ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব ১০

0
895

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [১০]
#জান্নাতুল_বিথী

ছাদে দাড়িয়ে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইমাদ। তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার পিচ্চু কে সে খুজে পেয়েছে। সত্যিটা জানার পর থেকে উপমার সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি তার। তার ভাবতেই অবাক লাগছে যে মেয়েটাকে এতোদিন সে জ্বালিয়ে মজা পেতো, যে মেয়েটাকে রাগিয়ে সে মজা পেতো এখন সে মেয়েটাই তার পিচ্চু। সব কিছু ভেবে নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে পেলে সে।

‘ব্রো আজকে তোকে খুশি খুশি লাগছে? কারন কি? কারো প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?’

হঠাৎ ইমনের কথায় চমকে উঠে সে। পেছন ফিরে দেখে ইমন ছাদের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দুই হাত বুকে গুজে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে চমকে যেতে দেখে মিটি মিটি হাসতে থাকে সে। তাকে দেখে সোজা হয়ে দাড়ায় ইমাদ। ইমনের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,

‘একটা গুড নিউজ আছে!’

‘অবশেষে তোর মুখ থেকে গুড নিউজের কথা বের হইছে। কি এমন গুড নিউজ দেখি বলে ফেল!’

ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ইমাদ তার জীবনের সব চাইতে প্রিয় বাক্যটা বললো,

‘পিচ্চু কে খুজে পেয়েছি!’

‘কিহহহহ?’

বলে চিৎকার দিয়ে ইমাদের পাশে এসে দাড়ায় সে। তার হতভম্ব হওয়া মুখ খানী দেখে মনে মনে হাসে ইমাদ। তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আবারো সে বললো,

‘কোথায় পেয়েছিস পিচ্চু কে? কিভাবে পেয়েছিস? মেয়েটা বেঁচে আছে এখনো? তুই জেনেছিস কিভাবে যে সে মেয়েই পিচ্চু? ব্রো তুই শিওর তো নাকি?’

ইমনের এতো প্রশ্নের কবলে পড়ে কিছুটা ধমকের স্বরে সে বললো,

‘বেঁচে আছে মানে? এটা কেমন প্রশ্ন? মরবে কেনো পিচ্চু?’

‘না মানে এভাবেই বললাম আর কি! তুই বল না কি হইছে?’

ইমাদ ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে কিভাবে উপমাদের বাসায় তার মমের সব কথা সে শুনে নিয়েছে, কিভাবে বাড়ির কথা গুলো শুনেছে তারপর উপমার মামার সাথে দেখা হওয়ার পর কি কথা হইছে সবটা বলে। সব কিছু শুনে ইমন নেচে উঠে বললো,

‘হুররেএ তার মানে উপমাই পিচ্চু। আয়েশা আমাকে সব সময় বলতো তাদের দু’বোনের যেনো একই বাড়িতে বিয়ে হয়! এতো দিনে আমার বউটার স্বপ্ন পূরণ হবে। ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে আমার! আয়েশাকে জানাতে হবে গুড নিউজ টা!’

‘তুই আয়েশাকে কিছুই বলবি না! যতোদিন না পিচ্চুর পরিবারের সব রহ”স্য বের করতে পারছি ততোদিন কেউ জানবে না উপমাই পিচ্চু!’

‘কেনো? তাছাড়া কিসের র”হস্যের কথা বলছিস তুই?’

‘ওর বাবা মা কে কেউ খু”ন করছে! এখন এটা বের করতে হবে তাদের খু”ন করছে টা কে?’

‘১২ বছর আগের খু”নের কেস তুই কিভাবে লড়বি হু?’

‘কেস হু? ঠিক কথা মনে করেছিস! আচ্ছা দুইটা মানুষ খু”ন হয়ে শহর থেকে গায়েব হয়ে গেলো আর রাদিফ আঙ্কেলের পরিবার এসব বিষয়ে মাথা পর্যন্ত ঘামায়নি ব্যাপারটা কেমন জানি হয়ে যায় না?’

‘তোর সবার আগে রাদিফ স্যারের সম্পর্কে খোজ নেওয়া উচিত। কে ছিলো উনি, আর উনার পরিবারের লোকজন!’

‘হু, কিন্তু কিভাবে তার পরিবারের খোজ খবর পাবো?’

‘আমার মনে হয় বড়মা আর বড় বাবা সব কিছুই জানে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা উচিত!’

‘তাদের জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, মুখ খুলবে বলে মনে হয় না! যা করার আমাদেরই বের করতে হবে!’

‘তোরর এটা কেনো মনে হচ্ছে বড় বাবা কিছু বলবে না?’

‘আমার মনে হচ্ছে না, আমি শিওর। তাই তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে সন্দেহের তালিকায় পড়ে লাভ নাই! অন্য পথ খোজ!’

