ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_২০

0
1745

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_২০
#সুলতানা_সিমা

ফোন হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে দিহান। তার মাথা কাজ করছে না মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে। এসব কী হচ্ছে তার সাথে? পাগলের মতো নিজের ফোন খুঁজতে লাগে। এই সময়ে তার শাওন ও নীলকে খুব প্রয়োজন। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে আগে নীলের নাম্বারে ডায়েল করল। না যায়নি কল। এখনো সেই বিরক্তিকর মহিলা বলছে নীলের ফোন বন্ধ। শাওনকে কল দিল শাওনের ফোন ও বন্ধ। রাগে ফোন ছুঁড়ে মারল দেয়ালে ফোনটা ছিটকে পড়ল গিয়ে দূরে। ফোনটা ভেঙে গেছে। সেদিকে দিহানের খেয়াল নেই। আপাতত তার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কে এই অরিন? তন্দ্রার সাথে তার কি এমন সম্পর্ক? এই মূহুর্তে নীল থাকলে তাকে যেকোনো একটা বুদ্ধি দিতে পারত কিন্তু হারামীটা যে কই উধাও হয়েছে? নীলের কথা মনে আসতেই দিহানের মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। নীলের অভাবটা সে বুঝতে পারছে। জিহানেরও আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন আল্লাহ জানে।

তন্দ্রা আর তার মা মাত্র আসল তারা শান্তি নীড়ে। তন্দ্রাকে কেউ নিতে আসল না। শেষে লুপার মা এগিয়ে এসে তন্দ্রাকে নিয়ে রুমে ঢুকালেন। তন্দ্রার মা সবাইকে সালাম দিলেন। দিহানের মা চাচিকে জড়িয়ে ধরলেন। তন্দ্রাকে দিশা বলল”
_তোমার বোন তানভী আসেনি?
_না।
_অহ।” দিশা চলে গেল অন্যদিকে পুরো বাসা ভর্তি মেহমান। চারিদিকে হৈচৈ এত মানুষজন একদিনে কিভাবে ইনভাইট করল তারা? তন্দ্রার মা সবার সাথে আলাপ করছেন কত সুন্দর হাসি মুখে কথা বলছেন দিহানের মা একদম গলে গেলেন।

সেই কখন থেকে রুমে বসে আছে দিহান। তন্দ্রারা এসে গেছে সব মেহমান এসে গেছে জেনেও সে এভাবে বসে আছে। কি করবে সে রাগের মাথায় এমন কিছু করা ঠিক নয় যেটা পরে আমাদের সামনে এসে কাল হয়ে দাঁড়ায়। সে যে এখন তন্দ্রাকে বিয়ে করবে বলছে তার কী জেদের মাথায় এমনটা করা ঠিক হবে? অরিন আর তন্দ্রার পিকচার একসাথে মানে ওদের মাঝে গভীর কোনো সম্পর্ক আছে নয়তো এভাবে ওয়ালপেপারে তাদের পিক থাকত না। আচ্ছা ওরা দুজন এক হয়ে এই খেলায় নামেনি তো? সে দুজকেই বিয়ে করে ঘরে তুলল তখন কি হবে?

_বাবু কি করছ?” তন্দ্রার গলা কানে আসতেই দরজার দিকে তাকাল দিহান। লাল রংয়ের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে মুখে সেই এক কেজি ময়দা লাগানো। ৩২পাটি দাঁত বের করে হাসছে। দিহান কপাল কুঁচকে ফেলল। তন্দ্রা হেলেদুলে হেঁটে রুমে ঢুকে দিহানের সামনে আসল দিহান আরও বেশি বিরক্ত হল। এমনিতেই অরিনের সাথে তার ছবিটি নিয়ে তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে। তন্দ্রার এসব তার মেজাজ আরও বিগড়ে দিচ্ছে।

