ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৮

0
2457

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৮
#সুলতানা_সিমা

তন্দ্রার সাথে ফোনে কথা বলছিল দিহান তখনই রুমে শাওন আর নীলের আগমন ঘটে। ওদের দেখে দিহান তন্দ্রাকে বিদায় জানিয়ে ফোন কেটে দেয়। নীল খাটের এক পাশে শাওন অন্য পাশে এসে বসল। নীল মুখটা গোমড়া করে বসে আছে দেখে দিহান তার পিঠে চাপড় দিয়ে বলল “কি ব্যাপার আমাদের নীল দরিয়ার কি হল?” নীল রাগি লুকে তাকাল। দিহান নীলের পিঠ থেকে হাত সরিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তালা দিল। শাওনকে ইশারায় বলল কি হইছে। শাওন কিছু বলল না। দিহান এবার নীলের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলল” দোস্ত কি হইছে? কেউ কিছু বলছে?” নীল এখনও চুপ। দিহান আরও দু’একবার জিজ্ঞেস করল। নীল দিহানকে বলল”

_আচ্ছা দিহান তুই একটা কথা বল তো তোর বোন এত অহংকারী হল কি করে? তুই আন্টি বা আংকেল তো এমন না। তাহলে ও এমন হলো কেন?
_কেন কি করছে কিছু বলছে তোকে?
_আমাকে বলেনি অন্য কাউকে বলছে। আচ্ছা দিহান তুই বল তো একটা মানুষের যদি সমর্থ থাকেনা ভাল কিছু গিফট করার বা ভাল কিছু পরার তাহলে কি সেটা তার দুষ? উপরওয়ালা তাকে গরিব দিছে সে কি করবে?
_আমি ত তোর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতেছি না বুঝিয়ে বল।
_আচ্ছা বলতো লুপার ফ্রেন্ড যে এসেছিল ও দেখতে কেমন?
_অরিনের কথা বলছিস?
_নাম জানিনা। আজ যেটা মেরুন ড্রেস পরেছিল ওইটা। বল ও দেখতে কেমন?
_ভালই তবে চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর।
_ও কি দেখতে ক্ষেত?” দিহান এবার নীলের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল”
_তু তুই হঠাৎ এসব কে কেন জিজ্ঞেস করছিস?
_আগে বল মেয়েটা কি দেখতে ক্ষেত?
_আমি কি জানি। আমি ওসব খেয়াল করিনা।
_আচ্ছা এটা বল ও তর বউ হলে তুই কি ওকে নিয়ে সমাজে চলতে পারবি না? মানলাম মেয়েটা দেখতে তন্দ্রার মতো সুন্দরী না। তাই বলে সে খারাপ? সে তর বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা?” নীলের কথা শুনে দিহানের গলা শুকিয়ে গেছে। তাহলে কি অরিন সবাইকে বলে দিছে তাদের বিয়ের কথা? দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল ”
_বিশ্বাস কর নীল আমার কোনো দুষ নাই। সব দুষ ওর।
_দুষ যারই হোক কাউকে নিয়ে এভাবে কথা বলা ঠিক না। মানুষ যেমনই হয় সে মানুষ। তাই তাকে ছোট করে দেখার কিছুই নেই।
_ছোট করার জন্য এসব বলা হয়নি নীল এগুলা কষ্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
_তাই বলে এসব কথা বলবে?
_যদি তোর সাথে কেউ এমন করত তুই কি তার উপর ক্ষেপে থাকতি না।
_কেমন যদি করত?
_ও যা করছে?
_হ্যা সেটাই ত আমি বলছি ও কেন এটা করল। ও কি ছোট ওর মাথায় কি বুদ্ধি নাই?
_জানিস দুইবার বলেছে আমার পেন্টের চেইন খোলা। এবার বুঝ মেয়েটা কেমন নোংরা কথা বলে।
_দিশা তর সাথে এমন ফাজলামো করে?
_দিশা কি ওর মত ফাজিল?
_ওর মত মানে? কার মত?
_অ…এক মিনিট তুই কার কথা বলছিস?
_এটা তো আমার প্রশ্ন। তুই কার কথা বলছিস?

