ভালোবাসি_প্রিয় এক্সট্রা_পার্ট

0
2016

ভালোবাসি_প্রিয়
এক্সট্রা_পার্ট
#সুলতানা_সিমা

শেয়ালের হাঁক শুনে ঘুম ভাঙে অরিনের। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার কমর জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে দিহান। দিহানের গরম নিশ্বাস তার পেটে গিয়ে লাগছে। দিহানের নাক মুখ সব তার পেটে চেপে আছে। দিহান ঘুমের ঘোরে এভাবে তাকে ধরেছে। অরিন এতক্ষণ এভাবে ঘুমিয়ে ছিল? ভাবতেই লজ্জা পেল অরিন। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা দিহানকেও না। শুধু অনুভব করা যাচ্ছে দিহানকে। অরিনের ইচ্ছে করছে দিহানের মাথা চেপে ধরতে এতো জোরে চেপে ধরতে যে দিহানকে একদম তার কলিজায় ঢুকিয়ে দিতে। দিহানের গরম নিশ্বাস তার ইচ্ছেকে আরও তীব্র করে দিচ্ছে। অরিন দিহানের চুলে হাত বুলাতে লাগল। ঘুমান্ত দিহানকে অন্ধকারেই আদর করে দিতে ইচ্ছে করছে। একদল শিয়ালের হাঁক শুনে অরিনের সব ফিলিংস উদাও হয়ে গেল। ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে গেল। অরিন দিহানকে ডাক দিল দিহান শুনল না। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে। অরিন দিহানকে কিঞ্চিত ধাক্কা দিয়ে ডাক দিল”
_এই শুনছেন? উঠেন প্লিজ।” দিহান একটু নড়ে অরিনকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অরিন আবার ধাক্কা দিল।
_এই উঠেন প্লিজ।” দিহান অরিনের হাতটা সরিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেল। শেয়ালের হাঁক আরও কাছে মনে হচ্ছে। অরিন এবার জোরে জোরে ডাকতে লাগল
_এইইইই উঠেন প্লিজ।” দিহান লাফ দিয়ে উঠল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হাতড়ে অরিনকে খুঁজল অরিন তার সামনেই আছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্লাশ অন করল। অরিনের মুখে ভয়ের চাপ। শিয়াল গুলা মনে হচ্ছে গলা ছিড়ার প্রতিযোগিতা করছে। এতো জোরে ডাকছে মেয়েটা তো ভয় পাবেই। দিহান অরিনের কাঁধে হাত রেখে বলল”
_ভয় পেয়ো না আমি আছি।” দিহান ফোনে টাইম দেখে বলল”
_রাত আটটা বাজে। এতক্ষণ ধরে আমরা এখানে?
_হুম আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন আমিও ঘুমিয়ে গেছিলাম।
_এখন কি হবে?
_আমি কি জানি আমার খুব ভয় করছে।” অরিনের কথা শেষ হতেই একটা কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠল। অরিন দিহানকে ঝাপটে ধরলো। শেয়াল কুকুর যত ডাক দিচ্ছে অরিন ততই বেশি শক্ত করে ধরছে দিহানকে। যেন সে দিহানের ভিতর ঢুকে যাবে। দিহানের কেন জানি অসম্ভব ভালা লাগা কাজ করছে। দিহান অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল”

_ভয় পাচ্ছ কেন? বললাম তো আমি আছি।
_আমি বাসায় যাবো প্লিজ চলেন এখান থেকে।
_হা হা হা তুমি তো দেখছি একটা ভিতুর ডিম এসবে এতো ভয় পাও?
_দেখুন একদম মজা করবেন না প্লিজ চলেন এখান থেকে প্লিজ।
_তার আগে তো আমায় ছাড়ো। তারপর না হয় যাব।” অরিন লজ্জা পেল সাথে সাথে দিহানকে ছেড়ে দিল। দিহান দাঁড়িয়ে অরিনের দিকে হাত বারিয়ে দিল। অরিন দিহানের হাত ধরে দাঁড়ায় অরিন দাঁড়াতেই দিহান অরিনকে কোলে তুলে নিল।

_আরে আরে কি করছেন নামান প্লিজ পড়ে যাবো তো।
_তোমার সমান আরোও দুটোকে নিলেও পরবেনা বুঝলে। আমার বডি দেখছো? প্রতিদিন জিম করি কি এমনি এমনি?
_আচ্ছা থাক এতো তারিফ করতে হবেনা নিজের। আমায় নামান।
_কোলে কি তোমার অনুমতি নিয়ে তুলছি যে তোমার বলাতেই নামিয়ে দিব?
_জিএফ কে কোলে নিয়ে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে।
_আমি কোনো মেয়ে মানুষকে কখনো কোলে নেইনি এটাই প্রথম।
_তাহলে আমায় নিলেন যে?
_কারণ তুমি আমার ব….এইটুকু বলে থেমে গেল দিহান। অরিন বুঝতে পারছে দিহান বউ বলতে চাইছিল। তার মানে দিহানও তাকে বউ মানে? অরিনের লজ্জা লাগছে মনের মধ্যে সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। দিহানের গায়ের সাথে তাঁর গা লেগে আছে। যেই হোক মানুষটা তাঁর স্বামী তাঁর ভালো লাগার মানুষ। তাও এমন একটা পরিবেশে তাঁর সাথে গায়ে গা লেপ্টানো। মনের মধ্যে তো অনেক কিছু জাগবেই। অরিনের ইচ্ছে করছে নিজেকে দিহানের কাছে সঁপে দিতে। কিন্তু ক্ষনিকের সময়ের সম্পর্কে এমন কিছু ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছেনা অরিনের কাছে।