_বাইরে সব মেহমান এসে গেছে আর তুমি এখনো এখানে বসে আছো? রেডি হবা কবে।” দিহান অগ্নি দৃষ্টিতে তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে আছে। তন্দ্রা বলল”

_এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কী কিছু করছি?
দিহান আগের মতোই তাকিয়ে আছে তন্দ্রা বলল”
_মানুষ তার জিএফকে প্রতি ঘন্টায় ফোন দেয় আর তুমি কাল থেকে না আমার ফোন তুলছ না নিজে একটা কল দিচ্ছ। নিরামিষ একটা।” দিহান এবার রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না তন্দ্রার হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”

_কি চাও তোমরা? কেন লেগেছ আমার পরিবারের পিছু? তোমরা দুজন এক হয়ে খেলছো তাইনা? ভেবেছিলে ধরা খাবেনা? ইচ্ছেমতো নাচাবে দুজন?
_আহহহহ,,,কি বলছ তুমি এসব দিহান? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কার সাথে খেলছি আমি?
_নাটক করবা না আমার সামনে। তোমাদের দুজনকে আমি ভালো করে ছিনি। তোমরা বাইরে থেকে দেখতে একরকম ভিতর থেকে অন্যরকম যে তোমাদের ভালো ভাব্বে তার মতো বোকা এই জগতে একটাও নেই।
_দিহান ছাড় প্লিজ কি বলছ তুমি এসব আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।” দিহান কিছু বলতে যাবে তখনই বাইরে থেকে চিল্লাচিল্লি শুনা যায়। দিহান তন্দ্রার হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে যায় নিচে। তন্দ্রাও লেহেঙ্গা ধরে দিহানের পিছু পিছু দৌড়ে আসে। তন্দ্রার মা কি নিয়ে যেন চিল্লাচিল্লি করছেন। দিহানের মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। মাঝখান থেকে কথা শুনলে অবশ্য কিছু বুঝার কথাও না। দিহান লুপাকে জিজ্ঞেস করল ”

_কিরে কী হইছে?
_কে জানি তোমার বিয়ের কথাটা উনাকে বলে দিছেন।
_কিইইইইইইইইই?
_হুম।
_কিন্তু এটা তো আমাদের ঘরের মানুষ ছাড়া বাইরের কেউ জানেনা তাহলে উনি জানলেন কেমনে?
_সেটাই তো ভাবছি।” তন্দ্রার মা চিল্লাচিল্লি করেই যাচ্ছেন। ছোটলোক,বেইমান,মুখোশধারী যা মুখ দিয়ে আসছে তাই বলে যাচ্ছেন দিহানের বাবা চাচারা সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। সব মেহমানরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা দেখছে। দিহানের বাবার একজন বন্ধু এসে তন্দ্রার মাকে বললেন”

_আচ্ছা আপনি যে বলছেন ওরা আপনাদের সাথে খেলা করছে দিহান আগে থেকেই বিবাহিত তার বউ আছে এসব কে বলছে আপনায়?” তন্দ্রার মা গলা উঁচিয়ে বললেন”
_যেই বলুক আমি মিথ্যে বলছিনা তার প্রমাণ আমি দিতে পারব।
_কি প্রমাণ দেখান দেখি?
_আম্মু চুপ করো। কিসব বলছো তুমি?” তন্দ্রার মা দুজন সার্ভেন্ট কে ডেকে বললেন”

_যাও যেকোনো গেস্ট রুমে একটা মেয়ে আছে তাকে নিয়ে আসো।” তন্দ্রার মায়ের হুকুমে তারা সব গেস্ট রুম খুঁজতে লাগে। কিছুক্ষণ পরে তারা অরিনকে ধরে নিয়ে আসে। দুগালের দুপাশে চুল ছড়িয়ে আছে। নাক আর ঠোঁট ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। পুরো মুখ চুলে ঢেকে আছে অরিনকে ছিনা যাচ্ছেনা। তন্দ্রার মা একটা মেয়েকে ধরে আনছে দেখে দিহানের বাবার বন্ধুকে বললেন”
_লুক প্রমাণ আসছে।” উপস্থিত সবাই আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে। তন্দ্রা দিহানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার উপরে তাকাল। তন্দ্রার মা বাঁকা ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি হাসছেন। অরিনকে এনে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে সার্ভেন্টরা চলে গেল। অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ডান গালের চুলগুলা কানে গুঁজে নিল। অরিন চুল কানে গুঁজতেই তন্দ্রার মায়ের ঠোঁটের হাসি উধাও হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকালেন। তন্দ্রা চেঁচিয়ে বলল”

