ভালোবাসি প্রেয়সী শেষ পর্ব

0
1429

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [অন্তিম পর্ব]
#জান্নাতুল_বিথী

গুটি গুটি পায়ে ইমাদ ভাইয়ের রুমের সামনে এসে দাড়াই আমি! নক করতে গেলে হঠাৎ দরজা খুলে যায়। আমার সামনেই বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে ইমাদ ভাই! আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে যাই আমি। ইমাদ ভাই বললো,

‘ভ য় পাচ্ছো কেনো? রুমে আসো!’

বলে সে নিজেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় রুমের ভেতরে! ইমাদ ভাই রুমের মাঝা মাঝিতে এনে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

‘কিছু বলবে তুমি?’

তার এই কথাটারই অপেক্ষায় ছিলাম আমি। তড়িগড়ি করে বললাম,

‘না মানে হ্যা, আসলে বিয়ে টা আমার ইচ্ছেতে হলেও মেনে নেওয়ার জন্য আমাকে একটু সময় দিতে হবে আপনার!’

‘সে তুমি যতো ইচ্ছে সময় নাও, আমার আপত্তি নেই দিন শেষে তুমি আমার হলেই হবে!’
.
সেদিন তার সাথে এতো টুকুই কথা হয় আমার! তার পরের দিন সে কোথায় জানি হারিয়ে যায়। শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে শুনেছি সে নাকি কোনো কাজে রাজশাহীতে আছে। তার সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় আমার। সম্পর্কটা এখন আগের তুলনায় একটু হলেও উন্নতির দিকে গেছে। তাকে মন থেকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি, তার সব সত্তাকে বই পড়ার মতো করে আয়ত্তে নিয়েছি নিজের। যে মানুষটা আমার কাছে এক সময় ছিলো কঠিন কোনো বস্তু, সেই এখন আমার সব চাইতে প্রিয় মানুষের খাতায় নাম লিখেছে। শ্বাশুড়ি মা আমাকে সবটাই বলেছে, বারো বছর পূর্বে তার সাথে আমার কিভাবে দেখা। কিভাবে সে আমার জন্য পাগলামি করেছে। সবটা শুনে অবাক হয়েছি আমি। আমার জন্যও যে কোনো একজন মানুষ এতো পাগলামি করবে কখনো ভাবনাতেও আসেনি।

এতো সব সুখের ঘটনার মাঝেও আমার মনে শান্তি নেই। ইতি আপুর বাবা আর আমার বাবা ভাই ছিলো। বরাবরই তিনি রাদিফ চৌধুরিকে হিংসা করতো। কিন্তু তার বাবা মায়ের জন্য কখনো তা প্রকাশ করার সুযোগ হয়নি তার। তাই যখন রাদিফ চৌধুরি পূর্না কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করলো তখন তার ভাই রায়ান চৌধুরিই তার বাবা মা কে খারাপ কথা বলে উস্কে দিয়েছিলো। যার কারনে ছেলের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতো কিছু করার পরও রাদিফ চৌধুরি ভেঙ্গে পড়েনি। নিজের ক্যারিয়ার এবং বউ নিয়ে দূরে সরে গিয়েছিলো কেবল। এই দূরে সরাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের বাবা মা কে ব্ল্যাক মেইল করে সম্পত্তি সব নিজের নামে করে নেয় রায়ান চৌধুরি। এতো কিছু করেও সে খুশি ছিলো না, তার সব সময় নজর ছিলো ছোট ভাইয়ের ক্যারিয়ার টাকা পয়সার উপরে। তাই রায়ান চৌধুরি কৌশলে রাদিফ চৌধুরির শত্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। রাদিফ চৌধুরিকে চাইলেই সে মে”রে ফেলতে পারতো। কিন্তু ভাই কারনে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়েছে রায়ান চৌধুরি। ভাইকে দেশ থেকে তাড়াবার আগে ভাগ্নীকে খু”ন করার চেষ্টা করে। এবং তিনি জানেন যে উপমা ম”রে গেছে। তাই তিনি শান্ত আছেন এখনো!

