ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৭

0
2463

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৭
#সুলতানা_সিমা

মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে পেট পুড়ে খেয়েও গেলা আবার ফ্রিতে একটা জামাও পেলা।” এমন তীক্ষ্ণ কথা কানে আসতেই পা থেমে গেল অরিনের। পিছনে থাকিয়ে দেখল দিহান পকেটে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটায় অরিন শুধু অপমানবোধ করল না কষ্টও পেল অনেক। ভিতর ফেটে কান্না আসছে তার। সত্যিই তো মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে দাওয়াত খেল আবার সাথে জামাও একটা নিল। কতবার করে লুপাকে বলছিল আমি নিবনা ড্রেস টা। লুপা রাগ কান্না করে দেয় তাই বাধ্য হয়ে সে ড্রেসটা নেয়। দিহান এগিয়ে এসে অরিনের সামনে দাঁড়াল। তারপর অরিনকে বলল”
_তোমাকে কেন জানি আমার কাছে এরকম ড্রেসেও ক্ষেত ক্ষেত লাগছে। আচ্ছা তুমি কি বস্তিতে থাক?
_,,,,,,,(নিশ্চুপ)
_যাক ভাল হয়েছে দিপা তোমাকে একটা ভাল ড্রেস পড়তে দিয়েছে। নয়তো অনুষ্ঠানের সুন্দর্যই নষ্ট হয়ে যেত। যা পড়ে আসছিলা।”
দিহানের সব কথা গিয়ে অরিনের কলিজায় বিষাক্ত তীরের মতো লাগছে। অরিন ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চেষ্টা করছে। দিহানের খুব মজা লাগছে অরিনের এমন বিষাদময় চেহারা দেখতে। তার প্রতিশোধ নিতে পারছে ভেবে আরও শান্তি লাগছে। অরিন নিজেকে অনেক কষ্ট করে সামলিয়ে বলল”

_কে বলেছে আমি ফ্রিতে ড্রেস পেয়েছি? এটা আমার শশুড় বাড়ি না? এই বাড়ির সব কিছুর উপর আমার হক আছে। এই ড্রেসটার উপরও আমার হক ছিল।
_হা হা হা তোমার মত একটা বস্তির মেয়েকে এই বাড়ির বউ বানাব আমরা?
_অলরেডি তো বানিয়েই দিছেন। এখন যদি আমি আপনার বাড়ির মানুষদের বলি, আপনি আমায় বিয়ে করে বউ বলে অশিকার করছেন, তাহলে কিন্তু,,,

_ওয়েট ওয়েট তুমি কি এখন আমাকে এই ভয় দেখাচ্ছ যে আমার বাড়ির সবাইকে এবিষয়ে বলে দিয়ে আমার ঘরে উঠবে? হা হা হা তাহলে শুনে নাও। তোমাকে আমার পরিবারের কেউই মানবে না। কজ তুমি কোনো দিকেই আমার যোগ্য নও। না তোমার ফ্যামিলি স্টাটাস না তোমার সুন্দর্য না তোমার চলাফেরা। কোনো কিছুই আমার ধারে কাছেও আসে না। তুমি জান আমি যাকে ভালবাসি তার ফ্যামিলি স্টাটাস কেমন? অনেক ভালো পরিবারের মেয়ে সে। তোমার মতো মিডেল ক্লাস না। আর সে দেখতেও অনেক সুন্দর সমাজে কিভাবে চলতে হয় সেটাও তার জানা আছে। তোমার মতো ফকিন্নি বেশে কোথাও যায়না।”

অরিনের চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলো না। গাল বেয়ে দু’ফুটা জল গড়িয়ে পরলো। মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। অরিনের কান্না দেখে দিহানের বুকের ভেতর মুচড় দিয়ে উঠে। অরিনের কান্না দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন? সে তো এটাই চেয়েছিল। অরিনকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো এতটা কথা বলল। অরিন কষ্ট পেয়েছে তাহলে সে কেন খুশি নয়? অরিন চোখের পানিটা মুছে চলে যেতে লাগে। দু এক কদম গিয়ে থেমে যায়। পিছন ঘুরে দিহানকে বলে ”