_অরিন তুই?” তন্দ্রার চিৎকারে অরিন চোখ তুলে তাকিয়ে সেও শকড হয়। অবাকের চোখে তাকিয়ে থেকে শুকনো ঠোঁট নাড়িয়ে কিঞ্চিৎ স্বরে বলে”

_তন্দ্রা আপু?” অরিনের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ভেতর ফেটে কান্না আসছে এ কাকে দেখছে সে? তাহলে এটাই দিহানের তন্দ্রা? সে তাহলে তার বোনের ক্ষতি করল? তন্দ্রা তার সৎ বোন সৎ বলতে পুরোপুরি সৎ। অরিনের মা মারা যাওয়ার পরে যখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন তন্দ্রার বয়স তিন তন্দ্রা জহুরার আগের স্বামীর মেয়ে। কিন্তু অরিন কখনো তন্দ্রাকে সৎ বোন ভাবেনি সব সময় নিজের বোন ভাবত একদম তার মহীনি [যার সাথে ফোনে কথা বলছিল] আপুর মত ভাবত। অরিন জানত তন্দ্রার বিয়ে ঠিক কার সাথে ঠিক কোথায় ঠিক সেটা সে জানতো না। তাকে কিছু জানানো হয়নি। এমন কি তারা যে বাসায় থাকে সে বাসায়ও তন্দ্রার বরপক্ষ আসেনি এসেছিল তন্দ্রার মামাদের বাসায় তন্দ্রারা ওদের বলেছিল ওটাই তাদের বাসা।

অরিন অবাক হয়ে তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে ছিল তখনই তাকে টাস করে চড় মারেন জহুরা। ককর্শ গলায় বলেন”
_কাল নাগীন তুই তাহলে দিহানের বউ?
তন্দ্রা কাঁদতে কাঁদতে বলে”
_দুধ কলা দিয়ে তুমি সাপ পুষেছ আম্মু। বলেছিলাম না তোমায় ও ওর কোনো বন্ধুর বাসায় যায়নি ও মিথ্যে বলেছে খুঁজ নাও। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করনি” ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে তন্দ্রা। উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। দিহান তন্দ্রাকে বলল”

_ত ত তন্দ্রা তুমি ওকে ছিনো?” তন্দ্রা চেঁচিয়ে বলে ওঠল”
_হ্যাঁ বোন হয় ও আমার।” তন্দ্রার কথাটা যেন বিকট শব্দে দেয়ালে বারি খেল আবার সেই কথাটা দেয়াল বলে ওঠল। দিহানের পরিবারের সবাই শকড হল। এ যেন শকড খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। তন্দ্রার একটা কথায় সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। দিহান কাঁটা গলায় তন্দ্রাকে বলল”

