ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৯

0
2366

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৯
#সুলতানা_সিমা

দোকান থেকে বেরিয়ে দিহান হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তার মামাকে অরিন বলেছে সে মজা করছিল। ভাগ্যিস এটা তার ছোট মামা। যদি বড় টা হত তাহলে অক্ষরে অক্ষরে চালাকি বুঝাত। দোকান থেকে বেরিয়ে অরিন কই যেন গেছে। তাকে বলে গেছে এই ব্রিজের সামনে দাঁড়াতে তাই সে তীব্র রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পরে অরিন আসল। আজ টিউশনির টাকা দেওয়ার কথা। সেটাই নিয়ে আসল। অরিন একটা গাছের নিচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে দিহানকে ডাক দিল। দিহান ভিতুর মত হেটে অরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।

অরিন বলল “পাচঁ হাজার টাকার জন্য খারাপ লাগছে রাইট? এবার বুঝেছেন নিশ্চয়ই? কাউকে কিছু দিতে হলে নিজের সামর্থ অনুযায়ী দিতে হয়। আমার টাকা কম ছিল তাই কম দামের জিনিস গিফট করেছিলাম। আপনার তো অনেক টাকা। আপনি নিশ্চয়ই কম দামের জিনিস কাউকে গিফট করবেন না। তাই দামি টা করালাম। এটা আপনি প্রতিশোধও বলতে পারেন। আবার এটা আপনি দান হিসাবেও ধরে নিতে পারেন। কাউকে কিছু বলতে তো আপনার মুখে বাধেনা। আপনি নিশ্চয়ই এটাও বলে দিবেন এই মেয়েটা এই ড্রেস পরার যোগ্যতা রাখে না। তাহলে বলে দেই। সে গরিব হতে পারে তার ইচ্ছে ছোট নয়। এই ড্রেসটা পড়তে তার ইচ্ছে হয়েছে। এখন যদি এটার বদলে হাজার টা ড্রেসও পায় এটার জন্য তার একটা আক্ষেপ থেকে যাবে। হ্যা এই টাকা দিয়ে তাকে অনেক কিছু দেওয়া যেত। কিন্তু সেটা কতদিনের জন্য? বড় জোর পাচঁ ছয় মাস সে সেটা ইউজ করত। কিন্তু এই যে এই ড্রেস টা এটার কথা তার আজীবন মনে থাকবে। কারন এটা তার স্বপ্নের ড্রেস ছিল। শখের জিনিস যতটা আনন্দ দেয় ততটা কিন্তু অন্যটা দেয়না আমাদের। যদি কোনোদিন পারি তো আপনার টাকা টা দিয়ে দিব। আপাতত এটা রাখেন।

অরিন এক হাজার টাকার দুইটা নোট বারিয়ে দিল দিহানের সামনে। দিহান বলল ”
_এটা কি?
_আপনার থেকে দু’হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম সেটা।
_থাক লাগবে না। ওটা আপনি নিয়ে নিন।
_জি না আমি অন্যের টাকায় চলিনা। যদি চলতাম তাহলে মানুষের বাড়িতে ফকিন্নি বেশে যেতাম না।
কথাটা শুনে দিহানের খারাপ লাগল। মেয়েটাকে সেদিন এতোগুলা কথা বলা ঠিক হয়নি। মেয়েটার গলা অন্য রকম শুনাচ্ছে। মনে হচ্ছে কথাটা বলতে গিয়ে তার কান্না পাচ্ছে। দিহান বলল ”
_আসলে হঠাৎ করে আপনি আমার সাথে যা করলেন সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তাই মনে জমা রাগ আপনার উপর ঝাড়তে গিয়ে আপনাকে এত গুলা কথা বলে দিছি। আমি এগুলা আপনাকে মন থেকে বলিনি। কষ্ট দিতে বলছি।
_জি জানি। এবার টাকা টা নিন।
_থাক ওটা লাগবে না।
_আপনি কি আমার সাথে বেয়াদবি করছেন?