_তিনটা জিনিস কখনো ধরে রাখা যায়না। টাকা,সুন্দর্য,সম্মান। এই তিনটা জিনিস তুচ্ছ কারনেও হারিয়ে যায়। আজ আছে তো কাল নেই। তাই অহংকার করবেন না। অহংকার সৃষ্টিকর্তার চাদর। উনার চাদর নিয়ে টানাটানি করলে উনি বরদাশ করেননা সব পতন করে দেন।”

কথাগুলা বলেই অরিন চলে যেতে গিয়ে আবারও থেমে যায়। তবে এবার চোখগুলা মারবেলের মতো করে বড় বড় করে থামছে। তৎক্ষনাৎ পিছন ঘুরে তাকাল দিহান এখনো দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। অরিন বলল
_আপনি দেখছি সত্যি সত্যি বোকা। পেন্টের চেইন খোলা কেন?” দিহান রেগে গেল। এই মেয়েটা পেয়েছে কি সব সময় শুধু এই কথা বলে তাকে বোকা বানাতে চায়। রাগে নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো ”
_হ্যা খুলে রাখছি তুমি দেখবা বলে।
_ছিঃ কি জঘন্য কথাবার্তা বলেন আপনি। চেইন লাগান। না জানি কার কার সামনে এভাবে ঘুরে বেড়াইছেন।
_তুমি একটা সেই লেবেলের স্বাংগাতিক মেয়ে তোমাকে আমি হারে হারে চিনি। তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে কর তাইনা? তাহলে তোমার থেকে দ্বীগুন চালাক আমি। এসব বলে বোকা বানাতে পারবা না আর।
_আপনি চালাক। আপনার দাদা চালাক। দাদার দাদাও চালাক। এবার প্লিজ চেইন টা লাগান।
_বললাম না খুলে রাখছি। আমি ইচ্ছে করে এভাবে রাখছি। আমার শখ লাগে খুলে রাখতে তাই রাখছি। তাতে তোমার কিছু আসে যায়?

অরিন ফোনটা বের করে বলল ” আমি কিন্তু আপনার ছবি তুলে নেটে ছেড়ে দিব” দিহান দু পা ফাক করে,দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল তুল না তুল আমি ভয় পাই নাকি?” অরিন একটা ছবি তুলল। তারপর চলে গেল। দিহান পিছন থেকে চেচিয়ে বলল “আরে যাও যাও তোমার মত মেয়েকে আমার চিনা আছে। একবার ধোকা দিছ এটাই অনেক। দিহান চৌধুরীকে বার বার ধোকা দেওয়া সহজ কথা নয়।”

দিহান রুমে চলে আসল। রুমে আসতেই তন্দ্রার কল এল। তন্দ্রার সাথে কথা বলে বলে জামা চেঞ্জ করে খাটে শুয়ে পরল। সে খেয়ালই করেনি যে সত্যি সত্যি তার চেইন খুলা ছিল।

দিশা, ইশি, শাওন,নীল,লুপা ছাদে বসে গল্প করছে। রুহান আর দিয়াও ছিল ওরা চলে গেছে একটু আগে। এখানে এই পাচঁটা মানুষের মধ্যে কেউই ভেতর থেকে সুখি নয়। সবারই ভেতরে ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণা। নীল লুপাকে,লুপা শাওনকে,শাওন দিশাকে,দিশা নীলকে ভালোবাসে।

এরা কেউ জানেনা তারা যাকে ভালোবাসে সে মানুষটা কাকে ভালোবাসে। শুধু ইশি জানে সে যে মানুষটাকে ভালোবাসে সেই মানুষটা কাকে ভালোবাসে। কারণ ইশি যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ নয়। তারই আপন চাচাতো ভাই দিহান। সেই ছোট্ট থেকে ভালোবাসে দিহানকে শুধু মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি কারন দিহান তাকে সবসময় বোনের চোখে দেখেছে। দিহান আর তন্দ্রার সম্পর্ক যখন সবাই মেনে নেয়নি তখন দিহান এসে দিশা আর ইশির হেল্প চেয়েছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ের ঘটকালি নিজে করা কতটা বেদনাদায়ক সেটা সে তখন বুঝেছিল।