_তো তো তোমরা দুজন বো বোন?
_হ্যাঁ আমরা দুই বোন। আর আমাদের দুইবোনকে নিয়ে তুমি খেলছ। প্রথমে একটাকে বিয়ে করেছ আজ আমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছ।” অরিন মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছিল। দিহানকে তন্দ্রা এমন কথা বলতেই অরিন মুখ তুলে বলল”
_আপু উনার কোনো দুষ নে,,,,
_চুপ! তুই একটা কথা ও বলবিনা। আম্মু ঠিকই বলে তুই একটা অভিশাপ। প্রথমে তো ছোটবেলায় নিজের মাকে খেয়েছিস। তারপর আমার বাবাকে খেয়েছিস। তারপর আমার ভাইকে খেলি। এখন আমার ভালোবাসার দিকেও হাত বাড়ালি? বারবাতারি আম্মু তোকে এমনি এমনি বলেনি তুই আসলেই একটা বারবাতারি। লোকে ঠিকই বলে তুই একটা বেশ্যা।” তন্দ্রা একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে আর অরিন মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে কান্না করছে। যখন অরিন বেশ্যা কথাটা বলল তখন টাস করে একটা শব্দ হল। অরিন চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল তন্দ্রা গালে হাত দিয়ে আছে আর দিহান রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে তন্দ্রার দিকে। তন্দ্রা চোখ রাঙিয়ে বলল”

_তুমি আমাকে মারলে?
_হ্যাঁ মেরেছি। মুখ সামলে কথা বল নয়তো মার কাকে বলে সেটা বুঝিয়ে দেব।” তন্দ্রার মা দিহানের দিকে তেড়ে এসে বললেন”
_এই ছেলে কি করবে তুমি হ্যাঁ? মারামারি শিখাও?
_না সেটা আপনাদের শিখাতে হবে কেন? আপনার স্বামী তো একজন খুনি ছিলেন কিভাবে মানুষকে মারতে হয় সেটা আপনাদের এমনিতেই জানা আছে।
_মুখ সামলে কথা বল দিহান।[তন্দ্রা]
_বলব না মুখ সামলে কথা কি করবে তুমি?” দিহান আর তন্দ্রার মাঝে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। এদিকে অরিনের ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে তার জন্য আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হল। নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে অরিন তার জীবনটাই এখন এমন হয়ে গেছে যে কান্না ছাড়া তার কোনো উপায় নেই।

মেহমানরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। কয়েকজন তো দিহানের বড় চাচ্চুকে বলে দিছেন। আমরা কি এবার আসতে পারি? একজন বলছেন” এসব তামশা দেখাতে কি আমাদের ডেকেছেন আপনারা?” আজ শান্তি নীড় যতটা অপমানিত হচ্ছে ততটা হয়তো তাদের পূর্ব পুরুষরাও হয়নি। সব কিছু হচ্ছে অরিনের জন্য। সবার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে অরিনের ইচ্ছে করছে একটা মানুষের দিকে আঙুল তুলে বলতে এই সেই মুখোশধারী শয়তান যে চায় এই পরিবারটা ধংস হয়ে যাক। কিন্তু পারছে না অরিন বলতে কারণ এক অদৃশ্য শিকলে তার হাত পা জবান সবকিছু বাধাঁ। দিহানের মা বাদে তার পরিবারের সবাই উপরে চলে গেল। তন্দ্রার মা অরিনকে বললেন”
_কী ভেবেছিস তোর মতো কালিকে এই ঘরে রাখবে? যখন ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে তখন তো আমার দুয়ারে যাবি তখন এর হিসাব বুঝে নিব মাগি।” বলে তন্দ্রাকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যান তিনি। একে একে সব মেহমান চলে যায়। যাওয়ার আগে যা নয় তা বলে যায়। দিহানের মা এসে বলেন”

_বেরিয়ে যাও এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এই বাসা থেকে।” অরিন অসহায় চোখে একবার দিহানের দিকে তাকায়। দিহানের মা আবার বলে উঠেন।” কি হলো বের হতে বলছি না?” অরিন কাঁদতে কাঁদতে বের হতে লাগল তখনই দিহান বলে উঠল “দাঁড়াও আজ থেকে তুমি এই বাড়িতে থাকবে। তবে শুধু মাত্র একজন কাজের লোক হিসাবে। আমার পরিবারকে ছোট করার অপরাধে সারাজীবন এই বাড়ির দাসি হয়ে থাকবে তুমি।

চলবে…..।

আবারও ডিলিট হয়ে গেছিল তাই লেট হইছে সরি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here