ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব ১

0
1905

‘শুভ্র রঙের শার্ট পরা ছেলেটাকে তুমি প্রো’পো’জ করবা, যদি তার উত্তর ইতিবাচক হয় তাহলে এক মাস তার সাথে প্রে’মে’র অভিনয় করবা। আর যদি তার উত্তর নে’তিচাক হয় তাহলে এক মাস তার পেছনে পেছনে ঘুরবা!’

সিনিয়র আপু ভাইয়াদের কথা শুনে হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে যাই আমি। বাম পাশে তাকিয়ে দেখি শুভ্র রঙের শার্ট পরিহিত একটা ছেলে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে। কানে ফোন হয়তো কারো সাথে কথা বলছে ফোনে! আমি ছেলেটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে দাড়ানো সিনিয়র আপু ভাইয়াদের দিকে তাকাই। তাদের মাঝে দুইটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে। ভার্সিটিতে পড়তে হলে র্্যাগিংয়ের শিকার হতে হয় তা ভালো করেই জানা আছে আমার। তাই সেসবে পা’ত্তা না দিয়ে বললাম,

‘আর আমি যদি আপনাদের কথা না শুনি তাহলে কি করবেন?’

এতক্ষন আমার সাথে তাদের মধ্যেকার একটা মেয়ে কথা বলছিলো। আমার কথাটা শুনে একটা ছেলে হাসতে হাসতে বললো,

‘আরে বাহ্ মেয়ের দেখছি ঝাঁঝ আছে। ইতি তুই বরং লিটেল সিস্টার কে এতো সহজ কাজ না দিয়ে অন্য কিছু দিতে পারিস। সহজ কাজ তার পছন্দ না।’

বুঝলাম মেয়েটার নাম ইতি। মেয়েটা আমার দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে এসে বললো,

‘ঠিক আছে তাহলে তুমি অন্য কাজ করতে পারো। আমাদের চার জনের যতো এ্যাসাইনমেন্ট আছে সব গুলো তুমি করে দিবে। আমাদের সাথের আরো দু একজন আছে তাদের সহ সবার টা তুমি সলভ করে দিবে।’

তাদের কথায় মাথায় যেনো আকাশ ভে’ঙ্গে পড়লো আমার। এতো জনের এ্যাসাইনমেন্ট আমি সলভ করবো কিভাবে?

‘আপনাদের এ্যাসাইনমেন্ট আমি কিভাবে করবো আ’জ’ব আমার কি পড়ালেখা নাই নাকি?’

‘তাহলে গিয়ে ইমাদকে প্রোপোজ করো!’

তাদের কথায় রে’গে গিয়ে বললাম,

‘আমি যদি আপনাদের একটা কথাও না শুনি তাহলে কি করবেন?’

যে মেয়েটা এতক্ষন চুপ ছিলো সে ফিচেল হেসে বললো,

‘তোমার ভার্সিটি লাইফকে কিভাবে হে’ল করতে হয় সেটাও আমাদের জানা আছে। প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গিয়ে বলবো একজন জুনিয়র হয়ে তুমি সিনিয়রদের সাথে বে’য়া’দ’পি করছো। দেখেতো মিডেল ক্লাস শ্রেনির মেয়েদের মতো মনে হচ্ছে। এতো ঝা’মে’লা সামলাবে কিভাবে?’