নীল দিহান দু’জন দুজনার দিকে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে। শাওন এসবের আগামাথা কিছুই বুঝতেছে না। সে দিহানকে বলল “দিহান কে তোকে দুইবার পেন্টের চেইন খোলা বলছে?” দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো ”
_ক ক কই কে কে কে কেউ বলেনি।” শাওন নীল এবার দিহানের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাল। শাওন এসে দিহানের পাশে বসল। এক পাশে নীল এক পাশে শাওন। দিহান লাফ দিয়ে উঠে বলল “দি দি দিশাকে নিয়ে আসছি আ আজ না আমাদের ট্রুথ এ এ এ এন্ড ডেয়ার খেলার কথা।” বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল দিহান। এক কথায় পালালো।

__________________

লুপাদের বাসা থেকে এসেছে দু’দিন হলো। এখন অরিনের মন থেকে মুছতে পারছে না দিহানের বলা কথা গুলা। কিভাবে লোকটা চোখে চোখ রেখে কথাগুলা বলে দিল। মনে দয়া মায়া নাই? আচ্ছা উনার জিএফ দেখতে কেমন? নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী। উনি মানুষটাই তো এত সুন্দর যে উনার সামনে সুন্দরী কারই প্রয়োজন। করুক উনি যে কাউকে বিয়ে। তাতে কি সে কি উনাকে ভালোবাসে? যে কাজটার জন্য বিয়ে করছে সেটা শেষ হয়ে গেলে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। এসব ভেবে ভেবে আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছিল অরিন। হটাৎ একটা মেয়েকে দেখে থেমে যায় সে। বয়স ৮-৯ হবে। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। পরনে হলুদ একটা ফ্রক। ফ্রকটা ময়লা হয়ে আছে। এক ধ্যানে মেয়েটা শপের দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন একটু এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার সামনে দাঁড়াল। লাল একটা ফ্রক টাঙানো শপের ভিতর। ওই ফ্রকটার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। অরিন মেয়েটাকে বলল “এই পিচ্চি কি দেখিস এখানে?” অরিনের কথায় চমকে ওঠে মেয়েটা। তারপর হাসি মুখে বলে “আমাগো তো দেইকাই মন ভরতে অয়। আমাগো ত আপনাগো মত টাকা নাই যে কিন্না পইড়া মন ভরমু।” মেয়েটার কথা শুনে অরিনের বুকটা ছেৎ করে উঠল। অরিনের ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে কিনে দিতে কিন্তু তার হাতে মাত্র ২৮০ টাকা আছে। আর এই ড্রেসটা কম হলেও চার হাজার হবে। মেয়েটা চলে যেতে লাগল। এরই মাঝে ওই দোকানে দিহান ঢুকল। অরিন সেটা দেখে পিছন থেকে মেয়েটাকে ডাক দিল। “ওই ফুল কলি পিচ্চি।” মেয়েটা পিছন ঘুরে তাকাল। অরিন বলল “আমার সাথে আয় আমি তোকে ড্রেস কিনে দিব।” মেয়েটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো “সত্যিইইইইই।” অরিন হাতে ধরে তাকে নিয়ে শপে ঢুকল। দিহান শাড়ি দেখছে মনে হয় উনার জিএফকে গিফট দিবেন। অরিন যে দিহানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তা দিহান খেয়াল করেনি। অরিন লাল ড্রেসটা প্যাক করাল। দামও জিজ্ঞেস করল না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল”
_কত হইছে?
_পাচঁ হাজার টাকা।
_পা পাচঁ হাজার(চোখ বড় বড় করে)। ওকে ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমার স্বামীর অনেক টাকা আছে সে দিয়ে দিবে।
_উনাকে ডাক দিন। “” অরিন দিহানের হাত জড়িয়ে বলল “ডাক দিব কেন এইত আমার স্বামী”। হঠাৎ কেউ দিহানের হাত জড়িয়ে এমন কথা বলায় তাকিয়ে অরিনকে দেখে টাশকি খেল। শুকনো একটা ঢোক গিলে দোকানদারের দিকে তাকাল দোকানদার ইয়া মোটা হা করে তাকিয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে ৪৪০ এর উপরে শকড খেয়েছে দোকানদার। অরিন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল ” আমার স্বামী এক্ষনি আপনার সব টাকা পরিশোধ করে দিবে। এই উনাকে পাচঁ হাজার টাকা দাওতো।” দোকানদার দিহানকে বলল” দিহান তুই বিয়ে করে ফেলছিস?” দিহান রাগি লুকে তাকিয়ে অরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে ওখান থেকে সরে একটু আড়ালে আসল। তারপর টাস করে অরিনের গালে একটা থাপ্পড় দিল, দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”