দিহান তৎক্ষনাৎ টাকা টা হাতে নিয়ে বলল ”
_না না না নিচ্ছি তো। আমি কেন আমার দাদাও আপনার সাথে বেয়াদবি করবে না।
_গুড বয়। আমি যদি আপনার উপর অধিকার কাটাতাম। বউয়ের দাবি করতাম। তাহলে আপনি যা করতেন সয্য করে নিতাম। এভাবে কিছু করলে তো আমি সয্য করব না। অবশ্যই তার শাস্তি দিব। কখনো বেয়াদবি করার চেষ্টা করবেন না। বেয়াদবি করবেন তো আজ যা হল তার থেকে দ্বীগুন কিছু হবে।আমি এখন যাচ্ছি। গুড বাই।
অরিন যাওয়া ধরল। দু’কদম এগুতেই কানে এল”
_অসভ্য মেয়ে একটা যা না। তরে ধরে রাখছে কিডা?

অরিন রক্তিম চোখে পিছন ফিরে তাকাল। দিহান কথাটা বিরবির করে বলেছে। অরিন শুনে ফেলবে বুঝেনি। শুকনো একটা ঢোক গিলে দিল এক দৌড়। দৌড়ে পালিয়ে গেল। আর জীবনে এই মেয়ের সামনে আসবে না সে। নয়ত তার অবস্থা শেষ করে দিবে।

অনেক জায়গা দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে হাটুতে ভড় দিয়ে হাপাতে লাগল। তার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা মেয়ে তাকে বিয়ে করল। অথচ কখনো বউয়ের অধিকার চাইল না? কি চায় এই মেয়েটা? নিশ্চয়ই এই বিয়ের পেছনে কোনো বড়সড় কারণ আছে। সেদিনের কথা গুলার প্রতিশোধ আজ কিভাবে নিল। কি স্বাংঘাতিক মেয়ে বাবা প্রতিশোধ নেওয়ার কি স্টাইল। তন্দ্রার জন্য একটা শাড়ি কিনতে আসছিল আর পারল না কিনতে। তার মামার দোকান হলেও সে ফ্রিতে কিছু নেয়না নয়ত নিতে পারত। হাতেও আর টাকা নাই। তন্দ্রা বলেছে শাড়ি না দিলে সে রাগ করবে। আজ নিশ্চয়ই তন্দ্রার সাথে ঝগড়া হবে। কিন্তু তার খারাপ লাগছে না তার শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে সে অনেক ভাল একটা কাজ করেছে। সত্যিই তো মানুষ গরিব হলে তো আর ইচ্ছে ছোট হয় না। তারও ইচ্ছে থাকে তারও স্বপ্ন থাকে। মেয়েটা কত ভাল। হ্যা একটু ডেঞ্জারাস টাইপ তবে খুব বুঝদার। অনেক বুঝে। তন্দ্রা হলে হয়ত বলত এই পথের মেয়েটাকে এত দামে ড্রেস দিয়ে শুধু শুধু কেন টাকা টা নষ্ট করবে? অথচ এই মেয়েটা? তন্দ্রার আর এই মেয়েটার মাঝে কত পার্থক্য। ভাবতেই বুক ছিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল দিহানের।

__________________________________

পরের দিন দিহান নীল আর শাওন মিলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকা মাত্রই দিহানের চোখে পরল অরিন আর লুপা বসে আছে। অরিনকে দেখে দিহান উল্টা দিকে দৌড় দিল। আকস্মিক ঘটনায় নীল আর শাওন হতভম্ব হয়ে গেল। শাওন আর নীল দিহানের পিছনে দৌড় দিল। দু’জন গিয়ে দিহানের দু’হাত ধরে দিহানকে আটকাল। দিহান নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করতে করতে বলল। “ভাই দোহাই লাগে প্লিজ আমাকে ছাড়।” নীল বলল ”
_আরে তুই এভাবে হঠাৎ দৌড় মারলি কেন? কই যাচ্ছিস?
_ছাড় ভাই তোদের আল্লাহর দোহাই লাগে।
_দিহান পাবলিক প্লেস এটা। পাগলামি করছিস কেন?[শাওন]
_আমায় ছেড়ে দে ভাই। আমি টয়লেটে যাব।[কাঁদো কাঁদো হয়ে]
_টয়লেটে যাবি তো ওইদিকে কই যাচ্ছিস রেস্টুরেন্টের ভিতরেই তো ওয়াসরুম আছে।[নীল]
_দেখ দিহান সবাই তাকিয়ে আছে চুপচাপ ভিতরে চল।[শাওন]

