেছিলে?
_জ্বি।
_গ্রামের মাথার বাজারের ভিতর যে কলেজ পড়েছে ওই কলেজে পড়ো?
_জ্বি।
_সবকিছুতেই জ্বি?
_জ্বি।” অরিনের জবাব শুনে দিহান হেসে উঠে। অরিন চারিদিকে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কিনা। গ্রামের কেউ দেখে নিলে উল্টো পাল্টা কথা রটাবে। অরিন দিহানকে বলল”
_পথ ছাড়ুন আমি যাবো।
_আব,,,,মানে বলতে চাইছিলাম। মানে,,,,,,অরিন সরি।
_কেন?
_অরিন আমি একমাস আগের ঘটনাটা নিয়ে অনেক লজ্জিত ও দুঃখিত।” অরিন কিছু বলল না। দিহান বলল,”অরিন সেদিন যা হয়েছে তা নিয়তি ছিলো। এছাড়া আমাদের উপায় ছিলোনা ওখান থেকে আসার। আমি তোমাকে এমন কোনো designation [উপাধি] দিতে চায়নি। নিজে বাঁচতে তোমাকে বাঁচাতে এমনটা করতে হয়েছিলো। আমি যা করেছি তা আমার অন্যায় ছিলো। সেটার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি অরিন। এভাবে তোমাকে বিয়ে করা আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু বিশ্বাস করো অরিন তোমার আমার বিয়েটা নিয়তি ছিলো।

_ওই মাইয়া, তুমি কামরুলের মাইয়া না?” হঠাৎ কোনো পুরুষ কণ্ঠ শুনে অরিন কেঁপে ওঠল। পিছনে তাকিয়ে দেখলো তাদের গ্রামের চেয়ারম্যান আর শামসুল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। শামসুল সাহেবের চোখ লাল করে তাকিয়ে আছেন। ভয়ে অরিন শুকনো এক ঢোক গিলল। উনারা কী সব শুনেছেন?

চলবে,,,,,,,।

পর্ব বড় হওয়ায় কারো সমস্যা হলে বলবেন। পর্ব ছোট করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহ দিবেন।❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here