অরি?” হঠাৎ দিহানের মুখে অরি ডাক শুনে অরিন একটু অবাক হয়। অরি নামে তাকে শুধু তার বোন ডাকে আর কেউ না। দিহান অরিনকে বলল”
_তোমাকে অরি বলে ডাকলে রাগ করবে না তো?” অরিন একটু চুপ থেকে তারপর বলল”
_অরি আমার আপুর দেওয়া নাম। আপনিও ডাকতে পারেন সমস্যা নাই।
_তোমার নিজের আপু?”” অরিন কোনো জবাব দিলনা। কিছুক্ষণ পরে দিহান বলল”
_তোমার বিএফ কি করে?
_আমার বিএফ নাই।
_এটাও বিশ্বাস করতে হবে?
_আপনার ইচ্ছে হলে করেন নয়তো না। তবে এটাই সত্যি আমার কোনো বিএফ নাই।”””

দিহান অরিন কথা বলতে বলতে রাস্তায় চলে আসল। রাস্তায় এসে দিহান অরিনকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। গাছের নিচে যেভাবে বাইক রেখে গেছিল সেভাবেই আছে। রাত নয়টা হয়ে গেছে। আজ অরিন বাসায় গেলে তাকে অনেক নোংরা নোংরা কথা শুনতে হবে এটা সে জানে। দিহান বাইকে উঠে অরিনকে বলল”
_উঠেন ম্যাডাম।” অরিন উঠল কিন্তু দিহানকে ধরল না। দিহান বলল”
_বন্ধু ভেবে ধরে নাও। নয়তো পড়ে গেলে হাত পা ভেঙে ল্যাংরা হয়ে যাবা।
_হলে হবো তাতে আপনার কি?
_ওকে ধইরনা।” বলেই দিহান বাইকে চালিয়ে টান দিল। সাথে সাথে অরিন পুরোটা গিয়ে দিহানের পিঠে পড়ল। দিহান হেসে বলল”
_আরও দেখাও মহিমা।” অরিন আর বাড়াবাড়ি করল না। হাত দিয়ে দিহানের পেট জড়িয়ে বসে থাকল। প্রতিবারের মতোই অরিনের শরীরের ছোঁয়া দিহানের মনের ইচ্ছেগুলো কে জাগিয়ে দিল। ইচ্ছে করছে অরিনকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে রাখতে। অরিনকে নিজের সাথে মিশিয়ে দিতে। আপাতত এসব মাথা থেকে ঝেড়ে বাইক চালাতে মন দিল দিহান।

দিহান অরিনের বাসার সামনে এসে বাইক থামাল। দিহানের ভেতর কাঁদছে। অরিনকে এখানে রেখে যেতে ইচ্ছে করছেনা। সে তো ভালোবাসেনা তাকে তাহলে এতো টান কেন অরিনের প্রতি। কেন অরিনের মাঝে এতো সুখ সে পায়? যে মেয়েটাকে একদিন ক্ষেত বলে গালি দিত আজ সে মেয়ে কিনা তার সব থেকে ভালো লাগার মানুষ? কিন্তু কেন? এমন ওতো হতে পারে অরিন খারাপ মেয়ে। অরিন তাঁর পরিবারকে বরবাদ করতে এসেছে। দিহানের মাথা ভনভন করতে লাগল। অরিনকে খারাপ ভাবতেই তাঁর খারাপ লাগছে। দিহানকে অন্যমনস্ক দেখে অরিন দিহানের গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাক দিল। দিহানের হুস এলো। শুকনো একটা ঢোক গিলে অরিনকে বলল”

_তা তা তাহলে বা বাই।” কথাটা দিহানের গলা দিয়ে বেরুতে চাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে অরিনের বলতে প্লিজ চলে আস আমার সাথে। অরিনেরও দিহানকে বাই বলতে কষ্ট হচ্ছে। যেন দিহান তার সত্যিকারের স্বামী দিহান দূর কোনো দেশে চলে যাবে তাই বিদায় দিতে বুক ফেটে কান্না আসছে। অরিন জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল”

_তাহলে আজ বিদায়। বাসায় গিয়ে গোসল কইরেন নয়তো শরীর চুলকাবে ঘুমাতে পারবেন না। আর জামাগুলা ভালো করে ধুয়ে দিবেন যেখানে শুইছিলেন যায়গাটা কেমন যেন ছিল।” অরিনের কথায় দিহানের কষ্টটা আরও বেড়ে গেল। এখন তার কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে। অরিনকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে তাঁর মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। দিহান বাই বলে চলে আসে ওখানে থাকলে তার খুব কষ্ট হবে। বুক ফেটে যাচ্ছে তাঁর এভাবে অরিনকে ছেড়ে যেতে। কই তন্দ্রার জন্য তো কখনো এমন হয়নি? তাহলে কি নীল সত্যিই বলছে যে সে অরিনের প্রেমে পড়ে গেছে? যদি তাই হয় তাহলে তন্দ্রা?

চলবে….।

প্রতিটা পাঠক আমার কাছে ভালোবাসার একটা টুকরো। কে কে যেন আরেক পার্ট চাইছিলেন দিয়ে দিলাম?
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here