বাধ্য হয়ে দিহান ভিতরে গেল। ভিতরে গিয়ে লুপা আর অরিনকে বসা দেখে নীলের মনটা খুশিতে নেচে উঠল।দিহান কে বলল “ওই দেখ লুপা এখানে। চল ওদের পাশে বসি।” নীলের কথা লুপার কান পর্যন্ত পৌছাল। পাশ ফিরে তাকাতেই শাওনকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নীল শাওন দিহান এসে তাদের টেবিলে বসল। দিহান কাচুমাচু হয়ে বসল। তার হাত পা কাঁপছে।ভিতু চোখে বার বার অরিনের দিকে তাকাচ্ছে। অরিন এটা খুব ইঞ্জয় করছে। দিহানের দৌড়ে যাওয়াটা তার চোখ এড়ায়নি। অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রেখেছে সে। লুপা শাওন কে উদ্দেশ্য করে বলল”

_ভালো আছেন শাওন ভাইয়া?
_হ্যা খুব ভাল তুমি? দিশা ইশি সবাই ভাল আছে তো।
_জি সবাই ভাল।
_আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি কেমন আছি। [নীল]
_কেমন আছেন। [দাঁতে দাঁত চেপে]
_হেএএএএএ খুউউউউউব ভাল। একদম ফাটাফাটি। তুমি ভাল তো?
_জি। [দাঁতে দাঁত চেপে ]
_হাই তুমি অরিন রাইট। [শাওন]
_জি ভাইয়া কেমন আছেন?
_অনেক ভালো। তুমি?
_জি আমিও ভাল।
_হ্যা হ্যা আমিও ভাল। [নীল]
_আপনাকে কি ও জিজ্ঞেস করছে আপনি কেমন আছেন। [দাঁতে দাঁত চেপে লুপা]
_এমনিতেই তো জিগাইত তাই আগে বলে দিলাম।

লুপা নীলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে অনেক গুলা গালি দিল। দিহান সামনে না হলে তাকে আচ্ছা করে কথা শুনাতো। দিহান বার বার আড়চোখে অরিনের দিকে তাকাচ্ছে। একবার অরিনের চোখে চোখ পরল। চোখ পড়তেই সোজা হয়ে বলে উঠল ”
_আসসালামু আলাইকুম।” হঠাৎ দিহানের এভাবে সালাম দেওয়া দেখে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। দিহান ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সত্যি সে কোনো বাঘের সামনে বসে আছে।

_এই দিহান বসে আছিস কেন যা [নীল]
_কই যাবে? [লুপা]
_টয়লেটে যাবে ওর হাগু পাইছে। [নীল]
দিহান বড় বড় চোখ করে নীলের দিকে তাকাল। নীল তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। নীলের কথায় সবাই কিঞ্চিৎ আওয়াজে হেসে উঠল। লুপা বলল”
_ছিঃ আপনি দেখি কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানেন না। এটা রেস্টুরেন্ট এখানে এসব বলছেন? ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
_আমার কি দুষ বল? শাওনকে জিজ্ঞেস কর। তোমার ভাইয়ের এতো বেশি চাপ দিছিল যে ও রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ির দিকে দৌড় দিছিল টয়লেট যাবে বলে।
দিহান নীলের দিকে রক্তিম চোখে তাকাল। চোখ দিয়ে নীলকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। অরিন অনেক কষ্ট করে নিজের হাসিটা চেপে রেখে বলল”
_আমার মনে হয় উনার তারাতাড়ি যাওয়া উচিত। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব কষ্টে আছেন।

শাওন আর নীল আর হাসি আটকাতে পারল না। দিহান যেন এবার ওদের খুন করেই ফেলবে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে ভয়ে তার অবস্থা শেষ। সেদিন অরিন তাকে হাতে পায়নি আজ যদি ওয়াসরুমে যায় অরিন যে গিয়ে খপ করে তার কলার চেপে ধরবে না এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

চলবে….।

বিঃদ্রঃ যারা বলেন অরিন খুব বারাবাড়ি করছে। অরিনের আত্মসম্মান নেই। অরিন গায়ে পড়া স্বভাবের। তারা প্লিজ একটু ধর্য্য ধরুন। গল্পটায় কিন্তু রহস্য আছে সেটা খুলাসা হলে আপনাদের ভুল ধারনা ভেঙে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here