ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব ৫

0
1011

#ভালাবাসি_প্রেয়সী [০৫]
#জান্নাতুল_বিথী

‘আপনাকে যেনো আমার আশে পাশেও আর না দেখি, আপনি যেমন আপনার বন্ধুরাও ঠিক তেমন!’

রা’গে গজগজ করতে করতে ইমাদ ভাইকে কথাটা বললাম। তখন ইতি আপু কে কথা গুলো বলে আমি ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে মাঝ পথে এসে বাঁধা দেয় উনি। কোনো মতে নিজের রা’গ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে সে হাত করে থামিয়ে দিয়ে বললো,

‘প্রেমিক পুরুষের বাদাম গুলো তো নিয়ে যাও প্রশ্ন কুমারী। প্রেমিকার রা’গ না হয় কালকে ভাঙ্গাবো!’

বলতে বলতে আমার হাতে বাদামের ঠোঙাটা ধরিয়ে দিয়ে সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কতোটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলছে সে ভাবতেই রা’গে ক্রো’ধে শরীর থরথর করে কেপেঁ উঠে আমার। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে ধাতস্ত করে পার্ক থেকে বের হয়ে রিক্সা নিয়ে নিজ গন্তব্যের দিকে রওনা দেই আমি।
.
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে হাতে তাকাতেই বাদামের ঠোঙাটার দিকে ন’জ’র আটকায়। মুখশ্রীতে ভেসে উটে ইমাদ ভাইয়ের শুভ্র মুখ খানা যেখানে উনি বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কিছু কিছু কথা মনে পড়লে আনমনেই হাসি আমি। আমাকে জব্ধ করতে কি নিদারুন অভিনয় করছে লোকটা। অথচ এই অভিনয়ে সে পটু নয়। নিতান্তই বিনোদন নেওয়ার জন্য এসব করছে।
.
বারান্দায় দাড়িয়ে নিকোটিনের ধোয়া উড়াচ্ছে ইমাদ। একটা সময় ছিলো যখন ছেলেটা এই ধোয়াকে মনে প্রানে ঘৃ’না করতো। আর এখন সেই ধোয়াই তার নিত্য দিনের সঙ্গি। গভীর ভাবনায় মত্ত সে, কি এমন ভাবছে তা একমাত্র সে নিজেই জানে। তাকে গভীর ভাবনায় মত্ত দেখে ইমন বারান্দার দোরে নক করে বললো,

‘ভাই আসবো?’

ইমনের ডাকে চমকে উঠে সে, কিছু সময়ের মাঝে নিজেকে সামলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘অনুমতির অপেক্ষা করছিস কেনো ভেতরে আয়!’

পজেটিভ উত্তর পেয়ে ইমন ভেতরে এসে দোলনায় বসতে বসতে বললো,

‘কিছু নিয়ে চিন্তিত তুই? নাকি সেই পিচ্চু কে নিয়ে ভাবছিস?’

‘ভুলার চেষ্টা করছি!’

‘এতো সহজে ভুলতে পারবি তাকে?’

‘জানিনা, চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না, সত্যি বলতে যতক্ষণ ফ্রি থাকি ততক্ষন তার ভাবনাতেই মিশে থাকি। তাকে নিয়ে ভাবা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে আমার! যা চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবো না আমি!’

‘তোর লাইফে মুভ অন করা উচিত ইমাদ। মরীচিকার পেছনে ঘুরছিস তুই!’

‘আচ্ছা আমি কি চাইলে তাকে ফিরে পেতে পারিনা ইমন?’

‘এটা কিভাবে সম্ভব ইমাদ, তুই নিজেও জানিস তার পরো বোকার মতো কথা বলছিস কেনো?’

‘তোর চাচা, চাচী চাইলেই সম্ভব, কারন পিচ্চু কে হাসপাতাল থেকে তার পরিবারের কেউই নিয়েছিলো। আর তাদের সাথে তোর চাচা চাচীর কথাও হয়েছে। শিওর না হয়ে তারা মেয়েটাকে উনাদের কাছে দিবে না এটা শিওর থাক। তাহলে তারা চাইলেই ওর পরিবারের মানুষের সাহায্যে ওর খবরা খবর নিতে পারে!’