‘ওকে আমি দেখছি কি করা যায়!’
.
ক্লাসে বসে গালের নিচে হাত রেখে বসে আছি আমি। আয়েশা ইমন ভাইয়ার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে গেছে। আমাকে অবশ্যই যেতে বলছে কিন্তু ইতি আপু সহ তার দল-বল থাকার সম্ভাবনা আছে কারনে যাইনি আমি। তাদের এদল টাকে বড্ড বিরক্ত লাগে আমার কাছে। তাই এড়িয়ে চলতে ভালো লাগে! পাশে ধপ করে কিছু পড়ার শব্দে চমকে উঠি আমি। ভ্রু কুচকে পাশে তাকিয়ে দেখি ইমাদ ভাইয়া বসে আছে আমার পাশে। তাকে এখানে দেখে মনে মনে অবাক হলেও তা প্রকাশ না করে অন্য দিকে ফিরে বসি আমি। আমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখে উনি বললো,

‘এ্যাই মেয়ে তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে কেনো?’

‘আমি চাই না আমার সাথে কথা বলতে এসে কারো রুচিতে সমস্যা হয়।’

‘ওমা তুমি তো দেখছি সেদিনের কথা গুলো এখনো ধরে বসে আছো!’

‘এখানে কেনো এসেছেন?’

‘কৈফিয়ত চাইছো আবরার ইমাদের কাছ থেকে?’

বাঁকা হেসে পাল্টা প্রশ্ন করলো ইমাদ। উপমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কারনে তার হাসিটা খেয়াল করেনি। সেভাবেই বললাম,

‘সেই সাধ্য আছে নাকি আমার?’

‘তোমার সাধ্য না থাকলে পৃথীবিতে আর কারো সাধ্য নেই আবরার ইমাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত নেওয়ার!’

বিরবির করে কথাটা বললো ইমাদ। হঠাৎ তাকে বিরবির করতে দেখে আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কি বিরবির করছেন? আমার পাশ থেকে উঠুন সবাই কিভাবে জানি তাকিয়ে আছে!’

‘সবাই জানে আমরা কপোত কপোতী তাই আমাদের দিকে তাকিয়ে তাদের কাজ নেই! তুমি আমার কথা শুনো পিচ্চু!’

পিচ্চু ডাক শুনে চমকে উঠে তার চোখের দিকে তাকাই আমি। সে আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাবা মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে আমাকে পিচ্চু নামে কেউই ছিনে না। তাহলে উনি কিভাবে পিচ্চু বলে ডাকছে আমাকে? সবটাই কি এক্সিডেন্টলি নাকি কোনো না কোনো কারন আছে। সে তখনো মোহনীয় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ নামিয়ে প্রশ্ন করলাম,

‘এ নামে ডাকছেন কেনো? আমি কি এখনো ছোট আছি নাকি?’

‘কিছু কিছু মানুষের কাছে কিছু স্পেশাল মানুষ সারা জীবন ছোটই থেকে যায়, বুঝলে পিচ্চু?’

‘বাবা মায়ের কাছে সন্তানেরা ছোট থাকে, তাই বলে আপনিও পিচ্চু ডাকবেন নাকি আমাকে?’

‘তোমার তো বাবা মা নেই তাই তাদের ডাকার অভাব টা আমিই পূরণ করে দিচ্ছি!’

‘যে কথাটা এখন বলছেন সেটা আর জীবনেও যেনো আপনার মুখে না শুনি! আর আপনি আমাকে পিচ্চু নামেও ডাকবেন না!’

বলে বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়াই আমি। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইমাদ ভাই বললো,

‘তুমি আমাকে নিষেধ করলেও আমি শুনবো না। তোমার এই নামেই আমি তোমাকে সারা জীবন ডাকবো!’

তার কথায় স্পষ্ট অধিকারের চাপ। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। উনিও ততক্ষনে দাড়িয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়েছেন। আরেক বার বললো,

‘পিচ্চু নামেই ডাকবো তোমায় সারা জীবন, সমস্যা হবে তোমার?’

‘অবশ্যই সমস্যা আছে, ডাকবেন না বলছি না? তার মানে ডাকবেন না!’

‘একশো বার ডাকবো, হাজার বার ডাকবো, কি করবা তুমি আমাকে?’

‘খু”ন করবো!’

হঠাৎ উপমার এমন কথায় ভড়কে যায় ইমাদ। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফিক করে হেসে দেয়। থ্রে”ট বাক্য শোনানোর পরও তার এমন রিয়েকশনে হতভম্ব হয়ে যাই আমি। তার দিকে চোখ ফিটফিট করে তাকিয়ে থেকে আবারো মুখ ঘুরিয়ে উল্টো দিকে হাটা ধরি। অর্ধেক পথ আসতেই হঠাৎ করে ইমাদ ভাইয়া আবারো ডেকে বললো,

‘পিচ্চু!’

তার এমন ডাকে হৃদয় কেঁপে উঠে আমার। বুকের ভেতর মনে হচ্ছে হাতুড়ি পেটাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বড় একটা ঢোক গিলে পেছনে ফিরে তাকালে উনি বললো,

‘তোমার বাবা রাদিফ চৌধুরি কে ছিলো পিচ্চু? কি কাজ করতেন উনি?’

চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here