তাদের এরূপ কথায় বুক কেঁপে উঠে আমার। ভার্সিটিতে আসার আগে পইপই করে আয়েশা বলে দিয়েছে সিনিয়রদের সাথে যেনো ট’ক্ক’র দিতে না যাই। শান্তশিষ্ঠ ভাবে ভার্সিটি লাইফ কাটানোর জন্য এক মাস ক’ষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এতোজন মানুষের এ্যাসাইনমেন্ট করতে গেলে আমি নিজের পড়ালেখা করতে পারবো না তাই তাদের প্রথম অপশনটাকেই বেচে নিলাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে মিনমিন স্বরে বললাম,

‘ঠিক আছে আমি আপনাদের প্রথম অপশনটাই বেচে নিলাম।’

‘ওই যে ইমাদ এখনো ওইখানেই আছে যাও গিয়ে প্রোপোজ করো।’

আমি মুখটা মলিন করে পুনরায় সেদিকে তাকাই। ইমাদ নামের ছেলেটা তখনো ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত! আমি সেদিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে ইতি নামের মেয়েটা বললো,

‘এই মেয়ে শোনো! খালি হাতে তো আর প্রোপোজ করবে না তাই না? এই নাও এগুলো দিয়ে প্রোপোজ করবা। আর আমরা যে তোমাকে একাজ করতে বলেছি সেকথা যেনো ইমাদ না জানে। জানলে কি হবে ধারনাও করতে পারবে না!’

শান্ত ভাবে হু’ম’কি দিয়ে আমার হাতে ছয়টা গোলাপ ফুল ধরিয়ে দিলো। আমি একবার ফুল গুলো তো একবার আপুর দিকে তাকিয়ে উপর নিচে মাথা নেড়ে নিজের উত্তর জানিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করি।
.
ধুরু ধুরু বুকে ছেলেটার পেছনে গিয়ে দাড়াই। ছেলেটা খুব রা’গী স্বরে ফোনের ওপারে হয়তো কাউকে ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়ে দিচ্ছে। তার রা’গ দেখে একবার মন চাইলো পেছনে ফিরে এক দৌড়ে পালিয়ে যেতে! কিন্তু এই ডা’ই’নি মেয়ে গুলোর কথা বার্তা শুনে পালানোর ইচ্ছে কর্পূরের ন্যায় উড়ে গেলো। ছেলেটা যেভাবে কথা বলছে দেখে মনে হচ্ছে না জীবনেও কথা শেষ হবে। তাই মিনমিন স্বরে তাকে ডাকলাম,

‘ভাইয়া শুনুন!’

একই রকম ভাবে দু’তিন বার ডাকার পরও উত্তর না পেলে মেজাজ খারাপ হয় আমার। কিছুটা গলা উচিয়ে বললাম,

‘ইমাদদদদ!’

নাম ধরে ডাকায় ছেলেটা চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকায়। একটা জুনিয়রের মুখে নিজের নাম শুনে মেজাজ খিচে যায় তার। কোনো রকমে দাঁতে দাঁত পিসে বললো,

কিছু বলবে?’

তখনো তার কানে ফোনটা লেগে আছে। আমার মনে হলো কেউ হয়তো তার কানের সাথে সুপার গ্লু দিয়ে মোবাইলটা ফিট করে দিয়েছে। ভাবতেই হাসি পায় আমার, কোনো রকমে নিজেকে দমিয়ে বললাম,

‘আসলে ভাইয়া, আই লাভ ইউ!’

‘মানে?’

যে যখন চোখ মুখ কুচকে ‘মানে’ বললো আমার মনে হলো ছেলেটা ইংরেজি জানে না। তাই বললাম,

‘ওমা আপনি আই লাভ ইউ এর মিনিং জানেন না? এটা অর্থ হলো আমি আপনাকে ভালোবাসি।’

কথা শেষ না করতেই আমার গালে ঠাস করে একটা থা’প্পড় পড়ে। এতো শ’ক্ত হাতের চ’ড় খেয়ে আমার মাথা ঘুরে উঠে। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল জমা হতে থাকে! এক মিনিটের মাথাতেই ছেলেটার ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

‘এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে নাম ধরে ডাকার? দেখে তো জুনিয়র মনে হচ্ছে, জানো আমি তোমার কতো বছরের বড়? ধারনাতে আছে তোমার? আর আমাকে প্রোপোজ করো কোন সাহসে তুমি? কোথা থেকে যে উঠে আসে এসব নর্দমার কীট কে জানে?’