আড়ালে দাড়িয়ে ছেলের সব কথাই শুনেছেন পারভীন আরা। ছেলের তাদের উপরের রা’গ ক্ষো’ভ সবটাই জানা তাদের। এতো বছরেও যে ছেলেটা ওই পিচ্চি মেয়েটাকে ভুলবেনা সেটা ধারনার বাহিরে ছিলো তাদের। একটা পিচ্চি মেয়ের জন্য ছেলের মাঝের দূরত্ব তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না। মনে মনে মেয়েটার জন্য পুষে রেখেছেন এক আকাশ সমান ক্ষো’ভ! তবে সেদিন ছেলের জেদের কাছে হার মেনে তার বাবা শিপন সাহেব ওই কপোত কপোতীর খোজ খবর নিয়েছিলো। কিন্তু পুরো শহর খোজার পরেও তাদের পাওয়া যায় নি। হাসপাতালের সিসি টিভি থেকে তাদের ছবি কালেক্ট করে নিয়েছে যা এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছেন পারভীন আরা। সব কিছু ভেবে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আড়াল থেকে সরে যায়!

ইমাদের কথা শুনে ইমন বললো,

‘দেখ ইমাদ সব কিছু এতো সহজ না! আজ থেকে ১২ বছর আগেকার কাউকে কি তুই এখন খুজে পাবি? পিচ্চি টার ও তো চেহারার আদল পরিবর্তন হইছে তাই না?’

‘সবটা বুঝি আমি, কিন্তু আমার মন মানতে চায় না কেনো এই বিষয় টা? আমি কেনো এখনো তার অপেক্ষায় আছি?’

‘সব কিছু জেনে বুঝেও যে মানুষ অন্যকে কষ্ট দেয় তাকে আমার ভাষায় কিছুই বলা যায় না।’

এর পর একটু থেমে তার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আগামী কাল আমরা আয়েশাদের বাড়িতে যাবো ভাবছি। তোর কি সময় হবে?’

‘কেনো যাবি বিয়ের ডেইট ফিক্সড করতে নাকি?’

নির্বিকার চিত্তে জবাব দেয় ইমাদ, মনে হচ্ছে তার এসবে কোনো আগ্রহ নেই। ইমন ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

‘না, বিয়ে তো আমার পড়া শোনা শেষ হলে তারপর, এখন তারা দাওয়াত করছে যাওয়ার জন্য। তাই তোর সময় হবে কি না সেটাই জিজ্ঞেস করছি!’

‘মন মেজাজ খারাপ আছে, যাবোনা। এর মাঝে যদি মুড ঠিক হয় তাহলে যাবো!’

‘আচ্ছা!’
.
সকাল সকাল পুরো ঘর পরিষ্কার করে আন্টিকে সাহায্য করছি আমি আর আয়েশা। আজ তার হবু শ্বশুড় বাড়ি থেকে মানুষ আসবে! যখন ওকে দেখতে এসেছিলো তখন শুধু ইমন ভাইয়ার মা আর বাবা এসেছিলো। কিন্তু আজকে তার চাচা চাচী সবাই আসবে, তাই সবাই একটু বেশিই ব্যস্ত। এ বাড়িতে এসে সবাই দুপুরের খাবার খাবে। তারই আয়োজন করা হচ্ছে। আযান দিলে আন্টি আমাদের দুজনকে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিতে বলে। আমি আয়েশা কে ঠেলে ঠুলে রেডি হতে পাঠিয়ে আন্টিকে বাকী কাজে সাহায্য করতে নিলে সে বললো,

‘অনেক করেছিস উপু, এখন গিয়ে রেডি হয়ে নে!’

‘যাচ্ছি তো আন্টি, তুমি এমন ভাব করছো মনে হচ্ছে আমার শ্বশুড় বাড়ি থেকে মানুষ আসছে!’

‘হ্যা ওই বাড়িতে তোকেও পাঠাবো!’