সবাই চুপচাপ বসে ছিল। সবার নিরবতা ভেঙে লুপা বলল “শাওন ভাইয়া আমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা গান গেয়ে শুনান না প্লিজ।” শাওন কিছু বলার আগেই নীল বলল “আমি শুনাচ্ছি”।
লুপা বলল “আমার না হার্টঅ্যাটাক করার কোনো শখ নেই। আপনি চুপচাপ বসে থাকুন। শাওন ভাইয়া প্লিজ একটা গান গান্না প্লিজ।
_ওকে গাইব তবে আমার সাথে যে কাউকে গাইতে হবে।
_আমি আছি আমি আছি চিন্তা করিস না। [নীল]
_আপনাকে না আমি নিষেধ করছি তারপরও আপনি বেহায়ার মত গাইতে চান কেন?
_তুমিই বা বেহায়ার মতো বারবার নিষেধ করেছো কেন?
_কারণ আপনার কাউকা গান শুনে আমি অজ্ঞান হতে চাইনা।
_লুপা চুপ কর তুই। নীল ভাইয়া তুমিও গাও ওর কথা কানে নিওনা।[দিশা]
_ওরে দিশা উম্মম্মমা।(নীল ফ্লাইং কিস দিল। দিশা লজ্জায় লাল হয়ে গেল)

_ওকে ওকে স্টার্ট কর। [দিশা]
_ওয়েট আগে দিহান আসুক। আমি দিহানকে কল দিচ্ছি।”ইশি ফোন হাতে নিয়ে দিহানের নাম্বারে ডায়েল করল। দিহানের নাম্বার ওয়েটিং দেখাচ্ছে। ইশি রাগে নাক ফুলিয়ে বলল ” ফালতু একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে আমাদের দিহানও ফালতু হয়ে যাচ্ছে। এখানে আমরা সবাই এখানে আছি আর ও ওর ন্যাকা জিএফয়ের জন্য এসবের ধারে কাছেও আসছেনা।
_একটা ভালো মেয়ে পেতাম তাহলে ভাইয়াকে জোর করে ধরিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম। এই ন্যাকা তন্দ্রাকে আমার মোটেও ভালো লাগেনা। [দিশা]
_আপু ওই যে আমার ফ্রেন্ড অরিন আছে না? ও কিন্তু খুব ভালো মেয়ে। ওকে নিয়ে আসি।
_দূর! পাগল নাকি? একদম ক্ষেত একটা মেয়ে। তারপর অতটা সুন্দরও না।ভাইয়ার সাথে একদম মানাবে না। আমাদের বাড়িতে এই প্রথম আসল। কিভাবে এসেছে দেখছিস? আমাদের পরিবারে এমন মেয়েকে বউ করে আনলে লোকে কি বলবে? এই মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়া সমাজে চলবে কি করে?[দিশা]”

“দিশার কথা শুনে লুপার মুখ কালো হয়ে যায়। অরিনকে নিয়ে এরকম কথা শুনতে তার খারাপ লাগছে। লুপার গোমড়া মুখ দেখে নীলের খারাপ লাগলো তাই সে দিশাকে বলল”

_দিশা কাউকে নিয়ে এভাবে কিছু বলা ঠিক না। হ্যা বাড়ির বউ দেখতে অসুন্দর হলে লোকে নানান কথা বলে। কিন্তু বাড়িতে যখন একটা খারাপ বউয়ের কারণে অশান্তি নেমে আসে তখন কিন্তু সমাজ সেই অশান্তির ভাগ নিতে এগিয়ে আসবে না। আর রইল ক্ষেত কথাটা। আমি দেখেছি মেয়েটাকে। মেয়েটা মোটেও ক্ষেত নয় শুধু গায়ের রংটা একটু চাপা। আর টাকা না হলে কিন্তু তোমাকে আমাকে সবাইকেই ক্ষেত লাগবে। কারন মানুষের সুন্দর্য আর স্মার্টতা ফুটিয়ে তুলে একমাত্র জামা কাপড় আর কিছুই না। আরেকটা জিনিস আছে সেটা হল মানুষের সুন্দর ব্যবহার। তুমি যতই সুন্দর হও তোমার ব্যবহার ভাল না থাকলে তুমি কারও কাছে মনের মত সুন্দর নও।

নীলের কথা শুনে দিশা মাথা নিচু করে বসে থাকে। নীল আর বসে থাকেনা উঠে চলে যায় সাথে শাওন ও উঠে যায়। নীল ও শাওনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে দিশা।

চলবে….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here