সব কিছু শোনার পর কয়েক পল স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম আমি। কোনো মতেই বিশ্বাস হচ্ছে না আমারই চাচা আমাকে খু”ন করার চেষ্টা করেছিলো। ঘৃনা হচ্ছে চাচার উপরে। কি করে সে তার ভাগ্নীর উপর এমন নিষ্ঠু*র কাজ করতে পারে। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে উঠে যাই।

আজ পনেরো দিন পরে ইমাদ বাড়ি ফিরেছে। তাকে দেখে মনটা খুশিতে নেচে উঠে। এই কয়েক দিনে অনেক শুকিয়ে গেছে উনি। আমি গুটিগুটি পায়ে তার সামনে গিয়ে দাড়ালে উনি বললো,

‘শ্বশুড় বাড়িতে দিন কাল কেমন কাটছে ম্যাম?’

তার প্রশ্নে আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,

‘একদমই নিরামিষ, মানে স্বামী ছাড়া যেমন কাটার কথা আর কি!’

আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বললো,

‘তার মানে স্বীকার করছো তুমি আমায় মিস করছো। তাই তো?’

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,

‘মিস করলেও কি? কারো কিছু যায় আসে নাকি?’

উনি আমার দিকে হালকা ঝুকে নাক টিপে দেয়। গালে ঠোঁট চেপে বললো,

‘এত্তো গুলা মিস করছি, যতোটা মিস করলে ছুটে আসতে ইচ্ছে করে ঠিক ততোটা!’

আমি কিছুটা পিঞ্চ করে বললাম,

‘ওহ তাই? একারনেই বুঝি রাজশাহী থেকে ফিরতে ১৫ দিন লাগিয়ে দিয়েছেন?’

‘কাজ ছিলো!’

তাকে আর সেদিকে প্রশ্ন না করে আমি বললাম,

‘ফ্রেশ হয়ে নিন, আপনাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে!’

উনি মাথা ঝাকিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমি রুম থেকে বের হই তার জন্য কফি বানানোর জন্য!
.
ডিনার করে রুমে চলে আসি আমি, ইমাদ তখনো নিচে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। কেনো জানি সবার সঙ্গ বিরক্ত লাগছে। বারবার বাবা আর মমের কথা মনে পড়ছে। তারা আমাকে ছাড়া দিব্যি সুখে আছে নিশ্চয়। একটু ভালো করে বেঁচে থাকার জন্যই হয়তো আমাকে মামা বাড়ি ফেলে রেখে তারা ওই দূর দেখে পড়ে আছে। আচ্ছা বাবার কি আমার কথা মনে পড়ে না? আজ খবর পেয়েছি রায়ান চৌধুরিকে নাকি পুলিশে দদরে নিয়ে গেছে। তার কয়েকটা অপকর্ম সবার সামনে এসেছে। আমার কেনো জানি বারবার মনে হচ্ছে ইমাদ আছে এ সবের পেছনে। উনি রাজশাহী হয়তো প্রমান জোগাড় করতেই গিয়েছিলো। আর সেসব প্রমান পুলিশকে দেওয়ায় তারা তাকে এ্যারেস্ট করছে। ইতি আপু অনেক কান্না কাটি করছে। ইমাদের কাছে এসে বারবার করে অনুরোধ করছে তার বাবা নির্দোষ তাকে যেনো ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু উনি সেসব কথায় কান দেয় নি। সব কিছু আমি অবাক চোখে শুধু পর্যবেক্ষণ করছি। তাকে দেখে পাষান মনে হইছে।