বলতে বলতে হেসে দেয় আন্টি, তার সাথে তাল মিলিয়ে আমি ও কিছুক্ষণ হাসা হাসি করে রেডি হতে যাই। মনে মনে ভাবছি ইমন ভাইয়ার চাচা চাচী আসলে তো নিশ্চয় ওই খারুশ টাও আসবে। এই ছেলে আসলে জ্বালিয়ে মারবে আমাকে। এসব ভাবতে ভাবতে আয়েশাকে শাড়ি পরিয়ে হালকা একটু সাজিয়ে নিজে রেডি হতে যাই।

আমি শাওয়ার নিয়ে বের হতেই বাহির থেকে হট্টগোলের আওয়াজ শোনা যায়। আয়েশার দিকে তাকালো সে বললো,

‘ইমনরা আসছে!’

‘তো তুই বাহিরে যা!’

‘আমার লজ্জা করছে!’

‘ওরে আমার লজ্জাবতী নারী রে, সারাদিন তার সাথে হাটতে, ঘুরতে লজ্জা করে না এখন তার সামনে যেতে লজ্জা করছে!’

‘তুই বুঝতে চাইছিস না উপু, যেদিন তোর সময় আসবে ওইদিন বুঝবি এটার ফিলিংস টা আসলে কেমন!’

আমি ভেংচি কেটে অন্য দিকে ফিরে ভাবতে থাকি, আসলেই কি আমার এমন কোনো দিন আসবে? পরক্ষনেই আবার ভাবলাম যার মা বাবা নাই তার জীবনে ভালো কারো উপস্থিতি আধো হবে কি না তা নিয়েই স’ন্দে’হ! আমার ভাবনার মাঝেই আন্টি এসে বললো,

‘অ্যাই উপু কি ভাবছিস তুই? আমি আয়েশা কে নিয়ে গেলাম তুই দশ মিনিটের মাঝে রেডি হয়ে আসবি!’

‘মা আমি উপমার সাথে একসাথে যাই?’

‘আরে না না তুই আন্টির সাথে যা আমি এখুনি আসছি!’

‘তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু!’

আয়েশা বেরিয়ে পড়লে আমি কোনো মতে চুল শুকিয়ে আচড়ে, মাথায় উড়না দিয়ে রুম থেকে বের হই। বের হতেই দেখি লিভিংরুমে তিন জন মধ্য বয়স্ক পুরুষ, দুজন মহিলা ইমন আর ইমাদ ভাইয়া বসে। মধ্য বয়স্ক পুরুষের মধ্য একজন আয়েশার বাবা, আর দুজন হয়তো তার হবু শ্বশুড় আর চাচা শ্বশুড়। আমি আড় চোখে একবার সেদিকে পরোখ করে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। আন্টি আমার হাতে হালকা নাস্তা তাদের জন্য পাঠালে সেগুলো নিয়ে লিভিংরুমে আসলে একজন মহিলা বললো,

‘এগুলো এখানে রেখে তুমি একটু আমার পাশে এসে বসো তো মা!’

তার কথায় সবার মনোযোগ আমার দিকে হেলে পড়লে আমার কিছুটা অস্বস্তি হয়। প্রকাশ না করে হালকা মুচকি হেসে তার পাশে বসলে তিনি শুধালেন,

‘ভাই সাহেব আপনার এই কন্যাকে আমি আমার ইমাদের বউ করে নিতে চাইলে আপনার কোনো আপত্তি আছে?’

তার কথায় চমকে উঠে বসার ঘরের সবাই, শুধু নির্বিকার থাকে ইমাদের বাবা শিপন সাহেব। ইমাদ তার মায়ের কথায় হতভম্ব হয়ে যায়। তার পরো নিজেকে সামলে উপমার দিকে তাকিয়। অন্য দিকে আমি তার কথা শুনে আমি ঘোরের মাঝে চলে যাই। অতঃপর ঘোর কাটতেই দুজনেই সম স্বরে বলে উঠলাম,

‘অসম্ভব, আমার আপত্তি আছে!’

চলবে,,,,,,,,

[শখের বশে গল্প লিখি আমি। নিজের পড়াশোনা আছে, পর পর তিন টা টিউশনি করাই! সব মিলিয়ে আমি একটু ব্যস্ত থাকি তাই রেগুলার গল্প দিতে পারি না। অনেকেই কারন জিজ্ঞেস করায় বললাম!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here