_ওই মেয়ে পেয়েছিস কি তুই? যখন যা খুশি তাই করবি? আমি আজই তর নামে মামলা করব। এবং আজও তোকে আমি পুলিশে ধরিয়ে,,,,,বাকিটা বলতে পারেনি দিহান তার আগেই অরিন সেদিনের তুলা পিক টা দিহানের সামনে তুলে ধরল। দিহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সত্যি সত্যি তার চেইন খোলা ছিল। দিহান ফোন ধরতে যাবে তার আগেই অরিন ফোনটা সরিয়ে নিল। তারপর হাতে একটু থু থু নিয়ে দিহানের থেকে তিন গুন জোরে সে একটা চর মারল। মেরে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল ” উফফফ জ্বলে কেন? আপনার গাল জ্বলতেছে তো? এবার আসেন সুন্দর করে টাকা টা দিয়ে যান। নয়তো ছবিটা নেটে ছেড়ে দিতে এক মিনিটও লেট হবেনা।” বলে অরিন হাটা ধরল। দিহান তৎক্ষনাৎ অরিনের এক পা জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল “আপা। আপা গো আপনে আমার আপা লাগেন। পিকটা ডিলিট করে দেন প্লিজ। মামলা করা তো দূরের কথা আর জিবনে আপনারে মারব না আপা। আর জীবনে আপনারে তুই বলব না। পিকচার টা ডিলিট করে দেন প্লিজ।” অরিন দিহানের মাথায় হাত দিয়ে বলল। “বেঁচে থাকেন স্বোয়ামি আমার বেঁচে থাকেন। আমার সাথে উল্টা পাল্টা না করলে আমি নেটে ছাড়ব না। এবার উঠেন কেউ দেখে ফেলবে।” দিহান উঠল। অরিন আবার হাটা ধরল। দিহান খপ করে অরিনের হাত ধরে মিনতির স্বরে বলল”

_আপা দোকানদার আমার আপন মামা লাগে। উনার সামনে এমন কিছু কইরেন না প্লিজ। আমি আপনার সব কথা শুনব। যা বলবেন তাই করব।
_আপা ডাকেন কেন? আমি আপনার বইন লাগি?”” দিহান দ্রুত কয়েকবার না সূচক মাথা নাড়াল। অরিন বলল
_আমি আপনার কি লাগি?
_যম।
_কিইইইই?
_না না না আমার বোনের বান্ধবী।
_আমি জিজ্ঞেস করছি আপনার কি লাগি?
দিহান মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো হয়ে কিঞ্চিৎ স্বরে বলল “বউ”।
_হুমমমমম। এইতো বুদ্ধিমান ছেলে(দিহানের বাহুতে চাপড় দিয়ে)। মনে থাকবে তো আমি আপনার কি লাগি?
_জি।
_আজ থেকে আমি যা বলব তাই শুনবেন। আমার সাথে কোনো ধরনের বেয়াদবি চলবে না। আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলা যাবেনা। নয়তো ছবিটা এমন ভাইরাল হবে। আর হ্যা আমাকে দেখেই সালাম দিতে হবে।
_জি আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।

চলবে…..।

নেক্সট না বললেও আমি নেক্সট দিব। তাই গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহ দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here