কোমড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠি আমি। পরপরই ঘাড়ে শীতল স্পর্শ অনুভব করি। বুঝতে অসুবিধা হয় না মানুষটা কে। আমি চোখ বন্ধু করে তার হাত খামচে ধরি। আস্তে আস্তে তার স্পর্শ গভীর হতে থাকে। তার নির্লজ্জের মতো হাতের বিচরনে কেঁপে কেঁপে উঠি আমি। আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে সারা মুখে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে থাকে। আমি একহাত তার বুকের উপর রেখে অপর হাতে তার টি শার্টের একটা অংশ খামচে ধরি। উনি আমার ঠোঁটে গভীর ভাবে চুয়ে দিয়ে বললো,

‘আমার অনেক সাধনার ফল তুমি পিচ্চু, অনেক ভালো বাসি তোমায়।’

আমি জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে তার বুকে মুখ লুকাই। উনিও তার বক্ষ পিঞ্জিরায় বদ্ধ করে নেয় আমায়। যেনো ছেড়ে দিলেই কোথাও পালিয়ে যাবো আমি। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

‘মন খারাপ করছে পিচ্চু?’

আমি চোখের জল আড়াল করে বললাম,

‘আপনি আমার পাশে থাকলে হাজার মন খারাপও আমাকে ছুতে পারবে না!’

আমার কথা শুনে তৃপ্তির হাসি হাসে সে। চুলের ভাজে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললো,

‘মন খারাপ করে না জান। আমরা খুব শীগ্রই প্যারিস যাচ্ছি!’

‘কে আছে ওইখানে?’

‘তোমার বাবা আর মা আছে। তাদের কাছেই যাবো!’

তার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নেই আমি! ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম,

‘কোথাও যেতে হবে না আপনার। আমি তাদের সাথে দেখা করতে চাই না!’

আমার থেকে হয়তো এমন কথা আশা করেনি ইমাদ। তাই তো অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘কি বলছো তুমি পিচ্চু? আঙ্কেল আন্টির সাথে দেখা করতে চাইছো না এটা কোনো কথা?

এক হাতে চোখের জল মুছে রাগী গলায় আমি বললাম,

‘হ্যা, আপনি যা শুনেছে ঠিকই শুনেছেন। যারা আমাকে ভুলে বেঁচে আছে তাদের কেনো আমি মনে করতে যাবো? স্বার্থপরের পরিচয় দেয়নি?’

‘তারাও হয়তো ভালো নেই তোমাকে ছাড়া পিচ্চু!’

‘না থাকুক, আমার কিছু যায় আসে না। তারা নিজেরা দেশের বাহিরে যেতে পারছে অথচ আমাকে নিতে পারে নি। কেমন বাবা মা তারা?’

‘আচ্ছা ঠিক আছে আমরা যাবো না। মন খারাপ করো না তুমি। আমি আছি তো, আমি থাকলেও মন খারাপ করবা?’

আমি মাথা নেড়ে না জানিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে আবারো বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম,

‘আপনার এই ভালোবাসার ঋন শোধ করবো কিভাবে আমি ইমাদ? কাউকে এতো বেশি ভালোবাসতে নেই জানেন না আপনি?’

আমার কথায় ফিক করে হেসে দেয় উনি। এক হাতে টান দিয়ে তার সাথে মিশিয়ে নিতে নিতে বললো,

‘ভালোবাসার আবার ঋন হয় নাকি পাগলী? ভালোবাসার বিনিময়ে শুধু ভালোবাসতে হয়!’

‘ঠিক আছে আমি না হয় আপনাকে এত্তো গুলা ভালো বাসবো কেমন?’

আমার বাচ্চা বাচ্চা কথায় হেসে ফেলে উনি। জীবন সুন্দর, যদি সেই জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকে থাকে নিজের ভালোবাসার মানুষ। তার সাথে কাটাতে পারে সারাটা জীবন। তাহলে সেই জীবন ও হয় ধন্য। ভালোবাসারা আমরন বেঁচে থাকুক। সেই সাথে বেঁচে থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো!’

[সমাপ্ত]
[নিজেদের মন্তব্য জানিয়ে যাবেন! কেমন হইছে গল্পটা তা জানাবেন অবশ্যই!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here