চোখ বন্ধ করে অ’প’মা’ন হ’জ’ম করার মতো মেয়ে নই আমি। তাই এক হাতে চোখের জল মুছে তাকে বললাম,

‘চেহারা সুন্দর দেখে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? এমন ভাব করছেন মনে হচ্ছে আপনাকে প্রোপোজ করে আমি বিরাট বড় অ’প’রা’ধ করছি? কি মনে করেন আসলে নিজেকে? আপনি দেখতে ঠিক যতোটা সুন্দর আপনার মন ঠিক ততোটাই কু’ৎ’সি’ত।’

মেয়েটার কথায় অতিরিক্ত রা’গে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে যেনো ইমাদ। রা’গে দুঃখে পাশে থাকা বেঞ্চে লা’থি দিয়ে আমার গাল চেপে ধরে বললো,

‘এই মেয়ে কি বললে তুমি? একে তো সিনিয়রদের সাথে বে’য়া’দ’পি করছো এখন আবার আমার মন কেমন তা নিয়ে বিনা মূল্যে সার্টিফিকেট দিচ্ছো। তুমি জানো আমি কে?’

ব্যাথায় গাল টন টন করছে আমার। চোখের পানি বাঁধ মানছে না। একটা মানুষ ঠিক কতোটা নি’ষ্ঠু’র হলে একটা মেয়ের সাথে এরূপ ব্যবহার করতে পারে। নিজের গাল থেকে কোনো মতে তার হাত সরিয়ে শুধু শুধালাম,

‘আপনি কে সেটা জেনে আমার কোনো কাজ নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখুন আপনি সিনিয়র না হলে এতক্ষনে আপনার গালে দুই চারটা পড়তো। যেটা একটু আগে আপনি করলেন!’

বলতে বলতে সেখান থেকে প্রস্থান করলাম আমি। পেছনে কে কেমন করে তাকিয়ে আছে তা দেখার সময় নাই এতো। ক্লাসের দিকে যেতে নিলে তখনকার ভাইয়া আপুরা আবার ডাক দেয় আমাকে। তাদের দেখে আরো বেশি রা’গ লাগে আমার। তাদের সামনে গিয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললাম,

‘আর কিছু বলতে চান আপনারা? জুনিয়রদের কিভাবে ট্রিট করতে সেটাই জানেন না আসলে আপনারা। আমি নাহয় তাকে ছিনি না কিন্তু আপনারা তো জানেন লোকটা ঠিক কতোটা নোং’রা মন মানুষিকতা সম্পন্ন মানুষ.. ‘

‘এই মেয়ে তোমার কপালে কিন্তু দুঃখ আছে কে নোং’রা মন মানুষিক সম্পন্ন মানুষ হ্যা?’

কথার মাঝে কথা বলায় চমকে উঠে থেমে যাই আমি। পেছনে তাকিয়ে দেখি তখনকার ইমাদ নামের ছেলেটা। আমার দিকে তখনো রা’গি লুকে তাকিয়ে আছে! পাশ থেকে ইতি আপু বললো,

‘ইমাদ বাদ দে এসব, উপমা বুঝতে পারেনি আসলে।!’

সব দোষ আমার ঘাড়ে দেওয়ায় আমি প্রতিবাদ জানিয়ে বললাম,

‘আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছে আপু? দোষটা আমি করিনি যে করছে তাকে দোষ দিন।’

মেয়েটার কথায় ঘাড়ে হালকা হাত বুলিয়ে মনে মনে কয়েক বার ‘উপমা’ নামটা আওড়ে বিরবির করে বললো,

‘আমার সাথে বেয়াদপি করার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে উপমা। ইমাদ কি জিনিস সেটা তো তিলে তিলে বুঝবেন আপনি।’

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০১]
#জান্নাতুল_বিথী

চলবে,,,,

[গঠন মূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here